অনিন্দিতা পর্ব-০৭

0
172

#অনিন্দিতা
#৭ম_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা

–“আমি আর অহি মিলে আজ সকালে ইমতিয়াজ ভাইয়ার রুমে গিয়েছিলাম। ”

ইমার কথা শুনে অনি বলল,

–“তো কি হয়েছে?”

–“কি আবার হবে! ওই পিহুর সব জিনিস নষ্ট করে দিয়েছি!”

অহির মুখে এমন কথা শুনে অনি অবাক হয়ে গেলো। আর কিছুটা রেগেও গেলো। তারপর কিছুটা রাগী স্বরে বলল,

–“সব জিনিস নষ্ট করেছিস মানে?”

ইমা এইবার মুখে একটা হাসি এনে বলল,

–“ফেস-ওয়াশ,স্নো,পেস্ট,মেকাপ আরো যা যা ছিলো বাথরুম আর ড্রেসিং টেবিলে সবকিছু মিক্সড করে আবার তুলে রেখেছি! খাওয়া শেষে কি যেন নিতে গিয়ে পিহু আপু যখন ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে তখন ভাইয়ার সাথে সে কি রাগারাগি! ”

অনি অবাক হয়ে ওদের কথা শুনছে৷ ইমার বলা শেষ হলে এইবার অহি বলল,

–“আর ইমতিয়াজ ভাইয়াতো বুঝে গেছে এটা আমাদের কাজ! তো প্রথমে বড়মাকে নালিশ করে ফল পায়নি! শেষে আমার আর ইমার উপরে তেড়ে আসছে!”

এরপর আবার ইমা বলল,

–“আমরাও বলে দিয়েছি যে, খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই! আমরা ওইসব করতে গিয়েছি! ভাইয়া বুঝতে পেরেও আরকিছুই বলতে পারলো না! রাগে ফুসতে-ফুসতে চলে গেলো৷ ”

–“তার কিছুক্ষণ পরেই দুজনে তাদের রুম লক করে শপিং করতে গিয়েছিলো! বেচারী ভীষণ ভয় পেয়েছে আমাদের! আমার বোনের জায়গা নেওয়া! এইবার বুঝবে মজা! সবেতো শুরু বাছা!”

অহির কথা শুনে অনি এইবার পুরোপুরি রেগে গিয়েছে। ও অহি আর ইমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–“তোরা এই কাজটা কিন্তু মোটেও ঠিক করিস নি! মানুষের উপরে রেগে জিনিস নষ্ট করাটা কি ঠিক! কত টাকার জিনিস অপচয় করে ফেললি! ওদের আবার কিনতে হলো! আর ওদের উপরে রেগে লাভ কি বল! আমিওতো বিয়ে করে নিয়েছি! নেক্সট আর এমন কোনো কাজ করবি না তোরা!”

অহি রেগে গিয়ে বলল,

–“আপু শোনো, তোমার মতো আমি অতো মহৎ নয় যে, এতবড় কাজ করার পরেও ক্ষমা করে দিবো! ”

ওর কথা শুনে ইমাও বলল,

–“আমিও না! ওই মেয়েকে আমি কিছুতেই ভাবি হিসেবে মানবো না!”

–“তোদের যা খুশি কর! আমাকে বলতে আসবি না এইসব কুকর্ম! মেজাজটাই খারাপ করে দিলি!”

বলেই ওখান থেকে চলে গেলো অনি। অহি তখনো বলছিল,

–“আমাদেরটা কুকর্ম তাইনা! আর ওই পিহু আর ভাইয়া যে কাজ করছে তা সুকর্ম! তাইনা!”

তাজ অনির রুমে শুয়ে ছিলো। তবে অনি অহির সাথেই থাকতো বলে এ রুমে তেমন কিছু নেই। তারপরও তাজ রুমটা খুঁটিয়ে দেখেছে৷ তেমন কিছুই পায়নি।

অনির ব্যাবহার ওকে ভীষণ ভাবাচ্ছে! মেয়েটার মনে কি চলছে? কিছুই বুঝতে পারছে না তাজ। আজ ইমতিয়াজ আর পিহুকে একসাথে দেখে অনি ভীষণ কষ্ট পেয়েছে। যা তাজের একদম ভালো লাগে নি। ওকে আর এ বাসায় আসতে দেওয়া যাবে না বেশি! এসবি ভাবছিলো তাজ।

এমন সময় অনি গোমড়া মুখ নিয়ে রুমে প্রবেশ করলে আরো ঘাবড়ে যায় তাজ। অনির মন ভালো করার জন্য বিছানা থেকে নেমে হেসে বলে উঠে,

–“মেঘ জমেছে ওই মিষ্টি আকাশে,
বিরহের গন্ধ আমার বাতাসে!
কেগো সে যে বউকে আমার,
দিয়ে দিয়েছে দুঃখের পাহাড়!”

তাজের এমন উদ্ভট কবিতা শুনে অনি হাসতে থাকে। তারপর বলে,

–“কবিতা বলতে না পারলে বলো না! হাস্যকর লাগছে!”

–“আমার বউকে হাসানোর জন্যইতো বলেছি! মন খারাপ?”

–“হুম!”

কথাটা বলেই অনি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে৷ তাজ ওর পাশে গিয়ে বসে আস্তে করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে থাকে,

–“বাসায় আফিয়া এসেছে। আমাদের জন্য ওয়েট করছে। যাবে বাসায়? ”

অনি আজ এখানে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু পিহু আর ইমতিয়াজকে যতবার দেখছে ততবার ওর হৃদয়ে রক্ত*ক্ষরণ হচ্ছে। তাই তাজের কথার সাথে একমত হয়ে বলল,

–“হুম, চলো।”

তারপর অনি সবাইকে বলতে গেলো যে, ও আজ এখানে থাকবে না। আজকেই চলে যাবে। সবাই অবশ্য ব্যাপারটা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলো যে, কেন অনি থাকতে চাইছে না। তাই কেউ আর জোর করলো না।

ওরা তৈরি হয়ে বের হলো যাওয়ার জন্য। তখন অহি শুধু বলল,

–“হ্যাঁ এখনতো আমাদের কাছে থাকতে ভালো লাগবেই না! যাও! যাও! আমাদের সাথে থাকতে হবে না!”

ওর চাচি তখন হেসে জবাব দিলো,

–“তোর বিয়ে হলে বুঝবি! শ্বশুরবাড়ি কি জিনিস! বাবার বাড়িতে মেয়েরা যে কিছুদিনের মেহমান মাত্র!”

অনি তখন অহির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

–“বড়মাকে তুই জুয়েলারিগুলো দিয়েছিস?”

–“কিসের জুয়েলারি?”

অহির কথা শুনে সবাই ওর দিকে তাকালো। তখন অনি ওর চাচিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–“বড়মা, আপনি অহির থেকে জুয়েলারি গুলো নিয়ে নিবেন। আমি ওর কাছে দিয়েছি।”

ওর চাচি অবাক হয়ে বলল,

–“কিসের জুয়েলারি?”

–“ওই যে আপনি আমাকে দিয়েছিলেন।”

–“তো সেগুলোতো তোর-ই। ফেরত কেন নিবো?”

–“ওগুলোতো দিয়েছিলেন…. ”

এটুকু বলেই থেমে যায় অনি। অনির কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে যায়৷ ওর চাচি বলল,

–“সেগুলো সব তোর৷ একদম আজেবাজে কথা বলবি না৷ ফেরত কিসের!”

অনির মন খারাপ দেখে তাজ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–“আচ্ছা এবার তাহলে আমরা আসি। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে।”

তারপর অনি সবাইকে বিদায় জানিয়ে কিছুটা কান্নাকাটিও করলো। এমন সময় পিহু বাইরে এসে অনির দিকে এগোতে লাগলো। এটা দেখে অহি অনির হাত ধরে মেইন গেইটের বাইরে নিয়ে আসলো। যেন পিহু অনির সাথে কথা না বলতে পারে। এটা দেখে পিহু মুখ গোমড়া করে নিজের রুমে ফিরে গেলো। যতই হোক, তাজ আর অনি যে ওর বন্ধু!

অনিকে দেখে আফিয়া জড়িয়ে ধরলো৷ ও ভীষণ খুশি হয়েছে অনিকে নিজের ভাবি হিসেবে পেয়ে। আফিয়াকে দেখে অনিও অনেক খুশি হলো৷

মাগরিবের আজান হতেই তাজের মা অনিকে নামাজ পড়তে বলল। এবার আর অনি অলসতা না করে নামাজ পড়ে নিলো। তারপর আফিয়ার সাথে অনেকক্ষণ গল্প করলো।

আজ ইশার নামাজটাও পড়লো অনি। তাজ বাইরে গিয়েছিলো৷ রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে আফিয়ার সাথে আরোকিছু গল্প করলো অনি। দুইজন বান্ধবীর মতো গল্প করছে।যেন থামতেই চাইছে না।

তাজ ওর দুলাভাইয়ের সাথে ছাদে গিয়েছিলো। ফিরে এসে দেখে অনি তখনো আফিয়ার সাথে গল্প করছে। অনির হাসিমুখে গল্প করা দেখে তাজের খুব ভালো লাগছিলো৷ কেন যে মাঝেমধ্যে মুখটা গোমড়া করে ফেলে! তখন তাজের একদম ভালো লাগে না।

–” ভাইয়া! ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভেতরে আসো।”

আফিয়ার কথায় চমক ভাঙে তাজের। তারপর রুমে ঢুকে বলে,

–“না এমনিই৷ তোদের গল্প করা দেখছিলাম।”

অনি তখন হেসে ফেলে তাজের কথা শুনে। তারপর বলল,

–“গল্প করা মানুষ শোনে। আর তুমি দেখছিলে! ”

অনির সাথে আফিয়াও হেসে ফেলে। তারপর তাজ আর অনিকে বিদায় জানিয়ে ও নিজের রুমে চলে যায়।

–“চলে এসে কি খুব বেশি খারাপ লাগছে?”

তাজের কথা শুনে অনি বলে,

–“না! বরং আফিয়ার সাথে গল্প করে নিজেকে অনেক ফ্রেস লাগছে৷ ভালো লাগছে।…. ছাদে যাবে?”

–“আমিতো মাত্রই আসলাম….! আচ্ছা চলো।”

তারপর দুজনে ছাদে কিছুটা সময় কাটিয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়লো। তাজ অনিকে নিয়ে চিন্তিত ছিলো। কারণ ওর মনের মধ্যে কি চলছে তাজ এখনো তা বুঝতে পারছে না। অপরদিকে অনি এখনো পিহু আর ইমতিয়াজ এর কথাই ভেবে যাচ্ছিলো।

এসব ভাবতে-ভাবতে কখন দুজন ঘুমিয়ে পড়েছে কেউ জানে না। সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখ বুজে এসেছিলো।

হঠাৎ ফোনের রিংটোন শুনে ঘুম ভেঙে যায় অনির। অহি ফোন করেছে ভেবে কোনোকিছু না ভেবেই ফোনটা তুলে নেয় অনি। অহিকে এতরাতে ফোন করার জন্য বকা দিতেই যাবে তখনি বুঝতে পারে যে এটা অহির গলা নয়! ও চমকে গিয়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকায়।

‘অন্তরা’ নামের কাউকেতো ও চেনে না। তাহলে এই নামের কেউ এতরাতে ফোন কেন করেছে? এসব ভেবে ফোনের দিকে তাকাতেই ও অবাক হয়ে যায়। কারণ ও নিজের নয় তাজের ফোন রিসিভ করেছে। ও সময় দেখে যে রাত এগারোটা তেতাল্লিশ বাজে। এতরাতে তাজের ফোনে কোনো মেয়ে কেন কল করবে? তাজের পরিচিত কেউ হবে ভেবে ও ভয়ে কলটা কেটে দেয়। তারপর আস্তে করে তাজকে ডাকতে থাকে,

–“তাজ, তাজ….”

কিছুক্ষণ ডাকার পর তাজ চোখ তুলে তাকায় অনির দিকে। তারপর ঘুম-ঘুম চোখে অনিকে দু’হাতে জাপটে ধরে ঘুমাতে বলে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে।

অনি তাজের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। তারপর “অন্তরা” নামটা বলতেই তাজ লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়ে। তারপর কিছুটা বিচলিত কন্ঠে বলে,

–“অন্তরা? কোথায় অন্তরা? কি হয়েছে?”

–“অন্তরা কি তোমার গার্লফ্রেন্ড? ”

বিষন্ন মনে কথাটা বলে অনি। অন্তরাকে তাজের গার্লফ্রেন্ড বলেই মনে হচ্ছে অনির। নইলে এতরাতে কল করার কথা নয়। তার উপরে তাজ আবার সেই অন্তরা মেয়েটাকে নিয়ে এত সেন্সিটিভ! গার্লফ্রেন্ড না হলে তাজ কখনো এভাবে প্রতিক্রিয়া করতো না।

অনির এই প্রশ্ন শুনে তাজ একদম চুপ হয়ে যায়। মাথাটা নিচু করে ফেলে। অনি বুঝতে পারে যে, তাজ তার দিকে তাকাচ্ছে না। বড় কোনো গন্ডগোল আছে ভেবে অনি তাজকে আবার প্রশ্ন করে,

–“এই অন্তরা টা কে তাজ? বলো? উত্তর দাও?”

চলবে…?