হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-১০

0
571

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_১০
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

তারপর লোকটার যে কথাটা শুনলো তাতে সামু ভয়ে কাঁপতে লাগলো।
— “কি ভয় লাগছে এখন তাইনা?অন্যের ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আড়ি পেতে কথা শোনাটাই
কি ঠিক?”
লোকটির গলার আওয়াজ শুনে লোকটিকে চিনতে বেশি বেগ পেতে হলো না সামুর।
— “উৎস ভাইয়া”!
উৎস সামুর চোখের ওপর থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিল।উৎস পকেট থেকে একটা দুল বের করলো।সামু দুলটা দেখে ভড়কে যায়।সামু অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলে উঠে,
— “এটাতো আমারই দুল।”
দুই হাত মুখে চেপে ধরে সামু। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।সামু এখন বুঝতে পারছে ও কি বলেছে।উৎস বাঁকা হাসি দিল।সামু আর উৎস একেবারে কাছাকাছি দাঁড়িয়ে রয়েছে।উৎস ফু দিয়ে সামুর সামনে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দেয়।এতে আরো অবাক হয়ে যায় সামু।সামু আমতা আমতা করে বলে উঠে,
— “একটু দূরে যান না প্লিজ!”
— “কেন?”
এবার উৎসকে অবুঝ প্রাণী ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না সামুর।সামু কিছুটা সরার চেষ্টা করলেও সরতে পারছে না।সামু ইনিয়েবিনিয়ে না বলে সোজাসাপ্টা উত্তর দিল,
— “আপনি বুঝতে পারছেন না।আমি আনইজি ফিল করছি! প্লিজ দূরে গিয়ে যা বলার বলুন।”
উৎস সামুর অবস্থা উপলব্ধি করতে দূরে সরে দাঁড়ালো।সামু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।উৎস রাগী চোখে সামুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— “এখন বলো কালকে কেন আমার রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা শুনছিলে?”
সামু নিজেকে স্বাভাবিক করেই বলে উঠে,
— আমি!কখন?এমা না না আমার মতো নিষ্পাপ একটা বাচ্চা মেয়ে কিনা অন্যের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আড়ি পেতে কথা শুনবে।ছি ছি এটা কী বলেন আপনি?”
উৎস হা করে সামুর দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ।সামুর কথা শুনে নিজেই বোকা হয়ে গেল।উৎস নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলতে লাগলো,
— “তুমি যেখানে ভার্সিটিতে পড়ো সেখানে তুমি বলছো যে তুমি নিষ্পাপ বাচ্চা মেয়ে।লাইক সিরিয়াসলি!অবশ্য তোমার থেকে তো এসব কথাই আশা করা যায়।বাই দ্যা ওয়ে এখন মেইন কথা। আসি। তোমার অপরাধের জন্য তোমাকে কী শাস্তি দেওয়া যায় বলোতো?”
সামু এদিক-ওদিক তাকিয়ে তারপর উৎসকে বলে উঠে,
— “কই আমি তো কিছুই করি নি।আমাকে বলা হয়েছিল আপনার দরজার বাইরে আড়ি পেতে কথা শোনার জন্য।হু!”
উৎস সন্দিহান চোখে সামুর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,
— “না না তার কথা জিজ্ঞেস করবেন না প্লিজ।সে খুব ভয়ানক!”
উৎস এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলতে লাগলো,
— “তুমি কী আদৌ আমাকে সত্যি বলছো নাকি আমার সঙ্গে ফান করছো কোনটা?”
— “না না আমি ফান করছি না সে আপনার পেছনে আছে ঐ যে সে ঐ দেখুন!”
সামুর হাতের ইশারা মোতাবেক উৎস পেছনে ঘুরে দেখলো একটা বিড়াল ঘুমিয়ে আছে।তারমানে সামু। এতক্ষন ধরে ওকে বোকা বানালো।ভাবতেই রাগে উৎসর কপালের রগ ফুলে উঠছে।উৎস সামনে তাকিয়ে দেখে সামু নেই। তারমানে সামু পালিয়েছে।উৎস রেগে ফায়ার হয়ে চেয়ারে জোড়ে লাথি মারলো।
___________________________
হাসিতে ফেটে পড়েছে তিনজন।মিতু,রুহি আর সামু।মিহু হাসতে হাসতে বলে উঠে,
— “সিরিয়াসলি সামু!তুই ফাটিয়ে দিয়েছিস।”
সামু ভাব নিয়ে বলতে থাকে,
— “আমিও সামু হু!উনাকে যে বোকা বানাতে পেরেছি এতেই পৈশাচিক আনন্দ লাগছে।”
— “আর মিহু তুই তো শিহাব ভাইয়াকে শায়েস্তা করেছিস।আহা!জাস্ট আমিই কিছু করতে পারিনি।”
রুহি মন খারাপ করে কথাটি বলে উঠে।তা দেখে মিহু মুচকি হেসে বলতে থাকে,
— “দেখতে হবে না আমি কার ফ্রেন্ড।আমিও সামুর ফ্রেন্ড হু!এসব শায়েস্তা করা কোনো ব্যাপারই না।আর রুহি তুই মন খারাপ করিস না তো।”
রুহি মাথা নাড়ালো।হ্যা সামুর মিহুর ফ্রেন্ড।সেদিন ফোনে মিহু সামুর সাথেই কথা বলছিল।আর আজকে ওরা একসাথে।
_________________________
মুচকি হাসছে প্রমা।যাতে প্রচন্ড বিরক্ত বোধ করছে উৎস।উৎস আর ওর বন্ধুরা বসে আছে স্টেজ এর কাছেই।উৎস বসে বসে গিটারে টুংটাং শব্দ করছে।আরিফ উৎসকে বলে উঠে,
— “এবার কিন্তু তোকে গান গাইতেই হবে উৎস!”
উৎস ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দেয়,
— “হুম!”
এবার প্রমা নিজের চশমা ঠিক করে বলতে থাকে,
— “কি হুম।এবার তুই গানে পারফর্ম করছিস।দ্যাটস ফাইনাল!”
উৎস প্রমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— “আমি একা গাইবো না।একজনের সাথে গাইবো!একজন মেয়ের সাথে।”
আরিফ,প্রমার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো।প্রমা নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে উঠে,
— “সেই ভাগ্যবতী মেয়েটা কে শুনি!এই ভার্সিটির কেউ?”
উৎস গিটারটা পাশে রেখে প্রমা আর আরিফকে বলতে লাগে,
— “অনুষ্ঠান কাল রাইট?”
প্রমা মাথা নাড়িয়ে “হ্যা”বোঝায়। এরমধ্যেই শিহাব দৌড়ে এসে ওদের পাশে বসে পড়লো।শিহাবকে হাঁপাতে দেখে ওর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে প্রমা,
— “তোর আবার কি হয়েছে?”
শিহাব হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে থাকে,
— “তোদের মনে আছে কালকে একটা মেয়ে আমার পায়ে লাথি মেরেছিল?”
প্রমা ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দেয়,
— “হুম মনে আছে তো।মিহুর কথা মনে থাকবেই না বা কেন?তোকে উত্তম মধ্যম দিয়েছে তেই মেয়ে তাকে কি এতো সহজে ভোলা যায়!”
শিহাব দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগে,
— “তোকে আমি পরে দেখে নিমু।আগে মেইন কথা বলি।ঐ মিহু কার ফ্রেন্ড জানিস?”
প্রমা মাথা নাড়িয়ে “না”বোঝায়। শিহাব দাঁত কেলিয়ে বলে উঠে,
— “সামুর ফ্রেন্ড!”
প্রমা পানি খাচ্ছিল।এই কথা শুনে সব পানি ছিটকে ফেলে দেয় শিহাবের ওপর।শিহাব মুখ কুঁচকে বলে উঠে,
— “অবিশ্বাস্য!আমিও ঠিক এটাই ভেবে ছিলাম।মিহুর মধ্যে সামুর ছায়া দেখতে পাচ্ছিলাম।বাহ!তোকে ঠিক করার জন্য ও মানুষ এসে গেছে।ওয়াও!”
শিহাব বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে বলে উঠে,
— “এটা কিন্তু ঠিক হু।তুই আমারে ভয় দেখাস কেন?তোর বিয়া হইবোনা ছাগলি কইয়া দিলাম।”
প্রমা ভেংচি কাটলো।এদিকে উৎস এসবের কিছুই বুঝতে পারছে না।তাই প্রমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
— আমি কিছুই বুঝতে পারছি না সবাই বুঝিয়ে বলো কুইক!”
চলবে…….