#সে_কি_জানে?
#Writter : Ishanur Tasmia [Mira]
#part: {24}
.
.
.
আমাদের দু’পাশে বিরাজ করেছে দুইসারি গাছ-পালা।।বামপাশে এক বিরাট নদী।।আর মাঝখানে রাস্তা।।ভার্সিটির পাশেই এ জায়গাটা।আমি,,রেয়ান আর রিহান হাঁটছি সেই রাস্তায়।।রিহান রেয়ানের কাঁধে বসে তার গলা জড়িয়ে আছে।।আর রেয়ান!!সে তার এক হাত দিয়ে রিহানকে আগলে রেখেছেন তো অন্য হাত দিয়ে আমার এক হাত শক্ত করে ধরে আছেন।।প্রায় অনেকটা পথই হাঁটছি আমরা।।ভালোই লাগছে।। অন্য এক অনুভূতি গ্রাস করছে আমায়।।যখন রেয়ান হাঁটতে হাঁটতে আমার দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে থাকেন।।তখন যেন লজ্জার সাথে সাথে এ অনুভূতিটাও প্রবল হয়।।থাকি না কিছুক্ষন এখানে।।পরে না হয় চলে যাবো নিজেদের গন্তব্যে!!
.
বাসায় আসতেই দিধার সাথে দেখা হয় আমাদের।।তুরান আর নির্ঝরও আছে এখানে।।এই এতক্ষনে একবারও আমার দিকে তাকায় নি নির্ঝর।।মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে সে।। একটা “টু” শব্দও করে নি সে।।হয়তো রেয়ানের থাপ্পড় বেশভাবে মনে গেথে গেছে তার।।তবে ভালোই হলো!!
এদিকে দিধা আর তুরানের সাথে আড্ডা দেওয়া শুরু করে দিয়েছেন রেয়ান।।বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছে তারা।।হঠাৎ দিধা আমাকে বলে উঠে…..
—” তা ভাবী!!কোথায় গিয়েছিলে তোমরা?? ”
—” এ-ই তো ভার্সিটিতে।।তোমরা কখন এলে?? ”
—” একটু আগেই।। ”
—” ও!!কতদিন থাকবে?? ”
—” ৩দিন!! ”
—” ভালোই হয়েছে গল্প করতে পারবো তোমার সাথে।। ”
বলেই মুচকি হাসলাম আমি।।সাথে দিধাও।।তা দেখে রেয়ান সবার আড়ালে আমার পেটে চিমটি কেটে কানে ফিসফিসি করে বলে উঠলেন……
—” সবার সাথে কথা বলার সময় এত হাসো।।কই!!আমার সাথে তো হাসো না।।হাসলেও খুব কম।।কেন বলতো?? ”
—” কারন আপনি এক নাম্বারের অসভ্য।।কথা বলতে গেলেই অসভ্যতামি শুরু করে দেন।। ”
—” তাই?? ওকে দেন।।এখানেই শুরু করছি তোমার অসভ্য বরের অসভ্যতামি।। ”
বলেই বাঁকা হাসলেন উনি।।আর আমি!!চোখ রাঙ্গিয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে।।যার অর্থ ” সবার সামনে বাজে কোনো কথা বলবেন তো চুল টেনে দেবো আপনার।।নির্লজ্জ কোথাকার!! ” কিন্তু আমার চোখ রাঙ্গানির অর্থ উনি বুঝেও না বুঝার ভান করে আছেন।।আমার কানে আবার ফিসফিসি করে বলে উঠলেন……
—” জানো তোমাকে শাড়ি পড়লে অনেক হট লাগে।।একদম স্পাইসি!!ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলতে।।একদম…..”
আর কিছু বলার আগেই উঠে দাঁড়ালাম আমি।।তার এসব বাজে কথা শুনার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।।রেয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে দিধার দিকে তাকালাম আমি।।মিষ্টি হেসে বললাম……
—” আমি আসছি নাস্তা নিয়ে।। তোমরা বসে বসে গল্প করো।। কেমন!! ”
আমার কথা শুনতেই দিধা বলে উঠে…..
—” ভাবী আমিও আসি।। ”
বলেই আমার সাথে রান্না ঘরে আসতে লাগলো দিধা।।আমরা যেতেই তুরান রেয়ানকে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল…..
—” অনেক ভালোবাসেন আপনি মিরা ভাবীকে তাই না?? ”
বিনিময়ে হাসলেন রেয়ান।।তারপর তুরানকে বললেন…..
—” তা কেমন চলছে সংসার জীবন?? ”
—” ভালোই।।আপনার?? ”
—” সবসময়ের মতো অসম্ভব ভালো।। ”
কথাটা বলেই নির্ঝরের দিকে তাকালেন রেয়ান।।কিছুটা খোঁচা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই তাকে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন…..
—” তা কি অবস্থা নির্ঝর।।কোনো ভালোবাসার মানুষ আছে কি তোমার?? ”
না চাইতেও হাসলো নির্ঝর।।তারপর আগের নেয় মাথা নিচু করে বসে রইলো।।এটা যেন আরও বেশি আনন্দ দিচ্ছে রেয়ানকে।।তবুও একটা ফাঁকা যেন রয়েই গেছে।।সে ভালো করে শাস্তি দিতে পারে নি নির্ঝরকে।।তার মতে নির্ঝরে হাত-পা ভেঙ্গে ১মাস অন্তত হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারলে ভালো হতো।।ভাবতেই তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে নির্ঝরের দিকে একবার তাকালেন রেয়ান।।
.
রাত প্রায় ১০টা।।দিধার রুমে আমি,,দিধা আর তুরান বসে বসে গল্প করছি।।হঠাৎ ফোনে” টুং “করে রিংটন বেজে উঠে।।পরপর ৩-৪বার ” টুংটাং” শব্দ হতেই ফোন ওন করলাম আমি।।রেয়ান মেসেজ দিয়েছেন।।যাতে লিখা…..
—” আর কতক্ষন অপেক্ষা করাবে জান।।এবার তো রিহানও ঘুমিয়ে গেছে।।এখন তো আসো।। ”
—” বউ গো আমার আসো না।।এত গল্প করার কি আছে।। ”
—” মরুভূমি!!জানো কয়টা বাজে।।১০টা!!তাড়াতাড়ি আসো।। ঘুমাতে হবে তো।।তাছাড়া এত রাতে ওদের রুমে কি করছ।।তোমার বর যে তোমার অপেক্ষা করছে।। ”
মেসেজগুলো পড়তেই হাসি চলে এলো আমার।।তবে তা বের হতে দিলাম না।।নিজের মধ্যেই আটকিয়ে রাখলাম।।ফোনটা রাখতে যাবো তখনই আবার রেয়ানের মেসেজ!!এবারের মেসেজ দেখে মনে হচ্ছে উনি রেগে আছেন……
—” এ-ই মেয়ে সমস্যা কি তোমার।।বরকে একা রেখে গল্প করতে লজ্জা করে না।।ফাজিল মেয়ে কোথাকার।।তাড়াতাড়ি রুমে আসো।।নাহলে আমি এসে যাবো ওখানে।। ”
তার এ-ই মেসেজটা পড়তেই নিমিষেই ভ্রুঁ কুঁচকে এলো আমার।।তাকে কি আমি মানা করেছি এখানে আসতে।।সেও তো এসে আমাদের সাথে গল্প করতে পারেন।।তাছাড়া আমি কোন দিক দিয়ে ফাজলামি করলাম।।যাবো না আমি তার কাছে।।কি করেন উনি আমি শুধু দেখবো।।ভাবতে না ভাবতেই রেয়ান রুমে হাজির।।কাউকে কোনো কিছু না বলেই হুট করে কোলে তুলে নিলেন আমায়।।সাথে সাথে চোখ বড় বড় হয়ে গেল আমার।।উনি যে নির্লজ্জ।। তার জলজেন্ত প্রমাণ রেয়ানের এসব কর্মকান্ড।।তুরান আর দিধার সামনে এভাবে কোলে নেওয়ার মানে কি।।কি না কি ভাবছে এখন ওরা।।এদিকে তার যেন এসবে কোনো মাথা ব্যথাই নেই।।সামনে তাকিয়ে থেকেই গম্ভীর কণ্ঠে আমায় বলে উঠেন……
—” চোখ ঠিক করো নাহলে খুলে পড়ে যাবে।। ”
তার কথায় যেন রাগ হলো আমার।।একহাত দিয়ে খুব জোড়ে টান দিলাম তার চুল।।এতে যেন সে আরাম পেয়েছে।।বাঁকা হেসে আমাকে মিষ্টি করে বললেন…..
—” আহা মরুভূমি!!চুল টানলে যে কি আরাম তা তোমাকে বুঝাতে পারবো না।।রুমে গিয়েই তোমাকে দিয়ে চুল টানাবো আমি।।ইউ নো!!তোমার হাতে জাদু আছে।। ”
—” কঁচু।। ”
—” কঁচু তো কঁচু খেতে।।না,,না, তোমার মাথায়ও তো কঁচু আছে।। ”
প্রতিউত্তরে ভেঙ্গচি দিলাম আমি।।তা দেখে রেয়ান হেসে দিয়ে বলে উঠলেন…..
—” জানো মরুভূমি!!তুমি যখন ভেঙ্গচি দাও তোমাকে অনেক কিউট লাগে।।একদম পেত্নীর মতো!! ”
কথাটা বলেই বিছানায় বসিয়ে দিলেন আমায়।।তারপর দরজা লাগিয়ে আয়েশ করে আমার কোলে মাথা রেখে পেটে মুখ গুজালেন উনি।।আয়েশি কণ্ঠে বললেন…..
—” মাই ডিয়ার মিসেস!! তাহলে চুল টেনে দাও আমার।।খুব ঘুম পাচ্ছে।। ”
বলেই হামি দিতে লাগলেন উনি।।আর আমি!! তার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছি।।তা দেখে উনি এবার মুচকি হেসে বললেন….
—” জানো মরুভূমি।।তোমার শরীরে এক মারাত্তক ঘ্রাণ আছে।।যা…..”
আর কিছু বলার আগেই মুখ চেপে ধরলাম উনার।।এ অসভ্যটা কখনও ঠিক হবে না।। নির্লজ্জ,, বেহায়া একটা!!কথাগুলো বিড়বিড় করতে করতেই রেয়ানের চুল সহযত্নে টেনে দিতে লাগলাম।।আর সে!!আমার পেটে মুখ লুকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন।।হালকা কণ্ঠে আমাকে বলেন…..
—” এভাবে তোমার কাছে থাকলে কেন যেন স্বর্গিয় সুখ পাই আমি।।সবসময় সাথে থেকো আমার।।আমি চাই এ সুখটা আমার সাথে সবসময় থাকুক!! ”
.
সকাকে ঘুম থেকে উঠতেই দেখি রেয়ান আর রিহান মিলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে আমায়।।তা দেখে মুখে আপনা-আপনিই হাসির রেখা ফুটে উঠলো আমার।। দুইজনকে নিজের কাছ থেকে ছাঁড়িয়ে ওদের কপালে চুমু দিলাম আমি।।তাড়াতাড়ি ফ্রেস হতে চলে গেলাম।।কালকে তো রেয়ানের জন্মদিন।।অনেক কাজ আছে আমার!!
.
.
.
#চলবে?