হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-১২

0
606

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_১২
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

প্রমা চেয়ার থেকে উঠে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে যাবে এমন সময় উৎস আসে।উৎস এসে দেখে শিহাবের চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে।উৎস একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে। তারপর শিহাবকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “তোর চোখ মুখের এমন অবস্থা কেন?কি হয়েছে সত্যি করে বল!”
শিহাব মুখ কাচুমাচু করে বলতে থাকে,
— “আব… কিছু না। কিছু হয়নি আমার।”
উৎস দুই আঙ্গুল কপালে স্লাইড করতে থাকে।আড়চোখে প্রমা আর আরিফের দিকে তাকায়। শিহাবের কাঁধে হাত রেখে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলতে থাকে,
— “দেখ আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারি না এবং পছন্দ ও করি না।তাই সোজাসাপ্টাই বলছি, কিছু তো হয়েছে!তাই ভনিতা না করে বলে ফেল।নাহলে আমার রাগ সম্পর্কে তো তোদের ধারণা আছেই।”
শিহাব কিছু বলবে তার আগেই প্রমা উৎসকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “কি হয়েছে আমি বলছি!আজ শিহাব যখন দৌড়ে পালিয়ে গেছিল তখন ভুলবশত ওর মিহুর সাথে ধাক্কা লাগে। কিন্তু সেটা তো ভুলবশত ছিল উৎস!ও তো ইচ্ছে করে করেনি।আর তোরা তো জানিস শিহাবের ঝালে এলার্জি আছে।ও ঝাল একদম সহ্য করতে পারে না।আর মিহু কী করলো? মরিচের গুঁড়ো সোজা ওর মুখে ভরে দিল।লাইক সিরিয়াসলি! ভাবতে পারছিস আজকে যদি শিহাবের কিছু হয়ে যেতো।ওফ!আমি আর ভাবতে পারছি না।”
উৎস এতক্ষন মনযোগ সহকারে প্রমার কথাগুলো শুনছিল।উৎস আড়চোখে শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
— “যা করার তুই করবি শিহাব।মিহুকে শাস্তিটা তুইই দিবি।”
শিহাব ভয়ার্ত কন্ঠে ঢোক গিলে অসহায় দৃষ্টিতে প্রমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।প্রমা মাথা নাড়িয়ে “না আমি তোকে কোনো সাহায্য করতে পারবোনা।যা করার নিজেই কর!”বোঝালো। শিহাবের এই অসহায় দৃষ্টিতেও প্রমা গললো না। উল্টো দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে শিহাবের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। শিহাব কাঁদো কাঁদো মুখ বানিয়ে উৎসকে বলতে লাগে,
— “প্লিজ ভাই!যা করার তুই কর।আমাকে কিছু করতে বলিস না।ঐ মাইয়ার সামনে আর যামু না আমি।ঐ মাইয়া,মাইয়া তো নয় যেনো একটা গুন্ডি।”
উৎস শিহাবের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।এতে অনেক হকচকিয়ে গেল শিহাব।উৎস শিহাবের কাঁধে জোড়ে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে বলে উঠে,
— “কেন করবি না শুনি?”
— “তুই বোঝার চেষ্টা কর ভাই ও মাইয়াকে আমার ভয় করে।”
— “ভয় যখন করে তখন ভয়টা কাটিয়ে ফেল। শাস্তি দে ওকে।কারণ আজকে ও যেটা করেছে সেটা একদম ঠিক করে নি।”
শিহাব আর উৎসর সঙ্গে কথায় না পেরে মাথা নাড়িয়ে “হ্যা আমি পারবো।”বোঝায়।প্রমা উৎসর সামনাসামনি এসে বসে। তারপর উৎসকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “শোন! এই নে লিস্ট। এখানে কারা কিসে পারফর্ম করবে তার নাম দেওয়া আছে।”
উৎস প্রমার কাছ থেকে লিস্ট নেয়। কিছুক্ষণ পর লিস্টটা দেখে বলতে লাগলো,
— “এখানে গানে একজনের নাম এড করে দে।”
প্রমা আনমনে বলে উঠে,
— “কার নাম বল?আমি এড করে দিচ্ছি।”
উৎস বাঁকা হাসি দিয়ে বলে উঠে,
— “সামু!”
প্রমা উৎসর কথা মতো যেইনা নাম এড করতে যাবে তখনি কিছু একটা ভেবে উৎসকে বলতে লাগে,
— “হোয়াট!সামু গান গাইবে! কিন্তু ও তো এখানে এসে নাম দিয়ে যায়নি।ওকি কারো সাথে গান গাইবে‌।নাকি একাই পারফর্ম করবে?”
উৎস অন্যদিকে তাকিয়েই বলে উঠে,
— “আমার সাথেই গান গাইবে।আমরা একসাথে পারফর্ম করবো।”
প্রমা এবার অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেল। জোড়ে চিৎকার করে বলে উঠলো,
— “হোয়াট!ওমাইগড।আজ পর্যন্ত অনেক মেয়েই তোর সাথে গানে পারফর্ম করতে চেয়েছে বাট তুই তাদের রিজেক্ট করেছিস। তারমানে আমি ঠিকই ভেবেছিলাম।তোদের মধ্যে কিছু চলছে।খবরটা শুনে খুব খুশি হলাম।আমি বরং আন্টিকে জানিয়ে দেই কেমন?উনি অনেক বেশিই খুশি হবেন তোদের এই গুড নিউজের কথা শুনে। বিয়ের ডেট ও ফিক্স করে ফেলতে পারে।ওফফ কতদিন ধরে বিয়ে খাইনা!এবার তোর বিয়ে খাবো।ভাবতেই আনন্দ লাগছে।”
বিরক্তিতে ছেয়ে যায় উৎসর মুখ। শিহাব দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে প্রমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
— “বিয়ে আবার কেউ খায় নাকি?খায় তো বিয়ের খাবার! এজন্যই তো বলি তুই ছাগলি।”
শিহাবের কথা শুনে প্রমা ফুঁসে ওঠে।প্রমা শিহাবকে রেগে বলতে থাকে,
— “বলদ,ছাগল, শয়তান।”
শিহাব হাসতে থাকে। শিহাবের হাসিতে আরো রেগে যায় প্রমা।প্রমা রেগে শিহাবকে আরো কিছু বলবে তার আগেই উৎস চিৎকার করে বলে উঠে,
— “স্টপ!”
প্রমা আর শিহাব কিছু না বলে মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করে বসে থাকে।উৎস নিজেকে শান্ত করে বলে উঠে,
— “আর প্রমা শোন আমার আর সামুর মধ্যে কিছুই চলছে না।আর তুই কিনা বিয়ে পর্যন্ত চলে গেছিস।আর আম্মুকে ফোন করে এসব যদি বলেছিস তাহলে তোদের যে কি হাল করবো তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছিস?”
প্রমা আর শিহাব কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে”হ্যা”বোঝায়।
____________________
— “আমার খুব ভয় করছে রে মিহু তোকে নিয়ে।”
মিহু বার্গারে কামড় দিয়ে বললো,
— “হোয়াই?”
রুহি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সামুর দিকে তাকালো।সামু একদম ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে।যেনো কিছুই ঘটেনি। এতক্ষন ধরে তিনজন বসে আছে ক্যান্টিনে।মিহু যে শিহাবকে মরিচের গুঁড়ো খায়িয়েছে। তাতে অনেক ভয় পেয়ে আছে রুহি।কারন ওরা সিনিয়র!মিহুর যে কি হাল করবে শিহাব সেটা নিয়ে অনেক টেনশনে আছে রুহি।রুহি নখ কামরাতে কামরাতে বলে উঠে,
— “তোরা এমন ভাবে শান্ত হয়ে বসে আছিস কী করে?তোদের ভয় করেনা?শোন মিহু শিহাব ভাইয়াকে সবাই যতোই রসিক একজন মানুষ হিসেবে জানুক না কেন ওনার রাগ সম্পর্কে তোদের ধারণাও নেই।”
রুহির কথায় ভ্রু কুঁচকে এলো সামুর।সামু আগের মতোই ভাবলেশহীন ভাবে বসে থেকে বলতে লাগে,
— “মিথ্যা কথা বলা অফ কর রুহি।আর বাই দ্যা ওয়ে তুই এতো জানিস কি করে?এনিহাও ওনার সঙ্গে তোর কিছু চলছে নাকি?”
সামুর কথা শুনে রুহির মাথায় হাত পড়লো।রুহি সিরিয়াস ভঙ্গিতে গলা খাঁকারি দিয়ে বলা শুরু করলো,
— “আমার এক কাজিন আছে এখানে পড়াশোনা করে।ওর কাছ থেকেই শুনেছি।শিহাব ভাইয়াকে যতোই রসিকতা করতে দেখা যাক না কেন?ওমনি ঠিক এর থেকেও বেশি গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ।তোরা নতুন! আস্তে আস্তে দেখতে পাবি।”
রুহির কথায় সামুকে বেশ অবাক হতে দেখা গেল। কিন্তু মিহুকে আগের মতোই বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
চলবে……..