অচেনা শহর ২ পর্ব-২৭+২৮

0
884

#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[২৭]

পাঁচ বছর পর

অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে তার সাথে চেঞ্জ হয়েছে অনেক কিছু। সময়ের সাথে সাথে সবার জীবনের মোড় টাই চেন্জ হয়ে গেছে। জীবন কখনো থেমে থাকে না সময়ের সাথে সাথে সব কিছু মানিয়ে নিতে হয়, চলতে হয়।
কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না। তাকে না পাওয়ার জন্য বুকের ভেতর কষ্ট হয় কিন্তু আফসোস হয় না‌।
এই যেমন আমার হচ্ছে না। সুখেই তো আছি। আমার মতো সুখী কে আছে। বারান্দায় থেকে উঠে দাঁড়ালো চোখে জল এই জল কেন ওই প্রতারক টার জন্য ঝড়ে বুঝতে পারিনা। এতো চেয়েও একে আটকাতে আমি ব্যর্থ হয়।

চোখের জল মুছে রুমের দিকে পা বাড়াবে তখন‌ই কেউ এসে অন্তরার কামিজের কোনা ধরলো আর বলল,

তুমি আবার কান্না করছো মাম্মা।

চার বছরের একটা ছেলে শিশু মুখটা মলিন করে অন্তরার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে মুখে মায়ায় ভড়া যার দিকে তাকালো পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ কষ্ট ভুলে যায় অন্তরা।‌ওর বাঁচার একমাত্র সম্ভব। যার মুখের দিকে তাকিয়ে সমস্ত কষ্ট অপমান সহ্য করেও বেঁচে আছে লড়াই করে।
অন্তরা কষ্ট ভুলে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুললো তারপর ছেলেটার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো।

না আববুটা কান্না কেন করবো?

ছেলেটা অভিমানী গলায় বলল,, মিথ্যা বলছো আমাকে মাম্মা। মিথ্যা বললে কিন্তু অয়ন তোমার সাথে কথা বলবে না আড়ি করবে।

ছেলের অভিমান থেকে অন্তরা হেসে ফেললো।
আচ্ছা সরি আর মিথ্যা বলবো না। আড়ি করো না মাম্মার সাথে আড়ি করলে মাম্মা খুব কষ্ট পাবে তখন অনেক কান্না করবে। তোমার কি তা ভালো লাগবে?

একটু ভালো লাগবে না তোমাকে কান্না করতে দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়। তুমি কেঁদো না আর।

তাই তোমার কষ্ট হয়।

হুম মাম্মা আমি বড় হয়ে তোমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবো। আর কাঁদতে দেবো না তখন দেখো।

ছেলের কথা শুনে অন্তরার বুকটা ভরে গেল। ছেলেকে কাছে টেনে সারা মুখে চুমু খায়।
চোখে অশ্রু।
_______________

রান্না ঘরে থেকে চা বানাচ্ছে মহুয়া। একদম পাকা গিন্নি হয়ে গেছে সে। পরনে তার কম দামী শাড়ি। চোখের পার কালো হয়ে গেছে মুখটাও শুকনো। ফেসিয়াল করা মুখে কি অবস্থা হয়েছে। রান্না ঘরে রান্না করতে করতে ঘেমে একাকার তবুও মূখে হাসি ফুটিয়ে চা করে নেয়।
রুমে এসে সিগ্ধকে চা দেয় মহুয়া। সিগ্ধ গম্ভীর হয়ে চায়ের দিকে একবার মহুয়ার দিকে তাকায়।
মহুয়া হাসি মুখে তাকিয়ে আছে সিগ্ধর দিকে চা হাতে।
সিগ্ধ চিৎকার করে বলে উঠলো,,

তোকে বলেছি না আমার আশে পাশে আসবি না‌। কোন সাহসে আমার রুমে এসেছিস আর তোকে কে চা করতে বলেছে?

সিগ্ধর রাগী চিৎকার কন্ঠে কেঁপে উঠে মহুয়া।
তারপর বলে,
মালতি মাসি ঘুমিয়ে পরেছে।তাই ভাবলাম আমি নিয়ে আসি। তুমি এমন করছো কেন আমি তোমার স্ত্রী।

ঘুমিয়ে পরেছে তাহলে খাব না তোকে কে আনতে বলেছে? একদম আলগা পিরিত দেখাতে আসবিনা। তুই এখন ঢেকায় পরে আমার কাছে এসেছিস তোকে আমি চিনি না। তোর জন্য আমার জীবনের সমস্ত সুখ শান্তি শেষ হয়েছে। তোর মুখ দেখলে আমার ঘৃনা করে। তুই আবার নিজেকে স্ত্রী বলিস কোন সাহসে। আমাদের ডিবোর্স হয়েছে।

মহুয়া চায়ের কাপ ট্রি টেবিলের উপর রেখে সিগ্ধর পায়ের কাছে বসে পরলো। কান্না গলায় বলল,

আমাদের ডিবোর্স হয়নি সেটা জাল কাগজ ছিলো। আমাকে শেষ বারের মতো মাফ করে আপন করে নাও আমি তোমার পায়ে পরে থাকবো আমি অন্যায় করেছি জানি। তার মাশূল ও তো পাচ্ছি।

সেটা তোর কর্মফল। আর আমি তোকে জীবনে মাফ করবো না তোর জন্য আমি নিঃশ্ব হয়ে গেছি এতিম হয়েছে আমার অন্ধ ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে আমাকে সবার থেকে আলাদা করে দিয়েছিলি। এতে তোর মতো আমি ও অপরাধী সমান। নিজের মা বোনের থেকে তোকে বিশ্বাস করেছিলাম। কাল নাগিনী বাসায় ঢুকিয়ে ছিলাম যে আমার সব শেষ করে দিয়েছে। আমি নিজেও শাস্তি পাচ্ছি তুই ও পা।

বলেই পায়ের উপর থেকে মহুয়ার হাত ঝামটা মেরে ফেলে দিলো নিচে বসা ছিলো তাই মুখ থুবড়ে ফ্লোরে পরে কান্না করতে লাগলো মহুয়া।
নিজের পাপের শাস্তি পাচ্ছে মহুয়া আর কি বা বলবে করবে সহ্য করতে হবে।

সিগ্ধকে ডিবোর্স দেওয়া নিয়ে একদিনে একাগজ হচ্ছিলো না তাই জাল কাগজে সাইন করায় যাতে সিগ্ধ আর না আসে ওর কাছে স্বামীর অধিকার নিয়ে।
সিগ্ধ চলে আসার পর ওর প্রেম হয় জিসানের সাথে জিসান আগে থেকেই ওর পেছনে ঘুরতো সিগ্ধর জন্য পাত্তা দেয়নি কিন্তু পরে দেয়। চুটিয়ে প্রেম করতে থাকে। বিয়ে করার বাসনা জাগে ওদের।
মহুয়া দুই সপ্তাহ যেতেই নিজের পরিবর্তন লক্ষ্য করে সন্দেহ নিয়ে হসপিটালে গিয়ে জানতে পারে ও প্রেগন্যান্ট। কথাটা জানতে পেরে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।কি করবো বুঝতে পারি না। এই বাচ্চাটার কথা জিসান জানলে কি হবে ও তো একে মানবে না আর তা ছাড়া অন্যের সন্তান কে মানবেই কেন ? তাই ও বাচ্চা নষ্ট করে ফেলে।
জিসানের সাথে বিয়ে হয় সংসার হয় ছয় মাস যেতেই সবাই বাচ্চার জন্য পাড়া দিতে লাগে। আমি রাজি না থাকলেও জিসান বাচ্চার জন্য পাগল হয়ে যাই। তাই বাধ্য হয়ে রাজি হতে হয় কিন্তু আমার কাল হয়ে আসে এই সময়টা কিছুতেই বাচ্চা নিতে সক্ষম হয়না কি সমস্যা জানার জন্য হসপিটালে গেলে বলে,
আপনার একবার বাচ্চা নষ্ট করেছেন। তাই আপনার সমস্যা হয়েছে আপনি আর কখনো মা হতে পারবেনা না।সব শুনে থমকে যাই। জিসান সব শুনে হতদম্ব হয়ে যায়। বাসায় এসে ঝগড়া ঝাটি হয়। আগে কেন আমি জানায়নি এসব লুকিয়ে কেন গিয়েছি।
বাসায় সবাই সব শুনে। তারপর থেকে শুরু হয় অত্যাচার আমাকে নিয়ে খাবে না জিসান সে আবার বিয়ে করবে। তার সন্তান দরকার আমার মতো অক্ষম মহিলাকে নিয়ে খাবে না।
আমি শত চেষ্টা করেও তাদের থামাতে পারলাম না বিয়ে করলো আমাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিলো। নিজের বাবা-মাকে সব বললাম তারা কিছু করবে বলেছিলো কিন্তু সেদিন রাতেই তাদের গাড়ি একটা দুর্ঘটনা এক্সিডেন্ট হয়ে একদম শেষ হয়ে যায় সব। বাবা মা সেখানেই মারা যায় নিঃশ্ব হয়ে যায়। দুই বোন তখন আমি বুঝতে পারি এসব আমার কুকর্মের ফল। আমি একজনের সন্তান কেড়ে এনেছিলাম তাদের বুকে থেকে আজ আমি মা হতে পারবো না। আমার জন্য সিগ্ধ এতিম হয়েছে আজ আমিও এতিম হলাম।
নিজের ভুল গুলো সব দেখতে পেলাম। খোঁজ করে সিগ্ধর পায়ের কাছে আশ্রয় চাইলাম কিন্তু দিলো না । না করলো আমি থামলাম না পরেই র‌ইলাম বাইরে দুই রাত।তখন সিগ্ধর একটু মায়া হলো কিন্তু স্ত্রীর জন্য না আমাকে বাসায় কাজের জন্য রাখলো।তারপর থেকে এখানেই আছি।
________________

নিশাতের কল বাজছে ও ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করলো,
হ্যালো কেমন আছেন?

আলহামদুলিল্লাহ, আপনি

এইতো ভালোই আপনার সাথে দেখা করা যাবে।

না গম্ভীর হয়ে বলল।

কেন প্লিজ?

আমার সময় নেই।

প্লিজ কিছু ইমপর্টেন্ট কথা আছে।

কি কথা?

আমি হৃদয়ের খোঁজ দিতে পারবো আপনাকে?

রিয়েলি? উত্তেজিত হয়ে বললো নিশাত।

হুম যদি জানার ইচ্ছা থাকে তাহলে কাল একটা রেস্টুরেন্টে এর নাম বলে।এসে পরেন।

আচ্ছা আসবো।

এখন সময় কোথায় পেলেন?

সেটা আপনাকে বলতে বাধ্য না।

বলেই নিশাত ফোন কেটে দিলো মেয়ের কথা শুনেছি রাগ হয় ওর। ওর জন্য স্নেহা বলেই দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। মাইশা ইদানিং বেশিই কল করছে কিন্তু কথা বলে বেশি। দেখা করতে করে ও কলেজ না। কিন্তু কাল করতে হবে হৃদয় কে আমাদের দরকার।

~~চলবে~~

#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[২৮]

হ্যালো স্যার মিটিং এ ব্যস্ত এখন কথা বলা যাবে না।

ওপাশ থেকে কান্নাভেজা কন্ঠ এলো,,
“মিটিং পরে হবে আদ্রকে বাসায় আসতে বলো।”
ওপাশথেকে আদ্রর মা কল করেছে।

কিন্তু ম্যাডাম এটা খুব ইম্পর্টেন্ট মিটিং।

তোমাকে আমি যা বলেছি তাই করো ওর ব‌উয়ের থেকে মিটিং বড় না ওর কাছে।

বলেই আদ্রর মা ফোন কেটে দিলো।
এদিকে বিপদে পরলো হাসেম তিনি এই অফিসের ম্যানেজার। আদ্র মিটিংয়ের আগে বলে গেছে তাকে যেন ডিসটাব না করা হয় এজন্য ফোনটাও বাইরে রেখে গেছে। হাসেম কি করবে বুঝতে পারছেনা।
দ্বিধা নিয়ে দরজা ফাঁকা করে আদ্রকে ডাকলো।
আদ্র খুব সিরিয়াস হয়ে মিটিং করছিলো তখন দরজায় থেকে ম্যানেজার ডেকে উঠে সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে আদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
হাসেম ঢোক গিলে বলে,

স্যার একটা দরকারি কথা বলতে আসতে বাধ্য হলাম সরি।

আদ্র সবার দিকে তাকিয়ে খানিকটা রাগ নিয়ে বলে,
আপনাকে না বললাম এখন ডিস্টার্ব করবেন না।

হুম স্যার কিন্তু কথাটা খুব জরুরি তাই।

আদ্রর রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু সবার সামনে প্রকাশ করলো না দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

যাই হোক আমি পরে শুনে নিব। আপনি এখন যান এখান থেকে।

হাসেম কি করবে বুঝতে পারছে না। যদি আবার না বলার জন্যে বকা খায় না বলে ফেলি তারপর যা হ‌ওয়ার হবে।

স্যার আপনার মা বারবার কল করছেন আর আপনাকে এই মুহূর্তে বাসায় যেতে বলছে।

আপনাকে বললাম না যেই ফোন করুক এখন বিরক্ত করবেন না।
বলেই আদ্র চেয়ার বসবে তখন সামনে ওর ক্লায়েন্টদের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে সরি বলে। তখন ওর কানে আসে,,,,ম্যাম নাকি অসুস্থ..
কথাটা হাসেম বলেছে। আদ্রর কানে গেল কথাটা
ম্যাম অসুস্থ ম্যামটা আবার কে আম্মু?
হাসেম দরজা বন্ধ করছিলো তখন আদ্র তাকে আবার ডেকে বলে উঠলো,

কে অসুস্থ?

আদ্রর কথা শুনে দরজা বন্ধ করা অফ করে দেয় আর অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।

কি হলো কথা বলছো না কেন ম্যাম কে? কার কি হয়েছে?

হাসেম আমতা আমতা করে বলে,
স্নেহা ম্যাম বোধহয়।

স্নেহার নাম শুনেই আদ্রর বুকে ধক করে উঠে।
হোয়াট কি হয়েছে ওর?

জানি না সেসব কিছুই বলে নি আপনাকে যেতে বলেছে। সিরিয়াস কিছু হতে পারে।

সিরিয়াস কিছু শুনে আদ্র হাইপাই হয়ে গেল দুশ্চিন্তায়। ও ছুটে হাসেম এর কাছে এসে ফোন নিয়ে বাসায় কল করলো আর কিছু একটা শুনে ব্যস্ত হয়ে বের হতে গেলে। একজন ক্লায়েন্ট ওকে পেছন ডেকে বলে,

মি. আদ্র আপনি কোথায় যাচ্ছেন আমাদের মিটিং এখনো শেষ হয়নি তো।

আদ্রর তারাতাড়ি মাঝে ও দাড়িয়ে বলল,
সরি মি. গালিব আমি এখন মিটিং করতে পারবো না। আপনারা কাল আসেন।

হোয়াট কাল আসবো মানে কি? আজকে না হলে আপনার সাথে কাজ বাদ হবে। আমাদের সময়ের দাম আছে।
রেগে বলল গালিব।

আদ্র গম্ভীর হয়ে বলল,, আপনাদের ইচ্ছা সেটা। কিন্তু আমার ওয়াইফের থেকে ইম্পর্টেন্ট কোন কিছুই না।

এতে কিন্তু আপনার লস হবে অনেক।

হোক।

আদ্র আর না দাঁড়িয়ে অফিস থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে বেরিয়ে এলো।হাসেম হা করে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখলো।এসবের সাথে ও পরিচিত। আগেও দেখেছে এমন করতে আদ্রকে। আদ্র ওয়াইফের প্রতি খুবই পজেটিভ।
তাইতো সাহস করে এসেছিলো না বলার জন্য না আবার তাকে কথা শুনতে হতো।

এদিকে গালিব রেগে চেয়ার থেকে উঠে থমথমে মুখ করে অফিস থেকে বেরিয়ে এলো এই অপমানের প্রতিশোধ ও নিয়েই ছারবে।
____________________

স্নেহার মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে ডাক্তার। স্নেহার বাম পাশে বিছানায় বসে চিন্তিত মুখে আদ্রর মা বসে আছে। আশা আর আদ্রর চাচি দাঁড়িয়ে আছে ডাক্তার এর পাশে।
ডাক্তার জিজ্ঞেস করলো,,

পরলো কি করে?

আদ্রর মা উত্তর দিলো,
আমরা তো সোফায় বসে ছিলো হঠাৎ চিৎকার শুনে তাকিয়ে দেখি স্নেহা সিঁড়ির নিচে পরে আছে আমরা ছুটে এলাম। দেখি কপালে কেটে গেছে কিভাবে যে পরলো। খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করে না তো তাই হয়তো।

ডাক্তার আদ্রর মার দিকে তাকিয়ে বলল, খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করতে হবে এখন থেকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। আর একটু দেখে শুনে রাখবেন এই সময় এভাবে পরে গেলে বাচ্চার ক্ষতি হবে।

ডাক্তার এর কথা শুনে আশা বলে উঠলো,
বাচ্চার ক্ষতি হবে মানে?

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ডাক্তার এর দিকে।
কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। ডাক্তার সবার মুখের ভঙ্গি দেখে বুঝতে পারলো কেউ জানে না তাই হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,

মিষ্টি খাওয়ান আপনাদের পেশেন্ট মা হতে যাচ্ছে।

সবাই হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলো ডাক্তার এর দিকে তখন আশা চিৎকার করে উঠে,
ও মাই গড আমি পিপি হচ্ছি।

খুশিতে ওর চোখ মুখ ঝলমল করছে।
তখন আদ্র বাসায় আসে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে উপরে আসে। রুমে এসে স্নেহাকে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে দেখে কপালে ব্যান্ডেজ করা যা দেখেই ওর বুকটা ছ্যাত করে উঠে। আর পাশে ডাক্তার ও এগিয়ে ডাক্তার কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আশা ওকে দেখে ওর সামনে এসে দাঁড়ায়। ওর চোখ মুখ খুশিতে ঝলমলে করছে আদ্র তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে স্নেহার এই অবস্থা আর সবাই এতো খুশি কেন?

রেগে আশা কে কিছু বলার আগেই আশা বলে,
Congratulations ভাই।

আদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে,
আশা বলল, বুঝতে পারছো না।

না। স্নেহার এই অবস্থা আর তোরা সবাই খুশি আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

আশা মুখে হাসি রেখে বলল ,
খুশি হবো না নতুন সদস্য আসতে যাচ্ছে যে।আমি পিপি হবো আর তুমি বাবা হবে ভাই বুঝতে পেরেছো আমাদের খুশির কারণ টা।

আদ্রর কানে বার বার বাজতে লাগলো। তুমি বাবা হবে ভাই। চোখ দুটো স্নেহার উপর গিয়ে পরলো বুকের ভেতর বাবা হ‌ওয়ার একটা সুখের অনুভূতি সারা শরীর কম্পন অনুভব করলাম। দ্বিতীয় বারের মতো। চোখ ঝাপসা হয়ে এলো আদ্রর বাবা হবার অনুভূতি এতো মিষ্টি যে সমস্ত কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। শুধু তাকে নিয়ে ভাবায়। চোখ বন্ধ করে ফেলল আদ্র সাথে একটা নবজাতক শিশুর মুখ ভেসে উঠলো। কি মিষ্টি শুভ্র চেহারা তার? আদ্রর অংশ সে যাকে কোলে নিয়ে আদ্র প্রথম বাবা হ‌ওয়ার এই সুখের অনুভূতির জন্ম দিয়েছিলো। যাকে বুকে জরিয়ে সারা মুখে চুমু খেয়েছিলো। কিন্তু সে নেই। ভাবতেই আদ্র চোখ মেলে তাকালো ওর চোখের কোনা বেয়ে জল পরছে।

ভাইয়া তুমি কাঁদছো?

আশার কথায় চোখ মুছে বলে,
তুই সত্যি বলছিস আশা।

হুম ভাইয়া ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করে দেখো।

সবাই‌ রুমে থেকে বেরিয়ে এলো। আদ্র স্নেহার পাশে বসে নিচু হয়ে ওর মুখের দিকে গভীর ভাবে তাকায়। তারপর কপালে ব্যান্ডেজ এর উপরে নিজের ঠোট ছুয়ে দেয়। তারপর মাথা উঁচু করে নিজের হাত বাড়িয়ে স্নেহার গালে রাখে।

তুমি আবার আমাকে বাবা হ‌ওয়ার সুখ দিয়েছো স্নেহা। আনন্দে আমার বুকের চাপা আর্তনাদ কমে এলো। এবার তোমার কষ্ট ও কমবে দেখো। তাকে ভুলে থাকতে পারবে।
_________________
সারা বাড়ি ছুটে চলেছে একটা তিন বছরের বাচ্চা মেয়ে তার মুখের হাসির শব্দে সারা বাসা প্রতিধ্বনি হচ্ছে। খিলখিলিয়ে হাসছে আর দৌড়াচ্ছে তার পেছনে আছে একটা ছেলে সে তাকে খাওয়ানোর জন্য পেছনে পেছনে ছুটছে।
বিরক্ত হয়ে বসে পরলো মেয়েটা এতো দুষ্টু পারাই যায় না।

কাউকে নিজের পেছনে ছুটতে না দেখে মেয়েটি থেমে তাকিয়ে দেখে পাপ্পা নিজে বসে আছে।
তাই আর না দৌড়ে পাপ্পা‌ কাছে যায়।

তুমি আমার পেছনে আসছো না কেন হাঁপিয়ে গেছো? তোতলাতে তোতলাতে বললো।

তোমার সাথে আমি রাগ করেছি তুমি আমার কথা শুনছো না!
বলেই লোকটা মাথা গাল ফুলিয়ে বসলো।

মেয়েটা তা দেখে মন খারাপ করে তার কোলের উপর বসে পরে গালে চুমু খায়।

তারপর কানে হাত রেখে বলল,
সরি পাপ্পা রাগ করো না আমি তোমার সব কথা শুনবো প্রমিজ।

তা দেখে হৃদয় হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
সত্যি তো।

ইয়েস পাপ্পা।

ওকে তাহলে খাওয়া শেষ করো আর দুষ্টু মি করবা না ওকে।

মুখ কালো করে হিয়া ওকে বলে।
কারণ ওর একটু ও খেতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু পাপ্পা কষ্ট পাবে তাই খেতে হচ্ছে।

হৃদয় হিয়া খাইয়ে নিজেও খেয়ে নেই।

হিয়াকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগে।
তখন হিয়া বলে উঠে,

পাপ্পা মাম্মা কবে আসবে।

আসবে খুব তারাতাড়ি আসবে।

যখন বলি তখন তুমি এক কথা বলো কিন্তু মাম্মা তো আসে না। আমার কষ্ট হয় মাম্মার জন্য খুব। মাম্মার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই।
মুখ কালো করে বলল হিয়া।

হৃদয় একটা শ্বাস ফেলে একটা ছবি এনে হিয়ার হাতে দেয়।

এখন মাম্মার ছবি দেখো পরে মাম্মা আসলে বুকে মাথা রেখো কেমন।

হিয়া ছবিটা বুকে জরিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
হৃদয় সেদিকে তাকিয়ে বলল,
তোমার মেয়েকে চাইলে আমার কাছে আসতে হবে স্নেহা জানু। এটাই আমার একমাত্র অস্র তোমাকে নিজের করে পেতে। খুব তারাতাড়ি তোমার কাছে আসবো আর তোমাকে আমার কাছে আসতে বাধ্য করবো।

বলে বাঁকা হেসে হৃদয়।

~~চলবে~~
Tanjina Akter Misti