#অনুবদ্ধ প্রণয় 💛
#ইবনাত_আয়াত
~ পর্ব. ১৪
দরজায় টোকা দিতেই দরজা খুলল আম্মু। হেলেদুলে প্রবেশ করলাম। আম্মু অবাক হয়ে বলল, ‘ইয়ানাত? তুই কবে এলি? এভাবে না বলে কেন এলি? ফোন করে আসতে পারতি। আর.. একা এসেছিস? জামাই বাবা কোথায়?’
‘আসে নি।’
‘আসে নি? কেন আসেনি?’
খুব বলতে ইচ্ছে হলো, আসবে না তো। কেন আসবে সে? তার কী আমার প্রতি কোন অনুভুতি কাজ করে? সে তো তার অতীত নিয়ে মত্ত।
‘এমনি। আমি একাই এসেছি। তার একটু কাজ পড়ে গেছে তাই।’
‘তো খালি হাতে এলি যে? তা ছাড়া বিয়ের আর মাত্র চারদিন বাকি। একেবারে সব নিয়ে চলে আসতি।’
‘না থাক। সমস্যা নেই। আমার একটু রেস্ট লাগবে। শরবত দিও তো একটু।’
রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। বড্ড অভিমান জমেছে মনে। সে কী কখনোই আমায় বুঝবে না?
__________
‘মুন্নি! মুন্নি তোর ভাবী কোথায়?’
তাহমিদের চিৎকার শুনে মুন্নি দৌড়ে এলো। বলল, ‘কী হলো ভাইজান?’
‘ইয়ানাত কোথায়?’
‘ভাবী মনি তো চইল্লা গেছে, আপনে রে কয় নাই?’
তাহমিদ থমকে গেল, ‘চলে গেছে মানে? কোথায় গেছে?’
‘আপনে রে কয় নাই বোধহয়, ভাবী মনি তো বাপের বাড়ি গেছে। আমারে কইয়া গেছে আপনে রে বলবার লাগি। আপনে তো ছিলেন না তাই কইতে পারি নাই।’
‘ড্যাম! চলে গেছে? ও আমায় না বলে চলে গেছে? এত বড় সাহস?’
‘কেন ভাইজান কিছু কি হইছে?’
‘কিছু না তুই যা..’
তাহমিদ রুমে এসে টেবিলে জোড়ে লাথি মে’রে বিছানায় মাথা চেঁপে বসে পড়ল। রে’গে বলল, ‘কাজ টা তুমি একদম ঠিক করো না হৃদস্পর্শিনী। আমার মানা করা সত্ত্বেও তুমি এই সাহস দেখালে? নো নো ইউ ডু নট ডিজার্ভ মাই গুড বিহেভিয়ার। নাও ইউ উইল সি মাই মেইন ফেইস। গেট রেডি মিসেস. ইয়ানাত।’
__________
অবসন্ন মনে বসে আছি ছাদে৷ দৃষ্টি আকাশের দিকে। বার বার তাহমিদের কথা মনে আসছে। ধুর বারবার ব্যাপার টা ভুলে বাড়িতে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করছি কিন্তু মন তা-তে পড়ে আছে। আচ্ছে সে এখন কী করছে? তার কী আমার কথা মনে আসছে না? সে-কী একাই তার অবন্তীর স্মৃতি নিয়ে পড়ে আছে? সত্যি? তাহলে আমিও তার কথা মনে করব না।
পাশে এসে বসল কেউ একজন। মাথায় চা’পড় মে’রে বলল, ‘কী রে বুড়ি? কী করছিস বসে বসে? একা একা বসে আছিস কেন?’
‘তো কী করব? কার সঙ্গে থাকব? তোমার কী সে খেয়াল আছে? তুমি তো ইফা আপুকে নিয়েই পড়ে আছো।’
‘এই রে! তুই কীভাবে জানলি?’
‘আম্মু বলল তুমি আর ইফা আপু ঘুরতে গেছো। এত ঘুরাঘুরি কিসের? দু’দিন বাকি বিয়ের, তখন না হয় ঘুরো, এখন কী?’
‘আরে.. ভিলেন হতে চাচ্ছিস নাকি?’
‘উহু! এখন আর ইফা আপুর সাথে দেখা করা আর কথা বলা একদমই যাবে না। বিয়ের পর যা খুশি করো বউয়ের সাথে। এখন একদম না!’
‘এই রে তুইও শুরু করলি? আচ্ছা তাহমিদ আসেনি কেন রে?’
মুখের হাসি উবে গেল, ‘আমি কী জানি কেন আসেনি।’
‘এমা! তোর হাসবেন্ড কেন আসেনি এটা তুই-ই জানিস না বাপরে?’
‘উনার যখন খুশি তখন আসবেন। আমাকে এসব জিজ্ঞাস করো না।’
‘আরে রে’গে যাচ্ছিস নাকি?’
‘না তো।’
‘হুম…’
___________
আজ বাদে কাল গায়ে হলুদ। মেহমান আসা শুরু করেছে। কত আনন্দ সবার! অথচ এত মানুষ থাকা সত্ত্বেও এক কোণে নিঃস্ব হয়ে বসে আছি আমি। কিছুই যেন ভালো লাগছে না।
কাজিন রা বহুবার এসেছে শুধু আমায় নিয়ে একটু মজা করবে বলে। কিন্তু আমি খা’রাপ লাগছে বলে তাদের পাঠিয়ে দিয়েছি। এর মাঝে রুবির জোড়াজুড়ি তে নিচে নামলাম। সবাই গানের কলি খেলছে। বসলাম তাদের মাঝে। এর মাঝেই দরজায় টোকা পড়তেই আম্মু দরজা খুলে দিল। থমকে গেলাম, এ আমি কাকে দেখছি?ত-ত-তা-তাহমিদ!!!!!!!
সে এখানে.. এসেছে? সত্যি এসেছে? আম্মু খুশি হয়ে বলল, ‘জামাই বাবা! কেমন আছো?’
তিনি হেসে বললেন, ‘এই তো মা আপনি কেমন আছেন?’
‘খুব ভালো আছি তুমি এসেছ। আসো আসো, ইয়ানাতের সঙ্গে এলে না কেন?’
‘আর বলবেন না, কাজ পড়ে গিয়েছিল একটু।’
তাহমিদ ঘরে প্রবেশ করলেন। কিয়ৎক্ষণের জন্য মুখে হাসি ফুটলেও মুহুর্তেই আগের সেই পাহাড় পরিমাণ অভিমান মনে ভার করল। এদিকে কাজিনরা তো আছেই বেহায়ার মতো আলাপে, ‘আরে.. হ্যান্ডসাম টা কে রে?’
‘আরে তুই জানিস না? ইয়ানাত আপুর হাসবেন্ড।’
‘রিয়েলি? সো কিউট।’
তাহমিদ বাকিদের সাথে কথা বলছেন। আমি উঠে দাঁড়ালাম। এক ছুটে রুমে চলে এলাম। দরজা টা হালকা টেনে দিয়ে বিছানায় বসলাম মুখ ফুলিয়ে। লা’ফাঙ্গা! এলি তো ভালো কথা আজ কেন এলি? আগে আসতে পারতি না? আর আমার জন্য এসেছিস না বন্ধুর বিয়ে খেতে এসেছিস? হুহ!
প্রায় পনেরো মিনিট কাটল। হঠাৎ দরজা ঠেলে প্রবেশ করলেন তাহমিদ। এসে শার্টের দু টা বোতাম খুলে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লেন। দ্রত উঠে গিয়ে বললাম, ‘এই এই! আপনি এখানে কী করছেন?’
তিনি অবাক হয়ে বললেন, ‘এখানে কী করছি মানে? শশুড় বাড়ী এলাম কোথায় আপ্যায়ন করবে তা-না বলছো এখানে কী করছি? বাহ মিসেস. তাহমিদ বাহ!’
দাঁতে দাঁত চেঁপে বললাম, ‘শাট আপ! আপনি আমার রুমে কী করছেন? যান বেরিয়ে যান। বেরিয়ে যান বলছি!’
‘ওমা! এ কেমন কথা? বউ থাকতে রুম থেকে বেরিয়ে যাব? কার কাছে যাব? কোন বিউটি শালি আছে?’
চোখ মার্বেলের মতো গোল গোল হয়ে এলো, ‘অসভ্য! মুখে কী কিছুই আটকায় না আপনার?’
তিনি হাসলেন, ‘বউ কে বলতে কিসের লজ্জা? তা ছাড়া আমি বউয়ের কাছে এসেছি। তোমার কী?’
হা হয়ে গেলাম। আমার কী মানে? কিছু কী খেয়ে এলো নাকি?
‘আপনি ঠিক আছেন? কী-সব বলছেন এগুলো?’
হঠাৎ তিনি করুন স্বরে বললেন, ‘ঠিক ছিলাম তো এতদিন, কিন্তু তুমি আবারো আমায় এলোমেলো করে দিয়ে চলে এলে।’
থমকালাম, ‘ম-মানে?’
‘আচ্ছা সেসব বাদ দাও। একটু মাথাটা টিপে দিবে?’
‘পারব না যান এখান থেকে।’
‘ওকে.. তাহলে.. ওই সুন্দরী শালির কাছে নাহয় যাব।’
‘ছিঃ! বে’হায়া!’
‘যাব্বাবা! বউকে বললাম সে দিল না, শালী কে বলতে গেলে আমি বে’হায়া? এ কোন দুনিয়ায় এলাম?’
বিরক্ত হয়ে চলে যেতে নিলেই তিনি উঠে বসলেন, হাত টেনে কোলে বসিয়ে দিলেন। তার এহেন কাজে হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলাম। তিনি বললেন, ‘প্রথমত, আমায় না বলে আমার মানা করা সত্ত্বেও এখানে চলে আসার সাহস করেছ, সেটার শোধ তো পরে নিব। কিন্তু এখন আমার কথা না মানলে অন্য কিছু করতে বাধ্য হবো ইয়ানাত।’
‘ক-কী করবেন?’
তিনি ভাবনার ভঙ্গিতে বললেন, ‘মেই বি অ্যা কিস্!’
‘কীহ্? ছিঃ ছিঃ ছিঃ!’
‘এমন ভাব করছো যেন কখনো আমাকে কিস্ করবে না।’
চোখ দু’টো আপনা-আপনি বড় হয়ে এলো, ‘কী বললেন আপনি?’
‘কানে কম শুনো নাকি?’
‘দেখুন…’
‘হা সে-তো দেখছিই তোমাকে। সারাজীবনই দেখে যাব, বলতে হবে না।’
‘ছাড়ুন আমাকে…’
‘নোপ!’
তিনি আমায় বিছানায় বসিয়ে আমার কোলে শুয়ে পড়লেন। শিউরে উঠলাম। তিনি কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘মাথা টা টিপে দাও তো৷ দু’দিন ধরে ঘুমুতে পারি নি, তাই ভারি হয়ে আসছে। ব্যাথাও করছে।’
আপনা-আপনি ডান হাত তার মাথায় চলে গেল। বিলি কাটতে লাগলাম তার সু-মসৃণ চুলে। অল্পক্ষণের মাঝেই তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। তাকে সাবধানে বিছানায় শুইয়ে ব্যালকনিতে গেলাম। বউ বলে সম্বোধন করছিলেন আমাকে? ভাবতেই আজব লাগছে। কিন্তু না না মাই মি.। আপনাকে এত সহজে মাফ করব না। এই পাহাড় পরিমাণ অভিমানের গোছা বইতে বইতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। দায়ভার টা আপনিই নিবেন। দেখি কীভাবে ভাঙাতে পারেন আপনি। আমি এত সহজে আপনার সঙ্গে কথা বলব না।
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]