অন্তরালে কুয়াশার ধোঁয়া পর্ব-১১

0
809

#অন্তরালে_কুয়াশার_ধোঁয়া
#পর্ব_11(#ধামাকা_পার্ট)
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


পরেই একটু মুচকি হেসে মাথা নেড়ে অভ্রকে হ্যাঁ বললাম।

অভ্র খুশি হয়ে আমাকে কোলে নিয়ে নাচতে শুরু করলো।

আরে আরে কি করছো?নামাও।(আমি হাসতে হাসতে)

অভ্র আমাকে নামিয়ে বললো
চলো।আজকেই আমরা বিয়ে করে ফেলি।

আজকে?(আমি অবাক হয়ে)

হুম আজকেই। ঝুমকে স্কুল থেকে নিয়ে সোজা রেস্টুরেন্টে গিয়ে সেখানেই বিয়ের অনুষ্ঠান সেরে ফেলি।(অভ্র এক্সসাইটেড হয়ে)

আমি আরো কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি আবারও আমার বাহু চেপে বলতে শুরু করলো,,
আমি আছি তো তোমার কোনো চিন্তা করতে হবে না।আমি সব ব্যবস্থা করে নেবো।আমি এখুনি লোক পাঠাচ্ছি রেষ্টুরেন্টে।
বলেই অভ্র ফোন বের করে কাকে যেনো ফোন করতে লাগলো।

এই লোকটা না পারেও বটে,,একদম ঝুমের মত অল্পতেই বেশি এক্সসাইটেড হয়ে যায়। ঝুমের সাথে উনার খুব ভালো মানাবে।(আমি মনে মনে কথা গুলো বলে নিজের অজান্তেই হেসে দিলাম)

ঝুমুর চলো।সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে।(অভ্র)

এতো তাড়াতাড়ি?(আমি অবাক হয়ে)

আরে তোমার স্বামী যেন তেন লোক না।(অভ্র ভাব নিয়ে)

ফিউচার স্বামী!(আমি ভ্রু কুঁচকে)

আরে ওই একই।এখন চলো।(অভ্র আমাকে তাড়া দিয়ে)

আরে কোথায় যাবো?(আমি ওকে আটকে)

আমাদের ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে যাবো।এখন আর কোনো কথা না।
বলেই অভ্র আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।

আমিও মুখে হাসি নিয়ে উনার পিছু যেতে লাগলাম।এখন বুঝি একটু সুখের মুখ দেখার আসার করাই যায়।


ঝুমের স্কুলে গিয়ে ওকে নিয়ে সোজা রেস্টুরেন্টে গেলাম।
ঝুম তো আমাদের বিয়ের কথা শুনে খুব খুশি।বিয়ে হচ্ছে আমার কিন্তু আমার ছেলে আর আমার হবু বরের খুশি দেখে কে?আমি সেখানে গিয়ে একটা বেনারসি শাড়ি পরে নিলাম।শরীরে হালকা গয়না পরে নিলাম।আর মাথায় বেলী ফুল।এই আবদার করে আমার উনি।

অন্যদিকে ঝুম আর অভ্র এক রকমের শেরওয়ানি পড়েছে।দেখে সবাই বলবে বাপ বেটা।অ্যাটিটিউড ও এক।নজর না লাগে আমার পরিবারে।

অবশেষে খুব সাদামাঠা করেই আমাদের বিয়ে সম্পূর্ন হলো।আমাদেরই একমাত্র বিয়ে ছিলো যে বিয়েতে কোনো বন্ধু বান্ধব কোনো আত্মীয় স্বজন ছিল না।আর যারা আমাদের বিয়েতে স্বাক্ষী হিসেবে ছিলো তারা হলো রেস্টুরেন্টের শেফ।এতো অদ্ভুত বিয়ে আমি জীবনেও না দেখলে কি হবে,এই রকম অদ্ভুত বিয়ে আমারই হলো।আমার তো কেউই নেই।অন্যদিকে অভ্রর আত্মীয় স্বজনও তেমন নেই যে ডেকে আনবে বিয়েতে।অবশেষে আমরা বিয়ে করে,খেয়ে দেয়ে বাসায় গেলাম।আমি আর ঝুম গিয়ে উঠলাম অভ্রর ফ্ল্যাটে।পাশে যদিও আমার ফ্ল্যাট ছিলো। তবে অভ্র বলেছে অভ্রর বাড়ি নাকি এখন আমার নতুন বাড়ি।আর ও নাকি ওর পরিবারকে নিয়ে নিজের বাড়িতেই উঠতে চায়।আমিও আর না করলাম না।বাড়ি ফিরতে অনেক দেরি হয়ে গেছে।ঝুম আজ অনেক আনন্দ করেছে,নাচতে নাচতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।আর অভ্রকে তো বাবা বলে ডাকার বাহানা খুঁজে।এখন গাড়িতেই আমার কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে।
বাড়ির বিল্ডিংয়ে কাছে গাড়ি পার্ক করে রেখে অভ্র তাড়াতাড়ি ভেতরে চলে গেলো।আর আমাকে বলে গেল ঝুমকে নিয়ে যেনো ধীরে সুস্থে আসি।আমি এই ছেলের কান্ড দেখে অবাক হয়ে যাই।এই বেনারসি শাড়ি পরে ছেলেকে কোলে নিয়ে লিফটে উঠলাম।তারপর গিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা সামনে দাড়াতেই দেখি বরণ ঢালা নিয়ে দাড়িয়ে আছে অভ্র।আমি অবাক হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম,,,
অভ্র?এইসব কি?

আমার মা বেচেঁ থাকলে তোমাকে বরণ করে তোমার নতুন ঘরে উঠাতো।কিন্তু সে আজ নেই।কিন্তু আজ আমি তোমাকে আর আমাদের ছেলেকে বরণ করে তোমার নতুন ঘরে তুলবো।তুমি একটু কষ্ট করে ঝুমকে নিয়ে দাড়াও।আমি এক্ষুনি বরণ করছি।(বলেই অভ্র আমাকে বরণ করতে লাগলো)

আমি সত্যিই যখন এই ছেলেকে দেখি তখনই অবাক হই।উনি আমাকে অবাক করার একটা সুযোগও হাত ছাড়া করেনা।সত্যিই এখন মনে হচ্ছে উনাকে ভালবেসে কোনো ভুল করেনি আমি।

এখন ভিতরে আসতে পারো।(বলেই অভ্র আমার কোল থেকে ঝুমকে কোলে নিয়ে রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো)

আমিও উনার পিছু পিছু গেলাম।

উনি ঝুমকে শুয়ে দিয়ে ওর জুতো খুলে দিল।

কি নিষ্পাপ লাগছে ওকে!(অভ্র ঝুমের দিকে তাকিয়ে)

বাচ্চারা নিষ্পাপই হয়।আর আমার ঝুম তো অনেক নিষ্পাপ।
বলেই ঝুমের কপালে একটা চুমু দিলাম।

সব আদর ঝুমের জন্য? ঝুমের বাবা কি কিছু পাবে না?(অভ্র ঠোঁট ফুলিয়ে)

আমি উনার ঠোঁট ফুলানো দেখে ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,
মানে?

মানে,বলবো না দেখাবো।
বলেই উনি আমাকে কোলে তুলে নিলো।

আরে?(আমি অবাক হয়ে)

হুশ!আমাদের ছেলে উঠে যাবে পরে আর রোমাঞ্চ করতে পারবো না।
বলেই উনি আমাকে নিয়ে পাশের রুমে হাটতে শুরু করলো।


পাশের রুমে
গিয়েই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে রুমকে!

এইসব কিসের জন্য?(আমি উনার কোলে বসে)

বাসর রাতের জন্য।আমি লোকদের দিয়ে তোমার আসার আগেই সাজিয়ে রেখে।(অভ্র)

কার জন্য?(আমি অবাক হয়ে অবল তাবোল বলে)

এক্ষুনি দেখাচ্ছি।
বলেই অভ্র আমাকে বিছানায় শুয়ে দিলো।তারপর আমার থুতনি ধরে মুখটা উচুঁ করে বললো।এখন কি বলবো কার?নাকি করে দেখাবো?

উনার কথায় যেনো আমার মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে লজ্জায়।


আট মাস পর
কালকে ঝুমের জন্মদিন।দেখতে দেখতে একটা বছর হয়ে গেছে আমি দেশে এসেছি।আর আমাদের বিয়ের আট মাস হয়েছে।এই এক বছরে কতো কিছু পরিবর্তন হয়েছে।কতো মানুষ আমাদের জীবনে এসেছে কতো মানুষ আমাদের জীবন থেকে চলে গেছে।আর সব চেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে আমার জীবনে।কারণ আমি আজ বিবাহিত।এই আট মাস কোন দিক দিয়ে কেটে গেছে আমি নিজেই জানি না।
অভ্র সাথে বিয়ে করার পর আমার জীবন যেনো একটা রঙিন স্বপ্ন দিয়ে যাচ্ছে।জীবনে যেনো আমি সব পেয়ে গেছি। ঝুমের মত ছেলে অভ্রর মত স্বামী এইসব শুধু যেনো রূপ কথা।অভ্র আমার আর ঝুমের খুব খেয়াল রাখে।আমার কথা তো বাদই দিলাম অভ্র যেভাবে ঝুমের খেয়াল রাখে মনেই হয় না ঝুম উনার ছেলে না।আর আমার ঝুম, ওর যেনো অভ্র রক্তে মিশে গেছে।দুজনের কি ভাব!
আজকে আবার আমরা বান্দরবান পার্বত্য এলাকায় যাবো।কালকে সেখানে ঝুমের জন্মদিন পালিত হবে।অভ্র ব্যবসার কাজে আগেই সেখানে চলে গেছে আমি আর ঝুম আজ রাতে বারোটার দিকে যাবো সেখানে।আজ ঝুম স্কুলেও যায়নি।ও আমাকে ঘর পরিষ্কার করতে সাহায্য করছে।ঘর দুয়ার পরিষ্কার করে যাবো।না হলে অনেক ময়লা হয়ে যায়।

ঝুম।সব তো পরিষ্কার করলাম এখন স্টোর রুমটা পরিষ্কার করা যাক!(আমি)

ওকে আম্মু।(ঝুম)

পরেই আমি আর ঝুম মিলে স্টোর রুমটা খুললাম।অনেক ধুলো বালি রয়েছে স্টোর রুমে।আমি আগেও খুলে পরিষ্কার করতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু অভ্র আমাকে বলেছে এখানে নাকি ওর বাবা মায়ের অনেক স্মৃতি রয়েছে যা ওকে অনেক কষ্ট দেয়।তাই আমিও খুলি নি।তবে আজ যেহেতু অভ্র বাসায় নেই।তাই ভাবলাম খুলে পরিষ্কার করা যাক।

আমি আর ঝুম অনেক ক্ষণ ধরে রুম পরিষ্কার করছি।অনেক ধুলো পড়ায় এক পাশই পরিষ্কার হয়েছে।অন্যপাশ পরিষ্কার করতে যাবো তখনই চোখ গেলো একটা ছবির ফ্রেমে কৌতূহল বশত আমি সেই ছবিটা নিয়ে ধুলো পরিষ্কার করতেই ছবিটা দেখে আমার মাথায় যেন বাজ পড়লো।আমি ছবিটা দেখে পাথর হয়ে জমে গেলাম।আমাকে ওভাবে দাড়িতে থাকতে দেখে ঝুম আমার কাছে এসে বলল
আম্মু!কি হয়েছে?
বলেই ঝুম ছবির দিকে তাকাতেই বলে উঠলো,,

ও এই ছবি।(ঝুম স্বাভাবিক ভাবে)

আমি ঝুমের মুখে এই স্বাভাবিক ভাবে কথা শুনেই ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,

ও এই ছবি! মানে কি?তুমি উনাকে চিনো,ঝুম?

না। তবে আমি যখন আব্বুকে(অভ্র) জিজ্ঞেস করে ছিলাম ইনি কে,তখন উনি বলে ছিলেন ইনি নাকি আব্বুর খুব আপন জন!(ঝুম)

ঝুমের কথা শুনে আমার পায়ের তলার মাটি সরে গেলো।তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললাম,,
ঝুম।চলো আজ আর পরিষ্কার করতে হবে না।ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও।

ওকে আম্মু।
বলেই ঝুম বাহিরে বেরিয়ে গেলো।আমিও ওর সাথে বেরিয়ে গেলাম।ছবিটা সেখানে রেখেই।


ঝুম আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।আর আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ভাবছি,, ঝুমের মার ছবি অভ্রর স্টোর রুমে কি করে এলো? অভ্রর সাথে ঝুমের মার কি কোনো সম্পর্ক আছে?কি হয় ঝুমের মা অভ্রর?অভ্র বলেছে উনি নাকি খুব কাছের মানুষ।কতো কাছের মানুষ উনি?
এইসব ভাবতেই হটাৎ আমার ফোনে একটা ফোন আসলো।

হ্যালো।(আমি)

আমি সিটি হসপিটাল থেকে বলছি।আপনার রিপোর্ট তৈরি।আপনি এসে নিতে পারবেন।(ওপাশ থেকে)

আমি এক্ষুনি আসছি।
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।

ঝুম!(আমি ঝুমকে ডেকে)

উমমম!(ঝুম আধো আধো গলায়)

আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি।পড়ে তোমাকে নিয়ে বান্দরবান যাবো।ওকে?(আমি)

ওকে।আম্মু।
বলেই ঝুম আবার ঘুমিয়ে পড়লো।

আমি ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।


রিপোর্ট হাতে নিয়ে বসে আছি গাড়ির পেছনের সিটে।কয়দিন ধরে খাবারের প্রতি কোনো রুচি ছিলো না।যা খেতাম সব বমি করে ভাসিয়ে দিতাম।অবশেষে ডক্টর দেখাই।আর আজ তার রিপোর্ট নিয়ে বসে আছি।আমি দুই মাসের প্রেগনেট।কিন্তু মুখে হাসির বদলে মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে ছবিটা।ছবিটা অভ্রর কাছে কি করে আসলো!কি রহস্য!

আমি গভীর চিন্তায় মগ্ন তখনই গাড়ি হটাৎ গাড়ি ব্রেক কষলো।আমি সামনের দিকে ঝুঁকে পড়লাম।

ভাইয়া কিভাবে গাড়ি চালান?(আমি)

আপা।সামনে একটা গাড়ি আইসা থামছে।(ড্রাইভার)

আমি মাথা উচু করে তাকাতেই কেউ দুজন লোক গাড়ির দরজার খুলে আমার হাত ধরে টেনে বাহিরে বের করে টানতে টানতে গাড়ি থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে।ড্রাইভার তাদের আটকাতে চাইলে তাকে বন্দুক দেখিয়ে গাড়ির ভিতরেই বসে থাকতে বাধ্য করলো।

এদিকে আমি চিৎকার করতে পারছি না।মুখে একজন হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে।
বাহিরে যথেষ্ট অন্ধকার হয়ে আছে।তাই লোকটার মুখ দেখা যাচ্ছে না।গাড়ি থেকে একটু দূরে আসতেই হটাৎ বিকট আওয়াজ শুনতে পেলাম।কানে হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়লাম।লোক দুটো আমাকে আগলে ধরে রেখেছে। গাড়ির ভিতরে ড্রাইভার ছিলো।

আমি পেছনে তাকাতেই দেখি গাড়ি দাউ দাউ করে জ্বলছে।এই আগুনে ড্রাইভারের বেচেঁ থাকা অসম্ভব।আমি আমার সামনে যা হচ্ছিলো এই শকড থেকে বের হবো তার আগেই সেই লোক দুটো আমাকে নিয়ে আড়ালে ঝোপে গিয়ে লুকালো।আমি যেনো শকে পুতুল হয়ে গেছি।
হুশ ফিরতেই দেখি আমার দুই পাশে আরিফ আর জয় দাড়িয়ে আছে।

আরিফ জয়?(আমি অবাক হয়ে)

ম্যাম চুপ করুন আপনার সব প্রশ্নের উত্তর আমরা দেবো তার আগে আপনি এখন চুপ থাকুন।(জয় ধমক দিয়ে)

জয়ের ধমক খেয়ে বুঝলাম যে এইটা সত্যিই জয়।

কিছুক্ষণ পর
একটা কালো গাড়ি এসে আমার পুড়ে যাওয়া বোম ব্লাস্টের গাড়ির সামনে থামলো।

সেই গাড়ি থেকে সাদা পাঞ্জাবি আর পায়জামা পরে নামলো একজন লোক।আমি সেই লোককে দেখে যেই অভ্র বলে ডাক দিতে যাবো ওমনি আরিফ আমার মুখ চেপে ধরে বললো।

ম্যাম আপনি কিছু বলবেন না।খালি দেখুন।কাউকে ডাক দেয়ার দরকার নেই।প্লিজ ম্যাম আমাদের বিশ্বাস করুন।এখন আমি আপনার মুখ খুলে দেবো আপনি কিন্তু কাউকে ডাক দিবেন না।(আরিফ শান্ত ভাবে)

আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম।

পরেই ও আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিল।আর আমি চুপচাপ ওদের ঝোপের আড়ালে দাড়িয়ে ওদের কথা শুনতে লাগলাম।

স্যার।মনে হয় না ঝুমুর চৌধুরী বাঁচবে?(একজন লোক)

আমি তো এইটাই চাই ঝুমুর চৌধুরী মারা যাক। ও মরলেই আমার প্রতিশোধ পূরণ হবে।চলো এখানে আর আমাদের কিছু দেখার নেই।
বলেই অভ্র গাড়িতে বসলো।আর সাথে সাথে গাড়ি স্টার্ট করে সেখান থেকে চলে গেল।


আমি,আরিফ আর জয় ঝোপ থেকে বেরিয়ে,,
অভ্র কি বললো?(আমি অবাক হয়ে)

উনি বললেন উনি আপনাকে মারতে চায়!(জয় কড়া গলায়)

কিন্তু কেনো?আমি জানি আমার কোথাও ভুল হয়েছে!আমি শুনতে ভুল করেছি।অভ্র আমাকে কেনো মারতে চাইবে?অভ্র তো আমার স্বামী!(আমি চিৎকার করে)

কারণ অভ্র আহমেদের আসল নাম অভ্র শিকদার।আর উনি ঝিনুক খানের স্বামী!(জয়)

কিহ!ঝিনুক খান?(আমি ধপ করে বসে পড়লাম মাটিতে)

হুম!উনি ঝিনুক খানের স্বামী।আর ঝুমের আসল বাবা।(আরিফ)

আমার চারপাশ যেনো ঘুরাচ্ছে।ঝিনুক খান কে?অভ্র ঝুমের আসল বাবা কি করে?(আমি দিশেহারা হয়ে)

ঝিনুক খান হলো জহির খানের মেয়ে।(আরিফ)

জহির খানকে তো পুলিশ মেরেছে।কয়মাস আগে।উনিই তো আমার বাবাকে হত্যা করেছে।আর উনিই তো মিতালীকে মেরেছে।(আমি)

সেদিন আপনার কাছে যা তুলে ধরা হয়েছিল সবই ছিলো সাজানো।জহির খান মারা গেছে ঠিক আছে কিন্তু সে মারা গেছে আরো নয় দশ বছর আগে।(জয়)

কি হচ্ছে কি এইসব?আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।কে ঝিনুক খান,,কে জহির খান,,কে অভ্র শিকদার।আর এদের সাথে আমার আর বাবার সম্পর্ক কি?কেনো আমার জীবন এতো নরকে পরিণত করছে তারা?(আমি কাদতে কাদতে বসে পড়লাম)

ম্যাম?
বলেই আরিফ আমাকে ধরতে যাবে তখনই জয়,আরিফকে আটকে বললো,,

আজ আপনি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।আপনি যাকে এতদিন নিজের বাবা বলে জেনে এসেছেন তিনি আপনার বাবা নন।উনি আপনার মামা।আপনার মার বড়ো ভাই।(জয়)

আমি জয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম।

জহির খান হচ্ছে আপনার আপনার আসল বাবা।পিয়াস স্যার আর জহির খান বিজনেস পার্টনার ছিলো।সেই সুবাদে আপনার মা আর জহির খানের পরিচয় হয়।পরিচয় থেকে বন্ধু তারপর ভালোবাসা।পিয়াস স্যারের মতে তারা বিয়ে করে।আর এইটাই ছিলো জহির খানের চাল।জহির খান জানতো উনি যদি আপনার মাকে বিয়ে করে তবে আপনার মার সমস্ত সম্পত্তি জহির খানের হয়ে যাবে।উনি যখন আপনার মার কাছ থেকে সব সম্পত্তি নিজের নামে করাতে সফল হয় তখন উনি আর উনার প্রথম পক্ষের স্ত্রী আপনার মাকে খুন করে।(জয়)

প্রথম পক্ষের স্ত্রী?(আমি অবাক হয়ে)

হুম।আপনার মায়ের সাথে বিয়ে করার আগে তার আরো একটা বিয়ে হয়েছে কিন্তু সেটা আপনার মা বা পিয়াস স্যার জানতো না।এইটা সামনে আসে যখন উনি আপনার মাকে মেরে সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নিয়ে ছিলো।তখন সবার প্রথম উনি উনার প্রথম স্ত্রী আর মেয়েকে দুনিয়ার সামনে নিয়ে আসে।আর এই মেয়ে হলো ঝিনুক খান।(জয়)

তারমানে জহির খান আমার বাবা।আর ঝিনুক খান আমার সৎ বোন।(আমি বাকরুদ্ধ হয়ে)

হুম।আর যখন পিয়াস স্যার জহির খানের এইসব ষড়যন্ত্রের খবর জানতে পারে তখন উনি ঠিক করে জহিন খান আর উনার পরিবারের উপর বদলা নিবে।এই জন্য দশ বছর আগে একটা কার অ্যাকসিডেন্ট করিয়ে জহির খান এবং তার স্ত্রীকে পিয়াস স্যার মেরে ফেলে।আর এতে আমরাও ছিলাম।কিন্তু,,(জয় বলতে বলতে থেমে গেল)

কিন্তু কি?(আমি জয়ের দিকে তাকিয়ে)

কিন্তু সমস্যা হয় যখন আমরা জহির খানের মেয়ে ঝিনুক খানকে মারতে যাই।জহির খান আর তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর ঝিনুকের আর কেউ ছিল না।তাই উনি উনার ছোটবেলার ভালোবাসার মানুষ অভ্র শিকদারকে বিয়ে করে নেয়।বিয়ে সময় উনাদের বয়স অল্প হলে কি হবে!অভ্র আর ঝিনুক একে অপরকে পাগলের মতো ভালোবাসে।(জয়)

নিজের ভালোবাসার মানুষের নামে এইসব শুনে আমি যেনো আমার কানকে সহ্য করতে পারছি না।

ঝিনুকে মারতে গেলে অভ্র ঢাল হয়ে ওকে আগলে রাখতো।দুজনের মধ্যে অনেক ভালোবাসা ছিলো।অবশেষে আট বছর আগে একটা সুযোগ আসে।আর সেই সুযোগে আমরা ঝিনুক খানকে মারার প্ল্যান করি।(জয়)

আর সেই সুযোগ আসে যখন ঝিনুক প্রেগনেট ছিলো,তাই না?(আমি জয়ের দিকে তাকিয়ে)

জয় মাথা নিচু করে।

আমি গিয়ে জয়কে কষে একটা থাপ্পর মারি,,
বদলা তোমাদের অন্ধ করে দিয়েছ।যার জন্য একজন প্রেগনেট মেয়েকেও তোমরা ছাড় দাওনি।তারপর কি হয়েছে বলো!

জয় গালে হাত দিয়ে বলতে শুরু করলো
কিন্তু সেদিন রাতে জঙ্গলের বাড়ি থেকে ঝিনুক পালিয়ে যায়।আর উনি এসে অ্যাকসিডেন্ট করে আপনার গাড়ির সামনে।তারপর থেকে আপনি জানেন ঝিনুকের সাথে কি হয়েছে?

সেদিন রাতে অভ্র খবর পেয়ে পাগল হয়ে যায় ঝিনুকের জন্য।আর উনি পিয়াস স্যারকে মেরে ফেলে যখন উনি শুনতে পায় যে ঝিনুক খান আর নেই।পিয়াস স্যারের কাছের মানুষদের মারতে থাকে উনি।আমাদেরও খোজ করে।আমরা উনার ভয়ে এতদিন লুকিয়ে ছিলাম।সামনে আসার সাহস হয়নি উনার ভয়ংকর চেহারার সামনে আসার।ঝিনুক খানের মৃত্যুর পর উনি প্রতিশোধে ভয়ংকর হয়ে উঠে।তারপর উনি আপনার খোজ পায়।আরো খোজ পায় যে আপনার কাছেই আছে উনার ছেলে।(আরিফ)

আমার যেনো বলার কোনো ভাষাই নেই।

আমরা ওই বাচ্চাটার সাথে আপনাকেও বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছি যাতে করে আপনি ওই বাচ্চাটাকে বড়ো করেন।হয়তো এই কারণে উনি আপনার জানে মারবে না।কিন্তু,,(আরিফ)

কিন্তু এখন ও আমাকে জানে মারতে চায়।তাই তো?(আমি তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে)

আমি বুঝতে পারছি না।উনি যেহেতু আপনাকে মারবেই তাহলে কেনো আপনাকে হেল্প করলো?আর কেনই বা আপনাকে বিয়ে করলো?আর কেনই বা আপনার সাথে এতো ভালো ব্যবহার করলো?আমরা তো ভেবেছিলাম উনি সব কিছু ভুলে আপনাকে আর ঝুমকে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করবে।কিন্তু,,?(আরিফ আবারও কিন্তুতে আটকে গেল)

তোমরা ভুলে যাচ্ছো!তোমরা ওর ভালোবাসার মানুষকে মেরেছো। এতো সহজে উনি ছেড়ে দিবেন বুঝি?আর তোমরা জানো কি করে এইসব?(আমি)

আপনি দেশে আসার পর থেকেই আমরা আপনার উপর নজর রাখছি।নকল জহির খানের কাহিনী হওয়ার সময়ও আমরা আপনার আশে পাশে ছিলাম।আর সেদিন আমরাই দরোয়ানকে বলে আপনাকে ফ্যাক্টরিতে আসার জন্য আটকাই।আর আমরা খবর পেয়ে এখানে আসি আর বোম ব্লাস্টের আগে আপনাকে গাড়ি থেকে বের করি।কিন্তু আমরা এইটা বুঝতে পারছি না যে উনি কেনো অন্য লোককে জহির খান সাজিয়ে এতো বড় নাটক করলো।উনি চাইলে আরো আগেই আপনাকে মেরে ফেলতে পারতো।(আরিফ)

বাকি প্রশ্নের উত্তর অভ্র দেবে(আমি মন কঠিন করে)

আপনি অভ্রর সামনে যাবেন?এতো কষ্ট করে আপনি বাঁচলেন আবার সেখানেই ধরা দিতে যাবেন?(আরিফ)

হুম।অনেক হয়েছে প্রতিশোধ।এখন এর শেষ হওয়া উচিত।মরলে মরবো কিন্তু আর পালাবো না।আর একটা কথা ঝুম আমার ছেলে ওকে ভিত্তি করে আমি কোনো খেলা খেলতে চাই না।ওকে আমি কোনো প্রকার স্বার্থ ছাড়া বড়ো করেছি।ওর দোহাই দিয়ে আমি আমার জীবন ভিক্ষা কখনই চাইবো না।আরেকটা কথাও বলবে না।যেহেতু আমার বাবা,,সরি মামা এখন নেই সেহেতু আমি তোমাদের বস তাই তোমরা এখন আমার কথাই শুনবে।
জয়,তুমি এখন বাসায় যাবে সেখান থেকে ঝুমকে নিয়ে কোথাও লুকিয়ে পরো।অভ্রর লোকেদের হাতে যেনো ঝুম ধরা না পড়ে।আর ঝুম অপরিচিত লোকদের সাথে যাবে না।অভ্রর লোক ঝুমের কাছে অপরিচিত তাই ঝুম তাদের সাথে ইচ্ছে করে যাবে না।কিন্তু ও তোমার সাথে যাবে কারণ আমি ওকে তোমার ছবি দেখিয়ে তোমার কথা ওকে সব বলেছি।তাই তুমি সবার আগে গিয়ে ঝুমকে সরিয়ে ফেলো।
আর আরিফ তুমি আমার সাথে চলো।আমরা অভ্রর কাছে যাবো।অভ্র কোথায় আছে আমি জানি।আর কোনো প্রশ্ন না।is that clear?(আমি)

ইয়েস ম্যাম।(আরিফ আর জয়)


চলবে,,