অদ্ভুত তোমার নেশা পর্ব-২৭

0
934

#অদ্ভুত_তোমার_নেশা
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট____________২৭




কুহু আর বিভা হাসপাতালে এসেছে, বিভার চেকআপ এর জন্য, বিভার প্রেগন্যান্সির ৮ মাস চলেছে,হাসপাতালে চেকআপ শেষ করে কুহু আর বিভা বাড়ি ফিরছিল,কুহু হঠাৎ বলল,
– আচ্ছা আপু তোমার কেমন লাগছে, মানে এই যে তুমি মা হচ্ছো তোমার অনুভূতি কেমন
– অসাধারণ পেটের ভিতরে যখন নাড়াচাড়া করে, আমি বুঝাতে পারব না আমার ঠিক তখন কতটা আনন্দ হয়
-হুম,আকাশ ভাইয়া তো পুরো পাগলই হয়ে গেছে, দুই মাস আগের থেকে ছুটি নিয়ে রয়েছে, আজ বেশী কাজ পড়ায় আকাশ ভাইয়াকে অফিসে যেতে হলো আর আমি তোমার সাথে আসার সুযোগ পেলাম।
– ঠিক বলেছো আকাশ ভিশন কেয়ারিং, সারাক্ষণ শুধু এটা কর না ওটা কর, ওটা কর না এটা কর
– হিহি আকাশ ভাইয়া কত ভালোবাসে তোমাকে
– হুম, তো তুমি কবে আমাদের সুখবর জানাবে কুহু
– হিহিহি
– হাসছো কেন
– আপু চুপ কর আমার লজ্জা করছে
– কি হাহাহা তুমি ও না কুহু
– চল আইসক্রিম খাই
– চল

রাতের আকাশে একটুকরো চাঁদ তার আলো ছড়িয়ে পুরো আকাশ মাতিয়ে রেখেছে, চারপাশে নিস্তব্ধতা, ঝিঁঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে, বাতাসে শীত শীত রেশ লেগেছে, বাগানের নানান দেশ বিদেশী ফুলের সুবাসে চারপাশ মেতে রয়েছে। বিভোর বিছানায় বসে ল্যাপ্টবে কাজ করছে আর ফাকে ফাঁকে কুহুর কান্ড দেখছে,কুহু কখন থেকে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে এদিক ওদিক হয়ে দেখেই চলেছে।

কুহু আয়নার সামনে নিজেকে দেখছিল আর ভাবছিল,আচ্ছা আমি যখন মা হবো তখন আমার পেট ও বেলুনের মতো ফুলে যাবে, তখন আমাকে দেখতে কেমন দেখাবে হিহি, আচ্ছা মা হবার অনুভূতি কেমন।

বিভোর আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না বিছানা ছেড়ে কুহুকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বলল,কি দেখছো এত, যদি তুমি জানতে চাও তুমি কেমন দেখতে তাহলে আমাকে জিজ্ঞেস কর আমি বলছি তুমি কেমন দেখতে।কুহু হঠাৎ পিছন ঘুরে বিভোরকে বলল,বিভোর আমি মা হতে চাই।কুহুর কথা শুনে বিভোর চমকে উঠলো।কুহু আবার বলল,শুনতে পারছেন আমি কি বলছি, আমিও মা হতে চাই, মা হবার অনুভূতি উপলব্ধি করতে চাই।বিভোর কি বলবে বুঝে পাচ্ছে না।কুহু আবার বলল,
– শুনতে পেরেছে আমি কি বলছি
– কুহু আগে বড় হও তারপর
– আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি, আমি মা হতে চাই বিভোর
– এখন না কুহু আরও কয়েক বছর যাক
– না না না না না না না আমার বাচ্চা চাই

বিভোর বুঝতে পেরেছে, এই মেয়েকে কিছু বলে লাভ নেই। কুহু কাদু কাদু ফেস করে বলল,বিভোর আমি মা হতে চাই।বিভোর বলল,ঠিক আছে।কুহু ঠোটে বিরাট হাসি ঝুলিয়ে বলল, সত্যি। বিভোর বলল,হুম।কুহু আনন্দে আত্তহারা হয়ে বিভোরের গলা জরিয়ে ধরে বলল,লাভ ইউউউউউউ।বিভোর মুচকি হেসে জরিয়ে ধরে বলল,পাগলী লাভ ইউ টু।

সময় চলছে তার আপন গতিতে, কুহু বিভোর নিজেদের ছোট সংসার নিয়ে বেশ আনন্দে আছে,আকাশ আর বিভার ছোট এক রাজকুমার এসেছে। ঢাকা শহরে প্রচুর জ্যাম, ব্যস্ত শহরে সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত।বিভোর গাড়িতে বসে আছে অনেক খন ধরে কিন্তু এই জ্যাম শেষ হওয়ার খবর নেই,বিভোর চরম পর্যায় বিরক্ত হয়ে, গাড়ি জানালার কাচ খুলে বাহিরে তাকালো,হঠাৎ বিভোরের চোখ পড়লো ছোট একটা পরিবারের দিকে স্বামী স্রী আর তাদের কোলে ছোট একটা বাচ্চা, বাচ্চাটা কান্না করে মুখ লাল করে ফেলেছে, আর বাচ্চাটার বাবা মা পরিশ্রম করেই চলেছে বাচ্চাটাকে শান্ত করার জন্য,বাচ্চাটার বাবা ফেসের ভঙ্গি বদলাতেই বাচ্চাটা খিলখিলিয়ে হেসে দিল।তাদের আনন্দ দেখে বিভোরও আনমনে হেসে উঠলো।

বিভোর ভাবতে লাগল, কুহু করা পাগলামো গুলো,কুহু ও চায় ওদের ছোট সংসারে আরেক জন ছোট সদস্য আসুক।বিভোর ওই পরিবারের জায়গায় নিজেদের কল্পনা করতে লাগল,বিভোর কুহু আর কোলে একটা ছোট বাচ্চা, আহা ভাবতেই যেন মনে আনন্দের জোয়ার বইতে লাগল।বিভোর হুশ ফিরলো ছোট বাচ্চার আওয়াজে,বিভোর তাকিয়ে দেখলো ছোট একটা বাচ্চা ছেলে হাতে ফুল।বাচ্চা টা বলল,
– ভাইয়া একটা ফুল নেন না
– একটা ফুলের দাম কত
– দশ টাকা
– হুম তোমার হাতের যতফুল আছে সব গুলো আমাকে দেও
– এই নেন
– থ্যাংক ইউ আর এই নেও টাকা

বিভোর ছেলেটাকে এক হাজার টাকা দিল,আর বাচ্চা টা টাকা দেখে মনের আনন্দ বিরাট এক হাসি দিয়ে চলে গেলে।বিভোর ফুল গুলো সামনে রেখে কুহুর কথা ভাবতে লাগল।জ্যাম ছাড়তেই বিভোর অফিসে চলে আসলো, নিজের কেবিনে গিয়ে বসলো ফুল গুলো ফুলের টবে রেখে, কুহুর কথা ভাবতে লাগল,হঠাৎ কেবিনের দরজা খুলে আকাশ ঢুকলো তারপর বলল,
– কি বন্ধু আজ যে ফুল হাতে মন তো ভিশন ফুরফুরে লাগছে
– তেমন কিছু না
– কুহু কোথায়
– এখন তো মনে হয় ভার্সিটি যাচ্ছে
– হুম কুহু তোর লাইফে আসার পর থেকে তোর জীবন আনন্দে ভরে উঠেছে
– ঠিজ বলেছি মেয়েটা আমার অগোছালো জীবনটা সুন্দর করে গুছিয়ে দিয়েছে
– হুম
– তো আমার আয়াশ চাচ্চু কেমন আছে
– ভালো ছেলেটা এত দুষ্টু হয়েছে, সে দিন টিভিতে বিয়ে দেখে বলে ও বিয়ে করবে
– হাহাহাহা
– তো আমি কবে চাচ্চু হবো
– খুব দ্রুত
– রিয়েলি
– ইয়েস
– শান্তি পেলাম
– চল এবার কাজে মন দেয়া যাক
– হুম

বিভোর ল্যাপ্টবে নতুন প্রজেক্ট নিয়ে আকাশের সাথে আলোচনা করতে লাগল,হঠাৎ বিভোরের ফোন বেজে উঠলো,বিভোর ব্যস্ত থাকায় আকাশকে বলল,আকাশ কল টা রিসিভ কর আর স্পিকার এতে দেয়।
আকাশ কল দেখে বলল,কুহুর কল। বলেই রিসিভ করলো।সাথে সাথে ওপাশ থেকে পুরুষ কন্ঠে কেউ বলল,হ্যালো এই ফোন যার আপনি তার কি হোন।বিভোর আর আকাশ দুজনই অবাক হয়ে গেল, বিভোর তাড়াতাড়ি ফোন নিয়ে বলল,হ্যালো আ,আমি ওর হাসব্যান্ড কুহু কোথায় ওর ফোন আপনার কাছে আসলো কি করে।লোকটা বলল,দুঃখ জনক হলেও আপনার ওয়াইফের একসিডেন্ট হয়েছে আমরা তাকে সিটি হোস্পিটালে নিয়ে এসেছি দ্রুত চলে আসুন।

কথাটা শুনেই বিভোর থমকে গেল, এটা কি শুনলো বিভোর চারপাশে মনে হয় আধার নেমে এসেছে, সুখ পাখিরা নিখোঁজ হয়ে গেছে।আকাশ বিভোরের অবস্থা বুঝতে পেরে বিভোরকে বলল,বিভোর আমাদের এখনি যাওয়া দরকার।বিভোর আর এক সেকেন্ড ও দেরি না করে পাগলের মতো ছুটে গেলো,কুহুর কেবিনের সামনে এসে উকি দিল,কুহুর সম্পূর্ণ শরীর রক্তে লাল হয়ে আছে,কুহুর অচল দেহটা বেডে পড়ে আছে।একটু পর ডক্টর বের হলো,আকাশ গিয়ে ডক্টরকে বলল,কুহুর কি অবস্থা। ডক্টর বলল,আমরা কিছু বলতে পারছি না উনি গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন অনেক রক্ত খরণ হয়েছে।

বিভোর মনে হয় আধারে রাজ্যে ডুবে গেছে কিছু বলতে পারছে না, মনের ভিতরে আর্তনাদ করে চলেছে এসব কি হচ্ছে, ওর জানপাখিটা ভিতরে কি অসম্ভব কষ্ট করছে,প্রকৃতির কি নিষ্ঠুর নিয়ম,কুহুকে ছাড়া তো বিভোর অচল, কুহু না থাকলে কে বিভোরকে ভালোবাসবে,কে পাগলের মতো কান্ড করে বিভোরকে হাসাবে,বিভোরের বুকের ভিতরটা ছিদ্র হয়েছে গেছে, সকালেও হাসি মুখে বিভোরকে বিদায় দিয়েছে কুহু, কিন্তু ওইটাই কি শেষ বিদায় ছিল,আর কি কুহু বিভোরকে ভালোবাসবে না হারিয়ে যাবে বিভোরের জীবন থেকে,বিভোর যেন পাথরে পরিবর্তন হয়েছে, আবার আপন জন হারাতে হবে এ যন্রণা যে মরণ যন্রণার সমান,আবার আপন জন হারানোর ক্ষমতা বিভোরের নেই।

চলবে……………
ভুলক্রুুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 💙