অচেনা শহর ২ পর্ব-১৫+১৬

0
1263

#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[১৫]

আপনি আমার সাথে কি ঝগড়া করতে চাইছেন?

তাইতো চাইছি অনেকদিন হলো ঝগড়া হয় না।

কিন্তু আমার এখন ঝগরা করা মন নাই আমি আজকে খুবই খুশি। আমি সারাটা দিন কতটা চিন্তায় ছিলাম জানেন আপনি।

জানি তো।

জেনে শুনে আপনি আমাকে কষ্ট দিলেন তাই না।

সব সময় তো একাই কষ্ট পাও। এখন না হয় একটু জেনে শুনেই দিলাম।

যাই বলেন। ঝগড়া আমি করছি না।

কথাটা বলে আদ্রর হাত থেকে খাবার মুখে পুরে নিলাম। আদ্র আমার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে আমি উজ্জ্বল মুখ করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি‌।‌আদ্র আমার উপর রাগ করেনি। এতদিন পর আদ্রর স্বাভাবিক আচরণ দেখে যেন আমার সারা শরীরে সুখ বয়ে গেল। মন চাইছে আদ্রকে জাপটে ধরে বুকে মাথা রাখি।
জ্বরের শরীর আমার কাঁপছে খেতে এতো বিচ্ছিরি লাগছে কি বলবো তেতু হয়ে আছে মুখ তবুও আদ্রর হাতে খাচ্ছি। আদ্রর যত্নে আদর মাখা হাতে খাবার খাওয়াটা মিস করতে চাইনা। অন্যমনস্ক হয়ে খাচ্ছিলাম তো ফট করে গলায় আটকে গেল খাবার।

গলার হাত দিয়ে কেশে উঠলাম।আমার কাশি দেখে আদ্র ভয় পেয়ে গেল। উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

কি হলো তোমার?

আমি কাশির জন্য কথা বলতে পারছি না। আদ্র উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করতেছেই আমি হাত বাড়িয়ে পানি দেখালাম। পানি দেখাতেই আদ্র ছুটে পানি নিয়ে এসে খাওয়ালো পানি খেয়ে আস্তে আস্তে আমার কাশি কমে এলো।
আদ্র আমার মাথায় হারাচ্ছে। কাশি থামতেই জিজ্ঞেস করলো,
কি এতো ভাব বলো তো এখন‌ই কি হতো?

আমি বললাম, কিছু হতো না আপনি আছেন তো।

এতো বিশ্বাস কবে হলো আমার উপর।

আগে থেকেই। আপনার উপর বিশ্বাস প্রথম থেকেই ছিলো।

আদ্র আমার দিকে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি আর খেলাম না আদ্র জোর করছিল কিন্তু খাইনি‌। আদ্রকেও খেয়ে নিতে বললাম ও আমাকে খাওয়ানো প্লেট থেকে বাকি খাবার খেয়ে নিলো।আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি আদ্রর খাওয়ার দিকে। মনে মনে এটা দেখে আমি তৃপ্তির হাসি দিলাম।
আদ্র আমাকে ওষুধ খাইয়ে দিলো। তারপর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

এবার ঘুমাও।

আমি হাঁ করে আদ্র দিকে তাকিয়ে আছি অপলক।
আদ্র আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নিজেকে এত ভাগ্যবতী সুখী মনে হচ্ছে আমার। মনে মনে একটা কথাই বলছি এখন যদি আমি মরে ও যাই তবুও সেটা সুখের মৃত্যু হবে কারণ আমার পাশে আছে আদ্র আছে।আমি একা বারিয়ে আদ্রর হাত মাথা থেকে টেনে নিজের বুকের চেপে ধরলাম।

আদ্র আমার এতো সুখ লাগছে আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না।আপনি আমাকে ভুল বুঝেননি। এখনো কতো কেয়ার করেন এসব দেখলে আমার সুখে মরে যেতে ইচ্ছে করে। জানেন আমি …

আদ্র বাম হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরলো।
ঘুমাও পরে কথা শুনবো।

আমি আদ্রর হাত মুখ থেকে সরিয়ে জরানো কন্ঠে বললাম,,
আমাকে বলতে দিন।আপনাকে কতো কথা বলার আছে জানেন এক মাস আমি কতোটা কষ্ট পেয়েছি।আপনি ঠিকই বলেছিলে আপনি চলে গেলে আমি আপনার শুন্যতা অনুভব করবো ঠিকই করেছি প্রতিটা মুহুর্তে আমাকে আপনার শূন্যতা কুরে কুরে খেয়েছে। আপনি সেদিন রাগ করে কথা না বলে কেটে দিলেন আর ফোন দিলেন না জানেন আমি কতোটা কষ্ট পেয়েছিলাম।কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। রাত ভর অন্ধকারে একা কেঁদে বুক ভাসিয়েছি। আস্তে আস্তে আমি যে আপনাকে ভালো……

আদ্র বাকরুদ্ধ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কথা বলতে বলতে মাঝ পথেই ঘুমিয়ে পরলাম।
আদ্র আমাকে মাঝপথে থামতে দেখে দেখ আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। আমি যেটা ভাবছি তুমি কি সেটাই বলতে চাইছিলে স্নেহা। কথাটা ভাবতে আদ্রর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। স্নেহার মুখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে। তারপর স্নেহার ধরে রাখা হাতের দিকে তাকালো। এখনো শক্ত করে আদ্রর ডান হাত ধরে আছে স্নেহা। আদ্র স্নেহার হাত উঁচু করে হাতের উপর পরপর দুবার নিচের ঠোঁট ছোঁয়ালো।

“আমি চাই তুমি সব সময় আমার হাতে এভাবে ধরে থাকো স্নেহা। কখনো কোন পরিস্থিতিতে না ছাড়ো।”

স্নেহা আদ্র কথা শুনতে পেল না কিন্তু আদ্র নিজের মতো বলেই গেল।
তারপর স্নেহার মুখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে র‌ইলো আদ্র এই মেয়েকে ও পাগলের মতো ভালোবাসে। যার চোখেও ইদানিং নিজের জন্য ভালোবাসা দেখতে পায় সেটা দেখেই আদ্রর প্রাপ্তির আনন্দ পায়। ভালোবাসা মানুষের চোখেও নিজের জন্য ভালোবাসা দেখতে পাওয়া যে কতোটা আনন্দে সেটা একমাত্র যে দেখে সেই বুঝে।
আদ্র মাথা নিচু করে স্নেহার ঘুমন্ত অবস্থায় কপালে চুমু দিলো।
গালে হাত দিয়া আদ্র স্নেহার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

মাঝরাতে আমি চিৎকার দিয়ে উঠে বসে। আদ্র আমার পাশে শুয়েছিল। আমার চিৎকার শুনে চমকে ওঠে,,,
হাত বাড়িয়ে ডিম লাইট জ্বালিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দেখে আমার সারা শরীর ঘেমে একাকার হয়ে আছে। ভয়ে থরথর করে কাঁপছি আমি।
আদ্র ভয় পেয়ে যায় আর আমার কাঁধ ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে,,

কি হয়েছে স্নেহা তুমি চিৎকার করলে কেনো? খারাপ কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছো?

আদ্র আমি খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছি।ভাইয়াকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি ভাইয়ার খুব বিপদ।আমার ভাইয়া কে বাঁচাতে হবে সাহায্য করতে হবে ভাইয়া খুব কাঁদছিল। আমার কাছে ক্ষমা চাইছিল। তারপরই একটা ট্রাক এসে না আমি ভাইয়া কিছু তে দেবানা ভাইয়া যত খারাপই হোক আমি ভাইয়া কিছু হতে দিতে পারব না।
আমি পাগলের মত ভাইয়াকে নিয়ে নানান কথা বলে যাচ্ছি। আদ্র আমার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু এটুকু বুঝতে পারছে আমি কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছি যার জন্য এমন করছি। তাই আদ্র আমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস না করে। জরিয়ে ধরে শক্ত করে বুকের মাঝে চেপে ধরে।

স্নেহা প্লিজ স্টপ তুমি দুঃস্বপ্ন দেখেছো?কারো কিছু হয়নি দেখো তুমি ঘরে আছো?

আদ্র আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে আমি বুঝতে চাইছি না। আমার বারবার মনে হচ্ছে ভাইয়া বড়োসড়ো কোন বিপদ আসতে চলেছে। যেভাবে হোক ভাইয়ের সাথে দেখা করতে হবে আর এটা স্বপ্ন ছিল। আমি আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে গেলাম।

আমি মাথা উঁচু করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে বললাম,,,
এটা স্বপ্ন হলেও আমার ভাইয়ের জন্য চিন্তা হচ্ছে আদ্র।

তোমার জ্বর ছেড়ে গেছে ঘামে গেছো? জ্বর আসলে এমন ভুল ভাল স্বপ্ন দেখে সবাই। আমি আগে দেখতাম কত। যখন ছোট ছিলাম আমিও অনেক বাজে বাজে স্বপ্ন দেখতাম তখন আম্মু আমাকে সামলে নিতো।
আদ্র নিজের মায়ের কথা বলে নিজের মুখটা ছোট করে ফেলল।
আমি বুঝতে পারলাম কেন এমন করেছে।

আমার আম্মু এত খারাপ না স্নেহা।কিন্তু আমমুকে খুব ভালোভাবে ভুল বুঝানো হয়েছে।

আমি হালকা হেসে বললাম, সেটা আমি জানি এইসব কিছু করেছে মাইশা আপু।

মাইশার নাম শুনতে আদ্র চেয়াল শক্ত করে ফেলল।

ওর এমন অবস্থা করব ও তোমার পা ধরে ক্ষমা চাইবে দেখো। কিন্তু এই সবকিছু মাইশা একা করেনি আরেকজন আছে তাকে খুঁজে বের করতে হবে আগে।

আরেক জন কে?

জানিনা কিন্তু সেও তোমার উপর খুব কেয়ার ফুল।

মানে। অবাক হয়ে বললাম।

মানেই টাই বের করতে হবে। এখন কথা না ঘুমাই ঘুম পাচ্ছে খুব।

বলে আদ্র আমাকে বুকে নিয়ে শুয়ে পড়ল। আর আমার মাথায় একটু চিন্তা ঢুকে গেল। মাইশা আপুর সাথে আরেকজন আছে সে কে হতে পারে।

আদ্র তখন‌ই আমার কপালে কিস করলো ফট করে আমি চমকে উঠলাম। আদ্র বলে উঠলো,,
চুপচাপ ঘুমাও চিন্তা বাদ দিয়ে।

~~চলবে~~

#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[১৬]

স্নেহা তাকাও আমার দিকে। তুমি তোমার ভাইকে কোথায় দেখেছো? তার সাথে কি তোমার দেখা হয়েছে?

আমি সকাল থেকে বলে যাচ্ছি। মে ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাবে। তাই রেডি হয়ে বসে আছে।

আদ্রর দিকে তাকিয়ে বললাম,,,
হ্যাঁ আমি যে অফিসে জব নিয়েছিলাম। ভাইয়া ওই অফিসের বস ছিল।

আমার কথা শুনে আদ্র দাঁড়িয়ে পরলো আর বললো হোয়াট?আদ্রর চিৎকার শুনে আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরলাম।

অবাক হয়ে,,,,কি হয়েছে? আপনি চিৎকার করলেন কেন?

কিছু না। বিকেলে যাবো তাহলো ওই অফিসে। কিন্তু ওইটা তোমার ভাইয়ের কি করে হয় সেটা আমি বুঝতে পারছি না‌?
চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল।

কেন কি হয়েছে ?
অবাক হয়ে আদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম।

ওইটা তো মাইশার বাবার অফিস।

আদ্রর কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম।

মাইশা আপুদের।

হুম।

অসম্ভব আপনি জানেন না ওইটায় তো ভাইয়াই ছিলো আমার সাথে কথা হয়েছে ভাইয়ার।

কবে।

আমি বিছানায় বসে আদ্রকে সব বললাম। চোখে আমার জল চিকচিক করছে কতো দিন পর ভাই কে দেখেছিলাম আমি কাঁদতে কাঁদতে আদ্রকে সব বললাম। আদ্র আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। আমাকে এমন ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদতে দেখে বিরক্ত হয়ে আমার পাশে বসলো। আমার দু গালে নিজের দু হাত রেখে মাথা উঁচু করালো আমি ঝাপসা চোখে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি।

এটা তো ভালো কথা এত কাঁদার কি আছে? এতদিন পর তুমি তোমার ভাইয়াকে দেখেছো মান-অভিমানের পালা কি শেষ হয়েছে?
বলতে বলতে আদ্ব আমার চোখের পানি মুছে দিল।

না তা কখনো সম্ভব না।

মানে তুমি বলতে চাইছো তুমি তোমার ভাইয়াকে কখনো ক্ষমা করবে না বাইরে মেনে নেবে না।

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম।

তুমি দিনদিন খুব মিথ্যা বলছো স্নেহা?

আদ্রর কথা শুনে আমি বিস্মিত হয়ে দিকে তাকিয়ে আছি।

আমি কি মিথ্যা বললাম?

এই যে বললা তোমার ভাইকে ক্ষমা করতে পারবে না।

পারবে নাই তো ভাইয়া যা করেছে তারপর তাকে আমি কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা। তাকে শুধুই আমি ঘৃণা করি।

সত্যি শুধু ঘৃণা করো ভালোবাসো না।

সাথে সাথে উত্তর দিতে পারল না চুপ করে আছি। সত্যি কি ভাইয়া কি শুধু ঘৃণা করি ভালো কি বাসি না। দম বন্ধ হ‌ওয়া কষ্ট হচ্ছে। ভাইয়া কে আমি তো ভালোবাসি এখনো। খুব ভালোবাসি ভাইয়াকে যখন অফিসে দেখলাম আমার একটুও ঘৃনা রাগ আসে ছিল না। মন চাইছিল দৌড়ে গিয়ে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করি।
আপন মানুষ এত অন্যায় করলেও কেন তাদের ঘৃণা করতে পারিনা। কেন তাদের জন্য বুকের ভেতর কষ্টে ফেটে যায়। কেন তাদের ভুলে থাকতে পারিনা?

কি হলো ভাইয়ের কথা ভাবছো তাইনা? সে তো কাল রাত থেকে ভেবেই যাচ্ছ কত চোখের জল ফেললে তার জন্য। তবুও বলবে তাকে তুমি ভালোবাসো না।এখনো তার জন্য রেডি হয়ে বসে আছো কিনা কি স্বপ্নে দেখেছো তাই?

আপন মানুষগুলো কেন আমাদের এত কষ্ট দেয় বলতে পারেন? কেন তাদের ভুলে থাকতে পারিনা।
বলতেই ফুঁপিয়ে কাঁদছে লাগলাম।

উফফ আবার শুরু করলে।এমন করে কাঁদলে কিন্তু নিয়ে যাব না তোমার ভাইয়ের কাছে। কান্না অফ করো।

আমি অফ করছি না খুব কান্না পাচ্ছে আমার। কিন্তু আদ্রর জন্য কাঁদতে পারলাম না ও আমার কান্না থামিয়েই ছারলো।
আমি আদ্রকে এক হাতে জরিয়ে বুকে মাথা রাখলাম আর বললাম,

আপনি মায়ের কথা বলেননি আর।

নাহ।

আমি আদ্রর বুকে থেকে মাথা তুলে বললাম,,

কেন?

তাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি।

ওই বাসায় যাবেন না।

না।
নিলিপ্ত ভঙ্গিতে বলল আদ্র।

আদ্র কথা শুনে আমি চমকে মাথা তুলে ফেললাম।
কি সব বলছেন যাবেন না মানে? যাবেন না কেন?

যেখানে আমার বউয়ের জায়গা হয় নাই সেখানে আমি কি করে যাব?

আমার জন্য নিজের পরিবারকে ছাড়বেন?

আদ্র কিছু বলল না চুপ করে আছে।

আমি আদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম ও কষ্ট পাচ্ছে। সবাই তার পরিবারকে খুব ভালোবাসে আমি চাইনা আমার জন্য আদ্র নিজের পরিবারকে হারাক। আদ্রর মুখটা একদম মলিন হয়ে গেছে। ও যে ওর পরিবারকে কতটা মিস করে ওর মুখ দেখলেই বোঝা যায়।

আমি আদ্রর হাত আঁকড়ে ধরে বললাম,,
আদ্র‌ আপনি আমার জন্য নিজের পরিবারকে নিজে থেকে দূড়ে রাইখেন না। পরিবার সবার জন্য কি সেইটা আমি বুঝি? আমার জন্য যদি আপনি পরিবার ছাড়েন তাহলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা। কেউ তো আমাকে পছন্দই করেনা সেখানে আমি না থাকাই ভালো আপনি বরঞ্চ আপনার পরিবার নিয়ে….

কথার মাঝে আদ্র আমার হাত ছাড়িয়ে নিল।
আবার তোমাকে ছাড়ার কথা বলবে।সবসময় অযৌক্তিক কথা বলো কেন আর কে বলেছে আমি আমার পরিবার ছেড়ে দিয়েছি। আমি না তোমাকে ছাড়বো আর না আমার পরিবারকে।তাদেরকে ভুল বোঝানো হয়েছে সেই ভুলটা যে বুঝিয়েছে
সেই ভাঙ্গাবে তার পর আমি আবার আমার পরিবারে ফিরে যাব। যেখানে আমার বাবা-মা আর আমার বউ থাকবে আমার সাথে।

আমি আদ্র দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
তখনই হুড়মুড় করে জাইন এসে ঢুকলো আমাদের রুমে। আমি তখন আদ্র হাত টেনে ধরে ছিলাম কারণ আদ্র আমার উপর রাগ করে আছে। তখনই জাইন আশায় তাড়াতাড়ি হাত ছেড়ে দাঁড়িয়ে পরি।

আদ্র ব্রো একা একা আর ভালো লাগেনা ক্লান্ত হয়ে গেলাম।এবার আমাকে একটু বাইরের দিকে চক্কর দিতে হবে দেখি কোন গার্লফ্রেন্ড বানাতে পারি কিনা। তোমরা দুজন তো আর আমার দিকে নজর দাও না এদিকে আমি এক কোনায় পড়ে আছি একা আমারও তো একজন সঙ্গী দরকার।

আদ্র বললো কোথায় যাবি?

দেখি কোথায় যাওয়া যায়।

চল আমরাও যাই একা সমস্যা হবে না তোর।

না না তোমাকে নিয়ে ভাবীর চোখে আমি অপরাধী হতে চাই না। তুমি বরং ভাবির সাথে থাকো আর রোমান্স করো। আমি একা গিয়ে দুটো হয়ে আসবো নি।

বলে জাইয়েন চলে গেল।

আমি এগিয়ে এসে আজকে বললাম আপনি রাগ করেছেন আমার উপর?
মুখটা ছোট্ট করে বললাম।

ফট করে আদ্র আমার কোমর জড়িয়ে ধরলো। আমি চোখ বড় বড় করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি।
কি করছেন কি?

রোমান্স করছি দেখলেনা। জাইন কি বলে গেল ওর কথাটা তো রাখতে হবে তাইনা।

আপনি না আমার উপর রাগ করলেন।
অবাক হয়ে ছোটানো চেষ্টা করতে বললাম।

রাগ করলে রোমান্স করতে হয় বেশি বেশি।

বলতে বলতে আদ্র ফট করে আমার ঠোটের উপর শুকনো একটা চুমু খেলো। ঠোঁটের ওপর আদ্রর স্পর্শ পেয়ে আমি বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমি ফ্রিজ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি মুখের ভেতর যেন হাতুড়ি পেটা হচ্ছে।
____________

বাইরে এসে জাইন ভাবল কোথায় যাওয়া যায়।
একা একা কি কিছু ভালো লাগে ধুর। আদ্রর গাড়ি তে ওঠে স্টার দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।কিছূ দূরে এসে গাড়ি থামিয়ে ভাবল কি করা যায়? তখনই কারো কথা মনে পড়ে ফোন নিল দুই তিনবার ভেবে তার নাম্বারে ডায়াল করলো। নাম্বার রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ হলো না। ঘড়িতে টাইম দেখে নিল। তারপর ঠোটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে নিজের গন্তব্যে ছুটলো।

টিফিন টাইমে আশা নিজের ফ্রেন্ড এর সাথে কলেজের বাইরে এলো। তখনই গেটের বাইরে সে একজন কে দেখেই থমকে গেল। তার দিকে চোখ সরে পাশে তাকালো না ভাই আসেনি তাহলে এই লোকটা এখানে কি করছে?
জাইন আশাকে দেখেই ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলল তারপর বড় বড় পা ফেলে আশার সামনে এসে দাড়াল।

হাই,

জাইন এগিয়ে সেই হাই বললো আশা অবাক হয়ে জাইনের দিকে তাকিয়ে আছে আশার ফ্রেন্ড ও।

আপনি এখানে কি করছেন? ভাইয়া তো আসেনি?

কি আর করব তোমার সাথে আড্ডা দিতে এলাম?

কি?

তোমার ভাই তোমাকে আমার সাথে যেতে বলেছে তাই নিতে এলাম আমারও তো তোমার সাথে আড্ডা দেওয়ার ইচ্ছে নাই।

ভাই আমাকে যেতে বলেছে কোথায়?
অবাক হয়ে বলল আশা।

হ্যাঁ বলতো তোমার ভাই যেখানে থাকে সেখানে। যাবে কিনা বল?

ভাইয়া নিজে না এসে আপনাকে কেন পাঠালো?

বোকা মেয়ে তোমার ভাই কিভাবে সেতো তার বউ নিয়ে বিজি।

আপনি সবসময় কথা বলেন কেন ভাবি কি ভাইয়ার কাছে।

তো কার কাছে থাকবে আমার কাছে।

আপনি খুব বাজে লোক তো।আমি কি বলেছি আপনার কাছে থাকবে? সব সময় রং কথা বলা।
আশার রাগ নিয়ে বলল লোকটা সব কথায় তেরাম কি করে? ফাজিল লোক একটা!

হুট করে জাইন আশার গাল টেনে ধরে বললো,,
সো সুইট রাগলে তোমাকে জাক্কাস লাগে।

জাইনের কথা শুনে আশা ভ্যাবাচ্যাকা খেলো। স্তব্ধ হয়ে জাইনের দিকে তাকিয়ে আছে।
জাইন হাত সরিয়ে নিতেই নিজেই নিজের গালে স্পর্শ করে জাইনের দিকে তাকাল,,,
অসভ্য লোক আপনি আমার গালে হাত দিলেন কেন?

তুমি রাগলে কেন?

আমারই ইচ্ছে হয়েছে। আমি রাগছি আপনি আমার গালে হাত দিবেন কেন?

তুমি রাগলে বলেই তো আমার হাতটা তোমার গালে চলে গেল।এটা আমার দোষ কোথায় তুমি রাখলে তো তোমার গালটা লাল হয়ে যায় আর আমার হাতটা….

আপনি একটা অসভ্য লোক চলে যান আপনার সাথে আমি কোথাও যাবো না। এই সাথী চলতো।

বলে আশা রেঘে গিয়ে সাথীর হাত ধরে চলে যেতে চাইলো। জাইন একপ্রকার লাফিয়ে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,,

আরে তোমার ভাই তো তোমাকে যেতে বলেছে যাবেনা।

না আপনার সাথে আমি কোথাও যাবো না আপনার মত অসভ্য লোকের সাথে আমি কোথাও যেতে চাই না।

~~চলবে~~