অচেনা শহর ২ পর্ব-০২

0
1231

#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[২]

কাকা শশুর কে দেখে আমি চমকে উঠলাম। উনি এখানে কি করছে? এটা তো আমাদের বাসা না মানে আদ্রদের বাসা না। আমি আরেকবার পেছনে ফিরে বাসাটা দেখলাম স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কারণ রাত হলেও দিনের মতো আলো এখানে আছে।
থাকাটা অস্বাভাবিক না। উনি আমাকে এখানে দেখে ভয়ে ঘামতে লাগলো।
পকেটে থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছে নিলো। তারপর উত্তেজিত গলায় বলল,,,

“তু–মি এখানে কি করছো?”

আমি চোখ বড় করে তাকিয়ে ছিলাম আমার চোখে অসংখ্য প্রশ্ন। কাকা শশুর এর কথায় আমিও বললাম,,,

“কাকা আপনি এখানে কি করছেন? বাসায় না গিয়ে আর এটা কার বাসা।”

আমার কথা শুনে উনি ভয় পেলেন আমার মনে হয়। এতে আমার সন্দেহ বাড়লো আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,,

“কি হলো কাকা কথা বলছেন নি কেন? আর আপনি আমাকে ভয় পাচ্ছেন মনে হচ্ছে ‌!”

“ব‌উমা, তুমি এখানে কি করে?”

আমি বললাম,,”কাকা আমার কথা বাদ দিন আপনি তো আদ্রর সাথে গিয়েছিলেন। তো সেখানে থেকে বাসায় না গিয়ে এখানে কেন এটা কি আপনার কোন আত্মীয় বাসা।”

কাকা কিছু না বলে চুপ করে আছে।আমি আবার বললাম,,

“কি হলো কাকা কথা বলছেন না কেন? আর এতো ঘামছেন কেন?”

দাড়োয়ান কাকা এলো এতক্ষণ আর আমার দিকে তাকিয়ে কাকার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“বড় স্যার ম্যাডাম তো অসুস্থ আপনি একটু তাড়াতাড়ি ভেতরে যান। ছোট স্যার বাসায় নাই‌।”

তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,
“তুমি স্যারের সাথে কি কথা বলছো? স্যারকে ভেতরে যে দাও সরে আসো।”

আমি সরলাম না কাকাকে বললাম,,
“ম্যাম টা আবার কে কাকা সত্যি করে বলুন আপনি এখানে কি করছেন?”

কাকা বলল,,” ব‌উমা আমাকে আগে ভেতরে যেতে দাও‌। তোমার প্রশ্নের উত্তর আমি পরে দিচ্ছি।”

বলেই উনি আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে। আমি সন্দেহ চোখে তাকিয়ে আছি তার যাওয়ার দিকে।
দাড়োয়ান চাচা আমার সামনে এসে দাড়ালো রেগে।

আর বলল,,” এই মেয়ে তুমি স্যারের সাথে এভাবে কথা বললে কেন স্যারকে কি চেনো?”

‘হুম চিনি আর খুব ভালো করেই চিনি। কিন্তু আপনি তাকে স্যার কেন বললেন আর ম্যাডামটাই বা কে?”

“উনি তোর বাসায় মালিক তো তাকে স্যার বলবো না।”

“এটা উনার বাসা।”

“হুম। ”

“আর ম্যাম?” অবাক হয়ে বললাম।

“স্যার এর ব‌উ।”

“কি কাকি এখানে কিন্তু তিনি তৈ বাসায় ছিলো?”

“কি বলছেন কাকি এখানে কি করে এলো? আচ্ছা কাকা এতো হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে গেল কেন?”

“ম্যাডাম অসুস্থ তো তাই।”

আমার মাথা খারাপ হয়ে গেল। কাকি অসুস্থ কখন হলো।

“আচ্ছা ভেতরে নিয়ে চলুন তো আমাকে।”

“কেন তুমি ভেতরে কেন যাবে?”

“প্লীজ দাদু আমাকে নিয়ে যান।”

“আচ্ছা চলো।”

চাচার সাথে ভেতরে এলাম। বাসাটা সুন্দর গোছানো চাচা আমাকে একটা রুমে নিয়ে এলো সেখানে এসেই আমার চোখ চরকগাছ কাকা একটা মহিলার পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর মহিলাটি আরেক হাত চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে।
কাকার চোখে পানি কাকা কাঁদছে কিন্তু কেন আর মহিলাটি কে আমি দাদুর দিকে তাকিয়ে বললাম।

‘দাদু এই মহিলাটি কে?”

“আরে মেয়ে এটাই তো ম্যাডাম। ”

“কি? ”

এসব কি এই মহিলা কাকার ব‌উ আমি সোজা ভেতরে চলে গেলাম। কাকা আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়ালো।

তারপর কাছে এসে বললো,,

“প্লিজ বউমা তুমি বাইরে গিয়ে বসো আমি আসছি।”

বাইরে সোফায় বসে আছি। ক্লান্তে চোখ বন্ধ করে
মাথায় আকাশ সোমান প্রশ্ন নিয়ে।

হঠাৎ পেটে ব্যাথা অনুভব করতে লাগলাম। এতো চিন্তায় মাঝে খিদেটা কোথায় যেন চলে গেছিল। আবার তা শুরু হয়ে গেছে আমি চোখ খুললাম।
খিদে নিয়ে আর থাকা যাবে না আমি বেহায়ার মত আশেপাশে তাকাচ্ছি নির্লজ্জের মত এখন যাকে পাব তার কাছেই খাবার চাইবো।

আমি উঠে দাঁড়ালাম আর ঘুরতে ঘুরতে একটা মহিলা কেও পেয়ে গেলাম। তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।
তিনি আমাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো আর বললো,,

এই কেডা তুমি?

আমি এই বাসার আত্নীয়।

মহিলা আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিলো। তারপর ক্ষমা চাইলো। ওই ভাবে কথা বলার জন্য।
আমি বুঝলাম তিনি আমার কথা বিশ্বাস করেছে আমি এই সুযোগে এ তার কাছে খাওয়ার কথা বললাম উনি আমাকে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে খাবার আনতে গেল। খাবার খেয়ে একটু ভালো লাগলো।
অনেক খিদে পেয়েছিল এবার উনাকে সত্যি কথা বলে দিলাম আমি আত্নীয় না।উনি রেগে গেল আমার উপর চিৎকার করলো মিথ্যা বলেছি বলে। আমি মাথা নিচু করে আছি সত্যি অন্যায় করেছি তখন কাকা এলো আর মহিলাকে ধমক দিয়ে চলৈ যেতে বলল আর কি হয়েছে আমাকে জিজ্ঞেস করলো। আমি মাথা নিচু করে সব বললাম।

“আমি বুঝতে পারছি না তুমি এখানে কেন এতো রাতে। বাসায় বাইরে কেন এসেছো?”

আমি অসহায় মুখ করে তাকিয়ে বললাম,,
“কাকা আদ্র ঠিক ভাবে পৌঁছে ছে তো।”

“এখন ও তো পৌঁছায়নি সময় লাগবে। আর পৌঁছে কল করবে বলেছে।”

“ওহ।”

“বললে না তো তুমি এখানে কেন?”

আমি বললাম,,,”আমাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিছে। ”

“হোয়াট কি বলছো?”

অবাক হয়ে বললো। তারপর আমাকে নিয়ে সোফায় বসে জিগ্গেস করলো আমি সব বললাম।সব শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল।

“আমি এটাই সন্দেহ করেছিলাম এইভাবে তারাহুড়া করেছিল এজন্য। আদ্রকে বিদেশে পাঠানোর এটাই কারণ তাহলে। ”

আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি।

“এখন আমি কি করবো কাকা?”

বিয়ের পর কাকার সাথে তেমন কখনোই আমার সাক্ষাত হয়নি। উনি বাসার বাইরেই বেশি থাকে। আজকেই উনার সাথে কথা বলছি উনি আমার মাথা হাত দিয়ে বলল।

“আদ্রকে আমি সব জানাবো দেখ কি অবস্থা করে সবার।”

আমি মাথা উঁচু করে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,,

“না না না প্লিজ এমনটা করবেন না‌। আদ্রকে কিছু জানাবেন না‌।”

“কি বলছো জানাবো না তোমার সাথে এতৈ অন্যায় হলো সেসব বলবে না।”

“বলবো ঠিক বলবো। কিন্তু সেটা এখন না। আমি চাইনা ওইখানে থেকে আদ্র এসব কিছু জানুক আর আমার জন্য উত্তেজিত হয়ে পরুক।আমি ওকে চিন্তিত রাখতে চাইনা।”

“কিন্তু…

কোন কিন্তু না কাকা। আপনি এসব ছারুন আর এইসব বলুন কি এসব?”

কাকা আমার কথা শুনে চুপসে গেল।আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম তারপর দীর্ঘ শ্বাস ফেলল বললো,,,

উনার কাহিনী।
আমি একটা দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হসপিটাল এ ভর্তি হয়েছিলাম। দাদাভাই ( আদ্রর বাবার ) ইলেকশন প্রথম দাঁড়িয়েছিল সেবার। ভোটে দাদাভাই জিতে এ জন্য বিপক্ষে দল গান্জাম করে মারামারি লাগে সেখানে আমি আহত হয় গুলিতে। হসপিটালে ভর্তি পর দেখা হয় নুসরাত এর সাথে। সেখানকার নার্স ছিলো নুসরাত আমার খেয়াল রাখার দায়িত্ব ওর ছিলো।ও আমার খুব কেয়ার নিতো আমি সেখানেই ওর প্রেমে পরি। সুস্থ হতে আমার পনেরো দিন লাগে। এই পনেরো দিনে আমি নুসরাতকে ভালোবেসে ফেলি নুসরাত ও আমাকে পছন্দ করে এমনটাই আমার মনে হয় কিন্তু কেউ কাউকে বলি। হসপিটালে থেকে আশার পর ওর কথা খুব মনে পরতে সব সময় পাগল হয়ে ছুটে যেতাম হুট করেই হসপিটালে ও ও আমাকে দেখে খুশি হয়ে যেত। তারপর এই ভাবেই আমি একদিন ওর ফোন নাম্বার নিয়ে আসি আর কথা বলতে থাকি কিন্তু কেউ কাউকে ভালোবাসার কথা বলি না। আমি এইভাবেই নিরব হয়েই ফ্রেন্ডের মতো ওর সাথে মিশি মাঝে মাঝে হসপিটালে গিয়ে ওকে নিয়ে বেড়ানো ভালোই চলছিল। তারপর একদিন সুযোগ বুঝে মনের কথা জানিয়ে দেয় ও রাজিই ছিলো দুজনে দুজনের মনের কথা বলে একে অপরকে আপন করে নেই।
সুন্দর ভাবেই সব চলছিল একদিন আমি হসপিটালে গিয়ে ওকে পাইনা। চিন্তিত হয়ে কারণ ও কখনো হসপিটাল আশা অফ করে না যাই হয়ে যাক না কেন? কারন ওর একমাত্র সম্বল ছিল হসপিটালের জবটা ও ছিলো নিম্ন বিত্ত ফ্যামিলির মেয়ে মা ছাড়া আর কেউ ছিলো না আমি ফোন করি ফোন অফ চিন্তিত হয়ে বাসায় আসি রাত ভর করে করি নোট রিসিভ। পরদিন ও হসপিটালে আসে না এবার আর থাকতে না পেরে হসপিটালে থেকে বাসায় এড্রেস নিয়ে বেরিয়ে পরি আর জানতে পারি নুসরাতের মা মারা গেছে পাগলের মতো মেয়েটা বসে ছিল ওকে দেখে আমার চোখে জল পরতে লাগছে।
আমি ওর কাছে যেতেই জরিয়ে ধরে হা‌উমাউ করে কাঁদতে লাগে।
অসহায় হয়ে পরে। আমি কি করবো বুঝতে পারি না। ওর ওই অবস্থা আমি সহ্য করতৈ পারছিলাম না। ওর ওই অবস্থায় আমি ওকে বিয়ে করি ওকে এভাবে একা নিঃস আমি দেখতে পারছিলাম না।
বিয়ে করে পরি বেকায়দায়। বাড়িতে কি বলবো ঝুঁকের মাথায় বিয়ে করে ফেলেছি।এটা বাসায় সবাই মানলেও দাদাভাই মানবে না জানি। আর আমি দাদা ভাইকে ঝমের মতো ভয় পাই‌।
নুসরাতের খাটের কাছে মাথা দিয়ে থ মেরে বসে পরি। দাদাভাই নুসরাত কে কিছুতে ই মানবে না বিশেষ করে ওর স্টেটাস দেখে আরো না।
নুসরাত আমার কাছে এসে কপালে হাত দিয়ে মৃদু গলায় বলে।

“কি হয়েছে তোমার? এতো চিন্তিত লাগছে কেন? তোমার কি শরীর খারাপ করছে।”

আমি অসহায় মুখ করে নুসরাতের দিকে তাকালাম। কি করে বলবো আমি এসব নুসরাত কে।

“কি গো তুমি কি আমাকে বিয়ে করে খুশি না। আমাকে আমার শশুর বাড়ি নিয়ে যাবেনা।”

আমি ওর মায়া ভরা মুখে দিকে তাকিয়ে থমকে যাই। সব কিছু ভুলে ওকে নিয়ে মেতে যাই।
বাসায় আসি কিন্তু নুসরাত কে বাসায় আনি না।ওকে বলি যে এইভাবে বিয়ের কথা বলা যাবেনা। সময় একটু সময় সুযোগ বুঝে নিয়ে যাব তোমাকে।ও মেনে নেয় ওকে নিয়ে একটা ভাড়া বাসায় রেখে আসি।

~~চলবে~~