অন্তরালে ভালোবাসা পর্ব-০৩

0
6182

#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:৩
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

এটা বলেই দৌড়ানো শুরু করি। আমার পিছন পিছন মিমিও দৌড়ে আসছে। দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় কারো সাথে ধাক্কা লেগে তাকে নিয়ে রঙের ড্রামে পড়ে যায়। তাকিয়ে দেখি আমার হাবলা হবু দুলাভাই। প্রথমে ভাইয়া ওঠে তারপর আমাকেও টেনে তুলে।

(হবু দুলাভাইয়ের নাম আরশাল আহম্মেদ আদ্রিয়ান। পেশায় সাইনটিস্ট। হাবলা বলছি বলে সত্যিই হাবলা না। আসলে চোখে গোল গোল চশমা পড়ে তো তাই এটা আমার দেওয়া সিক্রেট নেইম ।)

জানের টুকরা তুমি আর কাউকে পেলে না রঙের ড্রামে নিয়ে পড়ার জন্য।

আরে ভাইয়া আপনি শালিকার জন্য এইটুকু কষ্ট করতে পারবেন নাহ। একটু তো রঙের ড্রামেই পড়েছেন। তার জন্য এতো কিছু বলছেন যান আপনার সাথে আমার বোনের বিয়েই দিবো না।

আমার কথার বলার মাঝখানেই রিয়ান ভাই আমাকে তুফানের বেগে এসে কোলে তুলে ঝড়ের বেগে ছুটে। আমি পরে যাওয়ার ভয়ে রিয়ান ভাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরি। এইদিকে আদ্রিয়ান ভাইয়া হা করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই আমাদের দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে? অনেকে আবার কানাকানি করছে। আমার সম্পূর্ণ বিষয়টা বুঝতে ২ মিনিট লাগে ততক্ষণে রিয়ান ভাই আমাকে নিয়ে রুমে এসে নামিয়ে দেয়। নামিয়ে দিয়েই রিয়ান ভাই আমার রুম থেকে চলে যায়। আমি নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় কুঁকিয়ে যায়। সাদা জামা ভিজার ফলে শরীরের সাথে লেগে গেছে। যার ফলে শরীরের প্রত্যেকটা ভাঁজ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

আল্লাহ আমি এভাবে সবার সামনে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। আল্লাহ একটা দড়ি ফালাও আমি ওঠে যায়। আমি রিয়ান ভাইয়ের সামনে যাব কী করে? (মনেমনে)

মনেমনে ঠিক করে নিলাম আজকে আর রিয়ান ভাইয়ের সামনে যাব না। ইনফেক্ট নিচের রং খেলাতেই যাব না। চুলগুলো হাত দিয়ে খোপা করে ওয়াশরুমে গেলাম ফ্রেশ হওয়ার জন্য। ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে গা এলিয়ে দিলাম। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছিলো তখনি খট করে দরজা লাগানোর শব্দে ছট করে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া আর রিয়ান ভাই দাঁড়িয়ে আছে। রিয়ান ভাইকে দেখে তখনের কথা মনে পড়ে গেলো আর লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলাম।

যার সামনে যাব না বলে রুমে বসে আছি সেই আমার রুমে এসে হাজির। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে,
যেখানে বাগের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। আমার সাথেই তা ঘটলো। (মনেমনে)

কী ব্যাপার তোমরা আমার রুমে?

দুজনের থেকে কেউই আমার কথার কোনো উত্তর দিল না। ধপাস করে এসে আমার বিছানায় শুয়ে পড়লো দুজনই। রিয়ান ভাই চোখ বন্ধ করে বলল,

রিয়াদ ভাই আজকে আমরা অসহায় বলে কেউই দাম দেয় না।

রিয়া তুই এতো কিপ্টা কেনো? আমরা তোর বিছানায় শুয়েছি বলে কী তোর বিছানা কমে যাবে?

আমি এটা কখন বললাম ভাইয়া? তোমরা কোনো কথা বার্তা ছাড়ায় এসে দরজা বন্ধ করে ধপাস করে শুয়ে পড়লে?

ভাইয়া আমার কোলে মাথা রেখে বলে,

রিয়া মাথাটা একটু টিপে দে অনেক ব্যথা করছে।

পারব না।

যদি মাথা টিপে দিস তাহলে তোর হবু ভাবির নাম বলবো এবং ছবি দেখাবো।

নাইমাতুল জান্নাত মিম। অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বাসা ধানমন্ডি ঠিক বলেছি না।

তুই এতো কিছু জানলি কী করে?

রিয়াদ ভাই তোমার বোন ডিটেকটিভ হয়ে গেছে।

তাই তো দেখছি ।

তোমরা এখনো কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছো না।

আগে মাথা টিপে দে তারপর বলছি।

আমি ভাইয়ার মাথা টিপতে শুরু করলাম।

সব রুমে মানুষ গিজ গিজ করছে শুধু তোর রুম ছাড়া। আম্মু সবাইকে না করে দিয়েছে তোর রুমে যেনো কেউ না আসে। তোর রুমে এসে চিৎকার চেঁচামেচি না করতে। কারণ কিছুদিন আগে তুই হসপিটাল থেকে আসছিস এখনো অনেকটা উইক তাই তোর রুমে আসা নিষেদ। আর বরপক্ষের মেয়েগুলো একেবারে গায়ে পড়া। হাঁটু পর্যন্ত ড্রেস পড়ে এসেছে আর এসেই গাঁয়ের ওপর ঢলে পড়ছে।

হা হা হা হা।

রিয়ান ভাই ধমক দিয়ে বলে, তুই এভাবে পাগলের মতো হাসছিস কেনো?

হাসবো না তো কী কাঁদবো? সিরিয়াসলি তোমরা মেয়েদের ভয়ে আমার রুমে লুকিয়েছো।

চুপ কর শান্তিতে ঘুমুতে দে আমাদের।

——————————-

আব্বু এসে ভাইয়া আর রিয়ান ভাইকে ডেকে নিয়ে গেছে। আমি বেলকনিতে বসে আছি আর আমার হাতে একটা চিরকুট। এখন একটু কিন্তু খুলে পড়ার একটুও ইচ্ছাও না। কিন্তু মনে মাঝে আছে হাজারো কৌতূহল এখানে কী লেখা থাকতে পারে।মন বলছে খুলে পড় আর মস্তিষ্ক বলছে পড়িস না। মন আর মস্তিষ্ক যুদ্ধ করে শেষে মনই জিতলো।

নিজের খেয়াল রাখতে পারো না। আমি চায় না আমার জিনিসে কেউ নজর দেখ। আমার জন্যও হলে তো তুমি নিজের খেয়াল রাখতে পারো। তুমি অনেক বেখেয়ালি শুধু আমার বেখেয়ালি। ❤

পড়ে মুচকি হাসলাম। প্রথম প্রথম বিরক্ত হলেও এখন অনেক ভালো লাগে। আমি নাকি তার জিনিস।

ধপ করে কারো বসার আওয়াজে আমার ভাবনার বিঘ্ন ঘটে দেখি। আপু আমার সাথে দোলনায় বসে আছে।

কীরে এখানে এভাবে বসে আছিস কেনো?

এমনি। তুমি এখানে?

তোকে ডাকতে এলাম ছাদে সবাই বসে আছে।

যাব না।

আপু আমার কোনো কথা না শুনেই আমাকে টেনে ছাদে নিয়ে গেলো। ছাদে ভাইয়া, রিয়ান ভাই, আদ্রিয়ান ভাইয়া, পিয়েল ভাইয়া, তিতাস ভাইয়া, জেনি আপু, জেরিন আপু, তিশা, সাহেল ভাইয়া, আহির ভাইয়া, প্রমি, মহুয়া আপু সবাই গোল করে বসে আছে। আমি আর আপুও এক সাইডে বসে পড়লাম।

সাহেল ভাইয়া অনেক উৎসাহ নিয়ে বলে, এখন সবাই চলে এসেছে। ট্রুথ অর ডেয়ার খেলা যাক।

সাহেল ভাইয়ার কথায় সবাই সায় দিল। বোতল ঘুরানো হলো। বোতলের মুখ সাহেল ভাইয়ের সামনে থামলো। সাহেল ভাইয়ের মুখ কালো হয়ে গেলো। মুখ কালো করে বলল,

ট্রুথ।

রিয়ান ভাই ভ্রু নাচিয়ে বলে, প্রথম লিপ কিসটা কাকে করছিলি?

এটা ঠিক না। ছোট ভাই বোনদের সামনে প্রেসটিজের বারোটা বাজাচ্ছিস।

সবাই একসাথে চিৎকার করে বলে, আনসার না হয় মাইর হবে।

সাহেল ভাই মুখ কালো করে উত্তর দিলো, লিনি।

সবাই হো হো করে হাসা শুরু করলো। আবার বোতল ঘুরানো হলো এবার থামলো রিয়ান ভাইয়ের সামনে। সবাই অধির আগ্রহ অপেক্ষা করছে রিয়ান ভাই কী নিবে? সাহেল ভাই উৎ পেতে আছে রিয়ান ভাইকে ফাঁসানোর জন্য।

চলবে…..