অজানা অনুভূতি পর্ব-৩৬+৩৭+৩৮+৩৯

0
269

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৩৬
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

আদ্রর কথায় আদ্রিতা আর কথা বাড়ালো না। সাজ্জাদ কোনোমতে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বললো,

কোনো দরকার নেই এখন এই সব কিনার। ( সাজ্জাদ)

আচ্ছা ( আদ্রিতা)

আমি সম্পূর্ণ সিউর মিঃ সাজ্জাদ আপনি আদ্রর প্রতি জেলাস। এখন টের পাবেন হারে হারে। আমি এইটা ও নিশ্চিত আপনি আমাকে ভালোবাসেন দির সাথে বিয়ের নাটক কেনো করছেন আপনি ভালো জানেন। কিন্তু এই দু’বছর আপনার জন্য অনেক চোখের পানি ফেলিয়েছি। এখন দেখবেন মজা কাকে বলে ( আদ্রিতা মনে মনে কথা গুলো বলে একটা মুচকি হাসি দিলো তারপর বলে উঠলো,

না আদ্র ভাইয়া আমি গাজরা কিনবো। ( আদ্রিতা)

চলো মিস বকবক যেয়ে কিনে আনি ( আদ্র)

আদ্র আদ্রিতা আর আলো যেতে নিবে তখন সাজ্জাদ বলে উঠলো,

আদ্র তুই থাক আমি যাচ্ছি। ( সাজ্জাদ)

কেনো দুলাভাই আপুর জন্য কিনবেন নাকি নিজের শালিকার জন্য? ( আদ্রিতা)

আদ্রিতার কথা শুনে বিষম খেলো সাজ্জাদ। একটু আগেই সাজ্জাদের জন্য কান্না করছিলো আর এথন সাজ্জাদকে দুলাভাই বলে ডাকছে। সাজ্জাদ থমথমে গলায় বললো,

সবার জন্যই কিনবো। কথাটি বলে সাজ্জাদ সামনে হাঁটা শুরু করলো। আদ্রিতা মুখ টিপে হাসলো। আদ্রিতা আর আলো সাজ্জাদের পিছন পিছন গেলো। সাজ্জাদ ৩টি গাজরা কিনে নিলো। আদ্রিতা, সামিরা আর আলোর জন্য। তারপর সবার হাসি মজার মধ্যে দিয়ে কেটে গেলো কয়েকঘন্টা।

অনেক দেরি হয়েছে এখন সবার বাসায় যাওয়া উচিত। ( সাজ্জাদ)

আসলে ও সন্ধ্যা হয়ে এসেছে তাই বাকিরা ও দ্বিমত পোষণ করলো না। সামিরা, আলো,আদ্রিতা গাড়িতে উঠে পড়লো। স্বাধীন গাড়ি ড্রাইভ করবে। আদ্র সাজ্জাদের উদ্দেশ্য জিজ্ঞেস করলো,

ব্রো আমি এখন কোথায় বসবো? ( আদ্র)

যেখানে জায়গা আছে বসে পর। ( সাজ্জাদ)

মিস বকবক এর সাথে বসবো তাহলে? সারা রাস্তা মাথা নষ্ট করে দিবে।( আদ্র)

তুই সামনে বস আমি পিছনে বসি। ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা এর মধ্যে বলে উঠলো না আমি দুলাভাইের সাথে বসবো না। একটা কাজ কর দি তুই আমার জায়গায় বস। দুলাভাইের সাথে বস।( আদ্রিতা)

হ্যাঁ মিস বকবক ঠিক বলেছে ব্রো তুই সামিরা আপুর সাথে বস।( আদ্র)

সাজ্জাদ থমথমে গলায় বললো,

এখন আর সবাইকে বের হতে হবে না যে যেইখানে বসছে সেখানেই থাকুক। কথাটি বলে আদ্রিতার পাশে বসে পড়লো। আদ্র ও সামনের সিটে বসে পড়লো। স্বাধীন মুখ টিপে হাসলো। স্বাধীন গাড়ি চালানো শুরু করলো,

সবাই নিজের মতো গল্প করে যাচ্ছে। সাজ্জাদ আদ্রিতার কানের সামনে এসে আস্তে আস্তে বললো,

অনেক বার বেড়েছো বলেছিল না আদ্রর সাথে না মিশতে। ( সাজ্জাদ)

দুলাভাই দেখতে থাকুন আমি আর কি কি করি।( আদ্রিতা)

সাজ্জাদ প্রতিউওরে আর কিছু বললো না। হঠাৎ স্বাধীন থুব দ্রুত আর এলোমেলো ভাবে গাড়ি চালানো শুরু করলো, সবাই সামনে তাকিয়ে দেখলো একটি গাড়ি খুব দ্রুত এগিয়ে আসছে। আদ্রিতা ভয়ে সাজ্জাদের হাত খামছে ধরলো। স্বাধীন কোনোমতে গাড়িটি অন্য সাইডে নিয়ে থামালো।

একটুর জন্য বেঁচে গেছি। ( স্বাধীন)

ব্রো এইভাবে গাড়ি কে চালায় আর একটু হলে আমাদের পিষে মে*রে ফেলতো। ( আদ্র)

মনে হচ্ছিলো কেউ ইচ্ছে করে গাড়ি এমন ভাবে চালাচ্ছিলো। ( সামিরা)

যা হওয়ার হয়েছে এখন এই ব্যাপার নিয়ে আর কোনো কথা না। স্বাধীন তুই আবার গাড়ি চালানো শুরু কর।( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা এখনো সাজ্জাদের হাত ধরে আছে। সেদিকে আদ্রিতার খেয়াল নেই। সাজ্জাদ ও কোনো বাঁধা দিলো না। কিছুক্ষণ পর বাসায় পৌঁছে গেলো সবাই। আলো ও নিজের বাসায় চলে গেলো। সাজ্জাদ, স্বাধীন আদ্রকে বললো যেনো বাসায় চলে যায় ওদের কিছু কাজ আছে। আদ্রিতা আর সামিরা ও নিজেদের বাসায় চলো গেলো।

******

এসেছিছ? সব কিছু কেনাকাটা হয়েছে? ( আদ্রিতার মা)

হ্যাঁ মা সব কিনেছে। ( আদ্রিতা)

আদ্রিতা আর সামিরা সব কিছু বিয়ের শপিং দেখালো আদ্রতার মা বাবাকে। আদ্রিতার মা আদ্রিতার বাবার উদ্দেশ্য বললো,

তোমার মেয়ে বড়ো হয়ে গেছে। দুদিন পর অন্যের সংসারে যাবে। ( আদ্রিতার মা)

হুম বড় হয়ে গেছে। ( আদ্রিতার বাবা)

দেখ মা নতুন পরিবেশে যাবি সব কিছু মানিয়ে চলতে হবে। কিছুদিন পর থেকে ঔইটাই তোর সংসার। সবাইকে আপন করে নিতে হবে। ( আদ্রিতার মা)

কথাগুলো বলে আদ্রিতার মা চোখ মুছলো।

উফফফ মা এখন কেনো যে এই কান্নাকাটি শুরু করলে। কিছুদিন পরই কান্নাকাটি করো যখন একবারে চলে যাবে। আর দি যাওয়ার পর থেকে কিন্তু দির রুম ও আমার হয়ে যাবে 😁 ( আদ্রিতা)

হয়েছে আমার রুমে তালা লাগিয়ে যাবো তাও তোকে রুমে আসতে দিবো না। ( সামিরা)

দেখেছো মা তোমার বড় মেয়ে কতো খারাপ। ( আদ্রিতা)

আদ্রিতার কথা শুনে আদ্রিতার মা আর সামিরা হেঁসে উঠলো। আদ্রিতার বাবা আদ্রিতার হাস্যজ্বল চেহেরা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

আচ্ছা তোরা যেয়ে ফ্রেশ হয়ো নে। (আদ্রিতার মা)

ওকে বলে আদ্রিতা আর সামিরা উপনে চলে গেলো।

******

তোর কি মনে হয় তখন আমাদের সামনে এভাবে কে গাড়ি চালিয়েছিলো? ( স্বাধীন)

শএুর অভাব নেই। কে করেছে বোঝা মুশকিল।( সাজ্জাদ)

ওকে আমি খবর নিচ্ছি। কালকের মধ্যেই বের করে ফেলতে পারবো। ( স্বাধীন)

ওকে। ( সাজ্জাদ)

*******

মাঝখানে কেটে গেছি ৪ দিন। সাজ্জাদ আর সামিরার বিয়ের মাএ ৩ দিন বাকি এ ৪ দিনে আদ্রিতা সাজ্জাদকে অনেক জ্বালিয়েছে। সব সময় দুলাভাই বলে ডেকেছে। আদ্রর সাথে বেশি মিশেছে। সাজ্জাদ ও অনেক রেগে আছে আদ্রিতার উপর। আদ্রিতা পাওা না দিয়ে নিজের মতো চলেছে। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে আদ্রিতা নিচে নামলো।

আদ্রিতা একটু শোন ( আদ্রিতার মা)

হ্যাঁ বলো ( আদ্রিতা)

কিছু পিঠে বানিয়েছিলাম চাচ্ছি সাজ্জাদের বাসায় ও দিতে। তুই একটু কষ্ট করে দিয়ে দিস। ( আদ্রিতার মা)

আদ্রিতা ঢুক গিললো, এমনি সাজ্জাদ রেগে আছে এখন আবার সাজ্জাদের বাসায় যাবে?

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৩৭
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

আদ্রিতা পিঠে আর কিছু মিষ্টি নিয়ে সাজ্জাদের বাসায় গেলো।

*****সাজ্জাদের বাসায়*****

কলিং বেল এর শব্দে সাজ্জাদের মা এসে দরজা খুলে দিলো।

আন্টি আসসালামু আলাইকুম। আন্টি কেমন আছেন?(আদ্রিতা)

আলহামদুলিল্লাহ ভালো বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো ভিতরে আসো মা।( সাজ্জাদের মা)

আদ্রিতা ভিতরে আসলো।

বাড়ির সবাই কেমন আছে?(সাজ্জাদের মা)

আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। আন্টি আম্মু কিছু পিঠে বানিয়েছিলো সেগুলো দিতেই এসেছি। ( আদ্রিতা)

এখন আবার কষ্ট করে এগুলো বানাতে গেলো কেনো? এমনি এখন বিয়ে নিয়ে কতো কাজ বাকি আছে। ( সাজ্জাদের মা)

না আন্টি সমস্যা নেই। ( আদ্রিতা)

এমন সময় আদ্র নিচে নেমে আসলো,

আরে মিস বকবক যে সকাল সকাল তোমার চেহারা দেখলাম না জানি আমান দিন কতটা খারাপ কাটে। ( আদ্র)

শুধু শুধু মেয়েটাকে জালাস না ত এই মেয়ে যেই ঘরে যাবে সেই ঘর উজ্জ্বল করে রাখবে। ( সাজ্জাদের মা)

আদ্রিতা মুচকি হাসলো।

আচ্ছা মা শুন সামিরার কি কি পছন্দ আমরা ত জানি না তুই একটু সাজ্জাদের রুমে যেয়ে সাজ্জাদের সাথে কথা বল তাহলে সাজ্জাদ বুঝতে পারবে সামিরার পছন্দ অপছন্দ গুলো। ( সাজ্জাদের মা)

[ সাজ্জাদের বাবা আর আদ্রিতার বাবা বন্ধু ছিলো তাই ছোট থেকেই আদ্রিতাকে সাজ্জাদের মা তুই করে বলে। আদ্রিতা ছোট থেকেই অনেক চঞ্চল ছিলো তাই সাজ্জাদের মার সাথে আদ্রিতার সম্পর্ক অনেক ভালো। অন্যদিকে সামিরা সবসময় চুপচাপ থাকতো বলে সামিরারকে ও সাজ্জাদের মা স্নেহ করতো কিন্তু সামিরা এতো মিশতো না। আদ্রিতা যেনো ছিলো ভালোবাসার কাঙাল ]

আচ্ছা আন্টি যাচ্ছি। সাজ্জাদ ভাইয়ার রুম কোন দিকে? ( আদ্রিতা)

আদ্র আদ্রিতাকে নিয়ে যা। ( সাজ্জাদের মা)

আচ্ছা খালামনি যাচ্ছি। চলো মিস বকবক ( আদ্র)

সাজ্জাদের মা হাসলো আদ্রিতা আদ্রর সাথে গেলো। আদ্র কথা বলছে আদ্রিতা চুপচাপ শুনে যাচ্ছে। হঠাৎ আদ্রর ফোনে কল আসলো।

মিস বকবক সামনের ২য় নাম্বার রুমটি সাজ্জাদের। আপনি যান আমি কথা শেষ করে আসছি। ( আদ্র)

আচ্ছা ( আদ্রিতা)

আদ্র চলে গেলো। আদ্রিতা সাজ্জাদের রুমের সামনে এসে কিছু কথা শুনে আদ্রিতার হাত পা যেনো বরফের মতো ঠান্ডা হেয়ে গেলো কারণ আদ্রিতা শুনতে পেলো সাজ্জাদ কাউকে বলছে,

খু*ন করে ফেল শরীরের কোনো অংশে যেনো অবশিষ্ট না থাকে। এমন ভয়ানক ভাবে খু*ন কর যেনো সাধারণ কোনো মানুষ দেখলে তার আত্মা কেঁপে উঠে। আমি সন্ধ্যায় এসে ডেড বডি দেখতে চাই। ( সাজ্জাদ)

সাজ্জাদ ফোনে কথা বলছিলো পর্দার আড়ালে কারোর ছায়া দেখে চমকে উঠে দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে দেখে আদ্রিতা দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিতা সাজ্জাদকে দেখে ভয়ে হাত পা জমে যাচ্ছে। আদ্রিতার মনে হচ্ছে সাজ্জাদ এখন আদ্রিতাকেই খু*ন করে ফেলবে। আদ্রিতা পিছনে ফিরে দৌড়ে দিতে নিলে সাজ্জাদ হাত ধরে টান মেরে নিজের কাছে টেনে নেয়। আদ্রিতাকে টানতে টানতে রুমের ভেতরে নিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। ভয়ে আদ্রিতার চিল্লানোর শক্তিটুকু নেই। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

আআমি কিছু শুনি নি আআমকে ছেড়ে দিন প্লিজ। ( আদ্রিতা)

সাজ্জাদ তার ড্রয়ার থেকে পিস্তল বের করলো আদ্রিতার সামনে ঘুরিয়ে বললো,

আশা করি কাউকে কিছু বলবে না। আর বললে এর পরিণতি ভালো হবে না। তাই যা কথা শুনেছো ভুলে যাও। ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

কেনো এসেছিলে? ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা ভয়ে কিছু বলতে ও পারছে না অনবরত কাঁপছে। সাজ্জাদ পিস্তলটি আবার ড্রয়ারে রেখে দিলো। আদ্রিতার কাছে এসে ওকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আদ্রিতা না বলার মতো সাহস পর্যন্ত পাচ্ছে না।
সাজ্জাদ তা বুঝতে পেরে মুচকি হাসলো। হঠাৎ আদ্রিতার কোনো রেসপন্স না পেয়ে দেখলো আদ্রিতা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। সাজ্জাদ আদ্রিতাকে কো*লে তুলে নিলো। সাজ্জাদের বিছানায় শুয়ে দিলো। কো*লে তুলার সময় আদ্রিতার ওরনাটি নিচে পড়ে যাই। সাজ্জাদের খুব আদ্রিতাকে কাছে টানতে ইচ্ছে করছে। জ্ঞানহীন অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকা আদ্রিতার ঠোঁটে সাজ্জাদ নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। হাত দিয়ে পিঠে স্পর্শ করে। কিছুক্ষণ পর আদ্রিতাকে ছেড়ে দেয়। আদ্রিতার তখন ও জ্ঞান নেই। মুখে পানি ছিটাতে হবে। রুমে পানির জগ ও খালি। সাজ্জাদ আদ্রিতাকে আবার কো*লে তুলে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। কোনোমতে আদ্রিতার মুখের উপর পানি ছিটালে আদ্রিতার জ্ঞান ফিরে আসে। ওয়াশরুমে সাজ্জাদের কো*লে নিজের অবস্থান দেখে আদ্রিতা লজ্জায় কুঁকড়ে উঠলো। পরে বুঝতে পারলো আদ্রিতার ওর*না ও আদ্রিতার কাছে নেই। আদ্রিতা হাত পা ছুটোছুটি করতে থাকলে সাজ্জাদ আদ্রিতাকে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। আদ্রিতাকে নিচে নামিয়ে দেয়। আদ্রিতা ওরনা গায়ে দিয়ে দ্রুত দরজা খুলে দৌড়ে বেরিয়ে পড়ে এমন সময় আদ্র আসছিলো,

আরে মিস বকবক চলে যাচ্ছো নাকি? ( আদ্র)

আদ্রিতা আদ্রর কথার জবাব না দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো।

যাক বাবা এর আবার কি হলো। ( আদ্র)

*****

আন্টি আমি এখন বাসায় যাচ্ছি। ( আদ্রিতা)

কথাটি বলে আদ্রিতা সাজ্জাদের মার কোনো কথা না শুনে বেরিয়ে গেলো।

আদ্র সাজ্জাদের রুমে গেলো,

ব্রো মেয়েটা এভাবে দৌড়ে চলে গেলো কেনো?(আদ্র)

জানি না। ( সাজ্জাদ)

দুর ভেবেছিলাম তোর শালিকার সাথে একটু গল্প করবো কিন্তু তা আর হলো না। ( আদ্র)

আদ্রর কথা সাজ্জাদ কিছুটা বিরক্ত হলো।

কেনো এসেছিলো আদ্রিতা? (সাজ্জাদ)

মিষ্টি, পিঠে এগুলো নিয়ে এসেছিলো। ( আদ্র)

ওকে ( সাজ্জাদ)

আদ্র রুম থেকে চলে গেলো।

******* আদ্রিতার বাসায় *******

আদ্রিতা বাসায় আসার পর থেকে চিন্তা করে যাচ্ছে সাজ্জাদ কি কাজের সাথে জড়িতো? কেনো খু*ন করতে চাচ্ছে? কেনই বা সাজ্জাদের কাছে পিস্তল রয়েছে? আদ্রিতা রুমে বসে কথাগুলো চিন্তা করছুলো এমন সময় সামিরা রুমে আসলো

আদুরি ( সামিরা)

হ্যাঁ দি বল। ( আদ্রিতা)

সামিরা এসে আদ্রিতার পাশে বসলো।

তোকে কিভাবে কথা গুলো বলবো বুঝতে পারছি না। আমি জানি তুই সাজ্জাদকে ভালোবাসিস। কিন্তু মাএ ৩দিন পর সাজ্জাদের সাথে আমার বিয়ে আদো কি তুই মেনে নিতে পারবি? ( সামিরা)

আমি ভালোবাসতাম এখন আর বাসি না। তুই নিশ্চিন্তে বিয়ে করে নে। ( আদ্রিতা)

সামিরা আর কিছু বললো না। আদ্রিতা টুকটাক অন্য ব্যাপারে কথা বললো,

আচ্ছা দি আমার মনে হচ্ছে তুই শুধু সাজ্জাদের ব্যাপারে বলতে আসিছ নি অন্য ব্যাপারে ও বলতে চেয়েছিছ। ( আদ্রিতা)

সামিরা আদ্রিতার কথা শুনে চমকে উঠলো,

না তেমন কিছু না। এইটাই বলতে এসেছিলাম। কথাটি বলে সামিরা চলে গেলো।

দি আজকাল কেমন যেনো মরমরা হয়ে গেছে। কোনো কথা লুকাচ্ছিলো নাকি? ( আদ্রিতা মনে মনে কথা গুলো ভাবলো।)

******* সন্ধ্যায় *******

সাজ্জাদ অচেনা একটি জায়গায় প্রবেশ করলো,

যেমন ভাবে বর্ণনা দিয়েছিলো ঠিক তেমন একটি লা*শ দেখতে পেরে খুশি হলো। গার্ডরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। কারোর কারোর লা*শ দেখে ব*মি চলে আসছে।

মাটি চাপা দিয়ে দে ( সাজ্জাদ)

ওকে বস ( সাজ্জাদের লোক)

দেখে যেনো মনে হয় এখানে কিছুই হয় নি ( সাজ্জাদ)

ওকে বস ( সাজ্জাদের লোক)

সাজ্জাদ বেরিয়ে পড়লো সেই জায়গা থেকে মনে মনে তৃপ্তির হাসি

*****আদ্রিতার বাসায় রাতে *****

আদ্রিতা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। এক ঝোঁক হতাশা এসে আদ্রিতার মনে ভর করেছে। আদ্রিতা কিছু প্রশ্নের উওর পাচ্ছে না, যদি সাজ্জাদ আদ্রিতাকে ভালোবাসে তাহলে সামিরার সাথে বিয়ের নাটক কেনো করছে? আর সাজ্জাদ কি খারাপ কাজের সাথে জড়িত? না হলে কাউকে কেনো খু*ন করতে চাইবে? আদ্রিতা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথাগুলো ভাবছিলো তখনই নিচে দেখলো যে………….

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৩৮
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

আদ্রিতা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা গুলো ভাবছিলো তখনই নিচে দেখলো যে, স্বাধীন দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীনকে এই রাতে দেখে আদ্রিতা চমকে উঠলো। আদ্রিতা একবার ভাবলো স্বাধীনকে ডাক দিবে। পরে আবার ভাবলো দেখা যাক স্বাধীন এখানে কি করতে এসেছে,

স্বাধীন কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আবার চলে গেলো।

যাক বাবা চলেই যদি যাবে এসেছিলো কেনো? আর কোনো দরকার থাকলে সামনের দরজা দিয়ে আসতো এইভাবে লুকিয়ে বাগানে কেনো আসলো? না কেনো এসেছিলো তা জানতেই হবে। আদ্রিতা মনে মনে কথা গুলো ভেবে সামিরার রুমে গেলো,

দি আসবো? ( আদ্রিতা)

হ্যাঁ ভিতরে আয় সামিরা বই পড়ছিলো হাত থেকে বইটা রেখে কথাটা বললো।

দি একটা দরকার ছিলো ( আদ্রিতা)

হ্যাঁ বল কি দরকার? ( সামিরা)

স্বাধীন ভাইয়ার নাম্বার আছে তোর কাছে? ( আদ্রিতা)

না আমার কাছে নাম্বার নেই। ( সামিরা)

তাহলে সাজ্জাদের নাম্বার আছে? ( আদ্রিতা)

হ্যাঁ এই নে নাম্বার। ( সামিরা)

সামিরা আদ্রিতাকে নাম্বারটি দিলো। আদ্রিতা নিজের ফোনে নাম্বারটি সেভ করে নিলো।

ওকে দি ( আদ্রিতা)

কিন্তু এতো রাতে তোর এই নাম্বার দরকার কেনো? (সামিরা)

এমনিই একটু দরকার ছিলো আর কি ( আদ্রিতা)

ও আচ্ছা যা ( সামিরা)

আদ্রিতা চলে গেলো। সামিরা ও এই ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামালো না। আবার বই পড়া শুরু করে দিলো। আদ্রিতা নাম্বার ত নিয়েছে কিন্তু সাজ্জাদকে কল দিতে দ্বিধা বোধ করছে। তাও শেষ পর্যন্ত কল দিলো সাজ্জাদকে,

আসসালামু আলাইকুম ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা সালামের জবাব দিলো।

সাজ্জাদ আদ্রিতার কন্ঠ স্বর শুনেই বুঝতে পারলো আদ্রিতা কল করেছে। তুমি এতো রাতে কল করেছো? কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি? ( সাজ্জাদ)

না কোনো সমস্যা হয় নি। ( আদ্রিতা)

তাহলে আমাকে মিস করছিলে বুঝি? ( সাজ্জাদ)

একদমই না ( আদ্রিতা)

তাহলে সকালের মতো রোমান্স করতে চাচ্ছো নাকি? আসবো তোমার কাছে? ( সাজ্জাদ)

উফফফ কি অ*সভ্য লোকরে ( আদ্রিতা মনে মনে)

দরকার ছিলো তাই কল করেছি। ( আদ্রিতা)

বলেন ম্যাডাম কি দরকার? ( সাজ্জাদ)

স্বাধীন ভাইয়া একটু আগে আমাদের বাগানে এসেছিলো। কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেলো। কোনো কাজ থাকলে সরাসরি বাসায় আসতে পারতো। আর যেহেতু কোনো কাজ ছিলো না সেহেতু এতো রাতে আমাদের বাগানে আসার মানে কি? স্বাধীন ভাইয়া কেনো এসেছিলো?

আমি কিভাবে জানবো কেনো এসেছিলো? ( সাজ্জাদ)

আজব আপনার মাধ্যমেই স্বাধীন ভাইয়ার সাথে পরিচয়। তাই আপনার জানাটাই স্বাভাবিক। (আদ্রিতা)

তুমি মনে হয় ঘুমের চোখে দেখেছো স্বাধীন কেনো যাবে? ( সাজ্জাদ)

না আমি সম্পূর্ণ সিউর ওইটা স্বাধীন ভাইয়া ছিলো।

না স্বাধীন অফিসে আছে। ( সাজ্জাদ)

ও তাহলে আমার মনের ভুল হতে পারে। ( আদ্রিতা)

হুম মনের ভুল। ঘুমাও একা ঘুমাতে ভয় পাবে নাকি আমি আসবো? ( সাজ্জাদ)

উফফফ কি অবস্থা কথাটি বলে আদ্রিতা ফোন রেখে দিলো।

সাজ্জাদ যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। স্বাধীনকে কল দিলো,

তোর সমস্যা কিরে? ( সাজ্জাদ)

আমি আবার কি করলাম? ( স্বাধীন)

আদ্রিতাদের বাসায় গিয়েছিলি কেনো? ( সাজ্জাদ)

তুই কিভাবে জানলি?🥹 ( স্বাধীন)

আদ্রিতা কল করেছিলো ও তোকে দেখে ফেলেছিলো। কোনোমতে ওকে বুঝিয়েছি ও ভুল দেখেছে। ( সাজ্জাদ)

ও আচ্ছা তাহলে ওর সমস্যা কোথায় তুই ত সামলে নিয়েছিছ। ( স্বাধীন)

সব সময় কি আমি নজর রাখবো নাকি? নেক্সট টাইম থেকে খেয়াল রাখিস ( সাজ্জাদ)

আচ্ছা ( স্বাধীন)

সাজ্জাদ দোটানায় পড়ে আছে। সব কিছু পরিকল্পনা থাকলে এক অজানা ভয় গ্রাস করছে। আদ্রিতা ও বুঝতে পারছে না কি হতে চলেছে। এক আকাশ সমান অনিশ্চয়তা, অভিমান শত শত অভিযোগ নিয়ে দু’জনই ঘুমিয়ে পড়লো। আদো কি তাদের ভালোবাসার পূর্ণতা পাবে? দু’টি মানুষ কি কখনো এক হতে পারবে?

******সকালে*****

কালকে সামিরার হলুদের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এখনই আদ্রিতাদের বাসায় মেহমান আসতে শুরু করছে। সাজ্জাদের বাসায় ও সেম অবস্থা। ঘুম থেকে উঠে আদ্রিতা রেডি হয়ে নিচে নেমে গেলো,

কোথায় যাচ্ছিছ? ( আদ্রিতার মা)

কলেজে ( আদ্রিতা)

কালকে বাসায় এতো বড় অনুষ্ঠান আর এখন তুই কলেজে যাবি? ( আদ্রিতার মা)

মা আজকে এক্সাম আছে যেতেই হবে ( আদ্রিতা)

আচ্ছা যা তাহলে ( আদ্রিতার মা)

আচ্ছা কথাটি বলে আদ্রিতা বেরিয়ে পড়লো।

ভাবি আজকের দিনে মেয়েটাকে বাইরে যেতে না দিলে ও পারতা ( আদ্রিতার ফুফু)

থাক না আপা মেয়েটার এক্সাম ( আদ্রিতার মা )

আমি বলি কি মেয়ে ছোট থাকতে থাকতেই বিয়ে দিয়ে দেও। ( আদ্রিতার ফুফু)

সবে মাএ ইন্টারে পড়ে আর ও পরে বিয়ে দিবো। ( আদ্রিতার মা)

আদ্রিতার ফুফু আর কথা বাড়ালো না। সামিরা উপর থেকে কথা গুলো শুনছিলো সামিরা পারলে আদ্রিতার সাথে সাজ্জাদেরই বিয়ে দিয়ে দেয়।

কিরে তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিছ যে? ( মুন)

না আপু এমনি ( সামিরা)

(মুন হচ্ছে আদ্রিতার ফুফাতো বোন। ৬ মাস আগেই বিয়ে হয়েছে। )

তুই কোনো বিষয়ে আপসেট? ( মুন)

না আপু কেনো? ( সামিরা)

এই বিয়ে নিয়ে তোর কোনো আগ্রহ দেখছি না। তোর কি আদো এই বিষয়ে মত আছে? ( মুন)

হ্যাঁ আপু মত আছে পরিবার ছেড়ে চলে যেতে হবে তাই একটু আপসেট। ( সামিরা)

এইটা নরমাল ব্যাপার বিয়ের ক’দিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে। ( মুন)

হ্যাঁ আপু ( সামিরা)

আমি ও প্রথমদিকে অনেক কান্নাকাটি করতাম। তোর দুলাভাই সামলে নিয়েছে। ( মুন)

সামিরা মুচকি হাসলো।

মুন এর স্বামী মুনকে ভালোবাসে তাই ওকে মানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সাজ্জাদ ত আদ্রিতাকে ভালোবাসে সাজ্জাদকি সামিরাকে মানিয়ে নিবে?

****আদ্রিতার কলেজে *****

আদ্রিতার কথা শুনে সবাই চিল্লিয়ে উঠলো

কিকিকি সাজ্জাদ ভাইয়ার সাথে আপুর বিয়ে? (তানহা)

হুম ( আদ্রিতা)

কিন্তু আমি ত মনে করেছিলাম সাজ্জাদ ভাইয়া তোকে ভালোবাসে ( আবির)

আমি ও তাই ভেবেছিলাম ( তানহা)

কালকে গায়ে হলুদ তোরা সবাই চলে আসিস ( আদ্রিতা)

কিন্তু আদ্রিতা ( আলো)

কোনো কিন্তু নেই চলে আসিস কথাটি বলে আদ্রিতা কলেজ থেকে বেরিয়ে গেলো।

*******

সাজ্জাদ নিজের রুমে বসে কাজ করছে। একটু আগে অফিসে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু সাজ্জাদের মা কোনোভাবে আজকে বের হতে দিবে না। তাই বাধ্য হয়ে ঘরে বসেই কাজ করছে।

ব্রো কালকে তোর হলুদের অনুষ্ঠান আর এখন তুই কাজ করছিছ? ( আদ্র)

কাজ না করলে বউকে কি খাওয়াবো? ( সাজ্জাদ)

চিল ব্রো এখন ত সামিরা আপুকে একটু সময় দিতে পারিছ। ( আদ্র)

আমকর টাইম নেই ( সাজ্জাদ)

এজন্যই তোর কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই ( আদ্র)

হ্যাঁ আর তাই তোর ১০০ টা গার্লফ্রেন্ড রয়েছে। ( সাজ্জাদ)

না ব্রো মাএ ১৭ জন। ( আদ্র)

সাজ্জাদ বিষম খেলো আদ্রর কথা শুনে। আদ্র গান গাইতে গাইতে রুম থেকে চলে গেলো। আদ্রর এইসব আচরণের জন্যই সাজ্জাদ আদ্রকে পছন্দ করে না।

******

আজকে কলেজে কোনো এক্সাম ছিলো না। কিন্তু বাসায় অসহ্য লাগছিলো তাই কলেজে এসেছিলো। কিন্তু সবাই সাজ্জাদের সাথে সামিরার বিয়ে শুনে আদ্রিতাকে অনেক প্রশ্ন করছে। তাই আদ্রিতা কলেজ থেকে বেরিয়ে পড়লো। সব কিছু অসহ্য লাগছে আদ্রিতার কাছে। আদ্রিতা একটি নদীর পাড়ে গিয়ে বসে পড়লো। অনেক সময় নিরবতা শ্রেয়। আদ্রিতা সেই নিরবতাকে অনুভব করতে চাচ্ছে। সেজন্যই একা এসে বসে আছে। আদ্রিতা খোলা আকাশের নিচে বসে ঠান্ডা পরিবেশ উপভোগ করছে। আর ঠিক তখনই আদ্রিতার মনে হলো যে……

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৩৯
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

আদ্রিতার মনে হলো যে আদ্রিতাকে কেউ লক্ষ্য করছে। যেই পিছনে ফিরে তাকালো কাউকে দেখতে না পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। কিন্তু কেমন জানি একটা ভয় করছে। তাই আদ্রিতা দাঁড়িয়ে পড়লো বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্য। হঠাৎ খুব দ্রুত বেগে সাজ্জাদের গাড়ি এসে থামলো আদ্রিতার সামনে,

আপনি এইখানে? ( আদ্রিতা)

গাড়িতে উঠো ফাস্ট ( সাজ্জাদ)

কিন্তু আপনি এইখানে কেনো? ( আদ্রিতা)

বলছি না গাড়িতে উঠো সাজ্জাদ চিল্লিয়ে কথাটি বলে উঠলো। আদ্রিতা ও আর কথা বাড়ালো না। গাড়িতে উঠে পড়লো। সাজ্জাদ গাড়ি চালানো শুরু করলো।

তুমি সেখানে একা কি করছিলে? ( সাজ্জাদ)

এমনি একটু নদীর পাড়ে এসেছিলাম। কিন্তু আপনি কি করে জানলেন আমি এখানে এসেছি? আর আপনিই বা এখানে কি করছেন? ( আদ্রিতা)

এতো কথার উওর তোমাকে দিতে আমি বাধ্য নয়।( সাজ্জাদ)

সাজ্জাদের গম্ভীরের কন্ঠ শুনে আদ্রিতা আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না।

কলেজের কথা বলে এখানে কেনো এসেছো?(সাজ্জাদ)

আমি ও আপনাকে জবাব দিতে বাধ্য নয়। ( আদ্রিতা)

সাজ্জাদ আর কথা বাড়ালো না।

শুনুন গাড়ি থামান ( আদ্রিতা)

কেনো? ( সাজ্জাদ)

নাস্তা করবো। ( আদ্রিতা)

বাসায় যেয়ে কইরো ( সাজ্জাদ)

না আমি যাবো না এখন বাসায় গাড়ি থামান আপনি। ( আদ্রিতা)

সাজ্জাদ আদ্রিতার কলেজের সামনে গাছের থামিয়ে দিলো। আদ্রিতা ও নেমে গেলো। সাজ্জাদ আবার চলে গেলো। আদ্রিতা কলেজের ভিতরে চলে গেলো। পরে আলোকে নিয়ে বের হলো। ওর সাথে বাসায় যাওয়ার জন্য আর আলোর সাথেই কিছু খেয়ে নিবে।

****সাজ্জাদের অফিসে****

সাজ্জাদ ফাইল দেখছে। এমন সময় স্বাধীন রুমে আসলো।

আদ্রিতাকে কোখায় রেখে এসেছিছ? ( স্বাধীন)

কলেজে ( সাজ্জাদ)

ও কালকে গায়ে হলুদ সব প্রস্তুতি হয়েছে? ( স্বাধীন)

হুম সব কাজ কমপ্লিট। ( সাজ্জাদ)

ও আচ্ছা ( স্বাধীন)

তুই ঠিক টাইম মতো আমার বাসায় চলে আছিছ।(সাজ্জাদ)

চিল ব্রো এসে পড়বো। ( স্বাধীন)

কালকের জন্য স্বাধীনের ও চিন্তা হচ্ছে অনেক।

******

সারাদিন বাসার কাজ শেষ করে মেহমানদের খাবার খাইয়ে আদ্রিতা রুমে এসে শুয়ে পড়লো। বিছানায় শুয়ে পরার সাথে সাথে ঘুমের রাজ্য হারিয়ে গেলো।

*****

সাজ্জাদের চোখে ঘুম নেই। কেনো জানি নিজের কনফিডেন্স হারিয়ে ফেলেছে। আদো কি আদ্রিতা আর সাজ্জাদ এক হতে পারবে?, নাকি সাজ্জাদের সংক্ষিপ্ত গল্পের অসমাপ্ত কাহিনি হিসেবে আদ্রিতা থেকে যাবে?

****

সামিরা বারান্দায় বসে আছে। ছোট থেকেই মেয়েটা চুপচাপ বিধায় একা থাকতেই পছন্দ করে। ওই যে সামিরার বারান্দা থেকে দেখা যাচ্ছে একটি তারা জ্বলছে। আচ্ছা সামিরা কি কখনো সাজ্জাদের সাথে এইভাবে নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করবে? সাজ্জাদ কি আদো সামিরাকে আপন করে কাছে টেনে নিবে? সাজ্জাদের সাথে বিয়ে ঠিক হবার পর থেকেই সামিরা অন্য কারোর প্রতি এক #অজানা_অনুভূতির স্বীকার। আদো কি সামিরা নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবে?

****

স্বাধীন নিজের অফিসের কাজ করছে। বিয়ের জন্য সাজ্জাদ দুদিনের ছুটি নিয়েছে। তাই সব কাজ স্বাধীনের করতে হচ্ছে। স্বাধীনের টেবিলের মধ্যেই তার অসময়ী বৃষ্টির ছবি রাখা আছে। এ-ই মেয়েটার ছবি দেখলে ও যেনো স্বাধীনের কাছে শান্তি লাগে।

******

কেটে গেলো আর একটি দিন। আজকে সামিরার গায়ে হলুদ। প্রথমে মেয়ের বাসা থেকে সাজ্জাদের বাসায় যাবে হলুদ নিয়ে। সাজ্জাদকে হলুদ দিবে। তারপর সাজ্জাদের বাসা হতে সামিরার বাসায় মানুষ আসবে সামিরাকে হলুদ দিতে। সকাল সকাল আদ্রিতা ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। আদ্রিতার বাসায় এখন ওর দাদু বাসার সব মানুষ নানা বাসার মানুষরা আছে। সাজ্জাদের বাসায় ও একই অবস্থা।

মা আজকে ওই বাসায় কে কে যাবে? ( আদ্রিতা)

আদ্রিতার বড় খালামনি বলে উঠলো,

ছোটরা যাক ওরা গেলে মজা করতে পারবে। সাথে সাকিব যাক ( সাকিব আদ্রিতার খালাতো ভাই) আর ও কিছু মানুষ যাবে ( আদ্রিতার খালামনি).

আচ্ছা ঠিক আছে। আমি দির রুমে যাচ্ছি। কথাটি বলে আদ্রিতা সামিরার রুমে চলে গেলো। সামিরার রুমে সব বিচ্ছু বাহিনী অর্থাৎ ছোট বাচ্চাতে রুম ভরা। এতো বাচ্চা গুলোর মধ্যে আদ্রিতা সামিরার সাথে কথা বলবে কি করে? তাই আদ্রিতা বাচ্চাদের উদ্দেশ্য বলে উঠলো,

বাইরে যে সবার আগে যাবে তাকে চকলেট দেওয়া হবে। ( আদ্রিতা)

সব বাচ্চারা দৌঁড়ে বাইরে চলে গেলো। আদ্রিতা রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো। সাসিরা হাসলো,

পাশে এসে বস ( সামিরা)

আদ্রিতা সামিরার কাছে এসে বসলো,

দি আমাদের মিস করবি ত? ( আদ্রিতা)

মিস ত করতেই হবে তোর মতো একটা বান্দর বোন যার থাকবে তাকে মিস না করে কি পারা যায়?(সামিরা)

কাল থেকে এইরুম আমার হয়ে যাবে 😁 ( আদ্রিতা)

রুমে তালা লাগিয়ে যাবো। ( সামিরা)

আদ্রিতা হাসলো। সামিরা এবার একটু সিরিয়াস ভাবে বললো,

সাজ্জাদকে ভালোবাসিস? ( সামিরা)

না দি ভালোবাসতাম এখন থেকে সে তোমার হাসবেন্ড। তাই আর এ-ধরনের কথা বলো না ( আদ্রিতা)

সামিরা ওএই ব্যাপারে আর কথা বাড়ালো না। কারন এইসব কথায় দু’জনই ভিতর থেকে ভেঙে পড়ছে।,

মা বাবাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো? কথাটি বলে সামিরার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো।

আরে তুই দেখি বিয়ের আগেই কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিছ। ( আদ্রিতা)

বিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত। আর বড় বড় সিদ্ধান্তর সময়ের সব মেয়েদের চোখে পানি আসেই। এটা স্বাভাবিক বিষয়। (সামিরা)

কিন্তু আমার চোখে ত পানি আসে না। ( আদ্রিতা)

তোর বিয়ের সময় দেখিছ কত কান্না করবি তোর নিজের ও জানা নেই ( সামিরা)

আগে তুই বিয়ে করে নে তারপর আমারটা দেখা যাবে। ( আদ্রিতা)

এমন সময় দরজায় কেউ ধাক্কা দিলো। আদ্রিতা যেয়ে দরজা খুলে দিলো,

আরে তুইএখানে বসে গল্প করছিছ? দুপুর হয়ে আসলো সবার খাবার বেড়ে দিতে হবে নিচে চল ( মুন)

আচ্ছা আপু চলো ( আদ্রিতা)

সামিরা শোন বিয়ের সময় একা থাকা ঠিক না। তোর দাদু নিচের রুমে আছে আমার সাথে নিচের রুমে চল। ( মুন)

আচ্ছা আপু ( সামিরা)

সামিরা, আদ্রিতা মুন নিচে চলে গেলো। সামিরা তার দাদুর রুমে চলে গেলো। আদ্রিতা মুন বাকি যেই মেয়েরা বাসায় আছে সবাই খাবার পরিবেশনের কাজে লেগে পড়লো। ছেলেদের খাওয়া হলে মেয়েরা ও খেয়ে নিলো। সবার সাথে গল্প করতে করতে বিকাল হয়ে গেলো।

তোরা ত সন্ধ্যায় বের হবি রেডি হওয়া শুরু কর তোরা। একবার রেডি হওয়া শুরু করলে ত আর থামার নাম থাকে না। ( আদ্রিতার মা)

সবাই যার যার মতো রুমে গেলো রেডি হওয়ার জন্য। আদ্রিতা ও রুমে এসে দরজা আটকে দিলো। গোসল করার জন্য ওয়াশরুমে গেলো। ঠিক তখনই বারান্দা দিয়ে কেউ আদ্রিতার রুমে প্রবেশ করলো, সম্পূর্ণ কালো ড্রেস কালো মুখোশের জন্য তাকে চেনা যাচ্ছে না। আদ্রিতার খাটের উপর একটি সুন্দর লেহেঙ্গা রেখে দিলো। সাথে সাজগোজ করার জন্য আর ও অনেক জিনিস। জিনিসগুলো লোকটি সুন্দরভাবে খাটের উপর সাজিয়ে রাখছিলো।

অন্যদিকে আদ্রিতা ভুল করে ওয়াশরুমে জামা নিতে ভুলে গেছে রুমের দরজা বন্ধ থাকায় আদ্রিতা নিশ্চিন্তে ছিলো। টাওয়াল পেচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো।

লোকটি বিছানায় সব জিনিস গুছিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো আদ্রিতা শুধু টা*ওয়াল পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিতা যেনো কথা বলতে ও ভুলে গেছে। লোকটি ও স্তব্ধ হয়ে গেছে। আদ্রিতা চিল্লাতে নিবে ঠিক সেই সময়……..

#চলবে