হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-২২

0
537

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_২২
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

উৎস সামুর দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। দরজায় টোকা দিয়ে বলে উঠে উৎস,
— “ভেতরে আসবো?”
পরিবর্তে ভেতর থেকে কোনো শব্দই আসে না।উৎস দ্বিতীয়বারের মতো রেগে বলে,
— “কি হলো ভেতরে আসবো কি আসবো না?তা তো বলবে নাকি?”
ভেতর থেকে চাপা কান্নার শব্দ শুনতে পায় উৎস।হ্যা সামুর ঘর থেকেই কান্নার শব্দটা আসছে।উৎস দরজাটা কিছুটা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল।উৎস ধীর পায়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।উৎস দেখলো সামু বসে বসে কাঁদছে।তা দেখে উৎস ভ্রু কুঁচকালো।উৎস সামুর সামনাসামনি এসে দাঁড়ালো!সামুকে বললো,
— “কাঁদছো কেন?”
সামু কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগে,
— “আপনি এখন আমাকে অনেক বকবেন তাইনা?”
বিপরীতে উৎস অবাক হয়ে সামুকে জিজ্ঞাসা করে,
— “তুমি কি করে জানলে?”
সামু এবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয়।আর বলতে থাকে,
— “তারমানে আমি ঠিকই ধরেছিলাম। আপনি আমাকে বকবেন!”
উৎস সামুর পাশে বসে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলতে থাকে,
— “লিসেন এসব যে তোমার সাজানো ড্রামা!সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।”
সামু বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে উৎসকে বলতে থাকে,
— “ওহ তারমানে এটা আপনার কাছে ড্রামা মনে হচ্ছে রাইট!”
উৎসর স্পষ্ট জবাব,
— “হুম অবশ্যই ড্রামা মনে হচ্ছে।”
সামু রেগে বলতে থাকে,
— “আশ্চর্য!আমি তো…..”
এতটুকু বলেই চুপ হয়ে গেলো সামু।উৎস বাঁকা হাসি দিয়ে সামুকে বলে,
— “আমি তো কি বলো? বলছো না কেন?”
সামু আমতা আমতা করে বলতে থাকে,
— “কিছুনা!”
উৎস এবার গলা খাঁকারি দিয়ে সামুকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “আচ্ছা এসব বাদ দাও।এখন আপনাকে কি একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি মিস সামু?”
সামু একটা ঢোক গিলে।কারণ উৎসর কথা বলার ধরণ সামুর ঠিক লাগছেনা।সামু আমতা আমতা করে বলতে থাকে,
— “হ্যা বলুন!”
উৎস নিজের ফুল এটিটিউড নিয়ে বলতে লাগলো,
— “আমাদের বিয়ে কবে হলো সামু?”
সামু যা ভয় পেয়েছিল তাই হলো।সামু মুখ কাচুমাচু করে বলতে লাগলো,
— “এমা কখন বিয়ে হলো আমাদের? আপনি ঠিক আছেন তো?কি সব বলছেন?”
উৎস হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে কপালে স্লাইড করছে। কিছু সময় পরে উৎস দাঁতে দাঁত চেপে সামুকে বলতে থাকে,
— “জেনেও না জানার ভান কেন করছো সামু?আমি এর থেকে বেশি রেগে গেলে কিন্তু খুব একটা ভালো হবেনা।তাই বলে ফেলো কেন এসব করেছো?”
সামু সামনে পড়ে থাকা চুলগুলোকে কানের পিছনে গুঁজে দিল। তারপর উৎসর চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
— “ঐ বাচ্চাগুলোর জন্য!জানেন ওদের থাকার জায়গাটুকুই ঐ রাস্তা। যেখানে তারা সারাদিন ভিক্ষে করে যতটুকু পায় সেটাই তাদের সম্বল।ঐ এতো খাবারের কথা যদি বলেন তাহলে আমি বলবো ঐ খাবারগুলো আমি বাচ্চাদের দিয়ে দিয়েছি।আর তখন আমার মাথায় যা এসেছে আমি ঠিক তাই করেছি। আচ্ছা টাকাগুলো আমি আপনাকে দিয়ে দিচ্ছি।”
সামু উঠে যেতে চাইলে উৎস সামুর হাত ধরে টেনে ওকে আবার ওর জায়গায় বসিয়ে দেয়।উৎস সামুর হাত ছেড়ে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে উঠে দাড়ায়। তারপর সামুকে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
— “আমি কি বলেছি আমার টাকা ফেরত লাগবে?”
সামু মাথা নাড়িয়ে”না”জানায়।উৎস এতে মুচকি হাসে,পকেট থেকে একটা গোলাপ বের করে সামুর কানের পিছনে চুলে গুঁজে দেয়। এরকম কিছু যে ঘটবে সেটা কখনো ভাবতেই পারেনি সামু।উৎস সেইদিকে খেয়াল না করে শিষ বাজাতে বাজাতে রুম থেকে চলে গেল।সামু এখনো শকে আছে।কি থেকে কি হয়ে গেল সব সামুর মাথার ওপর দিয়ে গেছে।
_________________________
“কিছু অপ্রকাশিত কথা লিখেছি গোপনে,
তোমারই অপেক্ষায় রেখেছি সযত্নে।
অপেক্ষার প্রহর কত হবে জানা নেই!
তবুও বলবো ভালোবাসি! অনেক ভালবাসি প্রিয়।”
~বৃন্দা~
পড়েই ডায়েরিটি বন্ধ করলো সামু। নিজেকে নিজেই বলতে থাকে,
— “কবে যে অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে?তবে হবে একদিন অবশ্যই।তবে সেই দিনটা আমার জন্য অনেক স্পেশাল।”
ডায়েরিটির ওপর উৎসর দেওয়া গোলাপটা রাখল সামু। কিছুক্ষণ ডায়েরিটির দিকে তাকিয়ে তারপর চলে গেল ঘুমোতে।
_________________________
এভাবেই কেটে যায় ৩ মাস।এই ৩ মাসে উৎস আর সামুর ঝগড়া একটুও কমেনি বরং বেড়েছে।সব ঠিক চলছে কিন্তু মাঝখান থেকে মিথিলা আর ভার্সিটি আসেনি।সেদিন উৎস সবাইকেই বলে দিয়েছে ওটা একটা ফেক নিউজ ছিল।সে এখনো বিয়ে করেনি।সবার বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এখন আর কেউ এই ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামায় না।দিনদিন মিহুর প্রতি শিহাবের কেয়ারিং, ইচ্ছে করে ঝগড়া করতে আসা,এই বিষয়গুলো মিহুকে অনেক বেশিই ভাবাচ্ছে। বর্তমানে লাইব্রেরীতে বসে আছে রুহি,সামু আর মিহু।সামু মিহু আর রুহিকে বলতে থাকে,
— “কিরে আমার দিকে এরকম ভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”
রুহি রাগমিশ্রিত কন্ঠে সামুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
— “এখন এই মুহূর্তে তোকে যা কিছু জিজ্ঞেস করবো তার ঠিক ঠিক উত্তর দিবি তো?”
সামু অবাক হয়ে যায় রুহির কথা শুনে।সামু হাসিমুখেই বলে,
— “হুম বল!”
রুহি আর মিহু একে অপরের দিকে তাকায়। তারপর মিহু সামুকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “তোর আর উৎস ভাইয়ার মধ্যে কি চলছে রে?”
সামু ভ্রু কুঁচকে বলে,
— “কি চলবে?”
রুহি এবার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে মিহুকে বলতে থাকে,
— “বুঝলি মিহু! সামু এখন সবকিছু জেনেও না জানার ভান করছে।”
সামু এবার বলে,
— “দেখ তোরা যা বলার আছে সোজাসাপ্টা বল!এভাবে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলবি না।”
— “হুম তাহলে বলেই দেই,শোন তাহলে আমার আর রুহির ধারণা তুই আর উৎস ভাইয়া দুজন দুজনকে ভালবাসিস কজ আমাদের আজকাল তোদের কে দেখেই এরকম মনে হয়।”(মিহু)
— “আমি কি একবারো বলেছি যে আমি ওনাকে ভালবাসি আর উনিই কি বলেছেন কখনো যে উনি আমাকে ভালবাসেন?”(সামু)
— “না!”(মিহু)
— “তাহলে এরকম বলেছিস কেন?”(সামু)
রুহি আর মিহু কিছু বলবে তার আগেই ওদের সামনে আসে মিথিলা। মিথিলার চোখ ফোলা মনে হয় অনেক কেঁদেছে।সামু এরকমই ভাবছে।সামু মিথিলাকে হাসিমুখে বলে উঠে,
— “আরে মিথিলা আপু যে! এতদিন পর। কোথায় ছিলে এতদিন?”
মিথিলা সামুকে বলতে থাকে,
— “এসব কথা পরেও বলা যাবে।এখন একটু ক্যান্টিনে চলো!কথা আছে তোমার সাথে। খুব আর্জেন্ট!”
চলবে…….