অনুভূতিহীন পর্ব-২৩

0
451

#অনুভূতিহীন (পর্ব ২৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

সারা রুম খুজেও ওই দিনের আঁকা নির্জনের স্কেচ টা খুজে পাচ্ছি না। মাথা পুরাই হ্যাং হয়ে যাচ্ছে আমার। আর অন্য মানুষের পিকচার নিয়ে আমার মাঝেই বা কিসের এতো উত্তেজনা তা নিজেও বুঝতে পারছি না। তবে এতটুকু বুঝতে পারছি, ছবিটা আমার লাগবেই।
হুট করে মনে হলো ছবিটা একটা উপন্যাসের বইয়ের মাঝে রেখেছিলাম। তৎক্ষনাৎ গিয়ে বইটা খুলে দেখি ছবিটা এখনো সুরক্ষিত আছে। ছবিটা বাধিয়ে নিতে হবে। নাহলে কয়দিন পর রং ছড়িয়ে যাবে।

এর মাঝে বেশ কিছুদিন কেটে গেলো। মায়ের ফোন পেয়ে ছুটে বাসায় আসে রিদ। বুকের ভেতর ধুকধুক করছে৷ সারা শরির জুড়ে বিচরন করছে অস্থির উত্তেজনা। দেখে মা চুপচাপ বসে আছে সোফায়। আরশির কথা জিজ্ঞেস করলেও কোনো উত্তর দিচ্ছে না। একটু আগে ফোন দিয়ে বললো, আরশির কি যেন হয়েছে। তাইতো পাগলের মতো ছুটে এসেছে রিদ।
মায়ের এমন নিরবতা দেখে ছুটে রুমের দিকে হাটা ধরে সে। দরজা খোলাই ছিলো। রুমে ঢুকতেই চোখ পরলো বিছানায় পরে থাকা একটা রিপোর্টের উপর।
তা হাতে নিয়ে চোখ বুলাতেই স্তব্দ হয়ে যায় সে। উত্তেজিত সারা শরির মুহুর্তেই ঠান্ডা হয়ে অবশ হয়ে যেতে শুরু করে।
বেলকনির দিকে এগিয়ে দেখে আরশি ময়না পাখি দুটিকে কথা শিখাচ্ছে। কয়দিন আগে তার এক্সামের রেজাল্ট দিলো। এ+ পাওয়ার খুশিতে আরশি বায়না ধরলো তাকে নিয়ে সারা শহর ঘুরাতে হবে।
তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলে ফেরার সময় চোখে পরে একটা মানুষ পাখি বিক্রি করছে। তখনি আরশি বায়না ধরে তার ময়না পাখি পোষার অনেক ইচ্ছে। তাখন দুইটা ময়না নিলো একসাথে। একটা ছেলে ময়না আরেকটা মেয়ে ময়না। তার উপমা অনুযায়ি ছেলে ময়না টা রিদ আর মেয়ে ময়না টা সে। একটা খাচার মাঝে দুই জনের ছোট্ট সংসার।

ময়না পাখি নিয়ে ব্যস্ত আরশি। হুট করে পেছন থেকে আরশিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রিদ। কোনো কথা বলছে না, একধম নিশ্চুপ হয়ে আছে।
আরশি তার দিকে ঘুরে বললো,
– কেমন দিলাম ধোকা টা?
– খুব বাজে,, আর একটু হলেই হার্টবিট বেরিয়ে আসছিলো।
রিদের কথায় মন খুলে হাসতে থাকে আরশি। রিদ পূনরায় আরশিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– আলহামদুলিল্লাহ, আ’ম সো হ্যাপি। থ্যাংক ইউ সো মাচ মাই হার্ট।

আরশিকে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতেই দেখে মা ও মিঠি মিঠি হাসছে। রিদ একটু অভিমান নিয়ে বললো,
– এমন একটা বিষয় নিয়ে আমার সাথে মজা করতে পারলে মা? জানো আমি কতোটা টেনশনে ছিলাম? আর প্র্যাগনেন্সির মতো একটা সিরিয়াস বিষয় তোমরা লুকিয়ে রেখেছিলে? নিজেরা নিজেরা কখন টেস্ট করালে, কখন কি করলে আমায় একটিবারও জানালে না?
রিদের কথায় মা হেসে বললো,
– এটাও তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ ছিলো। তাই কেও কিছু বলিনি।
রিদ একটু বিরক্তি নিয়ে বললো,
– তোমরা সবাই আমার ইমোশন নিয়ে মজা নিতে পছন্দ করো।
তার কথায় মা আর আরশি দুজনই হেসে উঠলো।
,
,
দুই দিন হয়নি খবর শুনেছে। এর মাঝেই বাসায় আরশির জন্য একজন পার্সনাল নার্স রেখে দিলো রিদ। আর বাসায় কাজের লোক আরো বাড়িয়ে নিলো। আরশি কতো বার বুঝালো যে সে এখনো স্বাবাবিক, এখন এসব কিছুর প্রয়োজন নেই। কিন্তু কে শুনে কার কথা।
দিন যতই যাচ্ছিলো তার পাগলামি যেন ততোই বারছিলো। টাইমলি ফোন দিয়ে আমি খেয়েছি কি না, কি করছি এইসব নিয়ে ব্যাস্ত। প্রতি ঘন্টায় কম করে একবার ফোন দিতেই হবে তার।

ইদানিং অত্যাচারও বেড়েছে তার। আমার প্রিয় হলো ভাজাপোড়া, আর সে তা এখন আমার কাছেও আনতে দেয় না। ফল মুল দুধ ডিম এগুলোই এখন আমার নিত্য দিনের খাবার।
ওই দিন রাতে খেয়ে শুয়ে পরেছিলাম আমি। আমার পাশের ফ্রিচে ঢাকা এক গ্লাস দুধ পরে আছে।
যার জন্য সে আমায় টেনে বসি বললো ঘুমানোর আগে দুধ খেয়ে নিতে। কিন্তু আমি খাচ্ছিনা দেখে সে দুই আঙুল দিয়ে আমার গাল টিপে ধরে গ্লাস টা মুখের সামনে চেপে ধরে রাখলো। যতক্ষন তা শেষ হলো না ততোক্ষন ধরে রাখলো। ওটা ছিলো সব চেয়ে চরম লেভেলের একটা অত্যচার।
ও যখনই আমার সামনে আসতো তখনই কিছু ফ্রুটস কেটে নিয়ে আসলো। একদিন আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
– এতো খেলে তো আমি অল্প কয়দিনে মুটি হয়ে যাবো।
প্রতি উত্তরে সে বললো,
– মোটা হলেও কোনো প্রব্লেম নেই। এই সময়টায় তো আমার রং ঢং করার সময় না। আর কাউকে গিয়ে বলে বেড়াবো না যে, ভাই দেখেন এটা আমার বৌ। এখন তুমি কেমন তা দেখার বিষয় না। প্রয়োজন হলো তোমার শক্তির। হসপিটালে আমি কতো জনকে দেখেছি এই সময়টায় শক্তির অভাবে,,,,,
ওনি আর কিছু না বলেই থেমে গেলো। আমি একটু আগ্রহ নিয়ে বললাম, কি?
সে আমার মুখের সামনে আপেল ধরে বললো,
– তুমি বাচ্চা মেয়ে ওসব বুঝবে না। ওগুলো বড়দের বিষয়। তুমি চুপচাপ খেয়ে নাও।
,
,
শুধু সে পাগলামি করছে তা না। আমার শশুর রুদ্র চৌধুরী এর চেয়েও বেশি করছে। তার বংশে প্রথম নাতি/নাতনির আগমন। তার খুশির মাত্রাও যেন আকাশ ছোয়া। তার প্রথম নাতি/নাতনি যেই হবে, তাকে সে নিজস্ব হেলিকপ্টারে বাড়ি নিয়ে আসবে। যার জন্য কয়দিন আগে বড় একটা হেলিকপ্টার কিনেছে সে।
এই বাড়ির সবার পাগলামি দেখে আমার মাথা পুরাই হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। সবাই আমায় নিয়ে কি শুরু করেছে? যেমন বাবা তেমন তার ছেলে।

মাঝ রাতে চোখ পিট পিট তাকিয়ে দেখি আমার হাতের তালু পায়ের তালু মালিশ করে দিচ্ছে সে। আমি তৎক্ষনাৎ পা টেনে সরিয়ে নিয়ে বললাম,
– ছি ছি, কি করছেন আপনি।
সে দুই ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ইশারায় বলে,
– চুপ কোনো কথা না। ঘুমাও তুমি।
তবুও আমি নাছোর বান্দার মতো বললাম,
– এমন পাগলামি করেন কেন? সারা দিন যেমন করেন মনে হয় যেন দুনিয়াতে শুধু এক মাত্র আপনার বৌ এর ই বেবি হবে।
সে আমার হাত মালিস করে দিতে দিতে বললো,
– তুমি কি বুঝবে বাচ্চা মেয়ে? আমার বৌ এর ই তো বেবি হবে, তাই টেনশন টা আমার বেশি। তোমার বৌ এর হলে তুমি বুঝতে।
তার কথায় আমি ভ্যাবলার মতো হা করে তার দিকে চেয়ে বললাম,
– এ্যা,,,, মেয়েদের বৌ হয় কিভাবে? ওদের তো হয় স্বামী।
সে নিজের বোকামি বুঝতে পেরে চুপ হয়ে গেলো। একটু হাসি পেলো আমার।
,
,
দিন যত যাচ্ছে শরিরটা ততো ভারি হতে লাগলো আরশি’র। রিদের গুরুত্বটাও বেড়ে গেছে আগের থেকে। আরশি আর রিদের মা বসে আছে সোফায়। টেনশনে এদিক ওদিন পায়চারি করছে রিদ।
রাত প্রায় ১ টা বাজে তখন। বাবার এখনো কোনো খবর নেই। ফোন দিলেও দেখে ফোন বন্ধ। রিদ সোফায় বসে মাকে বললো,
– বাবা কি কিছু বলেছিলো মা? যেমন, কোথাও যাবে বা আসতে দেরি হবে?
মায়ের মুখে টেনশনের ছাপ। সে বললো,
– না তেমন কিছু বলেনি। বললো, নির্জনকে অফিসে রেখে আজ সে তারাতারি ফিরে আসবে। কাল রাতে অনেক কিছুই বলেছিলো, যে আজ নিজে গিয়ে বাবুর জন্য খেলনা কিনে সারা ঘর ভরিয়ে রাখবে। কিন্তু এখন ১ টা বাজে এখনো কোনো খবর নেই।

চিন্তার ছাপ নিয়ে সবাই বসে আছে ঘরে। আর কিছুক্ষন পার হওয়ার পরই ফোন টা বেজে উঠলো তার। আন-নোন নাম্বার থেকে ফোন। রিদ ফোন রিসিভ করে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে নির্জনের গলার আওয়াজ ভেসে আসে। রিদ উত্তেজিত হয়ে বললো,
– হ্যা নির্জন বাবা কোথায়? বাসায় ফিরেনি এখনো। ফোনটাও বন্ধ তার।
ওপাশ থেকে নির্জন বললো,
– বাবা তো কিছুক্ষন আগে গাড়ি এ/ক্সি/ডেন্ট করেছে। অবস্থা খুব খারাপ।
রিদ উত্তেজিত হয়ে বললো,
– কিভাবে হলো, আর হসপিটালে নিয়ে যাও নি?
নির্জন আবারও স্বাভাবিক ভাবে বললো,
– অবস্থা খুব খারাপ, আপনিও আসুন। আমি আপনাকে লোকেশন টেক্সট করে দিচ্ছি।
মা আর আরশি বার বার প্রশ্ন করলেও কথা ঘুরিয়ে নিলো রিদ। বললো, অফিসের এক কর্মচারি এ/ক্সি/ডেন্ট করেছে। বাবা ওখানেই গেছে।
রিদের কথায় কিছুটা টেনশন মুক্ত হলো তারা।
রিদ দ্রুত গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে,
‘ এতো রাতে বাবা কোথায় এ/ক্সি/ডেন্ট করবে? আর এ/ক্সি/ডেন্ট করলেও নির্জন তো কখনো কারো হ্যাল্প চায় না। নিজেই সব সামলে নেয়। কিন্তু আজ এমন কি হলো, যে নিজে কিছু না করে, আমাকেই ডেকে নিয়ে যাচ্ছে ওখানে? যাই হোক, এখন এতো কিছু ভাবার সময় নেই। বাবাকে বাচাতে হবে।

To be continue……