হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো পর্ব-২৫+২৬

0
160

#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ২৫

চারিদিকটা রাতের অন্ধকারে ঘিরে আছে।ঘড়িতে এখন দশটা পঁয়ত্রিশ।প্রতিজ্ঞা উদ্বিগ্ন হয়ে বসে আছে সংকল্পের ঘরে।প্রায় দুই বছর পর এই ঘরে,এই বাড়িতে পা দিয়েছে সে।এই দু’বছরে কত স্মৃতির স্বাক্ষী হতে পারতো এই ঘরটা।কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে এই ঘর শুরু নিস্তব্ধতা, নিরবতা এবং শূণ্যতার স্বাক্ষী হয়ে আছে।ঘরটা ঠিক আগের মতোই রয়েছে,কিছুই বদলায় নি।সংকল্পের ঘরটা জাহানারা বেগম আগের মতোই গুছিয়ে রেখেছেন।পরিষ্কার-পরিছন্ন রেখেছেন।তাই বদ্ধ ঘরের গন্ধটা পাওয়া যায় নি।শুধু মানুষের আনাগোনা কম ছিলো, এই যা।ঐ তো দুপুরের শেষটায় সংকল্প রেগেমেগে প্রতিজ্ঞাকে নিয়ে এ বাড়িতে চলে আসে।তারপর কিছু বলতে গিয়েও বলে না।না বলে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে।সংকল্প চায় নি প্রতিজ্ঞার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে।সামনে থাকলে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো না,কি না কি বলে ফেলতো,তাই তো বেরিয়ে যাওয়া।

প্রতিজ্ঞা ধারণা করেছিলো সংকল্প রাগান্বিত হয়ে অনেককিছু বলবে।সেও তর্ক করবে,কথা শোনাবে।এমন প্রস্তুতিই নিয়েছিলো সে।কিন্তু তার ধারণায়,প্রস্তুতিতে এক সমুদ্র পানি ঢেলে দিয়েছে সংকল্প।কাঁচকলা দেখিয়ে বেরিয়ে গেছে বাড়ি থেকে।প্রতিজ্ঞা চোয়াল ঝুলিয়ে বসেছিলো।কিন্তু এখনো বাড়ি ফিরে না আসা চিন্তারা জেঁকে বসেছে। চেহারায় উদ্বিগ্নতার ছাপ।একবার পুরো ঘর পায়চারি করছে তো আরেলবার বেলকনিতে গিয়ে দাড়াচ্ছে,আবার বিছানায় বসছে।গত চার ঘন্টা সে এভাবেই পার করেছে।হঠাৎ করেই কর্ণকুহরে গাড়ির হর্ণের শব্দ প্রবেশ করলো।গাড়ি বাড়িতে প্রবেশ করেছে।প্রতিজ্ঞা বুঝলো সংকল্প এসেছে।কারণ বাড়ির বাকি পুরুষ দু’জন বাড়িতেই আছেন।খাবার টেবিলে তাদের সাথে দেখা হয়েছে।সবাই কত খুশি হয়েছে।তাদের ব্যবহারে প্রতিজ্ঞা বুঝতেই পারে নি সে এ বাড়িতে দু’বছর পর এসেছে।এখন আফসোস হচ্ছে তার কেনো দু’বছর এ বাড়িতে থাকলো না সে।ভাবনার মাঝেই সংকল্পের উপস্থিতি ঘটলো ঘরে।প্রতিজ্ঞা শান্ত দৃষ্টিতে অবলোকন করছে সংকল্পকে।সংকল্প তাকায়নি প্রতিজ্ঞার দিকে।প্রতিজ্ঞা খেয়াল করলো সংকল্পের হাতে ট্রলি ব্যাগ। ব্যাগটা দেখে সে আশ্চর্য হলো।ব্যাগটা তার নিজের।সংকল্প কোথায় পেলো!

পরনে তার সাবিহার সেলোয়ার-কামিজ।এই বাড়িতে তার কোনো জামা-কাপড় না থাকায় সাবিহার থেকে কাপড় আনতে হয়েছে।দু’জনের শরীরের গঠন এক হওয়ায় সমস্যা হয় নি।নিজের ট্রলি ব্যাগ দেখে প্রতিজ্ঞা মনে মনে খুশি হয়েছে।রাগের মাথায়ও সংকল্প তার কথা ভেবেছে।

পরক্ষণেই বাড়ির পরিচারিকা তিনজন আরো তিনতে ট্রলি ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করলো।ব্যাগগুলো একটা পাশে রেখে দেওয়ার জন্য সংকল্প তাদের বলছে।পরিচারিকারা ব্যাগগুলো সংকল্পের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাগ রেখে চলে যায়।প্রতিজ্ঞা ব্যাগগুলো চিনে।এগুলো সে সংকল্পের ফ্ল্যাটে দেখেছিলো।এবার সব বুঝতে পারে সে।মহারাজ এতোক্ষণ নিজের ফ্ল্যাটে ছিলেন।

সংকল্পের চেহারায় গম্ভীরতা।সে এদিক-ওদিক না তাকিয়ে সোজা একটা ব্যাগ খুলে টাওয়েল গলায় ঝুলালো।টি-শার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।প্রতিজ্ঞা হতভম্ব হয়ে গেলো।একটাবারের জন্যেও তার দিকে তাকালো না।এমন ভাব যেনো ঘরে কেউ নেই।তার মতো পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চির মেয়েটাকে এভাবে এড়িয়ে গেলো!রাগে নাকের পাটা ফুলে উঠলো,ঠোঁট উল্টালো সে।ওয়াশরুমের দরজার দিকে কপাল কুঁচকে ধীরে ধীরে ভেঙচিয়ে বললো,

“ভাব ধরেছে দেখো,যেনো অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট!কই আমার রাগ ভাঙ্গাবি,তা না নিজে ভাব ধরে আছিস।তোর ভাবের নিকুচি করি,শা লা!”

বলে সোজা হয়ে পুরো খাট জুড়ে এলোমেলো হয়ে শুয়ে পড়লো প্রতিজ্ঞা।চোখ বন্ধ করে ফেললো।ঘুমের অভিনয় করবে সে।ক্রুর হেঁসে বিড়বিড়িয়ে বললো,

“এবার সারারাত ভাব ধরে থাক। তোর ভাবরে গু ল্লি মা রি, বেটা ব জ্জা ত।”

অনেকক্ষণ পার হয়ে গেছে।প্রতিজ্ঞা পায়ের উপর পা তুলে শুয়ে আছে।সংকল্পের বের হওয়ার অপেক্ষা।দরজা খোলার শব্দ পেলেই সে চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভাব ধরবে,এমনটাই পরিকল্পনা তার।কিন্তু সংকল্প বের হচ্ছে না।বিরক্তিতে ছেয়ে গেলো প্রতিজ্ঞার মন-মস্তিষ্ক।ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে।বিরক্ততে উঠে বসলো প্রতিজ্ঞা। মনে মনে বললো,

“এক ঘন্টা ধরে কে গোসল করে ভাই!কে জানে কয়দিন যাবৎ গোসল করে না।জন্মের গোসল করতেছে,বাবারে বাবাহ!”

ধীরে ধীরে ওয়াশরুমের দরজা পাশে গিয়ে দাঁড়ালো প্রতিজ্ঞা। সরু চোখে তাকিয়ে আছে ওদিকে। ঠোঁট উল্টিয়ে ভাবছে,
“ওয়াশরুমে থেকে যাওয়ার প্ল্যান করলো নাকি!”

ভাবনার মাঝেই খট করে ওয়াশরুমের দরজাটা খুলে গেলো।প্রতিজ্ঞা ভ্যাবচ্যাকা খেয়ে গেলো।সংকল্প সরু চোখে তাকিয়ে আছে প্রতিজ্ঞার দিকে।প্রতিজ্ঞা অসহায় চেহারায় তাকিয়ে আছে সংকল্পের দিকে। প্রতিজ্ঞা আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সংকল্প পাশ কাটিয়ে চলে যায়।প্রতিজ্ঞা ফোঁস করে নিঃশ্বাস নেয়।দাঁত কিড়মিড় করছে সে।
মনে মনে বললো,
“টাইট দিতে গিয়ে নিজেকেই টাইট দিয়ে ফেললাম।”

সংকল্প নিজের মতো কিছু একটা করে বেলকনিতে চলে যায়।প্রতিজ্ঞা ফোঁস ফোঁস করতে করতে বিছানায় বসে।কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।আবার, সংকল্পের এমন চুপ থাকাও মেনে নিতে পারছে না।বড্ড কষ্ট হচ্ছে।প্রতিজ্ঞা বুঝলো সে চুপ করে থাকলে হিতে বিপরীত হবে।যা করার তাকেই করতে হবে।এগিয়ে তাকেই যেতে হবে।যা ভাবা,সেই কাজ।দম নিয়ে চলে গেলো বেলকনিতে।

সংকল্প বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।সি গা রেট ফুঁকছে সে।দৃষ্টি অন্ধকার আকাশে।তার পাশেই তো গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদে ঝলমল করা কৃষ্ণচূড়া গাছটা স্ব গৌরবে দাঁড়িয়ে।কিন্তু তাতে আজ এতোবছর পরেও চোখ পড়ছে না সংকল্পের।অন্ধকারের সাথে যেনো সখ্যতা গড়তে চাচ্ছে সে।পাশে যে কেউ দাঁড়িয়ে উশখুশ করছে,সেটা সে ভালোই টের পেয়েছে।কিন্তু প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না।

বেলকনিতে এসে প্রতিজ্ঞার চক্ষু চড়কগাছ। সেই ভদ্র মাষ্টারমশাই সি গা রে ট ফুঁকছে। প্রথমে বিশ্বাস হলো না তার।কয়েকবার চোখ কচলালো।তারপর বিশ্বাস হলো যে যা দেখছে সত্যি দেখছে।একটা মানুষের কত পরিবর্তন! সত্যিই সময় সবকিছু পরিবর্তন করে দেয়।ধরা যায় না,ছোঁয়া যায় না।শুধু অনুভব করা যায় এই পরিবর্তন নামক শব্দটাকে।

প্রতিজ্ঞা হালকা কেশে সংকল্পের দৃষ্টি কাঁড়তে চেয়েছে।কিন্তু পারে নি।পরপর কয়েকবার চেষ্টা করলো,তাও পারলো না।ফোঁস ফোঁস করতে করতে বললো,
“আপনি আমাকে ইগনোর করছেন কেনো?”

সংকল্প চুপ,দৃষ্টি অন্ধকারে।

প্রতিজ্ঞা আবার রাগী গলায় বললো,
“কথা বলছেন না কেনো?আজিব!”

সংকল্প এবারও চুপ।প্রতিজ্ঞা কিছুটা চেঁচিয়ে বললো,
“আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেছি।শুনতে পাচ্ছেন না?”

সংকল্প এবারও নিরবতা পালন করলো।কেউ যে তার সাথে কথা বলছে এই অনুভূতিই নেই তার মাঝে।অন্ধকার থেকে চোখ ফেরালে যেনো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে।
প্রতিজ্ঞা জোরে দম নিলো।এগিয়ে গেলো সংকল্পের দিকে।সংকল্পের হাত থেকে সি গা রেট টা নিয়ে ফেলে দিলো।দু’হাতের আজলে সংকল্পের মুখ নিয়ে নিজের দিকে ফেরাতে ফেরাতে বললো,
“তাকান আমার দিকে, তাকান বলছি।”

সংকল্প প্রতিজ্ঞার চোখের দিকে তাকালো।তার দৃষ্টি শান্ত।প্রতিজ্ঞা করুণ কন্ঠে বললো,
“ইগনোর করছেন কেনো আমাকে?”
“তুমিই তো দূরত্ব চেয়েছো!”

গম্ভীর কন্ঠে বললো সংকল্প।শব্দগুচ্ছ কর্ণপাত হতেই প্রতিজ্ঞা ছেড়ে দিলো সংকল্পকে।ভণিতা করে বললো,
“ওওওও আমি দূরত্ব চেয়েছি বলে,দূরত্ব বজায় রাখছেন।আমি তো বিয়েও করতে গিয়েছিলাম,তাহলে বিয়ে করতে কেনো দিলেন না ?আটকালেন কেনো?
হায়য়য়, আকাশ কত হ্যান্ডসাম,ড্যাশিং,আমার ভালো বন্ধু।আমাদের মানাতো একসাথে।নিয়ে এলেন কেনো আমায়?আমি….

আর কিছু বলতে পারলো না প্রতিজ্ঞা।তার আগেই সংকল্প ডান হাত দিয়ে প্রতিজ্ঞার দু’গাল চেপে ধরলো।দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,
” জ্যান্ত পুঁ তে ফেলবো।”

আচমকা আক্রমণে প্রতিজ্ঞা বোকাবনে গেলো।গালেও ব্যাথা পাচ্ছে।তবে ব্যাথাকে সে পাত্তা দিলো না।সে মুখ খিচিয়ে বললো,
“আমার চাওয়াকে তো আপনি পাত্তা দেন!তাহলে?”

সংকল্প ছেড়ে দিলো প্রতিজ্ঞাকে।শান্তস্বরে বললো,
“দূরত্ব সইতে পারবো,তবে অন্যের সাথে সইতে পারবো না।দূরত্ব মেনে নেওয়া সহজ।কারণ দূরত্ব শেষে তুমি আমার।আমার বুকই তোমার শেষ গন্তব্যস্থল।”

প্রতিজ্ঞা চেহারায় ভাবনার ছাপ ফেললো।ঠোঁট উল্টে বললো,
“তাহলে দূরত্বের সমাপ্তি দাগ টেনে ফেলি।কেমন?”

সংকল্প তাকালো প্রতিজ্ঞার দিকে।প্রতিজ্ঞা চোখ পিটপিট করে বললো,
“দূরত্ব ঘুচিয়েছি।এবার জায়গা হবে আপনার বুকে?”

সংকল্প মৌনতা পালন করছে।সংকল্পের মৌনতা সহ্য হলো না প্রতিজ্ঞার। অধৈর্য্য হয়ে বললো,
“টাইম আপ।এখন বুকে নিলেও যাবো না।আকাশকে বললে এতোক্ষণে বুকে নেওয়ার সাথে সাথে কত আদর দিতো আমায়।”

এক বাক্যই যথেষ্ট ছিলো,রাগান্বিত সংকল্পকে আরো রাগিয়ে দেওয়ার জন্য।হেঁচকা টানে প্রতিজ্ঞাকে নিজের বুকের উপর ফেললো।জাপটে ধরলো প্রতিজ্ঞাকে।প্রতিজ্ঞার মুখে দুষ্ট হাসি।ডোজ কাজে দিয়েছে।
সংকল্প কঠিন স্বরে বললো,
“ঐ নামটা আরেকবার উচ্চারণ করলে, আমি তোমার মুখ সেলাই করে দিবো।”

প্রতিজ্ঞা ব্যস্ত সংকল্পের ঘ্রাণ নিতে।আহ,কতদিন পর শাম্তির জায়গাটায় মাথা রাখলো।চমৎকার হাসলো সে। এ হাসি দেখতে পেলো না সংকল্প।প্রতিজ্ঞা দুঃখী দুঃখী হয়ে বললো,

“আপনি ইগনোর করলে আমি অন্য কারো কাছেই চলে যাবো।”

প্রতিজ্ঞা অনুভব করলো বাঁধন যেনো আরো দৃঢ় হলো।এমন দৃঢ় যে কেউ ছেড়ে যেতে পারবে না।প্রতিজ্ঞা বুক থেকে মাথা তুলে চাইলো সংকল্পের দিকে।

সংকল্প আদুরে স্বরে বললো,
“আর ইগনোর করবো না।তুমি জানো আমি যখন শুনলাম তোমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।আর তুমি তাতে রাজি।আমার কতটা কষ্ট হয়ে ছিলো?দমবন্ধ হয়ে আসছিলো।হাস ফাঁস লাগছিলো।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছিলো।আমার অপরাধবোধ আমার ভুল হয়ে যাবে আমি ভাবতে পারি নি,বুঝতে পারি নি।বিশ্বাস করো,ভেতরটা বড্ড জ্ব লছিলো।”

প্রতিজ্ঞার চেহারা মলিন হয়ে গেলো। সে তো একটু টাইট দিতে চেয়েছিলো,সামান্য মজা।কিন্তু এই লোক এতো সিরিয়াস হয়ে গেলো।প্রতিজ্ঞা বললো,
“আই অ্যাম স্যরি।বাট আপনি এতো বোকা?”

সংকল্প থতমত খেয়ে বললো,
“মানে?”

প্রতিজ্ঞা সংকল্পের পায়ের উপর ভর দিয়ে একটু উঁচু হয়ে সংকল্পের গলা জড়িয়ে ধরলো। নাকে নাক ঠেকালো।দু’জনের নিঃশ্বাস মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।সংকল্প বিস্ময় নিয়ে তার কান্ড দেখছে।দু’হাতে শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো প্রতিজ্ঞাকে।

প্রতিজ্ঞা ফিসফিস করে বললো,
“যেই মানুষটাকে হারিয়ে দু’মাস মানসিক ভরসাম্যহীন ছিলাম,যেই মানুষটাকে রিভা- লবার ঠেকিয়ে বিয়ে করেছি,তাকে ছেড়ে অন্যকাউকে বিয়ে করবো,সেটা ভাবলেন কি করে?”
“মানে?” বোকা বোকা স্বরে বলে সংকল্প।

প্রতিজ্ঞা হেসে ফেললো।আরেকটু শক্ত করে গলা জড়িয়ে উচ্ছসিত হয়ে বললো,
“মানে এটা একটা মজা ছিলো।আপনাকে একটু টাইট দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আপনাকে টাইট দিতে গিয়ে নিজেই টাইট হয়ে গেলাম।”

শেষ কথাটা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে প্রতিজ্ঞা।

সংকল্প দুইয়ে দুইয়ে চার মেলালো। এর জন্যই নাদিয়ার কথাগুলো কেমন ছিলো।আবার,নাদিয়া পাত্রপক্ষ আসা আটকানোর জন্য সাহায্য করতেও চায়নি তাকে।সংকল্প বুঝলো এইসব এই দুই নারীর বুদ্ধি।তাকে বোকা বানালো।টেনশনে ঐ সারারাত ঘুৃমায় নি সে।নিজের বোকামোতে নিজেই হেসে ফেললো।বললো,
“পুরুষমানুষ যতই বুদ্ধিমান হোক না কেনো,নিজের ব্যক্তিগত নারীর বেলায় সে একদম বোকা। ব্যক্তিগত নারী অন্য কারো হয়ে যাবে ভাবতেই তারা,তাদের বুদ্ধি খেই হারিয়ে ফেলে। পুরুষমানুষ সব সহ্য করতে পারে তবে ব্যক্তিগত নারীকে অন্যপুরুষের সাথে কল্পনাও করতে পারে না।ব্যক্তিগত নারীর বেলায় তারা অনেক হিং সুটে।”

প্রতিজ্ঞা আবেশিত হয়ে শুনলো,দেখলো সংকল্পকে।তার প্রানপুরুষ এখন পাক্কা প্রেমিক পুরুষ হয়ে গেছে।ভালোবাসা মানুষকে বদলে দেয়।কথাটা সত্যি!

প্রতিজ্ঞা ভাব নিয়ে বললো,
“আমিও অনেক হিং সুটে।”

সংকল্প উচ্চস্বরে হেসে ফেললো।হাসির রেখা রেখেই বললো,
“তা আমার থেকে ভালো কে জানে!”

পরক্ষণেই গম্ভীর হয়ে বললো,
“তবে তোমাকে শা স্তি পেতে হবে।আমার ইমোশন নিয়ে মজা করেছো,অন্য ছেলের জন্য৷ সেজেছো।কই আমার জন্য তো কোনোদিন সাজলে না!শা স্তি পেতেই হবে তোমাকে।”

প্রতিজ্ঞা ভয়ে ঢোক গিললো।শাস্তির নাম শুনতেই তার মনে হলো সংকল্প আবার তাকে ফেলে চলে যাবে।মাথা কেমন শূণ্য হয়ে গেলো।অসহায়ের মতো বললো,

“আপনার জন্য সেজেছিলাম,সত্যি।আমি তো জানতাম আপনি আসবেন।আর করবো না এমন।এবারের মতো সব ভুলে যান।আর দূরে যাবেন না।আমি এবার মরেই যাবো।”

প্রতিজ্ঞার চেহারা দেখে সংকল্প হেসে ফেললো।প্রতিজ্ঞা বোকাবনে গেলো।বললো,
“এখানে হাসির কি হলো!”

সংকল্প কপালে কপাল ঠেকালো। গাঢ় কন্ঠে বললো,
“আমাকে টাইট দিতে চেয়েছিলে তো।এবার আমি তোমাকে টাইট দিবো।সারারাত ধরে দিবো।আদরি টাইট!!কাছে টেনে টাইট দেওয়া যাকে বলে।”

কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই প্রতিজ্ঞার বুকটা ধ্বক করে উঠলো।সে বুঝলো,অনেক কিছুই বুঝলো।মুহুর্তের মাঝেই লজ্জারা ঘিরে ধরলো তাকে।মুখ লুকালো সংকল্পের বুকে।

সংকল্প হুট করেই কোলে তুলে নিলো প্রতিজ্ঞাকে।ঘরের দিকে যেতে যেতে গুনগুনিয়ে বললো,

“কার্ণিশে আলতা মাখানো
দিনেরা ঢলে পড়ে রাতে,
তারপরে রাত্রী জাগানো,
বাকিটা তোমারই তো হাতে।”

#চলবে…

#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ২৬

সবেমাত্র সূর্যের আলো ফুটতে শুরু করেছে।প্রতিজ্ঞার ঘুম ছুটে যায়।নিজেকে আবিষ্কার করে সংকল্পের উন্মুক্ত বুকে।সংকল্প তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। যেনো ঘুমের মধ্যে প্রতিজ্ঞা পালিয়ে যাবে।প্রতিজ্ঞা স্মিত হাসলো।সে শরীরের সব শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরলো তার প্রাণপুরুষকে।বুকে নাক ঘষিয়ে লম্বা একটা শ্বাস নিলো।যেনো তার প্রাণপুরুষের সকল ঘ্রাণ সে শুষে নিচ্ছে।ঘ্রাণটা এতো প্রশান্তিময় কেনো!ঘ্রাণটা এতো শান্তি দেয় কেনো!মাথা উঁচু করে ডান হাতের তর্জনি আঙ্গুল দিয়ে সংকল্পের বুকে আঁকিবুঁকি করছে।সংকল্প একটু নড়েচড়ে উঠলো।প্রতিজ্ঞা টুপ করে চোখ বন্ধ করে ফেলে।কিছুক্ষণ পর এক চোখের পাতা আধ খোলে দেখে সংকল্প উঠেছে কিনা।দেখতে পেলো উঠে নি।তার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাপলো।সে একটু উপরে উঠে সংকলন পের গলায় মুখ ডুবালো।সুড়সুড়ি দিচ্ছে,আলতো করে চুমু খাচ্ছে,চিমটি কাটছে।আচমকাই সংকল্প বন্ধন দৃঢ় করলো।ঘুম ঘুম কন্ঠেই বলে উঠলো,
“উমমমমম বউ,জ্বা লিয়ো না।রাতে বড্ড জ্বা লিয়েছ।”

শব্দগুচ্ছ অন্তঃকর্ণে পৌঁছানো মাত্রই প্রতিজ্ঞার চোখ দু’টো বড় বড় হয়ে গেলো।লোকটা এতো মিথ্যুক।কি সুন্দর অনায়াসে নিজের দোষ চাপিয়ে দিলো।প্রতিজ্ঞা মনে মনে বললো,
“হ্যাঁ?আমি জ্বা লিয়েছি?আমাকে সারারাত ঘুমাতে দিলো না।এখন আমার উপর দোষ চাপানো হচ্ছে!দেখাচ্ছি মজা।”

সে নড়েচড়ে উঠে বসলো।ঝুঁকলো সংকল্পের মুখের উপর।গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁটের আলতো স্পর্শে ভরিয়ে দিলো সম্পূর্ণ বদন।দৃষ্টি আটকালো পুরুষালি পুরু ঠোঁটে।পরপর কয়েকবার ঠোঁট ছোয়ালো তাতে।দুষ্ট হেসে কা মড় বসালো সংকল্পের নাকে।সাথে সাথেই দপ করে চোখ মেললো সংকল্প।দৃষ্টি মা তাল করা।প্রতিজ্ঞা হাসছে।বউয়ের হাসি যেনো আরো মা তাল করে দিলো।আচমকা প্রতিজ্ঞাকে জড়িয়ে ধরে পাশের বালিশে শুইয়ে দিয়ে নিজে ঝুঁকলো প্রতিজ্ঞার উপর।প্রতিজ্ঞার অধর প্রসারিত।দু’জনের ভারী নিঃশ্বাস মিলে মিশে একাকার।সংকল্প নে শাক্ত গাঢ় কন্ঠে বললো,
“কি হচ্ছে?”
“ভালোবাসাবাসি হচ্ছে।”
চমৎকার হেঁসে বললো প্রতিজ্ঞা।
সংকল্প ভ্রুজোড়া সরু করে তাকালো।বাঁকা হেসে বললো,
“একা একা তো ভালোবাসাবাসি হয় না।আমিও শুরু করি?”
“কী শুরু করবেন?” ঠোঁট টিপে বললো প্রতিজ্ঞা।চোখগুলো যেনো হাসছে তার।
সংকল্প বাঁকা হেসে টেনে টেনে বললো,
“ভা-লো-বা-সা-বা-সি।”

সংকল্পের বলার ধরণ দেখে বাচ্চাদের মতো খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো প্রতিজ্ঞা।হাসতে হাসতেই বললো,
“নাহ।”
সংকল্প ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কেনো কেনো?বউ ভালোবাসাবাসি করছে,আমি তাতে সঙ্গ দিবো না?সঙ্গ না দিলে পাপ হবে বউ পাপ হবে!”

শেষ বাক্যটি বাচ্চাদের মতে করে বলে সংকল্প।শব্দগুচ্ছ কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই প্রতিজ্ঞা ফিসফিসিয়ে মা তাল করা স্বরে বললো,
“আমার বর,আমার প্রাণপুরুষ,আমার যা ইচ্ছা তা করবো।কোনো সঙ্গ লাগবে না।”

সংকল্পের অধর প্রসারিত হলো।সেও একই সুরে বললো,

“আমার বউ,আমার প্রাণভোমরা, আমার যা ইচ্ছা তাই করবো।অবশ্যই আমার বউকে সঙ্গ দিবো।ভালোবাসাবাসিতে তো আমি আরো একধাপ এগিয়ে।”

প্রতিজ্ঞা খিলখিল করে ফেসলো।প্রাণখোলা হাসি।সংকল্পে হাসিতে মত্ত হয়ে উঠলো।কতদিন পর মেয়েটাকে এতো খুশি লাগছে।মেয়েটার চোখে মুখে খুশি উপচে পড়ছে।মনে মনে প্রার্থনা করে ফেললো,তার বউটা যেনো সবসময় এমন হাসিখুশি থাকে।
সংকল্পকে ভাবতে দেখে প্রতিজ্ঞা প্রশ্নার্ত দৃষ্টিতে তাকায়।শোধায়,
“কি ভাবছেন?”
সংকল্প স্মিত হাসলো।প্রতিজ্ঞার বদনের উপর দখল করা চুল গুলোকে কানের পেছনে গুঁজতে গুঁজতে ঠোঁট টিপে বললো,
“ভাবছি ঘুরতে যাবো।”
প্রতিজ্ঞা উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো,
“কোথায়?”

সংকল্প বাঁকা হেসে প্রতিজ্ঞার কানে ফিসফিস করে বললো,
“তোমাতে!”
প্রতিজ্ঞার উচ্ছাসে ভাটা পড়লো।লজ্জায় দু’হাতে মুখ ঢেকে বলে উঠলো,
“ইশশশশশশশশশ!”

প্রতিজ্ঞার প্রতিক্রিয়া দেখে সংকল্প শব্দ করে হেসে ফেললো।
ডুব দিলো ভালোবাসাবাসি নামক শব্দে…

ঘড়ির কাঁটা এখন এগারোটার দখলে।পরিবারের সবাই বসে আছে আহমেদ মেনশনের ড্রয়িংরুমে।শাহআলম সাহেব,সাইদুল সাহেব,সংকল্প মুখোমুখি বসে আছে। ড্রয়িংরুম আর রান্নাঘর লাগোয়া হওয়ায় রান্নাঘর থেকে সব কথা শোনা যায়।জাহানারা বেগম এবং মাধুরী বেগম রান্নাঘরে কাজ করছেন আর কথাবার্তা শুনছেন।আলোচনায় যোগ দিচ্ছেন।প্রতিজ্ঞা তাদের পাশেই দাঁড়ানো।সাবিহা খাচ্ছে।একটু আগেই ঘুম থেকে উঠেছে সে।হবু স্বামীর সাথে এখন চু টিয়ে প্রেম করছে সে।এইতো আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি।তারপরই তো তার বিয়ে।

শাহআলম সাহেবের সাথে সংকল্পের দূরত্বটা রয়ে গেছে।
সাইদুল সাহেব সংকল্পকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“কি ভাবছো?কি করবে এখন?এখনো কি ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করার শখ রয়ে গেছে?”

সংকল্প বললো,
“চাচ্চু এভাবে বলো না।আমি ঐ প্রফেশনের সাথেই যুক্ত ছিলাম।কানাডাতেও আমি তাই করেছি।এখন হুট করে চলে এসেছি।ভাবি নি কিছু!”

সাইদুল সাহেব বললেন,
“ভাবো নি যখন।আর ভাবতে হবে না।তুমি আহমেদ ফার্মাসিটিক্যালসের দায়িত্ব নিবে।এটাই শেষ কথা।তুমি চলে যাওয়ার পরে বড় ভাই বিজনেসে নাই বললেই চলে।আমি একা কতদিক সামলাবো?তুমি জানো আমাকে বিদেশেই থাকতে হয় বেশিরভাগ সময়।এখন মানুষকে বিশ্বাস করা যায় না।ম্যানেজার আমাদের বাবার আমলের।তাই উনাকে বিশ্বাস করা যায়।উনারও বয়স হয়েছে।তাছাড়া তুমি বাড়ির বড় ছেলে থাকতে বিজনেস অন্য কেউ কেনো সামলাবে?তোমার কথা আমরা আগে শুনেছি তবে এখন আর শুনবো না।রাহিব-সাহিব এখনো অনেক ছোট।তুমি দায়িত্ব না নিলে কে নিবে?”

সংকল্প বাবার দিকে তাকালো।শাহআলম সাহেব এতোক্ষণে ছেলের মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন।ছেলে কি বলে তার অপেক্ষায়।সংকল্প তাকানোর সাথে সাথে তিনি দৃষ্টি সরিয়ে ফেলেন।সংকল্প গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“আচ্ছা আমি ভেবে জানাবো তোমাদের।”

সাইদুল সাহেব রেগে গেলেন।রাগান্বিত স্বরে বলেন,

“তুমি কি ভাববে?তোমার ভাবনা তো ঐ এক, তুমি পারিবারিক বিজনেসে থাকবে না।নতুন কিছু আছে তোমার ভাবনায়?
শোনো,সামনে সাবিহার বিয়ে।হাতে বেশি সময় নেই।তুমি জানো সব।কয়েকদিনের মধ্যেই সব আয়োজন শুরু করে দিতে হবে।এখন অনেক দায়িত্ব তোমার।তুমি আজকেই আমার সাথে কোম্পানিতে যাবে।তোমার কোনো কথা আমি শুনতে চাই না।”

সংকল্প কিছু বলতে যাবে তার আগেই জাহানারা বেগম বললেন,
“তোর চাচ্চু তো ঠিকই বলেছে।অনেক ছাত্র পড়িয়েছিস।এবার বিজনেসে যোগ দে।অনুরোধ নয় আদেশ।”

সংকল্প ভাবনায় পড়ে গেলো।সবার দৃষ্টি তার দিকে।সে তাকালো প্রতিজ্ঞার দিকে।প্রতিজ্ঞাও উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অপেক্ষা সংকল্পের উত্তরের।প্রতিজ্ঞা হয়তো বুঝলো সংকল্প ভাবনায় পড়ে গেছে।এই সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন।শখ থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন।প্রতিজ্ঞা চোখের পলক ফেলে বুঝালো রাজি হয়ে যেতে।সংকল্প আবার তাকালো বাবার মুখের দিকে।অভিব্যক্তি এমন যেনো তিনি খুউউব করে চান সংকল্প বাড়ির ব্যবসায় থাকুক।অবশ্য তিনি শুরু থেকেই চায়তেন।কিন্তু ছেলে কথা শুনতো না।
অবশেষে সংকল্প সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলো।বললো,
“আচ্ছা।তোমরা যা চাও তাই হবে।”

শোনামাত্রই সকলের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।সংকল্প খেয়াল করলো তারা বাবার ঠোঁটে হাসির ঝলক।
সংকল্প প্রতিজ্ঞাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“প্রতিজ্ঞা এক কাপ কফি দাও।মাথটা ধরেছে ভীষণ।”

প্রতিজ্ঞা মাথা নেড়ে তাকালো শাশুড়ীদের পানে।শাশুড়ীরা মুখ টিপে হাসছেন।তারা জায়গা করে দিলেন কফি বানানোর জন্য।
জাহানারা বেগম ছেলেকে ধমকে বললেন,
“কি রে মেয়েটা কাল এসেছে।ওকে দিয়ে এখনই কাজ করাচ্ছিস?”
সংকল্প মজা করে বললো,
“স্বামী সেবা পরম ধর্ম মা।করতে দাও,আমার দোয়া পাবে ও।”
প্রতিজ্ঞা রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।জাহানারা বেগম কপট রাগ দেখিয়ে বললেন,
“শ য় তান কোথাকার।”

সাইদুল সাহেব মাধুরী বেগমকে বললেন,
“এই মাধুরী আমার চা কোথায়?”

মাধুরী বেগম চেঁচিয়ে বললেন,
“দিচ্ছি তো।তুমিও কি সংকল্পের মতো তোমার বউকে দোয়া দিতে চাচ্ছো?”

হেসে উঠলো সবাই।সাইদুল সাহেব হেসে বললেন,
“একদম।বউকে ভালোবেসে দোয়া দিতে চাই।আমরা চাচা-ভাতিজা এক!!”

মাধুরী বেগম কপট রাগ দেখালেন।বললেন,
“বয়স কত হয়েছে খেয়াল আছে?”
সাইদুল সাহেব বললেন,
“বয়স ভালোবাসা মানে না মাধুুু।”
তারপর সংকল্পকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“ঠিক বলেছি না সংকল্প? ”

সংকল্প প্রতিজ্ঞার দিকে তাকিয়ে বললো,
“একদম।”

সবাই হেসে উঠলো।তারা যেনো ভুলে বসেছে তাদের বয়সের পার্থক্য।শাহআলম সাহেব গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ভাই আর ছেলের দিকে।এরা এমন নি লর্জ্জ হলো কোথা থেকে,তাই ভাবতে বসেছেন।

প্রতিজ্ঞার কফি বানানো শেষ।নিয়ে এলো সংকল্পের কাছে।দাঁড়ালো সংকল্পের পেছনে।সংকল্প কফি কাপে চুমুক দিচ্ছে।মাধূরী বেগম স্বামীর হাতে চা দিয়ে গেলেন।রাগ দেখিয়ে ফিসফিস করে বললেন,
“বড় ভাই যে সামনে বসে আছেন ভুলে গেছো?”

“ছাড়ো তে,ভাইয়ের কথা। ভাই সারাজীবনের নিরামিষ।বাবা মনে হয় কুড়িয়ে নিয়ে এসেছিলো ভাইকে।”

বলে ভাইয়ের দিকে তাকাতেই দেখলেন শাহআলম সাহেব রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।তিনি শুনে ফেলেছেন।সাইদুল সাহেব বোকা হাসলেন।

এর মাঝেই কোথা থেকে যেনো রাহিব-সাহিব দৌড়ে এলো।বিচ্ছুরা এখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র।তবে তাদের বাঁদরামি কমে নি,বরং বেড়েছে।

সাইদুল সাহেব চায়ে চুমুক দিবেন,ওমনেই দু’জন একসাথে বলে উঠলো,
“বাবা একটা গান শিখেছি।গাইবো?”

সাইদুল সাহেব সেন্টি খেলেন।ছেলেদের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“না বাবারা,গেয়ো না।এর আগেরবার যেই গান গেয়েছিলে, আমি সাতদিন আমার ডান কানে কিচ্ছুটি শুনতে পাইনি।দয়া করো বাবারা।”

রাহিব-সাহিব পরস্পর নিজেদের মুখের দিকে তাকালো।চোখে চোখে কিছু একটা ইশারা করলো।তারপর অসহায় চেহারা করে বাবাকে আচমকা জড়িয়ে ধরে আকুতি করতে লাগলো। সাহিব বললো,
“বাবা,বাবা গাই না,আগেরবার তো স্পিকারের গেয়েছিলাম।ডোজটা বেশি হয়ে যাবে,বুঝি নি।এবার ডোজ কম দিবো।”

সাথে সাথেই রাহিব সাহিবের মাথায় চাটি মা রলো।সাহিব বুঝলো ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলোছে।ঠোঁট উল্টিয়ে রাখলো।
শেষের কথাটায় সাইদুল সাহেব চোখ গরম করে বললেন,
“কি বললে?কিসের ডোজ?”

রাহিব বোকা হেসে বললো,
“ওর কথা শোনো না তো বাবা।আমার কথা শুনো।এইবার অনেক প্রেকটিস করেছি।এবার ভালো গাইবো,বাবা।গাই না?”

সাইদুল সাহেব সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালেন ছেলেদের দিকে।জানেন ছেলেদের মাথায় সবসময় উল্টাপাল্টা কিছু ঘোরে।যখন তারা এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য কাউকে পায় না,তখন বাবার কাছে আসে।বাবাকেই ব লির পাঠা বানায়।

সাহিব বললো,
“বাবা কি ভাবছো?”
সাইদুল সাহেব গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“সত্যিই প্রেকটিস করেছো তো?”

দু’ভাই একসাথে উৎফুল্ল হয়ে বললো,
“একদম!পুরো এক সপ্তাহ প্রেকটিস করেছি।”
“আচ্ছা,গাও তাহলে।”

বলে চায়ের কাপে চুমুক দিলেন সাইদুল সাহেব।
সকলের দৃষ্টি দুই ভাইয়ের দিকে।তাদের কেউ বিশ্বাস করে না।দুই ভাই একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে শ য় তানি হাসি হাসলো।

তারপর শুরু করলো,
” ও বাবা গাড়ি কিনে দে
নইলে বিয়া দিয়ে দে
আমি মনের সুখে গাড়ি চালাবো।
আরে ধীরে ধীরে
আস্তে আস্তে
আমি হরেন বাজাবো,
হরেন পকপক
ও হরেন পকপক…”

সাইদুল সাহেব ধমকে উঠলেন,
“এইইই চুপপপপপ।”

রাহিব-সাহিব থেমে গেলো।মুখে পরিকল্পনা সফল হওয়ার খুশী।দুই ভাইয়ের গানের শব্দে বাবা,চাচা কানে আঙ্গুল দিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।বাকিরা হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।

সাইদুল সাহেব অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে বললেন,
“বাবারা এই তোমাদের গান?এটা আবার তোমরা এক সপ্তাহ ধরে প্রেকটিস করেছো?”

রাহিব-সাহিব কুর্ণিশ করে বললেন,
“হ্যাঁ বাবা,সুন্দর হয়েছে না?”

সাইদুল সাহেব কিছু বলতে যাবেন তার আগেই রান্নাঘর থেকে ছেলেদের উদ্দেশ্য করে বড় চামচ ছুঁড়লেন মাধুরী বেগম।একটুর জন্য তাদের শরীরে লাগে নি।তাদের আর পায় কে।এক দৌড়ে পগারপার। মাধুরী বেগম চেঁচিয়ে উঠলেন,
“তোদের গান গাওয়া আমি বের করছি শ য়তানের হাড্ডি।হাড়মাস জ্বা লিয়ে খেলো আমার।”

জাহানারা বেগম সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,
“থাম তো।ওরা বাচ্চা মানুষ।একটু ফাজলামি করবেই।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ ওরা বাচ্চা।তুমিই ওদের মাথায় তুলেছো।দিন দিন শ য় তানি বেড়েই চলেছে।”

রাগে গিজগিজ করতে করতে কথাটা বলে কাজে মনোযোগ দিলেন মাধুরী বেগম।জাহানারা বেগম বিপরীতে স্মিত হাসলেন।

শাহজাহান সাহেব চলে গেলেন নিজ ঘরে।তার মনে হচ্ছে তিনি পাবনায় চলে এসেছেন।সাইদুল সাহেব সংকল্পের সাথে কোম্পানির বিষয়ে টুকটাক কথা বলে চলে যান।
সংকল্প আশেপাশে চোখ বুলিয়ে প্রতিজ্ঞার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। প্রতিজ্ঞা ভুরু কুঁচকে তাকালে ফিসফিস করে বলে,

“ভাইয়েরা আমার বিয়ের জন্য পা গল হয়ে গেছে।বিয়ে যে কত মজা সেটা তো আমি টের পাচ্ছি।”

প্রতিজ্ঞা রাগী চোখে তাকালে সংকল্প ঠোঁটজোড়া উঁচু করে কিছু একটা ইশারা করে হাসতে হাসতে চলে যায়।

#চলবে…..