অন্যরকম প্রেমানুভূতী পর্ব-০৯

0
786

#গল্পঃ_অন্যরকম_প্রেমানুভূতী
#Maisha_jannat_nura(লেখিকা)
#পর্ব_৯

তীব্র সিড়ি দিয়ে নিচে নামতেই দেখে তৃপ্তি অথৈয়ের সাথে বসে খেলা করছে, তীব্র বিরবির করে বলছে..

-ফাজিল মেয়ে আমাকে বোকা বানিয়ে চলে আসলো।

তীব্র অথৈয়ের পাশে গিয়ে বসে, তীব্রকে পাশে বসতে দেখে অথৈ তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-মামাই তোমার সাথে আমি কথা বলবো না, তোমার সাথে আমার কাট্টি।

তীব্র ভ্রু কুঁচকে অথৈয়ের দিকে তাকায় আর বলে..
-আমি কি করেছি, যে প্রিন্সেস আমার উপর রেগে আছে?

-এই কয়দিন তুমি কোথায় ছিলে হুম? জানো না প্রিন্সেস তোমার সাথে কথা না বললে ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারে না (অথৈ)

অথৈয়ের মুখে এমন মিষ্টি রাগের কথা শুনে তীব্র হেসে দেয়, অথৈকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে বলে..
-সরি আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে, এই দেখো মামাই কানে ধরেছে আর কখনও এমন কাজ সে করবে না।

-আচ্ছা ঠিক আছে (অথৈ)
বলেই তীব্রের গলা জড়িয়ে ধরে গালে পাপ্পি দেয় অথৈ, তীব্র অথৈকে কোল থেকে নামিয়ে দেয় অথৈ দৌড়ে উপরে চলে যায়।

এদিকে তৃপ্তি এতোসময় ধরে মামা-ভাগনীর দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া-ভালোবাসা দেখেছিলো আর মিটিমিটি হাসছিলো, অথৈ চলে গেলে তীব্র তৃপ্তির পাশে এসে বসে পরে, তীব্রকে পাশে বসতে দেখে তৃপ্তি একটু ভয় পেয়ে যায় এটা ভেবে একটু আগে সে তীব্রকে বোকা বানিয়ে পালিয়ে এসেছিলো এখন সেটার জন্য শাস্তি দিবে না তো, এসব ভাবছে আর বিরবির বলছে..

-পালা তৃপ্তি পালা নয়তো আজ তোর এই বজ্জাতের হাত থেকে আর রক্ষা পাওয়া হবে না।

বলেই উঠতে নিলে তীব্র তৃপ্তির হাত ধরে হ্যাচকা টানে নিজের কোলের উপর বসিয়ে নেয়, শক্ত করে তৃপ্তির হাত দুটো চেপে ধরে। তীব্রের এমন কাজে তৃপ্তি চোখ মুখ কুঁচকে নেয় আর মনে মনে বলে..

-যেটার ভয় পেয়েছিলাম সেটাই হলো, আব তু গেয়া তৃপ্তি।

তীব্র মুগ্ধ দৃষ্টিতে তৃপ্তির কুঁচকে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, কি মায়া আছে ওর এই মুখ জুড়ে একবার তাকালে আর নজর অন্যত্র ঘুরাতে ইচ্ছে করে না। তীব্রের কোনো আওয়াজ শুনতে না পেরে তৃপ্তি আস্তে করে চোখ মেলে দেখে তীব্র একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে, তৃপ্তি নিজের দৃষ্টি তীব্রের দিকে স্থির করে, খুব কাছে থেকে দেখছে দুজন দুজনকে। তৃপ্তি মনে মনে বলে..

-আগে কখনও ওনার দিকে এভাবে দেখি নি, কেন জানি না আজ আর নিজের দৃষ্টি ওনার থেকে সরাতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছে করছে না, সত্যি অনেক সুন্দর দেখতে উনি শুধু সুন্দর বললেও কম হবে আল্লাহ যেন খুব নিখুঁত ভাবে সৃষ্টি করেছেন ওনাকে, ফর্সা মুখে নীল বর্নের চোখ, সরু নাক, ভ্রু গুলো কতো ঘন আর টানা, স্ট্রেট করা চুল, গোলাপী রংয়ের ঠোঁট, ইসস ওনাকে দেখে এখন আমারই হিংসে হচ্ছে এতো সুন্দরতা একটা ছেলের জন্য বেমানান, মুখজুড়ে চাপ দাড়ি সৌন্দর্য টাকে আরো বেশি ফুটিয়ে তুলেছে।

২জনেই যেন একটা ঘোরের ভিতর চলে গেছে, এভাবেই বেশকিছু সময় কেটে যায়, তূর্য কাজ শেষ করে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই তৃপ্তি আর তীব্রকে এতোটা কাছাকাছি দেখে তাড়াতাড়ি নিজের দৃষ্টি ঘুরিয়ে জোড়ে কেশে দেয়, কাশির শব্দে তীব্র আর তৃপ্তির ঘোর কেটে যায় তৃপ্তি তাড়াতাড়ি করে তীব্রের কোল থেকে উঠে দৌড়ে উপরে চলে যায়, বেশ লজ্জাজনক পরিস্থিতির ভিতরে পরে গেছে সে।

এদিকে তীব্রের কোনো হেলদোল নেই সে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বসে আছে যেন কিছুই হয় নি, তূর্য তীব্রের পাশে বসে আর তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে…

-দাভাই তুই ঠিক আছিস তো?

তীব্র ভ্রু কুঁচকে তূর্যের দিকে তাকায় আর বলে..
-কেন আমাকে দেখে কি আনফিট মনে হচ্ছে তোর?

তীব্রের এমন প্রশ্নে তূর্য কি বলবে বুঝতে পারছে না, নিজেকে সামলে নিয়ে বলে..

-তুই কি তৃপ্তিকে ভালোবাসিস দাভাই?

তূর্যের প্রশ্নে তীব্র অবাক হয় না, স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলে..
-ভালোবাসি কিনা জানি না, তবে ওকে আমার চাই যেকোনো মূল্য, ওও শুধু আমার অন্য কারোর নজর ও সহ্য হবে না যদি কেও সেই সাহস করে তার চোখ তুলে ফেলবো।

তীব্রের কথায় তূর্য ও অবাক হয় না কারণ সে খুব ভালো করে জানে তীব্র যখন যেটা নিজের বলে মনে সেটা যেভাবেই হোক করেই নিবে, তূর্য আবারও প্রশ্নসিক্ত কন্ঠে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-তৃপ্তি যদি রাজি না হয়?

-যদি ভালো কথায় রাজি হয়ে যায় তাহলে ওর জন্যই সেটা ভালো হবে, আর রাজি না হলেও সমস্যা নেই তীব্র চৌধুরী নিজের জিনিস কি করে নিজের করে নিতে হয় তা খুব ভালো করে জানে, সেচ্ছায় না পেলে জোড় করে হলেও নিজের করে নিবো আমি তৃপ্তিকে (তীব্র)

-ওও তো তোর রাগের সাইড সম্পর্কে অঙ্গাত,
বেশি রুড হয়ে পড়িস না ওর প্রতি (তূর্য)

-তুই জানিস রাগের সময় আমার মাথা কাজ করে না, ওও ভালোভাবে থাকলে কখনও আমার খারাপ সাইড ওকে দেখতে হবে না বাট যদি ভালোভাবে না থাকে তাহলে জানি না কি হবে তবে ভালোটা যে হবে না এতোটুকুও বলতে পারি (তীব্র)

তীব্র শান্ত গলায় শরীর কাঁপানো কথায় এবার তূর্য কিছুটা ভয় পেয়ে যে মনে মনে বলে..
-জানি না কি আছে মেয়েটার ভাগ্যে, দাভাই যে খুব বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে ওর প্রতি এই ঘোর কখনও কাটার নয়।

-আচ্ছা এসব কথা বাদ দে, এখন বল অফিসের কি অবস্থা? সিংগাপুরের থেকে যে প্রজেক্ট টা এসেছিলো সেটার কাজ ঠিকঠাক ভাবে হচ্ছে তো? (তীব্র)

-হুম হচ্ছে মোটামুটি, তোকে ছাড়া অফিসটাও কেমন যেন অগোছালো হয়ে গেছে এই কদিনেই, কবে থেকে অফিসে আসবি তুই? আমি এতো প্রেসার একা সামলাতে পারছি না (তূর্য)

-কাল থেকেই যাবো (তীব্র)

-বাঁচিয়ে দিলি দাভাই, এই কয়দিন যে কিভাবে কাটলো আমার উফফ এতো প্রেসার আমি নিতে পারি না (তূর্য)

-আচ্ছা এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট কর, আমি একটু দাদুর কাছে যাবো (তীব্র)

-আচ্ছা ঠিক আছে (তূর্য)

বলেই তূর্য ড্রয়িংরুম থেকে চলে যায় নিজের রুমের উদ্দেশ্যে, তীব্র ও উঠে হাটা ধরে আমজাদ চৌধুরীর রুমের দিকে। আমজাদ চৌধুরী রুমের ভিতর পাইচারী করছেন, বিছানার উপর সুবর্ণা চৌধুরী বসে বসে আমজাদ চৌধুরীর কান্ড দেখছে, একটু পর তীব্র আমজাদ চৌধুরীর রুমে প্রবেশ করে, দাদুকে এভাবে পায়চারী করতে দেখে সে বেশ অবাক হয় পাশে সুবর্ণা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে ইশারায় জানতে চায় কি হয়েছে, সুবর্ণা চৌধুরী মাথা নাড়িয়ে বলে সে কিছু জানে না। তীব্র আমজাদ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-বুড়ো কি একটু বেশি খাবার খেয়ে ফেলেছে আজকে যে এভাবে পায়চারী করে তা হজম করার চেষ্টা করছে।

তীব্রের কথায় আমজাদ চৌধুরী পায়চারী থামায়, তীব্রের দিকে ভ্রুর কুঁচকে তাকিয়ে বলে..
-আমি এখন এতো খাবার খাই না।

-তাহলে পায়চারী করছো কেন? (তীব্র)

-একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করছিলাম (আমজাদ চৌধুরী)

তীব্র আমজাদ চৌধুরীর কাছে এসে হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দেয় আর নিজেও পাশে বসে পরে, তারপর বলে..

-কি বিষয় নিয়ে এতো চিন্তা তোমার? (তীব্র)

আমজাদ চৌধুরী সুবর্ণা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলে..
-তৃপ্তির কাছে যাও তো, মেয়েটা এসেছে থেকে একা একা হয়ে গেছে।

-ঠিক আছে (সুবর্ণা চৌধুরী)

বলে উঠে চলে যায় তৃপ্তির কাছে, আমজাদ চৌধুরী আবার ও বলে..
-দাদুভাই তোকে মারার পিছনে তুই কি ARC কোম্পানির CEO কে সন্দেহ করছিস?

তীব্র স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলে
-সন্দেহের কিছু নেই দাদু, এটা ওর ই কাজ আমি ১০০% শিউর।

-কিন্তু তোর কাছে তো কোনো প্রমাণ নেই,
কিসের ভিত্তিতে তুই ওকে ধরবি? (আমজাদ চৌধুরী)

-সেদিন রাতে আমাকে যখন ওরা মারছিলো তখন আমার সেন্স ছিলো না, আমি তৃপ্তিকে আলাদা ভাবে জিঙ্গাসা করেছিলাম আমাকে মারার সময় ওও যাদের দেখেছিলো পরবর্তীতে তাদের দেখলে চিহ্নিত করতে পারবে কি না, ওও হ্যা সূচক জবাব দিয়েছে আর এটাই আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট।

-কিন্তু… (আমজাদ চৌধুরী)

-কোনো কিন্তু নয় দাদু, এখন শুধু সময় আর সুযোগের অপেক্ষা, সঠিক সময় হলে ওদের এক এক করে আমি বের করবো, এতোটা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ওদের দিবো পরবর্তীতে এমন কাজ করার আগে ওদের আত্না কেঁপে উঠবে (তীব্র)

তীব্রের কথায় আমজাদ চৌধুরী বেশ ঘাবড়ে যায়, এই ছেলেটা একেবারেই অন্যরকম হয়েছে কি করে যে একে একটু শান্ত করানো যায়, আল্লাহ জানে কি হবে।

-আচ্ছা দাদু তুমি এসব নিয়ে ভেবো না, আমার তোমার সাথে অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলার ছিলো (তীব্র)

-কি বিষয় (আমজাদ চৌধুরী)

-তৃপ্তির বিষয়ে (তীব্র)

আমজাদ চৌধুরী নিজের দৃষ্টি তীব্রের উপর স্থির করে প্রশ্নসিক্ত কন্ঠে বলে
-দিদি ভাইয়ের বিষয়ে কি বলবি বল।

-তৃপ্তি আগে কোথায় থাকতো, সেইসব জানতে চাই (তীব্র)

আমজাদ চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তৃপ্তির বিষয়ে সবকথা তীব্রকে বলে, সবটা শোনার পর তীব্রের রাগে ফর্সা মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে, সম্পূর্ণ শরীরে রক্ত যেন টগবগ করে ফুটছে, তীব্র ওর দৃষ্টি মেঝের উপর স্থির করে কিছু একটা ভেবে আমজাদ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-আমি আসছি দাদু।

আমজাদ চৌধুরী কিছু বলার আগেই তীব্র রুম থেকে বেরিয়ে আসে……

#চলবে……….

#গল্পঃ_অন্যরকম_প্রেমানুভূতী
#Maisha_jannat_nura(লেখিকা)
#বোনাস

তীব্র রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে আমজাদ চৌধুরীর রুম থেকে বেড়িয়ে ছাদে চলে যায়, ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে ওর মাথায় শুধু এতোটুকুই চিন্তাই ঘুরছে তৃপ্তিকে গত ১বছরে তারা কতোটা কষ্ট দিয়েছে, আর মিথ্যে অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে এর শাস্তি ওদের সবাইকে পেতে হবে আর সেটা কতোটা ভয়ংকর হবে তা নিয়ে তীব্রের কোনো মাথা ব্যথা নেই, তীব্র কিছুতেই নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হচ্ছে না, কিছু একটা ভেবে সে ছাদ থেকে নেমে তৃপ্তির রুমের উদ্দেশ্যে হাটা ধরে।

তৃপ্তির রুমের সামনে এসে দেখে তৃপ্তি বিছানায় বসে আছে, তীব্র রুমে প্রবেশ করে তৃপ্তির সামনে এসে দাঁড়ায়, তৃপ্তি বিছানায় বসে আপনমনে পা দুলাচ্ছিলো হঠাৎ তীব্রকে এভাবে সামনে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায়, বিছানা থেকে উঠে দাড়িয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগে তীব্র তৃপ্তিকে হ্যাচকা টানে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তীব্রের রাগ, কষ্ট কমানোর ঔষধ যেন এতোদিনে সে খুজে পেয়েছে তৃপ্তিকে বুকে জড়িয়ে নেওয়ায় তীব্রের যেন সব রাগ নিমিষেই শেষ হয়ে যায়, অনেক সময় এভাবেই সে তৃপ্তিকে নিজের সাথে জড়িয়ে রাখে, তীব্রের এমন কাজে তৃপ্তি বোকাবনে যায় কিন্তু তীব্রকে কিছু বলে না।

একটুপর তীব্র তৃপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে বিছানায় বসে পড়ে, তৃপ্তি তীব্রের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে,সে বুঝে উঠতে পারছে না তীব্র কেন তাকে হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরলো, কিছুসময় পর নিজেকে সামলে নিয়ে তৃপ্তি তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-আপনি ঠিক আছেন তো?

তীব্র নিশ্চুপ হয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে, নিজের প্রশ্নের কোনো উত্তর না পেয়ে তৃপ্তি আবার ও বলে..

-কিছু বলছেন না যে, হঠাৎ এভাবে..

তৃপ্তি পুরো কথা শেষ করার আগেই তীব্র তৃপ্তির হাত ধরে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে নেয়, তীব্রের দৃষ্টি তৃপ্তির উপর স্থির, তৃপ্তি তীব্রের এই দৃষ্টির ভাষা বুঝে উঠতে পারছে না কি হয়েছে মানুষটার হঠাৎ কেনোই বা এমন করছেন, নীরবতার দেওয়াল ভেঙে তীব্র শান্তগলায় তৃপ্তিকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-তোর ভিতরে অনেক কষ্ট জমে আছে তাই না পিচ্চি?

তীব্রের এমন প্রশ্নের মানে বুঝতে সক্ষম হচ্ছে না তৃপ্তি, প্রশ্নসিক্ত কন্ঠে তীব্রকে বলে..
-কই না তো, আমি বেশ ভালো আছি।

-এতো নিখুঁত ভাবে ভালো থাকার অভিনয় কিভাবে করতে পারিস তুই? এই অল্প বয়সেই কতো কষ্টের সময় পার করেছিস তুই কিভাবে এতোটা সহ্য করেছিস বলবি আমায়? (তীব্র)

তৃপ্তি বেশ বুঝতে পারছে তীব্র ওর অতীত সম্পর্কে জানতে পেরেছে তাই এসব বলছে, তৃপ্তি ওর দৃষ্টি তীব্রের থেকে সড়িয়ে ওর কোল থেকে উঠতে নিলেও উঠতে পারে না তীব্র আরো শক্ত করে তৃপ্তিকে নিজের কাছে বসিয়ে নেয়। তৃপ্তি তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-বাদ দিন সেসব কথা, আমার ভাগ্যে যা ছিলো তাই হয়েছে হয়তো আল্লাহ আমাকে সবটা সহ্য করে নেওয়ার শক্তি দিয়েছিলেন তাই পেরেছি।

-কিন্তু আমি যে মানতে পারছি না আমার পিচ্চির এই ছোট্টো বুকে এতো কষ্টের ভীর জমাট বেঁধে আছে যা সে কাওকে বুঝতে দেয় না নিজের ভিতরে রেখে সবার সামনে হাসিমুখে চলাফেরা করে (তীব্র)।

তৃপ্তি ছলছল দৃষ্টিতে তীব্রের দিকে তাকিয়ে আছে ভাবছে এই মানুষটা এতোটা গভীর ভাবে কি করে তাকে বুঝতে পারে, তৃপ্তির ছলছল দৃষ্টি দেখে তীব্র বলে..

-দেখ পিচ্চি একদম কান্না করবি না, এখন আমায় এটা বল তোকে যেই লোকটা মিথ্যে অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো তার নাম কি?

-আবির..

তীব্র কিছুটা অবাক হয়ে বলে..
-আবির চৌধুরী?

তৃপ্তি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়, তীব্র আবার ও বলে
-ওর ওয়াইফ এর নাম কি?

-রেজিয়া সুলতানা (তৃপ্তি)

রেজিয়া নাম শুনে তীব্রের আর চিনতে বাকি রইলো না এই আবির চৌধুরী কে, এই আবির চৌধুরী ই ARC কোম্পানির CEO সেদিন রাতেই ওর লোকেরাই তীব্রকে মেরেছিলো, রাগে তীব্রের চোখ মুখ লাল বর্ন ধারণ করেছে, নিজের মারের প্রতিশোধের থেকে তৃপ্তিকে দেওয়া কষ্ট আর অপমান এর প্রতিশোধ নেওয়ার আগুন যেন তীব্রের ভিতর জ্বলছে। তীব্র তৃপ্তিকে নিজের কোল থেকে উঠিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয়, তৃপ্তি শুধু অবাক হয়ে তীব্রের কাজ দেখছে, তীব্র তৃপ্তিকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-আজ তোকে কিছু কথা বলি মন দিয়ে শোন, জানি না কথাগুলো তোর কাছে কেমন লাগবে বা তুই কিভাবে নিবি তবুও বলছি।

-হুম বলুন (তৃপ্তি)

-কখনও কোনো মেয়ের প্রতি আমি এতোটা ইফেক্টিভ হই নি যতোটা তোর প্রতি হয়েছি, দিনরাতের বেশিরভাগ সময় আমার মাথায় শুধু তোকে নিয়েই চিন্তাভাবনা ঘুরে, আমি খুব বাজে ভাবে তোর আসক্তিতে পরে গিয়েছি, এটা কেমন অনূভূতি আমি নিজেও জানি না, এটাকে প্রেমের অনূভূতি বললে হয়তো বলবো তোর প্রতি আমার #অন্যরকম_প্রেমানুভূতি রয়েছে, তোর মায়াভরা মুখের দিকে একবার তাকালে নিজের দৃষ্টি অন্যত্র সরানোর ইচ্ছে শক্তি নিজের ভিতর কাজ করে না।

তুই আমাকে নিয়ে কেমন অনুভব করিস আমি তা জানি না আর জানতেও চাই না, আমার তোকে চাই আমার নিঃশ্বাস-প্রশাসে মিশে গেছিস তুই, অন্যরকম নেশা তুই আমার, যা আমি সবসময় নিজের খুব কাছে থেকে অনুভব করতে চাই জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। তোকে যারা বিন্দুমাত্র কষ্ট দিবে তাদের জন্য কখনও ভালো কিছু অপেক্ষা করবে না। তোর প্রতি কেও এতোটুকুও নজর দিলে আমি তার চোখ উপরে ফেলবো, তাদের জন্য খুবই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে, তুই আমার এসব কথাকে পাগলামো বলবি না কি বলবি সেটা তোর বিষয় বাট আমি এমনই (তীব্র)

কথাগুলো বলে তীব্র চুপ হয়ে যায়, এতোসময় ধরে তীব্রের কথাগুলো শুনে তৃপ্তি যেন কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে, মনে মনে ভাবছে

-এই কয়েকদিনের পরিচয়ে উনি এভাবে আমার প্রতি আসক্ত হয়ে পরেছেন। কি বলবো আমি ওনাকে ওনার কথাগুলো যেন আমার ভিতরটা পুড়িয়ে দিচ্ছে এ কেমন অনূভুতি আমি নিজের মাঝে অনুভব করছি আমি বুঝে উঠতে পারছি না। আমিও কি ওনার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছি, আমার তো ওনাকে এমনটা বলতে মোটেও ইচ্ছে করছে না যে এসব কি পাগলামি কথা বলছেন এসব আমার পছন্দনীয় নয়, তাহলে কি এটাই আমার ওনার প্রতি #অন্যরকম_প্রেমানুভূতী।

তৃপ্তির নীরবতা তীব্রের জন্য বেশ কষ্টকর হয়ে উঠছে, তীব্র নিজের ছলছল দৃষ্টি তৃপ্তির দিকে স্থির করে তৃপ্তিকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-পিচ্চি আমাকে ফিরিয়ে দিস না প্লিজ, আমি সত্যি ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যাচ্ছি তোকে যে আমার খুব করে প্রয়োজন আমার নেশা তুই।

তৃপ্তি এবারও নিশ্চুপ হয়েই তীব্রতর দিকে তাকিয়ে আছে, এবারও তৃপ্তির কোনো সাড়া না পেয়ে তীব্র আর কিছু না বলে বিছানা থেকে উঠে চলে যেতে নিলে তৃপ্তি তীব্রের হাত ধরে নেয়। তীব্র পিছন ঘুরে তৃপ্তির দিকে তাকায়, তৃপ্তি কিছু না বলে বিছানা থেকে নেমে তীব্রকে জড়িয়ে ধরে, তৃপ্তির এমন কাজে তীব্রের আর বুঝতে বাকি রইলো না তার পিচ্চি ও তার প্রেমে আসক্ত হয়ে পরেছে, তীব্রের মুখে আজ প্রাপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে পরম যত্নে সে তার পিচ্চিকে নিজের বুকের মাঝে মিশিয়ে নেয়। এভাবেই বেশ কিছু সময় কেটে যায়, তীব্র তৃপ্তিকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-ভালোবাসিস আমায় পিচ্চি?

তীব্রের কথায় তৃপ্তি কিছুটা লজ্জা পায় আরো গভীর ভাবে তীব্রের বুকে নিজেকে মিশিয়ে নিতে চায়, তৃপ্তির এমন কাজে তীব্র আবারও বলে..

-ইসস আমার পিচ্চিটা বুঝি লজ্জা পেয়েছে।

তীব্রের দুষ্টুমি মাখা কথায় তৃপ্তি নিজের বা হাত দিয়ে তীব্রের বুকের পাশে আসতে করে চিমটি কাটে, তীব্র কিন্ঞ্চিত ব্যথায় আউচ করে উঠে বলে..

-ব্যথা পেলাম তো।

তৃপ্তি তীব্রের বুক থেকে নিজের মাথা উঠিয়ে তীব্রের মুখের দিকে নিজের দৃষ্টি স্থির করে ঠোট উল্টিয়ে বলে..

-বেশি ব্যাথা পেয়েছেন? আমি তো আস্তে করে দিয়েছে।

তৃপ্তির এমন বাচ্চামো মুখের কথায় তীব্র যেন আরো গভীর নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে, নিজের দুহাতে তৃপ্তির মুখ উচু করে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলে..

-উহুহহ বেশি ব্যথা পাই নি তবে একটু পেয়েছে, কিন্তু এখন তোর এই বাচ্চামো মুখের কথায় সেই ব্যথাও পুরোপুরি কেটে গেছে।

তীব্রের কথায় তৃপ্তি হেসে দেয় আবারও তীব্রের বুকে নিজের মুখ লুকিয়ে বলে…

-ভালোবাসি..

তৃপ্তির মুখে ভালোবাসি কথাটি শুনে তীব্র অনেক খুশি হয়, দুহাতে আবারও তৃপ্তিকে জড়িয়ে নিয়ে বলে..

-আমিও আমার পিচ্চিকে ভালোবাসি, অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি……

#চলবে……….