#হে_দুঃখি_চোখ
#২য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
আমি ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে কেঁদে উঠি। তারপর আম্মা এসে আমার গলা চেপে ধরেন। আমি তখন কান্নাভেজা গলায় বলি,’আম্মা, আমার কষ্ট হচ্ছে খুব!’
আম্মা শুনেন না। তিনি চেপে ধরে রাখেন অনেক্ষণ আমার গলা। তারপর যখন দেখেন আমার চোখ উল্টে আসছে তখন ছেড়ে দেন। আমি ক্লান্ত হয়ে বারান্দার দেয়ালের উপর হেলে পড়ি। আমার চোখ থেকে টপটপ করে জল নামতে থাকে।
আম্মা তখন বলেন,’তোর বাপের কাছে যদি কস তোরে আমি মারছি তাইলে কিন্তুক তোরে জানে মাইরা ফেলাইয়াম। যদি ভালা থাকতে চাস তাইলে রাইতে শুইয়া শুইয়া চিন্তা ভাবনা কইরা দেখ যে সারা জনম কী ভিক্ষুকের মতন ঘুইরা ঘুইরা খাইবি না রাজ রানীর মতন খাইবি। তুই যদি বিয়াতে রাজি হস তাইলে হাসান তোরে রাজ রানী কইরা রাখবো।আর নাইলে তোর হাত পাও ভাইঙ্গা দিয়া ঘর থাইকা বাইর কইরা দিবো আমি।হেরপর রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা কইরা খাইবি।’
আমার মুখ দিয়ে কান্নার জন্য তখন আর কোন কথা আসে না। আমি বারান্দায় বসে থেকে একমনে শুধু কাঁদতেই থাকি।আর মনে মনে বলি,মা মাগো, তুমি মরে গিয়ে আমায় কেমন বিপদে ফেলে গেলে। তুমি চলে যাওয়ার সময় আমায় কেন নিয়ে গেলে না!’
রাত বাড়তে থাকে। আব্বা ঘরে ফিরে না। আমিও বারান্দায় বসে থাকি। আম্মা নিতুকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে। আমাকে একটি বারের জন্যও বলে না যে তুই ঘরে আয়। এসে শুয়ে পড়।
‘
বারান্দায় বসে থেকে আমার চোখ লেগেই আসছিলো। হঠাৎ আব্বা এসে আমার মাথায় আলতো স্পর্শ করায় আমি জেগে উঠি। আব্বা তখন কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন,’তোর মা তোরে এখানে রেখে দরজা বন্ধ করে দিছে?’
আমি চুপ করে থাকি।
আব্বা তখন বলেন,’বল।কথা বল।’
আমি তখন কেঁদে উঠি ফুঁপিয়ে। কাঁদতে কাঁদতে আব্বাকে জড়িয়ে ধরে বলি,’আব্বাগো, আমার আর ভালো লাগে না এইখানে। আম্মা খালি মারে।হুমকি দেয়।না জানি কখন কী করে বসে! তুমি আমারে এইখান থেকে অন্য কোথাও নিয়ে যাও আব্বা।’
আব্বা আমার মাথার আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন,’মা,মারে,আমি তোর ভালোর জন্য নতুন বিয়ে করলাম। ভাবছিলাম মা হারা মেয়ে আমার মা পাইবো। কিন্তু এটা কী আগে জানতাম রে মা,ঘরে আমি যারে আনতেছি সে মা না,সে একটা ডাইনি!’
আব্বার গলা ধরে আসে। চোখে পানি এসে যায়। তিনি তার এক হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছেন। আমি তার বুকের ভেতর একটা ছোট্ট পাখির ছানার মতো কাঁপতে থাকি।আর চোখের জলে ভাসিয়ে ফেলি আব্বার পাঞ্জাবি।
‘
আব্বা দরজায় কড়া নাড়েন। কিন্তু আম্মা দরজা খুলেন না। আব্বা এবার ডাকতে থাকেন। আম্মাকে ডাকেন। আম্মা দরজা খুলে দেয় না।সাড়াও দেয় না। আব্বা এবার নিতুকে ডাকলেন।নিতু বললো,’আসতেছি আব্বা।’
কিন্তু আম্মা নিতুকে এমন ধমক দিলেন! ধমক দিয়ে বললেন,’খবরদার। বাপ বোনের প্রতি অত দরদ দেখানো ভালা না।আইজ থাইকা আমি যা কইয়াম তাই হইবো।এরা বারান্দাত থাকবো। ওইখানে ঘুমাইবো।’
আব্বা তখন রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে দরজায় গিয়ে লাথি মারেন তার শরীরের সমস্ত জোর দিয়ে।দরজাটা তখন প্রচন্ড রকম কেঁপে উঠে। আর দ্বিতীয় লাথির সময় দরাম করে ভেঙে যায় দরজার খিল। তারপর আপনা আপনি খুলে যায় দরজা। আব্বা এবার দ্রুত ঘরে প্রবেশ করে আম্মার কাছে যান।আর আম্মাকে খাট থেকে একটানে নামিয়ে এনে চুল ধরে টেনে বের করেন ঘর থেকে। তারপর বারান্দা থেকে এক ধাক্কায় উঠোনে ফেলে দিয়ে বলেন,’যাহ। এই বাড়ি থাইকা তুই এবার বাইর হইয়া যা।’
আম্মা উঠোনে ধুলোবালির উপর থেকে উঠে শাড়িতে লেগে থাকা ধুলো ঝেড়ে পরিষ্কার করতে করতে বলেন,’ভালা হইছেনা কইলাম কামডা।কমজাতের বাচ্চা, তুই জানস না কার শইল্যে হাত তুলছস।তোর হাত যদি আমি না ভাঙ্গাই তাইলে আমি এক বাপের পয়দা না!’
আব্বা তখন ঘৃণা মেশা একদলা থুথু উঠোনে ফেলে দিয়ে বললেন,’যা যা,দেখা যাইবো তুই কই বাপের পয়দা।’
আম্মা তখন উঠোনে থেকেই নিতুকে ডাকলেন,’নিতু আয়। এই বাড়ি যতদিন আমার দখলে না আসবো ততদিন আমি এই বাড়িত ফিরতাম না।’
আব্বা বললেন,’নিতু আমার মেয়ে।সে তোর সাথে যাবে না।’
নিতুরও সম্ভবত যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু আম্মা তার দিকে এমন চোখে তাকালেন যে নিতু ভয়ের ছুটেই আম্মার পেছনে পথ ধরলো।
যাওয়ার সময় বাড়ির দেউঠি পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে আম্মা একবার পেছনে তাকালো। তারপর চিৎকার করে বলে গেলো,’বুইড়া,তুই আর তোর মাইয়ারে দুঃখের সাগরে ভাসাইতে না পারলে আমি এক বাপের পয়দা না।’
আব্বা—