অচেনা শহর পর্ব-১৮

0
456

#গল্পের নাম-অচেনা শহর
#লেখনীতে-Alisha Rahman Fiza
পর্বঃ১৮

হেমন্তি রেডি হয়ে বসে আছে অনুর বাসায় যাওয়ার জন্য হিয়াও তার সাথে যাবে অনু হিয়াদেরও ইনভাইট করেছে।হেমন্তি ইলহামের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমি আর আপু অনুর বাসায় রওনা দিচ্ছি আপনি অফিস শেষ করে চলে আসেন আর বাবাকেও সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছি।
ইলহাম বললো,
~আমি তোমাদের ড্রপ করে দিয়ে আসি।
হেমন্তি বললো,
~তার কোনো দরকার নেই আমি আর আপু চলে যেতে পারবো।আর শুনুন আপনার প্রয়োজনীয় সব জিনিস আমি নিয়েছি।
ইলহাম ঘড়ি পরে বললো,
~তাহলে চলো রওনা দেওয়া যাক।
হেমন্তি বললো,
~চলেন।
রুম থেকে বের হতেই হিয়ার দেখা পেলো তারা হেমন্তি বললো,
~ফারহান আর আন্টি থাকলে আরো বেশি ভালো লাগতো।
হিয়া বললো,
~মা আর ফারহান গ্রামের বাড়ি গিয়েছেন তাদের অনেক জরুরি কাজ আছে আর তোমার ভাইয়া অফিস শেষ করে চলে আসবেন।
হেমন্তি বললো,
~তাহলে রওনা দেওয়া যাক।
অতঃপর হেমন্তি,হিয়া আর আজাদ সাহেব রওনা হলেন অনুর বাড়ির উদ্দেশ্যে আর ইলহাম চললো অফিসের দিকে।
কেয়া রেডি হচ্ছে সেও যাবে অনুদের বাসায় আফজাল হোসেন তাকে পৌছে দিবেন বলেছেন।পারভীন বেগম তার রুমে এসে বললো,
~তোর বাবা কোনো এক কাজে ফেঁসে গেছেন তুই তানভীরের সাথে চলে যা।
এ কয়েকদিনে কেয়ার সাথে তানভীরের সম্পর্কটা একটু ভালোর দিকে গিয়েছে কেয়া তানভীরকে বেশ একটা জ্বালাতন করে না এখন।কেয়া বললো,
~ঠিক আছে।
পারভীন বেগম বললেন,
~আচ্ছা শোন আমি বিকেল বেলা পৌঁছে যাবো অনুদের বাসায়।
কেয়া মাথা দুলালো এরপর রেডি হয়ে বাহিরে এসে দেখলো তানভীর দাড়িয়ে আছে।কেয়া রিকশায় উঠে বসলো তানভীরও তার পাশে বসে পরলো কেয়া এখন তানভীরের সাথে বেশ একটা কথা বলে না কেনজানি লজ্জা লজ্জা লাগে।তানজীর বললো,
~আমি তোমাকে দিয়ে বাসায় চলে আসবো রাতে আঙ্কেলের সাথে চলে যাবো।
কেয়া বললো,
~সমস্যা নেই হেমন্তি আপুরা আছে।
আর কোনো কথা তারা বললো না কিছুক্ষণের মধ্যে কেয়া অনুদের বাসার সামনে চলে আসলো।তানভীর কেয়াকে বাসার ভিতর পৌছে দিয়ে চলে আসলো।কেয়া বাসার ভিতর প্রবেশ করেই হেমন্তি আর হিয়ার দেখা পেলো সবাই মিলে অনুর রুমে চলে গেলো।

________________♥__________________

অনুর সব বিয়ের সরঞ্জাম চলে এসেছে ইমজাদের বাসা থেকে হেমন্তি, হিয়া আর কেয়া খুব আগ্রহ সহকারে সব জিনিস খুলে খুলে দেখছে।হেমন্তি বললো,
~তোর বিয়ের শাড়িটা কিন্তু অনেক সুন্দর।
অনু বললো,
~সবই সুন্দর হয়েছে তাই না?
কেয়া বললো,
~চুড়ি গুলো বেশ সুন্দর বলতে হবে দুলাভাইয়ের চয়েজ আছে।
হিয়া বললো,
~দুলাভাইয়ের চয়েজ ভালো দেখেই তো আমাদের অনুকে পছন্দ করেছে।
হেমন্তি বললো,
~আজকে তোর ভাসুর আর বড় ভাবি আসবেনা?
অনু বললো,
~তারাই তো এসব নিয়ে এসেছে এখন মামার সাথে বসে আছে অন্য রুমে।
তখনই দরজার কেউ নক করলো অনু দরজার দিকে তাকিয়ে বললো,
~আরে ভাবি আসেন।
ইমজাদের বড় ভাবি রাফিয়া ঘরে প্রবেশ করলো হেমন্তি হিয়া আর কেয়া তার সাথে কুশলাদি করলো রাফিয়া বললো,
~এখন যাচ্ছি আমরা রাতে কিন্তু তোমাকে নিতে আসবো।
রাফিয়ার কথা শুনে মুচকি হাসলো অনু এরপর রাফিয়া সবার থেকে বিদায় নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলো।তখনই অনুর ফোন বেজে উঠলো অনু ফোন হাতে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে রিসিভ করতেই ইমজাদ অপর পাশ থেকে বললো,
~সব পছন্দ হয়েছে তোমার?
অনু বললো,
~আপনি পছন্দ করে কিনেছেন সব?
ইমজাদ বললো,
~ভাবিও ছিল পাশে।
অনু বললো,
~সব কিছু অনেক সুন্দর সবাই অনেক প্রশংসা করছে।আপনার পাঞ্জাবি পছন্দ হয়েছে?
ইমজাদ বললো,
~হুম হয়েছে।
তাদের ভিতরে আরো অনেকক্ষন কথা হলো কেয়া ফোন রেখে আবার রুমে এসে বসে পরলো আর তিনজনের সাথে আড্ডা দিতে লাগলো।
আফজাল হোসেনের কাছে আর তানভীরের বাবা ফোন করেছেন আর একটা প্রস্তাব দিয়েছেন সে প্রস্তাব শুনে আফজাল সাহেব অনেকটাই খুশী হয়েছেন কিন্তু সে বলেছেন ২দিন পর সে সিদ্ধান্ত জানাবেন।তানভীরের বাবা তাকে জানিয়েছেন যে ২দিন পর তাহলে সে চলে আসবে তাদের বাসায় তখনই সামনাসামনি বসে সকল কথা হয়ে যাবে।আফজাল সাহেব এতে সহমত পোষন করলেন আর ভাবলেন এ বিষয়ে সবার আগে সে ইলহামের সাথে পরামর্শ করবেন তারপর বাকি সবাইকে জানাবেন।তাই সে সোজা চলে গেলেন ইলহামের অফিসে ইলহাম আফজাল হোসেনকে অফিসে দেখে অবাক হলো কিন্তু পরে পুরো বিষয় জানার পর ইলহাম তাকে বললো সব বিষয়ে আগে জানতে হবে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে।আফজাল হোসেন ইলহামকে সব বুঝিয়ে বললেন এক পর্যায়ে ইলহাম তার সাথে একমত পোষণ করে বললো সবার সাথে আলোচনা করতে। আফজাল হোসেন বড়ই খুশী হলেন ইলহামের বিবেকবুদ্ধি দেখে সে বুঝলেন কোনো ভুল মানুষের হাতে সে মেয়েকে সপে দেয়নি বরং অনেকই ভালো আর বিচক্ষণ পুরুষকে সে বেছে নিয়েছেন।

__________________♥___________________

দেখতে দেখতে রাত চলে আসলো অনুকে তৈরি করে সবাই রেডি হয়ে নিয়েছে ফারুক,ইলহাম,তানভীর সবাই এসে পরেছে।ইলহাম তানভীরের সাথে একান্ত কিছু সময় কথা বললো তানভীর ইলহামের প্রতিটি প্রশ্নের জবাব খুব সুন্দর ভাবে দিয়েছে।কিন্তু ইলহামের তানভীরের সাথে এভাবে কথা বলাটা কেয়ার চোখ এড়ায়নি কেয়া মনে মনে ভাবছে,
~এক কিনারে দাড়িয়ে তারা দুজন কী কথা বলছেন?
তখনই হিয়া বললো,
~বর এসেছে বর এসেছে।
কেয়া হিয়ার সাথে চলে গেলো সেখানে তার মাথা থেকেও সে এ বিষয়টা ঝেড়ে ফেললো।ইমজাদ বর বেশে বসে আছে স্টেজে একটু পর অনুকে নিয়ে আসা হলো দুজনের অনেকক্ষন ফটোসুট চললো এখন চলে আসলো বিয়ের সময়।কাজী প্রথমে অনুকে কবুল বলতে বললে অনু একটু কেঁদে বললো,
~কবুল,কবুল,কবুল।
এরপর ইমজাদের পালা আসলো ইমজাদও একটু সময় নিয়ে বললো,
~কবুল কবুল কবুল।
চারদিকে কড়তালি বেজে উঠলো তাদের বিয়ের খুশীতে বিয়ের পর সবাই একসাথে খাবার খেতে বসলো।খাবারের পর বিদায়ের ঘন্টা বেজে উঠলো অনু সবাইকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কাঁদলো এরপর অনুকে গাড়িতে বসিয়ে দিলো হেমন্তি তার পাশে বসে পরলো ইমজাদ।গাড়ি চলতে শুরু করলো অনু আর ইমজাদ চলতে লাগলো নতুন জীবনের দিকে তাদের জীবনে যাতে সবসময় ভালোবাসার অনুভূতি দিয়ে ঘেরা থাকে কোনো দুঃখ কষ্ট যাতে স্পর্শ না করতে পারে।
অনুকে বিদায় দিয়ে যে যার বাসায় চলে আসলো হেমন্তি আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুড়ি খুলছে অন্যমনস্ক হয়ে কাঁচের চুড়ি ছিলো বিধায় তা ভেঙ্গে তার হাত কেটে যায় সে ব্যাথায় “উহহ” বলে উঠতেই।ইলহাম তার হাত ধরে বললো,
~দেখে খুলতে পারো না দেখেছো কতটা কেটে গেছে।
ইলহাম হাতটা সুন্দর করে ব্যান্ডেজ করে দিলো তারপর হেমন্তির গাল ধরে বললো,
~কী হয়েছে তোমার?
হেমন্তি বললো,
~কিছুই হয়নি আসলে মনোযোগ ছিল না তাই হয়ে গেছে।
ইলহাম হেমন্তিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~অনুর জন্য মন খারাপ?
হেমন্তি ইলহামের শার্ট আকরে ধরে কেঁদে ফেললো ইলহাম বললো,
~অনুর নতুন জীবনে ওর জন্য শুধু দোয়া করো যাতে সে সুখে থাকে।
হেমন্তি ইলহামকে জড়িয়ে ধরে রইলো তার মনে হতে থাকলো এই বাহুডরেই তার দুঃখের শেষ রয়েছে।কেয়া বারান্দায় দাড়িয়ে দূর আকাশের তারা দেখছে তখনই আফজাল হোসেন সেখানে উপস্থিত হলেন।বাবাকে এসময় নিজ ঘরে দেখে একটু অবাক হয়ে বললো,
~বাবা তুমি?
আফজাল হোসেন চোখের চশমাটা ঠিক করে বললো,
~তোর সাথে কথা আছে মা।
কেয়া বললো,
~কী কথা বাবা?
আফজাল হোসেন কেয়ার মাথায় হাত রেখে বললো,
~তানভীরের বাবা একটা প্রস্তাব রেখেছেন সে চায় তোকে ছেলের বউ করে নিয়ে যেতে।
কেয়া দুচোখ বড় করে আফজাল হোসেনের দিকে তাকালো আফজাল হোসেন বললেন,
~তানভীর খুবই ভালো ছেলে কয়েকদিন পর চাকরিতে জয়েন করবে তার জন্য ফ্যাল্টও কিনে রেখেছে তার বাবা এখন শুধু চায় তানভীর যাতে নিজ বউসহ সেই ফ্যাল্টে উঠুক।
কেয়া বললো,
~বাবা,আমি সকালে জানাচ্ছি।
আফজাল হোসেন কেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~ঠিক আছে তুই তাহলে ঘুমিয়ে পর।
বলেই আফজাল হোসেন চলে গেলেন কেয়া বারান্দায় বসে পরলো আর ভাবতে লাগলো তার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে।

চলবে