অন্তরালে ভালোবাসা পর্ব-১৬

0
5000

#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:১৬
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

হাঁটু থেকে মাথা তুলে আশেপাশে খুঁজে একটা নাইফ হাতে নেই। নাইফটা বাম হাতের শিরা বরাবর ধরি। যখনি হাত কাটতে যাবো তখনি আমার গালে কেউ স্বজুড়ে থাপ্পড় মারে। থাপ্পড়ের টাল সামলাতে না পেরে দুরে ছিটকে পড়ি। কয়েকদিন ধরে ঠিক করে খাওয়া-দাওয়া না ঘুমানোর ফলে শরীর অনেকটা উইক। অলস ভঙ্গিতে মাথাটা উপরে তুলি সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে দেখে চোখ-মুখে খুশির ঝলক দেখা দেয়।

এই মেয়ে তোর সাহস হয় কী করে নিজেকে আঘাত করার?

আমি জানি আপনি আসেননি তাই না?

রিয়া আমি তোর সামনে দাঁড়িয়ে আছি।

আপনি আবার চলে যাবেন তাই না? কেনো আমার সাথে এমন করছেন? একটু সময়ের জন্য আসেন আবার হাওয়ায় মিলিয়ে যান। এই লুকোচুরি খেলা আমার ভালো লাগছে না। আমি নিজেকে শেষ করে দিলে আপনি আসবেন তাই না।

থাপড়াইয়া তোর দাঁত ফেলে দিবো আরেকবার নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা বললে।

আপনি আমাকে থাপ্পড় কী করে দিবেন? আপনি তো সত্যি সত্যি আসেন নাই। আপনি তো আমার কল্পনায় এসেছেন। আমাকে ছাড়ুন,, ছাড়ুন বলছি।

রিয়া স্টপিড।

না না।

আমি নিজের হাত ছুটানোর জন্য ছটফট করতে থাকি। রিয়ান ভাই আমাকে শান্ত করতে না পেরে আমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। আমি উনার শার্টের কলার খামছে ধরি।
রিয়ান ভাইয়ের ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে আমি শান্ত হয়ে যাই। রিয়ান ভাই ঠোঁট ছেড়ে আমার গালে আলতো করে হাত রেখে বলে,

রিয়া আমি তোর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কোমা থেকে ফিরে এসে তোকে দেখার জন্য সিলেট থেকে এখানে ছুটে এসেছি তুই যদি এমন করিস তাহলে আমি কিন্তু আবার চলে যাবো।

আমি রিয়ান ভাইকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরি।

আপনি কোথাও যাবেন না। আপনি আমার সাথে থাকবেন।

রিয়ান ভাইও আমাকে জড়িয়ে ধরে। রিয়ান ভাইয়ের বুক থেকে মাথা তুলে উনার মুখের দিকে তাকাই। মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ করা। চোখ- মুখ শুকনো লাগছে। আমি হাত বাড়িয়ে রিয়ান ভাইয়ের সারা মুখ ছুঁয়ে দেই। উনার পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে মাথার দুই পাশে হাত দিয়ে কপালে অসংখ্য চুমু দেই। রিয়ান ভাই আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে আমি উনার গলা জড়িয়ে ধরে উনার মুখের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছি। উনাকে খুঁটিয়ে দেখছি।

এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমি কিন্তু নিজেকে আর কনট্রোল করতে পারবো না। (বাঁকা হেসে)

আমি কোনো কথা না বলে আলতো করে উনার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেই। উনি হয়তো আমার কাছ থেকে এটা এসপেক্ট করেননি এটা উনার চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। উনি অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি লজ্জায় উনার বুকে মুখ লুকাই। উনি মুচকি হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কানে ফিসফিস করে বলেন,

একদিন এতো শক নিতে না পেরে কিন্তু আমি হার্ট এ্যাটাক করবো। (দুষ্টুমির সুরে)

ধ্যাত।

রিয়া তোকে….

রিয়ান ভাইয়ের কোনো কথা আমার কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি তার আগেই আমার চোখের সামনে সব কিছু অন্ধকার হয়ে আসে। আমি ঢলে পড়ি রিয়ান ভাইয়ের বুকে।

——————————–

পিটপিট করে চোখ খুলে নিজের অবস্থান বুঝার চেষ্টা করলাম। এটা তো আমার রুম না। আশেপাশে ভালো করে দেখে বুঝতে পারলাম এটা হসপিটাল। ওঠে বসা চেষ্টা করতেই বাম হাতে ব্যথা অনুভব করলাম। বাম দিকে ফিরে দেখি হাতে স্যালাইন লাগানো আর রিয়ান ভাই আমার হাতের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। আমি আস্তে করে ডান হাতটা উঠিয়ে রিয়ান ভাইয়ের মাথায় আলতো করে রেখে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। আমার হাতের ছোঁয়া পেয়ে রিয়ান ভাই ঘুম থেকে হুরমুর করে ওঠে।

তুই কখন উঠলি? আমাকে ডাকলি না কেনো? এখন তোর কেমন লাগছে?

আস্তে বাবা এতোগুলো প্রশ্নের উত্তর একবারে কী করে দিবো? মাত্রই ঘুম থেকে উঠলাম। আপনি ঘুমাচ্ছিলেন তাই ডাকেনি। এখন ভালো লাগছে। আমি এখানে কী করছি?

তুই আমার সাথে কথা বলার মাঝখানে হঠাৎ সেন্সলেস হয়ে যাস। তোকে হসপিটালে নিয়ে আসি ডক্টর ঘুমের ইনজেকশন দেয়। প্রায় ১২ ঘন্টা (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে) পরে তোর ঘুম ভাঙলো।

এই ১২ ঘন্টা আপনি এখানে ছিলেন তাই না?

হুম। ( অন্যদিকে ফিরে)

তখনি কেবিনে প্রবেশ করে আব্বু, আম্মু, ভাইয়া, আপু, মনি, আংকেল, খালামনি, পপসি, মেহেরিন আপু, নিহান ভাইয়া, আদ্রিয়ান ভাইয়া, পিয়েল ভাইয়া, তিতাস ভাইয়া, জেনি আপু, জেরিন আপু, তিশা, সাহেল ভাইয়া, আহির ভাইয়া, প্রমি, মহুয়া আপু, নিলয় ভাইয়া। এখন আমার কেবিনে মানুষে গিজগিজ করছে। এতোজনকে একসাথে দেখে আমি আর রিয়ান ভাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। বড়রা আমার খবর নিয়ে চলে যায় ডক্টরের কাছে।

রিয়ান ভাই সবাইকে পিঞ্চ মেরে বলে,

তোমাদের সবাইকে একসাথে রোহিঙ্গা মনে হচ্ছে।

তোমাদের জন্য ৮ দিন ধরে সবার খাওয়া ঘুম চাঙ্গে উঠছে। এখন আমাদের পিঞ্চ মেরে কথা বলো। সালা দেশে আসছি ২ বছর পর কই ভাবলাম ঘুরাঘুরি করবো তা আর হলো কই তোকে খোঁজতে জীবন ত্যানা ত্যানা হয়ে গেলো।

নট বেড তোর বোনকে বিয়ে করার আগেই
সালা বানিয়ে দিলি।

নিহান ভাইয়া রিয়ান ভাইয়ের পিঠে থাপ্পড় মেরে বলে,

প্রেম করো একজনের সাথে আর বিয়ে করতে চাও আরেকজনকে।

তুই এখনো গাধাই রয়ে গেলি আমি যাকে বিয়ে করার কথা বলছি সেও তোর বোনই হয়।

আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে কথাটা বলল রিয়ান ভাই। ভাইয়া কাশি দিলো যার অর্থ সেও এখানে আছে। আমি লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। তখনি আবার বড়রা রুমে প্রবেশ করে। আব্বু সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,

তোমরা এখন বাসায় চলে যাও রিয়াকে বিকিলে রিলিজ করে দিবে।

রিয়ান ভাই আপনিও চলে যান।

আমি কোথাও যাচ্ছি না।

মনি তোমার ছেলেকে এখান থেকে যেতে বলো।

আমি যাবো না।

আপনি এখান থেকে না গেলে আমি চলে যাব এখান থেকে। নাও চয়েজ ইউর।

রিয়ান ভাইয়ের অনিচ্ছা সত্ত্বেও যেতে হলো। বিকেলে বাসায় চলে গেলাম। কেটে গেলো ৪ দিন। এই চারদিন সারাক্ষণ রিয়ান ভাই আমার সাথে সাথে ছিল।

চলবে…..