হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো পর্ব-১৮+১৯+২০

0
202

#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ১৮

“আমি তো সে, যার বিচরণ তোমার মন-মস্তিষ্কে,
আমি তো সে, যার চলাচল তোমার প্রতিটি নিউরনে, আমি এক অমোঘ কালরাত্রি,যেথায় তোমার বিনা শ,
আমি এক তীরভাঙ্গা নদীর কূলহারা ঢেউ,
যার গতিবিধি তোমাতেই সীমাবদ্ধ।
তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে আমার বাস,
আশেপাশে করো না আমার খোঁজ,
আমি তোমারই হৃদয়ভাঙ্গা প্রাণপুরুষ।”

মেসেজটা দেখতেই বুকটা ধ্বক করে উঠে।চিনচিনে ব্যাথা হয়।চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসে।প্রতিজ্ঞার বুঝা হয়ে গেছে।আগন্তুক আর কেউ নয় সংকল্প।সংকল্প এসেছিলো তার কাছে।তাকে আদর করে গেছে।মনে পড়তেই গা বেয়ে অন্যরকম শিহরণ বয়ে গেলো।অধর জুড়ে হাসির ছাপ।খুশিতে চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।পরক্ষণেই হাসি-খুশি চেহারা কাঠিন্যতার আবরণে ঢাকা পড়ে গেলো।সিদ্ধান্ত নিলো সে এতো সহজে গলবে না।এতো সহজে তো ছেড়ে দেওয়া যায় না।
প্রতিজ্ঞা দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,

“ওয়েলকাম টু বাংলাদেশ,মিস্টার আফনান আহমেদ সংকল্প।জা হা ন্নামের একটু ছোঁয়া পাওয়ার জন্য রেডি হোন,প্রাণপুরুষ।”

এতোদিন সব ঠিক থাকলেও বিপত্তি বাঁধে কয়েকমাস আগে।প্রতিজ্ঞা খারাপ সঙ্গের সাথে মিশতে শুরু করে।হুটহাট কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়া,রাত করে বাড়ি ফেরা,রাস্তায় ঝামেলা করা।একদিন তো এক ছেলেকে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছিলো।সব জানতে পেরেই সংকল্পের দেশে ফেরা।নিজেকে শাস্তি দিতে গিয়ে মেয়েটাকে খারাপ হতে দেখতে পারে না শেষ।শাস্তিরও শেষ আছে!

প্রতিজ্ঞা এখন তিনজন নতুন সঙ্গি জুটিয়েছে।তাদের মধ্যে দু’জন ছেলে নাহিদ-আকাশ,একজন মেয়ে,রোহিনী।তিনজনই খারাপ প্রকৃতির।বড় লোক বাবা-মার উচ্ছনে যাওয়া সন্তান তারা।সারারাত বারে কা-টানো,ম-দ পান করা,আরো বিভিন্ন ধরনের অ্যালকোহল নেওয়া তাদের দৈনন্দিন রুটিনের অন্তর্ভুক্ত।পড়াশোনার নামে গোল্লায় গেছে।গত দেড়-দুই মাস প্রতিজ্ঞা ওদের সাথে থাকলেও ওদের মতো হয়ে উঠতে ওর সময় লাগছে।যতই হোক সে অন্য ধাঁচের মেয়ে। এসবে মানায় নিতে তার সময় লাগছে।তবে সে সংকল্পকে ভুলার জন্য নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চেয়েছিলো।সংকল্পের প্রতি অভিমান থেকেই এই পথ অবলম্বন করা।তবে কিসের কি!যেই সংকল্প মন-মস্তিষ্কের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, প্রতিটা স্নায়ুতে অবস্থান করে,তাকে কি ভুলা যায়!কিন্তু একটু-আধটু শাস্তি তো দেওয়াই যায়।ভাবতেই অধরে দুর্বোধ্য হাসি ফুটলো প্রতিজ্ঞার।

শক্ত কন্ঠে বললো,
“প্রণয়ের দ-হ-নে আপনাকে জ্বালিয়ে-পু*ড়িয়ে অঙ্গারে রূপান্তর করবো।আপনি দ-গ্ধ হবেন,আর আমি পাবো সুখ।”

আজ ছুটির দিন।প্রতিজ্ঞা,রোহিনী,আকাশ,নাহিদ যাবে শপিং-এ।প্রতিজ্ঞার তৈরী হওয়া শেষ।সাদা শার্ট,কালো জিন্স,কোমড় সমান চুল গুলো উঁচু করে ঝুটি বাধা।প্রতিজ্ঞা ড্রয়িংরুম দিয়ে যাওয়ার সময় বাবা-মার সামনে পড়ে।সে পাত্তা না দিয়ে চলে যেতে নিলে তানিম ডেকে উঠে।
“কোথায় যাচ্ছিস?”

প্রতিজ্ঞা দাঁড়িয়ে যায়।পেছন ফেরে স্বাভাবিকভাবে বলে,
“শপিংমলে।”

তানিম রাগ দেখিয়ে বলে,
“নিশ্চয়ই ঐ উচ্ছন্নে যাওয়া বখাটেদের সাথে যাচ্ছিস?”

প্রতিজ্ঞা ঠোঁট গোল করে শ্বাস নিয়ে শক্ত গলায় বলে,
“ওদের একদম বখাটে বলবে না।”

তানিম বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।প্রতিজ্ঞার দিকে যেতে যেতে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“বখাটেদের বখাটে বলবো না তো কি বলবো?অবশ্য তুই ওতো বখাটেদের তালিকায় নাম লিখিয়েছিস।”

“ভাইয়া!” প্রতিজ্ঞা চেঁচিয়া উঠে।
কিছু বলতে নিবে তার আগেই তাসলিমা বেগম উঠে আসেন।রাগান্বিত স্বরে বলেন,
“একদম চেঁচাবে না।তানিম ভুলটা কি বলেছে?নিজের যা মন চাচ্ছে তাই করছো।পারমিশন নিয়েছো কোনোদিন?ভালোবাসি ভালোবাসি করে হুট করে বিয়ে করেছো,কথা শোনার প্রয়োজন মনে করো নি।বিয়ের পরেরদিনই ফেলে চলে গেছে।আর যত ভোগান্তি আমাদের পোহাতে হচ্ছে।বাড়াবাড়ির একটা লিমিট থাকে।তুমি সেটাও ক্রস করে ফেলেছো।কিছু বলি না বলে মাথায় উঠে বসেছো।”

আর কিছু বলতে পারলেন না তাসলিমা বেগম।এর আগেই প্রতিজ্ঞা পাশ থেকে একটা ফুলদানি ছুঁড়ে মা-রে।সাথে সাথেই চার টুকরো হয়ে যায়।
প্রতিজ্ঞা মায়ের দিকে এগিয়ে এসে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,

“আমি বাবার থেকে পারমিশন নিয়েছি।আর কারোর পারমিশন আমার প্রয়োজন নেই।আর আমার স্বামী চলে যাবে শুনেই আমি বিয়ে করেছি।সেটা আমার আর আমার স্বামীর ব্যাপার।অন্য কেউ একদম নাক গলাবে না।”

আনোয়ার সাহেব প্রতিজ্ঞাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন।তবুও প্রতিজ্ঞা বলেই চলেছে,
“ভোগান্তি? আমার থাকার জায়গার অভাব পড়েছে?আমার শাশুড়ী আমাকে রোজ ফোন করে,ঐ বাড়ি যাওয়ার জন্যে আমি যাই না। আমার শ্বশুর শাশুড়ী আসেন নি আমাকে নিতে?কয়েকবারই এসেছেন,আমি যাই নি।একদম উল্টোপাল্টা কথা বলবে না।”

তাসলিমা বেগম কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আনোয়ার সাহেব মেয়েকে আদুরে স্বরে বললেন,
“প্রতিজ্ঞা মা,তুমি যাও এখন।ওদের কথায় কান দিও না।বাবা তোমার পাশে আছি।তোমার বন্ধুরা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছে বাড়ির বাহিরে।যাও তুমি।”

প্রতিজ্ঞা মায়ের দিকে রাগী দৃষ্টিতে চেয়ে দপদপ পা ফেলে চলে যায়।
তাসলিমা বেগম রাগে গিজগিজ করতে করতে স্বামীর উদ্দেশ্যে বলেন,
“তুমি আদর দিয়ে দিয়ে বাঁদর তৈরী করেছো।”

আনোয়ার সাহেব ধমকে উঠলেন।বললেন,
“চুপ করো তুমি।আমার মেয়ের উপর আমার বিশ্বাস আছে।সে লিমিটের বাহিরে আজ অব্ধি যায় নি,আর না তো যাবে।আমার মেয়ে যতক্ষণ বাহিরে থাকে ততক্ষণ ওর উপর আমার নজর থাকে,সব খবর আসে আমার কাছে।আমার মেয়ে তার লিমিট ভালো করেই জানে।”

তাসলিমা বেগম থতমত খেলেন।তবুও খেটখেট করে বললেন,
“সে যাই হোক!আমি ওর আবার বিয়ে দিবো।এই বিয়ে আমি মানি না।”

আনোয়ার সাহেব রাগান্বিত স্বরে বললেন,
“পা গল হয়ে গিয়েছো?”

তানিম এবার মুখ খুললো।স্বাভাবিকভাবে বললো,
“মা একদম ঠিক বলেছে।ঐটা কোনো বিয়েই নয়।আমি তখন অনেকবার নিষেধ করেছিলাম,তুমি শোনো নি।এই বিয়ে আমিও মানি না।ওর আবার বিয়ে দিবো আমরা।আমার অফিসের মালিকের ছেলে প্রতিজ্ঞাকে চেনে।প্রতিজ্ঞাকে তার অনেক পছন্দ।আমাকে অনেকবার বলেছে, কিন্তু আমি কিছু বলতে পারি নি।তবে এবার বলবো,কয়েকদিনের মধ্যেই ওনাদের বাড়িতে আসতে বলবো।”

উপস্থিত সবাই চমকালেও তাসলিমা বেগম চমকান নি।তিনি আগে থেকেই সব জানতেন।আনোয়ার সাহেব বললেন,
“তোমরা মা-ছেলে কি চাইছো?প্রতিজ্ঞা আবার অসুস্থ হয়ে যাক?”

তানিম শান্তস্বরে বললো,
“কিছু হবে না বাবা।আগে ওরা আসুক,তারপর দেখা যাবে।”

উপস্থিত একজন শুরু থেকেই নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।সে হলো নাদিয়া।তার ফোনে কল করা ছিলো।ওপাশে বসে থাকা ব্যক্তি সবই শুনতে পেয়েছে।কল কে টে দেয় সে।থম মে-রে বসে থাকে।বিড়বিড়িয়ে বলে,

“আমার বউয়ের আবার বিয়ে! দ -জ্জা-ল শাশুড়ী কোথাকার।দেওয়াচ্ছি বিয়ে!”

নাদিয়ার ফোনের ওপাশের ব্যক্তি সংকল্প।নাদিয়ার কাজিন আর সংকল্প ভালো ফ্রেন্ড।সেভাবেই ওদের পরিচিতি।প্রথমে চিন্তে না পারলেও পরে চিনতে পারে।গত দুই বছর প্রতিজ্ঞার সব খোঁজখবর সংকল্প নাদিয়ার মাধ্যমেই পেয়েছে।

সংকল্প এসব ভাবনা বাদ দিয়ে শপিংমলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।বউ তার শপিংমলে গেছে,তাকে পাহারা দিতে হবে তো।বউ এখন বড্ড ব-দমেজাজি হয়ে গেছে,চোখে চোখে রাখতে হবে তাকে….

#চলবে….

#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ১৯

শপিংমলের সামনে দু’টো বাইক এসে থামে।একটা বাইকে আকাশ-প্রতিজ্ঞা, আরেকটায় নাহিদ-রোহিণী।পার্কিং এরিয়া বাইক রেখে তারা শপিংমলের ভেতরে চলে যেতেই পার্কিং এরিয়াতে আরেকটি কালো গাড়ি এসে থামে।গাড়িটি থেকে এক মানব বেরিয়ে আসে।সে সূর্যের এই তীব্র তাপদাহকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নেভিব্লু রঙের হুডি পরে এসেছে।মুখে মাস্ক,চোখে রোদ চশমা।দেখে যে কেউ অনায়াসে বলে দিতে পারবে যে মানবের সাথে সূয্যি মামার ঘোর শ ত্রুতা।নাহয় মানব পা গল,পুরো সার্টিফাইড পা গল।নতুবা এই চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কেউ হুডি পরে আসে!

কিন্তু বেচারা সংকল্প বউকে পাহারা দেওয়ার জন্য লোকের মুখে পা গল শুনতেও রাজি।এতোদিন যা করার করেছে, এখন রাশ টেনে ধরতে হবে।সে শপিংমলের ভেতরে প্রবেশ করে। খুঁজতে শুরু করে প্রতিজ্ঞারা কোনদিকে গিয়েছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই ওদের পেয়ে যায়।আড়াল থেকে ওদের অনুসরণ করতে থাকে।

প্রতিজ্ঞা,রোহিণী বিভিন্ন দোকানে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করছিলো।আকাশ-নাহিদ শখের বশে এলেও এদের টমন ঘুরাঘুরি পছন্দ নয় বলে ওরা অন্যদিকে চলে যায়।কেনাকাটার জন্য কিছু সময়ের জন্য প্রতিজ্ঞার মাথা থেকে সংকল্পের কথা বেরিয়ে গিয়েছে।সে ভাবতেও পারে নি সংকল্প তাকে অনুসরণ করতে করতে এখানে চলে আসবে।

অন্যদিকে,আড়ালে থেকে সংকল্প অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।প্রতিজ্ঞা একটা জামা নিয়ে বিভ্রান্তিতে আছে।সে রঙ টা নিবে বুঝতে পারছে না।রোহিণী সবসময় ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরায় তার এসব নিয়ে ধারণা নেই।সে চুপচাপ বিরক্তি নিয়ে দেখে যাচ্ছে।তাদের ওয়েস্টার্ন শপিং শেষ।প্রতিজ্ঞা বিরক্তি নিয়ে বললো,
“বল না কোনটা নিবো?হোয়াইট অর ব্ল্যাক?”
“তোর যেটা ভাল্লাগে ঐটাই নে।”
“আমি বুঝতে পারছি না।”

এর মধ্যে দোকানদার মুখে ইয়া বড় হাসি ঝুলিয়ে বলে,
“আপু আপনি কালোটা নেন।এটা আপনাকে মানাবে।”

প্রতিজ্ঞা সরু দৃষ্টিতে চেয়ে ঠোঁটে মেকি হাসি ফুটিয়ে বললো,
“ওওও তাই না?মানাবে আমাকে?সুন্দর লাগবে?”

দোকানদার মুখে হাসি ঝুলিয়ে মাথা নাড়াচ্ছে।প্রতিজ্ঞাও বলে,
“আচ্ছা!তাহলে ফ্রিতে নিয়ে যাই?”

দোকানদার থতমত খেলেন।তার দড়ির মতো ঝুলানোর হাসিতে ভাটা পড়লো।এরমধ্যেই প্রতিজ্ঞার ফোনে মেসেজের টুংটাং শব্দ হলো।প্রতিজ্ঞা মেসেজ অপশন খুলতেই দেখলো,

“হোয়াইটটা নাও।তোমাকে সাদা রংটা মানায়।”

প্রতিজ্ঞা চকিতে আশপাশে তাকায়।কেউ নেই!সে বেরিয়ে আসে।রোহিণী বুঝতে পারে না হঠাৎ কি হলো।সেও প্রতিজ্ঞার পেছন পেছন বেরিয়ে আসে।প্রতিজ্ঞা আশেপাশে অনেকক্ষণ খুঁজে। কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না।খুঁজতে খুঁজতে শপিংমলের বাহিরে চলে এসেছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য।হাঁপাচ্ছে সে।রাগটা তরতর করে বেড় উঠছে।মাটিতে পড়ে থাকা একটা নুড়ি পাথরকে লাথি মেরে রাগান্বিত স্বরে বলে উঠে,
“শীট!কিভাবে ভুলে গেলাম!”

রোহিণী বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
“কি ভুলে গিয়েছিস?হঠাৎ করে কি হলো? কাকে খুঁজছিস?কি হয়েছে?বল?”

প্রতিজ্ঞা সাথে সাথে প্রতিউত্তর করলো না।গাল ফুলিয়ে তপ্তশ্বাস ফেললো।রোহিণীর হাত থেকে শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে স্বাভাবিক স্বরে বললো,
“কিছু না।আসছি আমি।তুই ওদের সাথে চলে যাস।”

রোহিণী তাকে বাঁধা দেয়।বলে,
“আরেহ আরেহ একা যাবি নাকি!আমি ওদের ফোন দিচ্ছি,ওয়েট।আশেপাশেই আছে হয়তো।”

প্রতিজ্ঞা শুনলো না।তার মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরছে।সে চলে গেলো।চলে যেতেই রোহিণী বিরক্তি নিয়ে মুখ খিচিয়ে বললো,
“যত্তসব,ফা লতু একটা মেয়ে!এর মধ্যে আকাশ কি দেখলো যে এর পেছনে ঘুরছে!ননসেন্স।”

প্রতিজ্ঞা চলে যেতেই সংকল্প আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো।হাতে কয়েকটা শপিংব্যাগ।বুকে থুতু দিয়ে বললো,

“বাবাহ!একটুর জন্য বেঁচে গেছি।”

ধরণীতে তমসাবেলা ঘনিয়ে আসছে।আলো ধরাকে বিদায় জানাচ্ছে।সূর্য পশ্চিমাকাশে ডুব দিচ্ছে।প্রতিজ্ঞা নিজ রুমে ভাবনায় মত্ত।হঠাৎই ফোনটা নিজ ছন্দে বেজে উঠতে শুরু করে।প্রতিজ্ঞার ভাবনার সুতো ছিঁড়ে ফোনের ক্রিং ক্রিং শব্দে।ফোন হাতে নিলে দেখতে পায় আকাশ কল দিয়েছে।প্রতিজ্ঞা জানে কেনো কল দিয়েছে।আজ বারে পার্টি আছে।ঐখানেই যাওয়ার জন্যে কল দিয়েছে।কিন্তু প্রতিজ্ঞার ইচ্ছে করছে না যেতে।আকাশ কল দিয়েই যাচ্ছে।প্রতিজ্ঞা রিসিভ করে ডান কাঁধে ফোনটা ধরে বলে,
“হ্যাঁ আকাশ বলো”

বিপরীত প্রান্তে আকাশ ভঙ্গিমা করে হেঁসে বলে,
“হেয় প্রতিজ্ঞা!কোথায় তুমি? আসছো তো আজকে পার্টিতে?”
প্রতিজ্ঞা স্বাভাবিকভাবে বলে,
“নাহ,আকাশ আজ যাবো না।ভালো লাগছে না।”

আকাশের মুখে বিরক্তির ছাপ ধরা দিলো।তবুও বিরক্তি প্রকাশ না করে মেকি হেঁসে বলে,
“অনেক ইনজয় হবে প্রতিজ্ঞা।চলে এসো।মন ভালো হয়ে যাবে।না করো না।”
“তোমরা ইনজয় করো। আমি অন্য একদিন যাবো।”
“তোমাকে ছাড়া ইনজয় করতে পারবো, বলো?বাসায় বসে থাকলে আরো বেশি বোর হবা।রেডি হও।”
জোর দিয়ে বললো আকাশ।
প্রতিজ্ঞা ভাবুক হয়ে বলে,
“আচ্ছা আমি ভেবে দেখছি।”

আকাশের রাগ যেনো আকাশ ছুলো।নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে অভিনয় করে বললো,
“কোনো ভাবাভাবি নাই প্রতিজ্ঞা।তুমি রেডি হও।আমি তোমাকে নিতে আসবো।”

প্রতিজ্ঞা কিছু বললো না।এভাবে অনেকক্ষণ চেষ্টার পর আকাশ প্রতিজ্ঞাকে রাজি করায়।প্রতিজ্ঞা নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
“আচ্ছা,আমি আসছি।”
বলে কল কেটে দেয়।আকাশ ফোনের দিকে তাকিয়ে ক্রুর হাসে।
নাহিদ,রোহিণী তার পাশেই দাঁড়ানো ছিলো।
নাহিদ বললো,
“পাখি আসছে তাহলে?”
আকাশ ক্রুর হেঁসে বলে,
“ফাইনালি!”

রোহিণী বিরক্তি নিয়ে বলে,
“আকাশ!এই একটা মেয়ের জন্য তুমি দুই মাস নষ্ট করেছো।কেনো?কি আছে ওর মধ্যে?মেয়েরা তুমি বলতে অজ্ঞান।আর ঐ ফা লতু মেয়েটা আমাদের সাথে ঘুরে-ফিরে,অথচ পাত্তা দেয় না।বারে আসে অথচ ড্রিং করে না।ন্যাকা!”

আকাশ ক্রুর হেঁসে বলে,
“আমার নজর যার দিকে পড়ে,তাকে তো আমার নিজের করে পেতেই হয়।আজকেই ওর সব জারিজুরি শেষ করবো।লাইফে সবচেয়ে বেশি সময় এই মেয়েটার পেছনে দিয়েছি।আজকেই খেল খতম!”

বলে তিনজনেই হাসতে শুরু করে।

রাত দশটা।প্রতিজ্ঞা বারে চলে এসেছে।পরনে তার হোয়াইট ফ্লোরাল টপস্,ব্ল্যাক জিন্স,চুলগুলো কার্লি করে ছেড়ে রাখা।প্রতিজ্ঞা ভেতরে প্রবেশ করে আকাশদের খুঁজতে থাকে।অন্যসময় যেখানে থাকে,আজকে ঐখানে নেই।একটু খুঁজতেই দেখতে পায় ওরা অন্য পাশে আরো কিছু ছেলেদের সাথে বসে ড্রিংক করছে,হাসাহাসি করছে।প্রতিজ্ঞা এগিয়ে যায় ওদের দিকে।বারে সাদা আলো নেই,লাল-নীল আলোয় অন্ধকার করে রাখা হয়েছে।উচ্চ শব্দে গান বাজছে, ছেলে-মেয়েরা নাচ করছে।ভীড় ঠেলে ঠুলে প্রতিজ্ঞা ওদের কাছে যায়।আকাশ প্রতিজ্ঞাকে দেখতে পেয়েই হেঁসে বলে উঠে,
“হেয় প্রতিজ্ঞা!ওয়েলকাম!
প্রতিজ্ঞা বিপরীতে স্মিত হাসে।আকাশ নিজের পাশে জায়গা করে দিয়ে প্রতিজ্ঞাকে বলে ঐখানে বসতে।কিন্তু গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসতে হবে বিধায় প্রতিজ্ঞা ঐখানে বসে না।পাশের একটা টেবিলে বসে।এতে আকাশ অপমানিত বোধ করে।তবে প্রকাশ করে না।সে উঠে প্রতিজ্ঞার পাশের চেয়ারে বসে।প্রতিজ্ঞাকে ড্রিং সাধলে সে গ্রহণ করে না।বলে,
” জানোই তো,আমি এসব খাই না।”
আকাশ জোর করে বলে,
“একটু খেলে কিছু হবে না।আজকেই আর সাধবো না।”

প্রতিজ্ঞা তবুও মানা করে।আকাশ উঠে চলে যায় যেখান থেকে অ্যালকোহল পরিবেশন করা হয়।সেখানে গিয়ে অরেঞ্জ জুস্ নিয়ে তাতে কিছু একটা মেশায়।মেশাতে মেশাতে প্রতিজ্ঞার দিকে চেয়ে ক্রুর হেঁসে বলে,
“নে-শা তো তোমাকে করতেই হবে।সেটা ওয়াইনে হোক কিংবা অরেঞ্জ জুসে্”

তারপর প্রতিজ্ঞার কাছে চলে যায়।গ্লাসটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“নাও অরেঞ্জ জুস্ খাও।”
প্রতিজ্ঞা স্মিত হেঁসে গ্লাসটা হাতে নেয়।অল্প অল্প চুমুক দিতে থাকে।এর মাঝেই বারের উচ্চস্বরের গান বন্ধ হয়ে যায়।যেসব ছেলেমেয়েরা নাচে মত্ত ছিলো,তারা সরে আসে।ঘোষণা করা হয় আজ একজন সবাইকে তার তরফ থেকে গান গেয়ে শোনাবেন।সবাই খুশী হয়ে যায়।লাইট অফ হয়ে যায়।গিটারের টুংটাং সুরের সাথে সাথে গিটার বাজানো ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে লাইট দেওয়া হয়।ব্যক্তির পরনে কালো স্যূট-প্যান্ট।লোকটি প্রতিজ্ঞাকে পিঠ পিছ করে বসে আছে।প্রতিজ্ঞার এখান থেকে লোকটাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।উপস্থিত সবার নজর লোকটার দিকে।প্রতিজ্ঞা তেমন পাত্তা না দিয়ে জুসের গ্লাসে চুমুক দিতে ব্যস্ত।
গানের সুর কানে প্রবেশ করতেই সে চমকে উঠে।এই সুর, এই গান তার চেনা,অতিপরিচিত।সে চকিতে তাকায় গান গাওয়া ব্যক্তিটির দিকে।ব্যক্তিটি মাত্রই ঘুরলো।প্রতিজ্ঞার দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে গান গাইছে সে।ঠোঁটে মিষ্টি হাসি।

Chaahe kuch na kehna
Bhale chup tu rehna
Mujhe hai pata, tere pyar ka
Khamosh chehra, ankhon pe pehra
Khud hai gawaah, tere pyar ka
……
…..
Teri hi baahon mein, panaahon mein
Rehna mujhe hardum sada
Teri hi yaadon mein, nigaahon mein
Rehna mujhe har dum sada..

প্রতিজ্ঞার এতোক্ষণে নে-শা হয়ে গেছে।সে সবকিছু অস্পষ্ট দেখছে।ঘোলাটে, অস্পষ্ট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ব্যক্তির দিকে।তার মনে হচ্ছে সামনে বসে গাইতে থাকা ব্যক্তি তার প্রাণপুরুষ ছাড়া কেউ নয়।সে উঠে দাঁড়িয়ে যায়।অস্পষ্ট স্বরে বলে,
“সংকল্প… ”

#চলবে

#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মু্গ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ২০

বসুন্ধরায় সূর্য ফিরে এসেছে।অন্ধকার দূর করে চারিদিকে আলো ছড়াচ্ছে।ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল আটটা।জানালার মাধ্যমে সূর্যের আলো ঘুমন্ত প্রতিজ্ঞার চোখে-মুখে আঁচড়ে পড়ছে।বিরক্তি নিয়ে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে সে।মাথাটা ঘুরছে।চোখ খুলে রাখা দায়।মাথাটা ধরেছে প্রচন্ড।কিছুক্ষণ থম মেরে চোখ বুঝে বসে রইলো।রাতের কথা মনে পড়তেই নিজেকে ধাতস্থ করে চোখ খুলে ভালোভাবে আশেপাশে নজর বুলাতেই তার মনে নিজের অবস্থান সম্পর্কে প্রশ্ন জেগে উঠে।সে কোথায়!মাথায় বজ্রপাত হয় নিজের পাশে উপুড় হয়ে ঘুমন্ত মানবকে দেখে।বুকটা ধ্বক করে উঠে তার।পিঠ উন্মুক্ত, মুখের একপাশ দেখা যাচ্ছে।সে নিজের দিকে একবার তো মানবের দিকে দশবার তাকাচ্ছে।হাতের উলটো পিঠ দিয়ে ভালোভাবে চোখ কচলাতে শুরু করে।তারপর আবার চোখ মেলে। নাহ, সে যা দেখছে ঠিক দেখছে।ঘুমন্ত মানব সংকল্প ব্যাতীত অন্য কেউ নয়।

প্রতিজ্ঞা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে এটা স্বপ্ন।চোখ মেললেই সব কর্পূড়ের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।তার মাথা বর্তমানে শূন্যস্থান ব্যাতীত কিছু নয়।মাথা কাজ করছে না।কিছু ভাবতে পারছে না সে।কি প্রতিক্রিয়া করা উচিত,বুঝতে পারছে না।শুধু ইচ্ছে করছে মানুষটাকে জড়িয়ে ধরতে।কতদিন পর মানুষটাকে দেখলো সে।আর একদম নিজের পাশে।সারারাত এই মানুষটার সাথে ছিলো ভাবতেই তার গা শিউরে উঠে।অন্যরকম শিহরণ বয়ে যায়।বুকটা কেমন জানি করছে।তার তো রাগ করা উচিত।কিন্তু রাগ হচ্ছে না।চোখের প্রান্তে অশ্রুরা দলে দলে জমা হচ্ছে।চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসছে।কতক্ষণ এক দৃষ্টিতে সংকল্পের দিকে তাকিয়ে ছিলো প্রতিজ্ঞার জানা নেই।

গতকাল রাতের কথা..
আকাশ অরেঞ্জ জুসে অতি মাত্রায় নে-শা দ্রবয় মেশানোয় অল্পতেই নে-শা হয়ে যায় প্রতিজ্ঞার।অস্পষ্ট স্বরে “সংকল্প” বলেই ঢলে পড়ে সে।আকাশ তাকে ধরে ফেলে।আকাশের মুখে ক্রুর হাসি।তৎক্ষনাৎ সংকল্প এসে আকাশকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আগলে নেয় প্রতিজ্ঞাকে।
আকাশ রাগান্বিত হয়ে বলে সংকল্পের কলারে ধরে বলে,
“এই কে তুই?জানিস ও কে?আমার গার্লফ্রেন্ডকে ধরার সাহস কোথা থেকে পেলি?”

সংকল্প রাগী চোখে তাকায়।চোখ দিয়ে যেনো অগ্নিবর্ষণ হবে।দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,
“তুই জানিস ও কে?শী ইজ মাই ওয়াইফ।ওকে যেই হাত দিয়ে ধরেছিস,ওটা ভেঙ্গে দিতে আমার দু’মিনিট ও ভাবতে হবে না।সর!”

আকাশ রেগে গিজগিজ করতে করতে সংকল্পকে আঘাত করতে আসলে প্রতিজ্ঞার বাবার পাঠানো বডিগার্ডরা যারা সবসময় প্রতিজ্ঞার উপর নজর রাখে তারা এগিয়ে আসে।আটকে দেয় আকাশকে।আকাশ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে।তার বাবা নামকরা শিল্পপতি।এখন কিছু হওয়া মানে বাবার কাছে সব তথ্য যাওয়া।সে এটা চায় না।সংকল্প বেরিয়ে আসে প্রতিজ্ঞাকে নিয়ে।প্রতিজ্ঞা মা-তালের মতো আচরণ করছে।নিজের হুঁশে নেই।সংকল্প তাকে নিয়ে গাড়িতে বসায়।দেখতে পায় প্রতিজ্ঞা বিড়বিড় করছে।একটু ঝুঁকলে শুনতে পায় প্রতিজ্ঞার বিড়বিড় করা বাক্য,

“সংকল্প,আপনি অনেক খারাপ,অনেক খারাপ।আমাকে শুধু কষ্ট দিয়েছেন।এখনো দিয়ে যাচ্ছেন। আপনি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন।আমার অনেক যন্ত্রণা হয়।আপনি আমার কষ্ট আগেও বুঝেন নি,এখনো বুঝেন না।আপনি অনেক খারাপ…”

সংকল্প প্রলম্বিত শ্বাস ফেলে। প্রতিজ্ঞার কপালে আলতো চুমু খেয়ে আদুরে স্বরে বলে,
“আর যাবো না।এখন আমি এসে গেছি,সব যন্ত্রণা দূর করে দিবো।”

বলে গাড়ি স্টার্ট দেয়।গাড়ি চলতে শুরু করে পিচঢালা ব্যস্ত শহুরে রাস্তার উপর দিয়ে।

অন্যদিকে,গার্ডদের আগে থেকেই সবধরনের তথ্যাদি দেওয়া থাকায় তারা সংকল্পকে চিনে।তাই তাকে আটকায় না।আনোয়ার সাহেবের ফোনে মেসেজ পাঠায়,
“ম্যামকে সংকল্প স্যার নিয়ে গেছেন।”

মেসেজটা সাথে সাথেই সিন্ হয়।আনোয়ার সাহেবের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে।
সবাই বসার ঘরে প্রতিজ্ঞার জন্য অপেক্ষা করছিলো। অপেক্ষা নয় বরং চিন্তা করছিলো।এতো রাত হয়ে গেছে প্রতিজ্ঞার ফেরার নাম নেই।তাসলিমা বেগম রাগে গিজগিজ করছেন।আনোয়ার সাহেব হাই তুলে নিজের ঘরের দিকে যেতে যেতে বললেন,
“চিন্তা করতে হবে না।প্রতিজ্ঞা ঠিক জায়গাতেই আছে।”

তাসলিমা বেগম স্বামীর পানে তাকান।অবাক হয়ে বলেন,
“মানে?”
“প্রতিজ্ঞাকে সংকল্প নিয়ে গেছে।”

বলে আনোয়ার সাহেব আর দাঁড়ান নি।সোজা ঘরে চলে গেলেন।বসার ঘরে রেখে গেলেন দু’টো বিস্ফোরিত চেহারার মানুষ।

অন্ধকার ঘরটায় প্রতিজ্ঞাকে কোলে করে নিয়ে আসে সংকল্প।প্রতিজ্ঞার হুশ নেই,আবোলতাবোল বকছে।সংকল্প তাকে শুইয়ে দিয়ে ঘরের আলো জ্বেলে দিলো।
প্রতিজ্ঞা উঠে বসলো।টলছে সে।চোখ পিটপিট করে ঠোঁট উল্টিয়ে এক হাত উঁচু করে ডাকলো সংকল্পকে,
“এই প্রাণপুরুষ, এদিকে এসো!”

সংকল্প স্বাভাবিকভাবেই গেলো।পাশে বসলো।
প্রতিজ্ঞা চোখ পিটপিট করে নিজের পাশঘেষে বসার জন্য বললো,
“এখানে বসো,এখানে!”

সংকল্প আগের জায়গাতে বসেই বললো,
“কিছু লাগবে তোমার?বলো আমাকে! ”

সংকল্প ওর পাশঘেষে না বসায় প্রতিজ্ঞা রেগে যায়।
কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
“তোমাকে এখানে আসতে বলেছি না?এসো!”

বলতে বলতে সংকল্পের কাছে যাওয়ার জন্য যেই উঠতে নিবে তখনই মাথা ঘুরে পড়ে যায়।সংকল্প ধরে ফেলে।প্রতিজ্ঞা সংকল্পের গলা জড়িয়ে ধরে।মাথা ঘুরছে তার।এক হাতে সংকল্পের গলা জড়িয়ে ধরে,অন্য হাত নেড়ে, চোখগুলো টেনে খুলে রাখার চেষ্টা করে বলে,

“প্রাণপুরুষ আপনি আমাকে নিয়ে ঘুরছেন কেনো?প্রাণপুরুষ দেখুন,দেখুন ঐ লাইটটা ঘুরছে,ঐ পর্দাটাও ঘুরছে,আরেহ ঐ আলমারিটাও ঘুরছে,সব ঘুরছে প্রাণপুরুষ, সব।
বলে বাচ্চাদের মতো খিলখিলিয়ে হাসতে শুরু করে প্রতিজ্ঞা।সংকল্প থতমত খায়।বুঝতে পারে সব অ্যালকোহলের প্রভাব।ভাবনার মাঝেই প্রতিজ্ঞা সংকল্পের গালে আঙ্গুল ঘুরিয়ে বলছে,
” প্রাণপুরুষ,তুমি এত্তোগুলা হয়ে গেলা কিভাবে?”

দ্বিতীয়বারের মতো আবার থতমত খায় সংকল্প।
প্রতিজ্ঞা খিলখিলিয়ে হাসছে আর বলেই চলেছে,
“ঐ যে একটা প্রাণপুরুষ, ঐ যে আরেকটা, ঐ তো আরেকটা।ওবাবা ঐখানেও একটা।একটা প্রাণপুরুষ,দুইটা প্রানপুরুষ,তিনটা প্রাণপুরুষ, চারটা প্রাণপুরুষ, পাঁচটা প্রাণপুরুষ।”

বলে আবার হাসতে শুরু করলো।সংকল্প চোয়াল ঝুলিয়ে বউয়ের কান্ড দেখছে।এরমধ্যেই প্রতিজ্ঞা আবার নজর দিলো সংকল্পের দিকে।চোখ পিটপিট করে বললো,
“প্রাণপুরুষ, তুমি আগের থেকে সুন্দর হয়ে গিয়েছো।কি মাখো?আমাকেও বলো!”

বলতে বলতে প্রতিজ্ঞা বমি করে দিলো।নিজের কাপড়সহ সংকল্পের কাপড়ও নষ্ট করে দিলো।সংকল্প অসহায়ের মতো তাকিয়ে বললো,
“এটাই বাকি ছিলো!”

তারপর প্রতিজ্ঞাকে নিয়ে ছুটে ওয়াশরুমে।পরিষ্কার করিয়ে দেয় প্রতিজ্ঞাকে।অন্ধকারে প্রতিজ্ঞার কাপড় পরিবর্তন করে দেয়।তার কাছে প্রতিজ্ঞার কাপড় আছে।দুপুরবেলা শপিংমল থেকে কিনেছে,কানাডা থেকে আসার সময়ও নিয়ে এসেছিলো।তারপর প্রতিজ্ঞাকে শুইয়ে দিয়ে নিজে চলে যায় ফ্রেশ হতে।এসে দেখে প্রতিজ্ঞা ঘুমোচ্ছে।সংকল্প পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে ঘুমন্ত চেহারাটায়।এই চেহারার দিকে তাকিয়ে সে সারাজীবন পার করে দিতে পারবে।মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
“একটা দিন আগে যদি ভালোবাসা প্রকাশ করতে তাহলে না তোমাকে এতো কষ্ট পেতে হতো,না আমাকে অপরাধবোধে ভুগতে হতো,এতো দূরে থাকতে হতো।একটা দিনের ব্যবধানে একটা ঝড় এসে সব এলোমেলো করে দিলো।নাহয় আমাদের একটা ভালোবাসা পূর্ণ সংসার হতো।তবে এতোদিন হয় নি,এখন হবে।আর ছাড়বো না তোমায়।একদম নিজের সাথে বেঁধে রেখে দিবো।নিজের খাঁচায় বন্দিনী করে রেখে দিবো।আমার ঘুড়ি আমার আকাশেই উড়বে,অন্যকোনো আকাশে উড়তে গেলেই ভোকাট্টা!যতই ঘুড়ি উড়ো,লাটাই তো আমার হাতেই!”

“ভালোবাসি বউ,অনেক বেশিই ভালোবাসি।একটা মানুষকে যতটা ভালোবাসা যায়,আমি তোমাকে তার থেকেও বেশি ভালোবাসি।আমার ভালোবাসার গভীরতা খুঁজতে গেলে অতলে হারিয়ে যাবে,তবুও তলদেশ খুঁজে পাবে না।আমি তোমার প্রাণপুরুষ, তুমি আমার প্রাণভোমরা বউ।”

বলে আলতো করে উষ্ণ পরশ এঁকে দেয় প্রতিজ্ঞার কপালে।প্রতিজ্ঞা তার কোমড় জড়িয়ে ঘুমোচ্ছে।সংকল্প আর ঘুমাতে পারে না।সারারাত এভাবেই বিনিদ্র কাটিয়ে দেয়।ভোরের দিকে তার চোখ লেগে আসলে সে ঘুমিয়ে পড়ে।

#চলবে…