অনুভবের প্রহর পর্ব-০৩

0
564

#অনুভবের_প্রহর
#অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব___০৩ (বোনাস পার্ট)

শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে অনুভব রুমে ঢুকলো। দরজা বন্ধ করে পেছন ঘুরে তাকাল সে। সঙ্গে সঙ্গে কপাল কুঁচকে গেল তার। রুমে খুব পরিচিত একটা পারফিউমের কড়া গন্ধ। নাক কুঁচকালো সে। নিজের ভাবনাকে বেশিক্ষণ পাত্তা দিল না। রুমের সর্বত্র নজর বুলিয়ে জানালার দিকে এগিয়ে গেল। জানালার পাল্লা খোলা। বৃষ্টির ঝাপটায় অর্ধেক মেঝে ভিজে গেছে। এই জানালা দিয়ে দিনের আলো আসতে অসুবিধা হলেও বৃষ্টির পানি ঠিক আসে। জানালা বন্ধ করে সে গায়ের শার্ট খুলে ফেলল। ভেতরের স্যান্ডো গেঞ্জিটা খুলে আলনার দিকে ছুঁড়ে মারলো৷ আপাতত ওটা ধোয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না।

শার্টটা কাঁধের উপর নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগোল। ওয়াশরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বিছানার দিকে তাকালো সে। বিছানা গোছগাছ করে রাখা। দেখেই তার ঘুম পাচ্ছে। মনে মনে পরিকল্পনা করলো এখন গোসল সেরে লম্বা একটা ঘুম দিবে। ভাবতেই পরম প্রশান্তি অনুভব করলো। ঠিক এই মুহূর্তে তার মনে হচ্ছে ঘুমের চেয়ে প্রশান্তিদায়ক এ ধরায় আর দ্বিতীয় কিছু নেই।

লম্বা একটা হাই তুলে ভেড়ানো দরজায় ধাক্কা দিল সে। ভেতরে দুই পা রাখতেই ঘুম উবে গেল তার। চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। ওয়াশরুমের দেয়াল সেঁটে দাঁড়িয়ে থাকা প্রহরের দিকে এক পলক চেয়ে সে হুড়মুড় করে পিছিয়ে এলো। এক টানে বাইরে থেকে ওয়াশরুমের পাল্লা বন্ধ করলো সে। বড় করে দম নিল। আশপাশে তাকালো। পরক্ষণে ডান হাত দিয়ে মাথায় চাটি মারলো। কি অদ্ভুত? সে কি মেয়েটাকে কল্পনায় দেখতে শুরু করেছে? সর্বনাশ! আতংকে বুক কেঁপে উঠলো তার।

কিন্তু ভেবে পেল না, কল্পনায় দেখলে মেয়েটাকে রুমে দেখলো না কেন? ঠিক ওয়াশরুমে দেখতে হবে? নিজের বোকামিতে নিজেকেই বকা দিল। এই মেয়েটার নজর তো ভালো না। এই মেয়ে ওয়াশরুম ছাড়া আর কোথায় দেখা দিবে!

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে মাথা নিচু করে আবার ওয়াশরুমে ঢুকলো। এবার আর কোনোদিকে তাকাবে না। কে জানে, তাকালে হয়তো আবার মেয়েটাকে দেখতে পাবে! পুনরায় ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেই পেছন থেকে মৃদু স্বরের চিৎকার ভেসে এলো। অনুভবের পিলে চমকে উঠল। ছিটকিনির উপর থেকে হাত খসে পড়লো। বিস্ফারিত নয়নে পেছন ঘুরে দেখলো, প্রহর যায়নি। দু হাতে মুখ ঢেকে ভয়ে সিটিয়ে আছে।

অনুভব কেমন অসহায় বোধ করতে লাগলো। কি হচ্ছে চারপাশে? পৃথিবী খন্ড বিখন্ড হলেও তো প্রহরের এখানে থাকার কথা নয়। তার নিজের কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? ভুল ভাল জিনিস দেখছে! এটা কি হ্যালুসিনেশন?

‘আপনি তো ভারী অসভ্য অনুভব ভাই। ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করলেন কেন?’

অনুভব চমকালো। প্রহর মুখ থেকে হাত সরিয়েছে। ড্যাব ড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অনুভব নিজের উন্মুক্ত বুকের দিকে এক পলক চেয়ে বলল,

‘তুমি কথা বলছ?’

‘কেন আমি কথা বলতে পারি আপনি জানেন না? কোনোদিন শোনেননি আমার কন্ঠ?’

‘হ্যাঁ, শুনেছি।’

‘আশ্চর্য! তাহলে আজ এত অবাক হচ্ছেন কেন?’

‘প্রহর, আমি ফাইজলামি করার মুডে নেই। তুমি আমার কল্পনায় এসেও উৎপাত করা শুরু করেছ?’

প্রহর ফিক করে হেসে দিল। প্রথমবারের মতো লক্ষ্য করলো একা একটা ওয়াশরুমে একটা ছেলের সাথে আটকা পড়তেও তার বিন্দুমাত্র ভয় করছে না। উল্টো ভালো লাগছে। এই মুহূর্তে অনুভবের ভীত চাহনিরত কনফিউজড মুখটা তার সবচেয়ে আপন আর সুন্দর মনে হচ্ছে। সে দু পা এগিয়ে এলো। অনুভবের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিল। হাসিমুখে বলল,

‘হাত ছুঁয়ে দেখুন। দেখুন, স্পর্শ অনুভব করেন কি না! মানুষের কল্পনায় কাউকে স্পর্শ করা যায় না। কল্পনায় তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে। একটু স্পর্শ করে দেখুন তো! আমি আপনার কল্পনা নাকি বাস্তব?’

সেই পরিচিত পারফিউমের গন্ধ ভুস করে নাকে এলো অনুভবের। শুধুমাত্র প্রহর আশপাশে থাকলে তার শরীর থেকে এই গন্ধটা পায়। গন্ধটা নাকে যেতে যেন বাস্তবে ফিরলো সে। বুঝতে সক্ষম হলো তার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে না। কোনো একটা অসাধ্য সাধন করে প্রহর তার রুমে ঢুকেছে। শুধু রুমে ঢুকে ক্ষান্ত হয়নি, এই মুহুর্তে তার সাথে তারই ওয়াশরুমে। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক সামনে নয়, খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে।

তৎক্ষনাৎ পেছন ঘুরে ওয়াশরুমের দরজা খুলল অনুভব। দৌঁড়ে গিয়ে রুমের দরজা খুলে দিল। প্রহর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রুমের মাঝামাঝি দাঁড়াতে অনুভব এগিয়ে এলো৷ নিজের উন্মুক্ত শরীরে ভেজা শার্টটাই গলিয়ে দিতে দিতে বলল,

‘তুমি সত্যি সত্যি আমার বাড়ি অবধি, আমার রুম অবধি পৌঁছে গেছো? ইজ ইট রিয়াল?’

প্রহর সে প্রশ্নের উত্তর দিল না। অনুভবের লোমশ সিক্ত বুকের দিকে চেয়ে বলল,

‘ভেজা শার্ট পড়ছেন কেন আপনি? ঠান্ডা লেগে যাবে। শাওয়ার নিয়ে আসুন।’

‘একদম চুপ। এভাবে তাকাচ্ছো কেন? খালি গায়ের কোন ছেলেকে জীবনে দেখোনি?’

‘আমি তো অন্য ছেলেদের দিকে তাকাই না। এই প্রহরের নজর তো শুধু তার অনুভবের উপর। আপনার খালি গা, পোশাক পরিহিত গা, ভাঙাচোরা গা সব কিছুর উপর শুধু আমার নজর। মানে গোটা আপনিটাই প্রহরের নজরে পরে শুধু।’

‘শাট আপ! আর একটা কথা বলবে তো মেরে ফেলবো তোমাকে। মেরে তক্তা বানিয়ে দিবো।’

বলেই অনুভব শার্টের বোতাম লাগাল। এক নজর প্রহরের দিকে চেয়ে সর্ব উপরের কলারের বোতাম টাও লাগিয়ে নিল। প্রহর ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,

‘মেরেই তক্তা বানিয়ে দিবেন? এত ক্ষমতা আপনার? মেরে কাউকে তক্তা বানানো যায় বুঝি? স্ট্রেন্জ! আপনার তো দেখছি অনেক ক্ষমতা। তাহলে মারুন প্লিজ। আমি বাকি জীবনটা তক্তা হয়েই কাটাতে চাই। তক্তা বানিয়ে তখন কাছে রাখবেন তো?’

‘প্রহর!’

অনুভব ধমকে উঠলো। পরক্ষণে গলার স্বর পরিষ্কার করল। কাঠ গলায় বলল,

‘আমি যা প্রশ্ন করছি তার উত্তর দাও। কোন সাহসে আমার বাসা খুঁজে বের করেছ? কোন সাহসে আমার বাসায় পা রেখেছ?’

‘যে সাহসে আপনাকে ভালোবেসে চলেছি। তার চেয়ে একটু কম সাহস লেগেছে আপনার বাসায় প্রবেশ করতে। ভেবেছিলাম আপনার সামনে ধরা পড়বো না। কিন্তু বিধি বাম! প্রথমে অবশ্য আপনার কন্ঠ শুনে ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ভয় পেয়ে লুকানোর জায়গা খুঁজছিলাম। পেলাম না! আমার মতো এত বড় মানুষকে লুকিয়ে রাখার মতো কোনো বস্তু নেই আপনার রুমে। বাধ্য হয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়েছিলাম। আপনি আমাকে দেখতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত খুব দ্রুত চিন্তা করে নিলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, দেখা দেওয়াই সমীচীন হবে। অবশ্য এ ছাড়া আর উপায় ছিল না।’

প্রহরকে বেশ খুশি খুশি লাগছে। অনুভবের রাগের মাত্রা পারদের উঠানামাকে হার মানাল। তরতর করে রাগ উঠে গেল। মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে গেল। রাগী কন্ঠে বলল,

‘মেয়ে, তুমি এসব কি শুরু করেছ? জীবনকে তোমার কাছে গল্প, উপন্যাস মনে হয়? ঘন্টা, মিনিটের নাটক, সিনেমা মনে হয়? এটুকু মাথায় ঢুকে না যে তোমার মতো কোটিপতি বাপের একমাত্র মেয়ে বা ছেলে আমি নই? তোমার মতো পাপা’স প্রিন্সেস টাইপের মেয়ের কাছে লাইফ মানে ফ্যান্টাসি হতে পারে। কিন্তু আমাদের মতো নিম্নবিত্ত ছেলেদের জন্য এসব নয়। আমাদের কাছে জীবনের আরো অনেক মানে আছে। অনেক দায়িত্ব আছে। প্রহর, আমি তোমাকে ভালোবাসি না। আর কতবার বলবো একই কথা?’

প্রহর ভেতরে ভেতরে ভয়ে মিইয়ে গেলেও অনুভবের সামনে তা প্রকাশ করলো না। সে কন্ঠটা যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে বলল,

‘আপনাকে ভালোবাসতে কে বলেছে? আমাকে শুধু আপনার ঘরের বউ করুন। তাতেই চলবে। অন্তত একই রুমের অক্সিজেন গ্রহণ করবো আমরা।’

‘কেন? একই পৃথিবীর, একই দেশের, ইভেন একই শহরের অক্সিজেন গ্রহণ করছি আমরা তাতে তোমার মন ভরছে না?’

‘জ্বি না। একই শহর! স্পেসটা বেশি হয়ে গেছে। আমি সর্বোচ্চ দশ থেকে বিশ হাত দূরত্ব সইতে পারবো। এর বেশি হয়।’

অনুভব পেছন ঘুরে তাকাল। রাগ তরতর করে বেড়ে যাচ্ছে। এই মেয়েটাকে কি করে থামাবে? মাথার ভেজা চুল গুলো টেনে আবার প্রহরের দিকে ঘুরে দাঁড়াল। রক্তচক্ষু নিয়ে বলল,

‘আমার বাড়ি বলে কোনো সিনক্রিয়েট চাচ্ছি না আমি। নইলে এতক্ষণে ঠাস ঠাস দু চারটে থাপ্পড় খেতে। তোমার মতো পাপা’স প্রিন্সেস টাইপের মেয়ে আমার পছন্দ নয় প্রহর। তুমি তোমার পথ দেখো।’

প্রহরের রাগ হলো। বড্ড অভিমান হলো৷ বার বার একই কথা বলে অনুভব কি বুঝাতে চাচ্ছে? সে চেঁচিয়ে বলল,

‘পাপা’স প্রিন্সেস, পাপা’স প্রিন্সেস! এতবার এসব বলে কি বুঝাতে চান আপনি? হ্যাঁ, এটা সত্যি যে আমি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। খুবই আদরের সন্তান তাদের। ছোটবেলা থেকে স্কুলের ব্যাগ কাঁধে তুলিনি কখনো। বাবা সবসময় স্কুলে রেখে আসতো, সময় মতো নিয়ে আসতো। বাবার হাত ধরেই আমি রাস্তা পার হয়েছি। আরাম, আয়েশে, বিলাসবহুল বাসায় বড় হয়েছি। এসি করা প্রাইভেট কারে করে চলাফেরা করেছি। গ্লাসে পানি ঢেলে পর্যন্ত খাইনি। এসব যেমন সত্যি, তেমনি আরেকটি চিরন্তন সত্যি হলো পাপা’স প্রিন্সেস হয়ে আমি একজনকে ভালোবেসে ফেলেছি।

প্রথম যেদিন জানতে পেরেছি আমার পছন্দের মানুষের, আমার ভালোবাসার মানুষের গাড়ি নেই সেদিন থেকে আমি নিজে চলাচলের চেষ্টা করেছি। প্রায় দিনই গাড়ি রেখে রিকশা করে ভার্সিটি এসেছি। পাবলিক বাসে উঠা শিখেছি। যেদিন প্রথম আমার ভালোবাসার মানুষের বাড়ি দেখেছি, সেদিন থেকে জীর্ণ শীর্ণ বাড়িতে বসবাসের জন্য নিজেকে তেমন করে প্রস্তুত করছি। রুমের এসি নিজ হাতে নষ্ট করেছি। পুনরায় বাবা এসি লাগাতে চাইলে আমি নানা অজুহাতে বাঁধা দিয়েছি। আরো অনেক কিছু করেছি। অনুভব ভাই, আমি আপনার সাথে সংসার করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমাদের সম্পর্কের মাঝে দারিদ্রতা কখনো বাঁধা হবে না। আমি আপনার মতোই আপনার দারিদ্র্যতাকে আলিঙ্গন করে নিব। আপনি শুধু একবার আমাকে কাছে টেনে দেখুন। আপনার হাতটা আঁকড়ে ধরতে দিন। দেখবেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বেস্ট প্রেমিকা, বেস্ট ওয়াইফ, আদর্শ বৌমা সব হবো আমি। প্লিজ!’

শেষের দিকে প্রহরের চোখ ছলছল করে উঠলো। লম্বা করে শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিল। অনুভব ছটফট করছে৷ সে কিছুই জানে না। সে শুধু জানে প্রহর আর সে কোনোদিন এক হতে পারবে না। মেঘের বিপরীতে যেমন রোদ হাসে, স্থির স্রোতের বিপরীতে যেমন ঢেউ হাসে, আঁধারের বিপরীতে অন্ধকার, তেমনি তার একটুখানি সুখের বিপরীতে এক আকাশ দুঃখ হাসে। তার বুকের ভেতর যে আছে দুঃখপুরী। এই দুঃখপুরীতে সে কত রকমের দুঃখের চাষ করে। লাল, নীল তীব্র ব্যথার কত দুঃখ। কিছু দুঃখে আবার ডালপালা, শাখা গজিয়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে। কিছু দুঃখে আবার ফুল ফুটেছে। যে ফুল নিজেই আস্তো একটা দুঃখ। সে তার এই দুঃখে ভরা জীবনে কাউকে জড়াতে চায় না। তার দুঃখপুরীর বাসিন্দা করতে চায় না কাউকে।

প্রহর অনুভবের দিকে তাকালো। সে ধরেই নিয়েছিল অনুভব তাকে পুনরায় ধমকে উঠবে। কিন্তু তাকে এমন নিশ্চুপ পাথরের মতো দেখে চমকে গেল সে। দূর থেকে ধীর পায়ে কাছে এলো। কাছ থেকে অনুভকে পরখ করলো। এত দারিদ্র্যতার মধ্যে বড় হয়েও ছেলেটার চেহারায় বিন্দুমাত্র তার ছাপ নেই। কি উজ্জ্বল তার মুখ! তার মতো এই অনিন্দ্য সুন্দর সুশ্রী মুখ এ ধরায় দ্বিতীয় নেই। সৃষ্টিকর্তা যেন পৃথিবীর সমস্ত রূপ, সৌন্দর্য এই একটু মানুষকে দিয়ে পাঠিয়েছেন। সে ক্ষীণ স্বরে বলল,

‘আপনি ঠিক আছেন?’

অনুভব উত্তর দিল না। তার শরীর মৃদু কাঁপছে। চোখের মণি মেঝেতে নিবদ্ধ। হাত মুঠ করা। শরীর থেকে পানি চুইয়ে মেঝে ভিজে উঠেছে। তার ঠোঁট যুগল কাঁপছে তিরতির করে। প্রহর বুঝতে পারলো না অনুভব রাগে নাকি শীতে কাঁপছে। সে ফের নরম গলায় বলল,

‘ভেজা কাপড় চেঞ্জ করে আসুন অনুভব।’

প্রহর আজ দিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো অনুভবের পরে ভাই শব্দটা ব্যবহার করলো না। সত্যি বলতে অনুভবকে তার ভাই ডাকতে ইচ্ছে করে না। শুধু মার খাওয়ার ভয়ে নাম ধরে ডাকতে পারে না। আজও ছোটখাটো একটা বিস্ফোরণের অপেক্ষায় রইলো। কিন্তু অনুভব আগের মতোই নির্বিকার। এতে করে প্রহরের সাহস যেন একটু একটু করে বেড়ে গেল। কেমন ঘোরের মধ্যে চলে গেল সে।

ঠান্ডা-শীতল আবহাওয়া, কোলাহলমুক্ত নিশ্চুপ পরিবেশ, কান পেতে শোনা একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দ, টিনের চালে অনবরত পড়তে থাকা বৃষ্টির ছন্দময় গান আর চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভিজে টইটম্বুর হয়ে যাওয়া অনুভব। আর কি লাগে! প্রহর আরো গভীর ঘোরের মধ্যে চলে গেল। সামনের মানুষটির পাহাড়সম রাগের তোয়াক্কা না করে সে অনুভবকে জড়িয়ে ধরলো। জীবনে প্রথম বারের মতো তার কল্প পুরুষের ভেজা বুকে মুখ লুকাল।

(চলবে)