অদ্ভুত তোমার নেশা পর্ব-২২

0
932

#অদ্ভুত_তোমার_নেশা
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট_____________২২




কুহু নিজের টেবিলে এসে বসলো,তখনি রিমি আর কণা কুহুর সামনে আসলো।কণা বলল,আরে কুহু তুমি ভাবতেই পারি নিই।রিমি বলল,ম্যাডাম বল। কুহু বলল,কি বলেন আপু আপনারা আগের মতো আচরণ করলেই আমি খুশি হবো।রিমি বলল,আজ এখানে যে।
কুহু বলল,আমি এখন থেকে রোজ আসবো বাড়ীতে বসে থাকতে ভালো লাগে না।কণা বলল,ভালো তো। রিমি বলল,আচ্ছা পরে কথা হবে।কুহু বলল,ঠিক আছে।

ওরা চলে গেল, কুহু কাজে মনোযোগ দিল,কিছু দরকারী ফাইল দতলায় আছে, ওই গুলো নিয়ে আসতে হবে তাই কুহু নিজেই গেল,দতলায় গিয়ে ফাইল গুলো নিয়ে আবার লিফটের কাছে আসলো, লিফট খুলতেই দেখলো ভিতরে আয়ান।কুহু ভিতরে ঢুকলো, কুহুর একটু অসস্তি হচ্ছে কারণ আয়ানের কাছেও মিথ্যে বলে ছিল।আয়ান বলল,কেমন আছো মিসেস বিভোর।
কুহু কি বলবে বুঝে পাচ্ছে না, কুহুকে কাচুমাচু করতে দেখে আয়ান সামান্য হেসে বলল,আমি সবটুকু শুনেছি। কুহু সামান্য হেসে বলল,সরি।এর মাঝে উপরে চলে আসলো ওরা।দুজনই লিফট থেকে বের হলো।আয়ান কুহুকে বলল,ভালো থেকো তোমরা।

কুহু মুচকি হেসে বলল,থ্যাংক ইউ। আয়ান বলল,মিস্টার বিভোর খুব লাকি তোমার মতো কাউকে পেয়েছে।কুহু বলল,কি।আয়ান সামান্য হেসে বলল,হুম।বলেই সামনে চলে গেল,আর কুহু জায়গায় দাড়িয়ে ভাবনায় ডুবে গেল।

অফিসে ছুটির সময় কুহু বিভোরের ক্যাবিনে গিয়ে বলল,আমরা কি এক সাথে যাব নাকি আমি একা চলে যাব।বিভোর বসা থেকে উঠে, কুহুর কাছে গিয়ে ওকে কাছে নিয়ে এসে বলল,প্রশ্নই আসে না তোমার একা যাবার এক সাথে যাব তাছাড়া আজ রাতে ডিনার বাহিরে করব আকাশ আর বিভাও আসবে।কুহু খুশি হয়ে বলল,ওহ তাহলে তাড়াতাড়ি চলুন বাড়ীতে যাই রেডি হতে হবে তো।বিভোর মুচকি হেসে বলল,যথা আগ্গা আমার মহারানী।বলেই দুজন হেটে চলে যেতে লাগল।

বাড়ীতে ফিরে দুজনই ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিল।কুহু নিজের গলার লকেট টা খুজছে যেটা দাদু ওকে দিয়ে ছিল,হঠাৎ পিছন থেকে বিভোর বলল,এটা খুজছো।কুহু পিছনে তাকিয়ে দেখে বলল,হ্যা কোথায় ছিল দেন আমি পড়ে নিচ্ছি।বিভোর বলল,হুম না আমি পড়িয়ে দেই।কুহু ভ্রু কুচকে বলল,না আমি পড়তে পারব। বিভোর বলল,আমি করব মানে করব। কুহু মুচকি হেসে বলল,ঠিক আছে কিন্তু তাড়াতাড়ি।

বিভোর ধির পায়ে কুহুর পিছনে এসে দাড়ালো তারপর কুহুকে লকেট টা পড়িয়ে দিয়ে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে কুহুর কাধে মাথা রাখলো,দুজন বেশ কিছু খন চুপ হয়ে রইলো,কুহু বলল,যাবেন না।বিভোর বলল,হুম।কুহু বলল,,
– তাহলে চলুন
– হুম চল
– আগে ছাড়বেন তো আমাকে
– ইচ্ছে করছে না
– ওফ চলুন ওরা অপেক্ষা করছে হয় তো
– চল নিরামিষ বউ আমার
– কি বললেন
– কিছু না চল

রেস্টুরেন্টে গিয়ে ওরা বসলো আকাশ আর বিভাও চলে এসেছে,কুহু বিভাকে দেখে এক বিরাট হাসি দিয়ে বিভাকে জরিয়ে ধরে বলল,আপু কেমন আছো।বিভা বলল,ভালো তুমি।কুহু বলল,আমিও ভালো আছি।কুহু বলল,হুম দেখেই বুঝা যাচ্ছে তো সব কিছু ঠিক আছে তো।কুহু বলল,হুম।

আকাশ আর বিভোর বলল ওদের,এভাবেই কি রাত পার করবে নাকি। আকাশ বলল,দোস্ত ওয়েটারকে ডাক ওর্ডার দে খুব খিদে লেগেছে।কিছুখন পর ওয়েটার এসে ওদের খাবার দিয়ে গেল, সবাই খেতে লাগল আর ফাকে ফাকে একটু একটু কথা বলতে লাগল।খাওয়া শেষ করে ওরা গল্প করতে লাগল,আর কুহু ওদের কথাও শুনছে আর আইসক্রিম ও খাচ্ছে। বিভোর কথা বলতে বলতে কুহুর দিকে তাকিয়ে দেখলো আইসক্রিম কুহুর মুখে লেগে গেছে, আর কুহুর কোনো খেয়ালই নেই সে আপন মনে আইসক্রিম খেতে ব্যস্ত,বিভোর মুচকি হেসে বলল,কুহু তুমিও না। কুহু ভ্রু কুচকে বলল,কি।বিভোর মুচকি হেসে টিস্যু নিয়ে মুছে দিতে লাগল।

আর আকাশ আর বিভা ওদের ভালোবাসা দেখে মুচকি মুচকি হাসছে,বিভা আকাশকে কানে কানে ধিরে ধিরে বলল,ওদের কত ভালো দেখাচ্ছে তাই না।আকাশ বলল,হুম।বিভা বলল,স্যার কত টেক কেয়ার করে কুহুর। আকাশ বলল,হুম ওদের মাঝে সব কিছু ঠিক হয়েছে দেখে খুব ভালো লাগছে আমার বন্ধু টা শেষ পযন্ত ভালোবাসার ছোয়া পেল।

ওরা আরও কিছু খন গল্প করলো, হঠাৎ কুহু উঠে গেল ওয়াসরুমে যাওয়ার জন্য,ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে এসে ওদের দিকে যাবে তখনি কারো সাথে ধাক্কা খেল।কুহু না দেখেই বলল,সরি সরি সরি সরি আমি খেয়াল করি নিই।বলে সামনে ঠিক মতো তাকিয়ে দেখলো ওই ছেলেটা।ছেলেটা ওকে দেখে বলল,আপনি এখানে। কুহু বলল,
– ডিনারে এসে ছিলাম
– আমিও কিন্তু এখন চলে যাব, কার সাথে এসেছেন
– আমার হাসব্যান্ড এর সাথে
– কোথায় উনি
– ওই যে ওদিকে
– ওহ
– আসুন দেখা করে যান
– না আজ না অন্য কোনো দিন
– ঠিক আছে
– বায়
– বায়

কুহু তারপর আবার ওদের কাছে গিয়ে বসলো, আর একটু গল্প করে ওরা ওদের বাড়ীর উদ্দেশে রওনা দিল।বিভোর ড্রাইভ করছে আর কুহু বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ কুহু বলল,
– শুনুন
– বল
– আজ আবার ওই ছেলেটার সাথে দেখা হলো
– কি? কোথায়
– রেস্টুরেন্টে
– ওহ আমাকে ডাকলে না কেন
– তার আগেই উনি চলে যায়
– ওহ

দুজন বাড়ীতে ফিরে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো,সকালে ঘুম থেকে উঠে কুহু দেখলো, বিভোর রেডি হচ্ছে, কুহু বলল,এত সকালে কোথায় যাচ্ছেন।বিভোর হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলল,আজ বৃহস্পতিবার হাসপাতালে যাব তারপর ওখান থেকে অফিসে যাব।কুহু বলল,ওহ ভুলে গিয়ে ছিলাম ব্রেকফাস্ট করে যাবেন না। বিভোর বলল,না সুইটহার্ট বাহিরে খেয়ে নেব।বলে কুহুর কাছে এসে কুহুর কপালে ভালোবাসার ছোয়া দিয়ে চলে গেল।

কুহু উঠে ফ্রেশ হয়ে নিল, তারপর রেডি হয়ে ভার্সিটি যাবার জন্য বের হলো।ক্লাস গুলো করে কুহুর ফ্রেন্ডরা সবাই ক্যাম্পাসে বসে আছে।ওর বান্ধবী স্নেহা বলল,
– কুহু শোন
– বল
– চল সবাই মিলে শপিং এতে যাই
– হ্যা হ্যা খুব ভালো লাগবে ( কুহুর আরেক ফ্রেন্ড লামিয়া বলল)
– হ্যা চল কুহু
– ঠিক আছে আমি একটু আসছি একটা ফোন করে
– কাকে জিজুকে
– হ্যা
– ওরে বাবা যা যা
– ফাজিল গুলো ওয়েট কর আসছি

কুহু সাইডে গিয়ে বিভোরকে ফোন করলো একবার রিং হতেই বিভোর কল রিসিভ করে বলল,
– আমাকে ছাড়া ভালো লাগছে না চলে আসবো
– আপনিও না সব সময় ফাজলামো
– ওকে তো সিরিয়াস কথাটা কি
– আসলে আমার ফ্রেন্ডরা বলছিল শপিং এতে যেতে
– হুম এখন
– আমি কি যাব
– কয় জন যাবে
– তিন জন
– ঠিক আছে যাও কিন্তু সাবধানে
– ওকে থ্যাংক ইউ
– থ্যাংকস এতে চলবে না
– তো কি করব
– মিষ্টি করে বল যা আমি শুনতে চাই
– খুবববববব ভালোবাসি আপনাকে, খুব খুব খুব বেশী ভালোবাসি
– আমিও খুব ভালোবাসি
– তো রাখি
– আচ্ছা বায়
– হুম

কুহু আর ওর ফ্রেন্ডরা শপিংমল গেল,কিছু কেনা কাটা করলো, কুহু হঠাৎ বলল,স্নেহা লামিয়া শোন।ওরা কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল,কি হয়েছে। কুহু বলল,আমি দুতলার থেকে একটু আসি উনার জন্য একটা ঘড়ি কেনবো।ওর ফ্রেন্ডরা দুষ্টু হেসে বলল, যা যা আমাদের তো আর স্বামী নেই যে তার জন্য কিছু কেনবো।কুহু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে হেসে দিল তারপর বলল,তোরা এখানেই থাকিস আমি উপর থেকে আসছি।

কুহু দুতলায় গিয়ে ঘড়ির স্টোরে গেল, তারপর ঘড়ি দেখতে লাগল,চারপাশে সব ঘড়িই সুন্দর কোনটা রেখে কোনটা নেবে ভেবে পাচ্ছে না, হঠাৎ চোখ আটকে গেল একটা কালো ঘড়ির দিকে, ঘড়ি টা কুহুর ভিশন ভালো লাগলো, কুহু ঘড়ির টার কাছে যেতে যেতে আরেকটা ছেলে ঘড়ি টা নিয়ে নিলো,কুহু তাড়াতাড়ি ছেলেটার পিছনে গিয়ে দাড়ালো তারপর বলল,এক্সকিউজ মিই।

কুহুর শব্দ শুনে ছেলেটা তাকালো, ছেলেটাকে দেখে কুহু অবাক হয়ে বলল,আপনি।ছেলেটা বলল,ও মিসেস বিভোর আপনি এখানে।কুহু বলল,আসলে ঘড়ি নিতে এসে ছিলাম।ছেলেটা বলল,কার জন্য।কুহু বলল,আমার হাসব্যান্ডের জন্য।ছেলেটা বলল,ওহ গুড তো নিন।কুহু বলল,আসলে আপনি যেই ঘড়ি টা নিয়েছেন আমার এটা পছন্দ হয়েছে ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড এই ঘড়ি টা ছেড়ে দিতে পারেন। ছেলেটা বলল,ওহ নো প্রবলেম নিন।কুহু মুচকি হেসে বলল,থ্যাংকস এ লোট। বলেই কুহু এক মনে ঘড়িটা দেখতে লাগল আর মনে মনে ভাবতে লাগল, এই ঘড়িটায় উনাকে খুব মানাবে।এর মাঝেই ছেলেটা সামান্য হেসে বলল,ওয়েলকাম বায় দ্যা ওয়ে ইউর স্মাইল ইস সো কিউট।কুহু ঠিক মতো শুনলো না। মাথা উঁচু করে বলল,হুম কিছু বললেন।ছেলেটা বলল, না তেমন কিছু না ফ্রি আছেন। কুহু বলল,কেন।ছেলেটা বলল,না আপনি চাইলে বসে এক কাপ কফি খাওয়া যেতো।কুহু বলল,সরি আমি আমার ফ্রেন্ডের সাথে এসেছি ওরা অপেক্ষা করছে।ছেলেটা বলল,নো প্রবলেম। কুহু বলল,ওকে বায়।ছেলে বলল, হুম।

কুহু ঘড়িটা কিনে নিচে ওর ফ্রেন্ডের কাছে গেল,তারপর ওদের সবার কেনা কাটা শেষ করে কুহু বাড়ি ফিরলো,রেস্ট করে অফিসের জন্য বের হলো সাথে করে ঘড়িটাও নিয়ে গেল।অফিসে পৌছে বিভোরের ক্যাবিনের কাছে গিয়ে ভিতরে ঢুকে দরজায় নক করে বলল,আসতে পারি স্যার।বিভোর কুহুকে দেখে হেসে বলল,তুমিও না আসো।কুহু ভিতর ঢুকে
সামনের চেয়ারে বসলো তারপর বিভোরকে বলল,আপনার হাতটা দেন তো।বিভোর বলল,কেন।কুহু বলল,আহা দেন তো।বিভোর হাত বাড়িয়ে দিল কুহু ব্যাগ থেকে ঘড়ি নিয়ে বিভোরের হাতে পড়িয়ে দিল তারপর বলল,কেমন হয়েছে। বিভোর এক রাজ্য হাসি দিয়ে বলল,জোস তো তোমার চয়েস তো খুব ভালো।কুহু বলল,আর একটু হলে এই ঘড়িটা হাত ছাড়া হয়ে যেতো।বিভোর বলল,কেন কি হয়ে ছিল।

কুহু বলল,ঘড়িটা অন্য কেউ নিয়ে যেতে নিলো আমি কাছে গিয়ে দেখি ওই ছেলেটা আমাকে যে লিফট দিয়ে ছিল উনাকে বলে তারপর নিয়ে নিলাম।বিভোর বলল,ওই ছেলেটার সাথে আবার দেখা হয়েছে।কুহু বলল,হুম।বিভোর বলল,নাম জিজ্ঞেস করেছো।কুহু বলল, এতো বার দেখালো হলো একবারও নাম জিজ্ঞেস করি নিই মনে থাকে না।বিভোর বলল,লোকটাকে সন্দেহ জনক লাগছে পৃথিবীতে এত মেয়ে থাকতে আমার বউয়ের সাথেই কেন দেখা হয়।কুহু খিলখিলিয়ে হেসে বলল,আপনিও হিহিহি সব সময় মজা হিহি।

চলবে……
ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 💙