হয়তো তোরই জন্য পর্ব-২৪ এবং শেষ পর্ব

0
3964

Part 24-last
#হয়তো_তোরই_জন্য
#পার্ট_২৪
#নিশাত_জাহান_নিশি

লিমা আর জয়া তমাকে ধরাধরি করে রুম থেকে বের করে সোজা স্ট্যাজে নিয়ে গেলো। জায়ান অবশ্য টেনশানের চাপে পড়ে তমার কথা ভুলেই গিয়েছিলো। হুট করে জায়ানের তমার কথা মনে পড়ল। জায়ান হম্বিতম্বি হয়ে স্ট্যাজ থেকে উঠে যেই না সামনে পা বাড়ালো অমনি জায়ান থমকে গেলো।

তমা ধীর গতিতে স্ট্যাজের দিকে পা বাড়াচ্ছে। মুচকি হেসে মাথাটা নিচু করে রেখেছে সে। তমার চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য্য দেখে মুহূর্তেই জায়ানের চুপসে যাওয়া মুখটায় মৃদ্যু হাসি ফুটে উঠল। জায়ান বুকের বাঁ পাশে হাত দিয়ে পিছু হাঁটতে হাঁটতে সোজা স্ট্যাজের সেট করা সোফাটায় বসে গেলো। তমার এক পা এক পা করে এগিয়ে আসাটা জায়ান খুব মুগ্ধ নয়নে দেখছে আর মাতাল করা হাসি দিচ্ছে। স্ট্যাজে উঠে তমা জায়ানের পাশের সোফাটায় বসে গেলো। জায়ান এখনো তমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুতেই চোখ সরাতে ইচ্ছে করছে না তার। তমা আড়চোখে জায়ানের দিকে তাকালো। জায়ানের এমন ঘোর লাগা দৃষ্টি দেখে তমার লজ্জাটা যেনো আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো। তমা জলদি করে জায়ানের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।

তমা স্ট্যাজে বসার সাথে সাথেই হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো। জায়ান বেশ কিছুক্ষন পর তমার থেকে চোখ সরিয়ে হলুদের কৌটাটা হাতে নিয়ে বাঁকা হেসে তমার পুরো মুখে হলুদ লেপ্টে দিলো। তমা ঠোঁট উল্টিয়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান এক গাল হেসে তমার কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,,

—“আমাকে ও লাগিয়ে দে। বিশ্বাস কর আমি এভাবে ছোট বাচ্চাদের মতো ঠৌঁট উল্টিয়ে রাখব না।”

জায়ানের কথা শেষ হতে না হতেই তমা এক বাটি হলুদ নিয়ে পুরোটা হলুদ জায়ানের মুখে লেপ্টে দিয়ে খিলখিল করে হেসে দিলো। জায়ান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তমার খিলখিল হাসি দেখছে। এর মধ্যেই জয়া এসে জায়ান আর তমার মুখে পুনরায় হলুদ মেখে দিলো। তমা ও কম যায় না। আরেক বাটি হলুদ নিয়ে তমা ও জয়ার মুখে হলুদ লেপ্টে দিলো। শুরু হয়ে হলুদ মাখামাখি। তমাল, আকাশ, জায়ানের আম্মু,আব্বু, তমার আব্বু্, আম্মু, ওদের পরিবারের আত্নীয় স্বজনরা সবাই হলুদ ছিটাছিটিতে মশগুল হয়ে গেলো। লিমা তো অলরেডি হলুদ ভূত হয়ে গেছে। এরপর ও সে ছবি তোলা অফ করছে না। প্রতিটা ইভেন্টের ছবি তুলে তুলে সে জাবেদের কাছে সেন্ড করছে। এভাবেই হাসি খুশি, খুনসুটিতে কেটে গেলো প্রায় দুই ঘন্টা। ঘড়িতে রাত ১১ টা বাজছে। জায়ান তমাকে অনেকক্ষন ধরে বকাবকি করছে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য। কারণ বাইরে হালকা ঠান্ডা পড়ছে। ঠান্ডা থেকে জ্বর, সর্দি বেঁধে গেলে আরেক সমস্যা। তমা কিছুতেই জায়ানের কথা শুনছে না। সে হৈ, হুল্লোড় করছে আর লিমার সাথে খুনসুটি করছে। হুট করেই কোথা থেকে তাহাফ এসে তমার গালে হলুদ মাখিয়ে দিলো। তমা বেশ অবাক হয়ে তাহাফের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান এখনো কিছু খেয়াল করে নি। সে তমাল আর আকাশের সাথে আলাপে ব্যস্ত। তাহাফ বাঁকা হেসে তমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“এতো অবাক হওয়ার কি আছে তমু? ভাই হিসেবে আমি তোকে হলুদ লাগাতেই পারি।”

তমা কিছুটা জড়তা কাটিয়ে মলিন হেসে তাহাফকে ক্রস করে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। তাহাফ শয়তানী হাসি দিয়ে তমার যাওয়ার পথে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“হলুদটা হয়তো আগে লাগাতে পারি নি। তবে কবুলটা আমিই আগে বলব।”

কথাটা বলেই তাহাফ হনহনিয়ে স্ট্যাজ ছেড়ে নিজের রুমে চলে গেলো। এই পর্যন্ত ঘটা কোনো ঘটনাই জায়ানের চোখে পড়ে নি। রাত বাড়ার সাথে সাথে সবাই স্ট্যাজ ছেড়ে যে যার রুমে চলে গেছে। জায়ান ও স্ট্যাজ ছেড়ে নিজের রুমে চলে গেলো। তারপর আবার কি মনে করে জায়ান তমার রুমে উঁকি দিয়ে তমার ঘুমন্ত মুখটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ফের নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে ঢুকেই জায়ান বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলো।

পরের দিন,,,,,,,

সকাল আটটা,,,,,,

তাহাফ বেশ ফুরফুরা মন নিয়ে সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠে নীল রং এর পান্জ্ঞাবী পড়ে সোজা ডাইনিং টেবিলে বসে সবার সাথে ব্রেকফাস্টে জয়েন করল। তমা আর জায়ান বেশ হতবাক হয়ে তাহাফের দিকে তাকিয়ে আছে। তাহাফ বেশ গা ছাড়া ভাব নিয়ে নিজের মতো করে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে। খাওয়া দাওয়া শেষে জায়ান তাড়াহুড়ো করে ব্রেকফাস্ট টেবিল ছেড়ে উঠে জাবেদের নাম্বারে কল দিলো। সাথে সাথেই জাবেদ কলটা পিক করে বেশ ব্যস্ত সুরে বলল,,,,,,

—-“হুম বল কেনো কল করেছিস?”

জায়ান মাথায় হাত দিয়ে কপাল কুঁচকে বলল,,,,,,,

—-“ভাইয়া আমার বেশ টেনশান হচ্ছে। তাহাফের শান্ত রূপটা আমাকে বেশ ভাবাচ্ছে।”

—-“তুই খামোখা টেনশান করছিস জায়ান। সবকিছু ভালোয় ভালোয় হবে। আমার মন বলছে তাহাফ ওর ভুলটা বুঝতে পেরেছে। তাই এমন শান্ত হয়ে গেছে। আচ্ছা রাখছি এখন। রেডি হচ্ছি, আর কিছুক্ষন বাদেই কুমিল্লায় পৌঁছে যাবো।”

—-“সাবধানে আসিস ভাইয়া। কোনো কিছু অস্বাভাবিক লাগলে অবশ্যই আমাকে এক্টা কল করে জানাবি।”

—-“ওকে ডিয়ার ছোট ভাই। বেশি চাপ নিস না। আমি আসছি। তাহাফ কিচ্ছু করতে পারবে না।”

—-“ওকে ভাইয়া। তোর ভরসাতেই রইলাম। রাখছি তাহলে।”

—-“ওকে বায়।”

জাবেদ কলটা কেটে যেই না জুতোর ফিতা বাঁধতে যাবে অমনি বাহির থেকে চিৎকার চেচাঁমেচির আওয়াজ শুনা গেলো। জাবেদ ভ্রু কুঁচকে তাড়াহুড়ো করে যেই না দরজা খুলে রুমের বাইরে পা রাখল অমনি এক দল লোক এসে জাবেদের মুখে কালো কাপড় বেঁধে জাবেদকে আধকোলে করে সোজা বাড়ির বাইরে পার্ক করে রাখা গাড়িটায় ঢুকিয়ে ফেলল। জাবেদ হাজার চেষ্টা করে ও নিজেকে ওদের থেকে ছাড়াতে পারছে না। জাবেদ বেশ বুঝতে পারছে জায়ানের অনুমানটাই সঠিক ছিলো। তাহাফের লোকজনই জাবেদকে পাকরাও করে ফেলেছে। জাবেদের ছুটাছুটি দেখে এক্টা মাস্ক পড়া ছেলে জাবেদের মুখে কিছু এক্টা স্প্রে করে জাবেদকে অজ্ঞান করে ফেলল। ড্রাইভ করা কালো মাস্ক পড়া ছেলেটা পকেট থেকে ফোন বের করে তাহাফের নম্বরে ম্যাসেজ করে বলে দিলো জাবেদকে কিডন্যাপ করার কথাটা। জাবেদের ফ্রেন্ড ইরফান ও তার আম্মু, আব্বু বাঁধা অবস্থায় সেন্সলেস হয়ে নিজেদের রুমে বন্দি অবস্থায় পড়ে আছে।

জায়ান কলটা কেটে বেশ নিশ্চিন্ত মনে কাজে লেগে পড়ল। তমা গোসল করে সাজ গোজে বসে পড়ল। পার্লারের মেয়েরা তমাকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। লাল বেনারসীতে তমাকে লাল টুকটুকে বউ সাজানো হবে। তমা বেশ খুশি খুশি মন নিয়ে সাজতে বসে গেছে।

তাহাফের ফোনে টুংটাং ম্যাসেজ আসার শব্দে তাহাফ স্ট্যাজ ছেড়ে দৌঁড়ে নিজের রুমে ঢুকে গেলো। ফোনের লকটা খুলে নোটিফিকেশন চেইক করে সে ম্যাসেজটা দেখার সাথে সাথেই শয়তানী হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,,,,,,

—-“জায়ান আজ তোর খেলা শেষ। কবুল বলার আগে যখন শুনবি তোর ভাই জাবেদ কিডন্যাপ হয়ে গেছে তখন, নিশ্চয়ই তুই আর বর সেজে বসে থাকতে পারবি না। দৌঁড়ে যাবি জাবেদকে খুঁজতে। তখনই সুযোগ বুঝে তোকে আমি গাড়ি চাঁপা দিয়ে তোর জায়গায় নিজে বর সেজে বসব। তমাকে আমিই জয় করব। পরিবারের লোকজন আমার হাতে তমাকে তুলে দিতে বাধ্য হবে।”

কথাগুলো বলেই তাহাফ রুম থেকে বের হয়ে সোজা স্ট্যাজে চলে গেলো। তাহাফ ও জায়ানের সাথে অতিথীদের আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বিভিন্ন টেনশানে জায়ানের মাথা থেকে জাবেদের কথাটা আপাতত বের হয়ে গেছে।

দুপুর এক্টা,,,,,,

জায়ান বেশ প্রফুল্ল মন নিয়ে লাল শেরোয়ানীটা গায়ে জড়াচ্ছে। জায়ানের মুখে টেনশানরের ছাপটা আর নেই। ভীষন উৎফুল্ল মনে হচ্ছে। জায়ান আয়নার দিকে তাকিয়ে পান্জ্ঞাবীর বোতম গুলো লাগাচ্ছে আর বাঁকা হেসে মিনমিন করে বলছে,,,,,,,

—–“তাহাফ আজ তোর খেল খতম। কথায় আছে না, ওস্তাদের মার শেষ রাতে। আমি হলাম তোর প্ল্যানের সেই ওস্তাদ। এক্টু পরেই তুই চোখের সামনে আমার আর তমুর বিয়ে দেখবি। একচুয়েলি, তুই চলিস ঢালে ঢালে আর আমি চলি পাতায় পাতায়। তুই আমার বিয়েটা কিছুতেই আটকাতে পারবি না। বড্ড আপসোস হচ্ছে, কজ তোর প্ল্যানটা মাঠেই মারা গেলো।”

জায়ান কথাগুলো বলেই মাথায় গোল্ডেন আর লাল রঙ এর কম্বিনেশনে এক্টা পাগড়ী পড়ে বাঁকা হেসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ঐদিকে তমার সাজ গোজ অলরেডি শেষ। লাল বেনারসীতে তমাকে লাল পরী লাগছে। মাথায় এক্টা বড় ঘোমটা টেনে রেখেছে সে। ঠোঁটে ঝুলে আছে লাজুক হাসি। তমা অধিক আগ্রহে বেডের উপর গোল হয়ে বসে আছে কখন তার নিচে যাওয়ার ডাক পড়বে। জায়ানকে সে লাল পান্জ্ঞাবীতে বিভিন্ন জল্পনা কল্পনায় সাজিয়ে নিচ্ছে। এর মাঝেই নিচ থেকে ডাক পড়ল, কাজী সাহেব এসে গেছে বলে। লিমা আর জয়া ও লাল শাড়ী পড়েছে। দুজনই নিচ তলা থেকে দৌঁড়ে এসে তমাকে রুম থেকে বের করে স্ট্যাজে নিয়ে গেলো। জায়ান আগে থেকেই স্ট্যাজে বসে আছে। তমাল আর আকাশ মিলে জায়ানকে স্ট্যাজে নিয়ে এসেছে। তাহাফ লাল পান্জ্ঞাবী পড়ে বেশ বর সাজে জায়ানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁটে তার বাঁকা হাসি। জায়ান ঘাঁড়টা এক্টু ঘুড়িয়ে রহস্যময়ী হাসি দিয়ে তাহাফের দিকে তাকালো। এর মাঝেই তমা চলে এলো। জয়া আর লিমা তমাকে হাতে ধরে জায়ানের পাশে বসিয়ে দিলো। জায়ান বেশ উঁকিচুকি দিয়ে তমার মুখটা ঘোমটার নিচ থেকে দেখার চেষ্টা করছে বাট কিছুতেই পেরে উঠছে না। তাহাফ মুহূর্তেই জায়ান আর তমার পাশ থেকে সরে এক্টু দূরে দাঁড়িয়ে বেশ হম্বিতম্বি হয়ে কাউকে কল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

কাজী সাহেব লাল মলাটের এক্টা খাতায় কিছু এক্টা লিখে তমা আর জায়ানের সিগনেচার নিয়ে নিলো। লিমা অধীর আগ্রহ নিয়ে গেইটের বাইরে তাকিয়ে আছে। জাবেদের আসার পথে চোখ বুলিয়ে রেখেছে সে। এর মাঝেই লাল পান্জ্ঞাবী পড়ে জাবেদ এসে হাজির। জাবেদ বাঁকা হেসে বাড়ির গেইটের ভিতর ঢুকছে। জাবেদকে দেখা মাএই লিমা যেই না দৌঁড়ে জাবেদকে ঝাপটে ধরতে যাবে এর আগেই মিসেস আন্জ্ঞুমান দৌঁড়ে গিয়ে জাবেদকে জড়িয়ে ধরে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“জাবেদ বাবা চলে এসেছিস, তোর জন্যই পথ চেয়ে বসেছিলাম।”

জাবেদ নামটা শোনার সাথে সাথেই তাহাফ ঘুরে দাঁঁড়াল। জাবেদকে জলজ্যান্ত অবস্থায় দেখে তাহাফের হাত থেকে ফোনটা ঠাস করে নিচে পড়ে গেলো। তাহাফ অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে জাবেদের দিকে তাকিয়ে আছে। হুট করে জায়ান হু হা করে হেসে বসা থেকে উঠে তাহাফের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,,

—-“খুব অবাবাবাক হয়ে গেছো তুমি তাই না তাহাফ ভাইয়া? জাবেদ ভাইয়াকে চোখের সামনে অক্ষত অবস্থায় দেখে খুব চমকে গেছো? তুমি আবার ভেবে বসো না চোখের সামনে তুমি ভূত দেখছ। যা দেখছ একদম সত্যি দেখছ। স্বয়ং জাবেদ ভাইয়া তোমার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমার ফ্রেন্ড সুইটু তোমার পুরনো ড্যারা থেকে জাবেদ ভাইয়াকে উদ্ধার করে এনেছে। আমি জানতাম তুমি কোনো না কোনো চাল চালবে। তাই তো ইরফান ভাইয়ার বাড়ির সামনে একজন সিভিল পুলিশকে ২৪ ঘন্টার জন্য গার্ডে লাগিয়ে রেখেছিলাম।”

তাহাফ চোখ মুখ লাল করে চোয়াল শক্ত করে হুট করে পান্জ্ঞাবীর পেছন থেকে এক্টা রিভলবার বের করে সোজা জায়ানের কপাল বরাবর গুজে বলল,,,,

—-“তাহাফ এতো সহজে হারতে শিখে নি জায়ান। এই যুদ্ধে তাহাফ ই জিতবে। তমাকে তাহাফ ই জয় করে নিবে। তুই যেহেতু আমার প্ল্যানটা ধরেই ফেলেছিস তাহলে এবার আমার হাতেই মর।”

প্যান্ডেলে উপস্থিত সবাই ভয়ে চুপসে গেছে। জায়ানের আম্মু তো সেন্সলেস ই হয়ে গেছে। তাহাফের আব্বু, আম্মু পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির সব মেহমানরা ভয়ে এতক্ষনে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। জয়া আর তমা চিৎকার করে কাঁদছে। জাবেদ দৌঁড়ে গিয়ে দুজনের পাশে দাঁড়িয়ে বেশ শান্ত কন্ঠে তাহাফকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“তাহাফ প্লিজ ছেলে মানুষী করিস না। বন্দুক টা সরা। আমরা আপোসে ব্যাপারটা মিটিয়ে নেই। এভাবে নিজেদের মধ্যে রেশারেশি করে কোনো লাভ নেই। তুই যা বলবি আমরা তাই মেনে নিবো। তোর কথাই শেষ কথা হবে।”

তাহাফ বাঁকা হেসে জাবেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“এবার কোনো ছাড়াছাড়ি নেই। সোজা কবরে পাঠাবো। রাস্তা ক্লিয়ার করতে হবে। আপোসে কোনো কিছুই সলভ হবে না। উল্টো আমাকে সেক্রিফাইজ করতে হবে। সেক্রিফাইজ জিনিসটা আমার দ্বারা হয় না। তমাকে আজ এই মুহূর্তে আমি বিয়ে করব।”

জায়ান বাঁকা হেসে তাহাফের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“তোর এই মিছে আশা কখনো পূরণ হবে না তাহাফ। তমা শুধু আমার। সাত বছর আগে থেকেই তমা আমার। আজ ও তমা আমারই হবে। দ্বিতীয়বার বিয়েটা আমিই তমাকে করব। আর তুই হবি উচ্ছেদ।”

কথাগুলো বলেই জায়ান যেই না তাহাফের বুকে কিক মারতে যাবে এর আগেই তাহাফ রিভলবারের টিগারটা চেপে ধরল। জায়ান বেশ ভয় পেয়ে গেলো। জাবেদ,তমাল আর আকাশ মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু করতে পারছে না ওরা। তাহাফকে ক্ষেপাতে গেলেই বড় সড় এক্টা কান্ড ঘটে যাবে। যে ভুলের মাসুল দিতে হবে জায়ানকে। দুই পরিবারের সবাই নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের সামনে যা যা হচ্ছে সবটাই ওদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে।

হুট করেই তমা কাঁদতে কাঁদতে তাহাফের পায়ে লুটিয়ে পড়ল। তমা তাহাফের পা ধরে কাঁদছে আর বলছে,,,,,,,,

—-“প্লিজ তাহাফ ভাইয়া আমার বরকে ছেড়ে দাও। প্লিজ আমাকে বিধবা করো না। আমি জায়ানকে ছাড়া বাঁচব না। জায়ানের যদি কিছু হয়ে যায় আমি নিজেকে শেষ করে দিবো। তখন কিন্তু তুমি আমাকে ও পাবে না। আমার মরা মুখটা তখন চোখের সামনে সহ্য করতে পারবে তো? কাফনের কাপড়ে আমাকে দেখতে পারবে তো?”

মুহূর্তেই তাহাফ চোখের জল ছেড়ে জায়ানের কপাল থেকে বন্দুকটা সরিয়ে নিজের কপালে তাক করে মায়া ভরা দৃষ্টিতে তমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“তোকে কাফনের কাপড়ে দেখতে পারব না তমু। তাই নিজেকেই শেষ করে দেবো। আমি বেঁচে থাকলে তোরা কখনো সুখি হতে পারবি না।”

কথাগুলো বলেই তাহাফ চোখ বন্ধ করে নিজের কপাল বরাবর বন্দুকের টিগার চেঁপে দিলো। সাথে সাথেই তাহাফ জায়ানের বুকে লুটিয়ে পড়ল। গুলির আওয়াজে পুরো বিয়ে বাড়ি কেঁপে উঠল। তাহাফের আম্মু আব্বু সাথে সেন্সলেস হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। জায়ান ছলছল চোখে তাহাফকে আঁকড়ে ধরে আছে। তমা তাহাফের রক্তভরা মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে। জাবেদ, তমাল, আকাশ, জায়ানের আব্বু দৌঁড়ে এসে তাহাফকে ধরল। তমার আম্মু চিৎকার দিয়ে জয়াকে ঝাপটে ধরল।

জায়ান নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে তাহাফকে আধকোলে করে গেইটের দিকে দৌঁড়ে গেলো।

#পার্ট_২৫_ও_অন্তিম_পর্ব
#নিশাত_জাহান_নিশি

জায়ান নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে তাহাফকে আধকোলে করে গেইটের দিকে দৌঁড়ে গেলো।

জায়ান দৌঁড়াচ্ছে আর পিছু ফিরে জাবেদকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,

—-“ভাইয়া জলদি হসপিটালে চল। তাহাফ ভাইয়াকে ইমেডিয়েট হসপিটালে এডমিট করাতে হবে। না হয় বড় সড় এক্টা বিপদ হয়ে যাবে।”

জাবেদ, তমাল আর আকাশ দৌঁড়ে গেলো জায়ানের কাছে। জাবেদ জলদি করে গার্ডেনে পার্ক করা রাখা গাড়িটায় বসে পড়ল। জায়ান খুব সাবধানে তাহাফকে গাড়ির ব্যাক সিটে শুইয়ে দিলো। তমা কাঁদতে কাঁদতে দৌঁড়ে এসে গাড়ির ব্যাক সিটে বসে পড়ল। জায়ান ও ব্যাক সিটে বসে তাহাফের মাথাটা ওর হাঁটুতে রাখল। জানালার কাঁচটা খুলে জায়ান বেশ তাড়াহুড়ো করে তমালকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—–“তোরা আরেকটা গাড়ি করে বাড়ির সবাইকে নিয়ে হসপিটালে চলে আয়।”

তমাল মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। জাবেদ আর দেরি না করে গাড়ি ছেড়ে দিলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে। তমা কাঁদতে কাঁদতে জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“তাহাফ ভাইয়া বাঁচবে তো জায়ান?”

জায়ান বেশ শান্ত সুরে তমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—–“বাঁচবে তমু। যে করেই হোক তাহাফ ভাইয়াকে বাঁচাতে হবে। এভাবে এক্টা তাজা প্রাণকে শেষ হতে দেওয়া যাবে না। তুই কান্না থামা। শান্ত হ। আর আল্লাহ্কে ডাক।”

তমা কিছুটা শান্ত হয়ে তাহাফের পা গুলো ওর হাঁটুর উপর মেলে দিলো। জায়ান, জাবেদ,তমা তিনজনই আল্লাহ্কে ডাকছে। জাবেদ বেশ স্পীডে ড্রাইভ করছে। কারণ, তাহাফের অবস্থা আস্তে আস্তে খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রায় বিশ মিনিট পর ওরা যমুনা হসপিটালের সামনে
পৌঁছে গেলো। জায়ান আর জাবেদ গাড়ি থেকে নেমেই তাহাফকে কোলে করে হসপিটালের ভিতর ঢুকে গেলো। তাহাফের রক্তাক্ত শরীর দেখে ওয়ার্ড বয়রা দৌঁড়ে স্ট্রেচার নিয়ে এলো। জায়ান আর জাবেদ মিলে তাহাফকে স্ট্রেচারে শুইয়ে দিলো। ডক্টরের কেবিনে ঢুকে তমা ডক্টরকে টেনে হেছড়ে তাহাফের কাছে নিয়ে এলো। তাহাফকে দেখা মাএই ডক্টর ওয়ার্ড বয় গুলোকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—–“পেশেন্টকে জলদি অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাও। আমি ডক্টর নুরুজ্জামান কে নিয়ে আসছি।”

ওয়ার্ড বয় গুলো খুব জোরে জোরে স্ট্রেচার টেনে তাহাফকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলো। জায়ান ডক্টরের হাত ধরে বেশ আকুতি মিনতি করে বলল,,,,,,,

—–“প্লিজ ডক্টর তাহাফ ভাইয়াকে সুস্থ করে দিন। আপনি আপনার বেস্ট দিয়ে চেষ্টা করুন।”

ডক্টর জায়ানের হাতে হাত রেখে শান্তনা দিয়ে বললেন,,,,,,,,

—-“চিন্তা করো না ইয়াং ম্যান। আমি আমার বেস্ট দিবো।”

কথাগুলো বলেই ডক্টর হন্তদন্ত হয়ে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে গেলো। ডক্টরের পিছু পিছু আরেকজন ইয়াং ছেলে ডক্টর ও অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে গেলো। এর মাঝেই জায়ান আর তমার পুরো পরিবার এসে হসপিটালে হাজির হয়ে গেলো। তাহাফের আম্মু বুক চাপড়িয়ে বিলাপ করছে। তাহাফের আব্বু শোকে পাথর হয়ে গেছে। তমার আম্মু হেচকি তুলে কাঁদছে। তমার আব্বু তাহাফের আব্বুকে টাইট করে ধরে রেখেছে। উনি বেসামাল হয়ে বার বার পড়ে যাচ্ছে। জায়ানকে দেখা মাএ তাহাফের আম্মু দৌঁড়ে এসে জায়ানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলল,,,,,,,,,

—–“আমার ছেলেটা যদি বেঁচে ফিরে তবে তুমি ওকে ক্ষমা করে দিও জায়ান। আমি জানি ওর সব কুকর্মের প্রমান তোমার কাছে আছে। এরপর ও বলছি তুমি আমার ছেলেটাকে ক্ষমা করে দিও। আমার ছেলে তার পাপের উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে। ছেলেটা কোনো রকমে বেঁচে ফিরলে আমি ওকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো। সবার নাগালের বাইরে। এতে সবারই মঙ্গল হবে। আমার ছেলেটা ও এসব মানসিক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাবে।”

জায়ান মিসেস তারিনের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,,,

—-“আমি অনেকক্ষন আগেই তাহাফ ভাইয়াকে ক্ষমা করে দিয়েছি জেঠিমনি। তাহাফ ভাইয়া উনার কৃতকর্মের উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে। তবে আইন উনাকে ক্ষমা করবে কিনা জানি না। তবে আমি চেষ্টা করব উনার শাস্তির পরিমান কমাতে। তুমি কান্না বন্ধ করে শান্ত হয়ে বস। আল্লাহ্ যা করে ভালোর জন্যই করে।”

জায়ান মিসেস তারিনকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারের সামনের বেঞ্চি গুলোতে বসে পড়ল। এক এক করে সবাই চেয়ার গুলোতে বসে অপারেশন থিয়েটারের দরজা খোলার অপেক্ষা করছে। তমা ও জায়ানের পাশে বসে মিসেস তারিনকে শান্তনা দিচ্ছে।

প্রায় দুই ঘন্টা পর,,,,,,,

অপারেশন থিয়েটারের লাল বাতিটা নিভে গেলো। তাহাফের আব্বু দৌঁড়ে বসা থেকে উঠে ও.টির দরজার সামনে দাঁড়ালো। পিছু পিছু জায়ান আর জাবেদ ও উঠে দাঁড়ালো। ডক্টর ও.টি থেকে বের হয়ে তাহাফের আব্বুর মুখোমুখি দাঁড়ালো। তাহাফের আব্বু কান্নাজড়িত কন্ঠে ডক্টরের হাত ধরে বলল,,,,,,,

—–“আমার ছেলেটা ঠিক আছে তো ডক্টর?”

ডক্টর মলিন হেসে তাহাফের আব্বুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,,,

—–“আল্লাহ্ র রহমতে আপনার ছেলে সুস্থ আছে। বাট মাথায় বেশ প্রবলেম দেখা দিয়েছে। মাথার কিছু কিছু সেল ব্লক হয়ে গেছে। যার কারণে সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে গেছে। আই থিংক প্রপার টিটমেন্টে দুই, এক বছরের মধ্যে ঠিক হয়ে যেতে পারে। আমার কাছে একজন ডক্টর আছে। সবে মাএ কয়েকদিন হলো আমাদের হসপিটালে জয়েন করেছে। আপনি চাইলে আমি ওর সাথে কথা বলতে পারি। আজ থেকেই মিস জেনিয়া আপনার ছেলের ট্রিটমেন্ট শুরু করবে।”

হুট করে তাহাফের আম্মু দৌঁড়ে এসে ডক্টরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,

—–“আমরা রাজি ডক্টর। আজ থেকেই আপনি ঐ ডক্টরকে বলুন আমার ছেলের ট্রিটমেন্ট শুরু করতে।”

উপস্থিত সবাই তাহাফের আম্মুর কথায় সায় জানালো। সবার সায় পেয়ে ডক্টর পাশের কেবিন থেকে ডক্টর জেনিয়াকে ডেকে আনল। জায়ান আর তমা ডক্টর জেনিয়াকে দেখা মাএই থ হয়ে গেলো। ডক্টর জেনিয়া আর কেউ নয় রনকের বোন জেনিয়া। যে জেনিয়া জায়ানের জন্য এক্টা সময় পাগল ছিলো। জেনিয়া মুচকি হেসে জায়ানের দিকে তাকালো। জেনিয়াকে ডক্টর সব ডিটেলসে বুঝিয়ে দিলো। জেনিয়া ও সাথে সায় জানালো। জায়ান কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে জেনিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—–“জেনিয়া তোমার উপর আমার বিশ্বাস আছে। আমি জানি তুমি তাহাফ ভাইয়াকে খুব জলদি ঠিক করে তুলবে।”

জেনিয়া এক গাল হেসে বলল,,,,,,

—-“আমি আমার বেস্ট দিবো জায়ান। তোমার রিলেটিভ যেহেতু সো আমাকে তো বেস্ট দিতেই হবে।”

কথাগুলো বলেই জেনিয়া মুচকি হেসে তমার দিকে তাকিয়ে ও.টি তে ঢুকে গেলো। তাহাফের নেতিয়ে যাওয়া মুখটা দেখে জেনিয়ার কেমন খারাপ লাগা অনুভব হলো। তাহাফকে দেখা মাএই জেনিয়ার মনে অন্যরকম অনুভূতির সঞ্চার হলো। ডক্টরের পারমিশন নিয়ে এক এক করে তাহাফের পরিবারের সবাই তাহাফকে দেখে চলে গেলো। শুধু রয়ে গেলো তাহাফের আব্বু, আম্মু। সবাইকে বাধ্য হয়ে বাড়ি যেতে হলো। কারণ জায়ান আর তমার বিয়ে পড়ানো এখনো বাকি আছে।

সন্ধ্যা সাতটা,,,,,,,

তিন কবুলের মাধ্যমে জায়ান আর তমার বিয়ে হয়ে গেলো। কারো মনে তেমন শান্তি নেই। সবার মনটা বেশ খারাপ তাহাফকে নিয়ে। জায়ান তমাকে নিয়ে ওর বাড়িতে চলে এসেছে। বাড়িতে পৌঁছেই জায়ান আর তমা নিজেদের রুমে ঢুকে শাড়ী, পান্জ্ঞাবী চেইঞ্চ করে নতুন শাড়ী আর পান্জাবী পড়ে হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেলো। রুম থেকে বের হয়ে দুজন গাড়ি নিয়ে প্রায় বিশ মিনিট পর হসপিটালে পৌঁছে গেলো। তাহাফকে এক্টা আলাদা কেবিনে শিফট করা হয়েছে। তাহাফের সেন্স ফিরেছে। তবে সে আপাতত মানসিক ভারসাম্যহীন। সোজা হয়ে বসে আছে। কোনো দিকেই বোধ বুদ্ধি নেই। কেবিনের এক্টা কোণায় চেয়ার পেতে বসে আছে তাহাফের আব্বু, আম্মু। আর জেনিয়া তাহাফের পাশে বসে তাহাফের সাথে হেসে হেসে অনেক ধরনের কথা বলছে। তাহাফ এক দৃষ্টিতে জেনিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুই বলছে না। এর মাঝেই তমা আর জায়ান গিয়ে তাহাফের পাশে বসল। তাহাফ কোনো দিকেই তাকাচ্ছে না। তমা তাহাফের মুখটা ঘুড়িয়ে তাহাফের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“ভাইয়া দেখো আমি এসেছি তোমায় দেখতে। প্লিজ আমার দিকে তাকাও। আমার সাথে কথা বলো।”

তাহাফ তমার দিকে একবার তাকিয়ে মাথাটা নিচু করে ফেলল। জেনিয়া মলিন হেসে জায়ান আর তমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—–“উনাকে উনার মতো ছেড়ে দিন। আই থিংক অনেকটা সময় লাগবে উনার ঠিক হতে। আমি শেষ পর্যন্ত উনার পাশে থাকব।”

জায়ান আর তমা মৃদ্যু হেসে মাথা নাড়াল। প্রায় দুই ঘন্টা হসপিটালে থেকে তমা আর জায়ান তাহাফের আব্বু, আম্মুকে নিয়ে বাড়ি চলে গেলো। জেনিয়া ঠায় তাহাফের পাশে বসে আছে।

বাড়িতে পৌঁছেই তমা আর জায়ান রাতের ডিনার সেরে নিজেদের রুমে চলে গেলো। তমা মনটা খারাপ করে জানালার গ্রীল ধরে এক দৃষ্টিতে আকাশপানে তাকিয়ে আছে। জায়ান পিছন থেকে তমাকে জড়িয়ে ধরে তমার ঘাঁড়ে গলা ডুবিয়ে বলল,,,,,,,,

—–“ভালোবাসি তমু। খুব খুব খুব ভালোবাসি।”

তমা মলিন হেসে বলল,,,,,,,

—-“আমি ও ভালোবাসি জায়ান। খুব খুব খুব ভালোবাসি।”

জায়ান ঘোর লাগা কন্ঠে বলল,,,,,,

—–“তমু….আজ আমি তোকে সম্পূর্নভাবে নিজের করে পেতে চাই। প্লিজ আজ আমাকে বাঁধা দিস না।”

জায়ানের কথাগুলো শুনে তমার শরীরে কেমন শিহরন বয়ে গেলো। তমা চোখ গুলো বন্ধ করে রেখেছে। জায়ান হেচকা টান দিয়ে তমাকে ওর দিকে ঘুড়িয়ে নিলো। তমা মুখটা নিচু করে রেখেছে। জায়ান তমার থুতনীটা উপরে তুলে তমার ঠোঁটের দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জায়ান আর এক মুহূর্ত দেরি না করে তমার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। তমা জায়ানের শার্ট আঁকড়ে ধরল। জায়ান বেশ উওেজিত হয়ে তমাকে আধকোলে করে বিছানায় শুইয়ে দিলো। জায়ান ও তমার শরীরের সাথে নিজেকে মিশিয়ে নিলো। আস্তে আস্তে ওদের ভালোবাসা গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগল। আজ রাতে জায়ান তমাকে সম্পূর্ণ ভাবে নিজের করে নিয়েছে। স্বামী, স্ত্রীর পবিএ ভালোবাসায় নিজেদের মাতিয়ে তুলেছে।

এভাবেই নিস্বার্থ ভালোবাসা,খুনসুটি, তাহাফকে নিয়ে থাকা সবার মধ্যকার অস্থিরতা সব মিলিয়ে কেটে গেলো প্রায় দুই বছর। তমা বেশ খুশি ওর সাংসারিক জীবনে। জায়ানের ভালোবাসা যেনো দিন দিন আরো বেড়ে যাচ্ছে। তমার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিস গুলোতে ও জায়ানের বেশ নজর। এক বছরের এক্টা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে হয়েছে তমা আর জায়ানের। জায়ান ওর মেয়ের নাম রেখেছে “রুবাইয়া আহমেদ তাইফা”। তাহাফের নামের সাথে মিল রেখে জায়ান ওর মেয়ের নাম রেখেছে। আজ তাইফার এক বছর পূর্ণ হলো। তাই বাড়িতে বড় সড় করে এক্টা বার্থডে পার্টি এরেন্জ্ঞ করা হয়েছে। পুরো বাড়িতে রমরমা ভাব। চারদিকে শূধু আলো আর রোশনাই। সবাই বেশ খুশি। তমার পরিবার তাহাফের পরিবার এসে হাজির জায়ানের বাড়িতে। সবার চোখে, মুখে হাসি খুশি উপচে পড়ছে। অবশ্য এর আরেকটা কারণ আছে। আজ তাহাফ জেলখানা থেকে মুক্ত হয়ে বাড়িতে ফিরবে। তাহাফ এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। জেনিয়ার ট্রিটমেন্টে এক বছর আগেই তাহাফ সুস্থ হয়ে উঠেছে। নারী পাচার চক্রের সাথে জড়িত থাকার কারণে তাহাফের এক বছরের জেল হয়েছে। জেনিয়া এরপরে ও তাহাফের পাশে ছিলো। এই দুই বছরে তাহাফের সাথে জেনিয়ার এক্টা ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। জেনিয়ার কেয়ারিং, সব সময় ঢাল হয়ে তাহাফের পাশে থাকা এই সবকিছু তাহাফকে মুগ্ধ করে তুলেছে। তাহাফের আম্মু, আব্বু রনকের সাথে কথা বলে তাহাফ আর জেনিয়ার বিয়ের ডেইট ও ফিক্সড করে নিয়েছে। এবার শুধু তাহাফের ফেরার পালা। জাবেদ আর লিমা গুছিয়ে সংসার করছে। ছয় মাস হলো জাবেদ আর লিমার বিয়ের। তমা আর লিমা একই বাড়িতে জা হয়ে আছে। তমাল ওর বউকে নিয়ে হানিমুনে গেছে। এরেন্জ্ঞ ম্যারেজ হয়েছে তমালের। তমাল ওয়াইফ শিলা দেখতে বেশ সুন্দুরী আর গুনী ও।

রাত আটটা,,,,,,

জায়ান ওর মেয়েকে লাল রং এক্টা বার্বি ড্রেস পড়িয়ে পুরো বাড়ি গোল গোল করে ঘুড়ছে। জায়ান ওর মেয়েকে এক মুহূর্তের জন্যে ও কোল ছাড়া করতে চায় না। সারাক্ষন শুধু মুখে লেগে থাকে তাইফা তাইফা। তাইফা ও বাবা ছাড়া কিছু বুঝে না। সারাক্ষন বাবার বুকের সাথে মিশে থাকে। তমা লাল রং এর এক্টা শাড়ি পড়ে হাত খোঁপা করে মুখটা ফুলিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জায়ান ওর মেয়েকে নিয়ে রুমে ঢুকেই দেখল তমা কেমন মুখটা ফুলিয়ে রেখেছে। জায়ান তমার পিছনে দাঁড়িয়ে তাইফার দিকে তাকিয়ে আহ্লাদি কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“দেখেছ তাইফা মা, তোমার মামনী এখনো কেমন ছোটো রয়ে গেছে। কিছু এক্টা খুঁজে না পেলেই ঠোঁট উল্টিয়ে ফেলে না হয় মুখটা ভাড় করে রাখে। শেষ মেষ আমাকেই জিনিসটা খুঁজে দিতে হয়।”

তমা আয়না দিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান হু হা করে হেসে কাবার্ডের উপর থেকে বেলি ফুলের মালাটা নিয়ে তমার খোঁপায় গুজছে আর মিটিমিটি হাসছে। তমা পিছু ফিরে জায়ানের কোল থেকে তাইফাকে কেড়ে নিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। জায়ান মুখটা ফুলিয়ে তমার খোঁপায় বেলী ফুল এঁটে দিচ্ছে। তমা তাইফার গালে চুমো খাচ্চে আর জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,,

—–“তাহাফ ভাইয়া আর জেনিয়ার জন্য এনগেইজমেন্ট রিং এনেছ তো?”

জায়ান তমার খোঁপায় ফুল এঁটে দিয়ে তাইফাকে তমার কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তাইফার কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,,

—-“রিং আমার পান্জ্ঞাবীর পকেটেই আছে। তোকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তাড়াতাড়ি নিচে চল। তাহাফ ভাইয়া আর জেনিয়া চলে এলো বলে।”

তমা খোঁপায় হাত দিয়ে পিছু ঘুরে জায়ানের দিকে তাকালো। জায়ানের এতক্ষনে তমার দিকে চোখ পড়ল। এক দৃষ্টিতে জায়ান তমার দিকে তাকিয়ে আছে। তমা কিছুটা লজ্জা পেয়ে যেই না জায়ানকে ক্রস করে দরজার দিকে পা রাখবে অমনি জায়ান তমার হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে তমাকে ওর বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। তমা জায়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান ওর মেয়েকে এক হাতে কোলে নিয়ে তমাকে আরেক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,,,

—-“আমার পরিবার। বেশ খুশি আমি আমার মেয়ে আর আমার বউকে নিয়ে। আল্লাহ্ র কাছে অসংখ্য শুকরিয়া। এই ভাবেই আমি আমার মেয়ে আর বউকে সারাজীবন ভালোবেসে যাবো। তমু…. #হয়তো_তোরই_জন্য আমার এই পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া।”

তমা মুচকি হেসে জায়ানের বুকে মাথা রেখে বলল,,,,,,

—-“আমি ও আল্লাহ্ র কাছে অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করছি। আমি আমার বিবাহিত জীবনে বেশ খুশি। এভাবেই মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে সুখে, শান্তিতে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে চাই। আমার ও মনে হয়, #হয়তো_তোরই_জন্য আমার এই পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া।”

এর মাঝেই নিচ থেকে ডাক পড়ল তাহাফ এসেছে তাহাফ এসেছে বলে। তমা আর জায়ান হন্তদন্ত হয়ে রুম থেকে বের হয়ে সোজা নিচে চলে গেলো। তাহাফ আর জেনিয়া হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তাহাফের আম্মু, আব্বু দৌঁড়ে গিয়ে তাহাফকে জড়িয়ে ধরল। তমার আম্মু, আব্বু ও তাহাফকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। তমা আর জায়ান দৌঁড়ে গিয়ে তাহাফের পাশে দাঁড়ালো। তাহাফ ওর আম্মু, আব্বুকে ছেড়ে তমা আর জায়ানের মুখোমুখি দঁড়িয়ে মুখটা কালো করে বলল,,,,,,,

—-“আমাকে মাফ করে দে তোরা। আমি আমার ভুলের যথেষ্ট শাস্তি পেয়েছি। অনেক অন্যায় করেছি তোদের সাথে আমি। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। জেনিয়া এসে আমার অন্ধকার লাইফটাকে আলোয় আলোয় ভরিয়ে দিয়েছে। আমি এখন আমার জীবনে অনেক খুশি। বাকিটা ও জীবন ও এভাবে হাসি খুশিতে কাটিয়ে দিতে চাই।”

জায়ান তাহাফের হাতে হাত রেখে মুচকি হেসে বলল,,,,,,,,

—-“যা হওয়ার হয়ে গেছে তাহাফ ভাইয়া। আমরা সব ভুলে গেছি। তুমি ও এসব ভুলে যাও। আজ তোমার জন্য এক্টা বিশাল সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।”

কথাগুলো বলেই জায়ান তাইফাকে তমার কোলে তুলে দিয়ে জোরে চেঁচিয়ে উপস্থিত পরিবারের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—–“আজ তাইফার জন্মদিনের কেক কাটার পর তাহাফ ভাইয়া আর জেনিয়া ভাবীর এনগেইজমেন্ট হবে। সবাই রাজি তো আমার সিদ্ধান্তে?”

পরিবারের সবাই হাত তুলে জায়ানের সিদ্ধান্তে মত প্রকাশ করল। তাহাফ আর জেনিয়া বেশ অবাক হয়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে ওরা দুজনই মনে মনে বেশ খুশি। তাহাফের আম্মু, আব্বু তো চরম খুশি। তাহাফের চোখ এতক্ষনে তাইফার দিকে পড়ল। তাইফা একদম তমার মতো হয়েছে। গোলগাল, নাদুস নুদুস দেখতে। তাহাফ হাসিমুখে তাইফাকে কোলে নিয়ে তাইফার বার্থ ডে কেকের সামনে দাঁড়িয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,,,,

—–“চলো চলো আমরা তাইফা মনির বার্থডে কেকে কাটি।”

সবাই হাসি মুখে তাহাফের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। জায়ান আর তমা তাহাফের দুই পাশে দাঁড়িয়েছে। পিচ্চি তাইফা মনি তাহাফের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসছে। তাহাফ আদরে আদরে তাইফা মনিকে ভরিয়ে দিচ্ছে। এক্টা প্লাস্টিকের ছুরি এনে জায়ান তাইফার হাতে ধরিয়ে দিলো। তাইফা ছুরিটা কিছুক্ষন নাড়িয়ে চাড়িয়ে মুখের ভিতর পুড়তে নিলেই তাহাফ হু হা করে হেসে তাইফার হাত থেকে ছুরি টা নিয়ে তমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,,

—–“নে, তুই আর জায়ান মিলে কেকটা কেটে নে।”

জায়ান আর তমা মুচকি হেসে ছুরিটা হাতে নিয়ে কেক কেটে নিলো। সবাই তাইফা মনিকে উইশ করছে। তাইফা মনি সবার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কেবল হাসছে। কেকে কাটা শেষে জায়ান আর তমা তাইফার মুখে এক্টু এক্টু করে কেকের ক্রীম পুড়ে দিচ্ছে। তাইফা বেশ মজা মজা করে খাচ্ছে, আর চোখে মুখে তৃপ্তির ছাপ ফুটিয়ে তুলছে। সবাই তাইফার কান্ড দেখে হাসছে। জায়ান কেকে কেটে এক এক করে সবাইকে কেক খাইয়ে দিলো। তাইফা এবার কান্না জুড়ে দিলো জায়ানের কোলে যাবে বলে। তমা কপাল চাপড়াচ্ছে আর বলছে,,,,,,

—-“মেয়েটা আমার মতো দেখতে বাট হয়েছে পুরো বাবা পাগলী। সারাক্ষন বাবার বুকে ফেবিকলের মতো চিপকে থাকে। আর বা বা বা বা করে।”

তমার কথা শুনে উপস্থিত সবাই হাসতে হাসতে কাত হয়ে যাচ্ছে। জায়ান তাইফাকে কোলে নিয়ে তমার মাথায় গাড্ডা মেরে বলল,,,,,,,

—-“তোর খুব হিংসে হয় তাই না? আমার মেয়ে বাবা পাগলী হয়েছে বলে?”

তমা মুখটা বাঁকা করে বলল,,,,,

—-“বয়ে গেছে আমার হিংসে করতে।”

জায়ান এক গাল হেসে তাইফাকে তমার গালের কাছে এনে বেশ আহ্লাদি সুরে তাইফাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“তাইফুমনি তোমার মাম্মার গালে এক্টা কিসি দিয়ে দাও। তোমার মাম্মা বেশ রাগ করেছে তোমার সাথে।”

তাইফা ও বাবার কথা শুনে আস্তে করে এক্টা কিসি দিয়ে দিলো তমার গালে। তমা খিলখিল করে হেসে তাইফার গালে অসংখ্য চুমো খাচ্ছে। জায়ান হাসি মুখে দাঁড়িয়ে সব দেখছে।

বার্থডে পর্ব শেষে এবার এলো এনগেইজমেন্ট পর্ব। তাহাফ আর জেনিয়ার হাতে জায়ান দুটো এনগেইজমেন্ট রিং ধরিয়ে দিলো। তাহাফ জেনিয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে জেনিয়ার হাতে রিং পড়িয়ে দিলো। জেনিয়াও কিছুটা লজ্জা পেয়ে তাহাফের হাতে রিং পড়িয়ে দিলো। সবাই করতালি দিয়ে তাহাফ আর জেনিয়াকে স্বাগতম জানাচ্ছে। সবাই বেশ খুশি। বিশেষ করে তাহাফের আম্মু, আব্বু। একজন ফটোগ্রাফারকে ডেকে এনে জায়ান অনেকগুলো ফ্যামিলি ফটো তুলে নিলো। যেখানে দুই পরিবারের সবাই হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তাহাফ আর জেনিয়ার ও অনেক সিংগেল ছবি তোলা হয়েছে। জাবেদ আর লিমা ও সিংগেল ছবি তুলেছে। আকাশ আর জয়া আসতে পারে নি। কারণ ওদের ছেলের হুট করেই নিউমোনিয়া দেখা দিয়েছে। তাই ওরা মিসিং।

পরিশেষে জায়ান, তমা আর ওদের মেয়ে তাইফা মিলে বেশ কয়েকটা ছবি তুলল। এভাবেই অনেকগুলো ঘৃনার সম্পর্ক থেকে আজ অনেকগুলো ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরী হলো। তাহাফ থেকে শুরু করে তমা, জায়ান, জাবেদ, আকাশ, জয়া, শাফিন সবাই ওদের জীবনে বেশ খুশি। শাফিন ও এক বছর আগে ছাড়া পেয়ে ওর বউকে নিয়ে সুখে সংসার করছে। আবার ও প্রমানিত হলো, “কেবল ভালোবাসা দিয়েই হিংসে আর ঘৃনাকে জয় করা যায়।”

#সমাপ্ত