অন্যরকম ভালোবাসা পর্ব-০৮

0
277

#অন্যরকম_ভালোবাসা
পর্ব ৮
#মৌমিতা_শবনাম

রাদ আজ অফিসে যেতে পারে নি কারণ সকাল থেকে রাইদার প্রচন্ড জ্বর। তন্নিকে একা সামলাতে হচ্ছে অফিসের সব কাজ। কাজের চাপে তন্নি সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। সবার কাছ থেকে ডিজাইন কালেক্ট করতে হয়েছে। এতো এতো ডিজাইন কন্ট্রাক্ট করা তার মাঝে আরো অনেক ডিজাইন বাকি যেগুলো বেস্ট ডিজাইন সেগুলো সিলেক্ট করতে হবে ক্লাইন্ট এর সামনে দেখানোর জন্য।

রাদ থাকলে তন্নির কাজটা সুবিধা হতো। তন্নি বেশ কয়টা ডিজাইন সিলেক্ট করে রাদকে কল দেয়। রাদ কল ধরতেই তন্নি বলে,–” স্যার কয়েকটি ডিজাইন সিলেক্ট করেছি এখন আপনি দেখলে ভালো হতো।”

রাদ বলল,–” হুম ওকে তাহলে তুমি ডিজাইনগুলো নিয়ে এখানে চলে আসো।”

তন্নি সংকোচ বোধ করে বলে,–” আপনার বাসায়?”

রাদ ব্যাপারটা বুঝতে পারে বলে,–” আমার বোন আছে বাসায় এসে পড় সমস্যা নেই।”

তন্নি একটু লজ্জা পায়। আর কিছু না বলে রাদের দেওয়া ঠিকানায় সে চলে যায়।

——-
রুনা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ফাঁসি নেওয়াতে মাথায় রক্ত উঠে গেছে। জ্ঞান ফিরেছে ঠিকই কিন্তু একটু পর পর অজ্ঞান হয়ে পড়ছে। নিরব পাশে অসহায় চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তার পাশেই বিরক্ত নিয়ে বৃষ্টি ফোন টিপছে। নিরব বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে– ” আজকে অন্তত ফোনটা না টিপো।”

বৃষ্টি কেপে যায়। রাগে কটমট করতে করতে বলপ,–” মানে কি নিরব তোমার মা এমন একটা কাজ করছে তোমার এটেনশন পেতে সেখানে আমি ডিস্টার্ব না করে ফোন টিপছি।”

নিরব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে– ” হুম টিপো ফোন। ”

বৃষ্টি ভেংচি কেটে আবারও নিজের মতো ফোন টিপতে থাকে। নিরব আবার তার মায়ের দিকে তাকায়। কাল রাতে মায়ের রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় জানালা দিয়ে দেখে তার মা ফাঁসি নিয়েছেন। সময় মতো হাসপাতালে আনতে পেরেছে নিরব। নয়তো মারা যেতেন রুনা। এগুলো ভাবতেই ভয় গা কেঁপে উঠে নিরবের।

————”
তন্নি রাদের বাসায় এসেছে ৩০ মিনিট হবে। তন্নি রাদকে ডিজাইনগুলো দেখাচ্ছে আর রাদ সেগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখছে মাঝে মাঝে আড় চোখে তন্নিকেও দেখছে সে নিজেকে এটা থেকে আটকাতে পারছে না। রাইদাকে নিয়ে রিধি চলে গেছে টিভির রুমে অনেক আগেই। হঠাৎ দরজায় টুকা পড়তেই দুজন সেদিকে তাকিয়ে দেখে রিধি হাতে ৩ কাপ চায়ের ট্রে। রিধি হালকা হেসে বলে, –” আসবো?”

রাদ গম্ভীর গলায় বলে, –” আয়।”

রাদের গোমড়া মুখ দেখে মুখ বাকায় রিধি তা দেখে তন্নি হাসে মুখ টিপে। তন্নির হাসি দেখে রিধি বলে উঠে, –” তোমার হাসিটা অনেক সুন্দর আপি।”

রাদ রিধির দিকে চোখ পাকায়। রিধি সেদিকে পাত্তা দেয় নাহ তন্নি লাজুক হেসে বলে,–” ধন্যবাদ।”

রাদ ভারী গলায় বলে, –” এখানে কাজ করছি আমরা তুই যা।”

তখন পা টিপে টিপে রাইদা রুমে প্রবেশ করে বলে, –” না যাবো না আমি আন্টি মার কাছে থাকবো।”

তখন রাদ আর তন্নি একসাথে বলে,–” আন্টি মা মানে?”

রিধি দাত কেলিয়ে বলে,–” ওহ কিছু নাহ রাইদা চল আমরা টিভি দেখি গিয়ে ওরা কাজ করুক। ”

রিধি রাইদাকে জোর করে নিয়ে যায়। ওরা চলে যেতেই রাদ বলে,–” ওদের কথায় কিছু মনে করবেন নাহ মিস তন্নি ওরা একটু দুষ্টু টাইপের।”

তন্নি হেসে বলে,–” নাহ স্যার ইট’স ওকে আপনি অস্থির হবেন নাহ আমি কিছু মনে করি নি।”

রাইদার জ্বরটা এখন একটু কম তাই তো সারা ঘরে দুষ্টুমি করে বেড়াচ্ছে আর রিধি তার পিছন পুছন ছুটছে। উপর থেকে দাড়িয়ে নিচের এই দৃশ্যটা দেখলো তন্নি। তখন পাশে এসে রাদ দাঁড়ালো মিন মিন করে বলে,–” কিছু বলতে চাই।”

তন্নি কৌতুহল দৃষ্টি নিয়ে রাদের দিকে তাকিয়ে বলে– ” বলুন কি বলবেন?”

রাদ সোজা হয়ে দাড়িয়ে বলে, –” কিছু মনে করবেন নাহ আপনাকে এই কথা জিজ্ঞেস করার অন্য কোনো রিজন নেই কৌতুহল থেকে জানতে চাইছি।”

তন্নি বলল,–” আচ্ছা সমস্যা নেই বলুন।”

রাদ বলল,–” ইয়ে মানে আপনার ডিভোর্সটা কেন হয়েছে? বলতে ইচ্ছে না করলে বলবেন না।”

তন্নি বলল,–” হুম ভালোবাসা রং বদলানোর কারণে। ”

রাদ বুঝতে না পেরে বলল,–” মানে?”

তন্নি বলল,–” কিছু নাহ আচ্ছা আমি আসি আর রাইদার খেয়াল রাখবেন জ্বরটা আবার উঠতে পারে। ”

তন্নি নিজের ব্যাগটা নিয়ে চলে যেতে থাকে। নিচে নামতেই রাইদা এসে জড়িয়ে ধরে তন্নিকে বলে,–” মিষ্তি (মিষ্টি). আন্টি কই যাও?”

তন্নি রাইদাকে কোলে তুলে গালে চুমু খেয়ে বলে,–” বাসায় যাই।”

রাইদা কাদো কাদো মুখ করে বলে, –” যেও নাহ প্লিজ দেখো আমার কত জ্বর।”

তন্নি ভাবনায় পড়ে বলে,–” কিন্তু আমাকে তো বাসায় যেতে হবে।”

রাইদা তন্নির গাল জড়িয়ে ধরে বলে–” নাহ তুমি যাবে নাহ থাকবে। ”

তন্নি কিছু বলতে নিবে তখন রিধি এসে বলে–” থাকো নাহ পরে ভাইয়া গিয়ে দিয়ে আসবে নে।”

রাদ উপর থেকে সবটা দেখে কিন্তু কিছু বলে না সে ও চাইছে তন্নি থাকুক। রিধি ও রাইদার জোরাজুরিতে তন্নি রাজি হয় থাকতে। এতে সবচেয়ে বেশি রাদ খুশি হয় কিন্তু সে প্রকাশ করে নাহ। সে নিজের আবেগ কন্ট্রোল করতে চাইছে সে চাই না তন্নিতে আসক্ত হতে। এ কেমন টান অনুভব করছে তবে কি সে তন্নিকে ভালোবেসে ফেলেছে।

————–
রুনা অনেকক্ষণ হলো জ্ঞান হারান নি। ডাক্তার চেক করে গেছে এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ আছেন। বৃষ্টি বাসায় চলে গেছে অনেক আগে
রুনা অশ্রুভরা চোখ নিয়ে নিরবের দিকে তাকিয়ে আছেন। নিরব তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রুনা নিরবতা ভেঙে বললেন, –” আজ আমার জন্য তোর জীবনে এই দুর্যোগ। আমি তন্নি মেয়েটার সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছি ওকে এনে দে আমি ক্ষমা চাইবো পারলে ওকে আবার ঘরে তুলে আন।”

নিরব তার মায়ের হাত ধরে বলে, –” সব ঠিক করে দিব আমি চিন্তা করো না। ”

তখন ই বৃষ্টি এসে পিছনে দাড়ায় সে সব কথা শুনে নেয়। চিৎকার করে বলে, –” কি ঠিক করে দিবা হ্যা? তুমি কি তন্নির কাছে ফিরে যেতে চাইছো তাহলে আমাকে ভালোবাসার কথা বলছিলে কেন আমি তো নাহ করছিলাম সম্পর্কে যেতে তুমি জোর করে আমাকে সম্পর্কে নিলে তোমার প্রতি অনুভূতি জাগালে বিয়ে করে রাত কাটিয়ে এখন আমাকে আর প্রয়োজন নেই। ”

নিরব দাঁতে দাঁত চিপে বলে,–” বৃষ্টি এখানে কোনো সিনক্রিয়েট করো নাহ বাসায় গিয়ে কথা বলছি এই ব্যাপারে।”

বৃষ্টি আরো ক্ষেপে যায় রাগে গজগজ করতে করতে বলে,–” ওহ এখন আমি সিনক্রিয়েট করছি তোমার মা সুইসাইডের নাটক করে যে সিনক্রিয়েট করেছে ডাইনি একটা প্রথম বউকে তো এই ডাইনিই তাড়িয়েছে এখন আমাকে তাড়াতে বলছে। আর তুই শোন তোর জন্য আমি তন্নির সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ করেছি ১০ বছরের বন্ধুত্বের সাথে বেইমানি করেছি তোকে তো এতো সহজে ছাড় দিব না।”

নিরব রাগ সহ্য করতে না পেরে রাগে জোরে থাপ্পড় মারে বৃষ্টিকে। হাসপাতালে সকলের দৃষ্টি তাদের উপর বৃষ্টি আশেপাশে তাকিয়ে কান্না করতে করতে বেরিয়ে যায় সেখান থেকে।

—————-
তন্নি চলে গেছে অনেক আগেই। রিধি রাদের সামনে বসে এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রাদ বিরক্ত হচ্ছে কি বলবে বলে তাকে এখানে বসিয়ে রেখেছে কিন্তু বলার নামই নিচ্ছে নাহ। রাদ বিরক্ত হয়ে বলে, –” কিছু বলবি নাকি দাতই দেখিয়ে যাবি।”

রিধি মুখ বাকায় কত ডং ছেলের। রাদ ফুস করে একটা শ্বাস নিয়ে উঠে যেতে নেয় তখনি রিধি হাত ধরে বলে,–” যাস না বস এখানে বলছি এখন।”

রাদ কপাল কুচকে বসে। গোমড়া মুখে বলে,–” বল।”

রিধি বলে,–” আমার নাহ তন্নি আপিকে অনেক পছন্দ হয়েছে আর আচরণও অনেক সুন্দর। চেহারাও মাশাল্লাহ কত মায়াবি।”

রাদ বলল,–” তো?”

রিধি বলল, –” ইয়ে মানে ওদের বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যায় তোর জন্য।”

রাদ বলে,–” নাহ একদম নাহ। পরে উনার আমার ব্যাপারে খারাপ ধারণা হবে। ”

রিধি আর রাইদা একসাথে বলল,–” প্লিজ। ”

দুজনের চেহারার দিকে তাকালো দুজনের চেহারায় আকুল আবেদন। রাদ ফুস করে একটা শ্বাস নিয়ে অনুমতি দিয়ে দেয় তাদের। রিধি আর রাইদা খুশি হয়ে যায়। রিধি আর দেরি করতে চায় নাহ তন্নিকে ভাবি হিসেবে ঘরে আনতে।

——————-
তন্ন বাসায় এসে দেখে বৃষ্টি বসে আছে। তন্নি অবাক হয়। বৃষ্টি তন্নিকে দেখা মত্রই তার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে। তন্নি অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। অবাক হয়ে বলে,–” কি হয়েছে এখানে কেন তুই।”

বৃষ্টি কাদতে কাদতে তন্নির পা জড়িয়ে ধরে বলে– ” তোর পায়ে পড়ি আমি জানি আমি যা করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য তবুও দয়া করে ক্ষমা করে দে আমার সংসারটা ভেঙে দিস নাহ।”

তন্নি ত্যাড়া ভাবে বলে,–” সংসার ভাঙ্গার অভ্যাস তোর আছে বৃষ্টি আমার নেই। কেন এসেছিস সেটা বল?”

বৃষ্টি সোজা হয়ে বসে তন্নিকে সব বলে। তন্নি সব শুনে হালকা হেসে বলে, –” পাপ বাপকেও ছাড়ে না। যাক আমি তোর মতো নোংরা না যে সংসার ভাঙবো। বেরিয়ে যা আমার বাসা থেকে কখনও আসবি নাহ।”

বৃষ্টি কান্না করতে করতে বেরিয়ে যায়। বৃষ্টি চলে যেতেই তুষার সাহেব আর মিশমি সেখানে আসেন। তন্নিকে মিশমি জিজ্ঞেস করেন,–” কি হয়েছে বৃষ্টি কেন এসেছিল?”

তন্নি চোখের পানি মুছে বলে,–” পাপের ফল পেয়েছে তাই।”

তুষার সাহেব আর মিশমি বুঝতে পারেন ব্যাপারটা তাই আর কথা বাড়ালো না। মিশমি তন্নিকে ফ্রেশ হতে বলে খাবার আনতে চলে যায়।
তন্নি রুমে ঢুকে হাজারও চিন্তা করতে থাকে কি হতে চলছে তার জীবনে কেন মিরব নামের ঝড়টা আাবর তার জীবনে ফিরে আসতে চাইছে

চলবে