অদ্ভুত তোমার নেশা পর্ব-১৮

0
1189

#অদ্ভুত_তোমার_নেশা
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট____________১৮




সকালে চোখ খুলেই কুহু দেখলো সকাল ১০ টা বেজে ৩২ মিনিট।উঠে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো,হঠাৎ বাহির থেকে এত চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শুনে কুহু বাহিরে গেল, গিয়ে দেখলো বাড়ীতে অনেক মানুষ, এত মানুষ দেখে কুহু বেশ অবাক হলো,বিভা ও আছে, বিভা এসে কুহুকে বলল,কুহু উঠে গেছো আসো আমার সাথে কয়েকটা ড্রেস দেখছি বল তো তোমার কোনটা ভালো লাগে।কুহু অবাক হয়ে বলল,কেন আর এসব কি হচ্ছে। বিভা বলল,তা তুমি তোমার হাসব্যান্ডকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর।

কুহু বলল,উনি এসব বলেছেন। বিভা বলল,হ্যা। কুহু আর কিছু না বলে বিভোরের রুমে গেল,গিয়ে দেখে বিভোর কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে, কুহু গিয়ে বিভোরের সামনে দাড়ালো তারপর বলল,আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে।বিভোর বলল,ওয়েট কথাটা শেষ নেই হ্যা মিস্টার খান বলুন অবশ্যই আসবেন কিন্তু। আরও কিছুখন কথা বলে বিভোর কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল,বল কুহু।কুহু বলল,বাড়ীতে এসব কি হচ্ছে আর বিভা আপু কি বলল কিছুই বুঝতে পারছি না যাই হক আমি আর এই বাড়ীতে থাকব না, আর আপনি না ডিভো…..

আর কিছু বলার আগে বিভোর কুহুর কোমড় টেনে কাছে নিয়ে আসলো,কুহু অবাক হয়ে তাকালো বিভোরের দিকে, তারপর নিজেকে বিভোরের কাছ থেকে ছাড়াতে লাগল কিন্তু বিভোরের সাথে পেরে উঠছে না কুহু।কুহু রেগে বিভোরকে বলল,কি করছেন আপনি, মাথা ঠিক আছে আপনার।বিভোর বলল,হুম আমি একদম ঠিক আছি। কুহু বলল,আপনি এমন অদ্ভুত আচরণ করছেন কেন।

বিভোর বলল,আচ্ছা শোনো আজ সন্ধ্যায় একটা পার্টির আয়োজন করেছি এই পার্টিতে আমি আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা সবাইকে জানাবো। কুহু অবাক হয়ে বলল,কি বলছেন এইসব।বিভোর বলল,কেন। কুহু বলল,মজা করছেন আমার সাথে, একবার বলছেন ডিভোর্স এর ব্যবস্থা করবেন আবার বলছেন সবাইকে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে সব বলে দিবেন, অনেক হয়েছে আর করুণা করবেন না আমাকে, অনেক করেছেন আমার জন্য।

বিভোর বলল,আমাকে মাফ করে দেও কুহু, আমি জানি আমার প্রতি তোমার অনুভূতি কি কিন্তু আমার বুঝতে অনেকটা সময় লেগে গেছে, তার জন্য সরি, সব কিছু আমরা আবার সুন্দর ভাবে শুরু করব, তোমাকে আমি আমার স্রীর মর্যাদা দিতে চাই, ভালোবাসতে চাই আমি তোমাকে, খুব যত্নে রাখতে চাই আমি তোমাকে,আমাকে একটা সুযোগ দেবে। কুহু কিছু বলার আগে ওর দাদু দরজার কাছে এসে ওদের এভাবে দেখে কয়েকটা কাশি দিল,ওর দাদুকে দেখে বিভোর কুহুকে ছেড়ে দিল।

ওর দাদু বাহির থেকেই কুহুকে বলল,কুহু আমার সাথে একটু আসো তো।কুহু কিছু না বলে চুপচাপ ওর দাদুর সাথে যেতে লাগল।ওর দাদু নিজের রুমে গিয়ে সোফায় বসলো, কুহুও পিছন পিছন গেল,ওর দাদু বলল বসো।কুহু বসলো তারপর বলল…
– জ্বি দাদু বলুন
– আমি সবটুকু জেনেছি তোমাদের বিয়ের ব্যাপারে, কিন্তু এই কথাটা তোমরা কেন আমাকে জানালে না
-……………………………………..
– যাই হক আমি তোমাকে নাত বউ হিসেবে পেয়ে খুব খুশি

বিভোরের দাদুর কথা শুনে কুহু চরম অবাক এত সহজে যে মেনে নেবে কল্পনাও করতে পারে নিই কুহু।বিভোরের দাদু আলমারির কাছে গিয়ে একটা বক্স বের করে এনে বসলো,তারপর বক্সের ভিতর থেকে একটা লকেট বের করে কুহুর কাছে দিয়ে বলল,এটা আমাদের খানদানি লকেট বাড়ীরর বউরা সবাই এই লকেট পড়ে, আর এটা এখন তোমার।কুহু বলল,না না আমার লাগবে না, আমার এইসব প্রয়োজন নেই।ওর দাদু বলল,নিতে বলেছি তোমাকে চুপচাপ নেও এটা আমি ভালোবেসে দিয়েছি। কুহু নিতে চাইলো না কিন্তু দাদু জোর করে কুহুকে পড়িয়ে দিল।

সন্ধ্যায় পার্টিতে বিভোর সবাইকে জানিয়ে দিল কুহু আর ওর বিয়ের কথা, অনেকেই ভিশন অবাক হলো, তারপর সবাই ওদের অভিনন্দন জানালো,কুহু আর বিভোর পাশাপাশি দাড়িয়ে আছে, হঠাৎ ওখানে রিমি আর কোণা এসে কুহুর সামনে চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো, কুহু বুঝতে পারলো ওরা কিছু বলতে চায়।

কুহু নিজ থেকে ওদের সামনে গিয়ে বলল,রিমি আপু কোণা আপু কেমন আছেন। রিমি আর কোণা অবাক হয়ে তাকালো কুহুর দিকে,রিমি বলল, আই এম সরি কুহু আমরা তোমাকে ভুল বুঝেছি।আর কোণা বলল,হুম আই এম রিয়েলি সরি কুহু আমি খুব বাজে কথা বলেছি তোমাকে।কুহু মুচকি হেসে বলল,সব কিছু যে সাভাবিক হয়েছে তাতেই আমি হ্যাপি। রিমি বলল,কুহু তুমি আসলেই ভালো মনের মানুষ স্যারও খুব ভালো মানুষ স্যারকেও ভুল বুঝে ছিলাম, তোমরা হ্যাপি থাকো।কোণা বলল,হুম কিন্তু আমার ক্রাশটা অন্য কারও হয়ে গেলো ভাবতেই হিংসে হচ্ছে। কোণার কথা শুনে কুহু আর রিমি হেসে উঠলো ওদের হাসি দেখে কোণাও হেসে উঠলো।

তখনি পিছন থেকে কেউ কুহুর নাম ধরে ডাকলো,কুহু পিছনে তাকিয়ে দেখলো রেহান। কুহু রেহানের কাছে গিয়ে বলল,কিছু বলবে।রেহান অপরাধী কন্ঠে বলল,কথা ছিল যদি চাও।কুহু বলল,হুম।রেহান বলল,সরি সবার মতো আমিও তোমাকে ভুল বুঝেছি। কুহু সামান্য হেসে বলল,ইটস ওকে।রেহান বলল,তোমার আর স্যারের বিয়ে হয়েছে আগে বললেই পারতে। কুহু বলল,আসলে পরিস্থিতি তেমন ছিল না তাই বলতে পারি নিই।রেহান বলল,হুম ভালো থেকো তোমরা। বলেই রেহান চলে যাওয়ার জন্য পিছন ফিরতেই কুহু বলল,চলে যাচ্ছো।রেহান বলল,হুম আসি।

বলেই রেহান পার্টি ছেড়ে চলে আসলো, তার অজান্তেই তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো,রেহান নিজের চোখে হাত দিয়ে দেখলো ভেজা, এটা দেখে তাচ্ছিল্য এক হাসি দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,দিস ইস নোট ফেয়ার।

অনুষ্ঠান শেষ করে কুহু নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো,আর সব কিছু ভাবতে লাগল, হঠাৎ সব কিছু কেমন একটা চেঞ্জ হয়ে গেছে, সব কিছুই মনে হয় কুহুর সুখের সূএপাত ঘটাচ্ছে, বিভোর যে ওকে নিজের স্রী হিসেবে মেনে নিয়েছে এটা কুহুর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না,সব কিছু একদম কাকতালীয় মনে হচ্ছে কুহুর কাছে,হঠাৎ তখন বিভোরের বিহেভিয়ার এর কথা মনে পড়তেই কুহুর ঠোটের কোণে লাজুক হাসি ফুটে উঠলো, হঠাৎ কুহুর লিজার কথা মনে পড়লো, মেয়েটাকে সারা দিনে একবারও দেখে নিই কুহু।

কুহু আর কিছু না ভেবে চোখ বন্ধ করে ফেলল,ঘুম রাজ্যে পাড়ি জমানোর জন্য,হঠাৎ কুহুর মনে হলো সে হাওয়ায় উড়ছে,সাথে সাথে চোখ খুলে দেখে বিভোর ওকে কোলে নিয়ে হেটে চলেছে, কুহু ভিশন মাএায় অবাক হলো সত্যি হচ্ছে নাকি কুহু স্বপ্ন দেখছে।কুহু বলে উঠল, কি করছেন ছাড়ুন আমাকে।বিভোর বলল,ছাড়বো তো অবশ্যই কিন্তু সময় মতো এখনো সময় হয় নিই আগে মেইন জায়গায় পৌছে নিই।কুহু বলল,কোথায় যাব।বিভোর বলল,শিশশশ বড্ড প্রশ্ন কর তুমি দেখতেই তো পাবে কোথায় যাচ্ছি।

কিছুখনের মাঝে কুহু বুঝতে পারলো বিভোর ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, বিভোর কুহুকে নিজের রুমে নিয়ে গেল তারপর বলল,রুমটা কেমন দেখাচ্ছে ডেকোরেশন কিন্তু আমি করেছি।
কুহু শুধু অবাকই হচ্ছে। বিভোর কুহুকে বিছানায় বসিয়ে দিল।কুহু বলল,আপনি এখানে নিয়ে এসেছেন কেন।বিভোর বলল,কেন আজ থেকে তুমিও আমার সাথে এই রুমে থাকবে। কুহু অবাক হয়ে বলল,কি।বিভোর বলল,
– কি না জ্বি
– কিন্তু
– কিন্তু কি তুমি আমার ওয়াইফ সেই অনুযায়ী তোমার জায়গা আমার পাশে হবার কথা নাকি দূরে।
– আআ,আমি
– জানি তোমার কাছে খুব আনইজি লাগছে, কিন্তু কুহু ট্রাস মিই, আমি চাই সব কিছু ঠিক হয়ে যাক,এত দিন তোমার প্রতি আমার অনুভূতি গুলো আমি বুঝতে সক্ষম হই নিই, তুমি না চাইলে আমরা এক বেডে শোবো না কিন্তু এক রুমেই থাকতে হবে, অন্তত দাদুর জন্য দাদু যেন এইটুকু বুঝে আমাদের মাঝে সব ঠিক আছে,আই নো তোমার আনইজি লাগছে কিন্তু সব ঠিক হয়ে যাবে।

কুহু কিছু না বলে চুপ হয়ে রইলো,বিভোর কুহুর এমন চুপ হওয়া ফেস দেখে মুচকি হেসে বলল,কুহুকে এমন চুপচাপ মানায় না গুড নাইট।বলেই বিভোর বারান্দায় চলে গেল।বারান্দায় গিয়ে ড্রিংক এর বোতল খুলে যেই খেতে গেল,ওমনি কুহু বিভোরের হাত ধরে ফেলল আর বলল,এসব কি। বিভোর বলল,,
– কি হয়েছে তুমি ঘুমাও নিই
– না ঘুম আসছে না, ঘুম আসবে কিভাবে সারা দিন একের পর এক শকট খেয়েই চলেছি
– হাহাহাহা
– কিন্তু আপনি এইসব ছাইপাস খাচ্ছেন কেন
– অভ্যাস হয়ে গেছে
– এই অভ্যাস ভালো না, এইসব খেয়ে কি মজা পান আল্লাহ জানে
– হাহাহা তুমিও তো ট্রায় করেছো, তোমার মনে নেই খেতে কেমন
– দেখুন আমার কিছু মনে নেই আর মনেও করতে চাই না
– হাহাহা থাক মনে না করাই ভালো,নেশার ঘোরে যা বকেছো
– কি আমি এমন কি বলেছিলাম
– থাক আর ভাবতে হবে না
– হুম আপনি এইসব এখন আর খাবেন না
– ওকে খাবো না হ্যাপি
– হুম

কুহু হঠাৎ বিভোরকে বলল,আমাকে কি ডিভোর্স দেবেন না। বিভোর বলল,না তুমি না চাইলেও তোমাকে আমার কাছে থাকতে হবে। কুহু অবাক হয়ে বলল,হঠাৎ আপনার এমন সিদ্ধান্তের কারণ কি?

বিভোর মুচকি হেসে বলল,হয় তো আমাকে তোমার নির্লজ্জ মনে হবে কিন্তু তোমাকে কাল যখন খুজে পাচ্ছিলাম না, সেই সময়ের আমার অনুভূতি গুলো শুধু আমি জানি, তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না কুহু, ভালোবেসে ফেলেছি নিজের অজান্তেই, তা বুঝতে আমি সক্ষম।

কুহু অবাক হয়ে বিভোরের দিকে তাকিয়ে আছে, কুহুর দুজোড়া আখি শুভ্র অশ্রুতে পরিপূর্ণ।
এই অশ্রু বলে দিচ্ছে কুহু ঠিক কতটা খুশি।বিভোর অনেকটা ইমোশনাল হয়ে গেছে,বিভোর কুহুর কিছুটা কাছে এসে কুহুর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে এক অদ্ভুত মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,কুহু ভালোবাসবে আমাকে।

চলবে………….
ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 💙