অনুবদ্ধ প্রণয় পর্ব-১১

0
708

#অনুবদ্ধ প্রণয় 💛
#ইবনাত_আয়াত
~ পর্ব. ১১

‘তুমি কী দেখেছ সেই পুড়া হৃদয়ের দহন। দেখেছ সেই কালো হৃদয় যার আগের রূপ টা তার জন্য সাজানো ছিল। তুমি কে দেখেছ সেই মোহিনীশক্তি যেই মোহে আকৃষ্ট করেছিল সে আমায়, যে বিদায় নিয়েছে এই মানুষ টাকে রঙহীন করে৷ হয়তো আমি সেই মানুষ টাকে মনে রেখে তোমায় ভুলছি, কিন্তু আমি যে তাকে ভুলতে চাই। বিরহডোরে বাঁধতে চাই তোমাকে। হ্যাঁ! চাই খুব করে।’

এক দৃষ্টিতে আকাশে দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছি। কালো মেঘে ঢাকা আকাশ পানে মুখ করে উক্ত বাক্যমালা ছুড়লেন কন্ঠের অধিকারী। তাহমিদের বলা প্রতিটা কথা কানে বাজছে। কী বলল সে? কেনই বা বলল?

‘আজও ভালোবাসেন তাকে?’

‘বাসতাম তো। কিন্তু আজকাল তাকে খুব কমই মনে পড়ে। সে যে আমায় একা করে চলে গেছে।’

‘তবে.. আমায় কেন আটকে রেখেছেন?’

‘তোমায় কেন আটকে রেখেছি? আটকে রেখেছি আমি!! তুমি থাকতে চাচ্ছ না? আসলে আমি মানুষ টাই এমন। আমার জীবনে যে, কেউই থাকতে চায় না।’

বুক ধক করে উঠল তার কথা শুনে। কোথাও একটা খা’রাপ লাগল। খালি মনে হলো নিজেকে। বললাম, ‘আপনি কী জানেন? আমাদের বিয়ে আট বছর আগে থেকেই ঠিক ছিল?’

চমকে উঠলেন তিনি, ‘কী বলছো এসব?’

‘সত্যিই তো বলছি। জানেন না আপনি? অবশ্য না জানারই কথা। চলে তো গিয়েছিলেন সবাইকে ছেঁ’ড়ে। এসে বিয়ে করে নিলেন অবন্তী কে।’

হাসলেন তিনি। বললেন, ‘এটাই আমার নিয়তি ছিল।’

‘তবে আপনি চাইলে পাল্টাতে পারেন।’

‘কীভাবে? সে যে নিজ রাস্তায়ই চলবে। তবে তুমি চাইলে যেতে পারো। আমি আটকাবো না।’

কেন যেন নেত্রকোণ ভিজে উঠল। দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। মনে কেউ চাঁপা আর্তনাদ করে যাচ্ছে। আপনি কবে বুঝবেন তাহমিদ? আমিও যে আপনার সাথে গভীর ভাবে জড়িয়ে যাচ্ছি। কভু কী এই বক্ষ পিঞ্জরে লুকোনো কথা গুলো আপনি বুঝতে পারবেন না?

‘সত্যি চলে যাব? এটা চান আপনি?’

তিনি এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন আমার দিকে। আমি অন্যদিকে ফিরে চোখের পানি টুকু মুছে তার দিকে ফিরে বললাম, ‘ঠিক আছে। চলে যাব।’

‘সত্যি চলে যাবে? আমার জন্য কী একটুও দয়া হয় না?’

আপনার কী হয় না? অনুভূত হয় না এই প্রণয়িনীর অনুভূতি? কিছু না বলে রুমে চলে আসলাম। ওয়াশরুমে গিয়ে বাঁধ না মানা অশ্রু গুলো ছেঁ’ড়ে দিলাম৷
__________

সামনে একটা গাড়ি থামতেই থমকে দাঁড়াল ইফা। কালো রঙের গাড়ি। সে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে লক্ষ করল। তারপর তোয়াক্কা না করে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরতেই সেই গাড়ি থেকে কেউ একজন নেমে এলো। তার মুখে কিছু একটা চেঁপে ধরতেই চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। আঁধার নেমে এলো। তাকে গাড়িতে তুলে ব্যক্তিটি গাড়ি স্টার্ট দিল।

দূর থেকে ইবনান বিষয়টি লক্ষ করল। অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠল সে। দ্রুত গাড়ি চালিয়ে পিছু নিল গাড়ি টার। হার্টবিট উঠানামা করছে। এই বুঝি তার জান গেল?

___
‘কে আপনি? আমায় এভাবে আটকে রেখেছেন কেন? ছাড়ুন। ছেঁ’ড়ে দিন আমাকে। প্লীজ কেউ আছেন?’

কেই ইফার চোখ থেকে পট্টি সরিয়ে দিতেই ইফা সামনে থাকা ব্যক্তিটাকে দেখে হতবিহ্বল হয়ে চেয়ে রইল। অস্ফুট স্বরে বলে উঠল, ‘শাহিন!!’

শাহিন হেসে বলল, ‘হ্যাঁ আমি। কেমন আছো ইফা?’

‘মাই ফুট! কেন নিয়ে এসেছ আমাকে এখানে?’

শাহিন উঠে দাঁড়াল, ‘ওমা! তুমি জানো না কেন এনেছি? আরে.. ছেলেরা মেয়েদের কিডন্যাপ কেন করে?’

ইফা কেঁপে উঠল, ‘এসব কী বলছো শাহিন? দেখো আমরা ফ্রেন্ড। আর এভাবে কিডন্যাপ করার কোন মানে হয় না। নয়তো আমি তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ন’ষ্ট করে দেব শাহিন। আমাকে যেতে দাও।’

‘নো নো! যেতে দেওয়ার জন্য তো নিয়ে আসিনি ইফুপাখি।’

‘হোয়াট!! আর ইউ ম্যাড শাহিন? কী বলছো এসব? প্লীজ আমায় যেতে দাও প্লীজ।”

‘আ’ম স্যরি ইফুপাখি।’

‘ইউর স্যরি ইজ মাই ফুট!’

আকস্মিক ইবনানের গলা পেয়ে দু’জন চমকে তাকাল। ইবনান পেছনে রড হাতে দাঁড়িয়ে আছে৷ শাহিন চমকে উঠল। দ্রুত ছুরি বের করে ইফার গলায় ধরে বলল, ‘খবরদার সামনে এগুবি না। নইলে ইফাকে আমি শেষ করে দেব।’

ইবনান চমকে গেল। এমন কিছু আশা করে নি সে। রড টা নিচে ফেলে হাত উপরে তুলে বলল, ‘নে আমি রেখে দিয়েছি। কিছু করব না তোকে। প্লীজ ইফাকে ছেঁ’ড়ে দে।’

কিন্তু শাহিন ছাড়ে বা। ইবনান ইফার দিকে এক অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল। ইফার খা’রাপ লাগল খুব। সে তার হাতের বাঁধন টা আলগা করে মাথা দিয়েই শাহিনের পেটে আ’ঘাত করল। মাথায় চুলের কাঠি থাকায় সেটা শাহিনের পেটে আ’ঘাত হানল তীব্রভাবে। সে পিছিয়ে গেল এবং ছুরিটা তার হাত থেকে পিছলে পড়ে গেল। এই সুযোগে ইবনান সেই রড টা নিয়ে দৌড়ে এসে পরপর শাহিনের পায়ে আ’ঘাত করল। তারপর ছুটে এসে ইফার বাঁধন খুলে দিয়ে ইফাকে চমকে দিয়ে ইবনান তাকে জড়িয়ে ধরল। ইফা হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল৷ ইবনান তাকে ছেঁ’ড়ে অস্থির হয়ে বলল, ‘ত-তুই ঠিক আছিস ইফা? তোর লাগে নি তো?’

ইফা অবাক হয়ে বলল, ‘আমি ঠ-ঠিক আছি ভাইয়া। একদম ঠিক আছি।’

ইবনান রড টা তুলে শাহিন কে আচ্ছামতো পিটিয়ে নিল। পুলিশকে ফোন করল।
__
ধর্ষক হিসেবে ধরিয়ে দিল শাহিন কে ইবনান। ইফার যদিও খা’রাপ লাগছে। শতহোক একসময় তো বন্ধুই ছিল।

ইবনান ইফার কাঁধে হাত রেখে বলল, ‘চল! বাসায় চল। তোকে দিয়ে আসি।’

ইফা মলিন হাসল। দু’জন পথ চলতে শুরু করল। ইবনান মাঝ রাস্তায় বলল, ‘আইসক্রিম খাবি?’

ইফা মন খা’রাপ থাকা সত্ত্বেও মাথা নাড়ল। ইবনান দোকান থেকে আইসক্রিম কিনল দু’টো। দু’জন খেতে খেতে পথ চলতে শুরু করল। ইবনান যেতে যেতে বলল, ‘ফাহাদ কে এখনো ভালোবাসিস?’

ইফা থমকে দাঁড়াল। বলল, ‘ওর মতো বিশ্বাসঘাতক কে ভালোবাসার প্রশ্নই আসে না ইবনান ভাই।’

ইবনান এবার ইফার দিকে ঝুঁকে বলল, ‘আমি তোর ভাই?’

আকস্মিক ঝুঁকে যাওয়ায় ইফা কিছু টা ভড়কে গেল, ‘ন-না মানে..’

‘মানে কী?’

‘ক-কিছু না। আসলে.. অভ্যাস টা এখনো যায় নি।’

ইবনান সরে এসে বলল, ‘অভ্যাস টা চেন্জ করে ফেল। হোক না হোক একদিন প্রিয় নামেই ডাকতে হবে।’

ভ্রু কুঁচকালো ইফা। থমকে দাঁড়িয়ে রইল। এই মুহুর্তে সে কী বলল? রাস্তা পারাপার হচ্ছিল দু’জন। ইবনান কথার মাঝে আগে আগেই অন্য পাড়ে পৌছে গেছে। পাশে ইফাকে না পেয়ে পেছন ফিরতেই ইফাকে রাস্তার মাঝে আবিষ্কার করল ইবনান। থমকে দাঁড়াল। এদিকে ইফা বুঝতে পারল সে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু খুব দেরি হয়ে গেছে৷ কিছু করার পূর্বেই একটা ট্রাক এসে ধা’ক্কা মা’রে ইফাকে। ইবনান হতভম্ব হয়ে গেল। বিকট চিৎকার দিল সে, ইফা!!!!!!!!
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ্]