অজানা অনুভূতি পর্ব-৩২+৩৩+৩৪+৩৫

0
178

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৩২
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

সামিরার সাথে কি সাজ্জাদের বিয়ে হয়ে যাবে? আদ্রিতা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথাটি ভাবছিলো।

আরে মা এসেছিছ। ( আদ্রিতার মা)

হুম মাএই আসলাম। কি নিয়ে কথা বলছিলে? (আদ্রিতা)

সামিরার বিয়ের ত মাএ এক সপ্তাহ বাকি। সেগুলো নিয়েই কথা বলছিলাম৷ ( আদ্রিতার মা)

ও, দি কোথায়? ( আদ্রিতা)

রুমে আছে। ( আদ্রিতার মা)

আচ্ছা কথাটি বলে আদ্রিতা সামিরার রুমে যাওয়ার জন্য উপরে উঠে গেলো।

*****সাজ্জাদের বাসায় ******

ছেলেটার ১ সপ্তাহ পর বিয়ে কিন্তু ছেলের যেনো কোনো হুস নেই। কতো কাজ পড়ে আছে। ( সাজ্জাদের মা)

ছেলেকে বলে দেও কি কি কাজ করতে হবে। ( সাজ্জাদের বাবা)

হ্যাঁ ঠিক বলেছো, এই সাজ্জাদ একটু নিচে নাম ( সাজ্জাদের মা)

সাজ্জাদ তখন বাসায় ছিলো। হ্যাঁ, মা ডেকেছো?বলো কি বলবে? ( সাজ্জাদ)

বিয়ের তারিখ ত ঘনিয়ে এসেছে। কনের শপিং করা ও বাকি। ( সাজ্জাদের মা)

আমি ফ্রি আছি এখন শপিংয়ে কে কে যাবে?( সাজ্জাদ)

তুই, স্বাধীন, আদ্রিতা আর সামিরা তোরা ৪ জন যা (সাজ্জাদের মা)

আচ্ছা মা। কবে যেতে হবে? ( সাজ্জাদ)

কালকে যা। ( সাজ্জাদের মা)

তুমি একটু ওদের জানিয়ে রেখো কালকে বিকালে তাহলে যাবো। ( সাজ্জাদ)

বিকেলে কেনো? সকালে বের হ সারাদিন শপিং কর ভালো করে যা যা প্রয়োজন হয় কিনে ফেল। ( সাজ্জাদের মা)

আচ্ছা মা। ( সাজ্জাদ)

কথাটি বলে সাজ্জাদ আবার রুমে চলে গেলো।

সাজ্জাদের মা আদ্রিতার মাকে ফোন করলো,

বেয়াইন কেমন আছেন? ( সাজ্জাদের মা)

আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি? ( আদ্রিতার মা)

জ্বি ভালো, বিয়ের সময় এগিয়ে আসছে। আমরা চাচ্ছি কালকে বিয়ের শপিং সেরে ফেলতে। আপনি কি বলেন? ( সাজ্জাদের মা)

জ্বি অবশ্যই কাজ যত তাড়াতাড়ি সেরে ফেলা হবে ততই মঙ্গল। ( আদ্রিতার মা)

তাহলে কালকে সকালে সামিরা আর আদ্রিতাকে রেডি থাকতে বলবেন সাজ্জাদ এসে ওদের নিয়ে যাবে। ( সাজ্জাদের মা)

আদ্রিতা ত যাবে না সামিরা যাক। ( আদ্রিতার মা)

আদ্রিতা যাবে না কেনো? (সাজ্জাদের মা)

আদ্রিতা ওর বান্ধবী আলোর সাথে নাকি শপিংয়ে যাবে। ( আদ্রিতার মা)

ও আচ্ছা এই ব্যাপার তাহলে কালকে আদ্রিতার বান্ধবী কেও আসতে বলবেন। সবাই একসাথে বিয়ের শপিং করলে তখনই আসল মজা পাওয়া যায়। আর সাজ্জাদের সাথে ও স্বাধীন আর সাজ্জাদের একজন কাজিন আসতে পারে। ( সাজ্জাদের মা)

আচ্ছা বেয়াইন। ( আদ্রিতার মা)

আরো কতক্ষণ সাজ্জাদের মা আর আদ্রিতার মা কথাবার্তা বলে ফোন কেটে দিলো।

********

দি,রুমে আসবো? ( আদ্রিতা)

তুই আবার কবে থেকে অনুমতি নিয়ে রুমে আসিস? ( সামিরা)

না দি এমনিই (আদ্রিতা)

কিছু বলবি? বললে বল ( সামিরা)

তোর বিয়ের মাএ ১ সপ্তাহ বাকি। ( আদ্রিতা)

হুম জানি। কিন্তু সাজ্জাদের তোর প্রতি কেয়ার দেখলে মনে হয় সাজ্জাদ তোকে ভালোভাসে। ( সামিরা)

আদ্রিতা নিশ্চুপ।

সাজ্জাদ বলেছিলো যেভাবে হচ্ছে সেভাবে চলতে দিতে। সবার ভালোবাসার নাকি পূর্ণতা পাবে। ( সামিরা)

হুম। ( আদ্রিতা)

এমন সময় আদ্রিতার মা রুমে আসলো। কালকে বিয়ের শপিং এ যেতে হবে তোরা সকালে রেডি থাকিস। সাজ্জাদ নিতে আসবে। আর আদ্রিতা তোর বন্ধুদের ও বলে দিস যেনো বিয়েতে আসে। আর কালকের শপিংয়ে আলোকে নিয়ে যাস। এক সাথেই সব শপিং সেরে ফেল আলোর সাথে আলাদা যাওয়ার দরকার নেই। কালকেই আলোকে সাথে নিয়ে যা।( আদ্রিতার মা)

এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের শপিং? ( সামিরা)

তাড়াতাড়ি কই মাএ ১ সপ্তাহ বাকি। ( আদ্রিতার মা)

আচ্ছা কালকে সকালে যাবো। ( সামিরা)

আলোকে নিয়ে গেলে ওরা কি ভাববে না ভাবতে পারে। (আদ্রিতা)

না ওরা কিছু ভাববে না। সাজ্জাদের মার সাথে আমার কথা হয়েছে। তুই আলোকে ফোন করে বলে দিস। ( আদ্রিতার মা)

আচ্ছা আমি বলে দিবো আলোকে। ( আদ্রিতা)

আচ্ছা কথাটি বলে আদ্রিতার মা চলে গেলো।

দি আমি ও গেলাম কথাটি বলে আদ্রিতা ও চলে গেলো। সামিরা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সব কিছু কেমন জানি হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

আদ্রিতা রুমে আসলো অস্থির অস্থির লাগছে। আদ্রিতা আলোকে ফোন দিলো,

কিরে কেমন আছিছ? ( আলো)

হ্যাঁ, আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুই? ( আদ্রিতা)

হ্যাঁ ভালো আছি। ( আলো)

শোন এক সপ্তাহ পর দির বিয়ে কালাে শপিংয়ে যাবো। তুই আসিস। ( আদ্রিতা)

কিকিকি??? আপুর বিয়ে মাএ এক সপ্তাহ পর। আর তুই আমাকে আজকে জানালি। কাজটা ঠিক করলি না৷ আচ্ছা দুলাভাইয়ের নাম কি? ( আলো)

সাজ্জাদ। ( আদ্রিতা)

কি মানে? সাজ্জাদ ভাইয়ার সাথে আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে? ( আলো)

হুম সাজ্জাদের সাথে আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে। ( আদ্রিতা)

কিন্তু তুই না সাজ্জাদকে ভালোবাসিস….? ( আলো)

এইসব কথা আর তুলিস না। কালকে সকালে সময় মতো চলে আসিস বাসার সামনে। তোর জন্য অপেক্ষা করবো। কথাটি বলে আলোর উওরের অপেক্ষা না করে আদ্রিতা ফোন কেটে দিলো। আলো স্তব্ধ হয়ে গেলো। আদ্রিতা কি সাজ্জাদের বিয়ে অন্য কারোর সাথে মেনে নিতে পারবে?

আদ্রিতা ফোনটি রেখে দিতে নিলো এমন সময় খেয়াল করলো, ২য় নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে,

মায়াপরী তুমি চিন্তা করো না। আমি সব ঠিক করে দিবো। আর ১ সপ্তাহ বাকি। তারপর তুমি শুধুই আমার।

মেসেজটি পরে আদ্রিতার বুকটা ধক করে উঠলো। কে এই মেসেজ দিচ্ছে? ১ সপ্তাহ পর কি হবে? আদ্রিতা আর কিছু চিন্তা করতে চাচ্ছে না। আদ্রিতা ফ্রেশ হয়ে নিলো। দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

******রাতে******

সাজ্জাদ ঘরে বসে কাজ করছিলো। এমন সময় সাজ্জাদের বাবা রুমে আসলো।

বাবা কিছু বলবে? ( সাজ্জাদ)

হুম বিয়ের সময় কিন্তু এগিয়ে এসেছে। তুই যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিছ তা আদো কি সঠিক? (সাজ্জাদের বাবা)

হ্যাঁ বাবা আমি সব দিক বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ( সাজ্জাদ)

আচ্ছা ঠিক আছে। তোর সিদ্ধান্তের উপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে।

কথাটি বলে সাজ্জাদের বাবা যেতে নিলো যাওয়ার সময় বললো,

শোন একটি কথা বলতে ভুলে গেছিলাম আদ্র আসছে। রওনা দিয়েছে কতক্ষণ পর বাসায় আসবে। কথাটি বলে সাজ্জাদের বাবা রুম থেকে চলে গেলো।
সাজ্জাদ চিন্তা করছে আদ্র কেনো আসবে এখন?

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৩৩
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

সকাল সকাল আদ্রিতা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে ঘুম ঘুম চোখে। মন থেকে কোনো ভাবেই সামিরার বিয়ের বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না। আবার মুখ ফোঁটে কিছু বলতে ও পারছে না৷। সারা রাত কান্না করে ভোরে ঘুমিয়েছিলো কিন্তু সকাল সকাল আদ্রিতার মা ঘুম থেকে তুলে দিয়েছে শপিং এ যাওয়ার জন্য। আদ্রিতা কোনোমতে ফ্রেশ হয়ে এসে দাঁড়িয়ে আছে সাথে সামিরা ও আছে। আলো বা সাজ্জাদ ওরা কেউ এখনো আসে নি।

উফফ দি আমি বাসায় গেলাম আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো। ( আদ্রিতা)

চুপ কর আমার নিজের ও দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না। কিন্তু কি করবো? ( সামিরা)

আমার ঘুম পাচ্ছে একটু ঘুমিয়ে আসি? ( আদ্রিতা)

চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক। সারারাত কি করেছিছ? ঘুমাস নি কেনো? ( সামিরা)

আর্জেন্টিনার খেলা দেখেছি 😎 ( আদ্রিতা)

হায়রে 🤦‍♀️ ( সামিরা)

এন সময় আলো আসলো,

সরি সরি দেরি করে ফেলেছি। ( আলো)

আরে আলো দেরি হয় নি যাদের সাথে যাবো তারাই এখনো আসে নি। ( সামিরা)

আচ্ছা। আপু তোমাকে অনেক অনেক শুভকামনা নতুন জীবনে অনেক সুখের হবে। ( আলো)

ধন্যবাদ। ( সামিরা)

আদ্রিতা আগে থেকেই আলোকে বলে রেখেছিলো। সাজ্জাদের সাথে আদ্রিতার কোনো ব্যাপার নিয়ে যেনো সামিরাকে না বলে। হঠাৎ খুব দ্রত গতিতে একটি গাড়ি এসে থামলো আদ্রিতাদের সামনে। এতো দ্রুত এসেছে সব জায়গায় ধোঁয়া উঠে গেছে। আদ্রিতা চিল্লিয়ে উঠলো,

এই গাড়ি কিভাবে চালাতে হয় শিখেন নাই নাকি?(আদ্রিতা)

আদ্রিতা চুপ কর এইটা সাজ্জাদের গাড়ি। ( সামিরা)

আদ্রিতা খেয়াল করে দেখলো আসলেই এইটা সাজ্জাদের গাড়ি। কিন্তু সাজ্জাদ ত এইভাবে গাড়ি চালায় না। তখনই গাড়ি থেকে একজন নেমে এসে বললো,

হেই কেমন আছো সবাই?

কে আপনি? ( আদ্রিতা)

তুমি চিল্লিয়ে উঠেছিলে না? রাস্তায় অজানা একটি ছেলের সাথে চিল্লাতে ভয় করে না?

আদ্রিতা কিছু বলতে নিবে এর আগে সামিরা বলে উঠলো, আদুরি চুপ কর। তারপর ঔইলোকটির উদ্দেশ্য বললো,

আপনার নাম কি? ( সামিরা)

হেই আমার নাম আদ্র। আর আপনার নাম? ( আদ্র)

সামিরা আপনি কি….. ( সামিরা)

সামিরা আর কিছু বলার আগেই সাজ্জাদ আর স্বাধীন গাড়ি থেকে নেমে আসলো,

ও আদ্র আমার ছোট খালার ছেলে। ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা সাজ্জাদকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। সাজ্জাদ তা বুঝতে পেরে ও পাওা দিলো না। আদ্র সামিরার উদ্দেশ্য বলে উঠলো,

যেই মেয়ে রাস্তায় এইভাবে অজানা ছেলের উপর চিল্লাতে পারে তার নাম আদুরি কিভাবে হয়? ওর নাম ত মিস বকবক রাখা দরকার। ( আদ্র)

আদ্রর কথা শুনে সামিরা আর আলো হেঁসে উঠলো। আদ্রিতা রাগে ফুঁসতে থাকলো। সাজ্জাদ পছন্দ করলো না আদ্রর কথা।

সরি একটু লেইট হয়ে গিয়েছে ( স্বাধীন)

না ভাইয়া সমস্যা নেই। ( আদ্রিতা)

গাড়িতে উঠো সবাই। ( সাজ্জাদ)

সবাই গাড়িতে উঠার জন্য এগিয়ে গেলো। স্বাধীন ড্রাইভিং সিটে বসলো। কারণ স্বাধীন গাড়ি চালাবে। স্বাধীনের পাশে সাজ্জাদ বসলো, পিছনে প্রথমে সামিরা ভিতরে বসলো তারপর আলো তারপর আদ্রিতা বসলো।

আমার কি এখন এই বকবক মেয়েটার পাশে বসতে হবে? ( আদ্র)

এতো সমস্যা হলে আপনার যাওয়া লাগবে না। স্বাধীন ভাইয়া আপনি গাড়ি চালানো শুরু করেন। (আদ্রিতা)

মেয়ে মানুষের এতো রাগ ভালো না। কথাটি বলে আদ্র আদ্রিতার পাশে বসে পড়লো। ৪ জন বসাতে সবার সাথেই সবার ধাক্কা লাগছে। সাজ্জাদ সামনে থেকে তা দেখতে পারছে। আদ্রিতার পাশে আদ্রর বসাটা মোটে ও ভালো লাগছে না সাজ্জাদের কাছে। গাড়ি চলতে শুরু করলো সামিরা আর আলো গল্প করছে। আদ্র ফোনে গেমস খেলছে। আদ্রতা কখন ঘুমিয়ে পড়েছে তার খেয়াল নেই। ঘুমের মধ্যেই ভুলে আদ্রর কাঁধে মাথা রেখে ফেলে। সাজ্জাদ তখনই গাড়ির আয়নায় তা দেখে চিল্লিয়ে বলে উঠে,

স্টপপপপপ (সাজ্জাদ)

আদ্র ততোক্ষণ আদ্রিতাকে আলোর দিকে ঠেলে দেই।

কি হলো স্টপ করতে বললি কেনো? ( স্বাধীন)

আমি পিছনে বসবো। আদ্র তুই সামনে গিয়ে বস ( সাজ্জাদ)

কেনো ভাইয়া আমি এখানেই ঠিক আছি। ( আদ্র)

যা বলছি কর সামনে এসে বস কথাটি বলে সাজ্জাদ গাড়ি থেকে নেমে গেলো। এতোক্ষণ চিল্লাচিল্লিতে আদ্রিতার ঘুম ও ভেঙে গেছে। আদ্র বাধ্য হয়ে সামনে গিয়ে বসলো।

সাজ্জাদ এসে আদ্রিতার সাথে বসলো।

দি তুই একটা কাজ কর তুই সাজ্জাদ ভাইয়ার পাশে বস। আমি তোর জায়গায় বসি। ( আদ্রিতা)

না তুই বস ওইখানে আমি এখানেই ঠিক আছি। ( সামিরা)

শালিকার মনে হয় আমার সাথে বসতে ভালো লাগছে না। ( সাজ্জাদ)

সাজ্জাদের মুখে শালিকা কথাটি শুনে আদ্রিতার রাগ আর ও বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু বলার উপায় ও নেই। স্বাধীন আবার গাড়ি চালাতে শুরু করলো। আদ্রিতা আলোর কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। সাজ্জাদ আদ্রিতার চেহারার দিকে তাকালো সাজ্জাদ মের বুকটা ধক করে উঠলো সাজ্জাদ বুঝতেই পারছে কালকে নিশ্চয়ই সারারাত কান্না করেছে তাই আজকে এই অবস্থা। সাজ্জাদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সাজ্জাদ একটু আড়ালেই বার বার নিজের হাত আদ্রিতার হাতের উপর রাখছে। হঠাৎ আদ্রিতা ঘুম থেকে উঠলো কিন্তু একটু পরেই আবার ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুমের ঘোরে সাজ্জাদের কাঁধে মাথা রাখলো। সাজ্জাদ মনে মনে খুশি হলো এতোক্ষণ ধরে এইটাই চাচ্ছিলো সাজ্জাদ।

***** কিছুক্ষণ পর *****

বসুন্ধরা মার্কেটের সামনে এসে স্বাধীন গাড়ে থামালো।

আদ্রিতা উঠ এসে পড়েছি ( আলো)

আদ্রিতা কোনোমতে চোখ খুললো গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। বাকিরা ও নামলো স্বাধীন পার্কে গাড়িটি রেখে আসলো। সবাই মার্কেটের ভিতর গেলো। প্রথমেই গেলো বিয়ের কনের জন্য লেহেঙ্গা কিনতে। সাজ্জাদ দোকানের কর্মচারীকে বললো যত নিউ কালেকশন আছে সব যেনো নামিয়ে দেখায়। আদ্রিতা আর আলো ও ড্রেস কিনবে। এতো ড্রেস এর মধ্যে সামিরা কনফিউজড হয়ে যাচ্ছে, পরে অনেকক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে একটা লাল লেহেঙ্গা পছন্দ করলো।

স্বাধীন আদ্রিতা আর আলোর উদ্দেশ্য বলে উঠলো,

তোমরা ও পছন্দ করে নেও। ( স্বাধীন)

আদ্রিতা ও একটি লাল লেহেঙ্গা পছন্দ করলো, সামিরার লেহেঙ্গা থেকে এই লেহেঙ্গাটি বেশি গরজিয়াছ। দোকানের কর্মচারী আদ্রিতার উদ্দেশ্য বললো,

মেডাম এইটা বউদের জন্য। ( দোকানের কর্মচারী)

আদ্রিতা কথাটি শুনে অন্য একটি লেহেঙ্গা দেখতে নিলে। সাজ্জাদ বলে উঠলো যেহেতু এইটা পছন্দ হয়েছে তাই এইটাই নেও। ( সাজ্জাদ)

সামিরা ও বললো এইটাই নে। আদ্রিতা আর কিছু বললো না। এই লেহেঙ্গাটা ফাইনাল করলো। আলো একটি বেগুনি কালারের লেহেঙ্গা পছন্দ করলো। বলতে হবে ৩টি লেহেঙ্গাই অনেক গরজিয়াছ। লেহেঙ্গা কিনা শেষে সবাই বেরিয়ে আসলো ওই দোকান থেকে।

মিস বকবক এর চয়েস আছে বলতে হবে। ( আদ্র)

আলো হেঁসে উঠলো। সাজ্জাদের পছন্দ না আদ্রকে কারণ আদ্র বরাবরই একটু বেশি কথা বলে। এ জন্য সাজ্জাদ আদ্রকে পছন্দ করে না। আদ্র হচ্ছে সাজ্জাদের ছোট খালামুনির ছেলে। আদ্র আর সাজ্জাদ এক বয়সেরই। কিন্তু সাজ্জাদ নিজের কাজ ব্যবসা সবকিছু নিয়ে ব্যস্ত। আর আদ্র নিজের ঘুরাঘুরিতে ব্যস্ত।

আমাকে মিস বকবক বলবেন না। আমার নাম আদ্রিতা আদ্রিতা বলবেন আমাকে। ( আদ্রিতা)

আদ্র আদ্রিতার কথা পাওা না দিয়ে নিজের মতো হাটঁতে থাকলো। বাকিরা আগে আগে হাটঁছে আর আদ্রিতা পিছনে। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ আদ্রতার হাত ধরে টান দিলো………

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৩৪
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

পিছন থেকে হঠাৎ কেউ আদ্রিতার হাত ধরে টান দিলো আদ্রিতা তাকিয়ে দেখলো সাজ্জাদ।

কি করছেন হাত ছাড়ুন। ( আদ্রিতা)

ওই আদ্রর থেকে দূরে থাকবে। ওর কাছে যেনো যেতে না দেখি। ( সাজ্জাদ)

সাজ্জাদের কথা শুনে আদ্রিতার মাথায় আগুন যোনো চড়ে বসলো সাজ্জাদের থেকে হাত ছাড়িয়ে বললো,

আপনি আমার বোনকে বিয়ে করবেন৷ আমার উপর অধিকার দেখাচ্ছেন কোন সাহসে? এক সপ্তাহ পর আপনার সাথে৷ দির বিয়ে কথাটি ভুলে যাবেন না। আর একবার ও যেনো আমার সাথে অ*সভ্যতা করতে না দেখি। ( আদ্রিতা)

কথাটি বলে আদ্রিতা চলে গেলো। সাজ্জাদ আদ্রিতার মুখে এইরকম কথা শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। কষ্ট লাগলে ও বেশি একটা ভাবলো না। কারন যেহেতু এক সপ্তাহ পর সামিরার সাথে সাজ্জাদের বিয়ে তাই আদ্রিতার এরকম আচরণ করাটা স্বাভাবিক। সাজ্জাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাঁটা শুরু করলো।

সামিরা আলো সবাই একটি হিজাবের দোকানে গেলো।

বিয়েতে হিজাব পড়লে খুশি হবো। একটি হিজাব কিনে নেও। ( সাজ্জাদ)

সামিরার ইচ্ছে না থাকা শর্তে ও একটি হিজাব কিনে নিলো। আলো ও কিনে নিলো। কিন্তু আদ্রিতা হিজাব কিনার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। সাজ্জাদ আদ্রিতার উদ্দেশ্য বলে উঠলো,

বড় বোন হিজাব পড়লে ছোট বোনের ও পড়া উচিত
আর আমি চাইআমার শালিকা ও যেনো হিজাব পড়ে। (সাজ্জাদ)

কথাটি শুনে স্বাধীন হেঁসে উঠলো। শালিকা শব্দটা শুনে আদ্রতার রাগে দুঃখে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কিছু বলার উপায় নেই। কারন কিছুদিন পর এটি সত্যি হতে চলেছে। আদ্রিতা আর কিছু বললো না চুপচাপ একটি হিজাব পছন্দ করে নিলো। পরে কসমেটিকস এর দোকান গেলো যা যা প্রয়োজন সব কিনে নিলো।

আদ্রিতা দেখ এই চুরি গুলো কতো সুন্দর। ( আলো)

হ্যাঁ ঠিক বলেছিছ অনেক সুন্দর। আর এর সাথে মিলিয়ে আর কিছু চুরি নিলে অনেক মানাবে।(আদ্রিতা)

হুম সুন্দর কিন্তু আমাদের আর কেনা হবে না।( আলো)

কিন্তু কেনো? ( আদ্রিতা)

দাম দেখ ২ হাজার। শুধু চুরি ২ হাজার টাকা অনেক বেশি। ( আলো)

হুম ঠিক বলেছিছ এখন কিনা ঠিক হবে না পরে একদিন কিনে নিবো। ( আদ্রিতা)

কথাটি বলে আলো আর আদ্রিতা অন্য সাইডে চলে গেলো। এতোক্ষণ সব কথায় সাজ্জাদ খেয়াল করছিলো। আদ্রিতা যাওয়ার পরে সাজ্জাদ মুচকি হেঁসে চুরির সেটটি কিনে নিলো। আর ও অনেক জিনিস কেনা হয়েছে তাই এটি কেউ খেয়াল করলো না। সাজ্জাদ নিজের জন্য ও টুকটাক জিনিস কিনে নিয়েছে।

কেনাকাটা তাহলে শেষ? ( সাজ্জাদ)

ভাইয়া আপনার ড্রেসই ত কিনা হলো না। ( আলো)

আমি পরে কিনে নিবো। ( সাজ্জাদ)

সময় আছে চাইলে কিনে নিতে পারেন। ( সামিরা)

না থাক আমার বন্ধুকে আমি কিনে দিবো পরে। (স্বাধীন)

হুম পরে কিনে নিবো। ( সাজ্জাদ)

আর আমার ও কিনতে হবে ড্রেস তাই একসাথেই কিনে নিবো। (স্বাধীন)

হুম কিনতে ত হবেই বন্ধুর বিয়ে বলে কথা। ( আদ্রিতা)

না কিছুটা ভুল বললে তুমি (স্বাধীন)

ভুল কি বললাম? ( আদ্রিতা)

আমার বিয়ে ও ঠিক হয়েছে সাজ্জাদের বিয়ের কিছুদিন পর। ( স্বাধীন)

কথাটি শুনে সামিরা চমকে উঠলো। তার মানে স্বাধীনের ও বিয়ে হয়ে যাবে? সামিরার কথাটি শুনে শুনে অস্থির অস্থির লাগছে। এক #অজানা_অনুভূতি গ্রাস করছে সামিরাকে।

কিকিকি? ভাইয়া আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে? আগে ত জানালেন না। ( আদ্রিতা)

হ্যাঁ হঠাৎ ঠিক হয়েছে ত তাই বলার সময় পায় নি। ( স্বাধীন)

মেয়ের নাম কি? ( আদ্রিতা)

নামটা না হয় কিছুদিন পর জেনে নিও। ( স্বাধীন)

ভাইয়া আমাদের দাওয়াত দিবেন না? ( আদ্রিতা)

হুম অবশ্যই সাজ্জাদের সাথে সবাই চলে এসো আমার বিয়েতে। ( স্বাধীন)

আচ্ছা ভাইয়া শুধু আপুর নামটা বলুন। ( স্বাধীন)

অসময়ী বৃষ্টি। ( স্বাধীন)

কি এইটা আবার কেমন নাম? ( আদ্রিতা)

একদিন হঠাৎ করেই অর্থাৎ অসময়ে বৃষ্টির মধ্যে তাকে প্রথম দেখেছিলাম। আর তারপর থেকেই তাকে অসময়ী বৃষ্টি বলে ডাকি। ( স্বাধীন)

নামটা অনেক সুন্দর কিন্তু ( আদ্রিতা)

ইশ এইভাবে যদি কেউ ভালোবেসে আমাকে একটি নাম দিতো। ( আদ্রিতা)

আদ্রিতার কথায় সবাই হেঁসে উঠলো। আদ্র বললো,

এইযে আমি ত আপনার নাম দিয়েছে মিস বকবক। ( আদ্র)

আদ্রর কথা শুনে হাসির রোল পড়ে গেলো সবার মধ্যে। আদ্রিতা রাগে ফুঁসতে থাকলো।

যাই বল না কেন আদ্রিতা মিস বকবক নামটা কিন্তু অনেক সুন্দর। ( আলো)

সাজ্জাদ সব কথা শুনে ও কিছু বলছে না। কিন্তু আদ্রর সাথে বেশি কথাবার্তা সাজ্জাদের পছন্দ হচ্ছে না।

ব্রো অনেক ক্ষিদা লেগেছে সকাল থেকে কিছু খায় নি চলো কিছু খেয়ে নেয় ( আদ্র)

হুম এমনিই দুপুর হয়ে এসেছে। চলো সবাই খেয়ে নেই। ( সাজ্জাদ)

বাকিরা সাজ্জাদের কথায় সহমত প্রকাশ করলো।

*******

বস এক সপ্তাহ পর আদ্রিতার বোনের সাথে সাজ্জাদের বিয়ে ( S.R এর লোক)

হুম শুনেছি ভালোই হয়েছে। একদিক থেকে আমার পথের কাঁটা সরে গেছে। এখন আদ্রিতাকে কাছে পেতে আর কোনো বাঁধা নেই। ( S.R )

হ্যাঁ বস। আপনি দেশে কবে আসবেন? (S.R এর লোক)

এক সপ্তাহ পরই দেশে আসবো। আর আদ্রিতাকে নিজের করে নিবো। এই দু’বছর আমার সাথে অনেক লুকোচুরি খেলেছে কিন্তু আর না। ( S.R)

ওকে বস। ( S.R এর লোক)

তুই সব খবর আমাকে দিতে থাকিস (S.R)

বস আজকে সাজ্জাদের বিয়ের শপিং জন্য গিয়েছে আদ্রিতা ও গিয়েছে কিন্তু সাথে ওর বোন আর বন্ধুরাও আছে (S.R এর লোক)

তাহলে সমস্যা নেই। আমি মনে করেছিলাম সাজ্জাদ আদ্রিতাকে ভালোবাসে কিন্তু এখন বুঝলাম আদ্রিতার বোনকে ভালোবাসে। আর এক সপ্তাহ পর সাজ্জাদের সাথে সামিরার বিয়ে তাই এখন সাজ্জাদের সাথে কোথাও গেলে ও সমস্যা নেই। আর এখন ত একা যায়নি। সাথে ওর বোন আর বন্ধু ও আছে। এখন রাখ বাকি কাজ কর। (S.R)

ওকে বস (S.R এর লোক)

তারপর S.R ফোনটি কেটে দিলো। আর স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।

*********

সবাই একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো। সাজ্জাদ খাবারের অর্ডার দিয়ে দিলো।

মিস বকবক আপনি যেনো কোন ক্লাসে পড়েন?( আদ্র)

আমার নাম আদ্রিতা বকবক না। ( আদ্রিতা)

ভাইয়া আপনি ঠিকই বলেছেন একটু বেশি কথা বলে। ক্লাসে ও সবসময় কথা বলতেই থাকে। ( আলো)

চুপ কর আলো ( আদ্রিতা)

আচ্ছা এইসব বাদ দেও এবার বলো তোমরা কোন ক্লাসে পড়ে? ভাবির সম্পর্কে ত জানি অনার্সে পড়ে। কিন্তু ভাবির বোন কিসে পড়ে? ( আদ্র)

আমরা ইন্টার ১ম বর্ষতে পড়ি। ( আলো)

ভাবি মানে কিসের ভাবি? ( সামিরা)

না মানে আপু কিছুদিন পর ত সাজ্জাদের সাথে আপনার বিয়ে তাই ভাবি বলে ফেললাম। ভাবি ডাকটা পছন্দ হয় নি? ( আদ্র)

আপু ডাকলে খুশি হবো। ( সামিরা)

আচ্ছা আপু। ( আদ্র)

আচ্ছা ওয়াশরুম কোন দিকে একটু হাত মুখটা ধুয়ে আসবো ( আদ্রিতা)

সোজা গিয়ে বামে যাও ( স্বাধীন)

আচ্ছা, আলো চল আমার সাথে। ( আদ্রিতা)

না দেখছিছ না গল্প করছি আমি এখন যেতে পারবো না। আর দূরে নাকি কাছেই ত তুই একা যা। ( আলো)

না একা যেতে কেমন জানি লাগে প্লিজ চল ঔইখানে আমার সাথে। ( আদ্রিতা)

না পারবো না আমি ( আলো)

আচ্ছা আমি ও হাত মুখ ধুতে যাবো। মিস বকবক আপনি আমার সাথে আসুন। ( আদ্র)

আদ্রিতা কিছু বলার আগেই সাজ্জাদ বলে উঠলো,

আমি ও হাত মুখ ধুতে যাবো আদ্রিতা তুমি আমার সাথে আসো। আর আদ্র আমরা এসে নেই তারপর তুই যা। ( সাজ্জাদ)

ওকে ( আদ্র)

আদ্রিতা আমার সাথে আসো। ( সাজ্জাদ)

কথাটি বলে সাজ্জাদ এগিয়ে গেলো। আদ্রিতা ও সাজ্জাদের পিছন পিছন গেলো………

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৩৫
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

আদ্রিতা ও সাজ্জাদের পিছন পিছনে গেলো আদ্রিতা যেয়ে বেসিনের সামনে দাঁড়ালো মুখে পানি দেওয়ার জন্য। বেসিনে তাকিয়ে দেখলো সাজ্জাদ চোখ গুলো কেমন জানি রক্ত লাল হয়ে আছে চোখ দিয়ে যেনো মনে হচ্ছে আগুন ঝরছে। আদ্রিতা ভয়ে ঢোক গিললো। আদ্রিতাকে এইভাবে অবাক চোখে আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাজ্জাদ জিজ্ঞেস করলো,

কিছু বলবে? ( সাজ্জাদ)

না আআমি আবার কি বলবো?( আদ্রিতা)

কেনো তখন মুখ থেকে ত অনেক বুলি ফুটেছিলো। এখন কেনো কিছু বলবে না?( সাজ্জাদ)

কথাটি বলে সাজ্জাদ আদ্রিতার দিকে এগোতে লাগলো। আদ্রিতা আয়নার মধ্যে এটি দেখে দ্রুত পিছনে ঘুরার আগেই সাজ্জাদ পিছন থেকে আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরলো।

কি করছেন ছাড়ুননন। আপনার সাহস ত কম নয় আমাকে টাচ করলেন কোন সাহসে?ছাড়ুন বলছি। ( আদ্রিতা)

কথাটি বলে আদ্রিতা সাজ্জাদের হাতে কি*ল, ঘু*সি দিতে থাকলো যেনো সাজ্জাদ আদ্রিতাকে ছেড়ে দেয়। সাজ্জাদ ত আদ্রিতাকে ছাড়লোই না বরং আর ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

পাগল হয়ে গেছেন আপনি? কয়দিন পর দির সাথে বিয়ে আর এখন আমার সাথে এইরকম ছিহহ লজ্জা হয় না আপনার? ( আদ্রিতা)

সবার ভালোবাসার পূর্ণতা পাবে। ( সাজ্জাদ)

সাজ্জাদের কথাটি শুনে আদ্রিতা আর কিছু বললো না।

তোমাকে বলেছিলাম না? সবার ভালোবাসার পূর্ণতা পাবে। তাহলে এতো ভয় কেনো পাচ্ছো? তুমি যাকে চাও তাকেই তোমার জীবনে পাবে। শুধু কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো। ( সাজ্জাদ)

সাজ্জাদের কথাশুনে আদ্রিতার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। সাজ্জাদ সযত্নে চোখের পানিটি মুছে দিলো। আদ্রিতাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আদ্রিতা নিরবে সাজ্জাদের বু*কের উপর কেঁদে চলেছে। সাজ্জাদ ও কোনোরকম বাঁধা দিলো না। আদ্রিতাকে ছেড়ে দিলো একটু পর। সাজ্জাদ হাতে পানি নিয়ে আদ্রিতার চোখ মুখ মুছিয়ে দিলো।

অপেক্ষা করো এক সপ্তাহ। দেখা যাক সামিরার বিয়ের দিন কি হয়। আর এখন কোনোরকম ঝামেলা করবে না। আর ওই আদ্রর থেকে দূরে থাকবে। ( সাজ্জাদ)

সাজ্জাদের কথা শুনে আদ্রিতা মনে মনে কিছু একটা চিন্তা করে বলে উঠলো,

Are you feeling jealous? ( আদ্রিতা)

না কখনোই না কিন্তু দূরে থাকতে বলেছি মানে দূরে থাকবে। ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করলো। কিন্তু মনে মনে একটু দুষ্ট বুদ্ধি কাজ করলো।

চলো আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে? ( সাজ্জাদ)

হুম আপনি যান আমি আসছি। ( আদ্রিতা)

সাজ্জাদ আর আদ্রিতা বেরিয়ে আসলো। এসে দেখে অর্ডার করা সব খাবার এসে পড়েছে।

আজকে বেশ ভালোই জমবে ( স্বাধীন)

হ্যাঁ ভাইয়া ঠিক বলেছেন রামেনটা কিন্তু আমার ( আদ্রিতা)

এইটা অনেক ঝাল তুমি খেতে পারবে না। ( স্বাধীন)

না ভাইয়া আমি পারবো ( আদ্রিতা)

আরে ব্রো ওকে খেতে দে। এমনি মুখ দিয়ে সবসময় আগুন ঝড়ে তাই মিস বকবক এর জন্য এই খাবারটা একদম পারফেক্ট। ( আদ্র)

আদ্রিতা কিছু বলবে তার আগে সাজ্জাদ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,

খাওয়ার কোনো দরকার নেই। ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা না করার আগেই সামিরা বলে উঠলো,

তুই এমনি ঝাল থেকে পারিছ না। আর এখন দেখছিছ না করছে সবাই। তাই খাওয়ার কোনো দরকার নেই।( সামিরা)

সামিরার কথা শুনে আদ্রিতা আর কিছু বললো না। বাকি খাবার খেয়ে নিলো। হাসি, কিছু একটা হারানোর ভয়, কারোর প্রতি অজানা অনুভূতি, সব কিছু মিলিয়ে দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করলো।

*******

হ্যাঁ গো সবাইকে দাওয়াত দেওয়া শেষ হয়েছে?( সাজ্জাদের মা)

হ্যাঁ সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।(সাজ্জাদের বাবা)

কয়টা দিন পর মেয়েটা সব কিছু ছেড়ে নতুন পরিবেশে আসবে। তার খেয়াল রাখার দায়িত্ব কিন্তু আমাদের। সাজ্জাদকে ও বলে দিতে হবে সামিরার সব কিছুর যেন খেয়াল রাখে। ( সাজ্জাদের মা)

আরে আমার ছেলে আমার মতোই নিশ্চয়ই বউয়ের অনেক খেয়াল রাখবে ( সাজ্জাদের বাবা)

তোমার মতো মানে তুমি আবার কবে আমার খেয়াল রাখলে? ( সাজ্জাদের মা)

সবসময় রেখেছি। ( সাজ্জাদের বাবা)

হয়েছে হয়েছে এই বুড়ো বয়সে আর মিথ্যা কথা বলতে হবে না। ( সাজ্জাদের মা)

দুদিন পর ছেলে বিয়ে করে বউ আনবে। আর এখন তুমি আমার সাথে ঝগড়া করছো এটি কি মানায়?( সাজ্জাদের বাবা)

হয়েছে এখন লিস্ট করতে থাকো কি কি কিনতে হবে। ( সাজ্জাদের মা)

হুম করছি। ( সাজ্জাদের বাবা)

******

আদ্রিতারা সবাই লান্স করে বেরিয়ে পড়লো রেস্টুরেন্টে থেকে।

ব্রো এতো তাড়াতাড়ি বাসায় যাবো নাকি? চলো সবাই একটু ঘুরি তারপর না হয় যাবো। ( আদ্র)

না এখন সোজা বাসায়। ( সাজ্জাদ)

উফফফ তুই চুপ থাক ত আদ্র ঠিক বলেছে আমরা এখন একটু ঘুরবো। ( স্বাধীন)

ভাইয়া আপনার হবু বউকে ও নিয়ে আসতেন। আমাদের সাথে থাকলে খুশি হতো। ( আদ্রিতা)

আদ্রিতা সবসময় একটু বেশি কথা না বললে কি হয় না? বাকিরা কথা বলছে সেখানে কেনো তোর কথা বলতে হবে সবসময়? ( সামিরা)

দি আমি…. ( আদ্রিতা)

আর কোনো কথা শুনতে চায় না চুপ থাক। ( সামিরা)

সামিরা কথাটি বলে পিছন ফেরে হাঁটতে শুরু করলো।

আপুর আবার কি হলো? ( আলো)

কি জানে? হঠাৎ রেগে গেলো কেনো বুঝলাম না। ( আদ্রিতা)

স্বাধীন সাজ্জাদের কাছে গিয়ে বললো, কিরে তোর বউ দেখি রেগে গেছে। কথাটি বলে স্বাধীন হেঁসে উঠলো। সাজ্জাদ স্বাধীনের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।

বুঝলে আদ্রিতা তোমার বোন শান্ত হলে ও রাগ বেশি। ( স্বাধীন)

কিন্তু ভাই এখন রেগে গেলো কেনো? ( আদ্রিতা)

কি জানে যাও গিয়ে রাগ ভাঙিয়ে আসো। না থাক আদ্রিতা তুমি যেও না আলো যাও। ( স্বাধীন)

আলো যেয়ে সামিরার সাথে কথা বলে আবার নিয়ে আসলো। ততক্ষণে সবাই আইসক্রিম কিনে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু সাজ্জাদ স্বাস্থ্যর ব্যাপারে বেশি সচেতন তাই আর আইসক্রিম নিলো না।

আমার ওই গাজরা পছন্দ আলো কিনবি তুই? ( আদ্রিতা)

আমি কিনে দিচ্ছি আমার ও ভালোই লেগেছে। ( আদ্র)

আদ্রর কথাটি শুনে আদ্রিতা কিছুটা চমকে উঠলো…

#চলবে