অদ্ভুত নেশা পর্ব-১২

0
3093

#অদ্ভুত_নেশা
#পর্ব_১২
#অধির_রায়

২৭.
ছোঁয়া কিছুক্ষণ অধিরকে বকে ভার্সিটিতে চলে যায়।ছোঁয়া কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না৷ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না?

— কি হয়েছে ছোঁয়া? তুই এভাবে ক্ষেপে আছিস কেন?(রিয়া)

— এখন তোর কথাতে দিলওয়ালী গানে নাচবো৷

— তুই কোনদিন সোজা হবি না।

— আরে সা* তুই নিজেকে আগে সোজা করে দেখা৷ তার পর বলতে আছিস পেট মোটা৷ পেট নিয়ে নড়তে পারিস না।

— ছোঁয়া তুই আমাকে পেট মোটা ডাকবি না৷ এর পর ডাকলে খারাপ কিছু হয়ে যাবে৷

— তুই কি সারাদিনই খাস?

— হু তোর কি?

— এই জন্য তোর পেট মোটা৷

— ছোঁয়া 😡খুব রেগে রিয়া কথাটা বলে৷

— চল আমরা ক্যাফেতে যায়।

— তোর মতো কিপ্টার সাথে আমি কোনদিন ক্যাফেতে যাব না৷

— প্লিজ চলনা৷

ছোঁয় এমন ভাবে কথা বলে রিয়া ছোঁয়ার কথা কিছুতেই ফেলতে পারল না৷ রিয়া বাংলা প্যাচার মতো মুখ করে ছোঁয়ার সাথে চলে যায়।

রিয়া ক্যাফে ঢুকার আগে ছোঁয়া রিয়ার চোখ বেঁধে দেয়৷ যা রিয়ার রহস্য জনক মনে হয়৷ চোখ বাঁধার কারণ কি? জানতে চাইলেও ছোঁয়া কিছু বলেনি৷ ছোঁয়ার একটাই কথা সে যা করছে রিয়ার ভালোর জন্যই করছে৷

রিয়া চোখ বাঁধা নিয়ে অনেকক্ষণ থেকে বসে আছে৷ এভার খুব বিরক্ত নিয়ে রিয়া চোখ খুলেই ফেলে।রিয়া চোখ খোলে সামনে ছোঁয়া নয় সিদ্ধার্থ। রিয়া উঠতে নিলেই সিদ্ধার্থ রিয়ার পা নিজের পা দিয়ে আটকিয়ে নেয়৷

–আপনি এখানে কেন? ছোঁয়া কোথায়? আমতা আমতা করে বলে

— ব্রু নাচিতে কেন আমাকে দেখে খুশি হও নি৷ ওকে চলে যাচ্ছে।

— এই না না আপনি চলে যাবেন কেন? আমি তো,,,

— তুমি কি?

— তেমন কিছু না৷ আমার কিছু খেতে মন চাচ্ছে না। আমি বাড়িতে যাব৷

— আমি দিয়ে আসব।

— তার কোন দরকার পড়বে না।

— আমার কথায় শেষ কথা আমি দিয়ে আসব।

কঠিন স্বরে বলে। যার ফলে রিয়া কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। রিয়ার ভয় পাওয়া লজ্জা জনিত চেহারা দেখে সিদ্ধার্থ আরও এক ধাপ প্রেমে পড়ে যায়।

— ওঁকে।

— কফি পুরোটা শেষ কর তার পর দিয়ে আসব।

রিয়া কফি শেষ করতে লেট হয়েছে৷ কিন্তু সে দৌড়ে ক্যাফের বাহিরে আসতে লেট করেনি৷ রিয়ার এমন বাচ্চা সূলভ আচরণ দেখে মুচকি হেঁসে বিল প্রেমেন্ট করে রিয়ার কাছে আসে৷

রিয়া সিদ্ধার্থের বাহিকের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁত দিয়ে নিজের নক কাটছে৷ কাটছে বললে ভুল হবে৷ রিয়া খুব চিন্তায় মগ্ন। তাঁকে বাইক দিয়ে যেতে হবে৷ আর ছোঁয়াকে হাজার টা গালি দিয়ে যাচ্ছে।

সিদ্ধার্থ রিয়ার কানের কাছাকাছি গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে নেল কাটার প্রো ম্যাক্স দিয়ে নক কাটা হচ্ছে।

রিয়া এমন অদ্ভুত কথা শুনে পিছনে ঘুরতে নিলেই সিদ্ধার্থ সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলে সিদ্ধার্থ রিয়াকে টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়৷

রিয়া সিদ্ধার্থ বুকে চুপটি মেরে আছে। হৃদপিণ্ডের শব্দ শুনতে পাচ্ছে রিয়া। যা রিয়াকে নেশায় উম্মুক্ত করে তুলছে। রিয়া কিছুটা নিজেকে সংযত করে নিয়ে সিদ্ধার্থের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়৷

–যাওয়া যাক।

রিয়া বাইকে অনেকটা দূরত্ব রেখে বসে আছে৷ যা সিদ্ধার্থের সহ্য হলো না৷ প্রথমেই খুব জোরে বাইকের স্পাইসার ঘুরায়৷ যার ফলে বাইক হুট করেই জোরে চলতে নিলেই রিয়া সিদ্ধার্থকে জড়িয়ে ধরে।

২৮.
সিদ্ধার্থ রিয়াকে তাদের বাড়িতে না নিয়ে নদীর তীরে নিয়ে যায়৷ কারণ রিয়া নদী খুব ভালোবাসে। সিদ্ধার্থ তার বোন ছোঁয়ার কাছ থেকে সব কিছু জেনে নিয়েছে। রিয়া কি কি পছন্দ করে।

— আপনি আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন কেন?

— তোমাকে মেরে ফেলে দিব৷ এটা হলো বেস্ট জায়গা। নেই কোন কোলাহল, নেই কোন লোকজন। মেরে ফেলে দিলে কাক পক্ষিরাও বুঝতে পারবে না৷

রিয়া সিদ্ধার্থের কথা শুনে ভিষম খেয়ে যায়। সত্যি আমাকে মেরে ফেলার জন্য এখানে নিয়ে এসেছে৷ প্লিজ আমাকে কেউ বাঁচাও৷ আমি এত তারাতাড়ি মরতে চায় না৷ আমি ভেবেছিলাম সিদ্ধার্থ আমাকে ভালোবাসে। ভালোবাসার প্রতিদান এভাবে পেতে হবে আমি কোন দিন কল্পনা করিনি।(মনে মনে)

রিয়ার ভাবনার মাঝে সিদ্ধার্থ রিয়ার সামনে হাঁটু গেরে বসে পড়ে৷ রিয়াকে একটা কাঁচা গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করে।

— I Love you 🥰

রিয়া তার ভাবনার মাঝে গোলাপ ফুলকে ছুরি নিজের আঁখি বন্ধ করে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকে৷

সিদ্ধার্থ তারাতাড়ি করে রিয়াকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। মাথায় হাত দিয়প সান্ত্বনা নিতে থাকে। কিছু সময় পর রিয়া শান্ত হয়৷

— প্লিজ আমাকে মারবেন না৷ আপনি যা বলবেন আমি তাই করব?

— আরে পাগলি তুমি আমার কলিজা। আমার বুকের বা পাশের হৃদপিণ্ড।

— হৃদপিণ্ড না ছায়৷ তাহলে আমাকে মারতে চেয়েছিলেন কেন?

— কোথায় তোমাকে মারতে চেয়েছি৷

— ওই তো হাতে আপনার ছুরি৷

— এটা ছুরি না৷ এটা তো গোলাপ৷ ভেবেছিলাম তোমাকে আজ প্রপোজ করব।দিলে তো আমার ১২ টা বাজিয়ে৷

— আসলে,,

সিদ্ধার্থ রিয়াকে ছেড়ে দিয়ে অভিমান করে নদীর তীরের উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করে দেয়৷

রিয়া পাথরের মূর্তির মতো সেখানে দাঁড়িয়ে আছে৷ কি থেকে কি হয়ে গেল তার জানা নেই? আমিও তো সিদ্ধার্থকে খুব ভালোবাসি। তাকে ছাড়া আমার জীবন অচল। কিভাবে তার মান ভাঙাবো। হঠাৎ করে তার মাথায় বুদ্ধি চলে আসে। যদি আমি তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চায় তাহলে সে আমাকে নিশ্চয় ক্ষমা করে দিবে।

সিদ্ধার্থ মন খারাপ করে হেঁটে যাচ্ছে।মনে মনে বলে যাচ্ছে যাকে মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছি তাকে কিভাবে হার্ট করলাম? মহারানী ও তো কম নয়৷ আমার ফিলিংস টা বুঝার একটুও চেষ্টা করল না৷ কিছুতেই তাকে আমি ক্ষমা করব না৷

রিয়া দৌড়ে সিদ্ধার্থকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু সিদ্ধার্থ স্টং হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। রিয়াকে তাকে জড়িয়ে ধরেছে তার দিকে কোন খেয়াল নেই৷ নিজের ইগু পোষণ করেই রয়েছে সিদ্ধার্থ।

রিয়া সিদ্ধার্থকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়৷ কান্না করার জন্য রিয়ার মুখ থেকে কোন বুলি বের হচ্ছে না৷ শুধু চোখের অশ্রু কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে৷ সিদ্ধার্থ আর সহ্য করতে পারল না রিয়ার চোখের জল।

সিদ্ধার্থ রিয়াকে সামনে দিকে নিয়ে এনে তার কপোল(গাল) থেকে জল মুছে দেয়৷ কাঁধে হাত রেখে বলতে শুরু করে নেয়৷

— কাঁদার কি হলো? আমি তোমাকে আর হার্ট করব না৷ পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও৷ তোমাকে আর কোনদিন বিরক্ত করবো না।

— আমি আমি,,,কান্নার কথা আটকে পড়ছে৷

— তুমি বাড়িতে ফিরে যেতে চাও। চল তোমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে আসি৷

সিদ্ধার্থ রিয়ার হাত ধরে নিয়ে যেতে নিলেই রিয়া সিদ্ধার্থের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়৷ এতে কিছুটা সিদ্ধার্থ অবাক।

— কি হলো দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?

রিয়া সিদ্ধার্থের কপোল সজোরে একটা থাপ্পড় দিয়ে।

— আমাকে কি মনে করেন? আমি খেলার পুতুল। যখন খুশি নাচাবেন।যখন খুশি ছুঁড়ে ফেলে দিবেন। আমি তা হতে দিব না৷ আপনার ফিলিংসের দাম আছে আমার ফিলিংসের কোন দাম নেই৷ আপনি একটা স্বার্থপর। আপনি শুধু নিজের ফিলিংস টাই বুঝলেন৷ আমার ফিলিংসটা বুঝতে পারলেন না৷

আমি আপনাকে ঠিক ততটাই ভালোবাসি যতটা আপনি আমাকে ভালবাসেন। আমিও আপনাকে ছাড়া বেঁচে থাকার কথা চিন্তা করতেও পারি না৷

সিদ্ধার্থ রিয়ার মুখে ভালোবাসার কথা শুনে রিয়াকে দুই বাহুতে খুব শক্ত করে জড়িয়ে নিল।মনে হয় ছেড়ে দিলেই দূরে কোথায়ও হারিয়ে যাবে৷ অবশেষে তাদের ভালোবাসার সঠিক স্থান পেল।

[রেমন্ড ডিক্সে তাদের পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। সকলকে ইনবাইট করলাম]

২৯.
ছোঁয়া কিছুতেই ঘুম আসবে না। সে আজ সারা রাত অধিরের সাথে বসে বসে গল্প করবে। রাত ১ টা বেজে যাচ্ছে তবুও অধির আজ আসছে না৷ ছোঁয়া আর অপেক্ষা করতে পারছে না৷ ছোঁয়া নিজে থেকে অধির বলে ডাক দিল।

ডাক দেওয়ার কিছু সময় পরই অধির ছোঁয়ার সামনে হাজির হয়৷ আজও সশরীরে। কিন্তু মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা৷ যা দেখে ছোঁয়ার রাগ আরও বেড়ে গেল।

— কুত্তা তোকে বলছি না তুই আমার সামনে আসলে এখন থেকে আর মুখ লুকিয়ে আসবি না৷

— সুইটহার্ট তুমি এত সুন্দর বকা দিত পার তা জানা ছিল না আমার৷ তোমাকে কথা দিচ্ছি সঠিক সময়ে আমি তোমার সামনে আসব।

— তোর আসা লাগবে না৷ চলে যা এখান থেকে। অভিমান স্বরে কথাটি বলে।

অধির রুমের সমস্ত লাইট নিবিয়ে দিল।শুরু একটা ক্যান্ডেল অন করে রেখেছে। ক্যান্ডের আলোতে ঝাপসা দেখা যাচ্ছে ছোঁয়াকে। অধির পিছন থেকে ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে৷

— আমার সুইটহার্ট আমার সাথে রাগ করেছে বুঝি।কিভাবে তোমার রাগ ভাঙাবো? তুমি তো নদী দেখতে খুব পছন্দ কর৷ চল তোমাকে নদীর তীরে নিয়ে যায়।

— না না আমি এত রাতে নদীর তীরে যাব না। আমি পাহাড়ে যাব৷

— তাহলে তোমার কথায় সত্য হবে৷

অধির ছোঁয়াকে কোলে তুলে নিল। অধির মায়াজালের সাহায্যে ছোঁয়াকে আকাশ পথে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ছোঁয়া পরম শান্তিতে অধিরের বুকে মাথা রেখে রয়েছে। অধিরের বুকের হৃদপিণ্ডের শব্দ শুনতে পারছে ছোঁয়া।ছোঁয়ার মনে একটা প্রশ্ন আসে৷ ভুতের আবার হৃদপিণ্ড আছে। নিজের প্রশ্নটা নেটে সার্চ দিয়ে জেনে নিবে পরে৷ এখন কিছু বললে তার বিপরীত হবে৷

অধির ছোঁয়াকে নিয়ে পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচু চূড়ায় উঠে। ছোঁয়া নিচের দিকে তাকিয়ে অধিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

— আপনি আমাকে এখানে কেন এনেছেন৷ আমাকে মেরে ফেলতে চান৷ আমি শুনেছি ভুতেরা মানুষকে বড় বড় পাহাড়ে নিয়ে মাটিতে ছুঁড়ে মারে৷

— আরে পাগলী আমি তোমাকে মারতে যাব কেন? তুমি আমার হৃদয়ের রানী৷ তোমাকে ছাড়া আমি অচল।

— অচল না ছায়। সালা হুনুমান এখনো তুই আমার সামনে আসলি না।তোকে একদিন ভাগে পাই৷ তোর বাপের নাম বুলিয়ে দিব৷ (মনে মনে)

— মনে মনে আমাকে গালি না দিয়ে সরাসরি আমাকে গালি দাও৷

— আপনাকে গালি দিতে যাব কেন?আমি তো ভাবছি আপনি আমাকে এই সমস্ত পাহাড় আপনার সাথে করে নিয়ে দেখাবেন৷




কিছু পড়ার শব্দে ছোঁয়ার মা বাবা জেগে উঠে। তারা ভাবে চোর প্রবেশ করেছে৷ চোরকে খোঁজার জন্য বের হতেই তারা দেখতে পায় ছোঁয়ার রুম থেকে রক্তের বন্যা বয়ে আসছে। তারা তারাতাড়ি নিজের মেয়ের রুমে প্রবেশ করতেই..

চলবে,,