অনুভূতিহীন পর্ব-০৫

0
651

#অনুভূতিহীন (পর্ব ৫)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

আমি রিক্সা থেকে নেমে হাসতে লাগলাম। আর সে মুখটা গম্ভির করে বসে আছে এখনো। উঠে দাড়াতে পারছে না। হয়তো পায়ে চোট লেগেছে। ওনার চোট লাগায় আমার খারাপ লাগলেও আমি সময়ের সৎ ব্যবহার করার সুজুগ টা কখনো ছারি না। এখন নিশ্চই বাড়ি ফিরে যাবে। আর একা একা তো মোটেও যেতে পারবে না।
সো সে না চাইলেও আমার হেল্প লাগবে তার। আর আশে পাশেও তেমন মানুষ চোখে পরছে না। সো আমার হেল্প চাইতে সে বাধ্য।
পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারেনি রিক্সা চালক চাচাও। হয়তো সে নিজের দোষ ভোবে ভয় পেয়েছে তাই তো আমি ইশারা দেওয়ার সাথে সাথেই চলে গেলো সেখান থেকে।
এবার কোথায় যাবে আমার জামাই টা। এখন আমার হেল্প ছারা তুমি শুন্য। যতই দুড়ে থাকতে চেয়েছো, এখন তার চেয়েও বেশি কাছে আসতে হবে তোমায়।

যখনই আমি রিদ ভাইয়াকে তোলার জন্য হাত বাড়ালাম তখনই একটা বাইক এসে হুট করে থামে আমাদের সামনে। বাইকে দুইটা ছেলে।
আরে এটা তো ফাহিম ভাই। রিদ ভাইয়ের ফ্রেন্ড।
রিদ ভাইয়ের কথায় যা বুঝলাম, সামনে বাইক চালাচ্ছে ওটা ফাহিম ভাইয়ের ছোট ভাই।
হুট করে এমন সময় ফাহিম ভাইকে দেখে খুব রাগ হলো আমার। হুট করে কোথায় থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে আমাদের রোমান্টিক টাইম টা নষ্ট করে দিলো। রাগে একটার মাথার সাথে আরেকটার মাথা পিটাতে ইচ্ছে করছে আমার।
– কি রে ব্যাটা, এতো জায়গা থাকতে তুই রাস্তার মাঝে পা ধরে বসে রইলি কেন?
ফাহিম ভাইয়ের কথায় রিদ ভাই রেগে বললো,
– আগে তো আমায় তুলবি নাকি?
রিদ ভাইয়ের কথায় হাত বাড়ায় ফাহিম ভাই। ফাহিম ভাইয়ের হাত ধরে ভর করে উঠে দাড়ায় সে। এই মুহুর্তে আমার রাগ হলো খুব। কোথায় ফাহিম ভাইয়ের জায়গায় এখন আমি থাকতাম। আর সারা রাস্তা সে আমায় ধরে ধরে বাসায় যেতো। কিছুই হলো না ধেৎ।

– তোর ভাবি কে নিয়ে হাটতে বের হয়েছিলাম। হুট করে পা মচকে পরে যাই, আর এর পরই তুই আসলি। থ্যাংক্স রে দোস্ত। এবার আমায় কষ্ট করে বাড়ি অব্দি পৌছে দে।
রিদ ভাইয়ের এমন ডাহা মিথ্যা কথায় চোখ বড় বড় করে তাকালাম আমি। নিরামিশ বেডা এখন নিজেকে রোমান্টিক প্রমান করতে চাইছে। শপিং করতে বের হয়েছে তাও আবার মায়ের চাপে পড়ে। আর এখন বলছে আমায় নিয়ে রাতে হাটতে বের হয়েছে।
এর মাঝেই ফাহিম ভাইয়া বললো,
– আচ্ছা রিদ এক কাজ কর, তুই নাঈমের পেছনে উঠে বস। সে তোকে বাড়ি পৌছে দিবে। আর ভাবিকে আমি নিয়ে আসছি।
রিদ ভাই একটু ভেবে বললো,
– আরশি কেন তোর সাথে আলাদা যাবে?
ফাহিম ভাই একটু হাসলো। তার পর বললো,
– আচ্ছা তাহলে ভাবি আপনি নাঈমের সাথে বাড়ি চলে যান, আমি রিদকে নিয়ে আসছি।
আমিও যেন একটা সুজুগ পেলাম। আগেই বলেছি আমি সুজুগের সৎ ব্যবহার ছারতে চাইনা। আমি চট করে বললাম,
– আইডিয়া টা মন্দ না ভাইয়া। আমি বরং চলে যাচ্ছি আপনি ওকে নিয়ে আসুন।
এর মাঝেই রিদ ভাইয়াও চট করে উত্তর দিলো,
– একধম না,,,
আমি ভ্রু-কুচকে বললাম,
– কেন?
ওনি আমার দিকে রাগি লুক নিয়ে বললো,
– আমি বলছি তাই।
এখন আমার খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে আমাকে নিয়ে কত জেলাস সে।
– এই ফাহিম তুই একটা গাড়ি ডাকতো ভাই, সবাই এক সাথেই যাবো।

ফাহিম ভাইয়ার কাধে ভর করে বাসায় ঢুকলো রিদ ভাই। তখনই মামি ভুত দেখার মতো চমকে এগিয়ে আসে আমাদের দিকে। অস্থির হয়ে প্রশ্ন করে,
– কিরে কি হয়েছে তোর? এক্সিডেন্ট কিভাবে হলো?
ফাহিম ভাইয়া বললো,
– না আন্টি এক্সিডেন্ট হয় নি, হাটার সময় একটু পা মচকে গেছে।

এর পর রিদ ভাইয়াকে রুমে নিয়ে শুইয়ে দিলো ফাহিম ভাই। আমি গিয়ে তার পাশে বসতেই সে বললো,
– ওয়াড্রবের ভিতর একটা বক্স আছে ওই বক্সে একটা মলম আছে, একটু পায়ে মালিশ করে দাও তো আরশি।
আমি বাধ্য মেয়ের মতো উঠে মলম এনে তার পায়ে আস্তে আস্তে মালিশ করে দিচ্ছিলাম।
ফাহিম ভাইয়া তাকে আধ সোয়া করে বসিয়ে তার পাশে বসলো।
রিদ ভাই ফাহিম ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললো,
– তো দুই ভাই কোথায় থেকে আসছিলি?
হটাৎ ই ফাহিম মাথা নিচু করে ফেললো। একটা লজ্জা ভাব প্রকাশ পেলো তার মাঝে। এর পর আমার দিকে আড় চোখে চেয়ে রিদ ভাইকে বললো,
– তোকে একটা সু-খবর জানানো হয় নি।
– কি?
– বাবা আমার আর আদিবার সম্পর্ক টা মেনে নিয়েছে। হয়তো দুই এক দিনের মাঝেই আদিবাকে দেখতে যাবে। এর পর সব ঠিকঠাক থাকলে বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলবো।
হুট করে রিদ ভাই রেগে বললো,
– তুই এক্ষুনি আমার বাসা থেকে বের হ।
– আরে ভাই রাগ করছিস কেন,,
– তো কি করবো? তোকে মাথায় তুলে নাচবো? এতোকিছু হয়ে গেছে, অথচ আমায় জানালি না তুই। তোর সাথে আমার এই ফ্রেন্ডশিপ?
– আচ্ছা আমার সাথে ঘটে গেছে, আর তা আমি তোর সাথে শেয়ার করিনি। এমন টা কি হয়েছে কখনো? আমার সব কিছুই তোর সাথে শেয়ার করি। আর এটা করতে পারিনি, কারণ বাবা মত জানালো আজ সন্ধায়। হুটহাট, তোকে জানানোর সময় পেলাম কই? তোকে এখন সবার আগে জানালাম, আর তুই রাগ দেখাচ্ছিস?
রিদ উৎসাহ নিয়ে বললো,
– আর আদিবার ফ্যামিলি?
– সে বললো, তার ফ্যামিলিকেও সে রাজি করিয়েছে। এবার বাকিটা উপর ওয়ালার হাতে। দোয়া করিস ভাই। আচ্ছা আমি এখন গেলাম, বাসায় পৌছে তোকে ফোন দিবো।
– খেয়ে যাবি না?
– না রে ভাই, আজ সম্ভব না। রাত হয়েছে, বাসায় মা অপেক্ষা করছে। আজ আসি।
– আচ্ছা শুন, নিরব কোথায় রে? ওইদিন বিয়ের পর যে হাওয়া হলো আর খবর নেই।
– আর বলিস না ভাই, সালা এখন দেবদাস হয়ে আছে।
– কেন ছ্যাকা ট্যাকা খাইছে নাকি?
– ওরোকমই,,,,
– কাহিনি কি বলতো,
– তুই তো জানতি নিরব গত এক বছর ধরে ফেসবুকে একটা মেয়ের সাথে প্রেম করতো।
– হুম, ওদের না এই কয়েক দিনের মাঝে দেখা করার কথা?
ফাহিম একটা দির্ঘশ্বাস নহয়ে বললো,
– আর বলিস না ভাই, ওই আইডির মালিক ছিলো এক বিচি ওয়ালা আপু।
– মানে?
– আমাদের ফ্রেন্ড সাগর আছে না? গত বছর বিদেশ গেলো। ওই সাগরই ফেইক আইডি দিয়ে নিরবের সাথে বছর খানেক প্রেম করলো। এখন দুই দিন আগে নিরব ধরে ফেললো যে এটা সাগর, এর পর আর কি? বেচারা নিরব দেবদাস হয়ে বাসায় বসে আছে।

ফাহিম ভাইয়ের কথা আমি না হেসে আর থাকতে পারলাম না। ফাহিম ভাইও হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। মামি অনেক জোরাজুড়ি করলো খেয়ে যেতে কিন্তু চলে গেলো সে।

কিছুক্ষন পর আমি খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে রিদ ভাইয়ার সামনে এসে বসলাম।
– হা করেন?
– কেন আমার হাত নেই?
– সব সময় ত্যারামি করেন কেন? আমি খাইয়ে দিলে প্রব্লেম কোথায়?
– তুমি কি ইনডিরেক্টলি আমায় ত্যারা বললা?
– কথার মাঝে এতো প্যাচ ধরেন কেন? কথার পিঠে কথা বুঝেন না?
– তো মেয়েদের হাতে আমি কেন খেতে যাবো?
– কারণ আমি এখন আপনার স্ত্রী।
কথাটা বলতেই কেমন যেন এক অদ্ভুত অনুভুতি তৈরি হলো আমার। ওনি আর কিছু না বলে চুপচাপ খেতে লাগলেন।

রাত তখন প্রায় এগারো টা। সে এখনো বিছানায় আধসোয়া হয়ে বসে আছে। পা টা ফুলে আছে, হয়তো ব্যাথাও করছে প্রচুর। আমি তার পাশে গিয়ে বললাম,
– আজকে কিভাবে সোফায় ঘুমাবেন?
– আজ মনে হয় আর ঘুম হবে না পায়ের ব্যাথায়। তুমি এক কাজ করো, ঘুমিয়ে পড়ো। ট্রাস্ট মি. আমার সাথে তোমার স্পর্শও লাগবে না।
– আপনি ঘুমাবেন না?
– এক কাজ করো, ওখান থেকে হলুদ কালারের উপন্যাসের বই টা এনে দাও। ওটা একনো পড়া হয়নি। রাত টা সুন্দরে পার করা যাবে।
আমি চুপচাপ গিয়ে দুইটা উপন্যাসের বই নিয়ে এলাম। আমিও তার সাথে উপন্যাস পড়বো। দুজন মিলে এক সাথে কিছু করার অনুভুতিটাই অন্য রকম।
সে চট করেই আমার হাত থেকে দুইটা বই ই নিয়ে নিলো। আমি ভ্রু-কুচকে বললাম,
– একটা আমায় দিন, আমিও আপনার সাথে পড়বো।
– পড়বে ভালো কথা, প্রেমাতাল ছারা বাকি গুলো পড়ো। ওখানে একটা রুপকথার গল্পের বই আছে। তুমি বরং রুপ কথার গল্প পড়ো। ওগুলোই তোমার জন্য ঠিক আছে। এসব রোমান্টিক গল্প তোমার মতো পিচ্চির জন্য প্রযোজ্য নয়।
– দেখেন আমি মোটেও পিচ্চি না। আমি রোমান্টিক গল্পই গড়বো।
– আমি বলছি না, পড়বে না তুমি।
– আচ্ছা পড়বো না। তবে একটা শর্ত আছে।
– আবার কি শর্ত?
– শর্ত নয়, অপশন,,
– কি?
– হয়তো আমি এই বই পড়বো, নয়তো আপনি আমাকে একটা চুমু দিতে হবে।
রিদ ভাই একটু ভ্রু-কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– বয়স কতো তোমার?
আমার ঝটপট উত্তর,
– ১৭ ক্রস করে ১৮ তে পা দিয়েছি। আর কয়েক মাস পরেই আমি এডাল্ট।
আমার কথায় তিনি হু হু করে হেসে দিলো।
– এডাল্ট হতে পারলে তখন এভাবে আপ্পা চাইতে এসো। তোমার এখনো হর্লিক্স খাওয়ার বয়স, চুম্মা খাওয়ার না।
বলেই তিনি হাসতে হাসতে উপন্যাসের বই খুললেন। আমি হা করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। বুঝে উঠতে পারছি না, উনি কি কি আমায় এতোটাই বাচ্চা মনে করে?

To be continue…..