অনুভূতিহীন পর্ব-১৩

0
527

#অনুভূতিহীন (পর্ব ১৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

সকাল ৮ টা। নাস্তা শেষে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো রিদ। রিদের বাবা এখনো অফিসে যায় নি। সোফায় বসে পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছে। আজকাল পত্রিকা খুললেই খুন, ধর্ষণ, অপহরনের নিউজ ভেষে উঠে।
বাবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হওয়ার সময় বাবা পেছন থেকে ডেকে বললো,
– রিদ শোন, তোর সাথে কথা আছে।
রিদ এসে বাবার পাশে বসে বললো,
– জ্বি বাবা বলো।
– আরশির পরিক্ষার আর কয়দিন বাকি আছে?
– মাস খানেক আছে বাবা।
উনি পত্রিকা টা রেখে বললো,
– শুনলাম তোকে নাকি আজকাল কারা যেন হুমকি-ধামকি দেয়?
বাবার মুখে এমন কথায় চমকে উঠে রিদ। হুমকি-ধামকির বিষয় গুলো তো তার আর অগন্তুকের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো। বাবা এতো কিছু জানলো কিভাবে।
রিদ আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,
– ক কই না তো বাবা, তোমাকে কে বললো এসব।
কিন্তু উনি ছেলের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে বললো,
– কোনো সমস্যা হলে নির্জনকে বলবি সে সব সামলে নিবে। নিজে আগ বাড়িয়ে কোনো ঝামেলায় জড়াতে যাস না। যা এখন।

বাবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেলো রিদ। মাথায় ঢুকছে না এতো কিছু বাবা জানলো কিভাবে?
,
,
বাড়িতে বড় চাচি এসেছে। উনি একটু এক রোগা প্রকৃতির মানুষ। নিজে যা বুঝে তাই। আমি ওকে সালাম দিয়ে কথা বলে মাকে ডাকতে গেলাম। এতোটুকু পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিলো। তবে ওই যে এক রোগা প্রকৃতির। আগের মতো পায়ে ধরে সালাম না করার ঘোর বিরোধ তার।

মায়ের সাথে বসে বসে গল্প করছে। আর আমাকে পাঠানো হয়েছে তাদের জন্য চা বানাতে।
বড় চাচি সোফার এক পাশে আরাম করে বসে মাকে বললো,
– আরুকে দেখতে এলাম। গত কাল রাতে খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছি আরুকে নিয়ে। তার মানে এটা নিশ্চিত সামনে আরুর একটা বিপদ ঘটতে চললো।

আমি চা বানাতে বানাতে তাদের কথা গুলো শুনে বুকটা ধুক করে উঠলো। বড় চাচির এই একটা কথা সত্যি। তিনি কাউকে নিয়ে কোনো দুঃস্বপ্ন দেখলে তা সত্যি হয়ে যায়। প্রথমে আমি এটা বিশ্বাস করতাম না।
কয়েক বছর আগেও তিনি ঠিক এই ভাবে বলেছিলেন। আমার মেঝো কাকার ছেলে অভি ভাইয়া। তাকে নিয়ে নাকি কি খারাপ স্বপ্ন দেখেছিলো। স্বপ্নে দেখেছিলেন, রাস্তা পার পওয়ার সময় অভি ভাইয়াকে বড় একটা ট্রাক এসে ধাক্কা দিয়েছে।
অভি ভাইয়া এসবে বিশ্বাস করতো না। মেঝো চাচি অনেক বারণ করেছিলো কয়েকদিন ঘর থেকে রের না হতে। কিন্তু অভি ভাই শুনলো না। বাইক দিয়ে চলে গেলো তার কোন বন্ধু ফোন করেছিলো ওখানে। ঠিক ওই দিনই বড় একটা ট্রাক এসে ধাক্কা মেরেছিলো অভি ভাইয়াকে। আর হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় সে।
যার কারণে মেঝো চাচা তিন রাত গাছের সাথে বেধে রেখেছিলো চাচিকে। আর বলছিলো, তুই আর কোনো দিন ঘুমাবি না।
তারপর থেকেই অলক্ষুনে মহিলা বললে এলাকার সবাই তাকে এক নামে চিনে।

আমি তাদের সামনে চা রেখে চুপচাপ সেখান থেকে সরে গেলাম। স্বপ্নের বর্ণনা শুনার ইচ্ছা নেই আমার। যদি তার স্বপ্ন টা খুব ভয়ঙ্কর হয় তাহলে আমার ঘুমটাই হারাম হয়ে যাবে। তার চেয়ে বরং না শোনাই ভালো। ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।
,
,
আপুকে আজ এই বাড়িতে নিয়ে আসছে বাবা। আপু অন্তঃসত্ত্বা, ৭ মাস হতে চললো। মা বললো, এখানে এসে কয়দিন থেকে যেতে। আপুর নাম আর আমার নাম মিলিয়ে রাখা হয়েছিলো। আরশি আর আপুর নাম আরিশা। আবার দুজনকে ডাকা হতো এক নামে, আরু। আরু বললে আমরা দুজনই সাড়া দিতাম। তাই পরবর্তিতে আপুকে পুরো নাম ধরেই ডাকতো। আর আমাকে আরু বলে।

আপুকে নিয়ে আসছে, এতে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি আমি৷ কতো দিন দুই বোন মিলে এক সাথে আড্ডা দেওয়া হয় না। আজ অনেক রাত অব্দি আড্ডা দিবো দুজন।

মা রান্না করছিলো। আমি রান্না ঘরে গিয়ে মায়ের পাশে দাড়ালাম। মা আমার আমার দিকে চেয়ে বললো,
– কিরে কিছু বলবি?
– আমাকে রান্না শিখাও মা।
– তোর না কয়দিন পর এক্সাম? এখন পড়ায় মন দে। এসব পরেও শিখতে পারবি। সারা জীবনই তো তোকে বলে এসেছি রান্নাটা শিখতে কিন্তু তখন তো শুনলি না আমার কথা।
আমি চুপচাপ মায়ের পাশে দাড়িয়ে আছি। মা আমার দিকে চেলে বললো,
– চেয়ারম্যান এর ছেলে এখন তোকে ডিস্টার্ব করে?
আমি দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে বললাম, আগের মতো না।
মা রান্না করায় মনোযোগ দিয়ে বললো,
– তবুও সাবধানে থাকবি। দুই দিন পর চেয়ারম্যান ইলেকশন। হয়তো এই কারণে চুপ আছে। আর রিদকে কিছু বলিস না। এতে আরো ঝামেলা বাড়বে। সুন্দর ভাবে এক্সাম টা শেষ করে নে। এর পর আর কোনো চিন্তা নেই।

আমি মাথা নাড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেলাম। রুমে আপু বসে আছে। আমি ছোট একটা প্লেটে আপেল কেটে আপুর কাছে নিয়ে গেলাম। আপুর পাশে বসে প্লেট টা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম। তুই কিন্তু আগের থেকে মুটি হয়ে যাচ্ছিস আপু।
আমার কথায় একটু হাসলো আপু। সাথে আমিও হেসে দিলাম। আমি খুব আগ্রহ দৃষ্টিতে আপুর দিকে চেয়ে বললাম,
– এই সময়টায় কেমন লাগে আপু? মানে অনুভুতিটা কেমন? আমার না খুব জানতে ইচ্ছে করে।
আপু পেটে হাত রেখে বললো,
– সব অনুভুতি মুখে বলে প্রকাশ করা যায় না রে। অনুভুতি টা আমি অনুভব করতে পারি প্রকাশ করতে পারি না। তুই কখনো আমার যায়গায় আসলে তার পর বুঝবি।
আমি মনে মনে বললাম, আমার আর তোমার যায়গায় আসা হবেনা। যেই নিরামিষের কাছে তুলে দিয়েছো, একবার হাত ধরলে তিন বার সরি বলে।
আপু আপেল খেতে খেতে বললো,
– কিছু বললি?
আমি কথা খুজে না পেয়ে বললাম,
– নাহ্ কিছু না।
,
,
এখন আর আগের মতো প্রতিদিন কলেজে যাওয়া হয় না। সত্যি বলতে ভয়েই যাই না। তবে আজ যাবো। একটা কারণ আছে। খুব জরুরি কারণ। আজ রেডি হয়ে নিজেই সাবিহাদের বারি চলে গেলাম। গিয়ে দেখি কল পাড়ে বসে কাপ প্রিচ পরিষ্কার করছে সে। আমাকে দেখে খুশি হয়েছে সেটা তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। কারণ শেষ কবে ওদের বাসায় এসেছিলাম জানা নেই।
বারির সামনে একটা বড় বড়ই গাছ। বারো মাস বড়ই ধরে। আর অপর পাশে তাদের ঘর। চার পাশে ইটের দেওয়াল আর উপরে টিনের চান। আর ঘরের সামনেই একটা খোলা মেলা বারান্দা। মাঝে মধ্যে ওখানে বসে আড্ডা দেয় সবাই।
ওখানে একটা চেয়ার টেনে বসে আছি আমি। সাবিহা কিছু বড়ই আমার সামনে দিয়ে গেলো। আমি খেতে খেতে সে রেডি হয়ে যাবে।

দুজনই একসাথে চললাম কলেজের উদ্দেশ্যে। সাবিহা আমায় তাড়া দিতে দিতে কতোবার বললো,
– আজকে কি এমন গুরুত্ব পূর্ণ কাজ? যে জোর করে হলেও কলেজে নিয়ে যাচ্ছিস?
আমি চুপচাপ রইলাম কিছু বললাম না। রিক্সা থামাতে বললাম একটা রেস্টুরেন্টের সামনে।
– চল ক্ষুদা লাগছে কিছু খাই।
সাবিহা মাথা নিচু করে বললো,
– আমার কাছে টাকা নেই তো।
আমি একটু হেসে বললাম,
– আমার কাছে আছে চল।

রেস্টুরেন্টে গিয়ে সাবিহাকে বললাম,
– চোখ বন্ধ কর।
– কেন?
– কর না,,,,
– আচ্ছা,,,,,
– আমি না বলা অব্দি খুলবি না।
আমি সব কিছু আগে থেকেই রেডি করে সাবিহাদের বাসায় গিয়েছিলাম। কিছুক্ষন পর বললাম, চোখ খোল বান্ধবি।
সাবিহা চোখ খুলতেই অবাক হয়ে গেলো। তার সামনে রাখা একটি কেক। আর তার মাঝে লেখা,, Happy birthday too Kolixa…..
হুট করেই সাবিহা আমায় জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। কারণ লাইফে ফাস্ট টাইম এমন সারপ্রাইজ পেয়েছে সে। কখনো কখনো তার জন্মদিনের কথা তার নিজেরও মনে ছিলো না।
আজ হটাৎ এমন সারপ্রাইজ পাবে তা হয়তো ভাবতেও পারেনি সে।
– তোর সাথে থাকলে আমার প্রতিটা সময়ই ভালো কাটে দোস্ত। কেন যে আমাদের মেয়েদের ফ্রেন্ডশিপ গুলোতে বিবাহ নামক শব্দটায় দেয়াল তৈরি করে ফেলে? সারা জীবন এক সাথে থাকতে পারলে কি এমন ক্ষতি হতো?

To be continue…..