#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(২৪)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(৬১)
কিছুসময় পূর্বে সন্ধ্যাকে ক্লিনিকে এনে ভর্তি করানো হয়েছে। অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে থাকা চেয়ারগুলোতে চিন্তিত, বিষন্ন মুখশ্রী নিয়ে বসে আছেন সাগরিকা চৌধুরী সহ চৌধুরী পরিবারের মধ্যবয়সের সকল সদস্যরা। কুশল চিন্তিত মুখশ্রী নিয়ে পায়চারী করছে। তরুনিমা ওদের থেকে কিছুটা দূরে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁত দিয়ে ডান হাতের কনিষ্ঠা আঙুলের নখ কা*ট*ছে আর ভাবছে….
—“এই ক্লিনিকেই তো উনি নিলাদ্র ভাইয়াকে ভর্তি করিয়েছিলেন। তাহলে এই ক্লিনিকেই সন্ধ্যাকে কেনো ভর্তি করালেন? যদি সেই অজানা শ*ত্রু কোনো ভাবে জানতে পারেন যে নিলাদ্র ভাইয়া বেঁচে আছেন তখন কি হবে! এই বিষয় নিয়ে আমার ওনার সাথে কথা বলা দরকার। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কথা কি করে বলবো!”
কিছুসময় চিন্তা করার পর তরুনিমা স্থান ত্যগ করে। তরুনিমা চলে যেতেই কুশলের ফোন বেজে উঠে। কুশল ওর পকেট থেকে ফোন বের করতেই ফোন স্ক্রিণে তরুর হাস্স্যোজ্জ্বল মুখশ্রী ভাসতে দেখে সামনের দিকে তাকাতেই দেখে তরু আশেপাশে নেই। কুশল কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তরুর কন্ঠস্বর ভেসে আসে…..
—“কোনো প্রশ্ন না করে দ্রুত বাহিরে আসুন।”
এই বলেই তরুনিমা কল কেটে দেয়। কুশল ফোন পকেটের ভিতর রেখে বাহিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। কামিনী বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে ভ্রু কুঁচকে কুশলের যাওয়ার পানে কিছুসময় তাকিয়ে থেকে পরক্ষণেই দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। কুশল ক্লিনিকের বাহিরে এসে তরুকে খুঁজতে শুরু করে। ক্লিনিকের পিছন পার্শে আসতেই একটা হাত কুশলের হাত ধরে টান দিতেই কুশল অন্যহাত দিয়ে তাকে মা*র*তে উদ্যত হলে তরু দ্রুত কন্ঠে বললো…..
—“আরে আমি আমি..তরুনিমা!”
কুশল তরুর এমন কাজে কিছুটা অবাক হয়। পরক্ষণেই তরুর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থির করে প্রশ্ন করলো…..
—“কি হয়েছে? হঠাৎ এখানে নিয়ে আসলে কেনো?”
—“সবাই তো আপনাকে খুব বুদ্ধিমান ছেলে বলে মনে করে। কিন্তু আমি তো আপনার মাঝে বুদ্ধির কোনো ছিটেফোঁটাও দেখতে পারছি না।”
—“আমি যতোই ভালো কাজ করি না কেনো তোমার চোখে কখনও আমার ভালো দিক গুলো পড়বে না আমি জানি।”
—“পড়বে কি করে! তাড়াহুড়োর বসে আপনি কতো বড় একটা ভুল কাজ করে বসেছেন তা কি জানেন!”
—“কি করেছি আমি?”
—“এই একই ক্লিনিকে আপনি গতকাল রাতে নিলাদ্র ভাইয়াকেও ভর্তি করিয়েছিলেন তা হয়তো আপনার খেয়াল ই নেই। এখন যদি সেই অজানা শ*ত্রু নিলাদ্র ভাইয়ার বেঁচে থাকার খবর জেনে যায় তখন কি হবে! না পারবেন নিলাদ্র ভাইয়াকে বাঁ…..!”
তরুনিমা পুরো কথা শেষ করার পূর্বেই কুশল তরুর ঠোঁটের উপর নিজের ডান হাতের শাহাদত আঙুল ঠেকিয়ে ওকে চুপ করিয়ে দিয়ে নিজের মুখ তরুর কানের কাছে নিয়ে ধীর স্বরে বললো…
—“তোমার স্বামী এতো বোকা না যে তাড়াহুড়োর বসে এমন কোনো ভু*ল কাজ করে বসবে যার ফলে নিজের প্রিয় মানুষদের জীবন ঝুঁ*কি*র মধ্যে পড়বে। তাই অত্যাধিক চিন্তা করে নিজের শরীর খারাপ করো না বউ। আর এভাবে নির্জনে ডেকে এনো না আমাকে বারবার কে জানে কখন আবার আমার প্রেমে যাও তুমি।”
কথাটুকু বলেই কুশল তরুর কাছে থেকে সরে এসে পেন্টের পকেটে দু’হাত রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। কুশলকে নিজের এতো কাছাকাছি আসতে দেখে তরু যেনো ফ্রীজড হয়ে গিয়েছে। পরক্ষণেই কুশল তরুর চোখের সামনে তুঁড়ি বাজাতেই ওর ধ্যন ভে*ঙে যায়। তরু কুশলের দিকে একপলক তাকিয়ে সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে এক ছুটে ক্লিনিকের ভিতরে চলে যায়। কুশল তরুর যাওয়ার পানে কিছুসময় তাকিয়ে থাকে অতঃপর নিজেও ক্লিনিকের ভিতরে প্রবেশ করে।
(৬২)
ঘন্টাখানেক পূর্বে সন্ধ্যাকে কেবিনে সিফট করা হয়েছে।
সন্ধ্যার সেন্স ফিরলে চৌধুরী পরিবারের সিনিয়র সদস্যরা ওর সাথে সাক্ষাৎ পর্ব শেষ করে বাড়িতে চলে গিয়েছেন। ক্লিনিকে এখন শুধু কুশল আর তরুনিমা রয়ে গিয়েছে সন্ধ্যার প্রয়োজন-অপ্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখার জন্য। সন্ধ্যার কেবিনের বাহিরে রাখা চেয়ারে পাশাপাশি বসে আছে কুশল-তরুনিমা। তরু শান্ত স্বরে কুশলকে বললো….
—“নিলাদ্র ভাইয়ার সত্যটা সন্ধ্যাকে জানিয়ে দিন। আজ একবার নিজের ক্ষতি করেছে কাল যে আবার এমন কাজ করবে না তারই বা কি নিশ্চয়তা আছে বলুন! আর তাছাড়া সন্ধ্যা তো নিলাদ্র ভাইয়াকে ভালোবাসে তাই ওকে সম্পূর্ণ পরিস্থিতি সম্পর্কে বুঝিয়ে বললে ও এমন কোনো কাজ করবে না যার ফলে নিলাদ্র ভাইয়ার জীবন আবারও ঝুঁ*কির সম্মুখীন হবে।”
কুশল তরুনিমার দিকে কিছুসময় শান্ত দৃষ্টি স্থির করে রাখে। পরক্ষণেই কোনো প্রতিত্তুর না করে বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার কেবিনের ভিতরে প্রবেশ করে। তরুনিমা চেয়ারের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে কপালের উপর ডান ভাজ করে দু’চোখ বুঁজে ফেলে।
কুশল সন্ধ্যার কেবিনের ভিতর প্রবেশ করতেই দেখে সন্ধ্যা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। কুশল ধীর পায়ে এগিয়ে সন্ধ্যার মাথার ডান পাশে চেয়ার টেনে বসে। সন্ধ্যা চোখ মেলে কুশলের দিকে তাকায়। কুশল সন্ধ্যার উপর নিজের দৃষ্টি স্থির রেখে শান্ত কন্ঠে বললো…..
—“তুই আমাদের পরিবারের সবথেকে ছোট সদস্য। আদরে, শাসণে, ভালোবাসায় কখনও কোনো ত্রুটি রাখি নি। তোর সকল আবদার হাসিমুখে পূরণ করার চেষ্টা করেছি সবসময়। সেই তুই নিজের শরীরে আ*ঘা*ত করার আগে একটাবার আমাদের কথা চিন্তা করলি না বোন!”
কুশলের কথায় সন্ধ্যার চোখ ছলছল করে উঠে। কিছুসময় পর কুশল আবারও বললো….
—“আজ যদি তোর কিছু হয়ে যেতো তাহলে কাল আমি নিলাদ্রকে কিভাবে মুখ দেখাতাম!”
সন্ধ্যা অবাক স্বরে কুশলকে বললো…
—“ওনাকে কিভাবে মুখ দেখাবে মানে! উনি তো…উনি….!”
সেইসময় তরুনিমা কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে সন্ধ্যার দিকে অগ্রসর হতে হতে বললো….
—“নিলাদ্র ভাইয়া বেঁচে আছে সন্ধ্যা।
সন্ধ্যা অবাক দৃষ্টি নিয়ে একবার কুশলকে দেখছে তো আরেকবার তরুনিমাকে। নিজের কানকে যেনো সে বিশ্বাস করতে পারছে না। কুশল সন্ধ্যার ডান হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো….
—“হুম নিলাদ্র বেঁচে আছে, সন্ধ্যা।”
সন্ধ্যা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো….
—“তাহলে আজ সকালে বাসায় যার লা*শ এনেছিলে সে কে ছিলো?”
—“নিলাদ্রকে বাহিরের সকলের সাথে মৃ*ত প্রমাণ করতে অন্যরকম লা*শ এনে মি*থ্যে নাটক করিয়েছিলাম আমি।”
—“কিন্তু কেনো? এমন করার কারণ কি মেজো ভাইয়া?”
অতঃপর কুশল সন্ধ্যাকে সম্পূর্ণ পরিস্থিতির কথা জানিয়ে দেয়। কুশলের মুখে সম্পূর্ণ বিষয়টা শুনে সন্ধ্যা স্তব্ধ কন্ঠে বললো….
—“কাকে সন্দেহ করছো তুমি মেজো ভাইয়া?”
কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“এটা অনুমান করে বের করার মতো বিষয় না সন্ধ্যা। তবে খুব তাড়াতাড়ি প্রমাণ সরূপ আমি আসল কা*ল*প্রি*ট*কে খুঁজে বের করবো। ততোদিন পর্যন্ত এই সত্যটা তুই আমি আর তরুনিমা ব্যতিত ৪র্থ কোনো ব্যক্তি যেনো না জানে সেই বিষয়ে সতর্ক থাকবি।”
—“তুমি নিশ্চিন্ত থাকো মেজো ভাইয়া। আমি কাওকে জানতে দিবো না ওনার বেঁচে থাকার সত্যটা। শুধু শেষ একটা অনুরোধ করবো রাখবে তুমি?”
—“বল।”
—“আমি ওনাকে একবার দেখতে চাই মেজো ভাইয়া।”
—“ঠিক আছে, তুই আগে সুস্থ হয়ে ওঠ। তারপর আমি তোকে নিয়ে যাবো নিলাদ্রের কাছে।”
কুশলের কথায় সন্ধ্যার ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠে। কুশল সন্ধ্যার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বসাবস্থা থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো…..
—“তুই এখন রেস্ট কর। আমরা আবার পরে আসবো।”
সন্ধ্যাও হাসিমুখে চোখ বুঁজে নেয়। অতঃপর কুশল আর তরুনিমা কেবিন থেকে বেড়িয়ে দরজার পাশে রাখা চেয়ার গুলোতে পাশাপাশি বসে। তরুনিমা শান্ত স্বরে বললো….
—“নিলাদ্র ভাইয়ার বিষয়ে ডাক্তার আকরাম কি আপনাকে আর কিছু জানিয়েছেন?”
—“হুম।”
—“কি জানালেন?”
—“আজ নিলাদ্রের আরেকটা অপারেশন হবে। তারপর নিলাদ্র আর নিলাদ্র থাকবে না। ওর চেহারা, পরিচয় সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে।”
—“প্লাস্টিক সা*র্জা*রি করাতে হবে?”
—“হুম।”
—“অপারেশন সাকসেসফুল হয়ে গেলে নিলাদ্র ভাইয়ার জীবন নিয়ে আর কোনো প্রকার ঝুঁ*কি থাকবে না। একবার নতুন চেহারা আর নতুন পরিচয় তৈরি হলে কোনো শ*ত্রু*র তাঁকে চেনার সাধ্য হবে না।”
চলবে ইনশাআল্লাহ……….
#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(২৫)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(৬৩)
ডাক্তার আকরাম সহ বাহির থেকে আগত ২জন সার্জারী বিশেষজ্ঞ মিলে নিলাদ্রের নতুন চেহারা প্রদানের জন্য অপারেশন করছেন ২ঘন্টা হলো। অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে চিন্তিত মুখশ্রী নিয়ে পায়চারী করছে কুশল। দরজার সামনে রাখা চেয়ারে বসাবস্থায় তরুনিমা শান্ত কন্ঠে কুশলকে বললো….
—“আপনি একটু স্থির হয়ে বসুন প্লিজ।”
—“আমার খুব টেনশন হচ্ছে নিলাদ্রকে নিয়ে তরুনিমা।”
—“টেনশন করবেন না। ইনশাআল্লাহ নিলাদ্র ভাইয়ার অপারেশন ভালোভাবেই সম্পন্ন হবে। এখন আমার এসে এসে বসুন তো আপনি, আসুন।”
কুশল শান্ত ভঙ্গিতে তরুর পাশের চেয়ারের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসে কপালের উপর এক হাত ভাঁজ করে চোখ বন্ধ করে নেয়। তরু কুশলের দিকে তাকিয়ে বললো….
—“আপনার কি মাথা ব্য*থা করছে?
কুশল ওভাবে থেকেই প্রতিত্তুর করলো….
—“হুম মাথা কিছুটা ধরেছে।”
—“সময়টাই যাচ্ছে এমন মাথার আর কি বা দো*ষ!”
—“তরুনিমা এই মূহূর্তে তোমার কাছে যদি একটা ছোট্ট আবদার করি রাখবে!”
—“কি ধরণের আবদার?”
কুশল ওর কপালের উপর থেকে হাত নামিয়ে তরুর দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে বললো….
—“আমার মাথাটা একটু টি*পে দিবে?”
কুশলের এমন আবদারে তরু বেশ অবাক হয়। কিন্তু মুখ দিয়ে ‘না পারবো না’ বাক্যটি উচ্চারণ করার শক্তি সে পাচ্ছে না। কুশল আরো কিছুসময় তরুর দিকে তাকিয়ে রয়। তরুকে কোনো প্রতিত্তুর করতে না দেখে কুশল বললো….
—“নিরবতাই সম্মতির লক্ষ্মণ।”
এই বলে কুশল তরুকে কিছু বুঝে উঠার সুযোগ না দিয়েই ওর কোলের উপর মাথা রেখে বাকি চেয়ারগুলোর উপর শরীর এলিয়ে দেয়। কুশলের এমন কাজে তরু যেনো অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। কুশল তরুর ডান হাত নিজের কপালের উপর রেখে বললো….
—“এখন যদি তুমি আমাকে নি*র্ল*জ্জ বলো তাতেও আমার কিছু যায় আসবে না। তোমার প্রশ্ন শুনে আমার মাথা ব্য*থা বেড়েছে। দো*ষ যেহেতু তুমি করেছো তাই শা*স্তি সরূপ তোমাকে আমার মাথা টি*পে দিতেই হবে।”
এই বলে কুশল চোখ বুঁজে নেয়। সম্পূর্ণ বিষয়টা হ*জ*ম করে নিয়ে স্বাভাবিক হতে তরুর কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। অতঃপর তরু কুশলের মাথা টি*পে দিতে শুরু করে। অদ্ভুত বিষয় নিজের এতো কাছে কুশলের অবস্থান বুঝেও তরুর মাঝে কোনোরূপ অ*স্ব*স্তি বোধ হচ্ছে না বরং অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। যেই অনুভূতির মাঝে নেই কোনো খারাপ লাগা, বি*র*ক্তি বা রাগের চিহ্ন। এটাই বোধ হয় পবিত্র সম্পর্কের মাঝে কাজ করা অদৃশ্য কোনো ভালোলাগার অনুভূতি।
(৬৪)
সন্ধ্যার কেবিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দরজার উপরিভাগে লাগানো ছোট কাঁচের অংশ ভেদ করে ঘুমন্ত সন্ধ্যার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে সাদিক বললো…..
—“নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য কাওকে পাগলের মতো ভালোবাইসা নিজের জীবন শে*ষ করতে দেখার মতো জ*ঘ*ন্য অনূভুতি হয়তো পৃথিবীতে আর ২য় কিছুতে হয় না।”
এই বলে সাদিক ওর ডান হাতের উল্টোপিঠ দিয়া চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রুকণাগুলো মুছতে মুছতে স্থান ত্যগ করে।
(৬৫)
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল গেইটের সামনে ফুলের মালা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তমিজ তালুকদার ও তমিজ তালুকদারের পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট রাব্বি। তাদের থেকে কিছুটা দূরে নেভি ব্লু পোশাকধারী ১০ জন গার্ডস ব*ন্দু*ক হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সেইসময় কারাগারের মূল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দু’জন কন্সটেবল দরজা খুলে দিলে বাহিরে বেড়িয়ে আসেন তমিজ তালুকদারের একমাত্র ছেলে তওকির তালুকদার তাহির। দীর্ঘ ৫ বছর পর তাহির কারাগার থেকে মুক্তি পেলো। অগোছালো চুল, গাল ভর্তি দাঁড়ি, চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গিয়েছে তাহিরের। তমিজ তালুকদার তাহিরের কাছে এসে মালা ওর গলায় পড়িয়ে দিয়ে বললেন….
—“আহহহ, আমার টাইগার বেটা অবশেষে জেলখানা থেকে বেড়িয়ে এসেছে। তোকে ছাড়া তালুকদার ভিলা এতোদিন মরুভূমিতে পানিশূন্যতার মতো খাঁ খাঁ করছিলো। আজ তোর পা তালুকদার ভিলাতে পড়ার সাথে সাথে তালুকদার ভিলার প্রাণ ফিরে আসবে। চল বেটা বাড়ি চল। সবাই তোকে দেখার জন্য অপেক্ষা করছে যে।”
তাহির ওর গলা থেকে ফুলের মালাটা খুলে রাব্বির হাতে দিয়ে গম্ভীর স্বরে বললো…
—“হুম চলো বাড়িতে। আমার একটু আরাম করে ঘুমানো প্রয়োজন। তারপর আগামীকাল যাদের কাছে পুরোনো কিছু হিসেব জমা পরে আছে তাদেরকেও আমার দর্শন দিতে যেতে হবে। আর আমার জানপাখিটাকেও দেখার জন্য মন ভিষণ অস্থির হয়ে আছে। এখন তো অনেক বড় হয়ে গিয়েছে সে। বিয়ের বয়স ও হয়েছে নিশ্চয়ই।”
তাহিরের মুখে এমন কথা শুনে তমিজ তালুকদারের চেহারায় চিন্তার ছা*প ফুটে উঠে। অতঃপর ওরা গাড়িতে উঠে বসে তালুকদার ভিলার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে।
(৬৬)
কুশল তরুর কোল থেকে মাথা তুলে উঠে বসে ঘাড় এপাশ-ওপাশ নাড়াতে নাড়াতে বললো…
—“তোমার হাতে কি কোনো জাদু আছে বউ! এইটুকু সময় মাথা টি*পে দিলে এতেই আমার মাথা ব্য*থা পুরোপুরি গা*য়ে*ব হয়ে গেলো। আমি তো ঠিক করেই নিলাম এরপর থেকে যখনি আমার মাথা ব্য*থা করবে তোমার থেকে মাথা টি*পে নিবো।”
তরু চোখ ছোট ছোট করে কুশলের দিকে তাকিয়ে বিরবিরিয়ে বললো…..
—“ইসসস…খা*রু*শের মাথা টিপে দিতে আমার যেনো কতো ঠ্য*কা পড়ে গিয়েছে! আজ ১ম দিয়েছে আজই শেষ এরপর আর কখনও দিতে পারবো না।”
এই বলেই মুখ বাঁ*কিয়ে অন্যদিকে দৃষ্টি স্থির করে তরুনিমা। সেইসময় অপারেশন থিয়েটারের দরজার উপর জ্বলতে থাকা লাল বাতিটা বন্ধ হয়ে যায়। ও.টির দরজা খুলে বেড়িয়ে আসেন ডাক্তার আকরাম সহ বাকি ২জন সার্জন বিশেষজ্ঞ। কুশল আর তরুনিমা বসাবস্থা থেকে উঠে ডাক্তার আকরামের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই তিনি হাসিমুখে বললেন…
—“আল্লাহর অশেষ রহমতে সৌহার্দ্য ইশরাকের অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। কিছুসময় পর ওনাকে কেবিনে সিফট করা হবে। ওনার সম্পূর্ণ মুখে ব্য*ন্ডে*জ করে রাখা হয়েছে। ২৪ ঘন্টা পর আপনারা ওনার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবেন। ইনশাআল্লাহ ১০দিন পর ওনার মুখের ব্য*ন্ডে*জ খুলে ফেলা যাবে। আর উনি সম্পূর্ণ নতুন চেহারা নিয়ে পুরোপুরি ভাবে সুস্থ জীবন কাটাতে পারবেন।”
ডাক্তার আকরামের মুখে সৌহার্দ্য ইশরাক নামটা শুনে তরুনিমা অবাক দৃষ্টি নিয়ে কুশলের দিকে তাকায়। কুশল ডাক্তার আকরামকে ধন্যবাদ জানায়। অতঃপর ডাক্তার আকরাম স্থান ত্যগ করলে কুশল চেয়ারে বসতে বসতে শান্ত স্বরে বললো….
—“এতো বেশি অবাক হচ্ছো যে! নিলাদ্রের নতুন চেহারা, নতুন নাম-পরিচয় দিতে হবে ভুলে গেলে নাকি! নিলাদ্রের নতুন নামই হলো সৌহার্দ্য ইশরাক। গত পড়শু যখন এই ক্লিনিকে ওকে ভর্তি করিয়েছিলে তখন রিসেপশনের ভর্তি ফর্মে তো নিলাদ্রের আসল নামই লিখেছিলে। নিলাদ্রের জীবন নিয়ে সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত থাকতে আমি রিসেপশনে কাজকৃত মহিলাটিকে মোটা টাকা দিয়ে নিলাদ্রের নতুন নাম ও পরিচয় এডড করিয়ে পুরোনো ডিটেইলস রিমুভ করিয়ে নিয়েছি। তাই আমাদের গোপন শ*ত্রু এই পুরো ক্লিনিকে চিরুনি ত*ল্লা*শি করেও নিলাদ্রকে খুঁজে বের করতে পারবে না।”
কুশলের এতো নিখুঁত পরিকল্পনা শুনে তরুর মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গিয়েছে৷ কুশল বাঁকা হেসে বললো….
—“মুখ বন্ধ করো নয়তো মুখের ভিতর মশা-মাছিরা প্রবেশ করে নিজেদের সংসার বসাবে।”
কুশলের এমন কথা শোনামাত্র তরু ঘে*ন্না*য় চোখ-মুখ কুঁচকে নিয়ে বললো….
—“ষ্য*হ…কি বা*জে কথাবার্তা।”
তরুর মুখের অবস্থা আর কথাটুকু শুনে কুশল শব্দ করে হেসে উঠে। তরু আর সেখানে না দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার কেবিনের দিকে হাঁটতে শুরু করে।
পরক্ষণেই কুশল হাসি থামিয়ে বসাবস্থা থেকে উঠে ক্লিনিকের বাহিরে চলে আসে। সেইসময় সাদিক কুশলের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো….
—“স্যার…চাষীর মেয়েকে ধ্ব*র্ষ*ণের পর হ*ত্যা*র চেষ্টা করায় আগামী পড়শু মেম্বারের ছেলের বিচারের বৈঠকখানা বসার কথা ছিলো।”
—“মেয়েটার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন?”
—“মেয়েটি আগের তুলনায় অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছে। তাই আজই ওকে ক্লিনিক থেকে রিলিজ করে দিবে বলেছেন, স্যার।”
—“আগামীকাল বিকালে আমি গ্রামে যাবো। আর মেয়েটাকেও সাবধানে গ্রামে তার নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো। ওর বাড়ির চারপাশে গার্ডসদের পাহাড়া দিতে বলবে ২৪ ঘন্টা।”
—“ঠিক আছে, স্যার।”
এই বলে সাদিক চলে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ………….
#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(২৬)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(৬৭)
তমিজ তালুকদার ও তাহির, তালুকদার ভিলার মূল দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই তমিজ তালুকদারের স্ত্রী রেবেকা তালুকদার হাসিমুখে তাহিরের সামনে এসে দাঁড়ায়। অতঃপর রেবেকা হাত দিয়ে ইশারা করতেই ২জন কম বয়সী কাজের মেয়ে লাল চাদরে ঢাকা দুইটা ট্রে হাতে নিয়ে রেবেকার হাতের দুইপাশে এসে মাথানিচু করে দাড়ায়। রেবেকা দুইহাত দিয়া একসাথে ট্রে দু’টোর উপর থেকে লাল কাপড়টি সরাতেই সেখানে ১হাজার টাকার নতুন নোটের অনেকগুলো বা*ন্ডি*ল দেখা যায়। রেবেকা দুইহাতে দুইটা টাকার বান্ডিল তুলে তাহিরের সামনে ঘুরাতে ঘুরাতে বললেন….
—“আমার ছেলের উপর থেকে সব শ*ত্রু*র ন*জ*র কেটে যাক। আয় বাবু এবার ভিতরে আয়।”
তাহির গম্ভীর মুখশ্রী নিয়েই তালুকদার ভিলার ভিতরে প্রবেশ করে সেখানে একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হয়। রেবেকা কাজের মেয়ে দু’টিকে উদ্দেশ্য করে বললেন…
—“এতো বছর পর আমার একমাত্র ছেলের বাড়িতে ফেরার খুশিতে এই টাকা গুলো পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানো গরিব-মিসকিনদের দান করার ব্যবস্থা করো তোমরা।”
রেবেকা ড্রয়িংরুমে এসে দাঁড়াতেই তমিজকে শান্ত স্বরে বললেন….
—“কি দরকার ছিলো তোমার ছেলের রুমের ডেকোরেশন পরিবর্তন করার! বাড়িতে ঢোকামাত্র সরাসরি নিজের রুমে চলে গিয়েছে তাহির। সম্পূর্ণ পরিবেশ ভিষণ শান্ত হয়ে আছে মানে একটু পর বড় কোনো তা*ন্ড*ব শুরু হবে এটা তারই আভাস দিচ্ছে।”
রেবেকা সোফায় বসে সোফার পাশে রাখা সাইড টেবিলের উপর থেকে পানের বাক্সটা হাতে নিয়ে বাক্সটি খুলে একটা পান তৈরি করতে করতে বললেন….
—“যেই মেয়ের জন্য পাঁচ পাঁচটি বছর আমার ছেলে আমার থেকে দূরে থেকেছে। জেলখানায় অতি ক*ষ্টে*র সাথে প্রতিটি সেকেন্ড পাড় করেছে সেই মেয়ের শতশত ছবি দিয়ে আমার ছেলের রুম সাজানো দেখলে কোন মায়ের তা সহ্য হবে বলো! আমার মনে হয় তাহিরের এখন ঐ মেয়ের কথা মনে নেই। তাই ঐ মেয়ের কোনো চিহ্ন আমি ওর আশেপাশে রাখি নি।”
—“তোমার মনে হচ্ছে তাহির ওকে ভুলে গিয়েছে! তোমাকে অবাক করে দেওয়ার মতো একটা কথা বলি। জেলখানা থেকে বের হওয়া মাত্র তোমার ছেলে আমাকে বলেছে তার জানপাখিকে দেখার জন্য তার মন ভিষণ ব্যকুল হয়ে আছে। আর কালকে তাহির যাবে ঐ মেয়ের সাথে দেখা করতে ওর বাসায় সেটাও বলেছে।”
তমিজ আর রেবেকার কথপোকথনের মাঝেই দোতলায় তাহিরের রুম থেকে ভাং*চু*র করার আওয়াজ ভে*সে আসতে শুরু হয়। তমিজ আর রেবেকা সোফা ছেড়ে উঠে দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে যেতে শুরু করে। তমিজ বললেন….
—“যেটার ভ*য় পেয়েছিলাম সেটাই হলো। এখন এই পা*গ*ল ছেলেকে সামলে রাখাটাই দু*ষ্ক*র হয়ে দাঁড়াবে।”
(৬৮)
সন্ধ্যার কেবিনের বাহিরে রাখা চেয়ারে বসে আছে তরুনিমা। সেইসময় কুশল সেখানে এসে তরুর পাশে বসে শান্ত স্বরে বললো…
—“আগামীকাল সকালে সন্ধ্যাকে রিলিজ দিয়ে দিবে। তোমাদের বাসায় রেখে বিকালে আমাকে গ্রামে যেতে হবে।”
তরু কুশলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো…
—“গ্রামে যেতে হবে কেনো?”
—“সেদিন যেই কাজের জন্য গ্রামে যাবো ঠিক করেছিলাম মাঝখানে এসব স*ম*স্যা হওয়ায় সেই কাজটা তো করা হলো না। তাই কাল গ্রামে যেতে হবে। কয়েকদিন গ্রামে থেকে জমে থাকা কাজগুলো শেষ করে তারপর শহরে ব্যক করবো।”
—“আমিও আপনার সাথে গ্রামে যেতে চাই।”
—“তুমি আমার সাথে গেলে সন্ধ্যার খেয়াল কে রাখবে! ও তো এখনও পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হয়ে উঠে নি।”
—“তাহলে সন্ধ্যাকেও আমাদের সাথে গ্রামে নিয়ে চলুন। গ্রামের মনোমুগ্ধকর পরিবেশের মাঝে কয়েকটা দিন কাটালে সন্ধ্যার ও পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগবে না।”
কুশল কিছুসময় নিরব থাকার পর বললো….
—“ঠিক আছে, যেও তাহলে তোমরা আমার সাথে গ্রামে।”
(৬৯)
তমিজ আর রেবেকা তাহিরের রুমের মূল দরজার সামনে এসে দাড়াতেই দেখলেন তাহির রুমে থাকা সব আসবাবপত্র ভে*ঙে*চু*ড়ে রুমের দূ*রা*বস্থা করে ফেলেছে। তমিজের দৃষ্টি তাহিরের বাম হাতের উপর পড়লে দেখতে পায় একটা বড় ধাঁ*রা*লো কাঁ’চ মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে রাখায় তাহিরের হাত কে*টে র*ক্ত ঝরঝর করে মেঝেতে পড়ছে। তাহির ওর বাবা-মাকে দেখামাত্র রাগ নিয়ে উচ্চস্বরে বললো….
—“আমার রুমের ডেকোরেশন পরিবর্তন করার এতো বড় সাহস কে করেছে!”
তাহিরের উচ্চস্বরে বলা কথাটুকু শোনামাত্র ভ*য়ে কেঁ*পে উঠেন তমিজ ও রেবেকা দু’জনেই। তমিজ শুকনো ঢো*ক গিলে বললেন….
—“মাথা ঠান্ডা কর বেটা। আসলে অনেক বছর ধরে তোর রুমটা বন্ধ ছিলো তাই সার্ভেন্টরা রুম পরিষ্কার করতে গিয়ে হয়তো পুরোনো সব জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলেছে।”
তাহির ওর বাবা-মায়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে তাদের উপর অ*গ্নী*দৃষ্টি স্থির করে রাগে হি*স*হি*সি*য়ে বললো….
—“১ঘন্টা সময় দিলাম। এর ভিতর আমার রুমের ডিকোরেশন আগে যেমন ছিলো ঠিক তেমনই যেনো করা হয়। আমার জানপাখির প্রতিটা ছবি যেখানে যেভাবে টাঙানো ছিলো সেখানে সেভাবেই যেনো রাখা হয়। নয়তো আমি পুরো তালুকদার ভিলায় আ*গু*ন লাগিয়ে দিবো।”
এই বলে তাহির ওর হাতে থাকা কাঁচের টুকরোটি দেওয়ালের উপর ছুঁ*ড়ে মে*রে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
রেবেরা তাহিরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে হ*তা*শা*র দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মাত্র। অতঃপর তমিজ ৭-৮জন সার্ভেন্টকে দ্রুত তাহিরের রুম পরিষ্কার করে আগের মতো ডেকোরেশন করে দিতে বললেন।
(৭০)
রূপগঞ্জ গ্রামে খান ভিলায় ড্রয়িংরুমের সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে বড় খানের ছোট ছেলে মুবিন খান। মুবিন খানের অন্যপাশে রাখা সোফায় বসে আছেন রূপগঞ্জ গ্রামের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন। মুবিন খানের আশেপাশে ব*ন্দু*ক হাতে দাঁড়িয়ে আছেন গাড় বেগুনী পোশাকধারী ৫-৭ জন গার্ডস। মুবিন খান আমজাদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো…
—“কি ব্যপার চেয়ারম্যান হঠাৎ আমার বাসায় কি মনে করে আসলেন?”
আমজাদ হোসেন বললেন….
—“ছোট খান…আপনার কাছে একটা আর্জি নিয়ে আসছি।”
—“আর্জি! কি ধরণের আর্জি বলুন শুনি।”
—“মেম্বার এর ছেলে যে গত সপ্তাহে গ্রামের এক চাষীর মেয়েকে ধ্ব*র্ষ*ণ করে হ/ত্যা করার চেষ্টা করেছিলো তার বিচার বৈঠকখানা আগামী পড়শু বসাবেন বলেছিলেন কুশল চৌধুরী। আমি চাই এই বিচার বৈঠকখানা যেকোনো ভাবে ভে*স্তে দিতে। আর আমার এই আর্জি আপনি ব্যতিত কেও পূরণ করতে পারবে না।”
—“মেম্বার এর ছেলের বিচার বৈঠকখানা ভে*স্তে দিয়া আপনার লাভ কি চেয়ারম্যান?”
—“কারণ মেম্বার এর ছেলে একা ঐ চাষীর মেয়েকে ধ্ব*র্ষ*ণ করে নি। মেম্বার এর ছেলের সাথে আমার একমাত্র ছেলে আরিফ ও ছিলো। পড়শু যখন বিচার বৈঠকখানা বসবো তখন তো মেম্বার এর ছেলে নিজের দো*ষে*র বোঝা হালকা করতে আমার ছেলের নামও তুলবো। তখন আমার ছেলেরেও তো ছাইড়া কথা বলবে না কুশল চৌধুরী। পুরো গ্রামের সামনে আমার মান-সম্মান ধু/লি*সাৎ হইয়া যাবে। এমনকি আমি আমার চেয়ারম্যান এর ক্ষমতাও হা*রায় ফেলতে পারি। যা আমি কখনও হা*রাতে চাই না ছোট খান।”
আমজাদ হোসেনের কথাগুলো শোনার পর স্বশব্দে হেসে উঠেন মুবিন খান। পরক্ষণেই হাসি থামিলে বললেন….
—“এমন ছেলেকে তো বাহবা জানানো উচিত চেয়ারম্যান। দিনের শুরুতে ছেলে বনে-বা*দা*ড়ে ঘুরে গরীব মেয়েদের ধ্ব*র্ষ*ণ করে মজা নিবে আর দিনশেষে ছেলের বাবা ছেলেরে শা*স্তি*র হাত থেকে বাঁচানোর আর্জি নিয়ে আমার দোরগোড়ায় হাজির হবে।”
—“আমার ছেলের বয়স কম ছোট খান। ভু*লে একটা কাজ করে ফেলেছে। আমার সম্মান আর আমার ছেলেকে শা*স্তি*র হাত থেকে বাঁচানোর একটা ব্যবস্থা করুন দয়াকরে। এর বদলে আপনি যা চাইবেন আমি তাই দিতে প্রস্তুত আছি।”
মুবিন খান বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাঁকা হেসে বললেন….
—“বিচার করার জন্য বিচার বৈঠকখানায় যদি কুশল চৌধুরী স্বয়ং উপস্থিত না থাকে তাহলে সেই বিচার কি হবে চেয়ারম্যান?”
চেয়ারম্যান মুবিন খানের কথার ভাঁজ বুঝতে পেরে বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন….
—“জ্বি না, ছোট খান। কুশল চৌধুরীর বিচার বৈঠকখানায় উপস্থিত না হওয়ার ব্যবস্থা আপনি করলে সেই বিচার বৈঠকখানা ভে*স্তে দেওয়া আমার বাঁ হাতের কাজ হবে।”
—“তাহলে আপনি এবার নিশ্চিন্ত মন নিয়ে নিজের বাড়িতে চলে যান। যথাসময়ে আপনার আর্জি জনিত কাজও সম্পন্ন হবে।”
অতঃপর চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খান ভিলা থেকে বেড়িয়ে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ………..: