অজানা অনুভূতি পর্ব-১+২+৩

0
400

#অজানা_অনুভূতি
#লেখিকা – আদ্রিতা খান অদ্রি

নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে নিজের বড় বোনের বিয়ে, বিষয়টি হয়তো কারোর পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। খোলা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে। জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। অবাধ্য চোখের জল যেন আজ শুকিয়ে গেছে। শুধু ভাবছি আমার জীবনটা এমন হলো কেন? হয়তো কাউকে কখনো অনেক কষ্ট দিয়েছিলাম যার ফল এখন ভোগ করছি। যার সামনে ২বছর ধরে যাই নি তার সামনেই আজ পড়তে হলো। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। আমার পরিচয়টা দেওয়া যাক। আমি আদ্রিতা খান। পরিবারের ছোট সন্তান। পরিবারে মা বাবা দি আর আমি। আমার আপুর নাম, সামিরা খান। আমি এইবার ইন্টার ১ম বর্ষের স্টুডেন্ট। কলেজের টপ স্টুডেন্ট। আর আপু হচ্ছে অনার্স ১ম বর্ষের স্টুডেন্ট। আমি আপুর ঠিক বিপরীত। আমি অনেক চঞ্চল আর আপু হচ্ছে অনেক শান্ত। আপু যতটা সহজ সরল আমি ঠিক ততটাই কঠিন। অল্পতেই আপুর চোখে পানি আসে অপরদিকে আজ পর্যন্ত কেউ আমার চোখের পানি দেখে নি। সবাইকে আমাকে শক্ত মনের মানুষ হিসেবেই চিনে। সবাই জানে আদ্রিতা খান কান্না করতে জানে না। কিন্তু এইটা কি সত্যি? হয়তো, আমি ও জানি না। কিন্তু আজ শক্ত হতে পারছি না। ২ বছর আগে যেই আঘাত পেয়েছিল আজ যেন তার দ্বিগুণ আঘাত পেলাম।
হঠাৎ আমার কাঁধে কেউ হাত রাখল আমি জানি কে রেখেছে তাই কিছু বললাম না।

আদ্রিতা এগুলো কি হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। পিছনে ফিরে দেখলাম আপুর চোখে পানি। মুচকি হাসলাম, আপু যা হচ্ছে হতে দে। যা হবে ভালোই হবে। আপুর চোখে জল আমার কষ্টের জন্যই যে আপুর চোখে জল তা ভালোভাবেই বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার কিছু বলার নেই। আপু আমি বাইরে যাচ্ছি এ-ই কথাটা বলেই বেরিয়ে পড়লাম। আর ভাবতে থাকলাম আজকের দিনের কথা

সকালে ~

সকাল থেকেই বাসায় অনেক আয়োজন করা হয়েছে। আজ আপুকে আপুর ফিউচার হাসবেন্ড দেখতে আসবে। তাদের সাথে আগে থেকেই সব কথা ছিল। বাবা সব কিছু আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিল। আজকে তারা আপুকে দেখতে এসেছিল। তাই সকাল থেকেই অনেক খুশি ছিলাম। কিন্তু কে জানতো আমার খুশি বেশিক্ষণ এর জন্য নই? আপুর ফিউচার হাসবেন্ড হিসেবে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে দেখে এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলাম। আগের সব তিক্ততার সম্পর্ক গুলো যেন চোখের সামনে ভেসে উঠলো। খুব কষ্ট হচ্ছে নিজের ভালোবাসার মানুষকে আপুর হাসবেন্ড হিসেবে মেনে নিতে। কিন্তু কি করব আপুর সাথে তার বিয়ে ঠিক করা। এখন চাইলেই কিছু করা সম্ভব না। আর তাকে আমি ভালোবাসি সে আমাকে ভালোবাসে না। আসলেই কি ভালোবাসে না? জানা নেই কি সত্যি। এ-ই অজানা অনুভূতির শেষ কোথায় জানা নেই। এইসব ভাবছি আর রাস্তায় হাঁটছি। জীবনটা বিষাদময় লাগছে।

অপরদিকে সকাল থেকে খুব চিন্তিত সাজ্জাদ। সাজ্জাদের পরিচয়টা দেওয়া যাক সাজ্জাদ হোসেন। মা বাবার একমাত্র সন্তান। দেশের নামকরা বিজনেসম্যান। সাথে আর ও কিছু পরিচয় আছে যা সবার থেকে গোপনীয়। তার চিন্তার কারন হচ্ছে যেই মেয়েটি তাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো তার বড় বোনের সাথেই নাকি সাজ্জাদ এর বিয়ে ঠিক করছে তার মা। বিষয়টি সাজ্জাদ কোনোভাবেই মানতে পারছে না। অজানা এক অনুভূতি কাজ করছে সাজ্জাদ এর মধ্যে। বিষয়টি স্বাধীন এর সাথে শেয়ার না করা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছে না। স্বাধীন হচ্ছে সাজ্জাদ এর বেস্ট ফ্রেন্ড। সে ও একজন বিজনেসম্যান। আর সাথে স্বাধীনের ও কিছু গোপনীয় তথ্য রয়েছে। স্বাধীন এর সাথে দেখা করার জন্য গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে সাজ্জাদ।

আশে পাশে মানুষ কমই। সকাল থেকে কিছু পেটে পড়ে নি। মাথাটা ও কেমন জানি করছে তাও বাসায় যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। বাসায় গেলে এখন সবাই আপুর বিয়ে নিয়ে কথা বলবে। কিভাবে পারবো নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে আপুর বিয়ে দেখতে?

তোমার মেয়েটার কি বুদ্ধি হবে না। দুপুর হয়ে গেল এখনো বাসায় ফিরে নি। আরে সামিরার মা এতো টেনশন করো না। আদ্রিতা চলে আসবে।
টেনশন করবো না মানে? মেয়েটা সকাল থেকে কিছু খায় নি। এমনিই ও অনেক সময় অসুস্থ থাকে। থাক টেনশন করো না। সামিরা, আদ্রিতা কোথায় গেছে জানিস?

বাবা ও একটু ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গেছে। বলেছে আসতে একটু সময় লাগবে। আদ্রিতা যে কি কারনে বাসায় নেই তা মা বাবাকে বলা যাবে না (মনে মনে)

গাড়ি চালানোর অবস্থায় সাজ্জাদ দেখতে পেলো একটি মেয়ে তার গাড়ির সামনে এলোমেলো অবস্থায় হেঁটে যাচ্ছে। সাজ্জাদ এর মাথা যেন আর ও গরম হয়ে গেলো। গাড়ি থেকে নেমে বললো, এই মেয়ে রাস্তায় দেখে চলতে পারো না। এখন তোমার কিছু হলে ত সবাই আমাকে ধরবে।

সেই প্রিয় কন্ঠ শুনে এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলাম।
এই মেয়ে শুনতে পাও না নাকি? কথাটি বলে সাজ্জাদ আদ্রিতার সামনে এসে থমকে গেলো। অপলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে আদ্রিতা সাজ্জাদের দিকে। সাজ্জাদ খেয়াল করলো। আগে থেকে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে আদ্রিতা । তার মুখের মিষ্টি হাসিটা আর নেই। চোখের নিচে ও কালো দাগ। হয়তো তার জন্যই হয়েছে।
এইভাবে তার সাথে দেখা হবে ভাবতে পারি নি।
সাজ্জাদের খুব মায়া হচ্ছে আদ্রিতার জন্য। সাজ্জাদের ভাবনার মাঝেই আদ্রিতা বলে উঠলো
সরি আমি খেয়াল করি নি।
আদ্রিতা…
কথাটি বলে চলে যেতে নিলেই সাজ্জাদ ডাক দিলো।
খুব কষ্ট হচ্ছে, ইচ্ছে করছে তাকে জিজ্ঞেস করি আমাকে কি একটু ও ভালোবাসা যায় না? খুব স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলাম
জ্বি কিছু বলবেন?
কেমন আছো?
আমি বেশ আর কিছু বলার আগেই খেয়াল করলাম মাথাটা কেমন ঘুরে উঠলো।

হঠাৎ করে আদ্রিতা পড়ে যেতে নিলেই সাজ্জাদ আঁকড়ে ধরে ফেলল। হঠাৎ এমন কিছুর জন্য সাজ্জাদ প্রস্তুত ছিলো না। আজকে সকালে এই দেখলো মেয়েটি সুস্থ আছে তাহলে এখন কি হলো। সাজ্জাদ তার গাড়িতে আদ্রিতাকে বসালো একটু সামনেই একটি হসপিটাল আছে সেই হসপিটালে নিয়ে গেলো। আর আদ্রিতার বাবা কে ফোন করে জানিয়ে দিল।

চোখ খুলেই নিজের অবস্থান দেখে বুঝতে পারছি হসপিটাল এ আছি। পাশেই আপু বসে আছে। উঠে বসলাম। সকাল থেকে কিছু না খাওয়ার জন্য প্রেশার লো হয়ে গিয়েছিল। আপু কিছু বলছে না। আমি জানি আপুর মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করছে। কিন্তু আপুর ত কোনো দোষ নেয়। আপু নিজে বিয়ে করতে চাই নি। বাসা থেকে ঠিক করেছে। এখানে আপুর কিছু করার নেই।

আপু, মা – বাবা কি বাসায়?

হ্যাঁ এসেছিলো হসপিটালে সাজ্জাদ তাদের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।

কথাটা শুনে আর কিছু বললাম না। তার মানে সাজ্জাদ এখনো হসপিটালে আছে। এমন সময় একটি ভাইয়া কফি হাতে রুমে আসলো।

আরে আদ্রিতার জ্ঞান এসেছে আগে জানাবেন না, মিস সামিরা। আপু কিছুটা বিরক্ত হলো। আপু এমনি কোনো ছেলেদের সাথে কথা বলতে পছন্দ করে না। আপু বলে উঠলো, কেন ওর জ্ঞান এসেছে আপনাকে কেন জানাবো?

আরে মিস সামিরা রেগে যাচ্ছেন কেনো, বাইরে সাজ্জাদ চিন্তা করছে অনেক তাই আরকি বললাম।

আদ্রিতা আমার পরিচয় ত জানো না, আমি স্বাধীন, সাজ্জাদের বেস্ট ফ্রেন্ড।

ও আচ্ছা। ভাইযা আপুকে কফি দিয়ে আমার জন্য কফি আনতে চলে গেলো। দি তোর সাথে কিন্তু স্বাধীন ভাইয়াকে ভালোই মানাবে। দেখ ভাইয়া কত হাসি খুশি আর তুই কতো গম্ভীর। সাজ্জাদ ও গম্ভীর। দুজন গম্ভীর হলে সংসার ভালো হবে না। বলেই হেসে উঠলাম। এমন সময় সাজ্জাদ আর স্বাধীন ভাইয়া রুমে আসলো।

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্ব – ০২
#লেখিকা – আদ্রিতা খান অদ্রি

সাজ্জাদ আর স্বাধীন ভাইয়া রুমে আসলেন। আপুকে বললেন ডক্টর বলেছে এখন বাসায় যেতে পারবে। সাজ্জাদ আবার বললেন আদ্রিতা ঠিক মতো না খাওয়ার ফলে এইরকম হয়েছে।

আরে দুলাভাই আপুর সাথে বিয়ের আগেই দেখি শালিকার এতো খোঁজ খবর নিচ্ছেন। আর এখন থেকে ত ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করতেই হবে কিছু মাস পরই ত আপুর আর আপনার বিয়ে। কতো কাজ পরে আছে। সাজ্জাদ কিছু বললো না আর।

স্বাধীন ভাইয়া বলে উঠলো, হ্যাঁ তাই ত অনেক কাজ আছে। সব দায়িত্ব ত আমাকে আর আদ্রিতাকেই নিতে হবে। হেসে উঠলাম নিজ ভালোবাসার মানুষের বিয়ের দায়িত্ব নাকি নিজেকে নিতে হবে। স্বাধীন ভাইয়া মনে হয় আমার ব্যাপারে জানে না। জানলে হয়তো এ কথা বলতো না। হসপিটাল থেকে বের হলাম। এখন ও দুর্বল লাগছে। আপু আমাকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

সাজ্জাদ বললেন, আমি তোমাদের বাসায় পৌঁছে দেয়।

না, দরকার নেই আমরা যেতে পারবো। বলেই একটি রিকশা ডাক দিলাম। আমি আর আপু উঠে পড়লাম।

এদিকে সাজ্জাদ হয়তো কিছুটা অপমানিতবোধ করছে।

কিরে দোস্ত তোর শালিকা একটু বেশি তেজী আর মিশুক মনে হয়।

কিসের শালিকা বিয়ে হয়েছে নাকি। আগে বিয়ে হোক তারপর দেখা যাবে সম্পর্ক কি হয়। এইটা বলে সাজ্জাদ ও চলে গেলো।

স্বাধীন বুঝতে পারলো না সাজ্জাদ রেগে চলে গেলো কেন। যাক বাবা আমি আবার কি করলাম৷সাজ্জাদ রেগে গেলো কেনো। স্বাধীন একা একা কি করবে সেও বাসার দিকে চলে গেলো।

এদিকে, তোকে কতোবার বলেছিলাম দিন দুপুরে ঘর থেকে বের হবি না। আজ যদি সাজ্জাদ না থাকতো তোর কি অবস্থা হতো ভাবতে পারিছ।

মা, প্লিজ স্টপ। একটু সাহায্য করেছে শুধু আর কিছু না। উনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে তাই করতো। আমার আর এসব কথা ভালো লাগছে না। আমি রুমে গেলাম। বলেই রুমে চলে আসলাম। বাসায় আসার পর থেকে মা শুধু আমাকে বকছে আর সাজ্জাদের প্রশংসা করে যাচ্ছে। বিরক্ত লাগছে। ফ্রেশ হয়ে একটু ঘুমিয়ে পড়লাম।

অন্যদিকে ~

সাজ্জাদ, বিয়ের কথা মোটামুটি ফাইনাল। কোন মাসে বিয়ে রাখতে বলিস?

বাবা তোমাদের ইচ্ছে অনুযায়ী বিয়ে হবে।

আচ্ছা।

বাবা, সামিরার সাথেই কি বিয়ে হবে? না মানে ওর বোনের আচরণ আমার পছন্দ না। দায়িত্ব জ্ঞান নাই। বোকা একটা বললে আর একটা বুঝে।

আরে সমস্যা কোথায় ওর সাথে ত বিয়ে হচ্ছে না। বিয়ে হচ্ছে ওর বোনের সাথে। সামিরা অনার্সে পড়ে। যথেষ্ট ম্যাচুরিটি আছে ওর মধ্যে। আর ওর বোন মানে আদ্রিতা ও মাএ ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ে, ওর মধ্যে এখন ম্যাচুরিটি কিভাবে আসবে। চঞ্চল থাকবে এইটাই স্বাভাবিক। যদি ও তোর মতো গম্ভীর ছেলের জন্য ও পারফেক্ট বলেই সাজ্জাদের বাবা হাসলো। সাজ্জাদ আর কিছু বললো না। কারন এইখানে বলে লাভ নেই। ভাগ্যে মনে হয় সামিরাই লেখা আছে। সাজ্জাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এমন না যে আদ্রিতাকে সে পছন্দ করে না। কিন্তু সাজ্জাদ আদ্রিতাকে যেই অপমানটা করেছিলো তা ক্ষমার অযোগ্য। সাজ্জাদের বাবা আর আদ্রিতার বাবা বন্ধু অনেক আগে থেকেই। সেই বন্ধুত্বের গভীরতা বাড়াতেই সাজ্জাদ ছোট থাকতে সাজ্জাদের সাথে সামিরার বিয়ে ঠিক করে রাখা হয়েছিলো। কিন্তু এ বিষয়ে আগে সাজ্জাদ বা সামিরা জানতো না। এমন সময় সাজ্জাদের মা আসলো

সাজ্জাদ, আদ্রিতা যে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো খবর নিয়েছিলি ও কেমন আছে?

ঠিকই ত মেয়েটার একবার ও খোঁজ নেওয়া হয় নি। কেমন আছে যদি একবার জানতে পাড়তাম ( মনে মনে)

মা, আমার কাছে সামিরার নাম্বার নেই। তাই ফোন দিতে পারি নি।

আরে এ কথা আগে বলবি না। নে নাম্বারটা লেখ। একথা বলে সাজ্জাদকে নাম্বারটা দিলো। রাতের খাবার খেয়ে সাজ্জাদ তার রুমে আসলো। এতো রাতে কল দিবে নাকি না বুঝতে পারছে না। আর কল দিয়ে আদ্রিতার কথা জিজ্ঞেস করলে যদি সামিরা কিছু মনে করে। আচ্ছা সামিরা মনে হয় না জানে যে আদ্রিতা আমাকে ভালোবাসে জানলে নিশ্চয়ই এ বিয়েতে রাজি হতো না। আর কিছু না ভেবে ঠিক করলো সামিরাকে কল দিবে

এদিকে ~

আদুরি আমার পক্ষে সাজ্জাদকে সাথে বিয়ে করা সম্ভব না। দি আমাকে আদুরি বলে ডাকে। ছোট থেকে আমি যা চেয়েছি মা – বাবার পর দি আমার সকল চাওয়া পূর্ণ করেছে। আর এখন আমার পছন্দের মানুষের সাথে দির বিয়ে। এইটা আমার বা দি কারোর পক্ষেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমি ত অতীত ভুলে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কে জানতো ২ বছরের পুরনো অতীত আবার সামনে আসবে।

দি, তুই কি পারবি বাবার অবাধ্য হয়ে বিয়ে ভেঙে দিতে? পারবি না ত। তাই ঝামেলা করিছ না। বিয়েটা করে নে। আর এখন আমাদের প্রায় সকল আত্মীয় স্বজনরা জানে তোর সাথে সাজ্জাদের বিয়ে। এখন এ বিয়ে ভেঙে দেওয়া সম্ভব নয়।

তাই বলে আমার ছোট বোনের ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করে নিবো? যে কিনা আমার বোনকে এতোগুলা মানুষের সামনে অপমান করেছিলো তাকে বিয়ে করবো?

দি, বাদ দে পুরান কথা ভুলে যা সব। আমার ভালোবাসা একপাক্ষিক ছিলো তাই পূর্ণতা পাই নি। ভাগ্যে এইটাই লেখা ছিলো মেনে নে। এমন সময় সামিরার ফোনে কল আসলো।

আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?

ওলাইকুমস সালাম, জ্বি আমি সাজ্জাদ।

সামিরা কিছুটা বিরক্ত হলো। সে ত চাই না সাজ্জাদের সাথে তার বিয়ে হোক। বললো আপনি কিছু বলবেন।

জ্বি, না মানে আদ্রিতা এখন কেমন আছে?সকালে ত অসুস্থ ছিলো অনেক

সামিরা বুঝতে পারলো, ফোনটি তার জন্য করে নি বরং আদুরির জন্য করেছে। মনে মনে খুশি হলো।

হ্যাঁ, আদুরি ভালো…. না মানে আদ্রিতা ভালো আছে।

আপনি কি আদ্রিতাকে আদুরি বলে ডাকেন?

জ্বি, ও আমার সব থেকে আদরের।

ও আচ্ছা আপনার বোনকে বলবেন নিজের যত্ন নিতে সব সময় আমি সাহায্য করার জন্য থাকবো না।

দি আর কিছু বলার আগেই হাত থেকে ফোন নিয়ে নিলাম, বুঝতে পেরেছিলাম সাজ্জাদ ফোন দিয়েছে।

এই যে শুনেন, একবার সাহায্য করেছেন বলে বার বার বলতে হবে না। আমার দরকার নেই আপনার সাহায্য। দির সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে, এখনো বিয়ে হয় নি। এতো রাতে ফোন করার মানে কি? কথা গুলো বলে ফোন কেটে দিলাম। দি ও কিছু বললো না।

সাজ্জাদ অবাক হলো, যেই মেয়েটি একসময় তার সাথে একটু কথা বলার জন্য কতো পাগলামি করছে আর আজ সেই মেয়েটি তার মুখের উপর লাইন কেটে দিলো। সত্যি মেয়েরা আঘাত পেলে সম্পূর্ণ বদলে যাই।

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্ব- ০৩
#লেখিকা – আদ্রিতা খান অদ্রি

সত্যি মেয়েরা আঘাত পেলে
সম্পূর্ণ বদলে যায়। সাজ্জাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘুমিয়ে পড়লো।

আজ কিছুটা শান্তি লাগছে সাজ্জাদের মুখের উপর ফোন কেটে দিয়ে। পরে দির সাথে কতোক্ষণ গল্প করে ঘুমিয়ে পড়লাম। কাল সকালে কলেজে যেতে হবে। কলেজে না গেলে ত আবার আলো রাগ করে থাকবে। আলো হচ্ছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ও জানে অতীতে আমার আর সাজ্জাদের কাহিনী। ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব ছোটবেলা থেকে মা – বাবা আর দি ও ওকে চেনে। আচ্ছা কালকে যখন আলো শুনবে দির সাথে সাজ্জাদের বিয়ে ঠিক হয়েছে ওর রিয়েকশন কি হবে? কি জানে, যাই হোক ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে ~

আদ্রিতা, নাস্তা না করে একদম বের হবি না।

মা, বাইরে নাস্তা করে নিবো আলোর সাথে।

না একদম না ঐইদিন কি অবস্থা হয়েছিলো মনে নেই? চুপচাপ নাস্তা করতে বস।

বুঝলাম এখন বেশি কথা বলে লাভ নেই। তাই নাস্তা করতে বসে পরলাম। এখন যতই নাস্তা করি না কেন বাইরে আলোর সাথে ঠিকই কিছু খেয়ে নিবো। বাবা আরো আগেই অফিসে চলে গিয়েছে। আজকে নাকি কিসের মিটিং আছে সে জন্য।

আদুরি একটু শোন

হ্যাঁ, দি বল,

কলেজে যাবি ত? আমি একটু ইউনিভার্সিটিতে যাবো, চল একসাথেই বের হয়।

আচ্ছা দি, তারপর দি আর আমি নাস্তা করে নিলাম। একসঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম। আমাকে কলেজ গেইটের সামনে নামিয়ে দিয়ে দি চলে গেলো।

কলেজে পা দিতে না দিতেই কেউ দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। হাসলাম সবাই কতো ভালোবাসে শুধু একজন ব্যতীত।

কিরে এতোদিন কলেজে আসলি না কেনো? আপুর থেকে শুনলাম তুই নাকি রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি? এতো দুর্বল কেন তুই। জানতাম কলেজে আসলে এখন ওর এইসব ভাষণ শুনতে হবে।

আরে একটু প্রেশার লো হয়ে গিয়েছিলো আর বেশি কিছু না। ক্লাসে চল, পরে বাকি কথা হবে। এমন সময় তানহা আর আবির আসলো। আমরা ৪ জনের একটি গ্রুপ। ফ্রেন্ডশিপের দিক দিয়ে আমরা সেরা। সারা কলেজ আমাদের গ্রুপের কথা জানে। অনেকদিন পর কলেজে আসলাম। আমরা ৪ জন রুমে যেতে নিবো এমন সময় রিজভী, রিফাত, সায়েম, রাইসা আর নওশিন আসলো। ওদের ৫ জনের একটি গ্রুপ। ওদের দেখে কিছুটা বিরক্ত হলাম। আমি আর আলো ২ জনই ক্লাসের টপ স্টুডেন্ট। যার ফলে ওরা আমাদের হিংসা করে এবং অনেকবার ক্ষতি করতে চেয়েছে। আমরা ত ওদের কোনো ক্ষতি করি নি তাও বার বার কেনো আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করে বুঝি না।ওদের কিছু না বলে আমরা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলাম এমন সময় রাইসা বলে উঠলো কি ব্যাপার টপার কোথায় ছিলে এতোদিন? নওশিন বলে উঠলো, আরে বুঝিছ না কলেজের টপার কি আর আমাদের সাথে কথা বলবে এ কথা গুলো বলে সবাই হেসে উঠলো। আমরা আর কিছু বললাম না৷ রুমে চলে আসলাম। রুমে আসার পর, আবির বলল আদ্রিতা ওদের কিন্তু কিছু বলা উচিত ছিলো। আমি বললাম বাদ দে কিছু মানুষ কখনো ঠিক হবে না। আবির ওর সিটে বসে পড়লো। আমি আলো আর তানহা গল্প জুড়ে দিলাম। ক্লাসে টপার হলে ও লাস্টে বসি আর ওদের সাথে সারাক্ষণ গল্প করতে থাকি। তখন একজন রুমে আসলো আমরা পাওা না দিয়ে গল্প করছিলাম। হঠাৎ একজন বলো উঠলো লাস্টে সাদা হিজাব দাড়াও। বুঝতে পারলাম আমাকে বলেছে।

ক্লাসে শিক্ষক আসলে দাড়াতে হয় জানো না নাকি? আমি তোমাদের নতুন শিক্ষক আরিয়ান চৌধুরী।

সরি স্যার আমি খেয়াল করি নি…

ক্লাসে সারাক্ষণ কথা বললে খেয়াল করবে ও না। আমার ক্লাসে আমি কোনো রকম কথা মেনে নিবো না। আর তুমি নাম কি তোমার?

জ্বি, আদ্রিতা।

তুমি ক্লাস থেকে বের হয়ে যাও। এখনি।

মাথা নিচু করে বের হয়ে আসলাম। দেখলাম রাইসা, নওশিন ওরা হাসা হাসি করছে।

বাইরে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।

এদিকে সাজ্জাদ আদ্রিতার কলেজে এসেছে। যদি ও জানে না আদ্রিতা এই কলেজে পড়ে। কিছুদিন পর কলেজে একটি অনুষ্ঠান রয়েছে। সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হচ্ছে সাজ্জাদ আর স্বাধীন। কারণ তারা ২ জনই দেশের নামকরা বিজনেসম্যান। সাজ্জাদ প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে বের হয়েছে। এমন সময় মনে পড়লো তার বন্ধু আরিয়ান এই কলেজে জয়েন করেছে। তাই তার সাথে দেখা করার জন্য আবার কলেজে গেলো। রুমের সামনে এসে দেখতে পারলো আদ্রিতা মাথা নিচু করে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।

তুমি এখানে?

তার কন্ঠস্বর শুনে উপরে তাকালাম, আপনি এইখানে?

ক্লাসের ভেতর থেকে রাইসা দেখতে পেরেছিলো আদ্রিতা কার সাথে যেন কথা বলছে, সে দাঁড়িয়ে বললো, স্যার ওই মেয়েটি বাইরে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেনো কথা বলছে। একথা শুনে আরিয়ান বাইরে বের হলো।

সাজ্জদকে দেখে বলে উঠলো, দোস্ত তুই,

হ্যাঁ, আমি কলেজে একটু কাজে এসেছিলাম তাই ভাবলাম তোর সাথে দেখা করে যায়। কিন্তু আদ্রিতা বাইরে দাঁড়িয়ে কেন?

তুই চিনিস ওকে?

হ্যাঁ বাবার বন্ধুর মেয়ে।

ও আচ্ছা ক্লাসে কথা বলছিলো তাই রুম থেকে বের করে দিছি।

ছোট মানুষ ভুল করে ফেলেছে রুমে যেতে বল।

সাজ্জাদের কথা শুনে অবাক হলাম আচ্ছা আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি সেজন্য কি তার কষ্ট হচ্ছে? তার ও কি আমার প্রতি অনুভূতি কাজ করে?

আরিয়ান স্যার বললেন রুমে যাও। তারপর আমি রুমে এসে পড়লাম। সাজ্জাদ, স্যারের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলো।

অন্যদিকে ~

নওশিন সাজ্জাদকে দেখেই তার প্রেমে পড়ে যায়। রাইসাকে বলে দোস্ত দেখ ছেলেটা সুন্দর আছে। At any cost i need him কিন্তু, সাজ্জাদ, আদ্রিতার সাথে কথা বলেছে দেখে নওশিনের আদ্রিতার প্রতি আরো রেগে যাচ্ছে।

রুমে আসার পর আলো বললে অনেক কষ্ট হয়েছে তাই না। তারপর আমরা বেশি কথা বললাম না আর চুপচাপ ক্লাস করে নিলাম।

এদিকে ~

সামিরা তার কাজ শেষ করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে বাসের জন্য। হঠাৎ খুব দ্রুত গতিতে একটি ট্রাক সামিরার দিকে আসতে লাগলো আর ঠিক তখনই………

#চলবে