হৃদয়ের সুখ আপনি পর্ব-১৯+২০

0
230

#হৃদয়ের সুখ আপনি
#পর্ব-১৯+২০
#Nishi_khatun

বিয়েরপর শ্বশুর মশাই আমাদের দু’জন কে সঙ্গে নিয়ে আমার বাবার বাড়িতে আসেন। আমি সেখানে এসে দেখি অবাক কান্ড।

ইফা আমার বাবার পায়ের কাছে বসে কুমিরের কান্না করে বলছে,”মামাজান আমার ভুল হয়েছে। আমি রাস্তা ভুল করে ভুল দিকে চলে গেছিলাম। তারপর আমি রিমশা আপুকে হারিয়ে ফেলেছি। তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই বাড়িতে একাই ফিরে এসেছি। আমাকে মাফ করে দেন আপনারা।”

আমি ইফার এমন নাটক দেখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

তাদের দৃষ্টি সদর দরজার সামনের পড়তেই তারা আমাকে দেখে ছুটে চলে আসে। বাবা ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে।
তার বুকে মাথা রাখতেই আমিও কান্নায় ভেঙ্গে পরেছি।

এরপর সকলে একসাথে বাড়ির অন্দরমহলের ভেতরে গমন করি। তারা সকলে ভেতরে প্রবেশ করে সোফাতে বসে।

এরপর বদুরুদ্দিন সাহেব আব্বুর কাছে আমাদের দু জনের বিয়ের কথাটা ব্যক্ত করে। আর সাথে এটাও বলে গ্রামের লোকজন ওদের দুজন কে একসাথে দেখে নানারকম খারাপ মন্তব্য করছিল। যেহেতু ওদের বিয়ে ঠিকঠাক করে রাখা ছিল তা-ই সেই স্থানে আমি দুজনের চার হাত এক করে দিয়েছি। আপনার যদি এভাবে বিয়ে হওয়াতে আপত্তি থাকে তাহলে আবার ওদের অনুষ্ঠান করে বিয়ের আয়োজন করতে পারেন।

শাওন শেখ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
“গ্রামটা আমার মেয়ের জন্য শুভ না। মেয়েটা যখন বসবাস করতে এই গ্রামে আসে! ঠিক সে সময় তার চরিত্রের দিকে সবাই আঙ্গুল তুলতে পিছপা হয় না। দেখুন না, যার বিয়ের জন্য আমি এতো আয়োজন করছি। হুট করে তার এভাবে বিয়েটা হয়ে গেলো। যাক এক দিক দিয়ে ভালো-ই হলো মেয়েটার সাথে এর থেকেও বেশি খারাপ কিছু হতে পারতো তা তেমন কিছু হয়নি। ”

বদুরুদ্দিন সাহেব জি বলে সম্মতি প্রকাশ করে।

শাওন শেখ আবার বলতে শুরু করে,
“বিয়েটা যেহেতু হয়েগেছে আপনি দয়া করে আমার মেয়েটাকে আপনাদের বাড়িতে নিয়ে যান। আমি চাইছি না মেয়েটা আমার এই অভিশপ্ত গ্রামে আর কিছু মূহুত্ব থাক।”

এরপর সে রাতে শাওন শেখ দাইয়ানের হাতে তার কন্যার সারাজীবনের সুখ-দুঃখের দায়িত্ব তুলে দিয়ে কন্যার বিদায় পর্বের সমাপ্তি ঘটায়।
*
*
বাবার বাড়ি থেকে ভারাক্রান্ত হৃয়দে রিমশা শ্বশুর বাড়িতে আসে। যেহেতু অনেক রাত হয়েছিল তা-ই সে রাতে বাড়িতে কোন রকমের শোরগোল হয়নি। রেহেনা বেগম সদর দরজাতে এসে ছেলের বউকে বরণ করে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসে।

যেহেতু অনেক রাত হয়েছে তা-ই বাসরঘর সাজানো কোন ভাবে সম্ভব না। তাই রেহেনা বেগম রিমশা কে আলাদা একটা রুমে থাকতে বলে।

বদুরুদ্দিন সাহেব তার স্ত্রীর উপর রেগে বলে,
“বাসরঘর কালকেও সাজানো যাবে। ঐ বাসরঘরের জন্য তুমি স্বামী-স্ত্রী দুজনকে আলাদাভাবে থাকতে বলতে পারো না।”

রেহেনা বেগম আর কিছু না বলে রিমশা কে দাইয়ানের ঘরের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন পেছন থেকে দাইয়ান মা কে ডেকে বলে,
“মা যেদিন আমাদের বাসরঘর হবে! সেদিন না হয় রিমশা আমার রুমে যাবে। আজকের জন্য আর ঐ ঘরে যাবার দরকার নাই। পাশে ঐ রুমে আজকের রাত না হয় আমরা দু জন এক সাথে থাকবো।”

বাকিরা দাইয়ানের কথাতে সম্মতি প্রকাশ করে দ্রুত প্রস্থান করে।

দাইয়ান রুমের ভেতরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে রিমশা’র সামনে এসে বলে,
“দেখো আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাইছি।
সে সব কথা তুমি মনোযোগ দিয়ে শুনবে।
কারণ আমাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কিন্তু অন্ধকার।
ভবিষ্যৎ আছে কি না তা আমি বলতে পারবো না।”

রিমশা দাইয়ানের চোখে চোখ রেখে আশ্বাস দিয়ে বলে,
“আপনার যা বলার আছে বলেন ,তবে এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।”

দাইয়ান বলল-
আমাকে গ্রামের সবাই দাইয়ান নামে চেনে। বলতে পারো এটা আমার ডাক নাম। আমার দাদাভাই এর খুব ইচ্ছা ছিলো তার বংশের কেউ ব্যারিস্টার হবে। আমার বাবা লেখাপড়াতে এতো ভালো ছিলোনা। আর ভাইয়া নিজের জন্য আলাদা প্রফেশন বেঁছে নিয়ে ছিল। বাকি রইলাম আমি বাবা এক প্রকার বাধ্য করে আমাকে ব্যারিস্টারি পড়তে। তবে আমার ইচ্ছা ছিলো ডাক্তার হওয়া। কিন্তু পরিবারের ইচ্ছার জন্য নিজের স্বপ্ন বিষর্জন দিয়েছি। শহরে থেকে ব্যারিস্টারি পড়েছি।
তবে হঠাৎ করে আমাদের গ্রামসহ আশেপাশের কিছু গ্রামে হঠাৎ করে নানারকম সমস্যা দেখা দিয়েছে। গ্রামের মহিলারা কাজের জন্য শহরে যাচ্ছিল তবে তারা কেউ আর বাড়িতে ফিরে আসছিল না। তারা কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে কেউ বলতে পারে না। আর নয়তো কিছু মহিলাদের মৃতদেহ ঐ রুপসী খালে পাওয়া যাচ্ছিল।
আমি যেহেতু রাগ করে শহরে লেখাপড়া করছিলাম।
বাড়ির সাথে কোন যোগাযোগ ছিলো না আমার। তাই গ্রামের কোন খোঁজখবর রাখতাম না। ভাইয়া প্রতিমাসে আমার একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিতেন এতেই আমার খরচ হয়ে যেত।

জানো আমার বড় ভাইয়ের একটা মেয়েটা ছিলো।
যে আমাদের বাড়ির প্রাণ ছিলো। তবে কোন এক অজ্ঞাত কারণে আমরা তাকে হারিয়ে ফেলি চিরদিনের জন্য।
আমি এতোটা অভাগা যে মেয়েটার মৃত্যূর খবর একবছর পরে জেনেছি।
তখন আমার সব শেষ। রিদির শোকে দাদাভাই মারা গেছে। দাদাভাই এর শোকে দাদীমা! আমার পুরো দুনিয়া এক বছরে উজাড় হয়ে গেছে।

এরপর যখন সব কিছু জানতে পেরেছি এক মূহুত্ব দেড়ি না করে, শহরে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আর ক্যারিয়ার ছেড়ে নিজের পরিবার আর গ্রামের মানুষদের জন্য চলে আসি। এখানে এসে এমন সব রহস্যজনক কাহিনী দেখে, আড়ালে তদন্ত করতে শুরু করি এবং এর ফলাফল কিছুটা আমার হাতে। আমি সমস্যার সমাধান করার জন্য এক অন্ধকার জগতের দিকে পা বাড়িয়েছি। সেখান থেকে সুস্থ জীবনে ফিরে আসা সম্ভব না। আমি হয়তো তোমাকে স্বামীর সুখ দিতে পারবো না।
তোমার অনুমতি ব্যতীত হয়তো এমন সব কাজ করবো!
আমার সে সব কাজের জন্য তোমার আত্মসম্মান নষ্ট হতে পারে। আর হ্যা প্লিজ আমার কাছ থেকে ভালোবাস অথবা সুখে সংসারের আশা করিও না। তুমি নিজের জন্য সুন্দর জীবনের দাবিদার। আমার কোন অধিকার নেই তেমার সে সুখের জীবনটাকে বিষাক্ত করার। তুমি অন্য কারো সাথে সারাজীবন সুখে সংসার করতে পারবে। কী দরকার এখানে পড়ে থেকে জীবনটাকে থমকে দেওয়ার তাও আবার আমার মতো একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের জন্য?

রিমশা দাইয়ানের হাত ধরে বলে,
“আমি আপনাকে ভালোবাসি এই কথাটা হয়তো মুখে প্রকাশ করার দরকার হবে না। আজ থেকে আমি আপনার স্ত্রী। আপনার জীবনের একটা অংশ। আমিও আপনার সাথে সামাজের নোংরা পরিষ্কারে কাজ করবো। আপনি প্লিজ নিষেধ করবেন না। আপনার আশেপাশে থাকলে আমার হৃদয়ের তৃষ্ণা মিটাতে পারবো। আমিও আপনার এই নতুন পথের সঙ্গী হতে চাইছি।”

দাইয়ান রিমশা’র থেকে দূরে এসে বলে,
“রিমশা পাগলামি করো না। তোমার ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। তুমি অনেক সাহসী মেয়ে সাথে প্রতিবাদী এক নারী।
তুমি ইচ্ছা করলে নানারকম সামাজিক উন্নয়ন মূলক কাজ করতে পারবে। নারীদের জাগ্রত করে তাদের ইসলামের সঠিক জ্ঞান সহ সামাজিক জীবনে লড়াই করে টিকে থাকার মন্ত্র শেখাবে। আমি আমার অন্ধকার জীবনের সাথে তোমাকে জড়াতে পারবো না। প্লিজ তুমি আমাকে তোমার মোহ-মায়া তে জড়িয়ে পথভ্রষ্ট করো না দোহাই লাগে। ”

এসব বলে সে রাতে সবার চোখের আড়ালে দাইয়ান বাড়ির বাহিরে বেড়িয়ে চলে যায়।

রিমশা অন্ধকারে খোলা দরজার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। যাকে ভালবেসে দুনিয়া ভুলতে রাজী সে তাকে গ্রহণ করতে নারায। সে কেন বুঝতে চাইছে না আমিও তার দেখানো পথের পথিক হতে চাইছি। আমিও আপনার পিছু এতো সহজে ছাড়ছি না। আমি আপনাকে নিজের আদর্শ মনে করি।
আমার এখন যে আত্মসম্মান সবটা আপনার থেকে শেখা।
আপনার দেখানো পথে চলে আজ নিজেকে এতোটা শক্তপোক্ত করে গড়েছি। এভাবে আপনার সামান্য তাচ্ছিল্য আর অবজ্ঞাতে নিজেকে গুটিয়ে নিবে ভাবলেন কি করে?
আমি জীবনেও আপনাকে আমার থেকে আলাদা হতে দিব না।

#হৃদয়ের_সুখ_আপনি ২০
#পর্ব-২০
#Nishi_khatun

এদিকে দাইয়ানের জন্য অপেক্ষায় এই বিষাক্ত রাত ফুরিয়ে যাচ্ছে। চারিদিক থেকে ফজরের আজানের মিষ্টি ধ্বনি ভেসে আসছে। ঠিক সে সময় বাড়ির কলপার থেকে পানি তোলার আওয়াজ আসছিল। বোঝা যাচ্ছে কেউ এই ভোর বেলা ইচ্ছাকৃত ভাবে ওখনে গোছল করছে। কারো গোছলের সময় তার সামনে যেয়ে তাকে তো লজ্জায় ফেলেদিতে পারি না।
কিন্তু মাথায় এটা ডুকছে না রুমের পাশে বাথরুম গোছল খানা আছে তবুও কেনো কলপারে গোছল করছে? এটা কী শুধু মাত্র লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে?

কিছুসময় পর দাইয়ান রিমশা’র রুমে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। তারপর রুমে রাখা জায়নামাজটচ বিছিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করে। এরপর রিমশা’র দিকে না তাকিয়ে সোজা বিছানাতে এসে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

দাইয়ানের এমন কান্ডে রিমশা হতভম্ব!
এটা কি হলো? তাদের মাঝে কোন কিছুই হয়নি।
তাহলে উনি এভাবে ভোরে গোছল কেনো করেছে?
এখন বাড়ির কেউ যদি বুঝতে পারে তখন সে মুখ দেখাবে কি করে? আর জামাই তার আগে বাড়ির লোকদের গোছলের বেপারে অবগত করে তাকে লজ্জায় ফেলেদিয়ে আরামে ঘুমাচ্ছে।

এখন যাই হোক রিমশা কে নামাজ পড়তে হবে!
তাই সে চুপচাপ রুমের বাহিরে বেড়িয়ে আসে।
বারান্দাতে এসে দাঁড়িয়ে আছে। ভোরের ঠাণ্ডা বাতাসে নিজেকে একটু সিক্ত করছিল। এরপর সে ফ্রেশ হয়ে অজু করে নামাজ আদায় করবে।

তখন কোথায় থেকে একটা মেয়ে হুট করে এসে রিমশা’র পাশে দাঁড়িয়ে বলে,”আপনি আমাদের নতুন ভাবী তাই না?”

রিমশা মাথা দু দিকে নাড়িয়ে সম্মতি দিতেই মেয়েটা বলে,
“আমি ঝর্ণা। এবাড়ির কাজের মহিলার মেয়ে। আপনি আমার সাথে একটু আসেন তো ভাবী।”

বলে রিমশা’র হাত ধরে তাকে টেনে বাড়ির উঠানের পাশে থাকা কলপারে এনে দাঁড় করিয়ে রাখে। ঝর্ণা দ্রুত বালতি তে পানি ভর্তি করে দিয়ে বলে,”ভাবী বাড়ির বাকিরা জেগে যাবার আগে আপনি দ্রুত গোছল করেন। নয়তো সবাই জেগে গেলে তখন লজ্জায় পড়বেন। ”

রিমশা এবার ঝর্ণার দিকে ভালোভাবে দৃষ্টিপাত করে। একটু খেয়াল করে দেখে মেয়েটার বয়স হয়ত ১৫/১৬ বছর হবে।
এই কিশোরী মেয়ে এতো পাকনামি শিখলো কি করে? নিজের কৌতূহল ধরে রাখতে না পেরে প্রশ্ন করে,”তুমি বাচ্চা একটা মেয়ে। আমাকে কি বলছো তা তুমি জানো?”

ঝর্ণা বলে,”কেন জানবো না? প্রতিটা নতুন বউ কে সাত সকালে গোছল করতে হয় এটা সবার জানা। এখানে বাচ্চা আর বুড়ির কি আছে? প্লিজ ভাবী তাড়াতাড়ি করেন নয়তো নামাজের ওয়াক্ত ফুরিয়ে যাবে।”

রিমশা আর কোন কথা না বাড়িয়ে দ্রুত গোছল করবে তখন ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি গোছলখানা থেকে বেড়িয়ে কি পড়বো?”

ঝর্না দ্রুত নিজের রুম থেকে একটা সুন্দর শাড়ি নিয়ে এসে রিমশা’র হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,” কিছুদিন আগে আমি আর ইলমা আপা এগুলো নতুন বানিয়েছি। ইলমা আপার ব্লাউজ পেটিকোট আপনার ঠিকঠাক হবে।”

রিমশা আর কথা না বাড়িয়ে সে সব কিছু নিয়ে কলপার থেকে চেঞ্জ করতে চেঞ্জির রুমে চলে যায়। সেখান থেকে বেড়িয়ে এসে অজু করে রুমের দিকে অগ্রসর হয়। রুমে এসে নামাজ আদায় করে চুপচাপ কিছু সময় দাইয়ানের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

এই মানুষটা এখন থেকে একান্ত তার। ঘুমন্ত মানুষটার দিকে সারাজীবন এভাবে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে। সত্যি ঘুমন্ত মানুষের সৌন্দর্য অন্যরকম হয়। আমার শ্যামবর্ণের সুপুরুষ, মুখে খোঁচাখোঁচা দাড়ি, বাশির মতো লম্বা নাক! এই নাকের আগাই সব সময় রাগ আর গম্ভীরতা বিরাজ করে। তবুও উনি আমার।

এভাবে কিছু সময় তাকে দেখে তৃষ্ণার্ত নয়নের তৃষ্ণা মিটিয়ে আমি রুমের বাহিরে বেড়িয়ে আসছিলাম। তখন ঝর্ণার সাথে আরেকটা মেয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসে।

মেয়েটা এসে বলে,”ভাবী আমি আপনার একমাত্র ননদী।
চলেন আপনাকে বাড়ির সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।

এরপর ইলমা বাড়ির সকলের সাথে রিমশা’র পরিচয় করিয়ে দেয়। রিমশা তখন একটা বিষয় খেয়াল করে বাড়ির বড় বউ রাইসার চেহারে বিষণ্ণতায় ঘেরা। ভাবীর চেহারা দেখে যে কেউ তার মনের খবর বলতে পারবে। তবে ভাবীব এমন বিষণ্ণতার কারণ কি আমার জানার খুব ইচ্ছা হচ্ছিল।

বাড়ির সব মহিলা রান্নাঘরে ছিলাম। ঠিক এমন সময় বাড়ির সদর দরজাতে দাইয়ানের নামে হাক-ডাক শুরু হয়ে যায়।
তখন বাড়ির পাহারাদার সদরদরজা খুলে দিতেই বাহিরের অনেক লোকজন বাড়ির ভেতরে হুরমুর করে প্রবেশ করে।

তারা চিৎকার করে দাইয়ান কে ডাকতে থাকে। তখন আমার বড় ভাসুর দিরহাম ভাই দ্রুত রুম থেকে বেড়িয়ে এসে বলে,’তোমাদের সমস্যা কী? আমাদের বাড়িতে এসে এভাবে ষাঁড়ের মতো চেঁচানোর মানে কি?”

একজন ক্ষুদ্ধ কন্ঠে বলল-, “দু দিন আগে পারার মোড়ে মেয়েদের সাথে বেয়াদবি করার জন্য যে লোকটাকে মারধোর করে তাকে খুন করার হুমকি দিয়েছিল আজ সকালে রুপসী খালপাড়র তার লাশ পাওয়া গেছে।”

দিরহাম বলে,” আমি আজকে যদি আপনাকে খুন করার কথা বলি! আর কালকে আপনি মারা যান তাহলে তার দোষ আমার? তাছাড়া কাল রাতে আমার ভাইয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন বউ রেখে কেউ তো বাহিরে খুন করতে যাবে না?”

ভীরের মধ্যে থেকে অনেকেই তখন বলাবলি শুরু করে আর হ্যা কাল রাতে না শুনলাম ঐপাশের গ্রামের কোন মেয়ের সাথে কাহিনী করে বিয়ে করেছে। বাসরঘর বাদ দিয়ে কি কেউ খুন করতে যাবে?

তারপর ও সবাই দাইয়ান কে দেখতে চায়। তখন দিরহাম দাইয়ান কে ডাক দিতে শুরু করে। কিছু সময়পর দাইয়ান রুম থেকে বেড়িয়ে এসে হাই তুলে বলে,”ভাই রাতে বিয়ে করতে না করতে সাত সকালে বউভাতের দাওয়াতে এতো মানুষ কে ডাকার কি দরকার ছিলো? দু দিন পরেও তো বউভাতের অনুষ্ঠান করতে পারতে। ”

দিরহাম বলে,”এরা তোর চল্লিশা’র দাওয়াত খেতে এসেছে। দুদিন আগে যার সাথে তোর ঝামেলা হয়েছিল। আজ সকালে তার লাশ রুপসী খালপাড়ে পাওয়া গেছে। তা-ই এদের সবার ধারণা তুই ঐ লোকটাকে খুন করেছিস। এই জন্য সাত সকালা সবাই দলবদ্ধ হয়ে এখানে এসেছে।”

দাইয়ান এসব কথা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,”ঐ ডাস্টবিনের নোংরা চরিত্রের লোকের মৃত্যু হয়েছে বলে সবাই দলবেঁধে আমাকে আসামী সাজাতে চলে এসেছেন?”

দাইয়ান একটু থেমে আবারো বলে ওঠে,”কাল রাতে আমার বিয়ে হয়েছে। নিজের সুন্দরি বউ কে রাত্রির বেলা একা রেখে আমি অবশ্যই খুন করতে যাব না?”

দিরহাম তখন নিজের স্ত্রী কে উদ্দেশ্য করে বলে,” এই রাইসা নতুন বউ কে সাথে নিয়ে একটু এদিকে এসো।”

রাইসা রিমশা কে সঙ্গে করে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে আসে। দুজনে মাথায় বড় করে ঘোমটা টেনে দিয়েছে যেনো অন্যরা তাদের চেহারা না দেখতে পারে।

দিরহাম তখন রিমশা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
“কাল সারারাত কি দাইয়ান তোমার সাথে ছিলো? না কি দাইয়ান তোমাকে রেখে সারারাত বাহিরে কাটিয়েছে?”

রিমশা লজ্জায় মরে যাচ্ছে! নিজেদের পারসোনাল কথা কি এভাবে সবার সামনে বলা সম্ভব?

দাইয়ান তখন গম্ভীর কন্ঠে বলে,”রিমশা সত্যি কথা বলো। কারণ এখানে উপস্থিত সকালের ধারণা কাল সারারাত আমি বাড়ির বাহিরে ছিলাম। এখন তোমার কথার উপর নির্ভর করছে আমার আসামী হওয়া আর না হওয়াটা। ”

রিমশা তখন বলে, “জি উনি কাল সারারাত আমার সাথে ছিলেন।”

তখন ঝর্ণা সেখানে এসে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,”আপনাদের লাজলজ্জা নাই? বিয়েরপর দিন সকাল হতে না হতেই একটা বউ কে জিজ্ঞাস করছেন তার বর সারারাত ছিলো কি না? আপনাদের চোখ কি আকাশে? বাড়ির উঠানে তাদের ভেজা কাপড়চোপড় দেখেও কিছুই বোঝেন না?”

এবার সেখানে উপস্থিত লোকেরা লজ্জা পেয়ে ওদের কাছে মাফ চেয়ে স্থান ত্যাগ করে।

ইলমা ঝর্ণা কে এসে বলে,”তুই কিন্তু বড়দের বেপারে অতিরিক্ত কথা বলা শুরু করেছিস। এভাবে বড়দের মাঝে কথা বলা মেয়েদের উচড়ে পাকা বলে।”

এরপর ইলমা আর ঝর্ণা দু জনে রিমশা কে নিয়ে আড্ডা দিতে চলে যায়। এদিকে সকালের নাস্তা করে দিরহাম র দাইয়ান তাদের বাবা কে কাজে সাহায্য করতে বেড়িয়ে পড়ে।

রিমশা রুমে বসে ভাবছে ঐ লোকদের তো আমি মিথ্যা কথা বলি নাই। কারণ উনি রাতে আমার সাথে কথা বলে রাগ করে কয়েক ঘন্টা বাহিরে ছিলেন। দুই তিন ঘন্টায় কাউকে একা খুন করা সম্ভব নয়। তাছাড়া আমার উনার উপরে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস আছে। উনি কখনো কাউকে খুন করতে পারবে না।”

নিজের চিন্তার দুনিয়া থেকে বেড়িয়ে এসে রিমশা ইলমা আর ঝর্ণার সাথে গল্প করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। রিমশা’র শাশুড়ি মা মানুষটা অদ্ভুত তার ছেলের সাথে এভাবে বিয়ে হয়েছে। তাতে তার কোন খারাপ মন্তব্য নেই।




চলবে…..