#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:৭
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
আমার কথা শুনে ছেলেটা থতমত খেয়ে যায়। আমি জিজুর দিকে ভ্রু নাচিয়ে জিঙ্গেস করি জিজু আপুকে কী রোহান ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিয়ে দিব?
আরে আধি ঘারওয়ালি আমি কখন বললাম টাকা দিব না। রোহান তো এক পায়ে রাজি আর আমি দুই পায়ে রাজি। তার থেকে বড় কথা উনি এক পায়ে রাজি তার মানে উনার আরেকটা পা নাই বলে এক পায়ে রাজি। তোমার বোন তো আমার হবু বউ তার প্রতি তো আমার কিছু কর্তব্য আছে। জেনে শুনে একটা পঙ্গু ছেলের সাথে বিয়ে দিতে পারি না। এই নিলয় আমার আধা বউদের খুশি করে দে।
নিলয় ভাইয়া বিনা বাক্যে আমার হাতে পঞ্চাল হাজার টাকা দিয়ে দিল।
রোহান ভাইয়া হাসতে হাসতে বলে, জিজু আপনি আমার জন্য জেলাস ফিল করছেন।
আদ্রিয়ান জিজু মৃদু চিৎকার দিয়ে বলে, হোয়াট জিজু!
আমরা সবাই উচ্চস্বরে হেসে দেই। রোহান ভাইয়া হাসিটা আটকে বলে,
জিজু আমি রোজার আপুর থেকে এক বছরের ছোট।
জিজুর এক ফ্রেন্ড জিজুর মাথায় হালকা থাপ্পড় মেরে বলে, গাধা তুই নিজের শালাদের চিনোস না।
জিজু অবাক হয়ে বলে, আমি তো তোমাকে আগে এখানে দেখেনি।
রোহান ভাইয়া একটা চমৎকার হাসি দিয়ে বলে,
এক্সামের জন্য আমি বিয়ের সব ফাংশনে এটেন্ড করতে পারিনি।
আমরা গেইটের সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়। বড়রা এসে জিজুকে বরণ করে। আমি এক সাইডে এসে দাঁড়ায়। তখনি হুরমুর করে রিয়ান ভাই এসে আমার সামনে দাঁড়ায়। আমি ভ্রু কুচকে রিয়ান ভাইয়ের দিকে তাকাই। রিয়ান ভাই নিঃশ্বব্দে আমার গলা থেকে হার খুলে চলে যায়। যাওয়ার আগে বলে যায়,
এই হারটাতে তোকে একদম পেত্নীর মতো লাগছে।
যেভাবে এসেছিল ঠিক সেই ভাবেই চলে যায়। আমি আহাম্মকের মতো রিয়ান ভাইয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছি। একটু পরে তিশা এসে আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,
কীরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? কারো ওপর ক্রাশ খাইলি নাকি?
জানিস তিশা ভাগ্য করে তোর মতো একটা বান্ধবী পাইছিলাম।
তার মানে তুই আমাকে বান্ধবী হিসেবে পেয়ে নিজেকে লাকি মনে করছিস?
নারে নিজেরে আনলাকি মনে করছি। তুই সারাদিন কতো ক্রাশ খাস।
ক্রাশ খাওয়া একটা আর্ট যা সবাই পারে না।
তুই তোর আর্ট নিয়ে বসে থাক আমি যাই।
আমি আপুর রুমের দিকে যাচ্ছিলাম তখন আবার সামনে এসে দাঁড়ালো। আগের ভঙ্গিতেই আমার ইয়ার রিংগুলো খুলে নিল।
এই ইয়ার রিংগুলোতে তোকে একদম পেত্নীর মতো লাগছে।
আবার ঝড়ের বেগে হাওয়া হয়ে যায়। এই লোকের মতিগতি বোঝা বড় দাই। আমি আপুর রুমের সামনে গিয়ে দেখি আব্বু আর আম্মু ভিতরে। আম্মু কাঁদছে আর আব্বুর চোখে পানি চিক চিক করছে। আমি আর ভিতরে দিকে পা বাড়ালাম না। আমি জানি আমি এখন ভিতরে গেলে কেঁদে কেঁদে ভাসিয়ে দিব আমার কান্না দেখে আপু আরও ভেঙে পড়বে। আমি উল্টো ঘুরে হাঁটা দিলাম। বাগান এসে দাঁড়াতেই আবার রিয়ান ভাই আমার সামনে এসে ইনোসেন্ট হাসি দিলো। আমি আমার নাক টানাটা খুলে রিয়ান ভাইয়ের হাতে দিয়ে দিলাম।
আপনি তো এটাই নিতে এসেছেন। এটাতেও তো আমাকে পেত্নীর মতো লাগছিলো।
রিয়ান ভাই মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়।
আমাদের মনের কিন্তু অনেক মিল আছে। আমি বলার আগেই তুই সব বুঝে যাস।
আমি মুগ্ধ হয়ে রিয়ান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়ান কালো শার্ট পড়ছে তার উপর কালো ব্লেজার, কালো প্যান্ট, পায়ে কালো সু, হাতে কালো ফিতার ঘড়ি। চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা। আমার এখন রিয়ান ভাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলেতে ইচ্ছে করছে,
এই ছেলে তুমি এতো সুন্দর কেনো? একটু কম সুন্দর হতে পারলে না। তুমি জানো না ছেলেদের এতো সুন্দর হওয়ার অধিকার নাই।
রিয়ান ভাই ঠোঁট কামড়ে এসে আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে,
এভাবে দেখো না গো প্রেমে পড়ে যাবে।
আমি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেই।
রিয়ান ভাই আবার বলে,
এই মেয়ে এতো লজ্জা পেয়ো না। লজ্জা পেলে তোমার গালগুলো স্টবেরির মতো হয়ে যায়। ইচ্ছে করে টুপ করে খেয়ে ফেলি।
আমি রিয়ান ভাইয়ের কথা শুনে ফ্রিজড হয়ে যায়। এই ছেলেও এভাবে কথা বলতে পারে তা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। রিয়ান ভাই আমার মুখে ফুঁ দিয়ে পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে শিস বাঁজাতে বাঁজাতে চলে যায়। রিয়ান ভাইয়ের যাওয়ার পানে আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি।
——————————————–
কিছুক্ষণ আগে আপুর বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এখন বিদায়ের সময়। আপু আমাকে, ভইয়াকে, আব্বু, আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে। জিজু আপুকে ধরে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসায়। আমি ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে হেঁচকি তুলে কাঁদছি।
রিয়াদ ভাইয়া তুমি মামুনি আর মামাকে নিয়ে বাসায় যাও আমি রিয়াকে সামলাচ্ছি।
রিয়ান ভাইয়ের কথা শুনে ভাইয়া আব্বু-আম্মুর কাছে চলে গেলো। রিয়ান ভাই আমাকে পিঞ্চ মেরে বলে,
কাঁদলে তোকে শেওড়াগাছে ঝুলে থাকা পেত্নীদের মতো লাগে।
আমি রেগে রিয়ান ভাইয়ের দিকে তেড়ে যায়।
এখন তো তুই রাক্ষসীদের মতো বিহেভ করছিস।
আমি রিয়ান ভাইয়ের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলি,
আমি রাক্ষসী হলে আপনি রাক্ষস রাজ। হুহ।
আমি রেগে হনহন করে বাসার ভিতরে চলে যায়। রিয়ান ভাইয়ের হাসির আওয়াজ আমার কানে এসে বার বার বাড়ি খাচ্ছে। আমি রুমে এসে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বেলকনিতে গিয়ে টাওয়ালটা মেলে দেই।
রুম আসতেই আমার চোখ যায় বিছানার ওপর রাখা কালো গোলাপ আর একটা চিরকুট।
চলবে…..