#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[১৭]
অফিসে এসে আমার পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেল।এখানে ওর ভাই নাই এমনি কি সবাই বলছে সিগ্ধ নামের কাউকে চেনে না কি মুশকিল? আমি এতো সব শুনে অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেলাম। আদ্রর হাত খামচে ধরে দাঁড়িয়ে আছি। আদ্র আমাকে ধরে লিফটে উঠে এলো।
আমি আদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,,
বিশ্বাস করেন আদ্রর আমি ভাইয়ার সাথে এখানেই কথা বলছিলাম। কিন্তু ভাইয়া কোথায় গেল।
আদ্র বলল,,,, স্নেহা আমার মন হয় সব তোমার মনের ভুল সব। এইখানে কেউ নেই যে চিনি তোমার ভাইকে।দেখলে তো সবাইকে বললে তোমার ভাইয়ের নাম কেউ জানেনা আর আমরা আজকে মাইশার বাবাকে দেখতে পেলাম।
আদ্রর কথা শুনে আমার রেগে গেলাম।
আপনি কি বলতে চান আমি সব ভুল দেখেছি? আমি যে কথা বলেছি ভাইয়ের সাথে সেই সবকিছু ভুল? আমি নিজেই অফিসে জব করেছি। সেটা আপনিও জানেন আমি এখানে জব করেছি।আমি ভাইয়াকে দেখেছি আর আমি ভাইয়ের সাথে কথা বলছি এটাই প্রমান করবোই।
আদ্র এগিয়ে এসে স্নেহা ছুঁতে গেলে স্নেহা বলে আপনার আমাকে বিশ্বাস করতে হবে না আমি আমার ভাইকে খুঁজে বের করবই।
আদ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে, ওকে তোমাকে বিশ্বাস করছি প্লিজ রাগ করো না।
আপনি আমাকে বিশ্বাস করছেন না আপনার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
আদ্র বলে উঠেন আমাকে মানাতে পারলো না।আমি আবার পাশে দাড়িয়ে শুধু ভেবে যাচ্ছি ভাইয়া কোথায় গেল আচ্ছা মাইশার বাবা ভাইয়াকে কোন বিপদে ফেলে নি তো?হট করে ভাইয়া কি অফিসে সবাই চেনে না বললে কেন বুশরা আপুর সাথে একবার দেখা করতে হবে চতুর্থ তলায় আমাকে একটু যেতে হবে
কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার চতুর্থ তলায় আমাকে ঢুকতে দেওয়া হলো না।
অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি কিছুই মাথায় ঢুকছেনা কেন? আমাকে ঢুকতে দেওয়া হলো না। পেছন থেকে আদ্র এসে আমার কাঁধে হাত রেখে বলল।
চল আমার সাথে এখানে দাড়িয়ে থেকেতো লাভ নেই তাইনা। এখান দাঁড়িয়ে থাকলে তো আর তুমি তোমার ভাইকে খুঁজে পাবে না তোমার ভাই যেখানে আছে আমি তোমাকে খুজে এনে দেব দেখো। আমার উপর বিশ্বাস রাখ চলো বাসায়।
আমি কিছু বলতে পারলাম না তাকে আর তার কথা আমার ভরসা আছে আমি আদ্র সাথে বাসায় ফেরার জন্য হাঁটতে লাগলাম।
সারা রাস্তা ভাইয়া জন্য ঘ্যান ঘ্যান করতে করতে লাগলাম। আদ্র আমাকে এক হাতে ধরে রেখেছিল সব সময়।গাড়ি জন্য ওয়েট করছি তখনই পরিচিত একটা গাড়ী এসে আমাদের সামনে থামল গাড়ি থেকে বেরিয়ে এল নিশাত সে তার ইউনিফর্ম পরা। আমাদের কাছে এসেই দাঁড়ালো আদ্র দিকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে তাকালো,,
আমি আদ্রর পরিচয় দিলাম। আদ্রর পরিচয় নিশাত শান্ত ভঙ্গিতে আদ্রর দিকে তাকিয়ে রইল।
তারপর আচমকাই মুখে হাসি ফুটিয়ে আদ্রর দিকে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ালো,,,
আদ্র নিশাতের মুখে হাসি দেখে নিজেও হেসে হ্যান্ডশেক করল।
কেমন আছো তোমরা?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি কেমন আছেন? কাকিমা কেমন আছে?
নিশাত বলল,, ভালোই।
আপনি এখানে আপনার ডিউটি নাই।
হ্যাঁ আসলে আমি একটা ইমারজেন্সি কাজে যাচ্ছি হসপিটালে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে বড়োসড়ো।
এক্সিডেন্টের কথা শুনে আমার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো।আমিতো স্বপ্নে এমনটাই দেখেছিলাম ভাইয়া এক্সিডেন্ট হয়েছে নিশাত আবার কার কাছে যাচ্ছে কার এত বড় এক্সিডেন্ট হলো।
উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম কার এক্সিডেন্ট হয়েছে চিনেন আপনি তাকে নাম কি তার?
নিশাত বোকা হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,
আমি কিভাবে চিনবো আমি যাকে দেখিনাই পুলিশে কেশ হয়েছে কারণ এক্সিডেন্ট হয়তো বা কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে।
ইচ্ছাকৃত শুনে আমি আরও ভয় পেয়ে গেলাম আদ্রর দিকে তাকিয়ে বললাম,,,
আদ্র চলেন না আমরাও হসপিটালে যায়। আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে ওইখানে গেলে আমি আমার ভাইয়াকে পাব।
পাগল হয়েছে তুমি তুমি হসপিটালে কেন যাবে?আর ওইখানে গেলে পাবে! তোমার কি মনে হচ্ছে এক্সিডেন্ট হয়েছে যার সে তোমার ভাই?
আদ্রর কথা শুনে আমি আদ্রর শক্ত করে ধরলাম,,
আমি কিছু জানিনা আমি হসপিটালে যেতে চাই প্লিজ চলুন।
আদ্র বিরক্তের কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে,,
আমি আবার হাত নাড়িয়ে বললাম কি হলো যাবেন না?
আমার সাথে না পেরে আদ্র রাজি হয়ে গেল আমার মনের শান্তির জন্য। নিশাত যেহেতু ছিল তাই নিশাত আমাদের বলল তার সাথে যাওয়ার জন্য।
সারারাস্তা আমি আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে এসেছি যেন ওইটা ভাইয়া না হয়। আমার স্বপ্ন যেন সত্যি না হয়।আদ্র আমার এত ভয় পাওয়া দেখে নিজের কাঁধে আমার মাথা জোর করে রেখে চোখ বন্ধ করে থাকতে বলল।
নিশাত মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছিল তখনই ওর চোখ যায় আয়নার দিকে।যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে স্নেহা আদ্রর কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে আর বাম হাত নিজের দুই হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে আছে। নিশাতের বুকের ভেতর রক্তক্ষরণ হতে লাগল চোখ জ্বলে উঠছে ও কোনরকম ব্রেক কষে গাড়ি থামিয়ে ফেলল।আচমকা গাড়ি থামায় স্নেহা আর আদ্র দুজনে সামনে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে?নিশাত সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো আমি একটু পানি খাব?
কথাটা বলেই সামনে থেকে পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে গলা ভিজিয়ে নিল তারপর আবার ড্রাইভ শুরু করলো।
হসপিটালে এসে আদ্র নিশাত কে রেখেই আমি তোরে আগে চলে এলাম আমি আগেই জেনে নিয়েছি কেবিন নাম্বার ৪৭। কোনরকম দৌড়ে সেখানে গেলাম দুই তালায় গিয়ে জানতে পারলাম ভেতরের রোগীর অপারেশন চলছে। আমি চিন্তায় পায়চারি করছি একটু পরে নিশাতা আর আদ্রর তো এক প্রকার দৌড়ে আসলো।
15 মিনিট পর ডাক্তার বের হয়ে এলো। আর সে বলে সেই নাকি আসার সময় নিয়ে এসেছে রাস্তায় পড়ে ছিল।প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে এখনই এ পজেটিভ রক্ত লাগবে।তাদের এইখানের এ পজেটিভ রক্ত নাকি সকালে শেষ হয়ে গেছে এখন আনতে পাঠিয়েছে এখনো আনা হয়নি আমি থমকে গেলাম পজেটিভ রক্ত শুনে কারণ ভাই এ রক্ত হতে পজেটিভ। যত তাড়াতাড়ি রক্ত দেবে ততো নাকি ভালো না হলে বড় হয়েছে হয়ে যেতে পারে। কারন মাথায় নাকি অনেক আঘাত পেয়েছে।
আমার রক্তের গ্রুপ ও যেহেতু এ পজেটিভ আমি ভাইকে কিনা। না দেখে আগে বললাম আমার রক্ত নিন।
কথাটা শুনে আদ্র আমার হাত শক্ত করে ধরে টেনে পাশে নিয়ে বলল,,
কি সব বলছো তুমি রক্ত দিবে?
আমি হ্যাঁ বললাম।
পাগল হয়েছ তুমি এখন রক্ত দিবে তোমার শরীরের কি অবস্থা তুমি জাননা কতটা দুর্বল হয়ে পড়েছে এখন রক্ত দিয়ে তোমার ক্ষতি হতে পারে।
আমি আদ্রর হাত ধরে বললাম আমার একটু ক্ষতির জন্য একজনের মৃত্যুর কারণ হতে পারব না আমি রক্ত দেবো আমার কিচ্ছু হবেনা দেখেন।
আদ্র কিছু বললোনা রাজী হয়ে গেল আমার রক্ত নেওয়ার জন্য একটা কেবিনে নেয়া হলো। এক ব্যাগ রক্ত নিল। আরো লাগতো একব্যাগ নেওয়ার পড়ে রক্ত এসে হাজির
তাই আর আমার রক্ত নিলোনা রক্ত দেওয়ার পর মাথাটা চক্কর মারছে উঠে দাঁড়াতে পারছি না। শরীরটা ঝিমঝিম করছে।আমি বিছানাতে উঠতে যাবে তখন নার্স এসে বলল আমাকে রেস্ট নেওয়ার জন্য।কিন্তু আমার তো জানতে হবে ওইটা আমার ভাইকে না আমার উঠতে হবে। হতে যাব তখনই আদ্র আর নিশাত আসলো হাতে ফলের ব্যাগ নিয়ে।
আদ্র এসে আমাকে জোর করে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল,,,
উঠছো কেন নার্স কি বললোঃ কি শুনতে পাওনি! চুপচাপ শুয়ে থাকো!
কিন্তু আমার ভাই।
উফ আমার মাথাটা নষ্ট করো না প্লিজ। আমাকে এত কষ্ট দিতে তোমার কেমন লাগে। এখনো আইসিইউতে আছে তোমার ভাই যদি হয়ে থাকে।আর তুমি কি একটু পর তাকে দেখতে পারবেনা তাকে কি এই হসপিটাল থেকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবে কেউ।
আদ্রর ধমক শুনে আমি চুপ করে গেলাম। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে আর কিছু বলল না। আঙ্গুর বের করে আমার মুখে দিল।নিশাত এখানে ছিল বিদায় নিল আমাদের থেকে অনেক এখন আবার অফিসে যেতে হবে কারণ ওসব শুনে নিয়েছে আর দুজন পুলিশ পাঠিয়ে দিয়েছে এখানে থাকার জন্য।
আর খাব না।
আমার আর খাব না শুনে আদ্র চোখ রাঙ্গালো।
এমন করছেন কেন এত কি আমি খেতে পারি?
আদ্র কমলা আমার মুখে দিল আমি হাত বাড়িয়ে এক পিস আদ্রর মুখে পুরে দিলাম।
এবার আপনি খাবেন আমি অনেক খেয়েছি।
রক্ত কি আমি দিয়েছি যে আমি খাব?
কিন্তু কে শোনে কার কথা আমাকে যতবার দিবে আমি তোর আদ্রর মুখে জোর করে ঢুকিয়ে দিচ্ছি। এভাবে দুজনের খাওয়া-দাওয়ার কিছুক্ষণে শেষ হলো।
~~চলবে~~
#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[১৮]
আমি ভয়ার্ত মুখ করে আদ্রর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আদ্র রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কঠিন করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,,
“এইজন্যই বলেছিলাম হসপিটালে যেতে হবে না শুধুমাত্র নিজের আন্দাজের এত কিছু করে ফেললে। এখন যাও ভাইয়ের সাথে আলাপ করো।”
আমি ভয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি শুধু। একটু আগে আমি আর আদ্র কেবিনে ঢুকেছিলাম ভাই কিনা শিওর হওয়ার জন্য। আর ভেতরে গিয়ে বুঝতে পারলাম এটা আমার ভাই না। শ্যামলা করে একজন বয়স্ক মানুষ কেবিনে শুয়ে আছে।বয়স্ক মানুষ দেখে আদ্র বুঝে গেছে এটা ভাই হবেনা সেটা দেখেই আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে ছিল যেন চোখ দিয়ে আমাকে ভষ্স করে ফেলবে।আমি ঢোক গিলে আদ্রর দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনের লোকটা কাছে গিয়ে একটু দেখে চলে আসি কারন লোকটা এখন ঘুমিয়ে আছে।
আদ্র আমার হাত টেনে ধরে কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথাটা বলে।
এখন ও লোকটার বাসায় মানুষ আসেনি। আদ্র আমাকে কেবিনের বাইরে এসে আমাকে বকে যাচ্ছে তখন দুই তিনজন লোক এলো ছুটি কাঁদতে কাঁদতে। আমি আদ্রর বকা ইগনোর করে সেদিকে তাকিয়ে আছি তারা ওই লোকটার বাসায় লোক বুঝতে পারলাম।
অনেক কাঁদছে ডাক্তার এর সাথেও কথা বলছে।
তাদের কষ্ট দেখে আমার চোখে জল চলে এলো। এখন যদি ওনার জায়গায় ভাইয়া থাকতো তাহলে তো আমি কাঁদতাম। এভাবেই ভেঙে পড়তাম কিন্তু আল্লাহ সহায় ভাইয়া নয় সে ভাইয়ার যেন কিছু না হয়। আদ্র আমার হাতের বাহু শক্ত করে ধরে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলো।
হসপিটাল বাইরে আসতেই আমি আদ্রকে সরি বললাম। আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো।
আমি মলিন মুখ করে আদ্রর বাম সাইডের দিকে তাকিয়ে আছি ও দৃষ্টির সামনে। রেগে আমার দিকে তাকাচ্ছে না।
“সরি বললাম তো। আমার ভুল হয়েছে।আপনি তাও রাগ করছেন কেন? এখানে ভাইয়া থাকতেও পারতো তাইনা।”
আদ্র কড়া চোখে আমার দিকে তাকালো,, “আবার আন্দাজ করছো? তোমার এই ফালতু কথার জন্য কতো ঘুরতে হলো বলো তো।আমি বলেছিলাম তোমার ভাইকে খুঁজে দেবো কিন্তু না উনি নিজেই খুঁজবে। এখন কি হলো?”
রাগ করে আদ্র আর সারা রাস্তা কথা বললো না আমি কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বাসায় ফিরে এলাম। বাসায় আসতেই আদ্র আমার হাত ছেড়ে গটগট করে আগে আগে চলে গেল।আমি পেছন মুখ গোমড়া করে আসলাম।
ভেতরে এসেই দেখি আশা সোফায় বসে আছে রেগে ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে জাইন। দুজন কিছু বলে ঝগড়া করছে। আশা বসেছিল ঝগড়া করতে করতে পারে দাঁড়িয়ে পরল। দরজার কাছে আদ্র ও ব্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে। আমি গিয়ে আদ্র পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হা করে তাকিয়ে আছি।
“এসব কি হচ্ছে আশা এখানে কেন?”
আদ্রর কথায় ঘাড় ঘুরিয়ে আদ্রর দিকে তাকিয়ে বললাম,,,” আমি কিভাবে জানবো?”
আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে সামনে পা ফেলে ওদের কাছে গেল আমি ও পেছনে পেছনে আসলাম।
“আশা তুই এখানে কেন?”
আদ্র কথা শুনে দুজনে থেমে যায়। আশা ভাইয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে জাইন এর দিকে তাকায়,,,
এই লোকটা টিফিনের সময় ওর সাথে ঝগড়াঝাটি করেছে কোন রকম সেখান থেকে ক্লাসে চলে গিয়েছিল ক্লাস শেষ করে বের হয়ে একে কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। তখন এক প্রকার বাধ্য হয়ে আসি তখন যেহেতু দাঁড়িয়েছিল তারমানে সত্যি মনে হয় যেতে বলেছে। কিন্তু এসেই দেখি বাসা ফাঁকা ভাইয়া ভাবি কেউ নাই। রেগে ওনাকে জিজ্ঞেস করলে উনি বলে উনিও নাকি জানেনা। তখন আমি জানতে পারি ভাইয়া নাকি আমাকে আসার কথা কিছুই বলে নাই। উনি আমাকে মিথ্যে বলে এখানে এনেছে । সেটা জানার পরে উনার সাথে তুমুল ঝগড়া লেগে যায় আর তখনই ভাইয়ের কথা শুনে চমকে উঠে থেমে যায়।
আশা কি বলবে বুঝতে পারছ না। কি বা বলার আছে এই অসভ্য লোকটা ওকে মিথ্যে বলে নিয়ে এসেছে। হ্যাঁ এটাই বলবে।রেগে জাইনের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে আদ্রকে তখনি ছুটে এসে জাইন বলতে লাগে।
ব্রো আমি আসলে বেড়াচ্ছিলাম তো তোমার বোনের সাথে দেখা হয়ে গেল। আমি গাড়ি নিয়ে তোমার বোনের কলেজের দিগে চলে গিয়েছিলাম তো আশার সাথে দেখা হল কথা বললাম। ও তখন বলল ওর নাকি এখানে আসার ইচ্ছে তোমার সাথে ভাবির সাথে থাকার ইচ্ছে। তাই আমি আরকি ওকে নিয়ে আসলাম।
শেষের কথাটা আমতা আমতা করে বলল,,,
আদ্র জাইন কে পাশ কাটিয়ে আশার কাছে গিয়ে বলল,,
তোর এখানে আসাটা ঠিক হয় না আশা। ওই দিকে বাসার সবাই হয়তো তার জন্য চিন্তা করছে কাউকে কি ফোন করে কিছু বলেছিস।
আশা মাথা নেড়ে না বলল।
কটমট করে জাইনের দিকে তাকালো। জাইন আশার তাকানো দেখে কানে হাত দিয়ে সরি বলল আর ইশারায় সত্যিটা বলতে মানা করলো। এই সবকিছুই পিছন থেকে আমি লক্ষ করলাম। আশা কিছু বলতে গিয়েও বলল না।
আদ্র নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে বাসার নাম্বারে কল করে আশার হাতে দিল।
সবাইকে বল যে আমার এখানে আছিস তুই দুইদিন এখানে থাকবি।
আশা মাথা নেড়ে ফোনে কথা বলতে লাগল আদ্র ফোন রেখে উপরে চলে গেল।
________________
নিশাত হসপিটাল থেকে বের হয়ে সোজা বাসায় চলে আসে। আদ্র আর স্নেহাকে ও মিথ্যা কথা বলেছে। ওর এখন কোন ইম্পর্টেন্ট কাজ নেই অফিসে। কিন্তু আদ্র আর স্নেহাকে এত কাছাকাছি দেখে ওদের ভালোবাসা দেখে নিশাতের বুকের ভেতরটা পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছিল। সহ্য করতে পারছিল না। তাই তো কোন রকম কেটে পরেছিলো। চোখের সামনে স্নেহার সাথে দেখে ভেতরটা ফেটে যাচ্ছিল আমার। মনের ভেতর সূক্ষ্ম কিছু অনুভূতি তৈরি হয়েছিল স্নেহা জন্য যাওয়ার জীবনে অন্য কেউ আছে জানার পর সেটা নিবারন করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু চাইলেই তো সবকিছু হয় না। তেমনি আমার মনের কোনে থেকে স্নেহাকে মুছতে পারিনি। আমি নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করেছি কিন্তু নিজের বাসায় প্রতিদিন স্নেহাকে দেখে আবার সূক্ষ্ম অনুভূতি আবার জাগ্রত হয়ে যায়। তিনদিন আগে যখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না পাগলের মত হয়ে গেছিলাম। পরদিন বাবা মানে যাকে আমি বাবা বলে মানে না সে এসে জানায় দেশে ফিরেছে স্নেহা তার কাছে আছে। তার স্নেহার খোঁজ করেনি।যেটা আমার নয় সেটা নিয়ে পাগলামো করার কোন মানে হয় না। স্নেহার কাছে গেল আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারব না আমি জানি। তাই দূরে থাকাই ভালো।
___________________
পরদিন আমার ভার্সিটিতে যেতে হলো কারণ আজকে ইনকোর্স এর রেজাল্ট দিবে। সকাল দশটার দিকে বেরিয়ে এলাম আদ্র আমাকে গাড়ি করে পাঠিয়ে দিয়েছে আমি নিতে চাইছিলাম না। ওনাকি কি কাজ আছে তাই আমার সাথে যায়নি না হলে যেত।
ভার্সিটিতে এসে রেজাল্ট শুনে নিলাম। কোনরকম পাস করেছি বেশি ভালো হয়নি। ভালো হবে কি করে তখন তো আমি আদ্রর চিন্তায় মশগুল ছিলাম। অদ্ভুত হলাম অন্তরা আসেনি রেজাল্ট জানার জন্য। একাই রেজাল্ট টা জেনে নিলাম। অন্তরা কে কল করলাম ফোন অফ। কিছু বুঝতে পারছিনা। গেটের বাইরে সে রিক্সা নিলাম গাড়ির আমাকে রেখে চলে গেছে। আদ্র আমাকে বলেছিল আসার আগে ফোন করে গাড়ি নেওয়ার জন্য কিন্তু আমি আর ফোন করলাম না। রিকশায় করে যাব রিক্সা পেয়ে গেলাম উঠে পরলাম। কিছুদূর যাওয়ার পরে একটা জিনিস দেখে চমকে উঠলাম,
আমার সামনে সিগ্ধ ভাইয়া। কেমন উদাস লাগছে ভাইয়া কে দেখতে উদাস হয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। আমি রিক্সা থেকে দেখতে পাচ্ছি অনেকটা দূরে ভাইয়া। কিন্তু ভাইয়াকে চিনতে আমার একটু ভুল হলে না দূর থেকে আমি ভাইয়াকে চিনে ফেলেছি। ভাইয়ার সারা শরীর ঠিক আছে। কিন্তু ভাইয়ের এমন উদাস হয়ে কোথায় যাচ্ছে? আমি রিকশা ওয়ালাকে তাড়াতাড়ি বললাম এগিয়ে যাওয়ার জন্য।
আমার চোখে মুখে খুশির ঝলক।যে ভাইয়াকে দেখে আমার রাগ হতো আজকে তাকে পেয়ে যেন আমি আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছি।কালকে কত খুজলাম কিন্তু পেলামনা আজকে ভাইয়াকে পেয়ে গেলাম।
ভাইয়া যখন রাস্তায় মাঝামাঝিতে তখনই আমি খেয়াল করলাম অপর পাশ থেকে একটা টাকে এগিয়ে আসছে। গাড়িটা এমন ভাবে ছেড়েছে যেন সামনে লোকটাকে একদম উড়িয়ে দেবে। গাড়িটা দেখে আমার বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। স্বপ্নের কথাটা মনে পড়ে গেল। অদ্ভুত গাড়িটা হন বাজাচ্ছে কিন্তু ভাইয়া হাঁটার গতি বাড়াচ্ছে না কেমন হেলেদুলে আস্তে আস্তে হেটে যাচ্ছে।কিন্তু অপর পাশের গাড়িটা তো একদম চলে এসেছে আমি রিকশায় বসে ছটফট করতে লাগলাম। ভাইয়া দৌড় কেন দিচ্ছে না আর গাড়িটা থামছে না কেন?
ভয়ে আমার হাত পা কাপাকাপি করতে লাগলো মনের ভেতর অজানা ভয়ে এসে ভর করলো। গাড়িটা কি ইচ্ছে করে ভাইয়ের ক্ষতি করতে চাইছে। আমি রিকশাওয়ালাকে বলল, রিকশা থামান প্লিজ তাড়াতাড়ি।
উত্তেজিত হয়ে বললাম। রিক্সাওয়ালা ভয় পেয়ে থামিয়ে দিল। আমি এক প্রকার লাফিয়ে রিক্সা থেকে নেমে পড়লাম। আরে আস্তে পড়ে যাবেন তো আর আমিতো আপনার বাসায় এখনো আসিনি। নামলেন কেন আমি উনার কথায় তোয়াক্কা করলাম না দৌড় দিলাম। কিন্তু দৌড় দিয়েও কাজ হলো না আমার পা থেমে গেল।আমি বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম চোখের সামনে এমন মর্মান্তিক দৃশ্য আমি সহ্য করতে পারলাম না। আবার নিজের আপন একজনকে নিজের চোখের শেষ হয়ে যেতে দেখছি রক্তে রাস্তা ভেসে গেল। চোখের সামনে ভাইয়ার দেহটা ছিটকে পড়ল।আমার স্পন্দন থেমে গেল। আবার আপন মানুষের মৃত্যু আমি সহ্য করতে পারলাম না। এত চেষ্টা করে আমি ভাইয়াকে বাঁচাতে পারলাম না। চোখের সামনে তার এমন পরিণতি দেখে আমি পাথর হয়ে গেলাম। ভাইয়া বলে চিৎকার করে ওইখানে মুখে হাত দিয়ে বসে পড়লাম।এসব আমি দেখতে পারছি না।
~~চলবে~~