অনুবদ্ধ প্রণয় পর্ব-১৩

0
728

#অনুবদ্ধ প্রণয় 💛
#ইবনাত_আয়াত
~ পর্ব. ১৩

কে’টেছে প্রায় এক সপ্তাহ। এর মাঝে ইফাও সুস্থ হয়ে গেছে। তাকে ডিসচার্জ করা হয়েছে দু’দিন পূর্বে। এখন সে পরিপূর্ণ সুস্থ।
তেমন একটা আ’ঘাত পায় নি। শুধু পায়ে আ’ঘাত পেয়েছিল। এদিকে আর এক সপ্তাহ বাদেই তাদের বিয়ে। মানে অনুষ্ঠান হবে। ইবনান আজ প্লান করল, যে করেই হোক, তার মনের রাণীকে আজ সকল কথা সে জানাবে, যা সে তিন বছর ধরে নিজের মাঝে লুকিয়ে রেখেছিল।

‘কী ভাবছেন এত ইবনান ভাইয়া?’

ইফার কথায় হুশ ফিরে ইবনানের। হেসে বলল, ‘ভাবছি তো অনেক কিছু। আর.. তুই এখনো আমায় ভাইয়া ডাকছিস? আমি তোর ভাই?’

ইফা জিভ কাটল। বলল, ‘না.. মানে.. অভ্যাস তো এত সহজে পাল্টানো যায় না।’

‘কিন্তু পাল্টাতে যে হবেই।’

‘হ-হ্যাঁ তা তো সত্যি।’

‘শোন। একটা কাজ করতে পারবি?’

‘আহ হ্যাঁ বলুন। কী করতে হবে?’

‘বেশি কিছু না। আজ ওই নীল শাড়ি টা পড়ে ওই নদীর তীরে আসতে পারবি? যেটা আমি তোকে দিয়েছিলাম। মানে.. তোকে নিয়ে একটু ঘুরব।’

‘সত্যি? কেন নয় ইবনান ভাই… না মানে.. কেন নয়? অবশ্যই আসব।’

ইবনান হাসে। সাথে ইফাও। ইবনান মনে মনে বলল, ‘আজ যে আমার অশান্ত মন নিজেকে আটকাতে পারছে না ইফুরাণী। আজ যে মন টা হালকা করতেই হবে।’
__________

রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আছি। শূণ্য দৃষ্টি আকাশে। ভেবে চলেছি আনমনে কিছু। কবে জানাব আমি তাকে, যে.. আমি তার প্রতি আসক্ত হয়ে গেছি। কবে জানাব আমি তাকে, আমি তার মায়ায় আটকে গেছি। কবে জানাব আমি তাকে, যে… আমি তাকে.. ভালোবেসে ফেলেছি।
হ্যাঁ.. তাকে আমি ভালোবাসি। অজান্তেই এই মন তার জন্য উতলা হয়ে গেছে। কিন্তু বলতে পারছি না আমি। সে কী আমার এই অনুভূতি বুঝতে পারে না? কখনোই পারে না? সে কী অনুভব করতে পারে না আমার না বলা কষ্টটুকু।

আজ যে আমি না বলে পারছি না তাকে। কী করে বলি? সে কেমন ভাববে আমাকে? আর.. সে আমার স্বামী। তবে সে কেন প্রাক্তন কে নিয়ে ডুবে থাকবে?
__________

নদীর পাড়ে আসতেই ইবনান কে দেখে প্রথম বারের মতো ক্রাশ খেলো ইফা। হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। এই মানুষ টা এত সুদর্শন! এটা সে আগে কেন খেয়াল করেনি? কেন করেনি? নিজেই নিজের মাথায় চাঁপড় মা’রল ইফা। তারপর এগিয়ে গেল সেদিকে।

নীল পাঞ্জাবী পরনে ইবনান কে এর আগে এতটাও খেয়াল করেনি যদিও তার চেহারায় সৌন্দর্য কম ছিল না। হালকা নীল রঙ টা যেন তার সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

ইবনান এতক্ষণ ইফাকে খেয়াল করেনি। ইফা এসে ‘ভাউ’ করে দিল এক চিৎকার। ইবনান চমকে পেছন ফিরতেই নীল শাড়ীওয়ালি ইফাকে নজরে এলো। স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলল, ‘বাপরে! তুই? এই এভাবে ভয় লাগালি কেন?’

ইফা হেসে বলল, ‘একটু লাগিয়ে দেখলাম আর-কি।’

ইবনানও হেসে ফেলল। দু’জন সারাদিন অনেক ঘুরল। এটা ওটা খেল, ঘুরলো। শেষ বিকেলের ইফাকে নদীর তীরে বসিয়ে ইবনান গিয়ে একটা গাজরা কিনে নিয়ে আসে। ইফার অজান্তেই তাকে পড়িয়ে দেয়। ইফা চমকে উঠে। তার পর তার কান্ডে হেসে ফেলে। ইবনান একগুচ্ছ গোলাপ হাতে নিয়ে তার সামনে এসে শীতল কন্ঠে বলল,

‘ইফুরাণী, জানি না কবে এই হৃদয়কোণে তোর জন্য ঘর বেঁধে বসেছি। কবে তুই এই মনে জায়গা করে নিয়েছিস। সেই তিন টা বছর আগেই তোর প্রতি ভালোলাগায় আসক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু সেটা পরর তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগল। অবেশেষে উপলব্ধি করতে পেরেছি, যে আমি.. তোকে ভালোবাসি। তোর প্রতি সকল স্নিগ্ধ অনুভূতি আমি জমিয়ে রেখেছি আমার মন কোণে। তোর জন্য জমিয়ে রাখা সকল শীতল পরশ আমি জমিয়ে রেখেছি। সব অপূর্ব কথামালা তোর জন্য আমি জমিয়ে রেখেছি। আর আমি জানি না প্রেয়সী কে কীভাবে প্রপোজ করতে হয়, তবে আমি শুধু এটাই বলব, ভালোবাসি ইফুরাণী। সারাজীবন এই আকুল মনে রাখব তোকে।’

ইফা হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল। অস্ফুট স্বরে বলল, ‘তবে আপনি… আমায় দায়িত্ববোধ এর জন্য বিয়ে করেন নি?’

ইবনান হাসে। ইফা হাসতে গিয়েও কেঁদে ফেলল। ইবনানের বুকে মাথা রাখল। বলল, ‘আমিও যে অজান্তেই আপনার প্রেমে পড়ে গেছি ইবনান। আমি জানি না, কবে। তবে, চাই আপনার সঙ্গে প্রতিটা লহমা কাঁটাতে।’

‘তবে কী আমার প্রেম ব্যর্থ যায় নি?’

‘নাহ্! ভালোবাসি আপনাকে…’
পূর্ণতা পেল দু’টি ক্ষুধার্ত আকুল মনের।
__________

‘ভালোবাসি, হ্যাঁ ভালোবাসি আপনাকে, অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছি। জানি না আপনি আমায় গ্রহণ করবেন কী-না। তবে আমি যে আপনার জন্যে বিরহে ম’রছি। আমায় কী একটু ভালোবাসা দিবেন?
দিবেন না? কেন একটু কী দেওয়া যায় না? কেন তাকে নিয়ে পড়ে থাকবেন, কেন তার তিক্ত স্মৃতি নিয়ে রাতদিন ডুবে থাকবেন যার কোন অস্তিত্বই নেই এখন? তবে কী আমি ব্যর্থ প্রেমিকের মন জয় করতে?
ভালোবাসবেন কী আমায়? গ্রহণ করবেন কী?’

হতবিহ্বল হয়ে চেয়ে রইলেন তাহমিদ। কালো শাড়ি পরনে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। দৃষ্টি তার মাঝেই নিবদ্ধ। সে নিশ্চুপ। আমি আবারো বললাম, ‘চুপ করে আছেন যে? তবে আমার জন্য কী আপনার মনে একটুও জায়গা সৃষ্টি হয়নি?’

তাহমিদ মাথা নিচু করে বললেন, ‘আ.. আ’ম স্যরি ইয়ানাত। আমি এখনই কিছু বলতে পারব না।’

‘আপনাকে বলতেই হবে তাহমিদ। বলতেই হবে। তবে কেন আমায় আটকে রেখেছেন এখানে? বলুন?’

‘দেখো ইয়ানাত…’

‘আর দেখতে পারব না। যা দেখার সব দেখে ফেলেছি। আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।’

তাহমিদ কোন উত্তর না দিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলেন। হতাশ হলাম। চোখ বেয়ে গড়াল নোনাজল। নাহ এখানে আর থাকব না। আর পারব না এসব নাটক সহ্য করতে। বেরিয়ে যাব, হ্যাঁ চলে যাব এখান থেকে। আর এই মুহুর্তে তার বাবা মা-ও নেই। তাহমিনা, বাবা-মা, তারা তিনজন মিলে ফুফুর বাসায় গেছে এক সপ্তাহের জন্য। এ ক’দিন দু’জন একাই ছিলাম।

পরনের শাড়ি টা খুলে থ্রি-পিস পড়লাম। গায়ে উড়না জড়িয়ে ব্যাগ গুছাতে লাগলাম। এর মাঝে তিনি রুমে এলেন। আমাকে এভাবে ব্যাগ গুছাতে দেখে অবাক হয়ে বললেন, ‘কী করছো ইয়ানাত?’

বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘দেখতেই তো পাচ্ছেন কী করছি।’

‘হ্যাঁ দেখতে পাচ্ছি ব্যাগ গুছাচ্ছ কিন্তু কেন?’

‘ব্যাগ কেন গুছায় মানুষ?’

‘দেখো ত্যাড়া কথা বলো না ইয়ানাত। কোথায় যাচ্ছ তুমি?’

‘চলে যাচ্ছি।’

‘চলে যাচ্ছ মানে?’

‘চলে যাচ্ছি মানে চলে যাচ্ছি।’

‘কোথায় যাচ্ছ?’

‘কোথায় আবার বাড়িতে।’

‘আমি কিন্তু তোমাকে অনুমতি দেয় নি মিসেস.।’

‘আমার আপনার অনুমতির প্রয়োজন নেই মি.।’

‘হোয়াট?’

ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসতে যাব, তখনই তিনি হাত ধরে টে’নে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে বললেন, ‘বাড়িতে যাচ্ছ? আমার অনুমতি ছাড়া? দেমাগ দেখিয়ে চলে যাচ্ছ? এত বড় সাহস তোমায় কে দিয়েছে?’

‘কেন? আমি চলে গেলে আপনার কী? আমি ম’রে গেলেও বা আপনার কী হা?’

-‘ ইয়ানাত!!! ‘

‘চেঁচাচ্ছেন কেন? আমার এখানে থাকার কী দরকার বলুন? আপনি তো আমায় মেনে নিচ্ছেন না, আগের সব স্মৃতি নিয়ে পড়ে আছেন। অতীত নিয়ে পড়ে আছেন। তবে আমার কী দরকার এখানে থাকার?’

তিনি চুপ করে রইলেন। তাকে ধা’ক্কা দিয়ে সরিয়ে বললাম, ‘ছাড়ুন আমাকে।’

যেতে নিলে তিনি আবারো হাত ধরে টে’নে বললেন, ‘ঘর থেকে ভুলেও বের হওয়ার চেষ্টা করবে না ইয়ানাত। নয়তো আমার চেয়ে খা’রাপ কেউ হবে না।’

তিনি এক ঝটকায় আমার ছেঁ’ড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। তাজ্জব হলাম। এ কী আমায় বেরুতে দেবে না?
চাঁপা অভিমান ভার করল মনে। আমি যে এখানে থাকব না। সে যতদিন না অবদি ওই অতীত নিয়ে পড়ে থাকবে, যতদিন না অবদি আমায় মনে ঠাঁই না দিতে পারছে আমি এখানে থাকব না।

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]