অচেনা শহর ২ পর্ব-৩৬

0
791

#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[৩৬]

হৃদয় রাগে গজগজ করতে করতে একটা রুমে এলো যেখানে মাইশা কে তুলে এনে ওর লোক বেঁধে রেখেছে মাইশা ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে। হৃদয় এসেই মাইশার গলা চেপে ধরলো।
মাইশা কে সকালেই তুলে এনেছে কিছু লোক এনে হাত পা বেঁধে রেখেছে। কে এমন করে ধরে আনলো ওর মাথা আসছে না। ও বিস্ময় হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে হৃদয় এর দিকে এসেই ওর গলা চেপে ধরলো। রাগে চোখ লাল হয়ে আছে।
মুখ বাধা তাই কথাও বলতে পারছে না এদিকে ওর দুম বন্ধ হয়ে আসছে।
চোখ উল্টে যাবে তখন হৃদয় ছেড়ে দিলো আর চিৎকার করে উঠলো,

তোর সাহস কি করে হলো আমার খবর পুলিশ কে দেওয়ার।

মাইশা চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিচ্ছে। হৃদয় এর কথা শুনে চকিতে তাকালো ও জানালো কি করে এসব?
হৃদয় ওর মুখের বাঁধন খুলে দিলো।

মাইশা বলল, তুমি তো বিদেশে ছিলে এলে কবে
আর কোন দেশে ছিলে।

আমাক কি তোর পাগল মনে হয় তোকে সব বলবো। আমার পেছনে ছুড়ি চালাতে চাস তাইনা।

না আমি কি করলাম?

একদম মিথ্যা বলবি না তুই ওই নিশাত কে আমার খবর দিয়েছিস আমি খুব ভালো করেই জানি।

মাইশা ঢোক গিলে তাকিয়ে র‌ইলো

বিদেশে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এইভাবে থাকবি তুই।চালাকি কিছু করলে তোকে মারতে আমার হাত কাঁপবে না।

বলেই গটগট করে চলে গেলো পেছনে থেকে মাইশা অনেক কিছু বললো শুনলো না। একটা লোক এসে মুখ বেঁধে দিলো।কতজনের কাছে এমন বাধা পরতে হবে আমাকে।
_____________

আদ্রকে নিশাত জরুরি তলব দিয়ে ডেকে এনেছে।এখন ওরা বসে আছে রেস্টুরেন্টে এ।

আদ্র কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে বলল,
তোমাকে এতো চিন্তিত লাগছে এনি প্রবলেম?

নিশাত কফিতে চুমুক দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,,
হুম।

কি নিয়ে এতো চিন্তা? অবাক হয়ে।

কাল থেকে মাইশা কে পাওয়া যাচ্ছে না।

হোয়াট?
বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে।

হুম কাল থেকে ওর খোঁজ পাচ্ছি না।ফোন অফ বাসা খালি।কেউ ওর খোঁজ দিতে পারলো না। আমার মনে হচ্ছে ওকে কেউ কিডন্যাপ করেছে?

কে করবে এই কাজ? ওর আবার এতো বড় শত্রু কোথা থেকে উদয় হলো।
অবজ্ঞা সুরে বললো আদ্র।

হৃদয় করেছে এই কাজ আমি নিশ্চিত।

হোয়াট? হৃদয় কোথা থেকে এলো ওকে কি পেয়েছো তোমরা?
উত্তেজিত হয়ে বলল।

নিশাত দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাইশার জানানো থেকে ইয়ারফোর্টে অপেক্ষা করা সব বললো।

কোন দেশে জানো?

না মাইশা তা বলতে পারেনি।

আমার মেয়ে নিয়ে ও বিদেশে বেগে গেছে ওকে আমি খুন করে ফেলবো। তার মানে ও এখন দেশে আছে আর আমার মেয়েও তাই তো।

হ্যা তা থাকতে পারে।

আদ্র রাগে চেয়াল শক্ত করে বসে আছে। বেরিয়ে এলো এসব স্নেহাকে জানানো যাবে না ওকে সাবধানে রাখতে হবে। হৃদয় আবার কোন খারাপ কিছু করতে এসেছে।
________________

স্নেহা রান্না করছে সবাই মানা করেছে কিন্তু শুনে নি এভাবে বসে থাকা যায় নাকি সারাদিন।তাই জোর করে রান্না করছে আদ্রর ফেবারিট খাবার।
তখন ওর ফোন বেজে উঠল রুমে থেকে কাজে মেয়েকে বলে ফোন আনালো ভেবেছিলো আদ্র কল করেছে কিন্তু না এটা রং নাম্বার তাই রিসিভ না করে রেখে দিলো তখন আবার ফোন বেজে উঠলো,

এক‌ই নাম্বার থেকে দরকারি হতে পারে ভেবে রিসিভ করে কানে দিতেই, ওপাশ থেকে ভেসে এলো একটা কন্ঠ পরিচিত লাগছে খুব না।
কিন্তু কথাটা শুনেই চমকে উঠলো এটা তো হৃদয়।ও কিভাবে?

হ্যালো স্নেহা জান কেমন আছো?

স্নেহা চমকে ফোন নামিয়ে আবার কানে দিলো। ওর হাত পা কাপছে।

কাল হলো জানেমন কথা বলছো না কেন? এতো দিন পর তোমায় কল করলাম আর তুমি চুপ করে আছো?

স্নেহার কাপার মাত্র বেড়ে গেল। ওর হাতে খুন্তি ছিলো তা হাত থেকে পরে পায়ে লাগলো গরম ছিলো বিদায় পায়ে ছাকা লাগলো আর স্নেহা চিৎকার করে উঠল, বাসার সবাই ভয়ে ছুটে এসে দেখে স্নেহা পা ধরে কাঁদছে।

রাতে আদ্র বাসায় এসে সব শুনে ছুটে রুমে আসে।
পা লাল হয়ে আছে। শুরু হলো চেঁচামেচি আদ্র চিৎকার করছে স্নেহা রান্না ঘরে গেছিলো বলে।
চেঁচামেচি করে নিজেই থমথমে মুখ করে বাথরুমে চলে গেছে।
বের হতেই স্নেহা গিয়ে দাঁড়ালো তোয়ালে নিয়ে মাথা মুছে দিতে আদ্র রেগে হাত থেক তোয়ালে নিয়ে একাই মুছে নিলো।‌ পায়ের ওতো ব্যাথা না তাই হাঁটতে পারছে স্নেহা।
স্নেহা পেছনে পেছনে ঘুরেছে আর সরি বলছে আদ্র কানে নিচ্ছে না।স্নেহা হৃদয় এর ব্যাপার টা বলতো তাও বলতে পারলো না।

তাই গোমড়া মুখে বসে র‌ইলো। আদ্র এক নজর তাকিয়ে নিচে গিয়ে খেয়ে এলো। হৃদয় এর কথাটা ওকেও ভাবাচ্ছে। বিছানায় না শুয়ে বারান্দায় চলে গেলো।
স্নেহা শুয়ে ঘুমিয়ে পরলো ইদানিং অতিরিক্ত ঘুম আসে ওর চাইলেও বেশি জেগে থাকতে পারেনা।
আদ্র অনেকটা সময় বেলকনিতে কাটিয়ে এসে দেখে স্নেহা ঘুমিয়ে করছে।
ও এগিয়ে এসে ওর পায়ের কাছে বসে ভালো করে জায়গাটা দেখে। তারপর পাশে শুয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরে‌। এমনিতে হৃদয় এর কথা শুনে টেনশনে আছে আবার এসব মাথা গরম হয়ে গেছিলো ওর।
__________________

মাথা চেপে বসে আছে হৃদয় ও জানতে পেরেছে অন্তরার কাছে ছেলেটা ওর। মাইশাকে ছেড়ে দেওয়াল লোভ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো মাইশা বলে দিয়েছে।
জানার পর থেকে নিজের ছেলেকে পাবার আশায় আছে কিন্তু অন্তরাকে নয়। ও চায় ওর ছেলে ওর কাছে থাকবে ওর আর স্নেহার সাথে।
ছেলেকে চায় ও নিজের ছেলে কেন অন্যের কাছে রাখবে নো নেভার।

লোক লাগিয়েছে সব ডিটেলস আনার জন্য। তখন একটা লোক এলো আর সব বললো সব শুনে হৃদয় বাঁকা হাসলো।

পরদিন চলে গেল ছেলের স্কুলে ও জানতে পেরেছে ওকে এখানেই ভর্তি করা হয়েছে।
বাইরে ছদ্রবেশে দাড়িয়ে আছে। স্কুল ছুটি হতেই সব বাচ্চারা বেরিয়ে এলো ও চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে তখন দেখা মিললো এগিয়ে যাবে তখন অন্তরাকে দেখলো ওর আগে গিয়ে ছেলেকে কোলে তুলে নিলো ও তারাতাড়ি লুকিয়ে পরলো।

আশায় জল ঢেলে অন্তরা ওকে নিয়ে চলে গেলো। বাধ্য হয়ে ফিরে আসতে হলো।লোক লাগিয়েছে স্নেহার বাসায় ও কখন বের হয় জানার জন্য। ফোন করেছিলো কথা বলতে পারেনি।তারপর নাম্বার অফ।সবার সামনে ঘুরে বেরাতে পারে ও কেউ ওকে চিনতে পারেনা।
______________

সরি,
মুখটা মলিন করে বললো।

আদ্র গম্ভীর হয়ে বলল, তোমাকে আমি কাজ করতে মানা করেছিলাম।

আচ্ছা আর করবো না। আপনার সাথে আমার জরুরি কথা ছিলো।

কি কথা? ভ্রু কুঁচকে।

স্নেহা কাঁপা কাঁপা গলায় এগিয়ে এসে আদ্রর হাত ধরলো আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

আমি সব খুলে বললাম। আদ্র সব শুনে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। যেটা জানাতে চাইছিলো সেটা স্নেহা জেনেই গেলো।
কি বলবে বুঝতে পারছে না।
স্নেহা আদ্র কে স্বাভাবিক ভাবে থাকতে দেখে অবাক হলো।

কি হয়েছে আপনি চমকালেন না?

আদ্র মাইশার কথা বললো।স্নেহা শুনে থমকে গেলো।

কি বলছেন আপনি?

আমি ঠিক বলছি।

তাহলে আমার আদ্রিতাকে আমি ফিরে পাব বলেন।
স্নেহার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক।

আদ্র স্নেহার দিকে তাকিয়ে আছে। ও বুঝতে পারছে না সামনে কি হবে কিন্তু ওর ভয় হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব ওকে পেতে হবে।
কারো ক্ষতি করার আগে।
________________

অন্তরা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো অয়ন এর স্কুলে আজ আসতে লেট করে ফেলেছে। এসে দেখে স্কুল ফাঁকা সবাই চলে গেছে চারপাশে তাকিয়ে ভেতরে ঢুকতে গেল দাড়োয়ান বাদ সাধে।

কি হয়েছে আমাকে যেতে দিচ্ছেন না কেন?

আপনি কোথায় যাচ্ছে স্কুল তো ছুটি হয়ে গেছে।

হুম জানি আমার ছেলে আছে আমি আস্তে লেট করেছি আমাকে ভেতরে যেতে দিন।

কেউ নেই তো ভেতরে সবাই তো চলে গেছে।

কি সব বলছেন?

হুম ম্যাডাম।

কিন্তু আমি তো নিতেই আসিনি।

অন্য কেউ এসেছিলো বোধহয় ওর বাবা ও আসতে পারে।

অন্তরা ততক্ষনাৎ নিশাত কে কল করলো।

চলবে~~~