অন্তরালে তুমি পর্ব-১৭

0
2631

#অন্তরালে_তুমি
#Part_17
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
?
আকাশে হাল্কা মেঘ। হীম বাতাস বইছে বাইরে। আকাশে চলছে মেঘ আর সূর্যমামার লুকোচুরির খেলা। মেঘকে ফাঁকি দিয়ে ক্ষণে ক্ষণে সূর্য মামা উঁকি দিয়েই দিচ্ছেন আর চারদিকে তার তীক্ষ্ণ রশ্মির বিরচন করছেন। পাখিরা গাছে এক ডালে অলস ভঙ্গিতে বসে গায়ে রোদ মাখছে আর মাঝে মধ্যে মিষ্টি সুরে গান গাইছে। মাঝে মধ্যে ভেসে আসছে কাকের কর্কশ ডাক। যানবাহনের কোলাহলে ব্যস্ত শহরটি জীবন্ত হয়ে উঠছে। মানুষও ব্যস্ত ভঙ্গিতে চলাচল করছেন।
কিন্তু এইদিকে ইহান পরে পরে ঘুমিয়ে চলেছে। তার মধ্যে যেন কোন হেলদোল নেই। হুট করেই এলার্মের আওয়াজ কানে আসতেই ইহানের ভ্রুকুটি কুঞ্চিত হয়ে যায় সাথে মুখ ভঙ্গিতে ফুটে উঠে বিরক্তির ছাপ। ইহান ঘুম জোড়ানো চোখে হাতরে হাতরে মোবাইল খুঁজার বৃথা চেষ্টা করে। অবশেষে এইভাবে মোবাইল না পেয়ে বাধ্য হয়ে তাকে চোখ খুলতে হয়। এক রাশ বিরক্তি মুখে টেনে নিয়ে উঠে বসে সে। মাথাটা বেশ ধরেছে। কিন্তু ইহান সেই দিকে ধ্যান না দিয়ে চারদিকে চোখ বুলিয়ে মোবাইলটা খুঁজতে থাকে। অতঃপর টি-টেবিলের উপর নজর পড়তেই মোবাইল মহাশয়ের দেখা মিলে। ইহান এইবার আড়মোড় ভেঙে অলস ভঙ্গিতে মোবাইলের দিকে এগিয়ে যায়। মোবাইল হাতে নিয়ে টাইম দেখতেই ওর চোখ চড়কগাছ। ১১ টা বেজে ৩০ মিনিট হচ্ছে। এতক্ষণ সে কিভাবে ঘুমালো কে জানে?
মোবাইল অন করতেই স্ক্রিনে আরিহার মেসেজটি ভেসে উঠে। ইহান মেসেজটি ওপেন করে। তাতে লিখা,

” নিশ্চয়ই মাথা ভার হয়ে আছে তাই না? কিচেনে কফি রাখা আছে গরম করে খেয়ে নিও আর টেবিলে নাস্তা সাথে নাপা এক্সট্রাও রাখা আছে। কাল বৃষ্টি মতে ভিজার ফলে রাতে অনেক জ্বর এসেছিল। এখনও থাকতে পারে তাই খেয়ে নিও।”

ইহান এইবার বুঝতে পারে তার মাথাটা এত ধরে আছেন কেন । আস্তে আস্তে তার কাল রাতের কথা মনে পড়ে। কাল সে অতিরিক্ত পরিমাণে বৃষ্টিতে ভিজে ফেলে। যার জন্য শরীরে কাঁপুনি সৃষ্টি হয়। ইহান নিচে আসতেই আরিহা ওকে দেখে নির্বাক হয়ে দাড়িয়ে থাকে। কি বলবে বুঝে উঠতে পারে নি। ইহান তখন কিছু না বলে কোন মতে চেঞ্জ করে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে। এর পর আর তার কোন কিছু মনে নেই।
ইহান এইবার ফ্রেশ হয়ে এসে কিচেনে চলে যায়। সেখানে কফি গরম করতে গিয়ে দেখে সাইডে একটা বাটিতে কিছু পরিমাণ পানি রাখা আর তার মধ্যে রুমালের সাইজের একটি কাপড় ভিজানো অবস্থায় পড়ে আছে। এর পাশেই ঔষধের বক্স। বক্সের কিছুটা অংশ খোলা। ইহান বক্সটি হাতে নিয়ে দেখে তাতে সব দরকারী ঔষধগুলো রাখা। এর এক কিনারেই একটা থার্মোমিটার উঁকিঝুঁকি করছে। ইহান সেটা হাতে নিয়ে দেখে থার্মোমিটারে ১০২° তে স্থির হয়ে বসে আছে।
ইহান এইবার ভ্রু কুচকিয়ে সেইদিকে তাকায়। অতঃপর আনমনে স্মিত হেসে উঠে। তার বুঝতে দেরি নি যে মেয়েটা মধ্যরাত পর্যন্ত তার সেবা করেছে। কিন্তু সে এইসব ব্যাপারে অবজ্ঞাত। সে যে জ্বরের ঘোরে অচেতন হয়ে ছিল। ইহানের এখন এই নিয়ে কোন সন্দেহ নেই যে আরিহার মনে ইহানের জন্য চিন্তা আছে। সি কেয়ারস্ ফোর হিম। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই চিন্তা কি ভালবাসা থেকে নাকি স্ত্রী হওয়ার দায়িত্ব থেকে?

?

রেস্টুরেন্টের একদম শেষ সারিতে বসে আছে পুষ্পিতা। তার মুখে থাকা চুইংগাম চিবানো স্টাইলই বলে দিচ্ছে যে বেশ বিরক্ত। ইতি মধ্যে বিরক্তির ছোঁয়া যেন ওর মুখে বিচরণ করতে শুরু করে দিয়েছে। সামনেই তীব্র দাঁত বের করে এক ক্যাবলা মার্কা হাসি দিয়েই চলেছে। তীব্রের এমন দাঁত কেলানো হাসি যেন পুষ্পিতার বিরক্তি ভাবটা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। পুষ্পিতা এইবার তীক্ত গলায় বলে,

— এই ভরদুপুরে এইভাবে ডাকার মানে কি তীব্র? তুমি জানো না কয়েকদিন যাবৎ অফিসে কাজের কত চাপ। নেহাত এখন লাঞ্চ ব্রেক তা না হলে বের হওয়া সম্ভবই ছিল না।

পুষ্পিতার এমন কড়া কথা শুনেও তীব্রের হাসি যায় নি। তীব্র সেই হাসিটাই মুখের উপর ঝুলিয়ে রেখে বলে,

— কাজের এত চাপ নিচ্ছো বলেই তো তোমায় এইখানে আসতে বলেছিলাম।

পুষ্পিতা এইবার ভ্রুকুটি কুঞ্চিত করে কৌতূহলী কন্ঠে বলে,
— মানে?

তীব্র এইবার হুট করেই পুষ্পিতার সামনে থেকে উঠে গিয়ে ওর পাশে বসে। পুষ্পিতা ভ্রু দুটো এইবার আরও কুচকিয়ে আসে। তীব্র এইবার ওর সামনে একটা পেকেট ধরে। আর ইশারায় বলে তা নিয়ে খুলে দেখতে৷ পুষ্পিতা কিছুক্ষণ তীব্রর দিকে শান্ত চাহনিতে তাকিয়ে থাকে। তারপর প্যাকেটটা হাতে নিয়ে তা খুলে দেখে। খুলতেই সে তার মধ্য থেকে ক্যাডবেরি ডেরিমিল্ক সিল্কের দুটো চকলেট পায়। পুষ্পিতা বিস্মিত চোখে তীব্রের দিকে তাকায়। তীব্র তা দেখে মুচকি হাসি হেসে বলে,

— কাজের স্ট্রেস কমানোর বা রিলেক্স ফিল করার বেস্ট ওয়ে হচ্ছে চকলেট। আর এইখানে তো আমার পুষ্পরানী আগে থেকেই চকলেট পাগলী। তাই কাজটা আরেকটু সহজ হয়ে গেল বটে।

মূহুর্তেই পুষ্পিতার মুখে হাসি ফুটে উঠে। সে কিছু না বলে তীব্রকে হাল্কা ভাবে জড়িয়ে ধরে আর বলে,
— সত্যি এইটার খুব দরকার ছিল। ফোর মি মাইন্ড রিলেক্স করার জন্য চকলেট ইজ বেস্ট অপশন ইউ নো।

তীব্র আলতো হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
— তাই তো এনে দিলাম। এখন এইটা খাও কিছুক্ষণের মধ্যে তোমার পছন্দের চিজ পাস্তা আর মিন্ট মোহিতোও এসে পড়বে। দ্যান ইউ উইল ফিল মাচ রিলেক্সড। তখন আর কাজের চাপটা এত মনে হবে না।
নিজেকে টাইম না দিলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বে। তুমি তো আর নিজেকে টাইম দিবে না তাই তো বান্দা তুমহারি খেজমাত কে লিয়ে হাজির হ্যায়।

পুষ্পিতা মুচকি হেসে তীব্রের কাঁধে মাথা রেখে চকলেট খেতে খেতে বলে,
— থেংক ইউ।

তীব্র হাল্কা হেসে বলে,
— মাই প্লেজার।

পুষ্পিতা অতঃপর লাজুক কন্ঠে বলে,
— সে কি জানে তার মুচকি হাসিটা যে মারাত্মক? তার এই মারাত্মক হাসিতে যে আমি বার বার প্রেমে পড়ে যাই।

তীব্র তখন বলে উঠে,
— সে কি জানে তার এই লাজুক মুখখানিতে আমি নিজেকে হারাই?

পুষ্পিতা আর কিছু না বলে চুপচাপ তীব্রের কাঁধে মুখ লুকায়। তীব্র এইবার পুষ্পিতাকে আরেকটু লজ্জা দেওয়ার জন্য বলে,
— তুমি আমি ফুলের কলি
ফুটবো এক সাথে
তোমার আমার দেখা হবে
ফুলসজ্জা রাতে।

পুষ্পিতা এইটা শুনে পুরো লাল হয়ে যায়। অতঃপর সে দুই একটা কিল বসিয়ে দেয় তীব্রের বুকে আর বলে,
— সব সময় এমন লেম মার্কা ডাইলোগ।

তীব্র এইবার এক্টিং করে বুকে হাত দিয়ে বলে,
— ইশশ!! কি ডেঞ্জারাস মাইরী বাবা! হেতিরে মুই বিয়া করতাম না।

পুষ্পিতা এইবার হাল্কা চেঁচিয়ে বলে,
— তবে রে!!

অতঃপর দুইজনে এক সাথে হেসে উঠে।

সবসময় মুখে ভালবাসি বললে বলেই যে সে তোমায় ভালবাসে তা কিন্তু না। অনেক সময় মুখে ভালবাসি না বললেও কাজের মাধ্যমে তাকে প্রতিটা মূহুর্তে বুঝিয়ে দেওয়া যায় যে সে তোমায় ভালবাসে। বুঝিয়ে দেওয়া যায় যে সে তোমায় বুঝে, তোমার সম্পর্কে জানে, কেয়ার করে আর সে সবসময়ই তোমার পাশে আছে। ভালবাসি সবসময় মুখে বলতে হয় না অনেক সময় তা বুঝে নিতে হয়।
অথচ অনেকে এইটা বুঝেই না। তাদের ভাষ্যমতে ভালবাসি মুখে বলা মানেই আসল ভালবাসা। তা না হলে এইটি ভালবাসা না। শুধু মাত্র মুখে এই ভালবাসি কথাটা না বলার জন্য তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে যায়। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় দুইজন দুই প্রান্তে।

?

— বেবিইই!!

আজ বাইরে প্রচন্ড রোদ বলে রাহুল নিজের সাথে প্রতিজ্ঞা করে যে আজ যত যাই হোক সে আজ কোন মতেই বাসা থেকে বের হবে না। কিছুতেই না। এই প্রতিজ্ঞাই রাখতে সে ফুল স্প্রিডে ফ্যান চালিয়ে পরে পরে ঘুমাচ্ছি। কিন্তু তা যে গুড়ের বালি। হুট করেই অর্পির এমন মিষ্টি সুর শুনে ঘুমের মধ্যে ভ্রু দুইটি কুঞ্চিত হয়ে আসে। সে ঘুমের ঘোরেই বিরবির করে বলে,

— এমনে কি কম জালাও যে এখন ঘুমের মধ্যেও ডাইনি রুপে জালাতে চলে আসছো।

অর্পি পুরো কথাটা ঠিকভাবে না শুনলেও চেঁচিয়ে উঠে বলে,
— এই কি বললা??

অর্পির চেঁচানো তো রাহুলের ঘুম উঁড়ে যায় আর চোখ খুলে অর্পাকে দেখতেই লাফ দিয়ে উঠে সে। তারপর অপ্রস্তুত সুরে বলে,

— তুমি এইখানে? এইসময়?

অর্পি এইবার ন্যাকা সুরে বলে,
— কেন আমি কি আমার বেবি এর সাথে দেখা করতে আসতে পারি না?

রাহুল এইবার মনে মনে বলে,
— নির্ঘাত কোন ঘাবলা আছে। এই মাইয়ার মনে আজ কি চলতাছে কে জানে? এত মিষ্টি সুরে যখন ওর মুখ দিয়ে কথা ফুটে তখনই আমার তেরোটা বাজে। আল্লাহ রক্ষা করো আমায়!

অর্পি এইবার রাহুলের কাঁধে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে বলে,
— কোথায় হাড়িয়ে গেলে বেবি?

রাহুল এইবার অস্পষ্ট সুরে বলে,
— কোথাও না? আর তুমি আমার আসবা না তো কে আসবে বলো? মার সাথে দেখা করেছ?

অর্পি মিষ্টি হেসে বলে,
— হ্যাঁ দেখা করে এসেছি প্লাস পারমিশনও নিয়ে এসেছি।

রাহুল এইবার সন্দেহ ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
— পারমিশন? কিন্তু কিসের?

অর্পি এইবার মিষ্টি সুরে বলে,
— আজ তোমায় নিয়ে সিনাপ্লেক্সে মুভি দেখতে যাব তার পর সেখান থেকে ঈদের শপিং আর খাওয়া দাওয়া করে দ্যান বাসায় চলে আসবো।

এইবার রাহুলের মাথা ঘুরে যায়। যেখানে আজ সে প্রতিজ্ঞা করেছিল কিছুতেই বাইরে যাবে সেখানে অর্পি ওকে এতটা ঘুরাতে চাচ্ছে। তার উপর এত আগে ঈদের শপিং। ওহ মাই গোড! এইটা কোন কথা?
রাহুল এইবার আমতা আমতা করে বলে,
— আজকে না গেলে হয় না? দেখ না বাইরে কি রোদ।

অর্পি এইবার চোখ পিটি পিটি করে বলে,
— না হয় না। আজকেই যেতে হবে। আর রোদ তো সবসময়ই থাকে। এতে নতুন কি? আর এমনেও আমি কি তোমার থেকে সবসময় এইসব আবদার করি নাকি?

রাহুল এইবার বিরবির করে বলে,
— সপ্তাহে দুইদিন ঘুরাতে নিয়ে যেতে হয়, একদিন মুভি দেখাতে হয় আর একদিন শপিং করাতে হয়। পুরো মাসে না জানি আরও কত কি? আবার বলে সবসময় নাকি? হুহ!

অর্পি এইবার বলে,
— কি বলো বিরবির করে আর বার বার তুমি কই হারিয়ে যাও বলো তো?

রাহুল তখন হতভম্ব হয়ে বলে,
— না মানে বলছি কি আজকে না গেলে হয় না?

অর্পি এইবার ন্যাকা কান্না করে বলে,
— তুমি আমায় একটুও ভালবাস না তাই না? তাই তো আমার ছোট আবদারটা রাখতে পারছো না। আই হেড ইউ।

রাহুল এইবার সটান হয়ে দাড়িয়ে পড়ে বলে,
— কে বলছে ভালবাসি না? বাসি তো। এত ভালবাসি। এই দেখ এখনই রেডি হচ্ছি। তুমি কিছু আবদার করেছ আর আমি তা না করবো হতেই পারে না। আবদার পূরণ করতে করতে শহীদ হয়ে যাব তাও তোমার আবদার পূরণ করা ছাড়বো না।

এই বলে রাহুল ওয়াশরুমে চলে যায়। আর অর্পি সেইদিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দেয়। আর আনমনে বলে,

— পাগল একটা।

?

সন্ধ্যা কিছুটা নেমে এসেছে। সূর্য মামা হেলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। ধীরে ধীরে অন্ধকার ছেঁয়ে পড়ছে সাথেই ঘন ঘন কালো মেঘের আবরণ এসে ভীর জমাচ্ছে আকাশের বুকে। হাল্কা বাতাস বইতে শুরু করেছে। যে কোন সময় ঝড় এসে হানা দিতে পারে। যার ফলে রাস্তাও ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে আসছে। এমন অবস্থায় রাস্তার এক পাশে নীরা দাড়িয়ে আছে। বার বার ডান দিয়ে নিজের চশমা ঠিক করছে আর বা হাতের থাকা হাতঘড়িটির দিকে তাকাচ্ছে। সেই কখন উবার বুক করেছিল সে। এখন পর্যন্ত উবারটি আসে নি। ফোন দিলেই বলছে এইতো ১০ মিনিট, আর ১০ মিনিট। অথচ এই ১০ মিনিট করতে করতে প্রায় ৪০ মিনিট পার হয়ে গেল। কিন্তু মহাশয়ের আসার নামই নেই।
এইদিকে নীরা থেকে বেশখানিকটা দূরে একটা চায়ের স্টোলে কিছু বখাটে টাইপ ছেলেপেলে আড্ডা দিচ্ছে আর বার বার নীরার দিকে তাকাচ্ছে। নীরা তো যেন ভয়ে শেষ। এই বুঝি তারা এসে তাকে ঘিরে ধরে। নীরা এইবার মনে মনে দোয়া-দরুদ পড়তে শুরু করে আর উবারের অপেক্ষা করতে থাকে। এমন সময় কয়েকটা ছেলেপেলে দাঁড়িয়ে যায় তা দেখে নীরা আর কিছু না ভেবে উল্টো পথে হাঁটা দেয়। নীরা বুঝতে পারে কেউ ওর পিছে পিছে আসছে তাই সে হাল্কা ঘার ঘুরিয়ে দেখে কে? নীরা দেখে সেই ছেলেপেলে গুলোই ওর পিছে আসছে। তা দেখে নীরা আরও ভয় পেয়ে যায়। সে নিজের হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু তাতে লাভ হয় না ছেলেপেলে গুলো ওর বেশ কাছেই চলে আসে। এমন সময় কোথ থেকে এক ছেলে এসে নীরার এক হাত চেঁপে ধরে বলে,

— আরেহ বেবি তুমি এইদিকে কোথায় যাচ্ছো? আমি তো গাড়ি ওইদিকে পার্ক করেছি। ওইদিকে চল তারাতাড়ি! তোমাকে বাসায় দিয়ে আবার আমায় পুলিশ স্টেশনেও যেতে হবে তো। আর্জেন্ট কাজ পড়েছে।

নীরা এইবার বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। আর মনে মনে বলতে থাকে,
— এই ব্যাটা বলে কি? আমি এনার বেবি কিভাবে হলাম? আর এনি আমার বাসা চিনে কিভাবে? আমার বাসা দেওয়ার সাথে পুলিশ স্টেশন আর কাজের সম্পর্ক কি?

নীরা এইবার বিভ্রান্তি ভরা চাহনিতে সেই লোকটির দিকে তাকায়। অতঃপর লোকটি ইশারা করে পাশে তাকাতে। নীরা পাশে তাকিয়ে দেখে সেই ছেলেপেলে গুলো আর নেই। কিন্তু ছেলে গুলো গেল কই? এই মাত্র না ওর পিছেই ছিল।
লোকটি নীরার হাতটা ছেঁড়ে দিয়ে বলে,

— সরি ম্যাম আপনার হাতটা এইবার ধরার জন্য। আসলে তখন দেখলাম ওই বখাটে ছেলে গুলো আপনাকে ফলো করছে আর আপনি দ্রুত বেগে হাঁটছেন তখনই বুঝেছিলাম তাদের হয়তো কোন খারাপ উদ্দেশ্য আছে। তাই আপনাকে সেফ করতে এমন নাটকটা করলাম। পুলিশ স্টেশনের নাম এই জন্য নিয়ে ছিলাম যারা তারা বুঝে আমি পুলিশের এক লোক। তাই তো ওরা এইট শুনার সাথে সাথে দৌঁড়ে পালায়।

এইবার নীরার মনের ভয়টা কেটে যায়। সে এইবার মুগ্ধ হয়ে লোকটিকে দেখতে থাকে। নীরা ডান হাত দিয়ে নিজের চশমা ঠিক করে বলে,
— থেংক ইউ! আপনি না থাকলে হয়তো সত্যি আজ আমার সাথে খারাপ কিছু হয়ে যেত৷

সেই লোকটি হাল্কা হেসে বলে,
— মাই প্লেজার। আপনি আমায় এড্রেসটা বলুন আপনাকে আমি ড্রপ করে দিচ্ছি।

নীরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই নীরার ফোন বেজে উঠে। ফোন হাতে নিতেই দেখে সেই উবার এর ড্রাইভার ফোন করেছে। নীরা ফোন তুলে কথা বলেই জানতে পারে যে উবারটি এসে পড়েছে। নীরা তাকে একটু সামনে এগিয়ে আসতে বলে অতঃপর ফোন রেখে সেই লোকটির দিকে তাকিয়ে বলে,

— তার দরকার পড়বে না। আমার উবার এসে পড়েছে। এন্ড থেংক ইউ আগ্যাইন ফোর হেল্পিং মি।

লোকটি প্রতি উত্তরে শুধু একটা হাসি দেয়। নীরা মুগ্ধ হয়ে সেই হাসিটি দেখতে থাকে। লোকটির হাসি বেশ মিষ্টি। সাধারণত পুরুষ মানুষদের হাসি কখনো মিষ্টি হয় না। কেন না পুরুষ জাতির সাথে মিষ্টি শব্দ কেমন যেন বেমানান। কিন্তু এইখানে এই লোকটির হাসি মিষ্টি শব্দ ব্যতীত অন্য সকল শব্দ যেন বেমানান। নীরা কি তাহলে এই লোকটির মিষ্টি হাসির জালে ফেঁসে যাচ্ছে?

#চলবে