অচেনা শহর ২ পর্ব-০৪

0
940

#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[৪]

ছোট একটা রুমে বসে আছি একটু আগে ওই মহিলাটা আমাকে এইখানে রেখে গেছে কাকার কথায়। কাকা শশুর তার ছেলেকে কোন ভাবে ম্যানেস করবে বলেছিল আমি বলেছি তার দরকার নেই আমাকে রাত থাকতে দিন কাল আমি চলে যাব নিজের ব্যবস্থা করবো।‌ কাকা আমার হাত ধরে বলে এটা সে করতে পারবে না এইভাবে আমাকে একা রাখতে পারবে না।
তারপর ওই মহিলা মানে যাকে আমি মিথ্যে বলে খেয়েছিলাম তাকে ডেকে রুমে দিয়ে যেতে বলে।মহিলাটা কেমন করে যেন তাকায় ছিলো আমার দিকে।
তখনকার ব্যবহার এর জন্য জানি।কাকা বাসায় চলে গেছে আর এইখানে ওই কাকিটা অসুস্থ সে ঘুমে। বাথটবে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিলাম পা ধুতে গিয়ে জ্বলে উঠলো। জুতা ছাড়া হাঁটার ফলে পায়ের পাতা ছিলে গেছে চোখ বন্ধ করে আস্তে করে ধুয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখটি মুছে নিলাম। আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না এখন একটু ঘুম দরকার আমি বিছানায় দিকে তাকিয়ে থপ করে শুয়ে পড়লাম।

ক্লান্তে চোখ বন্ধ হয়ে গেল। চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস ফেলতেই চমকে উঠলাম। আদ্রর হাসি মুখ ভেসে উঠছে ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে মুখে চমৎকার হাসি নিয়ে।
সাথে সাথে চোখ মুখে ফেললাম কোথায় আপনি আদ্র আমাকে একা ফেলে না গেলেও তো পারতেন। আপনি ছাড়া কেউ যে নাই আমার। সামান্য ভালোবাসি বলিনি বলে এইভাবে নিঃস করে চলে যেতে পারলেন।
আপনি চলে গেলে আমার কি হবে ভাবলেন না কেন? বিরবির করতে লাগলাম। বুকটা ফেটে কান্না আসছে কিছুতেই থামাতে পারছিনা।হু হু করে কেঁদে উঠলাম।
কাঁদতে কাঁদতে গলা শুকিয়ে গেছে। পানি না খেলে ঘুম ও আসবে না উঠে দাঁড়ালাম রুমে পানি নেই নিচে যেতে হবে উঠে নিচে আসলাম। পানি খেয়ে সিরির কাছে আসতেই গুঙরানি শব্দ পেলাম ওইটা তো কাকিমার রুম এমন শব্দ হচ্ছে কেন আমি দৌড়ে গেলাম।
কাকিমা বুকে হাত দিয়ে কেমন জানি করছে আমি তাড়াতাড়ি তার পাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

“কি হয়েছে আপনার এমন করছেন কেন?”

উনি কি বলছেন আমি বুঝতে পারছি না। অস্পষ্ট সুরে বলছে আমি উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছি উনি কষ্ট পাচ্ছে।

“আমি বুঝতে পারছি না আপনার কথা প্লিজ বুঝিয়ে বলুন।”

এবার উনি হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলো পানি। টেবিলের উপর রাখা আমি আন্দাজ করতে পারলাম উনার পানি দরকার তাড়াতাড়ি পানি এনে উনাকে খাইয়ে দিলাম পানি খেয়ে উনি অক্সিজেনের কৌটা নিয়ে মুখে দিলো।
এবার আমি সিউর উনার হাঁপানি আছে। গায়ে হাত দিয়ে বুঝেছি উনার গায়ে ঝড়। উনি চোখ বন্ধ করে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে।
গায়ূ জ্বর অনেক কি করবো ভেবে একটা কাপড়ের টুকরা খুঁজে জল পট্টি দিতে লাগলাম হয়তো আরাম পাচ্ছে এবার চোখ খুলল স্বাভাবিক ভাবেই। আমার দিকে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে। এটা স্বাভাবিক কারণ আমাকে উনি চেনে না।

‘কে তুমি?”

জি আমি স্নেহা।

উনি ভ্রুকুটি করে বলল,,” তোমাকে আগে কখনো দেখেছি বলে মনে পরছে না। এখানে কিভাবে এলে।”

“সেসব না হয় কাল বলবো আপনি এখন ঘুমান।”

“কিন্তু..

“আপনার কি আমাকে খারাপ মনে হচ্ছে। আমি কি আপনার ক্ষতি করবো এমন।”

উনি বললেন,,” একদম ই না। তুমি খুব ভালো এটাই মনে হচ্ছে অচেনা একজনের এতো সেবা করলে। তুমি আমার ক্ষতি করবে না আমার বিশ্বাস।”

“তাহলে ঘুমান আমি আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”

উনি চোখ বন্ধ করে ফেললাম আমি পরম যত্নে উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। উনার নিঃশ্বাস ঘন হতেই উঠে বেরিয়ে এলাম। রুমে এসে শুয়ে পরলাম।

পরদিন সকালে উঠে নিচে আসলাম। কাকিমা সোফায় বসে আছে চোখে চশমা পরা গায়ে রং তার ফর্সা গোলগাল চেহারা ভারি মিষ্টি যৌবনে তার চেহারা অত্যান্ত সুন্দর ছিলো বুঝা যাচ্ছে। আমি এসে উনার পাশে বসলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।

“এখন কেমন আছেন আপনি?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি?”

‘আলহামদুলিল্লাহ। এতো সকালেই উঠেছেন যে?”

“নিশাত কাজে যাবে তো উঠতেই হতো।”

নিশাত নাম শুনে চমকালাম। আবার ভাবলাম এক নাম কতো মানুষের ই তো হয়।

“আপনার ছেলে।”

“হুম। আচ্ছা তোমার পরিচয় দিলে না তো।”

আমি পরিচয় দেবো তখন পুলিশের ড্রেস পরে নিচে আসলো নিশাত যাকে দেখেই চমকে দাঁড়িয়ে পরলাম।
বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি। নিশাত ও আমাকে এখানে আশা করে নি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। স্তব্ধ হয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলো আর বললো,,

“স্নেহা তুমি এখানে কি করছো?”

আমি হতদম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

“এটা আপনার বাসা।”

“হুম কিন্তু তুমি এখানে কি ভাবে আই মিন আমার বাসা চিনলে কি করে আর সাতসকালে আসলেই বা কেন? এ্যানি প্রবলেম?”

তার মানে নিশাত কাকা ছেলে আর নুসরাত কাকিমা তার মা। ও মাই গড কি সব হচ্ছে।

কাকিমা সোফায় তো থেকে অবাক হয়ে বলল,,”তোরা দুজন দুজনকে চিনিস?”

নিশাত বলল,,”হ্যা আম্মু।”

কাকিমা বলল,, “কি ভাবে?”

নিশাত বলল,,” আম্মু তোমার মনে আছে ওই যে বলেছিলাম। একটা মেয়েকে তার মৃত বাবা সহ গ্ৰামে রেখে এসেছি। আর অন্তরার ফ্রেন্ড সে।”

“হুম বলেছিলি। মেয়েটার জন্য আমার খুব কষ্ট হয়েছিল।”

“এই তো সেই মেয়ে।”

আমাকে আর কিছু কাকিমাকে বলতে হলো না সে সব শুনে টেনে বসিয়ে আমার গালে কপালে হাত দিলো। আর চোখ চিকচিক করে তাকিয়ে আচমকা জরিয়ে ধরলো।

“তোমাকে আমার দেখতে ইচ্ছে হয়েছিল কি কষ্ট না পেয়েছো এই টুকু বয়সে।”

উনার মমতার ছোঁয়া পেয়ে আমি ও কেঁদে উঠলাম। পুরোনো কষ্ট টা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো।উনার বুকে মাথা দিয়ে পরম সুখের আবাস পেলাম কেমন মা মা লাগছে। মনে হচ্ছে আমার মা আমাকে আদর করে বুকে জড়িয়ে নিয়েছে।
নাক মুখ লাল করে ফেললাম কেঁদে কেটে।

চোখ মুখ মুছে সোজা হয়ে বসলাম। আমি এখানে কিভাবে এখন বলতে হবে। তখন কাকা এলো বাসায় আর আমাকে ডেকে উঠলো,,

” বউমা কোথায় তুমি তাড়াতাড়ি এদিকে আসো।আদ্র কল করেছে।”

আদ্রর কলের কথা শুনে আমার মেরুদন্ড সোজা হয়ে গেল। এক ছুটে ফোনটা কাকার হাত থেকে নিয়ে সোজা দৌড়ে উপরে রুমটায় চলে এলাম।

ফোনে আদ্রর নামটা ভেসে আছে আমি ছলছল চোখে নামটার দিকে তাকিয়ে আছি। কানে নিতৈ পারছি না। বুকের ভেতরটা ধুকধুক করছে। আমি কাঁপা হাতেই ফোনটা কানে নিলাম ওপাশ থেকে আদ্রর কন্ঠ আসছে ও আমাকে বকছে।

“স্নেহা স্পিক আপ।তুমি এতটা কেয়ারলেস হয়ে গেলে আমি আসতে আসতে কোথায় ভাবলাম আমি তোমায় ছেড়ে এলে তুমি আমার বিরহে কেঁদে কেঁদে ভাসিয়ে দিবে। আমাকে ফোন করতে করতে পাগল করে দেবে। তা না উল্টো আমার ফোন রিসিভ করছো না।কাকার ফোনে তোমার সাথে কেন কথা বলতে হচ্ছে। অ্যানসার মি।”

আদ্র গম্ভীর শক্ত মুখ করে কথাগুলো বলছে।আমি নিরব হয়ে আর কণ্ঠস্বর শুনছি আমার বুকটা ফেটে কান্না আসছে মুখ ছেপে কাদচ্ছি।আমি আপনাকে সত্যি কথা বলতে পারবোনা। আপনি সব জানতে পারলে চিন্তা করবেন এতে ওইখানে আপনি এক মুহুর্তে থাকবেন না। আমি জানি যদি সবকিছু ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেন। এতে আপনারই ক্ষতি হবে আমি আপনার ক্ষতি চাই না আদ্র আপনাকে একটু দুশ্চিন্তা রাখতে চায় না।

“স্নেহা কথা বল এরকম নীরব হয়ে আছো কেনো।তুমি কি আমার সাথে কথা বলতে চাইছ না তারমানে আমি দূরে এসেছি তুমি এতে খুশি তাই তো।”

আমি এবার শব্দ করে কেঁদে উঠলাম। আদ্র এখনও আমাকে ভুল বুঝছে।
আদ্র আমার ফুপিয়ে কান্নার শব্দ পেয়ে হকচকিয়ে গেল। উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলো,,

“কি হয়েছে বউ। কাঁদছো কেন? আমি বকেছি বলে আচ্ছা সরি কেঁদো না।”

আমি আদ্র মুখে নরম কথা শুনে আরো বেশি করে কাঁদছি কান্না যেন থামছেই না।

“সরি বললাম তো। প্লিজ স্টপ। তুমি কাঁদলে আমার ভালো লাগে না কেঁদো না আর। নিজের ফোনটা কাছে রেখো তুমি তো জানো তোমার সাথে কথা না বললে আমি থাকতে পারিনা। আমার কষ্ট হয় খুব। কাল রাতে এখানে আসার পর থেকে কতো কল করেছি জানো। আই রিয়েলি মিস হার।”

“হুম।’

“তুমি আমাকে মিস করেছো?”

আমি চুপ করে আছি আর মনে মনে বলছি। আমি আপনাকে খুব বেশি মিস করেছি আদ্র!

“কি হলো বললে না তার মানে মিস করো নি।”

~~চলবে~~