অচেনা শহর ২ পর্ব-২৫

0
832

#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[২৫]

সারাটা দিন আমার অবাক হয়ে কাটলো আদ্রর কথাটা শুনার পর থেকে থ মেরে ছিলাম। সন্ধ্যায় আদ্র, রাহাত, রাইসা, আয়রা, আশিক আদ্রর সব ফ্রেন্ড এসেছে। জাইন, আশা সবাই ছাদে করা হয়েছে স্টেজ। অন্তরা আর আশা আমাকে ইচ্ছা মতো ভূত সাজাচ্ছে পার্লার থেকে লোক আনতে চেয়েছিলো আমি মানা করে দিয়েছি। এমনিতে তিনদিন সাজতে হবে। কিন্তু এরা ও কম না এতো এতো সাজাচ্ছে। কখনো এতো মেকাপ করিনি তাই খুব অস্বস্থি হচ্ছি পাপড়ি লাগাতে এলে আমি লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে পরি।

” কি হলো?”

“আমার চোখে কি পাপড়ি নাই যে নকল তা দিচ্ছিস কেন?”
রেগে।

“আরে আহাম্মক আয় এটা না দিলে ভালো লাগবে না। ”

“দরকার নাই এতো ভালো লাগার আমি আর কিছু দেব না।”
বিরক্ত হয়ে। কিন্তু পারলে সে এদের সাথে আশা এসে আমাকে অনুরোধ করতে লাগলো আর টেনে নিয়ে গেল। যন্ত্রনা উফ।
শেষে হার মেনে নিতে হলো।

ছাদে আসতেই সবার দিকে নজর পরলো অনেক দিন পর আদ্রর সব ফ্রেন্ডকে দেখলাম।
সবার সাথে কথা বললাম। তারপর আদ্রর দিকে তাকিয়ে দেখি হা করে তাকিয়ে আছে। সবাই সেটা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতে লাগলো আমি লজ্জা পেলাম খুব আদ্রর সেদিকে খেয়াল নেই আমার কাছে এসে আমাকে বসিয়ে দিলো সোফায় এটাতে বসেই কাল আমার গায়ে হলুদ হবে আর আজ মেহেদী হবে।

ভাই তুই মেহেদী দেওয়া শিখলি ক‌‌ই থেকে।
আশিকের কথায় কড়া চোখে তাকাল আদ্র তারপর বলল,

ব‌উয়ের হাতে মেহেদী দিতে শিখতে হয়না রে।একটা শিখা হয়ে যায়।

তাই নাকি আমরাও তাহলে শিখে যাব বলছিস? রাহাত তুইও তাহলে আয়রা কে মেহেদী দিয়ে দিস।

রাহাত হা করে বলল,, পাগল নাকি আমি এসব পারিনা।

আরে পারবি পারবি দেখিস না আদ্র একাই সিংকে গেছে বিয়ের সময় তুই ও শিখে যাবি দেখিস।

বলেই সবাই হা হা করে হেসে দিলো।
রাইসা আপু এসে আমাকে বলল,

তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।

থ্যাংকস আপু।

সবাই হাঁসি তামাশা করছে আর আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে কেমন মেহেদী পড়ায় দেখার জন্য। আদ্র সবার দিকে তাকিয়ে একটা পার্ট নিয়ে মেহেদী হাতে নিলো।
ওর হাত কাঁপছে আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আদ্র নার্ভাস মুখ করে তাকালো আমার দিকে আমিও তাকিয়ে ছিলাম। ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো।

তখন আশা এসে বলল,
আজকে ভাবি তোমার হাত শেষ ছাগল দিয়ে কি আর মেহেদী দেওয়া হয়।ও দেবে মেহেদী দিয়ে তাহলেই হয়েছে।

আদ্র কটমট করে তাকালো আশা ভয় পেল না উল্টো ভেংচি কেটে চলে গেলো।

ওই আদ্র তোর হাত কাঁপছে কেন তারাতাড়ি কর। দেখ ওইটা ধরেছিস পনেরো মিনিট হয়ে গেছে আটটা পনেরো বাজে।
আয়রা আপু বলল।

আদ্র কাঁপা হাতে আমার হাতের কাছে নিয়ে গেলো আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
খারাপ হলে মন খারাপ করো না ব‌উ আমি সত্যি মেহেদী দিতে পারি না। কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিলো আমার ব‌‌উয়ের হাতে আমি মেহেদী দেবো তাই।

আমি আদ্রর কথায় হালকা হেসে বললাম দিন আমি মন খারাপ করবো না উল্টা খুশি হবো।

সত্যি।

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। আদ্র দেওয়ার এনার্জি পেয়ে গেল। আস্তে আস্তে করে লাগাচ্ছে হাত কাঁপছে হাতের মাঝামাঝি তে কিছু লিখছে আ দেখেই বুঝলাম এটা আদ্র লেখছে।
হাতে না লেখলেও আপনি আমার এই মনে আছেন আদ্র যেখানে শুধু আপনার নাম।

এতো আনন্দ তাও আমার মন খারাপ অন্তরাটার জন্য। এতো আনন্দের মাঝেও মেয়েটা মুখটা মলিন করে উদাস হয়ে বসে আছে‌। ওর শরীর টাও খারাপ খেতে পারে না বমি করে ভাসিয়ে দেয়।
কি হলো হলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি হঠাত আমার দিকে তাকালো আর জিজ্ঞেস করলো কি আমি কিছু না বললাম ও এখন হাসলো কিন্তু এটা দেখানো হাসি আমি জানি ও যে চঞ্চল মেয়ে এমন বসে থাকার না‌।

বড় করে নিজের নামটা লিখে বড় শ্বাস ফেলে মেহেদী রেখে দিলো।

আর পারবো না অনেক দিয়েছি। এতো কষ্ট জানলে জীবনে এসব দিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করতাম না।

কেন তোর দম এতো তারাতাড়ি শেষ হয়ে হলো। দে আরো দে হাত ভর্তি করে।

ইম্পসিবল।

সবাই হা হা হা করে হেসে উঠলো।সবাই হাসিতে ব্যস্ত আর আদ্র ফট করে আমার গালে চুমু খেল। আমি বিস্মিত হয়ে আদ্রর দিকে তাকালাম। আদ্র বলল,

এতো সুন্দর লাগছে আমি সামলাতে পারছি না গো ব‌উ মন চাইছে এখনি বাসর করে ফেলি।

আমি হতভম্ব হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি‌।আদ্রর কথা শুনে চোখ গোল গোল হয়ে গেল সাথে একরাশ লজ্জা এসে ঘিরে ধরলো আমাকে। রাগী চোখে তাকিয়ে বসে আছি। আশা এসে আদ্রকে সোফা থেকে ঠেলে উঠিয়ে নিজে বসে পরলো মেহেদী লাগাতে।দুই হাত ভর্তি করে মেহেদী দিয়ে দিলো।

মেহেদী দেওয়ার পর পরেছি ঝামেলায় চুল বাঁধা তবুও ছোট কিছু চুল চোখ এসে ডিসটার্ব করছে। ফূ দিয়ে সরানোর ট্রাই করছি। তখন ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেলাম। এই স্পর্শ আমার পরিচিত আমি কেঁপে উঠলাম। আদ্র চুল কানে গুঁজে দিয়ে আমার পাশে বসে পরলো তারপর আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে দেখছে।
মেহেদী রাঙ্গা হাত। বলেই ফূ দিতে লাগলো।

আদ্র একটা গান ধর স্নেহার জন্য।

হুম আদ্র আশিক ঠিক বলেছে।

সবাই আদ্রকে গান গাওয়ার জন্য জরাজরি করতে লাগলো।
আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে গাইতে লাগলো।

🎵🎵আমি তোর চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাই তোকে,
আমি তোর মনটা ছুঁয়ে সপ্ন দিয়ে আঁকবো যে তোকে,
আমি তোর চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাই তোকে,
আমি তোর মনটা ছুঁয়ে সপ্ন দিয়ে আঁকবো যে তোকে,
তুই থাকলে রাজি, ধরবো বাজি, কোন কিছু না ভেবে,,
তুই থাকলে রাজি, ধরবো বাজি, কোন কিছু না ভেবে,,
ও একটু নয় অনেক বেশি ভালোবাসি তোকে।
ও একটু নয় অনেক বেশি ভালোবাসি তোকে।
ও একটু নয় অনেক বেশি ভালোবাসি তোকে।
ও একটু নয় অনেক বেশি ভালোবাসি তোকে।🎵🎵

আমি মুগ্ধ হয়ে আদ্রর গান শুনছি।গান শেষ হতেই তালির আওয়াজ হলো।পুরোটা সময় আদ্র আমার চোখের দিকে তাকিয়ে গাইছে গানটা।
ডিনার আদ্র নিজের হাতে করিয়ে দিলো তা নিয়ে আরো লজ্জায় পরতে হলো কিন্তু আদ্রকে বলে লাভ নেই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে খাইয়ে দিলো।
সারে এগারোটায় সবাই চলে গেল যাওয়ার আগে আদ্র আমার কপাল স্পর্শ করে গেছে থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু থাকলো না থাকলেও অন্তরা কিছু বলতো না। আদ্র নিজের থেকেই চলে গেছে।

পরদিন গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। বাসায় পার্লার থেকে লোক এসেছে আমাকে সাজানোর জন্য।
বিকেলে আমাকে বসানো হলো হলুদ এ আদ্রর গায়ে ছোঁয়ানো হলুদ নিয়ে লোক এসেছে আশা আরো অনেকে প্রথম গায়ে হলুদ ভাইয়া দিলো। ভাইয়া হলুদ দেওয়ার সময় আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউয়াউ করে দুই ভাই বোন কাদলাম। বাবা মায়ের কথা মনে পরছে তারা থাকলে কতো না খুশি হতো।
কান্না কাটি শেষ করে হলুদ দিতে লাগলো।রায়া আমার পাশে বসে আছে ও আমাকে হলুদ দিলে আমি ওকে হলুদ দিয়ে ভূত করে দিলাম।

রুনা আপুকে দেখলাম হলুদ শাড়ি পরেছে কি মিষ্টি লাগছে কৌশিক ভাইয়া কি যেন বলছে আপু লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে।
নিশাত আসেনি কেন আসি নি জানি না। ফোন করলে বলছে অফিসে কাজ আসতে পারবে না কাল ট্রাই করবে।
এই নি তাকে বকলাম ও কি করার শুনলো না।
কাকিমা চলে যেতে চাইছে সবার মুখোমুখি হতে চায়না।কেউ না চিনলেও আদ্রর বাবা ও কাকার দ্বিতীয় স্ত্রী তাকে চিনে এজন্য উনি থাকতে চাইছেন না কাল তো সবাই আসবে কিন্তু আমি যেতে দেব না যা হ‌ওয়ার‌ হবে কিন্তু কাকি এখানেই থাকবে।

রাত আটটা পর্যন্ত নয়টা পর্যন্ত বসে থাকতে থাকতে কোমর ব্যাথা হয়ে গেছে উঠে দাঁড়ালাম সবাই হলুদ দিয়ে মাখামাখি করছে আর নাচছে।
আমি উঠে ছাদে বাম পাশে চলে এলাম এখানে কেউ নেই। ডান পাশে অনুষ্ঠান আর বড় ছাদ হ‌ওয়ায় এপাশে কেউ আসেনি।

আবসা অন্ধকারে রেলিং এর উপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছি। ঠান্ডা বাসা ছুঁয়ে দিচ্ছে চোখ বন্ধ করতেই আদ্রর হাসিমাখা মুখ ভেসে উঠলো কতটা ভালোবাসে আদ্র আমাকে এখন আমিও। আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে কালকের পর থেকে আমরা এক হয়ে যাব। ভালোবাসার মানুষটির সাথে থাকবে একটা পরিবার পাব কতো সুন্দর হচ্ছে সব। এতো সুখ এতো ভালোবাসা পাচ্ছি আমি। ভাবতে ভাবতেই আমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরলো গাল বেয়ে। এসব আমার কপালে স‌ইবে তো অতিরিক্ত কিছু ভালো না এতো এতো সুখ আমি মানতে পারছি না মনে হচ্ছে সব শেষ হয়ে যাবে আদ্রকে হারিয়ে ফেলবো কেউ ছিনিয়ে নেবে আমাকে ওর থেকে। খুব ভালোবাসি আদ্র তোমাকে খুব বেশি হারাতে পারবো না মরে যাব আমি।

হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। চমকে পাশে তাকিয়ে আতকে উঠলাম। একটা পুরুষের ছায়া আমার থেকে এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে রেলিং এ হাত রেখে ভয়ে আমার শরীর এর পশম খাড়া হয়ে গেল।
ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,,,

কককে আআপনি…..

~~চলবে~~