#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:১৩
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
নিহান ভাইয়ার ফ্লাইট ক্যান্সেল হয়ে গেছে। নিহান ভাইয়া দুই দিন পরে আসবে। আমি রাতে শুয়ে রিয়ান ভাইয়ের কথা ভাবছিলাম তখন বেলকনিতে ধপ করে কিছু পড়ার আওয়াজ হলো। আমি শুয়া থেকে ওঠে বেলকনির দিকে পা বাড়ালাম। বেলকনিতে গিয়ে যাকে দেখলাম তাকে দেখে আমি ভয়ে দু পা পিছিয়ে গেলাম।
রুম অন্ধকার হলেও চাঁদের আলোয় রিয়ান ভাইয়ের মুখটা আবছা আবছা বুঝা যাচ্ছে। ভিষণ রকম ভয় করছে রিয়ান ভাইয়ের আগ্নেয়গিরির মতো চোখ দুটো দেখে। উনার চোখ দুটো দেখে মনে হচ্ছে এখনি আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দিবে।
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, রিয়ান ভাই আপনি এখানে?
কেনো অন্য কাউকে আশা করছিলি বুঝি?
এসব কী বলছেন?
কেনো বুঝতে পারছিস না তুই?
আর তোর ফোন বন্ধ কেনো? কতবার ফোন দিছি তোর কোনো ধারণা আছে। এই ফোনটা যখন কোনো কাজেরই না তাহলে রেখে লাভ কী? ( চিৎকার করে)
আমার ফোনটা ফ্লোরে ছুড়ে মারে। সেই শব্দে আমি লাফিয়ে ওঠলাম। আমার ফোনটার জন্য অনেক কষ্ট লাগছে। অসহায়, অবলা ফোনটা শুধু মাত্র আমার জন্য অকালে নিজের প্রাণটা হারালো।
তুই ঐদিকে তাকিয়ে কী দেখছিস আমার দিকে তাকা?
আপনি আমার ফোনটা ভেঙ্গে দিলেন।
যেটা কোনো কাজের না সেটা রেখে কী লাভ?
আমি ছলছল চোখে ফোনটার দিকে তাকায়।
উনি আমার দুই বাহু চেপে ধরে।
এই একদম কাঁদবি না। তোর মনে হচ্ছে না দিন দিন তোর সাহসটা বেশি বেড়ে গেছে।
রিয়ান ভাই আমার লাগছে।
তুই শুধু নিজের কষ্টটাই বুঝিস। বাহ্যিক ব্যথাটাই কী সব কিছু? আমার যে এখানে ( বুকের বাম পাশে ইশারা করে) লেগেছে।
আমি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটপট করতে থাকি। রিয়ান ভাই আমার হাত দুটো দেওয়ালে সাথে চেপে ধরে।
যত ইচ্ছা ছটপট কর এই দুই দিন আমিও করছি। তোর কোনো ধারণা আছে এই দুই দিন আমার কীভাবে কেটেছে।
আমি এতক্ষণে রিয়ান ভাইয়ের দিকে তাকালাম। দুই দিনে নিজের কী অবস্থা করেছে। মুখটা মলিন হয়ে গেছে। উপরে খুসকো চুলগুলো এলেমেলো হয়ে কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে মনে হয় দুই দিন ধরে রাতে ঘুমায়নি।
ঐ ছোট একটা কথার জন্য তুই এভাবে রেগে থাকবি। আমি যে তোর কাছে এতবার ক্ষমা চাইলাম তার কোনো দাম নাই। তুই তো জানিস তোকে কেউ কিছু বললে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না। তুই কি কোনো দিনও আমাকে বুঝবি না। যেখানে তোকে এক দিন না দেখলে আমি থাকতে পারি না সেখানে আজকে দুই দিন ধরে তোর সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। কেনো বুঝিস না তোকে এক মুহূর্ত না দেখলে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না।
আপু তো আজ তিন দিন হলো আমাদের বাসায় নেই আপনি আপুর সাথে কয়বার দেখা করতে গেছেন।
তুই আর তোর বোন এক নাকি?
কেনো? আপু আপনার বোন আমিও আপনার বোন তাহলে পার্থক্য কীসের?
এত কিছু বুঝলে তো তুই মানুষই হয়ে যেতি?
আপনি কিন্তু আমাকে ইনসাল্ট করছেন।
তোর মতো পিচ্চি মেয়ে ইনসাল্টের কী বুঝে? (গাল টেনে)
আপনি কথায় আমার গাল ধরে টানেন কে্নো?
তোর সাথে ঝগড়ার কোনো মুড নাই। আমি এখন অনেক ক্লান্ত প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।
রিয়ান ভাই টেনে বিছানার ওপর বসিয়ে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। রিয়ান ভাইয়ের ছোঁয়ায় আমি ফ্রিজড হয়ে বসে আছি। রিয়ান ভাই আমার হাতটা ওনার মাথার ওপর রাখে।
রিয়া প্লিজ একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিবি। দুই দিন ধরে ঘুমুতে পারিনি। এখন একটু শান্তিতে ঘুমুতে চাই।
আমি রিয়ান ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
আচ্ছা আপনি কী করে জানলেন আমি এখানে আছি?
রিয়াদ ভাই বলছে।
আপনি এত রাতে দুরে আসতে গেলেন কেনো?
তোকে দেখার জন্য মনটা ছটপট করছিল।
আপনাকে দেখে অনেক ক্লান্ত লাগছে। আপনি যদি ড্রাইভিং করা অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়তেন তখন কি হতো?
এক্সিডেন্ট হতো বেশি কিছু হলে মরে যেতাম।
আপনি আর কোনোদিন আমার সামনে মারা যাওয়ার কথা বলবেন নাহ।
আচ্ছা বাবা আর বলবো না।
আমি আর কথা বাড়ালাম নাহ। আলতো হাতে ওনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। ওনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কখন যে চোখটা লেগে গেছিল বুঝতে পারিনি।
সকালে ঘুম থেকে ওঠে আমি অবাক হয়ে যায়। কারণ রুমের কোথাও রিয়ান ভাই নেই।
তাহলে কী আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম? না এটা স্বপ্ন ছিল না কারণ রাতে ঘুমানোর সময় আমার শরীরে কোনো চাদর ছিল না। আমি সিওর রিয়ান ভাই আমার শরীরে এই চাদরটা জড়িয়ে দিয়েছে। (বিড়বিড় করে)
বিছানা থেকে নেমে কার্পেট থেকে আমার ফোনটা কুঁড়িয়ে হাতে নেই। ফোনের ভাঙা অংশগুলো জুড়া লাগাই। কার্পেটের ওপর পড়ায় ফোনের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। ফোন অন করেই রিয়ান ভাইয়ের নাম্বারে কল লাগাই। দুই বার রিং হওয়ার পর ফোনটা রিসিভ হয়।
রিয়ান ভাই আপনি কোথায়?
বাসায়।
যাওয়ার আগে আমায় বলে যাননি কেনো? (অভিমানী কন্ঠে)
তোকে ঘুম থেকে জাগাতে ইচ্ছে করেনি।
তাই বলে আমাকে না বলে চলে গেলেন।
সরি।
হুহ।
কখন ঘুম থেকে ওঠলি?
একটু আগে।
পরে কথা হবে। ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট কর।
আচ্ছা।
ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়লাম এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। আজকে নিহান ভাইয়া আসছে। আমি, ভাইয়া আর মেহেরিন আপু ভাইয়াকে রিসিভ করতে যাচ্ছি।
চলবে…..