#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:২০
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
প্রিয় মানুষটার হাত ধরে বিকেলবেলা পাশাপাশি হেঁটে যাওয়ার অনুভূতিটাই অন্যরকম। এতক্ষণের ভালো লাগাটা কয়েক মিনিটে অসহ্যে পরিণত হলো। রাগে আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। কারণ সব মেয়েরা রিয়ান ভাইয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। এমন একটা হাব ভাব করছে যে জীবনে ছেলে দেখে নাই। লুচ্চা মাইয়া অন্যের বয়ফ্রেন্ডের দিকে নজর দেয়। ইচ্ছে করছে এই মাইয়াগুলোর চোখ তুলে নেই।
মিতু দেখ এই ছেলেটা কতো হ্যান্ডসাম। দেখ চুলগুলো কী সিলকি? এই চুলগুলো ছেলেটার সৌন্দর্য বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।
আমি চোখ লাল করে মেয়ে দুইটার দিকে তাকালাম। কিন্তু কোনো কাজ হলো না এখনো হা করে তাকিয়ে আছে।
রিয়ান ভাই।
কী?
আমার দিকে তাকান।
কেনো?
আমার দিকে তাকাতেও এখন কারণ লাগে। আমি তো জানি আমি দেখতে ভালো না আমার দিকে তাকাবেন কেনো? এখানে কত সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। (অভিমানী কন্ঠে )
টান দিয়ে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম।
যাবো না আপনার সাথে কোথাও।
কথা বলেই উল্টো ঘুরে হাঁটা দিলাম। রিয়ান ভাই আমার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের সামনে দাঁড় করায়। গালের দুই পাশে হাত রেখে বলে,
কে বললো তুমি সুন্দর না তুমি আমার শ্যামলতা আমার মায়াবতি।
উপ রিয়ান ভাইয়ের মুখে ‘তুমি’ ডাকটা শুনলে হার্ট এতো জুড়ে জুড়ে বিট করে কেনো? নির্ঘাত একদিন এই ছেলের মুখে ‘তুমি’ ডাকটা শুনে আমি হার্ট এ্যাটাক করবো।
মন খারাপ কেনো?
এখানে আর থাকবো না বাসায় যাবো।
কেনো?
কেনো আবার কী? সব মেয়েরা আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে কেনো? অন্য মেয়েরা আপনাকে হ্যান্ডসাম বলবে কেনো? (মৃদু চিৎকার করে)
এটা জন্য মন খারাপ করতে আছে?
রিয়ার রিয়ান ভাইয়ের দিকে শুধু রিয়া তাকিয়ে থাকবে। অন্য কোনো মেয়ে না। রিয়ার রিয়ান ভাইয়কে শুধু রিয়া হ্যান্ডসাম বলবে। অন্য কোনো মেয়ে বলবে না। (কাঁদো কাঁদো গলায়)
অন্য কোনো মেয়ে রিয়ার রিয়ান ভাইয়ের দিকে তাকাবে না। অন্য কোনো মেয়ে রিয়ার রিয়ান ভাইকে হ্যান্ডসাম বলবে না। এবার কাঁদিস না প্লিজ।
বাসায় চলেন।
হুম চল।
———————————–
রুমের জানালা খুলে দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে রিয়ান ভাইয়ের ফোনে একটা ভৌতিক উপন্যাস পড়ছি। রুমের জানালা খোলার কারণে পর্দার ফাঁক দিয়ে হালকা চাঁদের আলো রুমে প্রবেশ করছে। এতে একটা হরহর ফিল হচ্ছে। হঠাৎ আমার পাশে ধপ করে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে আমি চমকে ওঠি। চোখ বন্ধ করে দিলাম এক চিৎকার। এমা আমার চিৎকার বাইরে বের হচ্ছে না কেনো? তবে কী ভূত আমার গাড় মঠকে দিয়েছে। হাতে একটা চিমটি কাটলাম। না আমি বেঁচে আছি। তাহলে ভূত আমার বাকশক্তি কেড়ে নিয়েছে।মুখের ওপর কারো হাত আছে বুঝতে পারলাম। মুখ থেকে টান দিয়ে হাতটা সরিয়ে নিলাম।
রিয়ান ভাই। ( চিৎকার করে)
এভাবে চিৎকার করছিস কেনো?
আপনি আমাকে এভাবে ভয় দেখালেন কেনো? আরেকটু হলেই ভয়ে আমাক প্রাণ পাখি উড়াল দিতো।
রিয়ান ভাই আমার ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল রেখে বলে,
হুশশশ। এই রিয়ান থাকতে তার রিয়ার কিচ্ছু হতে দিবে না।
হুহ। আপনি কিছু বলতে আসছেন?
হুম ফোনটা দে আহিরকে কল দিবো।
ধরুন।
বিছানা থেকে নেমে রুমের লাইটটা অন করে দিলাম। রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে যাই। মনি সোফায় বসে স্টার জলসা সিরিয়াল দেখছে। আংকেল খবর দেখছে। এই বাসার ড্রয়িংরুমে ২ টা টিভি। কারণ মনি ৬ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত একটানা স্টার জলসা সিরিয়াল দেখে এক মিনিটের জন্যও কাউকে রিমুট দেয় না। আরেকটা টিভিতে আংকেল আর রিয়ান ভাই খেলা অথবা খবর দেখে। আমি গিয়ে আংকেলের পাশে সোফায় বসে পড়ি।
কেমন আছেন আংকেল?
তোমার এই সিরিয়াল পাগলি মনির জন্য কী ভালো থাকা যায়? তুমি যে আমাদের বাসায় আসছো আমাকে বলেই নাই। তা মামুনি তুমি কখন আসছো?
আমি তো সেই সকালবেলা আসছি। তুমি তো ডুমুরের ফুল হয়ে গেছো।
আজকে একটা মিটিং ছিল তাই ৭ টার সময় অফিসে উপস্থিত থাকতে হয়েছে।
আপনার হাতে কী হয়ছে আংকেল?
সামান্য একটু কেটে গেছে।
কতখানি কেটে গেছে আর আপনি সামান্য বলছেন।
আহা এতো চিন্তা করার কিছু হয়নি। এখন যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
হুম।
রুমে শুয়ে পড়লাম।
——————————–
রিয়া! এই রিয়া! উঠ
আজকে এতো তাড়াতাড়ি সকাল হয়ে গেলো।
আঙ্গে না ম্যাডাম। কালকে যে রোজা আপনি ভুলে গেছেন।
ওহ।
ঢুলু ঢুলু পায়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই রিয়ান ভাই আমার হাত ধরে টেনে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে যায়। আমার সামনে খাবারের প্লেট রাখছে সেইদিকে আমার কোনো খেয়াল নাই। আমি টেবিলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম। রিয়ান ভাই আমাকে টেনে উঠাই। রিয়ান ভাই আমার মুখের সামনে খাবার ধরে।
নে হা কর।
রিয়ান ভাই নিজেও খাচ্ছে আমাকেও খাইয়ে দিচ্ছে।
রিয়ান ভাই আর খাবো না।
তবু উনি কথা শুনার পাত্র না। আমাকে জোর করে খাইয়ে দিচ্ছে।
মনি আর আংকেল কই?
এই তো আমরা।
এতো দেরি হলো কেনো?
তুই তো জানিস তোর আংকেল কেমন অলস। পুরা ৩০ মিনিট লাগছে ঘুম থেকে তুলতে।
রিয়ান ভাই আর খাবো না। আর খেলে আমার পেট ফেটে যাবে।
আচ্ছা যা আর খেতে হবে না। এখন গিয়ে শুয়ে পড়।
আংকেল আপনি খাবেন কী করে? আপনার হাত তো কাটা।
চামচ দিয়ে খেতে হবে। আমার নির্দয় বউতো আমাকে খাইয়ে দিবে না।
মনি আংকেলের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায়।
আমি আপনাকে খাইয়ে দেই আংকেল।
তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে। (খুশি হয়ে)
হুম।
আমি আংকেলকে খাইয়ে দিচ্ছি।
আমার একটা মেয়ের শখ ছিল। সেই শখ তোমাকে দিয়ে পুরণ হলো। তোমাকে যদি সারাজীবনের জন্য এখানে রেখে দিতে পারতাম।
আর কিছু দিন ওয়েট করো পারমানেনটলি এই বাসায় চলে আসবে।
কথাটা বলে রিয়ান ভাই খাওয়া শেষ করে ওঠে যায়। আমি রিয়ান ভাইয়ের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাই। মনি আর আংকেল মাথা নিচু করে মিটিমিটি হাসছে।
————————-
পরেরদিন দুপুরবেলা রিয়ান ভাইকে নিয়ে আমাদের বাসায় যাই। বাসায় গিয়ে অবাক হয়ে যায়। কারণ আমাদের ড্রয়িংরুমে নিলয় ভাইয়ার বাবা-মা বসে আছে।
চলবে…..