অন্যরকম ভালোবাসা পর্ব-০৪

0
743

#অন্যরকম_ভালোবাসা 💓
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৪

এলোমেলো হয়ে আয়ানের বুকে ঘুমিয়ে আছে ইশরা।। ভালোবাসার মানুষটির কাছাকাছি থাকলে পৃথিবীতে আর কিছুর প্রয়োজন নেই।।চারদিকে আযানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে।। ঘুমের মাঝে আযানের ধ্বনি কানে আসতেই একটু একটু নড়ে উঠছে সে।। রৌদ্র জুবায়ের এর বাড়ি থাকতে প্রতিদিন ভোরে ফজরের আযান দিলে ,, ঘুম ভেঙ্গে নামাজ আদায় করে নিতো ।।নামায় আদায় করতে করতে এখন ফজরের সময় ঘুম ভাঙ্গা রোজকারের নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।।
পিটপিট করে চোখ খুলে নিজেকে আয়ানে বুকে আবিস্কার করলো সে।। নিজের ঘুমের দোষ ভেবে উঠে দাঁড়ালো।। ধীর পায়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।।অযু করার উদ্দেশ্যে পানির টিউভ অন করতে নিলে চোখ আটকে গেল বেসিনের আয়নায়।। কিছুক্ষণের জন্য স্তব্দ হয়ে হা করে আয়নার দিকে তাকিয়ে রইলো ।।পরক্ষনে নিজের অবস্থা উপলব্ধি করতে পেরে জোরে দিলো এক চিৎকার।।
ঘুমের মধ্যে ঘর কাঁপানো চিৎকার শুনে ঘুম উবে গেল আয়ানের ।।।ধরপর করে উঠে বসতে নিলে,, সবকিছু আরো গেটে ঘ হয়ে গেল।।ঠাস করে ফ্লোরে পড়ে নাজেহাল অবস্থা।। এরমধ্যে চপল পায়ে ওয়াশরুমে দরজা খুলে বাহিরে বেরিয়ে এলো ইশরা।।পুরো রুমে অন্ধকার বিরাজ করলেও,, ওয়াশরুমের আলোয় চারপাশটা আলোকিত হয়ে গেছে।।এক হাত কোমরে চেপে ,, অন্যহাতে হাটু ভড় দিয়ে করুন দৃষ্টিতে ইশরার দিকে তাকিয়ে আছে।।
বুঝতে বাকি নেই ইশরা চেঁচিয়েছে।।

— গলা তো নয়,, যেন বাঁশ ।। (বিরবির করে আয়ান) দয়া করে বলবেন এভাবে চেচাচ্ছো কেন ??

— চেঁচাবো না তো কি করবো।।(রাগি দৃষ্টি দিয়ে ) আমার শাড়ি কোথায় ??আপনি কাল রাতে আমার সাথে কি করছেন ?? ঘুমন্ত অবস্থায় আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছেন ,, যেটা একদম ঠিক নয়।।আর আমার চুলে তেল দিয়েছেন কেন?? কালকে পার্লারের মেয়েরা,, আমার চুল..

— যত্তসব ফাউল কথা বার্তা ।। তোমার শাড়ি ,, গহনা পড়ে ঘুমাতে অসুবিধা হচ্ছিলো তাই খুলে রেখেছে !! চুলগুলো পাখির বাসার মতো দেখাচ্ছিলো ,,যখন তখন পাখিগুলো ভুল করে তোমার মাথায় এসে ঢুকতো।।(ইশরাকে থামিয়ে দিয়ে আয়ান)

— ওয়াট ননসেন্স।। আমার চুল পাখির বাসা ।।(একটু থেমে আবার)সে যাই হোক ,, না বলে একটা মেয়ের শাড়ি খুলতে লজ্জা করে না আপনার।।।আমি আপনার নামে মামলা করবো।।

— তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে চলো আমার সাথে ।।আমি নিজেই তোমাকে হেল্প করছি।।

কথাটা বলে বেডের পাশ থেকে শাড়িটা তুলে ইশরার হাতে ধরিয়ে দিলো।। ইশরার কথার অপেক্ষা না করেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল।।আয়ান ভালো করেই জানে ইশরা তার এফ এম রেডিও একবার অন করলে আজ আর থামবে না।। শাড়ির দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ।।

________________

আয়ান ফিরে এসে দেখলো এখনো ইশরা বেডের উপর বসে আছে।।শাড়িটা এখনো হাতে ।।একটু আগে যেমনটা দেখে গিয়েছিলো,,, তেমনটাই আছে।। নিজের কৌতুহল মেটাতে প্রশ্ন করলো….

— তখন তো নামাজ পড়তে উঠলে ,,তাহলে এখন এভাবে সং বসে আছো কেন ?? এখন আবার এটা বলো না,,, শাড়ি পড়তে পারো না।। সোজাসুজি বলো আমার হাতে পড়তে চাও!!😎😎 (ভাব নিয়ে আয়ান)

ভেংচি কাটলো ইশরা,,নেহাৎ ডাক্তার ঝুঁকতে বারণ করছে তাই।। নাহলে এতোক্ষণে পাঁচ থেকে দশটা শাড়ি অন্যের হেল্প ছাড়াই পড়ে নিতো।।

— তাড়াতাড়ি আমার দিকে এগিয়ে আসুন ।। তারপর শাড়িটা পড়িয়ে দিন ।।আপনি পড়িয়ে দিবেন বলে আমি এখনো শাড়ি পড়িনি।। যত্তসব (প্রিন্ট করে ইশরা)
ডাক্তার ঝুকতে বারণ করছে?? তাই আমি শাড়ি একা একা পড়ি না।।ঐ বাড়িতে প্ল্যাজু আর টি শার্ট পড়ে ছিলাম।। এখানে তো প্ল্যাজু ,,টি শার্ট কিছু নেই ।।তাই বসে আছি।।

আয়ান কথা বাড়ালো না ,, কাবার্ড খুলে নিজের একটা টি শার্ট আর একটা পেটিকোট বের করে ইশরার হাতে ধরিয়ে দিলো।।ইশরা ও কোনো উপায় না পেরে পেটিকোট আর টি শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে যা দেখলো ,, তাতে চোখ চড়কগাছ।।আয়ান জায়নামাজ বিছিয়ে ,, মাথায় টুপি পরে দাঁড়িয়ে আছে ।।ইশরাকে বের হতে দেখে ,, নিজে এগিয়ে গেল।। জায়নামাজে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নামাজ
আদায় করে নিলো একসাথে।।।।

______________________

ড্রয়িং রুমে বসে মাথায় তেল দিচ্ছি অনয়া।। তার সামনে টিভি অন করা।। কিন্তু সেদিকে দৃষ্টি নেই তার।।দৃষ্টি স্থির হাতে থাকা ফোনের দিকে।।আঢ় চোখে বারবার দৃষ্টি রুমের এদিক ওদিক।।যখন তখন তার বাবা মা ,, ভাই কিংবা অন্যকেউ আসতে পারে।।
রুমের ভেতরে ওয়াইফাই সমস্যা থাকার কারনে অনলাইনে ডোকা যাচ্ছে না।।যার কারনে কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে দুয়ানের সাথে ।।তাই তেল দেওয়া+টিভি দেখার অজুহাত দিয়ে ড্রয়িং রুমে আসা।। কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না তার কাজ ।।বাড়িতে এসে হাজির হলো রৌদ্র জুবায়ের আর তমোনা জুবায়ের।।কালকে একবার ওগোছালো ভাবে মেয়েকে দেখেছে ।।কিছুতেই মায়ের অবুঝ মন শান্ত করতে পারছে না।।তাই মেয়েকে দেখতে হাজির হয়েছে।।সামনে হঠাৎ তাদেরকে দেখে হকচকিয়ে গেল অনয়া।।ব্যস্তহাতে ফোন কাটতে নিলে ,, হাত থেকে ফোনটা ছিটকে নিচে পড়ে গেল।। তাড়াতাড়ি নিচ থেকে ফোনটা তুলে ফ্ল্যাসলাইট অফ করে দিলো।। কাঁপা কাঁপা গলায় সালাম দিলো।।বাবা মা দাদু দিদাকে ডাক দেওয়ার আগেই তারা হাজির।। ড্রয়িং রুমে থেকে অচেনা মানুষের গলার আওয়াজ পেয়ে আজাদ আহম্মেদ, তিথি আহম্মেদ সেখানে আসে।। বাবা মাকে ডাকার পরিবর্তে ভাবীকে ডাক দিতে ছুটলো সে।।
চার-পাঁচ সিড়ি পেরুতেই হাত থেকে খানিকটা তেল নীচে পড়ে গেল।।সেদিকে তোয়াক্কা না করে আবার দূরত্ব পায়ে হেঁটে গেল ইশরা আর আয়ানের রুমের দিকে।।
_____________________

সারাদিন বেলকেনি থেকে রুমে আবার রুম থেকে বেলকেনি করে সময় পাড় করেছে ইশরা।। দুপুরে শাওয়ার নিয়ে আবার একই ধরনের জামা কাপড় পরিধান করছে ।। দুপুরের খাবারটা আয়ান রুমেই এনে দিয়েছিলো ,,তাই সেখানে খেয়ে নিয়েছে।।
এখন একলা একলা বেলকেনিতে গোধূলি দেখছে ।।
দুপুরের খাবারের পর আয়ান বাড়ি থেকে বেরিয়েছে।। কোথায় গেছে বলে যায় নি,, শুধু বলেছে আসতে আসতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যাবে।।রুম থেকে বের হতে বারণ করছে।। প্রয়োজনে অনয়া,,তিথি কিংবা দিদাকে ডাকতে বলেছে।।তেমন কোনো প্রয়োজন পড়ে নি ,, তাই ডাকা হয়নি ।।যাওয়ার একটা কথা বারবার রিপিট করেছে ,, যাতে ইশরা শাড়ি না পড়ে।।আগের মতো শাড়ি পড়ে থাকার অভ্যাস নেই,, বিধায় পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।। বিকেলের দিকে তিথি আহম্মেদ এসে গল্প করেছে,, কিন্তু দিদা আসেনি ।।সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলে তার হাঁটু ব্যাথা বাড়ে।। পেছন থেকে মিষ্টি একটা ডাকে ইশরা ভাবনার জগৎ থেকে ফেলে।।

— ভাবী !! আঙ্কেল আন্টি এসেছে(রুমে ঢুকতে ঢুকতে অনয়া)

আঙ্কেল আন্টি কথাটা মাথায় ঢুকলো না ইশরার।। নিজের কৌতুহল মেটাতে সাথে সাথে বললো..

— কে এসেছে অনু???

— তোমার বাবা মা।।নিজের মেয়েকে মিস করছিলো ,, তাই দেখতে চলে এসে…

আর কোনো কথা কান অবধি পৌঁছালো না।।কালকে বাবা মাকে দেখেছে ,,মনে হচ্ছে কতো জনম হয়ে গেছে।।না চাইতেও ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।। এতোক্ষণ হয়তো এই কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করছিলো।।
প্রতিদিন বিকেলে মায়ের সাথে সময় কাটানো ইশরার নেশা হয়ে গেছে।। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল রুম থেকে।। মুহুর্তের মধ্যে ভুলে গেলো পড়নের পোশাকের কথা।। সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ মা বাবাকে পরখ করে নিলো।। তারপর আবার নামতে শুরু করলো।। “”মা-বাবা তোমা…!! মুখের কথা আর শেষ করতে পারলো না।সেখানেই থেমে গেল।।তেল পড়া সিঁড়িতে পা রাখতেই স্লীপ করে পড়ে গেল।।মেয়েকে দেখে মুখে হাসি ফুটলেও ,, এখন বিষাদে মন ভরে গেল রৌদ্র জুবায়ের আর তমোনা জুবায়ের এর মুখে।। মুহুর্তে সকলের বুক কেঁপে উঠলো।।তিনটা সিঁড়ি বেয়ে পড়ে যেতে নিলেই হাত বাড়িয়ে সিঁড়ির রেলিং ধরলো ইশরা।।সাথে সাথে মাথা গিয়ে ঠেকলো রেলিং এ ।।মাথা আর সরানো না।। রেলিং এ মাথা থাকা অবস্থায় পরপর কয়েকবার চেপে রাখা শ্বাস ,,,,জোরে জোরে নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।। কিন্তু ব্যর্থ হলো,, শক্তিহীন হয়ে গেছে শরীর ।।দূর থেকে এমন দৃশ্য দেখে হাত থেকে শপিং ব্যাগগুলো নিচে পড়ে গেল আয়ানের।। ইশরার জন্য জামা কাপড় আর ছোট বেবীর জন্য খেলনা আনতে মূলত বেরিয়ে ছিলো সে।। ফিরে এসে এমন অবস্থায় দেখবে ভাবতে পারে নি আয়ান।। শপিং ব্যাগ পরার মৃদু শব্দে হুস পেরে তার।। দৌড়ে ইশরার পাশে বসে ,, আলতো হাতে মাথাটা নিজের বুকে রাখলো।। কপালের বামপাশের কোণে কালচে দাগ পড়েছে।।ইশরা নিজের শক্তিহীন হাতটা আয়ানের গলার পেছনে রাখলো।। এতোক্ষণ হয়তো সে আয়ানের মতো কাউকে আসার করেছিলো।।আয়ান নিজের ঠান্ডা হাতটা ইশরার গালে রাখলে ,, ইশরা তেজহীন অন্যহাত দিয়ে আয়ানের হাত টেনে নিজের পেটের ওপর রাখে।।ঠোঁট দুটি হালকা নেড়ে বলে উঠলো,,

— “”আয়ান ,, আমাদের আয়রা””

— কিছু হবেনা আমাদের প্রিন্সেস এর!!

কথা বাড়ালো না আয়ান ।।ইশরাকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা দিলো রুমের উদ্দেশ্য।।সেখানে বাঁধলো আরো বিপত্তি।আয়ানের পা স্লীপ করে দুজনে একসাথে নিচে।।
বাহির থেকে তীব্র আঘাত পেয়ে ,, ভেতরে থেকে অনবরত আঘাত করছে ছোট আয়রা।।সেই যন্ত্রনা সহ্য করতে নিজের মাথার চুল টেনে ধরেছে ইশরা ‌।। বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারলো না ,,তার আগেই জ্ঞান হারালো।।

চলবে..🎀🎀