হৃদয়ের সুখ আপনি পর্ব-১৩+১৪

0
236

#হৃদয়ের সুখ আপনি
#পর্ব-১৩+১৪
#Nishi_khatun

আমার বিষাক্ত জীবনটা যে, সেদিন রাতের পর বদলে যাবে আমি বুঝতে-ই পারি নাই। পরেরদিন সকালে স্কুলে যাবার জন্য গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
তখন রাতের সেই আপনি সামনে এসে দাঁড়ায়।
মামা আহীদ কে দেখে বলে,”আরে আহীদ বাবা যে!
এদিকে কোথায় যাচ্ছ?”

আহীদ মামা কে উদ্দেশ্য করে সালাম দিয়ে বলল-
“আঙ্কল আমি এপথে কলেজে যাচ্ছি। কিছুদিন আগে স্বপ্ন পূরণের জন্য যেখানে পরিক্ষা দিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ্‌ সে কলেজে চান্স পেয়েছি। ”

তখন মামা তাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আলহামদুলিল্লাহ্‌ এ তো খুশির খবর। তোমার কাছে মিষ্টি পাওনা রইলো কিন্তু! ”

-জি আঙ্কল! লেখাপড়া কমপ্লিট করে যেদিন সরকারি ভাবে কালো কোর্ট গায়ে জড়াতে পারব, সেদিন অবশ্যই আপনাকে এসে মিষ্টি মুখ করিয়ে যাব।

আমি তাদের দু’জনের কথার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। তবে এটুকু বুঝেছি উনি আমার থেকে অনেক বড়।
আর বড় কোন কলেজ অথবা ভার্সিটি তে পড়েন।

হঠাৎ কথার মাঝে মামা আমাকে দেখিয়ে বলে,

-“আহীদ আমার ভাগ্নি রিমশা, দশম শ্রেণীর ছাত্রী সে।
তুমি তো এখন থেকে রেগুলার এ পথে যাবে। যদি একটু কষ্ট করে মেয়েটা কে তোমার সাথে নিয়ে যাওয়া আসা করতে তাহলে বাবা আমার বড় উপকার হত। দেশের যে অবস্থা সেখানে মেয়েটা কে যার তার সাথে যেতে দিতে পারি না। এতোদিন ধরে আমি এসব করেছি। তবে বেশ কিছুদিন শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। তুমি যদি আমার এই উপকার করতে তাহলে খুব উপকৃত হতাম।”

আহীদ বলে,” আপনি যে বিশ্বাস করে আপনার ভাগ্নির দায়িত্ব আমাকে দিতে চাচ্ছেন এটাই অনেক বড় বেপার আঙ্কল। ”

মামা বলে,”তোমার মত ছেলের উপর চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায় বুঝলে বাবা। এখন দেখো তুমি দায়িত্ব নিবে কি না ”

আহীদ বলে,”জি আমার কোন সমস্যা হবে না। তবে যে যাবে তার মতামত একটু জানবেন না আঙ্কেল?”

মামা রিমশার দিকে তাকাতে বলে,”আমার কোন সমস্যা নেই মামা। আপনার বিশ্বাসের উপর আমার ভরসা আছে।
সব পুরুষ যে একরকম হবে এমনটা নয়।”

এরপর মামার থেকে বিদায় নিয়ে আমি
আহীদের সাথে রিক্সা তে উঠে পড়ে।

এই প্রথম বার কোন অপরিচিত পর পুরুষের পাশে বসেছি।
এক রাশ ভয়, লজ্জা, আর জড়তা এসে আমাকে জেঁকে ধরেছে। আমি তার থেকে যতোটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে বসতে চেষ্টা করছিলাম।

উনি হয়তো আমার অবস্থা সম্পর্কে অবগত হয়।
তখন উনি বলেন,

“আমি বাঘ বা ভাল্লুক কোনটাই না। তা-ই আমাদের দূরে বসতে যেয়ে রিক্সা থেকে নিচে পড়ে আমার মানসম্মান নষ্ট করে দিও না । ”

আমি তখন প্রতিউত্তরে বলি,

“মামার কথা মতো আপনার সাথে এসেছি তার মানে এই নয় যে একদম আপনার শরীরের সাথে লেপ্টে থাকবো। যাতায়াত করতে হবে তবে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব রেখে। যেনো মানুষেরা খারাপ কিছু না মনে করে।”

আহীদ ভ্রূ কুঁচকে আমার দিকে দৃষ্টিপাত করে বলে,”এইটুকু মেয়ের মুখে কত বড়বড় কথা ভাবা যায়?”

-আপনি আমার সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
যখন জানবেন তখন অবাক হয়ে যাবেন।

আহীদ বলে,

“এইটুকু পিচ্চি সম্পর্কে এতো কিছু জানার ইচ্ছা আমার নাই।’

সেখানে রিমশা একটু অপমানিত বোধ করে। তা-ই সে আর কোন কথায় বলে না।
দেখতে দেখে রিমশা স্কুল চলে আসে।
আহীদ রিমশা কে নামিয়ে দিয়ে নিজের গন্তব্যের পথে রওনা করে।

রিমশা স্কুলের গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই একটা ইন্টার পড়ুয়া ছেলে এসে রিমশা’র সামনে হাটুগেড়ে বসে প্রপোজ করে।

রিমশা ভ্রু কুঁচকে বলে,”এসবের মানে কি?”

ছেলেটা বলে,”আমার তোমাকে ভালো লেগেছে!
তোমার সাথে একটা সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছি। ”

রিমশা হুট করে ছেলেটা’র গালে থাপ্পড় দিয়ে বসে।

ছেলেটা রেগে চিৎকার দিয়ে বলে,

“তোমার সাহস তো কম না। তুমি আমাকে থাপ্পড় দিলে কেনো?”

রিমশা বলে,
“কোন সাহসে আমাকে প্রপোজ করতে আসেন?
আমি ছোট দেখে আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে আপনার প্রতি আসক্ত করবেন? তারপর সুযোগ বুঝে আমাকে আপনার চাহিদা মাফিক শারীরিক ভোগের বস্তুতে পরিণত করবেন?
কি মনে হয় ছোট বলে কিচ্ছু বুঝবো না? আমি বাকি মেয়েদের মত অবলা না। আপনার আমার কোন ভবিষ্যৎ নেই। না দু বছর পর বিয়ে হবে এর কোন গ্যারান্টি। তা-ই এসব হারাম কাজ হতে নিজে বিরত থাকুক অন্যকে বিরত রাখুক। নিজে ঠিকঠাক মতো আমাকে ভোগ করবেন। কিন্তু বিয়ে আর করতে পারবেন না। তা-ই যে সম্পর্কে কোন পবিত্রতা নেই সে সম্পর্কে রিমশা যায় না।”

ছেলেটা বলে,”এতো বড় বড় ডায়লগ সবাই দিতে পারে।
দু দিন পর যখন নিজে কারো প্রতি আসত্ত হবে। তখন নিজেই তার কাছে সবটা বিলিয়ে দিবে। অযথা এসব নাটকের কোন মানে হয় না।”

রিমশা বলে,”আমি রেগুলার নামাজ কায়েম করি। আল্লাহ কে ভালোবাসি। আর যে আল্লাহ কে ভালোবাসে তার এসবের দরকার হয় না। হ্যা আমি তার প্রতি আসক্ত হব যার সাথে আমার বিয়ে হবে। তাকে নিয়ে মৃত্যুর আগপর্যন্ত সুখে থাকবো। সে যদি খারাপ হয় তাকে ঘাঁড়ধরে সোজা পথে আনবো তবুও তাকে কোনদিন ছেড়ে যাব না। আর সে যদি একান্ত খুব খারাপ ব্যক্তি হয় তাহলে রাতে গলাটিপে মেরে দিব।”

ছেলেটা বুঝতে পারে সে এক উন্মাদ পাগলের কাছে এসেছে প্রেমের প্রস্তাব নিয়ে। তা-ই তো সে আর কোন কথা না বাড়িয়ে দ্রুত প্রস্থান করে।

তখন পেছন থেকে আহীদ বলে ওঠে,”বাব্বাহ এই টুকু মেয়ের দেখছি স্বামী নিয়ে সংসারের স্বপ্ন দেখা কমপ্লিট। তা তোমার মামাকে বলবো না কি ভাগ্নির জামাই লাগবে বিয়ে দিয়ে দিতে?”

রিমশা পেছনে ফিরে বলে,”আপনি এখানে কেনো? কি দরকার আপনার? আর কখন আসলেন আপনি?”

আহীদ বলে,”ছেলেটা যখন প্রপোজ করছিল তখন এসেছি। ওহ হ্যা তুমি রিক্সাতে টিভিন বক্সটা ভুলে ফেলে রেখে আসছিলে তা-ই দিতে এসে তোমার সম্পর্কে অনেককিছু জানতে পারলাম। ”

আমার হাতে টিভিন বক্সটা ধরিয়ে দিয়ে উনি দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।

আমি কেনো জানি তার উপস্থিতিতে খুব অস্বস্তি বোধ করছিলাম। আল্লাহ জানে লোকটা আমাাকে কি না কি ভেবে বসে আছে। হয়তো আমাকে উচড়ে পাকা মেয়ে ভাবছে। তবে তিনি আমার সম্পর্কে কিছুই জানে না। থাক তাকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে আমার কোন লাভ নেই।

সব কিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ক্লাসে মনোযোগ দিলাম।

এদিকে স্কুল ছুটির পর বাড়িতে ফেরার পথে দেখে আহীদ স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

রিমশা আহীদ কে দেখে মাথা নিচু করে রাখে। আহীদ বলে,”এভাবে মাথা নিচু করে রাখলে হবে? সব সময় মাথা উঁচু করে চলতে হয়। একমাত্র আল্লাহ সামনে ছাড়া অন্যকারো সামনে মাথা নত করবে না।”

আহীদের মুখে এমন কথা শুতে তরিত গতিতে তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে সে মুচকি হাসছে।

এরপর দু’জনে নিরবতা পালন করে সামনের পথে হাঁটতে শুরু করে। কিছুটা দূরে আসার পর আহীদ রিক্সায় ওঠে। বাড়ির সামনে এসে রিমশা কে নামিয়ে দিয়ে সে তার বাড়িতে যেয়ে নামে।

রিমশা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেই আগে স্কুলে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা তার মামীর কাছে বলতে শুরু করে। মামী রিমশা কে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমার আম্মাজান কোন ভুল করে নাই। ঐ ছেলেকে উচিৎ জবাব দিয়েছো। আজকাল এসব রিলেশন করে ছেলে মেয়েরা সমাজটা কে একদম নষ্ট করে দিচ্ছে। বিয়ের যোগ্যতা অর্জন করার পূর্বে তারা হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। সাথে সামনে থাকা ব্যক্তিকে হারাম কাজ করতে আগ্রহী করে। আমি মনে করি তোমার বয়সি সকল মেয়েকে সঠিকভাবে সব কিছু তার পরিবারে বলা উচিত। যাতে করে তার তাদের এই উঠতি বয়সের আবেগে ভেসে হারাম সম্পর্কে জড়াবে না। তা-ই তো আমি নিজে তোমার সামনে সবটা ক্লিয়ার করে বলেছি। যাতে তুমি তোমার আবেগের বসে ভুল না করে বসো। তুমি তোমার জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারো।”

এরপর মামীর কাছ থেকে উঠে নিজের রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে হালকা কিছু খাবার খেয়ে লেখাপড়া করতে শুরু করি।

এইভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়। আমার প্রথম সাময়িক পরিক্ষা শেষ। এখন সামনে টেস্ট পরিক্ষা।

সেদিনের পর থেকে আমি রোজ আহীদের সাথে স্কুলে যাতায়াত করি। তবে উনি কখনোই আমাকে পারসোনাল কোন কথা জিজ্ঞাস করে না। সে এমনিতে আমাকে নানারকম উপদেশ মূলক কথা বলতে থাকে। রাতের বেলা আমার কোন পড়াতে সমস্যা হলে সোজা বারান্দায় যেয়ে তাকে বলি। সে আমাকে সুন্দর ভাবে বুঝি দেয়। এভাবে মনের মধ্যে তার জন্য প্রচুর সম্মান তৈরি হতে শুরু করে। সমাজের সবাই যদি ভোগের নজরে না দেখে একটু সম্মানের দৃষ্টিতে দেখত তাহলে কতো সুন্দর না হতো আমাদের চারপাশের পরিবেশ।

#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-১৪
#Nishi_khatun

এভাবে আমার দিন গুলো কেটে যাচ্ছিল। দেখতে দেখতে আমি স্কুল পাশ করে কলেজের স্টুডেন্ট হয়ে যায়। আমার কলেজে ভর্তি হবার সব ব্যবস্থা আহীদ করেছে।

কলেজে ওঠার পর থেকে আহীদ আর আমার সম্পর্কের সমীকরণ টা বদলে যায়। কেনো জানি না আহীদ আমার থেকে দূরে থাকতে শুরু করে। আমি কলেজে ভর্তি হবার কিছুদিন আগে আহীদ বাইক কিনেছে। কারণ আমাদের বাড়ি থেকে কলেজ বহুদূর। রোজ রোজ রিক্সা ভাড়া করেও সময়মত পৌঁছানো সম্ভব না। বাড়ি থেকে সময়ের অনেক আগেই বেড়িয়ে পড়তে হয়।

স্কুলে থাকাকালীন সময় সে আমার সাথে রাতের পর রাত কতোশত গল্প করেছে। আমি আমার জীবনের সব ঘটনা তার সাথে শেয়ার করেছি। কিন্তু সে আমার কাছে রহস্যের মতো ছিলো। তার জীবনের কোন কথায় সে আমার নিকটে প্রকাশ করত না। এমনকি তার সাথে আমার এতো সৌহার্দ্য পূর্ণ সম্পর্ক তবুও আমি এটাই জানতাম না সে কি নিয়ে লেখাপড়া করে।

তার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে কোন প্রশ্ন করলে তার এক কথা তুমি বাচ্চা মেয়ে। আমার সম্পর্কে বেশি জানার দরকার নাই। আমার সম্পর্কে মনের মধ্যে বেশি কৌতূহল রাখবে না। নয়তো আমার আর তোমার সম্পর্কের সমীকরণ বদলে যাবে বুঝলে।

সে কিন্তু এখনো রোজ আমাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে আসে। আবার সম্ভব হলে আসার পথে নিয়ে আসে। যদি সে ব্যস্ত থাকে তাহলে আমাকে ফোন করে বলে দেয় একা বাড়িতে চলে যেতে।

কলেজে অন্যান্য মেয়েদের সাথে মেলামেশা করার পর তাদের ভালোবাসার গল্প শুনে এটা বুঝতে পারি আমার মনে আহীদের প্রতি যা আছে ওটা শুধু সম্মান নয়। সম্মানের থেকে বেশি কিছু। আমি তাকে নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস করি। চোখ বন্ধ করে তার উপর ভরসা করতে পারি। সে যদি কখনো ইচ্ছা করতো আমার সাথে খারাপ কিছু করতেই পারতো। কিন্তু সে কখনোই এমন কিছু করে নাই। সব সময় আমার সাথে দূরত্ব রাখতে চেষ্টা করেছে। যেনো আমি কখনো তার প্রতি দুর্বল হয়ে নিজের আত্মসম্মান বিষর্জন দিয়ে দেই।

এভাবে বেশ কিছুদিন চলতে থাকে। সে আমাকে যতো বেশি ইগনোর করছিল আমি ততো বেশি তার প্রতি আসত্ত হয়ে পড়ছিলাম।

এভাবে আমার ইন্টারে দ্বিতীয় বর্ষ শুরু হয়। আমি এবার আমার অনুভূতি গুলোকে সঠিকভাবে বুঝতে পারি। আমি সত্যি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। এটা হয়তো বিপরীত লিঙ্গের প্রতি থাকা কৌতূহল থেকে সৃষ্টি।

আমি যখন নিজের অনুভূতি সম্পর্কে অবগত হলাম তখন আহীদ কে জানাতে চাইলাম। তা-ই একদিন কলেজের গেটে নামার পর আহীদ কে প্রশ্ন করি,

-“আচ্ছা আমার যদি কাউকে পছন্দ হয় অথবা তাকে ভালোবাসতে শুরু করি! তখন সেই ব্যক্তির কাছে কি আমার অনুভূতি প্রকাশ করা উচিৎ হবে?”

আহীদ সোজাভাবে বলে,”কখনোই কোন ছেলের কাছে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে যাবে না। তোমার মনে যে অনুভূতি আছে তা সামনের ব্যক্তির মনে নাও থাকতে পারে। তুমি তার নিকট অনুভূতি প্রকাশ করা মাত্র তার হাতের পুতুল হয়ে যাবে। সে ইচ্ছা করলে তোমার অনুভূতি কে সম্মান করতে পারে আবার ইচ্ছা করলে অসম্মান করতে পারে। সেই ব্যক্তি যদি আমিও হই তবুও নিজের আবেগ কন্ট্রোল করবে। সামনের মানুষের যোগ্যতা আছে কি না তা আগে যাচাইবাছাই করবে। সে কি তোমার এই ছোট হৃয়দের সুখের খোঁজ হতে পারবে? সে কি তোমার হৃদয়ের অনুভূতি কে পবিত্রতা দান করতে পারবে? না কি তোমার অনুভূতি নিয়ে খেলা করবে। তা-ই কি দরকার নিজের আত্মসম্মান অন্যের নিকটে বিষর্জন দেওয়ার?”

সেদিন তার কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছিলাম,” ধন্যবাদ আপনাকে।”

তারপর আবারো কিছুদিন মুখটা বন্ধ করে নিরবে তার সাথে পথ চলা শুরু করি। সে মাঝেমধ্যে আমাকে নিয়ে হুটহাট বেড়াতে চলে যেতো। তার এসব কান্ডে আমি খুব অবাক হয়ে যেতাম।

একদিন রাতে সে আমাকে ফোন দিয়ে বলে,”রিমশা কাল ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে বাড়ির বাহিরের চলে আসবে তোমাকে নিয়ে কোথাও যাবার আছে। বলেই ফোনটা রেখে দিলো।”

আমি বাধ্য মেয়ের মতো তার কথা শুনে ভোরে বেড়িয়ে পড়ি। সে আমাকে নিয়ে শহর থেকে একটু দূরে চলে আসে। তার বাইকটা থামাতে আমি স্তব্ধ হয়ে ছিলাম কিছুটা সময়। কারণ একটা বাড়ির চারপাশে লাল কৃষ্ণচূড়া গাছ। লাল কৃষ্ণচূড়া ফুল পড়ে বাড়িটার সৌন্দর্য হাজার গুণ বেড়ে গেছে। ফুলের লাল পাপড়ি পড়ে সবটা ঢেকে রেখে লাল রঙে মাধুবী তে। আমি হারিয়ে গেছি এই ফুলের সৌন্দর্যে।

সে হুট করে আমার হাত ধরে আবারো ফিরিয়ে নিয়ে চলে আসে। এই লোকটা এমন কেনো? যখন যা ইচ্ছা তা-ই করে আমার সাথে ধুর ভালো লাগে না।

তার উপর নিজের রাগ প্রকাশ করতে পারি না। যদি পারতাম তাহলে তাকে ঠিক উগান্ডা পাঠিয়ে দিতা হুরররর।

এভাবে আমার কলেজ জীবনের সমাপ্তি ঘটে। এখন আমি একজন এডাল্ট মেয়ে। আঠারো বছর পূর্ণ হয়ছে আমার।
তবুও আমি আমার হৃদয়ের অপ্রকাশিত অনুভূতি তার নিকটে ব্যক্ত করতে পারি নাই। তাকে আজ পর্যন্ত এ কথা বোঝাতে পারি নাই আপনি আমার হৃদয়ের তৃপ্তি। এই অশান্ত মনের শান্তির পরশ।

এখন আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আজকাল মামা-মামী আর আহীদের সাথে মেলামেশাটা খুব একটা পছন্দ করে না।

একদিক বিকালে আহীদ আমাকে বলে,”জানো রিমশা আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করেছি। এখন আমি জব করছি। ইচ্ছা করলেই কারো সারাজীবনের দায়িত্ব নিতে পারি।”

তার মুখে এমন কথা শুনে বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে ওঠে। আমি অশ্রুসিক্ত নয়নে তার দিকে দৃষ্টিপাত করে বলি,
-“আপনার বিয়েতে আমাকে দাওয়াত দিতে ভুলবেন না।”

আহীদ সেদিন প্রথম আমার মাথায় জোড়ে এটা টোকা দিয়ে বলে,”আসলে তুমি ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা। এতো প্রতিবাদি, এতো আত্মসম্মান বোধ তোমার আর একজন পুরুষের মনের কথায় বুঝতে পারলে না? আরে বোকা এতবছর ধরে আমাকে দেখে এই চিনলে? তুমি ব্যতীত অন্য কোন মেয়ে আমার জীবনে আছে? গাধী নাম্বার ওয়ান! সে না কি তার স্বামী কে নিয়ে সারাজীবন সুখে থাকবে। এমন গাধী মার্কা মেয়েকে বিয়ে করতে চাওয়াটা বোকামি। ”

রিমশা চোখের অশ্রু মুছে বলে,”আপনি সত্যি আমাকে পছন্দ করেন? আমাকে আপনার জীবনসাথি করবেন?”

আহীদ -না আমাদের পাশের বিল্ডিং এর আন্টি কে করবো এবার খুশি?”

-কেউ কাউকে এভাবে প্রপোজ করে বুঝি?

আহীদ ধমকের সুরে বলে,”একদম চুপ বেয়াদব মেয়ে। আমি তোমাকে প্রেমে প্রস্তাব দিচ্ছি না। বিয়ে করতে চাইছি। রাজী থাকলে হ্যা বলো তোমার মামা-মামীর সাথে কথা বলতে হবে।কারণ এতোবছর ধরে নিজের অনুভূতি গুলোকে খুব কষ্টে চেপে রেখেছি আর সম্ভব না। সেই পিচ্চি একটা মেয়ে যাকে দেখে যে কেউ প্রেমে পড়তে বাধ্য হবে। তাকে এতোবছর ধরে আমি আমার আশেপাশে রেখেও প্রেম করি নাই। একটা পবিত্র সম্পর্কে জাড়ানো ইচ্ছায়। আমার এখন তোমাকে সারাজীবনের জন্য লাগবে বুঝলে পিচ্চি। তুমি ছাড়া আমার মত এই ছন্নছাড়া লোকের কপালে আর কেউ জুটবে না। আর না আমি কোনদিন তুমি ছাড়া অন্যকারো কথা কল্পনা করতে পারবো।”

রিমশা আহীদের প্রশ্নের উত্তর দিবে ঠিক সে সময় তার মুঠোফোনটা চিৎকার করে ওঠে।

স্কিনের উপর বাবা নামটা জ্বলজ্বল করছিল। দ্রুত কলটা রিসিভ করে কথা বলতে শুরু করে রিমশা।

ওপর প্রান্ত থেকে আব্বু দ্রুত গতিতে বলল-
,”আম্মুজান তোমাকে ছাড়া তোমার বড় ভাই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে নারায। তা-ই কিছু ড্রেস গুছিয়ে নিও,কাল সকালে তোমাকে নিতে আসবো আমি।”

রিমশা বলে, “আমি যাবো? ”

রিমশা’র বাবা বলে,”হ্যা তুমি আসবে। তাছাড়া তোমার মামা-মামী বিয়ের আগের দিন আসবে। সো তুমি ভাইয়ের বিয়েতে আসার জন্য পিপারেশন নাও।”

বাবা ফোনের লাইনটা বিচ্ছেদ করতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমি আহীদের দিকে দৃষ্টিপাত করে বলি,”আমাকে কাল গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে।”

আহীদ প্রশ্ন করে,”তুমি যাবে?”

-হ্যা যেতে হবে। কারণ বড় ভাইয়ের বিয়ে, সে আমাকে ছাড়া বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না। আব্বু কাল আমাকে নিতে আসবে।

আহীদ বলে,”তাহলে তোমার বাবার সাথে কি কালকে কথা বলবো?”

রিমশা বলে,”নাহ! ভাইয়ার বিয়ের ঝামেলা মিটমাট হয়ে যাক।তারপর না হয় আপনি সবার সাথে কথা বলবেন। ”

-আচ্ছা সমস্যা নেই। তাহলে কয়দিনের জন্য আমার দৃষ্টির আড়ালে যাচ্ছ তুমি জানতে পারি?

-” ৪/৫ দিনের জন্য মনে হয়।”

আহীদ বলে,”তোমার বড় ভাইয়ের বিয়ের পর তুমি আমার বউ সাজার জন্য রেডি থাকবে সুন্দরি। বেশি প্রতিক্ষা করালে তোমার খবর আছে। বাবার বাড়ি থেকে তুলে এনে জোড় করে হলেও আমার বউ করবো তোমাকে। ”

রিমশা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,”আমি যাচ্ছি ভালো কথা । তা-ই বলে এই কয়দিনের জন্য যদি অন্যকারো মায়াজালে জড়িয়ে পড়ো তাহলে তোমার খবর আছে। থানাতে মামলা করে জেলখানাতে বন্দী করে রাখবো তোমাকে। ”

আহীদ -পারবে আমাকে জেলখানাতে বন্দী করে রাখতে?

রিমশা অ্যাটিটিউড এর সাথে বলে,”দরকার হলে এই রিমশা সব কিছু করতে পারে। তবুও তোমাকে ছাড়তে রাজি নাই। আপনি সারাজীবনের জন্য আমার।”
*
*
পরেরদিন সকালে মামা-মামীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাবার সাথে গ্রামের বাড়িতে পাড়ি দেয় রিমশা।



চলবে…..