অচেনা শহর ২ পর্ব-০৯

0
850

#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[৯]

বুকের ভেতর টিপটিপ করছে। আমি দুই হাতে শক্ত করে আদ্রর বুক জরিয়ে ওর বুকে মাথা দিয়ে চুপ করে আছি। ভয়ে আমার হাত পা কাপছে। জড়োসড়ো হয়ে আদ্রর বুকের সাথে লেপ্টে আছে। এ যে আমার পরম শান্তির স্থান। আমি একটু মরতে চাইনা আদ্র। তোমার বুকে মাথা রেখে তোমার সঙ্গে বাঁচতে চাই। তুমি জীবনে না এলে হয়তো অনেক আগেই আমার এই জীবনটা শেষ করে দিতাম। কিন্তু এখন আমি তা কল্পনাতেও ভাবি না। আমি এখন শুধু তোমার জন্যই বাঁচতে চাই।
গত দিন পর তোমাকে নিজের কাছে পেয়েছি। তোমার বুকে মাথা রাখতে পারছি। এ থেকে সুখের আর কি হতে পারে আমার কাছে? এর থেকে বেশি সুখ আর আমার জীবনে নাই!তোমাকে আমি কষ্ট দিয়েছি চাঁদনী কিন্তু আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি তোমাকে আর কোন কষ্ট দেবো না।
কথাগুলো মনে মনে ভাবছি আর হাতের বাধন শক্ত করছি।এমনভাবে আদ্রকে ধরে আছি যেন আদ্রর বুকের ভেতরে ঢুকে পড়তে পারলে শান্তি পেতাম।
আজকে ভাইয়ের সাথে দেখা হল আর আজকে আমি আদ্রকে আবার নিজের কাছে ফিরে পেলাম। ভাইকে আমার জন্য আনলাকি হলেও একটা জিনিস সেজন্য ভাইয়াকে আমার জন্য লাকি মনে হচ্ছে। ভাইয়ার পরে আদ্রকে দিকে ফিরে পেলাম।
কতগুলো রাত তোমাকে স্পর্শ করার জন্য তোমার বুকে মাথা রাখার জন্য কেঁদেছি আদ্র।

আদ্র রেগে দরজা খুলতে গিয়েও খুলতে পারল না আচমকা স্নেহাকে নিজের বুকে ঝাঁপিয়ে পরতে দেখে ও থমকে যায়।হাত নামিয়ে বিস্মিত হয়ে জানালার বাইরে চোখ দেয়।
বিষ্ময়ে হতদম্ব হয়ে যায় আদ্র। স্নেহা এভাবে জরিয়ে ধরবে আশা করেনি‌।
আশা না করাটা স্বাভাবিক কারণ স্নেহা জড়িয়ে ধরার মতো মেয়ে না বরাবরই আদ্রকে ইগনোর করে এসেছে এখন এভাবে জড়িয়ে ধরাটা আদ্রর কাছে অনেক বড় কিছু। আদ্র চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ সংযত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছেনা রাগে ওর চোখমুখ শক্ত হয়ে আসছে বারবার মনে পড়ছে স্নেহার রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে থাকাটা। কয়েক সেকেন্ডের জন্য আদ্র শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।কোন মতে ওকে নিয়ে রাস্তার সাইডে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিল। আরেকটু দেরী হলেই কি হয়ে যেতে পারত।প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম হয়তো বা অন্যমনস্ক হয়েই রাস্তা মাঝখানে চলে গেছে কিন্তু স্নেহা গাড়ি আওয়াজ পেয়েও সরলো না। উল্টো রাস্তার মাঝখানে দু’হাতে মুখ চেপে ধরে দাঁড়িয়ে পরল। তখন রাগে আদ্রর হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে যায়। তার মানে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য ওইখানে গিয়েছে। একবার ও আমার কথা ভাবলো না। এত বড় ডিসিশন নিয়ে ফেললো।
আর কিছুই গেলে আমার কি অবস্থা হবে সেটা একবারও ভাবলো না। একেতে এত সব কথা আমার দিকে লুকিয়েছে তার ওপর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাগে আদ্রর চোখ আবার লাল বর্ণ ধারণ করল,

আদ্র দুই হাত উঁচু করে স্নেহার দু কাঁধে রেখে নিজে থেকে সরাতে যাবে তখনি স্নেহা হু হু করে কেঁদে উঠলো, স্নেহার কান্না শুনে আদ্র হাত থামিয়ে নেয়।
স্নেহা হিচকি তুলে কেঁদে যাচ্ছে আর কি যেন বিড়বিড় করে বলছে। আদ্র ওর কান্নাল জন্য কথা কিছুই বুঝতে পারছে না। স্নেহা কান্না শুনে আদ্রর রাগ পড়ে যায়। স্নেহার কান্না একদমই সহ্য করতে পারে না আদ্র। এখন ও পারছে না।
তাই স্নেহাকে নিজে থেকে জড়িয়ে ধরল না গম্ভীর হয়ে বসে রইল। আর গম্ভীর গলায় বলল,

ছাড় আমাকে।

আদ্রর গম্ভীর কন্ঠের আওয়াজ শুনে স্নেহা থমকে যায়। সাথে আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করে আদ্র ওকে জড়িয়ে ধরে নি। আদ্রকে ছেড়ে ছলছল চোখে ওর মুখের দিকে তাকায়। আদ্র রেগে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে।

কি হয়েছে আপনার এমন করছেন কেন?

একদম আমার গায়ের উপরে এসে ন্যাকা কান্না কাঁদবেনা। আগে বল তুমি মরতে গিয়েছিলে কোন সাহসে?
আদ্রর কান্ঠে রাগ স্পষ্ট।

আমি আদ্রকে এমন রাগতে দেখে ভয়ে চুপসে গেলাম।

অ্যানসার মি! একদম মুখ বন্ধ করে বসে থাকবে না। উত্তর দাও আমার। তুমি কার পারমিশনে মরতে গিয়েছিলে।

আদ্রর ঝাঁজালো কন্ঠে আমি কেঁপে উঠলাম,
আমি মরতে কখন গেলাম আবার আমাকে ভুল বুঝছে।

আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন আমি মরতে কেন যাব?

সেটাপ একটা মিথ্যে কথা বলবানা। আমার চোখের সামনে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলে।

আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন ওইটা তো ভুলে হয়ে গেছে আমি তো ইচ্ছে করে যায়নি।

তুমি আমাকে পাগল পেয়েছো? ইচ্ছে করে যাও নি তাহলে ওইভাবে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন? যেন গাড়িটার অপেক্ষা করছিলাম কখন আসবে আর তোমাকে…

বলে আদ্র চোখ বন্ধ করে ফেললো।

আমি সত্যি বলছি আমি তো ভুলে চলে গেছিলাম আর ভয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছিলাম সরতে পারছিলাম না।

বলতে বলতে আমি আদ্রর এক হাত ধরতেই ঝামটা মেরে আমার হাত সরিয়ে দিল।

ডোন্ট টাচ মি। তোমার সাথে আমি কথাই বলতে চাই না এই মুহূর্তে তুমি প্লিজ ওই কোনায় গিয়ে বসে থাকো। না হলে তোমাকে আমি খুন করে ফেলবো।

আদ্রর এমন কথা শুনে আমার বুকে ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে বেযাচ্ছে আমি ঝাপসা চোখের আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি।
এই আদ্রকে যেন আমি চিনতেই পারছিনা।

আমি নিরব হয়ে অপলক আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। আদ্র নিজের একহাত কপালে রেখে চোখ বন্ধ করে রইলো। আদ্রর খোঁচা খোঁচা দাড়ি এখন অনেকটাই এর বড় লাগছে অনেকদিন ধরে মনে হয় ছোট করে না। চোখ মুখে অসম্ভব ক্লান্তি লেগে আছে আদ্র আচমকা চোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়ে তারপর গাড়ি থামাতে বলল।
গাড়ি থামতে আদ্র সামনে এগিয়ে বসলো।
আমি পেছন থেকে আদ্র যাওয়া দেখলাম। সামনে গিয়ে আদ্র সিগারেট বের করে ফূ দিতে লাগলো। আমি পেছন থেকে আদ্রর সমস্ত কণ্ডকারখানা দেখছি। আদ্র এতটাই রেগে আছে যে আমার সামনে ও থাকতে চাইছে না। আবার কষ্ট পাচ্ছে যার জন্য সিগারেট খাচ্ছে।আমি কাছে থাকলে কখনোই তত সিগারেট খায় না। কিন্তু আজকে খাচ্ছে আর খাওয়ার জন্যই এখান থেকে চলে গেল।

সিটে হেলান দিয়ে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি আর চোখের জল ফেলছি। ওইভাবেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানিনা।
চোখ মেলে যখন তাকালাম আমি একটা অপরিচিত রুমে শুয়ে আছি। শুয়ে থেকে পুরো রুম স্ক্যান করে নিলাম। খাট ব্যতীত একটা ড্রেসিং টেবিল আরেকটা ওয়ারড্রব। আর কিছুই নেই
অপরিচিত হলেও পরিচিত লাগছে।
আদ্র কথা মাথায় আসতে ধরফরিয়ে উঠে বসলাম। আদ্র কোথায় আমি তো ওর সাথে ছিলাম গাড়িতে তাহলে এখানে আসলাম কিভাবে‌?

রুমটা আমার পরিচিত লাগছে কেন মনে হয় আগেও এসেছি দুই মিনিট ভাবতে মনে পড়ে গেল। ইয়েস এইখানে তো আদ্রর সাথে এসেছিল আমাদের বিয়েতে এই বাসায় হয়েছিল। তারমানে আদ্র আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।
খাট থেকে নিচে নেমে দাঁড়ালাম আদ্র কোথায়? বাইরে থেকে হাসির আওয়াজ আসছে!
আমি রুম থেকে বেরিয়ে সেদিকে আসলাম আর দেখতে পেলাম একটা ছেলে রান্না ঘরে রান্নার ড্রেস পরে আলু কাটছে। আর তার পাশেই দাঁড়িয়ে আদ্র আটা গুলছে হাত দিয়ে তো একটু পর পর হাত কপালে মুখে দিয়ে চুলকাচ্ছে আর যার ফলে পুরো মুখ আটা মেখে বিচ্ছিরি অবস্থা।
আদ্রর দাড়িতে কপালে নাকে সাদা আটা লেগে আছে যা দেখে হেসে চলেছে পাশের অপরিচিত ছেলেটা।
আদ্র একটু পর পর রেগে ওর দিকে তাকাচ্ছে ওর হাসি দেখে।
আমি ও আদ্রর এই অবস্থা থেকে না চাইতেও খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম,

আমার হাসির আওয়াজ শুনে দুজনেই বিস্মিত তাকালো আমার দিকে। দুজনকে এভাবে তাকাতে দেখে আমি তাড়াতাড়ি হাসি থামিয়ে ফেললাম।
আদ্র আমাকে হাসতে দেখে খুশি হয়েছিল কিন্তু থামানোতে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
ওই পাশের ছেলেটা বলল,

আরে ভাবি এতো তাড়াতাড়ি আপনার ঘুম শেষ।

আমি হাঁ করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। কে উনি বারবার ভাবি কেন বলছে?
আমি কথা বলছি না দেখে ছেলেটা হয়তো বূঝতে পারলো আর নিজেই গড়গড় করে পরিচয় দিয়ে দিল।
নাম জাইন।আদ্র লন্ডনে তাদের বাসায় থেকেছে।
এবার আমি জিজ্ঞেস করলাম আদ্রকে,

আদ্র আপনারা এখানে কেন? আপনার তো দু’বছর পর আসার কথা ছিলো।

বলেই আমি এগিয়ে গেলাম।আদ্র আমার কথা শুনে রেগে তাকালো, আমি ভয়ে চুপসে থেমে গেলাম।

আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি চলে। এসেছি এনি প্রবলেম?

আমি মাথা নেড়ে না বললাম।

আদ্র এগিয়ে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে বলল,

আমি এসে তো তোমাকে বিপদে ফেলে দিছি।ভেবেছিলে দু’বছর শান্তিতে থাকতে পারবে কিন্তু পারলে না ভেরি স্যাড?

বলেই জাইন ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,

আজকে তোর রান্নার কথা ছিল। তাই আমি তোকে আর কোন সাহায্য করতে পারব না যেটুকু করেছি এটুকুই ব্যাস।

বলে আদ্র আমার দিকে শয়তানি হাসি দিয়ে চলে গেল।

জাইন বলল, নো ব্রো প্লিজ আরেকটু করো আমি একা এতো কিছু কিভাবে? আর তাছাড়া ভাবি আছে আমি একা ভাবির জন্য ধুর চলে গেল।

জাইনকে চিন্তিত হয়ে থাকতে দেখা গেল। রান্না যে কাঁচা তার নমুনা দেখতে পাচ্ছি। আমি বললাম,

আপনি যান আমি করে দিচ্ছি।

না না ঠিক আছে আমিই করি‌ ভাবি।

আপনি রান্না পারেন না। আমাকে করতে দিন সমস্যা নাই।

আচ্ছা আমি সাহায্য করি।

তার দরকার নাই আমি পারবো।

আচ্ছা থ্যাঙ্ক ইউ ভাবি।

খুশি হয়ে জাইন চলে গেল।

~~চলবে~~