অচেনা শহর ২ পর্ব-০৩

0
1068

#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[৩]

বিষন্ন মন নিয়ে বাসায় আসি। কিভাবে সবাইকে ম্যানেজ করব এইসব নিয়ে চিন্তা মাথায় নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসতে দেখতে পেলাম দাদাভাই বসে আছে এই সময় দাদাভাই বসে থাকে না। এমনকি বাসায় থাকে না তো এত আগেই বাসায় কি করছে আমি দাদা ভাইকে দেখি কিছুটা ভয় পেয়ে আস্তে আস্তে তার সামনে আসলাম দাদাভাই আমাকে দেখে দাঁড়িয়ে পরল।
আর আমার এক কাঁধে হাত রেখে বলল,

“তারেক সারাদিন কোথায় ছিলে?”

আমি ভাইয়ার কথায় ভয় পেয়ে যায়। ভাইয়া কিছু জেনে যায় নাই তো আবার।
ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি দাদাভাইয়ের দিকে।
দাদাভাই আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছে তাই আমি ভয়ে কমিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,,

“আমি তো..

“সাফাই দিতে হবে না তোমার সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে।”

জি দাদাভাই বলেন।

তুমি দেখতে পাচ্ছো তোমার ভাবি অসুস্থ। আর জাবেদ তার বউ নিয়ে বিদেশে আছে। এই অবস্থায় একটা সংসারের দায়িত্ব তোমার ভাবি বহন করতে পারছে না।

দাদাভাই কাজের লোক তো অনেক আছে যদি বলতো আরো কিছু ব্যবস্থা করব।

কাজের লোক দিয়ে কি আর সংসার চলে।

তাহলে তুমি আমাকে কি করতে বলছো?

তুমি আমাকে বিশ্বাস করো তো। আমি তোমার জীবনে যে ডিসিশন নেব সেটা অবশ্যই তোমার ভালোর জন্যই নেব।

আমি মাথা নেড়ে হ্যা জানালাম।

গুড মাই ব্রাদার। আমি জানি তুমি আমার সমস্ত কথা রাখবে। কী রাখবে তো

আমার মাথায় ঢুকছেনা দাদাভাই কি রাখার কথা বলছে কিন্তু আমার মনে হচ্ছে কাজের বিষয়ে কিছু হবে এইভাবে অনেকবার দাদা ভাইকাজের কথা বলেছে।

হ্যাঁ ভাইয়া আমি তোমার সমস্ত কথা রাখবো আমার তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল।

আচ্ছা সে পরে বইলো আগে আমার কথাটা শোনো।

জি দাদা ভাই বলো।

তোমাকে কিন্তু আমার এই কথাটা রাখতে হবে। যে কাজটা তোমাকে করতেই হবে। আমাকে ছুঁয়ে প্রমিস করো।

আচমকা ভাইয়া এমন ছুয়ে প্রমিস করা শুনে আমি চমকে গেলাম। ভয় পেয়ে গেলাম অজানা ভয়ে এসে আমাকে গ্রাস করল। কি কাজ করব যাতে তো প্রমিস করার কি আছে।

দাদা ভাই আমি তো তোমার কোন কথা এখনো না করে থাকেনি। সব কাজই করেছি। তাহলে অবশ্যই আমি করব তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না।

হ্যাঁ করি যতটুক করার দরকার কিন্তু আমার মনে হয় তোর প্রমিস করা দরকার।

প্রমিজ করতে বড্ড ভয় হচ্ছে কিনা কি বলবে? আজকে দাদাভাই কথাগুলো আমার কেমন লাগছে। কিন্তু এখনতো আমি প্রমিজ না করল ভাই আমাকে সন্দেহ করবে। তাই আল্লাহর নাম নিয়ে প্রমিজ করে দিলাম।

আর এটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় ভুল যে প্রমিস করার পরে ভাই আমাকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। সে নাকি বিবাহ ঠিক করে এসেছে আমি সঙ্গে না করি কিন্তু দাদাভাই বলেন।

“তুমি কিন্তু আমাকে প্রমিস করেছিলে।”

আমি দাদাভাই কে বাধ্য হয়ে বিয়ের কথা জানিয়ে দেয়।সব শুনে দাদাভাই আমাকে জিজ্ঞেস করে নুসরাতের পরিবারের কথা। আমি সব বলতেই দাদা ভাই ওকে মেনে নেয় না।ডিভোস দিতে বলে। না হলে বাসা থেকে আমাকে তাড়িয়ে দেবে। আমি দিশেহারা হয়ে পরি।
সিদ্ধান্ত নেয় বাসা ছেড়ে চলে যাব কিন্তু ভাইয়া আরেকটা চাল দেয় আর আমি বিয়ে করি ভাইয়ার কথা মতো লিনি কে। দাদাভাই নুসরাতকে কিডনাপ করে আর বলে বিয়ে না করলে ওকে মেরে ফেলবে।
উপায় না পেয়ে রাজি হয়। দাদাভাই এই বিয়ে দেয় তার কারণ পরে জানতে পারি লিনির বাবার হাত ধরে ভাই ইলেকশনে জেতে তাই কথা দেওয়া ছিলো।আর আমার জীবন নষ্ট হয়ে যায়।
ভাইয়া আমাকে বলে নুসরাতের থাকা খাওয়ার টাকা পয়সা সব দেবে আর আমি যেন না জানে ও আমার বউ। আমি যেন ওর কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলি।
আমি পাথর হয়ে বসে ছিলাম আর একদিন লুকিয়ে নুসরাতকে ভাই এর বাসায় থেকে নিয়ে পালিয়ে যায়।
ভাইয়া আবার আমাকে ধরে ফেলে ভাইয়ের হাত বড় ধরা সহজ।পরে আমি ভাইকে বলি নুসরাতের সাথে আমি সম্পর্ক রাখবো সেটা লুকিয়ে কেউ জানবে না।
ভাইয়া বলে লিনিকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে নাহলে নাকি ওর বাবা ভাইয়াকে শাস্তি দিবে এসব জানলে। ভাইয়া সেদিন কেঁদে ওঠে আমি ইমোশনাল হয়ে রাজি হয়। আর তখন থেকে আমি ঘরে বাইরে এভাবেই আছি। সবার আড়ালে লুকিয়ে এখানে আসি।”

কথা শেষ করে কাকা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আমি গভীর ভাবে তাকিয়ে আছি তার কষ্টে ভরা মুখের দিকে এতো শক্ত ভেবেছিলাম মানুষ টাকে আর তার জীবনটা এতো আঘাতে আঘাতে আহত হ‌ওয়া। আমার চোখেও পানি টলমল করছে।
ভাই গুলো কি সব সময় এমন খারাপ ই হয়। কেন এই ভাই গুলো ভালো হতে পারে না কেন তারা ভাই বোনের জীবন টা আনন্দ আনন্দে ভরিয়ে না দিয়ে কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে দেয়।
আজ কাকার জীবনটা ও সুন্দর হতো যদি সেদিন বাবা তাকে বুঝতো নুসরাত কাকিমাকে মেনে নিতো। জোর করে আরেকজনের সাথে বিয়ে না দিতো।
সেদিন আমার ভাই ও ভাবির কথায় জাচাই না করে মাকে কিছু বলতো আর না বাসা থেকে চলে আসতো তাহলে আজ সবাই বেঁচে থাকতো এক ঘরে থাকতো যেখানে অভাব থাকলেও কষ্ট থাকতো না।
আমাদের ছোট জীবন টা কেন এইভাবে নষ্ট হয়ে যায় আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি। কতো ভালোবাসতাম ভাইকে আর সেই আমার জীবনটা নরকে পরিণত করেছে। ভাবতেই নিজের আর এই পৃথিবীতে থাকতে ইচ্ছে করেনা আপন মানুষ গুলো কেন আমাদের বুঝে না কেন আমাদের এই ভাবে কষ্ট দিয়ে যন্ত্রণা দিয়ে ভেতর থেকে মেরে ফেলে কেন?

“তুমি কাঁদছ কেন ব‌উমা।”

আমার খুব কষ্ট হচ্ছে কাকা আমাদের জীবন টা আপন মানুষ ধারা নষ্ট হয় কেন বলতে পারেন।

“জানি না। কেঁদো না।”

‘আদ্রর সাথে কথা বলবা।”

“হুম ও কি কল করেছিল?”

“এখনো না গিয়ে করবে।আমার সাথে চলো বাসায়।”

“না কাকা আমি আদ্র আসার আগে ওই বাসায় যাব না!”

‘তাহলে এখন কোথায় যাবে।”

“তাও জানি না। যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাব ঠিক একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”

“পাগল নাকি আমি তোমাকে এইভাবে রাস্তায় থাকতে দিতে পারি না।”

তাহলে কি করবেন?

তাই তো ভাবছি এখানে কি ভাবে রাখবো।আমার ছেলেটা এতো ঘাড়তেরা আমি তোমাকে এখানে রাখলে নিশ্চিত কালকেই ঘাড় ধরে বের করে দিবে।

মানে।

আরে আমার ছেলে।

আপনার ছেলে মেয়ে তো বিদেশে।

হুম সেগুলো না এখানকার টা আমাকে তো সহ্য করতে পারেনা তার মার সাথে মে অন্যায় করেছি আমি তাই।

বলে কাকা ভাবতে লাগলো এখানে আমাকে রাখবে কি করে?

~~চলবে~~