#অদ্ভুত_তোমার_নেশা
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট_____________১৫
।
।
।
।
বিভোর ওর দাদুকে হঠাৎ নিজের বাড়ীতে দেখে ভিশন অবাক হলো,কিন্তু আনন্দে ওর মন ভরে উঠলো দৌড়ে গিয়ে ওর দাদুকে জরিয়ে ধরলো, ওর দাদুও ওকে জরিয়ে ধরলো,বিভোর বলল,দাদু তুমি এখানে কিছু বললে না যে আসবে।ওর দাদু বলল,তো সারপ্রাইজ কেমন দিলাম।বিভোর এক গাল হেসে বলল,দারুন।হঠাৎ পাশ থেকে বলল,বিভোর ভাইয়া।বিভোর এতো খনে চোখ পড়লো লিজার দিকে,বিভোর অবাক হয়ে বলল,লিজা তুইও এসেছিস।লিজা বিরাট একটা স্মাইল দিয়ে বিভোরকে জরিয়ে ধরলো আর বলল,হুম তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছিল তাই চলে আসলাম।বিভোর নিজেকে লিজার কাছ থেকে ছাড়িয়ে বলল,ভালো করেছিস এসেছিস।
বিভোরের হঠাৎ খেয়াল হলো কুহুর কথা, বিভোর পিছনে কুহুর দিকে তাকালো তারপর আবার ওর দাদুর দিকে তাকিয়ে বলল,দাদু ও কুহু ও…..আর কিছু বলার আগে ওর দাদু বলল,আর কিছু বলতে হবে না কুহু দাদু ভাই সব বলেছে আমাকে আই এম প্রাউড অফ ইউ এই না হলো আমার দাদু ভাই তোকে ঠিক শিক্ষা দিয়েছি আমি।বিভোর বলল,সব বলেছে।ওর দাদু বলল,হ্যা সব বলেছে তুই এখন যা ফ্রেশ হয়ে আয় সবাই এক সাথে ডিনার করব।বিভোর বলল,ওকে কুহু আমার সাথে একটু আসো তো।লিজা বলল,ও কেন আমাকে বল কি লাগবে তোমার।বিভোর বলল,তোকে লাগবে না কুহুর সাথে একটু কাজ আছে আসো।
কুহু চুপচাপ বিভোরের পিছন পিছন গেল, আর লিজা ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে কুহুর দিকে তাকিয়ে আছে।
বিভোর নিজের রুমে গেল কুহুও পিছন পিছন ঢুকলো, বিভোর কুহুকে বলল,কুহু তুমি কি বলেছো দাদুকে।কুহু বলল,আমাদের বিয়ের কথা ছাড়া সব বলেছি আপনার দাদু খুব ভালো।
বিভোর বলল,ওহ আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি।কুহু বলল,ঠিক আছে।
কুহু নিচে গেল তারপর কিচেনে থেকে খাবার নিয়ে টেবিলে সাজালো, হঠাৎ লিজা এসে কুহুর সামনে দাড়ালো,তারপর কুহুকে বলল,তোমার পুরো নাম কি। কুহু বলল,,
– কুহু ইসলাম
– ওহ কত দিন ধরে আছো এখানে
– ২ মাস
– ২ মাস কি বলব আর বিভোর ভাইয়া এমনই ভিশন দয়ালু, যাকে তাকে তুলে নিয়ে আসে, হোয়াট ইভার সব কিছু রেডি হয়েছে
– হুম
– যাই আমি ফ্রেশ হয়ে আসি
লিজা কুহুর সামনের থেকে চলে গেল,কুহু এইটুকু বুঝতে পারলো লিজা ওকে পছন্দ করে নিই।
বিভোর ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসলো এসে দেখে ওর দাদু লিজা চেয়ারে বসে আছে আর কুহু দাড়িয়ে আছে, বিভোরের দাদু বলল,আরে দাদুভাই আয় অনেক দিন পর এক সাথে খাবো।বিভোর গিয়ে ওর দাদুর চেয়ারের পাশের চেয়ারে বসলো।কুহু সবাইকে সার্ভ করে খাবার দিল, বিভোর কুহুকে বলল বসতে,কুহু যেই বসতে যাবে তখনি লিজা বলে উঠল, আরে তুমি কি করছো।লিজার কথা শুনে সবাই লিজার দিকে তাকালো,লিজা কুহুকে বলল,বাসায় থাকতে দিয়েছে বলে কি এখন আমাদের সাথে খেতে বসবে নাকি আজব মেয়ে তো আশ্রিতা আশ্রিতার মতো থাকবে ফ্যামিলির মানুষ হবার চেষ্টা কর না।
লিজার কথা শুনে সবাই হতভম্ব, লিজা যে হঠাৎ এমন একটা কথা বলবে কেউ ভাবতে পারে নিই,লিজার কথা শুনে কুহুর ভিতরটা ধক করে উঠলো,কুহুর অজান্তেই চোখ অশ্রু জমা হতে লাগল,কুহু খুব কষ্ট করে নিজের কান্না আটকে রাখলো।বিভোর লিজার কথা শুনে রেগে ধমক দিয়ে বলল,কি বলছিস এসব লিজা। লিজা বলল,ভুল কোথায় বললাম। বিভোর লিজাকে বলল,মাফ চা কুহুর কাছে।লিজা রেগে বলল,ইম্পসিবল। বলে খাবার রেখে উঠে গেল।
বিভোর কুহুর দিকে তাকালো, কুহু নিজেকে সাভাবিক দেখিয়ে বলল,উনাকে বকতে গেলেন কেন ভুল তো কিছু বলে নিই।বিভোরের দাদু বলল,দাদুভাই তুমি কিছু মনে কর না লিজা একটু বাকা স্বভাবের। বিভোর বলল, তাই বলে যা খুশি তা বলবে ওকে কেন নিয়ে আসলে দাদু।
ওর দাদু বলল,তোকে দেখবে বলছিল আচ্ছা বাদ দে কুহু দাদুভাই তুমি বসো খেয়ে নেও।
কুহু বলল,না আমার খিদে নেই খাবো না ঘুম পাচ্ছে আমি রুমে গেলাম।বলে এক মিনিট ও দেরি করলো না দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল,মুখ চেপে কান্না শুরু করে দিল,কুহু ওয়াসরুমে গিয়ে শাওয়ার অন করে শাওয়ার এর নিচে বসে মুখ গুজে কান্না করতে লাগল,লিজার কথা শুনে কুহির খুব কান্না পাচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে। একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে বের হলো কুহু, রুমে ঢুকেই অবাক হলো,ওর বিছানায় বিভোর বসে আছে, কুহু কিছু না বলে সামনে গিয়ে দাড়ালো, বিভোর কুহুকে বলল,এই সময় কেউ গোসল করে বোকা মেয়ে একটা শরীর খারাপ করবে তো।
কুহুর লাল চোখ আর মলিন মুখখানা দেখে বিভোর বুঝে গেছে কুহু প্রচুর কান্না করেছে।কুহু বলল,না কিছু হবে না আমি ঠিক আছি।বিভোর বলল, হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে ফেল তাড়াতাড়ি নইলে ঠান্ডা লাগতে পারে তারপর খাবে।কুহু বলল,না খাবো না ইচ্ছে করছে না।
বিভোর বলল,ইচ্ছে না করলেও খেতে হবে। কুহু বিরক্ত হয়ে বলল,প্লিজ আমি খাবো না।
বিভোর বলল,খাব না বললেই হবে নাকি অফিসে অনেক কাজ আছে ভুলে গেছো না খেলে এনার্জি পাবে কোথ থেকে খেয়ে নেও। কুহু বলল,প্লিজ আমি খাবো না। বিভোর আর কিছু না বলে খাবার নিজের হাতে নিয়ে বলল,মুখ খোলাে।কুহু অবাক হয়ে তাকালো বিভোরের দিকে।
বিভোর আবার বলল,হা কর। কুহু আর কিছু না বলে মুখ খুললো।বিভোর খুব যত্ন করে খাইয়ে দিতে লাগলো।
দরজার কাছে এসে ওদের এভাবে দেখে বিভোরের দাদু মুচকি হেসে চলে গেল।বিভোরের দাদুর কাছে কুহুকে খুব ভালো লেগেছে।বিভোর কুহুকে খাওয়ানো শেষ করে বলল,এই তো গুড গার্ল। কুহু বলল,লিজা আপু হয় তো আমাকে পছন্দ করে না।বিভোর বলল,লিজা এমনই রুড অনেক আর এ্যাটিটিউট নিয়ে সব সময় থাকে ওর কথায় কিছু মনে কর না। কুহু বলল,না আমি কি মনে করব। বিভোর বলল,ওকে আমি রুমে গেলাম বায়।কুহু বলল,হুম।কুহুর খুব বলতে ইচ্ছে করছে আর কিছুখন থেকে যান না বিভোর,আপনি কাছে থাকলে আমার ভালো লাগে। কিন্তু চেয়েও বলতে পারলো না।
সকালে কুহুর চোখ খুললো,বিছানা থেকে উঠে জানালার কাছে এসে জানালা খুলে দাড়ালো, বাহিরের সতেজ হাওয়া এসে কুহুকে ঘিরে নিলো,কুহুর খুব ভালো লাগছে।কুহু ফ্রেশ হয়ে নিলো,কিচেনে গিয়ে চা বানিয়ে ওর দাদুর রুমে গেল দরজার সামনে এসে দেখে ওর দাদু নিউস পেপার পড়ছে, কুহু বলল,আসবো।ওর দাদু ওকে দেখে মুখে সামান্য হাসি রেখে বলল,
– আসো
– এই নিন চা চিনি ছাড়া
– গুড
– আমি তো জানতাম না কাল আপনি না বললে
– হুম তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে
– জ্বি ভালো আমি এখন আসি
– আচ্ছা যাও
কুহু এবার কিচেনে গিয়ে কফি বানালো বিভোরের জন্য, বিভোরের রুমের সামনে আসতেই লিজা এসে ওর হাত থেকে কফি নিয়ে বলল,আমি দিয়ে আসছি তুমি যাও।বলেই লিজা বিভোরের রুমে গেল।লিজা রুমে গিয়ে দেখে বিভোর ব্যায়াম করছে, বিভোর ঘেমে একাকার।
লিজা কিছুখন তাকিয়ে থেকে বলে উঠল, তুমি আগের থেকে অনেক হ্যান্ডসাম হয়ে গেছো বিভোর ভাইয়া। লিজার কথা শুনে বিভোর ঠিক হয়ে দাড়ালো তোয়ালে দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে বলল,তুই এই সময়। লিজা বলল,কেন। বিভোর বলল, না এমন সময় তো কুহু আসে আমার রুমে।কথাটা শুনে লিজার রাগ হলো কিন্তু প্রকাশ করলো না, তারপর বলল,কফি নেও আমি বানিয়েছি।বিভোর অবাক হয়ে বলল,তুই বানিয়েছিস আমি জানি তুই শুধু খেতে জানিস।লিজা মিছে রাগ দেখিয়ে বলল,তুমি না খাও আর বল কেমন হয়েছে। বিভোর মুখে নিয়েই বুঝতে পারলো কফিটা কুহুর বানানো।লিজা বলল,কেমন হয়েছে।বিভোর বলল,রোজ যেমন হয় অসাধারণ। কথাটা কিছুটা বুঝলো তো বুঝলো না লিজা।লিজা বলল,আমাকে দেখে তোমার চেঞ্জ মনে হচ্ছে না মানে চার বছর পর দেখলে আমার মাঝে কোনো পরিবর্তন আসে নিই।
বিভোর বলল,এসেছে কিন্তু তোর বিহেভিয়ার এতে কোনো পরিবর্তন আসে নিই।
বলেই বিভোর ওয়াসরুমে চলে গেল, আর লিজা জায়গায় দাড়িয়ে একা একা ফুলতে লাগলো।
অফিস ছুটির পর কুহু ক্লান্ত হয়ে বাড়ী ফিরলো, শরীর টা খুব দূর্বল লাগছে কুহুর, দরজা দিয়ে ভিতরে আসতেই লিজা বলল,বাহ চলে এসেছো।কুহু বলল,হুম।লিজা বলল,যাও রাতের রান্না শুরু কর আমার জন্য মুরগির মাংস কোষাও।কাজের খালা বলল,আম্মা কুহু আন্মা কেন করব এই গুলো এইসব তো আমার কাজ। লিজা রেগে বলল,এই আম্মা আমাকে ডাকবে না বুঝেছো আমাকে ম্যাডাম বলবে। কুহু বলল,ঠিক আছে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তারপর করছি।লিজা বল,ফাস্ট কর রুমে যাওয়ার আগে আমাকে ফ্রিজ থেকে অরেঞ্জ জুস বের করে দাও তো।কুহু
কিছু না বলে জুস বের করে লিজাকে দিয়ে নিজের রুমে গেল, ফ্রেশ হয়ে এসে রান্না করতে লাগলো।
চলবে………….
ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 💙