অচেনা শহর ২ পর্ব-০৭

0
908

#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[৭]

অফিসের একটা জরুরি কাজ করছিলাম। তখন নিশাত দরজায় নক করলো,

“আসতে পারি।

মাথা উঁচু করে বললাম, “আসুন।

নিশাত ভেতরে এসে দাঁড়িয়ে বলল,

“এখনো কাজ করছো। কতো রাত হয়েছে জানো।
গভীর ভাবে তাকিয়ে বলল।

“হুম আসলে পরিক্ষা তো তাই কাজ গুলো করে রাখছি।

‘হুম তা ভালো কিন্তু এতো রাত রেগে করা টা ঠিক না। অসুস্থ হয়ে যাব রাত জাগলে।

‘আমার অভ্যাস আছে।আপনি জেগে আছেন যে।

“আমি তো রাত করেই ফিরি। আর আজ এসে তোমার রুমের আলো দেখলাম তাই দেখতে এলাম কেন?

“ওহ। যান ঘুমিয়ে পরুন।

“তুমি ঘুমাবে না।

‘হুম লেট হবে।

“কিন্তু থাক যা বলতে এসেছিলাম আদ্রর সাথে তোমার যোগাযোগ হয়? ”

আদ্রর নাম শুনতেই বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো। আমি থমকে নিশাতের দিকে তাকালাম। উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে নিশাত আমার দিকে।
আমি তারাতাড়ি মাথা নিচু করে ফেললাম,
কষ্ট হচ্ছে খুব নিজের ইমোশনাল অন্য কাউকে দেখাতে চাই না। চোখ জ্বলে উঠলো দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাথা উঁচু করে বললাম,,

“হয়।” জরানো কন্ঠে কান্না গলায় আটকে আছে।

নিশাত আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার ছটফট দেখে ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে আছে। আমি মাথা নিচু করে আছি নিশাত আবার কিছু বলতে যাবে আমি বললাম,,

“আমার ঘুম পাচ্ছে আপনি আসতে পারেন কথা থাকলে কাল বলবো।”
বলে চোখ ঢলতে লাগলাম। হাতের কাগজ সরাতে লাগলাম।

“স্নেহা তুমি কি কিছু লুকাচ্ছো?
সন্দেহ চোখে তাকিয়ে।

আমি পেপার নিয়ে উঠে টেবিলে রাখলাম।
“আপনি আসতে পারেন।”

নিশাত অসহায় মুখ করে তাকিয়ে বেরিয়ে গেল।
আমি দরজা আটকে দিলাম ঠাস করে। লাইট নিভিয়ে অন্ধকার করে চুপ করে বসে র‌ইলাম। ফোন বের করে আদ্রর একটা পিক বের করে দেখতে লাগলাম।
আদ্রর হাসামাখা মুখ ভেসে আছে ফোনে স্কিনে। আমি ছলছল চোখে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি।
আই মিস ইউ আদ্র।
ফোনটা বুকে চেপে বসে আছি চোখ বন্ধ করে।

ইনকোর্স পরিক্ষার জন্য ছুটি নিতে হবে আজকে পরিক্ষা দিতে তিন দিন লাগবে কারণ একদিন দুটা করে। এর জন্য আমাকে যেতে হবে বড় স্যার এর কাছে।তাকে কখনো দেখি নি কি ভাবে তার কাছে ছুটি চাইবো আমি।
বুশরা আপুর কাছে গিয়ে কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছি।

আপু বিরক্ত হয়ে বলল,,
কি হয়েছে স্নেহা এভাবে ঘুরঘুর করছো কেন?

আমি মুখ ছোট করে বললাম,,
আপু সরি। কিন্তু আমার একটু হেল্প লাগতো।

আপু বলল, হুম বলো।

আমি বললাম, ” আমাকে সাহায্য করো না। আমি বসে কাছে যেতে পারবো না তুমি একটু।

বিরক্তিকর চোখ মুখ করে,,আমি পারবো না বলছি তো।এতে রাগ করবে স্যার।

আমি আপুর হাত ধরে আকুতি মিনতি করে বললাম,,
প্লিজ ছোট বোন ভেবে একটু দেখ না।

আপু ধমক দাঁতে গিয়ে ও দিলো না কারণ তার ইমোশনাল জায়গায় আঘাত করেছি এবার আর কিছু বললো না।রেগে তাকালো,
‘দিলি তো আমাকে ইমোশনাল করে অসভ্য মেয়ে।”

আপুর মনটা ভালো কিন্তু সব সময় শক্ত হয়ে থাকে কিন্তু আমার সাথে পারেনা।
আপুকে আমার খুব‌ই ভালো লাগে। অফিস শেষ করে বের হতেই মুহিত এসে দাঁড়াল পাশে আর বত্রিশ টা দাঁত বের করে হাসি দিল।
ছেলেটা বেশিই জ্বালাচ্ছে। আমি বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম।

কেমন আছেন সুন্দরী?

আপনি আমাকে এসব বলবেন না।

কেন কি হয়েছে?

আমার বিরক্ত লাগে।
বিরক্ত নাক মুখ কুঁচকে বললাম।

মুহিতের মুখটা ছোট হলে ও কিছু বললো না, আবার বললাম,
‘স্নেহা ফুচকা খাবেন?

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,,

এই সন্ধায় ফুসকা আসলো কোথা থেকে?

অন্ধকার হয়ে আসছে এই সময় ফুচকার কথা শুনে চমকেছি।
মুহিত হাত উঁচু করে দেখালো আমি তাকিয়ে দেখলাম সত্যি ফুচকা ওয়ালা দাড়িয়ে আছে।
আমি দেখে খুশি হলাম কিন্তু বুঝতে দিলাম না।

কি হলো খাবেন? চলুন না খাই।

না আমি ফুচকা খাই না।

বলেন কি খান না এমন কোন মেয়ে আছে যে ফুচকা খান না?
বিস্মিত হয়ে বলল।

আমি আছি।

রাগ লাগছে গাড়ি আসছে না কেন? আজকেই এতো লেট করছে আর আজকেই ওই ছেলেটার জ্বালাতন বিরক্তিকর পরিস্থিতি।

আচমকা মুহিত আমার হাত ধরে নিল। আমি বিষ্ময়ে হতদম্ব হয়ে গেলাম চমকে উঠে ওর দিকে তাকালাম রাগে আমার গা কাপছে। কতো বড় সাহস আমার হাত ধরেছে।ছেলেটা হাত ধরেই হাঁটতে শুরু করেছে ফুচকা ওয়ালার দিকে আমার রেগে আরেক হাত দিয়ে হাত ছুটাতে চাইছি আর বলছি।

হাত ছারুন কি করছেন এসব? হাত কেন ধরেছে সব কিছুর একটা লিমিট আছে ছারুন।

ফুচকা ওয়ালার কাছে এসেই হাত ছেড়ে দিল। তারপর হেসে বললো,,
এতো রাগছেন কেন? ফুচকা খাওয়ার জন্য ই তো আনলাম।

আমি বললাম না আমি খাব না।

হুম কিন্তু আমার মনে হলো লজ্জা পেয়ে না করেছেন?

অসভ্য লোক লজ্জা পাওয়ার কি আছে কে আপনি? ফারদার এমন করলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।

বলেই গটগট করে চলে এলাম।ছেলেটার মন মতলব ভালো না খারাপ বাজে ছেলে একটা।
কিছুদূরে আসতেই গাড়ি পেলাম গাড়িতে উঠে চলে এলাম।
পরদিন কলেজে এসে ফিস জমা দিয়ে কলেজের চারপাশ তাকিয়ে দেখছি কতোদিন আসলাম।
এই কলেজেই তো আদ্রর সাথে সমস্ত মুহূর্ত এই মাঠে তো প্রথম দেখা হয়েছিল আদ্রর সাথে পুরোনো কথা ভাবছি আর আশেপাশে দেখছি।
তখন একটা পরিচিত কন্ঠ শুনে চমকে তাকালাম রাহাত ভাইয়া।

ভাইয়া কেমন আছেন?

আলহামদুলিল্লাহ তুমি?

আলহামদুলিল্লাহ।

অবশেষে তোমার দেখা পেলাম। তুমি তো হারিয়েই গেছিলে এতো দিন কোথায় ছিলে।

আমি কিছু বললাম না‌।
অন্য কথা বললাম,
” আপনি এখানে কি করছেন?

আমি এমনি এসেছিলাম তোমাকে দেখলাম তাই কথা বলতে চলে এলাম।

ওহ।

ঘন্টা পরায় আর কথা হলো না বিদায় নিয়ে চলে এলাম। অন্তরাও এলো দুজনে ক্লাসে চলে এলাম।
রাহাত ভাইয়ার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো না ছেলেটা কেমন করে যেন তাকাই ছিলো।
আগে এতো এমন মনে হয়নি। পেছনে ফিরে যত বার তাকিয়েছি তাকে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা দেখেছি। এই দৃষ্টির মানে কি আমি তা ভাবছি কিন্তু… না থাক আমার ভুল হতে পারে সব বাদ দিয়ে পরিক্ষা দিলাম।

_________

হ্যালো ম্যাডাম মেয়েটা তো খুবই জেদি?

হ্যাঁ আমি জানি কিন্তু ওকে তোমায় বশ করতে হবে জোর করে পারো নরম কথায় হোক যেভাবেই হোক।

আচ্ছা ম্যাডাম আর আপনাকে ছবিগুলো পাঠিয়ে দিয়েছি দেখেন ভালো হয়েছে কিনা।

ওকে, কিছুদিন দেশে থাকবে না এর মাঝে স্নেহার একটা ব্যবস্থা করে ফেলো।

don’t ওরি মেডাম, আপনি চিন্তা করবেন না আমি আমার কাজ হাসিল করেই ছাড়বো।

ওকে টাকাটা ঠিকমত পেয়ে যাবে।
ফোন কেটে মাইশা শয়তানি হাসি দিতে লাগল।
তারপর মাইশা নিজের রুমে বসে নিজের ড্রেস প্যাক করছে। খুশিতে ওর নাচতে ইচ্ছে করছে।নাচবে না কেন একবার লন্ডন যেতে পারলেই হলো আদ্র শুধু ওর স্নেহাকে আজীবনের জন্য আদ্রর জীবন থেকে সরানোর জন্য সব করা শেষ। শুধু এইবার এই ছবিগুলো দেখানো বাকি আর আদ্র জীবন থেকে স্নেহা নাম মুছে যাবে। ও আর জীবনে ও স্নেহার মুখে দেখতে চাইবে না। এইখানে ছবিগুলো হলো সবকটা মুহিতের সাথে। আর মুহিত হলো মাইশার পাঠানো গুন্ডা।

~~চলবে~~