অচেনা শহর ২ পর্ব-০৮

0
930

#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[ ৮]

পরীক্ষার হল থেকে আমি আর অন্তরা একসাথে বের হলাম। অন্তরা বের হয়ে আমাকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করল,,

“দোস্ত চোখ মুখের কি অবস্থা হয়েছে? রাতে ঘুমাস না। চোখের পার ত কালা হয়ে গেছে। এত চিন্তা করছিস কেন? আর এতোই যেহেতু চিন্তা তাহলে আদ্রকে সব জানাই দে।”

অন্তরা মায়া ভরা কন্ঠে বলে আমার গালে হাত রাখল। আমি গালি থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,

“আমি চিন্তা করছি না আমি ঠিক আছি অন্তরা। অযথা টেনশন করিস না।”

“তার মুখে এখনও বিষন্নতা আদ্রর সাথে তো কথা হয়।‌ তাহলে তোর মুখে বিষণ্নতায় ভরপুর কেন বলতো?”

“ওই সব কিছুই না রাত জাগা হয় আসলে অফিসের কাজ নিয়ে। আর তারপর এখন আবার এক্সাম দুইটা করতে হবে বুঝেছি তো!”

“তাও আমার মনে হচ্ছে তুই আমাকে মিথ্যা বলছিস? কিছু একটা লুকাচ্ছিস?”

আমি মুখে শুকনা হাসি এনে বললাম,,এত চিন্তা করিস না তো তোদের কি খবর তাই বল তাদের বিয়ে কবে?

আমার কথা শুনে অন্তনা লজ্জায় লাল হয়ে গেল,
“বিয়ে সেটা তো হৃদয়ের এক্সাম শেষে।”

“ওরে বাবা মেয়ের কি লজ্জা?

“হুম তা তো থাকবেই তাইনা।”

“আচ্ছা চল। তাহলে বেশি লেট করতে পারবে না। আবার কালকেও তো এক্সাম আছে।”

“হুম আর এত রাত জাগিস না।নিজের কেয়ার করিস আবার আদ্র তোর এই অবস্থা দেখে না জানি কি করে তোকে?

আমি অন্তরার দিকে তাকিয়ে বিনিময়ে শুধু হাসি দিলাম কিছু বললাম না।

গেটের কাছে আসতে অন্তরার কল আসলো আর তাড়াহুড়া করে চলে গেল আমাকে একাই চলে যেতে বলে। যাওয়ার আগে শুধু বলল হৃদয়ের কল হৃদয়ের কথা শুনে আর কিছু বললাম না একাই গাড়ির জন্য ওয়েট করতে লাগলাম।
খুব রোদের তাপ সূর্য যেন আমার মাথার উপরে আছে। সূর্যের তাপে চোখ ভালো করে খুলে রাখতে পারছিনা তাই বাম হাত উঠিয়ে কপালে রাখলাম। একটা অটো দেখছে না শুধু বড় গাড়ি যাচ্ছে। বিরক্তিতে আমার নাক মুখ কুঁচকে আসছে।পা দুটো টান টান হয়ে আছে হাত বাড়িয়ে মুখের ঘাম মুছে সামনে তাকাতেই চমকালাম দূরের চায়ের দোকানে কেউ দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই পেছনে ঘুরে গেল। মুখটা দেখতে পেলাম না। আমি উৎসুক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছি লোকটার এই দিকে ফেরার জন্য কিন্তু লোকটা ভুল করেও তাকাচ্ছে না। পেছনদিকে থেকে লোকটাকে আমার খুব পরিচিত লাগছে। কিন্তু বুঝতে পারছি না কে? এমন সময় আমার সামনে একটা অটো এসে থামল,
আর ভেতর থেকে অটো ওয়ালা বলল,

আপা যাবেন?

আমি লোকটার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে অটো ড্রাইভার এর দিকে তাকালাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে উত্তর আশায়,আমি একবার ভাবছি এই অটোতে উঠে চলে যাব নাকি ওই চায়ের দোকানে গিয়ে দেখবো লোকটাকে।না দেখবো লোকটা কে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিল কেন? মনে হলো আমার দিকে নজর রাখছিল।
আমি ওই দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবো অমনি দেখলাম লোকটা নাই। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম। লোকটা গেল কোথায়? অটো ওয়ালা এদিকে আমাকে জিজ্ঞেস করছে যাচ্ছে যাব কিনা?
আমি সেদিকে কান না দিয়ে চারপাশে লোকটিকে খুঁজতে লাগলাম। নাই সেকেন্ড এর মাঝে কোথায় চলে গেল? অটোওয়ালা আবার জিজ্ঞেস করল,,

এই আপা এমন করছেন কেন? গেলে বলেন না দিলে না করেন আমাদের তো এখানে বসে থাকার সময় নাই? পেটের দায়ে কাজ করি যে সে জিজ্ঞেস করছে আপনার দাম বেড়ে গেল নাকি?

আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম, ক্ষমা করবেন আপনাকে এভাবে ওয়েট করার জন্য।আসলে আমি একজনকে খুজছিলাম কিন্তু পাচ্ছিনা চলুন আপনার গাড়িতেই যাব।

সারা রাস্তা চায়ের দোকানের লোকটা কে হতে পারে আকাশ-পাতাল বাড়ির সামনে আসলাম। পুরো গাড়িতে ও মনে হয়েছে কেউ আমাকে পেছনে বাইকে ফলো করছে। এজন্য আমি দুই তিনবার পেছনে তাকিয়েওছি একটা বাইক ছিল কিন্তু লোকটার মুখ দেখা যায়নি পুরো মুখ ঢাকা।আমি পেছনে তাকাতেই সে শো করে গাড়ি নিয়ে আগে চলে গেল।
অটো থেকে নেমে পার্স থেকে ‌টাকা বের করার আগেই অটোআলা চলে গেল। আমি হতবুদ্ধি হয়ে অটোর জাওয়ার দিকে তাকিয়ে আসি উনি টাকা না নিয়ে চলে গেলেন কেন?
এসব হচ্ছে কি? চিন্তিত ভঙ্গিতেই বাসায় আসলাম। ভেতরে আসতেই কাকিমা আমাকে শরবতের গ্লাস দিল। আমি অবাক হয়ে কাকিমা দিয়ে তাকিয়ে আছি।

কি হয়েছে মা এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? ওইটার জন্য পরীক্ষা দিয়ে এলি এটুকু দিতে হতো। আচ্ছা বল তোর পরীক্ষা কেমন হলো?

কাকিমার সাথে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো হয়ে গেছে এখন আমাকে কাকিমা তুই করেই বলে। আর নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখার চেষ্টা করে সত্যি ওনার মনটা খুবই ভালো। আমার চোখে জল চলে এলো আমার পরীক্ষার সময় মা ওই ভাবে বাসায় আসতেই শরবত দিত।তারপরে বলতো তাড়াতাড়ি গোসল করে আয় তোর জন্য আজকে তোর পছন্দের খাবার রান্না করছি খেয়ে আবার পড়তে বসবি আজকে তোর কোন কাজ করতে হবে না। খাবার টেবিলে তখন মা আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিত। কাকিমা নিজের অজান্তে আমার মায়ের কাজটা করে দিয়েছে।
কাকিমা আমার চোখের জল দেখে উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,

কিরে কাঁদছিস কেন তোর কি পরীক্ষা খারাপ হয়েছে?
আমি মাথা নেড়ে না জানালাম।

তাহলে কাঁদছিস কেন কেউ কি কিছু বলেছে?

না কাকিমা কেউ কিছু বলেনি। কিন্তু মাকে খুব মিস করছি।

কাকিমা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল পাগলি মেয়ে মাকে সবার চিরকাল থাকে।তার যখন সময় হয়েছে সে চলে গেছে তার জন্য কষ্ট পাস না।

জানো কাকিমা মাও আমাকে এইভাবে স্কুল থেকে আসলি শরবত করে দিত।

কাকিমা ডাকছিস আবার কাঁদছিস আমিওতো তোর মায়ের মতনই। কাদিসনা।

রাতে বসে পড়া রিভাইজ করছি তখন হঠাৎ আমার ফোনে কল আসলো কিন্তু আননন নাম্বার
আমি নাম্বারটা দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আগে থেকে আমি রং নাম্বার রিসিভ করি না।কিন্তু আজকে করতে হবে কারণ নতুন অফিসে জয়েন করছি কেউ আমাকে কল করতেই পারে। আর সবার নাম্বার আমার কাছে নাই।
সাইকো রিসিভ করে হ্যালো বললাম।একি ওপাশ থেকে কোনও আওয়াজ আসছে না।পরপর দুই তিনবার হ্যালো বললাম তাও কোন আওয়াজ পেলাম না। শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। নিঃশ্বাসের শব্দ টা শুনে আমার বুকের ভেতর কম্পন তৈরি হয়ে গেল।আমি তাড়াতাড়ি ফোন সামনে আনলাম এটাতো বাংলাদেশের নাম্বার। ধুর কি সব ভাবছিলাম?

কে আছেন কথা বলছেন না কেন ? আর কথা না বলে ফোন কেন দিয়েছেন?

নো রিপ্লে। ফালতু কল কয়টা বকা দিয়ে ফোন রেখে দিলাম। ফাইজলামি করার জন্য ফোন দিছে।

তিনদিন পরীক্ষার পাঠ শেষ করলাম। খুবই আতঙ্কের মাঝে আমার দিনগুলো কাটছে। এত আতঙ্ক নেওয়া আর সহ্য হচ্ছে না মাথা টা ছিড়ে যাচ্ছে। কি থেকে কি ভাববো? আমার সব সময় প্রতিটা সেকেন্ডেই মনে হচ্ছে কেউ আমাকে ফলো করছে? কিন্তু কে করছে? কয়েকবার আমি এর প্রমাণও পেয়েছি। আমি যেখানে যাই সেখানে কেউ আমাকে ছায়ার মতো ফলো করে।
আর এটাও জানতে পেরেছি মাইশা বিদেশে গিয়েছে এক সপ্তা হলো। পরীক্ষা দিয়ে এখন আবার অফিসে জয়েন করেছি ঠিকমতো। সবকিছু ভালই চলছে শুধু এই ফলো করাটা বেড়ে যাচ্ছে।এদিকে মুহাত ছেলেটা আমাকে জ্বালিয়ে মারছে
এত বিরক্ত করছিল আমি জিবনে দেখিনাই শেষে কিনা প্রপোজ করে বসলো। সে নাকি আমাকে না পেলে মরে যাবে। আমি তাকে সাব সাব না করে জানিয়ে দিলাম যে আমি বিবাহিত। সে আমাকে বলল আরো 100 কথা,
অদ্ভুত বিষয় সে আদ্রর সম্পর্কে সবই জানে। আমাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়া। আদ্রর বিদেশ যাওয়া সব কিছু সে আমাকে বলল তারপর আমাকে বলল আদ্র ভালোবাসে না জাস্ট ইউজ করেছে আমাকে। আমি যেন আদ্রকে ছেড়ে তার সাথে সংসার বাধি। রাগে আমার হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে যায়। ভালোভাবে তার সাথে সবকিছু মিটমাট করতে চাইছিলাম কিন্তু সেই লিমিট ক্রস করে ফেলে। আমি তাকে সর্বসমক্ষে থাপ্পড় মেরে বসি। বিগড়ে যায় সে রাগে চোখ শক্ত করে আমার সামনে থেকে চলে যায়।থাপ্পর মেরে ভয়ে থাকি চাকরির না আবার চলে যায়।
ভয় আতঙ্কে দুইহাতে মুখ ঢেকে কেবিনে বসে আছি। এত যন্ত্রণা সহ্য হচ্ছে না এর থেকে মরে যাওয়া ভালো।
তার উপর আবার আননন নাম্বার থেকে কল সে কল টা আমাকে প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছে। মন চাইছে ফোনটা আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলি। সবকিছু ছেড়ে সরে কোন একটা জায়গায় চলে যেতে পারতাম অচেনা একটা জায়গা ‌যেখানে আমাকে জ্বালাতন করার মত কেউ থাকত না সেখানে শুধু আমার আদ্রর থাকতো আর আমাদের একটা ছোট্ট সংসার থাকতো
যেখানে থাকত অফুরন্ত ভালোবাসা।
দুজনে ভালোবাসা একটা ঘর বাঁধতাম দুজনেই পরিশ্রম করে সংসার সাজাতাম আদ্র ক্লান্ত হয়ে আমার কোলে মাথা রেখে চোখ বুঝতো আমি ওর চুলে পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিতাম।
সেই ভালোবাসার দিন গুলো কি কখন আসবে না? নাকি হারিয়ে যাবে সবকিছু। কবে আসবে তুমি আসো আমার কাছে।ভালো লাগছে না তাই বুশরা আপুকে বলে দু’ঘণ্টা আগে চলে এলাম বাসায়।
পরদিন অফিসে গিয়ে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল বড় বড় চোখ করে আমি তাকিয়ে আছি শুধু আমি না অফিসের সবাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।
সবার চোখে-মুখে কৌতুহল।

~~চলবে~~

Tanjina Akter Misti