অনুবদ্ধ প্রণয় পর্ব-১৮

0
635

#অনুবদ্ধ প্রণয় 💛
#ইবনাত_আয়াত
পর্ব: ১৮

স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। চেয়ে আছি অপলক সামনের দিকে। দেহ অসড় হয়ে গেছে আমার। এ আমি কী দেখছি? মানে.. অবন্তী? বেঁচে আছে? ঠাঁই দাঁড়িয়ে চেয়ে আছি তার দিকে। এ যে পুরো সুস্থ মানুষ! কিন্তু তাহমিদ তো বলেছিল সে মা’রা গেছে।
অ্যাক্সিডেন্টে মা’রা গেছে। তবে সে.. এখানে কীভাবে? তাও সুস্থ শরীরে? তাও আবার একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে? মস্তিষ্ক সচল হতেই পিছু নিলাম তার। সে পায়ে হেঁটে যাচ্ছে কোথাও। ছোট মেয়েটা কে নিয়ে। সেটা কী তার মেয়ে?

হঠাৎ ধুম করে একটা গাড়ি সামনে চলে আসতেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। কিন্তু আমায় চমকে গাড়ি থেকে দ্রুত তাহমিদ এগিয়ে এলেন। আমার বাহু ধরে বললেন, ‘হোয়াট দ্যা হেল ইয়ানাত? তোমার কী কমন সেন্স নেই? প্রথমত আমি তোমাকে দাঁড়াতে বলেছিলাম, তুমি না দাঁড়িয়ে কোথায় চলে যাচ্ছ? আর এখন? রাস্তার মাঝে বেখেয়ালি ভাবে হাঁটছ?’

‘তা-তাহমিদ ও.. চলে যাচ্ছে..’

‘কে চলে যাচ্ছে?’

‘আরে ও..’

বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। হয়তো আমার মনের ভুল। কিন্তু.. আমার কখনো এমম ভুল হয়নি৷ তবুও মাথা নেড়ে বললাম, ‘নাহ কিছু না।’
একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে তার গাড়িতে গিয়ে বসলাম। তিনিও উঠে গাড়ি স্টার্ট দিল।

ভয় ঢুকে গেল মনে। তবে কী আমি তাহমিদ কে হারিয়ে ফেলব? অবন্তী কী ওকে আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে?

__________

‘কী হয়েছে তোমার বলো তো? কখন থেকেই দেখে যাচ্ছি, মুখ গোমড়া করে বসে আছো। কী হয়েছে? কেউ কী কিছু বলেছে?’

তাহমিদের কথায় হকচকিয়ে উঠলাম। ব্যালকনিতে চেয়ারে বসে এক ধ্যানে মগ্ন ছিলাম।
আবারো সামনে ফিরে বললাম, ‘কিছু না।’

‘কিছু না মানে? তাহলে এমন করে বসে আছো কেন? আমার সঙ্গে ভালোভাবে কথাও বলছো না? দেখো তোমার এভাবে গোমড়া করে বসে থাকা টা আমার একদম ভালো লাগছে না।’

প্রশান্তির নজরে চেয়ে রইলাম তার মায়াময় মুখশ্রীর দিকে। সে আমার পাশে এসে দাঁড়াল। আমার দিকে ঝুঁকে বলল, ‘বলো না ইয়ানাত? কেউ কিছু বলেছে?’

‘না তাহমিদ সাহেব। কেউ কিছুই বলে নি তো!’

‘তো এভাবে মুখ গোমড়া করে বসে থাকার মানে টা কী?’

‘কিছু না এমনি ভালো লাগছে না।’

‘ খা’রাপ লাগছে?’

বলেই কপালে হাত দিয়ে এপিঠ ওপিঠ করে দেখলেন। তারপর হাত নামিয়ে বললেন, ‘কই জ্বর তো নেই!’

‘আরে এমনি ভালো লাগছে না। জ্বর নেই।’

আকাশপানে মুখ করে রইলাম। আপনাকে কীভাবে বলি আমি, যে আমি অপ্রত্যাশিত একজনকে দেখেছি। যাকে দেখাই আমার উচিত হয়নি। যাকে দেখে আমার মন এক অজানা আশঙ্কায় বারংবার কেঁপে উঠছে। দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।

একটু বাদে তিনি বললেন, ‘চলো। ঘুমুতে আসো।’

‘আসছি..’
___________

আজ তাহমিদ কে আসতে বারণ করেছি। কিন্তু সে আসবেই। আমি অনেক কষ্টে তাকে রাজি করালাম। উদ্দেশ্য একটাই। অবন্তী কে আরেকবার দেখে শিওর হয়ে নেওয়া।

ক্লাস শেষে বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। কই না তো! সে আসছে না কেন? তার তো এদিকেই যাওয়ার কথা। প্রায় আধঘণ্টা পেরিয়েছে। সে তো আসছে না। তবে কী আসলেই সেটা ও ছিল না? তাহলে? আসলেই সে বেঁচে নেই?

স্বস্তির শ্বাস ফেলে এগিয়ে যেতে নিলেই আবারো থমকে গেলাম। সে আবারো যাচ্ছে, ছোট মেয়েটা কে নিয়ে কোথাও যাচ্ছে। কিছুক্ষণ থম মে’রে দাঁড়িয়ে রইলাম। দ্রুত পিছু করলাম।

অনেকদূর যাওয়ার পর দেখলাম সে মেয়েটা কে নিয়ে একটা মহল্লায় চলে এসেছে। তবে কী সে এখানেই থাকে? দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। বাচ্চা টা কী তার মেয়ে? তার আর তাহমিদের? কিন্তু সে তো মা’রা গিয়েছিল। তবে কীভাবে বেঁচে গেছে? বাঁচলে তো তাহমিদ অবশ্যই জানতো। তবে কী অন্য রহস্য আছে?

_____

‘ইয়ানাত! চলো আজ কোথাও ঘুরতে যাব। পার্কে যাব। চলো! বউয়ের কোথাও ঘুরতে যাই নি। কী কপাল আমার।’

তাহমিদের কথায় হালকা হেসে ফেললাম, ‘কেন? যান নি কেন?’

‘তুমি গেলেই না যাব।’

‘ওমা! আমায় নিয়ে গেলে কী আমি যেতাম না?’

‘তো এখন যাচ্ছ?’

‘জ্বি। ভালো লাগছে ঘরে। একটু বাহিরে গেলে মন টা ফ্রেশ হতো।’

‘আচ্ছা রেডি হয়ে নাও। আমি বাহিরে আছি।’

__
তাহমিদ আমায় একটা পার্কে নিয়ে এসেছে। অনেক ঘুরাঘুরি করলাম দু’জন। একসাথে বাদাম খেলাম, আইসক্রিম খেলাম। ঘাসের বুকে বসে গোধূলি বিকেল উপভোগ করলাম।

আজকের মতো আনন্দ যেন আমি কখনোই পাই নি। খুব ভালো সময় কেটেছে তার সাথে। তবে কে জানতো, কোন এক তীক্ষ্ণ আঁখি নজর রাখছিল এই সুখময় মুহুর্ত কাটানো দুই পুরুষ-রমণীর উপর?

‘তো? মন ভালো হলো মহাশয়া?’

হেসে বললাম, ‘জ্বি মহাশয়। ভালো হলো। আর তার মালিক আপনিই।’

‘সত্যি? তো অবশেষে কারো মন ভালো করতে পারলাম?’

‘এহ! মহৎ কিছু করে ফেলেছেন।’

‘আসলেই তো করেছি। বউয়ের মন ভালো করেছি। মহৎ কিছু না?’

‘আচ্ছা? তো অনেক্ষণ তো ছিলাম। এবার চলুন। বাসায় যাওয়া যাক!’

‘হম।’

দু’জন বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। কিন্তু হঠাৎ সন্দেহ জাগল মনে, কেউ যেন অনুসরণ করছে আমাদের। সন্দিহান নজরে পেছন ফিরতেই কেউ যেন আড়াল হয়ে গেল। তাহমিদ তা দেখে প্রশ্ন করলেন, – ‘কী ব্যাপার ইয়ানাত? কী দেখছ ওদিকে?’

‘ন-না কিছু না, মনে হলো কেউ যেন ফলো করছে আমাদের।’

‘আরে ওসব তোমার মনের ভুল। চলো।’

‘হুম।’

কিন্তু বার বার একই সন্দেহ হচ্ছে। এমন তো কখনো মনে হয় নি। তবে কী কেউ সত্যি আমাদের ফলো করছে?

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]